নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা – ইমামের পিছনে কিরাত পাঠ করা

নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা – ইমামের পিছনে কিরাত পাঠ করা

নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা – ইমামের পিছনে কিরাত পাঠ করা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (১১৪-১২০)=৭টি

১১৪. অনুচ্ছেদঃ নামাজ পড়ার নিয়ম
১১৫. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়
১১৬. অনুচ্ছেদঃ ফযরের নামাযের কিরাআত
১১৭. অনুচ্ছেদঃ যুহর ও আসরের নামাযের কিরাআত
১১৮. অনুচ্ছেদঃ মাগরিবের নামাযের কিরাআত
১১৯. অনুচ্ছেদঃ ইশার নামাযের কিরাআত
১২০. অনুচ্ছেদঃ ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ করা

১১৪. অনুচ্ছেদঃ নামাজ পড়ার নিয়ম

৩০২. রিফাআ ইবনি রাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদে অবস্থান করছিলেন। রিফাআ [রাদি.] বলেন, আমরাও তাহাঁর সাথে ছিলাম। এমন সময় বিদুইনের বেশে এক ব্যক্তি আসল। সে নামাজ আদায় করিল, কিন্তু হালকাভাবে [তাড়াহুড়া করে, নামাযের রুকনসমূহ ঠিকভাবে আদায় না করে] নামাজ শেষ করে সে নাবী [সাঃআঃ]-কে সালাম করিল। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাকেও [সালাম], ফিরে গিয়ে আবার নামাজ আদায় কর, কেননা তুমি নামাজ পড়নি। সে ফিরে গিয়ে নামাজ আদায় করিল, তারপর এসে তাঁকে সালাম করিল। তিনি পুনরায় বললেনঃ তোমাকেও [সালাম], ফিরে গিয়ে আবার নামাজ আদায় কর, কেননা তুমি নামাজ পড়নি। দুই অথবা তিনবার এরূপ হল। প্রত্যেকবার সে এসে নাবী [সাঃআঃ]-কে সালাম করিল। আর নাবী [সাঃআঃ] বলিতে থাকলেনঃ তোমাকেও [সালাম], ফিরে গিয়ে আবার নামাজ আদায় কর, কেননা তুমি নামাজ আদায় করনি। ব্যাপারটা লোকদের [সাহাবাদের] নিকট ভয়ানক ও অস্বস্তিকর মনে হল যে, যে ব্যক্তি হালকাভাবে নামাজ আদায় করিল তার নামাজই হল না। অবশেষে লোকটি বলিল, আমাকে দেখিয়ে দিন, শিখিয়ে দিন, কেননা আমি তো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নই, কখনও শুদ্ধ কাজ করি কখনও ত্রুটি করি। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন তুমি নামাজ আদায় করিতে দাঁড়াও, তখন তিনি [আল্লাহ] তোমাকে যেভাবে ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ওযূ কর, তারপর তাশাহ্‌হুদ পাঠ কর [আযান দাও], তারপর ইকামাত বল। যদি তোমার কুরআন জানা থাকে তবে তা হইতে পাঠ কর। অন্যথায়-আলহামদুলিল্লাহ তাকবীর-আল্লাহু আকবার তাহলীল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ কর, অতঃপর রুকূ কর, শান্তভাবে রুকূতে অবস্থান কর। তারপর রুকূ হইতে সোজা হয়ে দাঁড়াও, তারপর সাজদাহ্‌য় যাও, ঠিকভাবে সাজদাহ্‌ কর, সাজদাহ্‌ হইতে উঠে শান্তভাবে বস, তারপর উঠো। যদি তুমি এভাবে নামাজ আদায় কর তবে তোমার নামাজ পূর্ণ হল। যদি তুমি তাতে কোনরূপ ভুল কর তবে তোমার নামাযের মধ্যেই ভুল করলে। রাবী বলেন, পূর্বের কথার চেয়ে এই পরবর্তী কথাটা লোকদের [সাহাবাদের] নিকট সহজ লাগল। কেননা যে নামাযের মধ্যে কোনরূপ ভুল করিল তার নামাযে ভুল হল কিন্তু পরিপূর্ণ নামাজ নষ্ট হল না।

