নামাজের শর্তসমূহ। নামাজ পড়ার নিয়ম
নামাজের শর্তসমূহ। নামাজ পড়ার নিয়ম >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় ৩ঃ নামাজের শর্তসমূহ
পরিচ্ছেদ ৩৬. নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত
পরিচ্ছেদ ৩৭. বালেগা মহিলা উড়না ব্যতীত নামাজ আদায় করিবে না
পরিচ্ছেদ ৩৮. এক কাপড়ে নামাজ আদায় করা বৈধ ও তা পরিধানের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ৩৯. সলাতে মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্র
পরিচ্ছেদ ৪০. যে ব্যক্তি মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় কেবলা ব্যতীত নামাজ আদায় করিবে তার বিধান
পরিচ্ছেদ ৪১. কেবলা থেকে সামান্য পরিমাণ সরে গেলে তার বিধান
পরিচ্ছেদ ৪২. সফর অবস্থায় মুসাফিরের পক্ষে নফল নামাজ আদায়ের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৪৩. যে সকল স্থানে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ ৪৪. সলাতে কবরকে সামনে রাখা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ৪৫. জুতা জোড়া পবিত্র হলে তাতে নামাজ আদায় করা বৈধ
পরিচ্ছেদ ৪৬. মোজাকে নাপাকী থেকে পবিত্র করার পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ৪৭. সলাতে কথা-বার্তা বলা নিষেধ এবং এ বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির হুকুম
পরিচ্ছেদ ৪৮. সলাতে কথা-বার্তা বলার বিধান
পরিচ্ছেদ ৪৯. সলাতে কম-বেশি হলে মুক্তাদী যা করিবে
পরিচ্ছেদ ৫০. সলাতে ক্ৰন্দন করায় [নামাজ] বিনষ্ট হয় না
পরিচ্ছেদ ৫১. সলাতে গলা-খাকড়ানি দেয়াতে নামাজ নষ্ট হয় না
পরিচ্ছেদ ৫২. মুসল্লী ব্যক্তি ইঙ্গিতের মাধ্যম সলামের উত্তর দিবে
পরিচ্ছেদ ৫৩. সলাতে ছোট বাচ্চা কোলে নেয়া ও কোল থেকে নামানোর বিধান
পরিচ্ছেদ ৫৪. সলাতে সাপ ও বিচ্ছু হত্যা করার বিধান
পরিচ্ছেদ ৩৬. নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত
২০৫ – আলী বিন ত্বলক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সলাতে বাতকর্ম করিবে, [নামাজ ছেড়ে] সরে গিয়ে উযু করিবে ও নামাজ পুনরায় নামাজ আদায় করিবে। ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন।” {২৩৮}
{২৩৮} জঈফ। আবু দাউদ ২০৫; নাসায়ী তার`ইশরাতুন নিসায়’ [১৩৭-১৪০]; তিরমিয়ী ১১৬৬ আহমাদ ১/৮৬। ইমাম আহমাদ একে মুসনাদে আলীর মুসনাদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তার দাবী ভুল। এ বিষয়ে ইবনু কাসীর তাহাঁর তাফসীরে [১/৩৮৫] এবং ইবনু হিব্বান তার সহিহ গ্রন্থে [২২৩৭] সর্তক করিয়াছেন। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ হাদিসটি জঈফ। কেননা, এর ভিত্তি মাজহুলের উপর। আর এই বর্ধিত অংশটুকু সহিহ, যেহেতু এর পক্ষে সমর্থক হাদিস রহিয়াছে। তৃতীয়তঃ হাদিসটি ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেননি। এটা ইবনু হাজারের ভুল। শাইখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব তাহাঁর আল হাদিস [১/৩৬৪] গ্রন্থে এর সনদকে উত্তম বলেছেন। অপরপক্ষে ইমাম ইবনু কাসীর তার ইরশাদুল ফাকীহ [১/১৫৩] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে ইযতিয়াব সংঘটিত হয়েছে। ইবনুল কাত্তান বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ নয়। [আল ওহম ওয়াল ইহাম ৫/১৯২] আলবানী দুর্বল বলেছেন; যঈফুল জামে ৬০৭, আবু দাউদ ২০৫, [জঈফ আবু দাউদ ১০০৫] ইবনু কাসীর বলেন, এ হাদীসে ইযতিয়াব সংঘটিত হয়েছে