সহিহ। মিশকাত-হাদীস নং-[৮০৪], সিফাতুস নামাজ [মূল], সহীহ্‌ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৮০৩-৮০৭], ইরওয়া হাদীস নং-[১/৩২১-৩২২]। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা ও আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ রিফাআ ইবনি রাফির হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি রিফাআ [রাদি.]-এর নিকট হইতে অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদে গেলেন। এ সময় একটি লোক এসে নামাজ আদায় করিল। [নামাজ শেষ করে] সে এসে নাবী [সাঃআঃ]-কে সালাম করিল। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বললেনঃ তুমি আবার গিয়ে নামাজ আদায় করে এসো, তোমার নামাজ হয়নি। এভাবে সে তিনবার নামাজ আদায় করিল। তারপর লোকটি তাঁকে বলিল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! আমি এর চেয়ে ভালভাবে নামাজ আদায় করিতে পারছি না, আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাজ আদায় করিতে দাঁড়াও তখন তাকবীর [তাহরীমা] বল, তারপর কুরআনের যে জায়গা হইতে পাঠ করিতে সহজ হয় তা পাঠ কর; তারপর রুকূতে যাও এবং রুকূর মধ্যে স্থির থাক; তারপর মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াও; তারপর সাজদাহ্‌ কর এবং সাজদাহ্‌র মধ্যে স্থির থাক; তারপর মাথা তুলে আরামে বস। তোমার সমস্ত নামাজ এভাবে আদায় কর।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০৬০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইবনি নুমাইর বর্ণনা করিয়াছেন উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে, তিনি সাঈদ আল-মাক্ববুরী হইতে তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই বর্ণনায় সাঈদ তার পিতা থেকে কথাটি উল্লেখ নেই। উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদের বর্ণনাটি অধিক সহিহ। সাঈদ মাক্ববুরী আবু হুরাইরার নিকট হাদীস শুনেছেন। আবার তার পিতার সূত্রে আবু হুরাইরা হইতেও বর্ণনা করিয়াছেন। আবু সাঈদ মাক্ববুরীর নাম কাইসান। উপনাম আবু সাঈদ। কাইসান মুকাতাব দাস ছিলেন। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১৫. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়

৩০৪. মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি আতা [রঃ] হইতে আবু হুমাইদ আস-সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [মুহাম্মাদ] বলেন, আমি তাঁকে [আবু হুমাইদকে] দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে এ হাদীস বলিতে শুনিয়াছি। আবু কাতাদা ইবনি রিব্‌ঈ [রাদি.]-ও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত। তাহাদের সামনে তিনি বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে বেশি জানি। তাঁরা বলিলেন, তা কেমন করে? তুমি তো আমাদের আগে তাহাঁর সান্নিধ্য লাভ করিতে পারনি। তাছাড়া তুমি তাহাঁর নিকট আমাদের চেয়ে বেশি যাতায়াত করিতে না। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারা বলিলেন, ঠিক আছে বর্ণনা কর। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন [তাকবীরে তাহরীমা করার জন্য]; যখন রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করিতেন কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন; তারপর اللَّهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যেতেন এবং শান্তভাবে রুকূতে থাকতেন, মাথা নীচের দিকেও ঝুঁকাতেন না এবং উপরের দিকেও উঠাতেন না, উভয় হাত উভয় হাঁটুতে রাখতেন; তারপর

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে রুকূ হইতে উঠতেন, রফউল ইয়াদাইন করিতেন [উভয় হাত উপরের দিকে তুলতেন] এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, এমনকি প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে স্বাভাবিকভাবে এসে যেত। তারপর সাজদাহ্‌র জন্য যমিনের দিকে নীচু হইতেন এবং اللَّهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার বলিতেন; দুই বাহু দুই বগল হইতে আলাদা রাখতেন; পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ফাঁক করে দিতেন; বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন; অতঃপর সোজা হয়ে বসতেন যাতে তাহাঁর প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে ঠিকভাবে বসে যেত; অতঃপর দ্বিতীয় সাজদাহ্‌য় যেতেন; اللَّهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্‌ হইতে উঠে পা বিছিয়ে দিয়ে বসতেন [জলসায়ে ইস্তিরাহাত করিতেন]; এমনকি প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে ঠিকভাবে বসে যেত; তারপর দাঁড়াতেন; তারপর দ্বিতীয় রাকআতেও এরূপ করিতেন। তারপর দুই রাকআত আদায় করিতে যখন দাঁড়াতেন, তখনও তাকবীর বলিতেন এবং দুই হাত নামাজ শুরু করার সময়ের মত কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন। বাকী নামাযেও তিনি এরূপ করিতেন; তারপর যখন শেষ সাজদাহ্‌য় পৌঁছাতেন যেখানে তাহাঁর নামাজ শেষ হত তখন বাঁ পা বিছিয়ে দিতেন এবং পাছার উপর চেপে বসতেন; তারপর সালাম ফিরাতেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০৬১]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। দুই সাজদাহ্‌র পর যখন দাঁড়াতেন বাক্যাংশটুকুর অর্থ দুই রাকআত শেষ করে যখন দাঁড়াতেন। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৫. মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি আতা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুমাইদ আস-সায়েদী [রাদি.]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দশজন সাহাবীর সামনে বলিতে শুনিয়াছি, তাহাদের মধ্যে কাতাদা ইবনি রিবঈ [রাদি.]-ও উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী বর্ণনা ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাইদের হাদীসের অনুরূপ। তবে আবু আসিম এ হাদীসে আবদুল হামীদ ইবনি জাফরের সূত্রে এ কথাটুকুও বর্ণনা করেছেনঃ তাঁরা বলিলেন, তুমি সত্যিই বলেছ, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অনুরূপভাবেই নামাজ আদায় করিতেন।

সহিহ। দেখুন পূর্বের হাদীস। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১৬. অনুচ্ছেদঃ ফযরের নামাযের কিরাআত

৩০৬. কুতবা ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ফযরের প্রথম রাকআতে ওয়ান-নাখলা বাসিকাতিন [সূরা কাফ] পাঠ করিতে শুনিয়াছি।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮১৬]। এ অনুচ্ছেদে আমর ইবনি হুরাইস, জাবির ইবনি সামুরা, আবদুল্লাহ ইবনিস সায়িব, আবু বারযা ও উম্মু সালামা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ কুতবা ইবনি মালিকের হাদীসটি হাসান সহিহ। অপর এক বর্ণনায় আছে, নাবী [সাঃআঃ] সকালের নামাযে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করিয়াছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি ফযরের নামাযে ষাট হইতে একশো আয়াত পাঠ করিতেন। আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি “ইযাশ শামসু কুব্বিরাত” সূরা পাঠ করিয়াছেন। বর্ণিত আছে যে, উমার [রাদি.] আবু মূসা [রাদি.]-কে লিখে পাঠালেন, তুমি ফযর নামাযে লম্বা সূরা [তিওয়ালে মুফাসসাল] পাঠ কর। আবু ঈসা বলেনঃ আলিমগণ এর উপরই আমল করিয়াছেন। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক ও শাফিঈ একই রকম অভিমত দিয়েছেন। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১৭. অনুচ্ছেদঃ যুহর ও আসরের নামাযের কিরাআত

৩০৭. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহর এবং আসরের নামাযে সূরা “ওয়াস সামায়ি যাতিল বুরুজ, ওয়াস সামায়ি ওয়াত তারিক্ব এ ধরনের [আকার বিশিষ্ট] সূরা পাঠ করিতেন।

হাসান সহিহ। সিফাতুস নামাজ-[৯৪], সহীহ্‌ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭৬৭]। এ অনুচ্ছেদে খাব্বাব, আবু সাঈদ, আবু কাতাদা, যাইদ ইবনি সাবিত ও বারাআ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ জাবির ইবনি সামুরার হাদীসটি হাসান সহিহ। এই বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের নামাযে তানযীলুস সাজদার মত লম্বা সূরা পাঠ করিয়াছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি যুহরের প্রথম রাকআতে তিরিশ আয়াত পরিমাণ এবং দ্বিতীয় রাকআতে পনের আয়াত পরিমাণ কিরাআত পাঠ করিতেন। উমার [রাদি.] হইতেও বর্ণিত আছে, তিনি আবু মূসা [রাদি.]-কে লিখে পাঠানঃ যুহরের নামাযে মধ্যম [আওসাতে মুফাসসাল] ধরনের সূরা পাঠ কর। কিছু বিদ্বান আসরের নামাযে মাগরিবের নামাযের মত সূরা অর্থাৎ কিসারি মুফাসসাল ধরনের সূরা পাঠ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইবরাহীম নাখঈ বলেছেন, আসরের নামাযের কিরাআত মাগরিবের নামাযের কিরাআতের সমান হইবে। তিনি আরো বলেছেন, যুহরের নামাযের কিরাআত আসরের কিরাআতের চার গুণ লম্বা হইবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১১৮. অনুচ্ছেদঃ মাগরিবের নামাযের কিরাআত

৩০৮. উম্মুল ফযল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আসলেন। অসুখের কারণে এ সময়ে তাহাঁর মাথায় পট্টি বাঁধা ছিল। তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন এবং তাতে সূরা “ওয়াল মুরনামাজ” পাঠ করিলেন। তারপর তিনি মহান আল্লাহ তাআলার সাথে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আর কখনও এ সূরা পাঠ করেননি।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৩১], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে যুবাইর ইবনি মুতঈম, ইবনি উমার, আবু আইউব ও যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ উম্মুল ফযলের হাদীসটি হাসান সহিহ। বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাগরিবের উভয় রাকআতে সূরা আল-আরাফ হইতেও পাঠ করিয়াছেন। আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি মাগরিবের নামাযে সূরা তূর পাঠ করিয়াছেন। উমার [রাদি.] মাগরিবের নামাযে ছোট সূরা [কিসারি মুফাস্‌সাল] পাঠ করার জন্য আবু মূসা [রাদি.]-কে নির্দেশ পাঠান। আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি মাগরিবের নামাযে ছোট আকারের সূরা পাঠ করিতেন। ঈমাম তিরমিযী বলেন, বিশেষজ্ঞ আলিমগণ এরকমই আমল করিয়াছেন। ইবনিল মুবারাক, আহমাদ ও ইসহাক এরকমই বলেছেন। ঈমাম শাফি বলেন, ঈমাম মালিক মাগরিবের নামাযে সূরা তূর, মুরনামাজ ইত্যাদির মত লম্বা সূরা পাঠ করা মাকরূহ জানতেন। শাফিঈ আরো বলেন, আমি মাগরিবের নামাযে এ ধরনের লম্বা সূরা পাঠ করা মাকরূহ মনে করি না, বরং মুস্তাহাব মনে করি। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১৯. অনুচ্ছেদঃ ইশার নামাযের কিরাআত

৩০৯. আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদা [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [বুরাইদা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাযে ওয়াশ-শামসি ওয়া যুহাহা ও এ ধরনের সূরাগুলো পাঠ করিতেন।

সহিহ। সিফাতুস নামাজ-[৯৭]। আবু ঈসা বলেনঃ বুরাইদার হাদীসটি হাসান। এ অনুচ্ছেদে বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাযে ওয়াত-তীনি ওয়ায-যাইতূন সূরা পাঠ করিয়াছেন। উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] ইশার নামাযে সূরা আল-মুনাফিকূন ও অনুরূপ ধরনের আওসাতি মুফাফ্‌সাল সূরা পাঠ করিতেন। অন্যান্য সাহাবা ও তাবিঈদের প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, তাঁরা কখনও উল্লেখিত পরিমাণের বেশিও পাঠ করিয়াছেন আবার কখনও কম পাঠ করিয়াছেন। তাহাদের মতে, সূরা পাঠের আকার-আয়তন ও পরিধি ব্যাপক। সূরা-কিরাআত বড় বা ছোট করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.]-এর বর্ণনাটি সবচাইতে ভাল। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাযে ওয়াশ-শামসি ওয়া যুহাহা ও ওয়াত-তীনি ওয়ায-যাইতূন সূরা পাঠ করিয়াছেন। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১০. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] ইশার নামাযে ওয়াত-তীনি ওয়ায-যাইতূন সূরা পাঠ করিয়াছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৩৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২০. অনুচ্ছেদঃ ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ করা

৩১১. উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সকালে [ফযরের] নামাজ আদায় করিলেন। কিন্তু কিরাআত পাঠ তাহাঁর নিকট একটু শক্ত ঠেকল। তিনি নামাজ শেষে বলিলেন, আমার মনে হয় তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ কর। রাবী বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর শপথ! হ্যাঁ আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বললেনঃ সূরা ফাতিহা ছাড়া [ইমামের পিছনে] অন্য কোন কিরাআত পাঠ করিবে না। কেননা যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার নামাজ হয় না।

যঈফ। যঈফ আবু দাঊদ হাদীস নং-[১৪৬]। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আনাস, আবু কাতাদা ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। “এ হাদীসটি ঈমাম যুহরী [রঃ] মাহমূদ ইবনি রাবী হইতে, তিনি উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.]-এর সূত্রে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করেনি তার নামাজ হয়নি।” সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৩৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩১৩. আবু নুআইম ওয়াহ্‌ব ইবনি কাইসান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করিল অথচ তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করিল না, সে নামাজই আদায় করেনি। হ্যাঁ ইমামের পিছনে হলে ভিন্ন কথা, সেক্ষেত্রে ফাতিহা পাঠের দরকার নাই।

সহিহ। মাওফূফ ইরওয়া হাদীস নং-[২/২৩৭]।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply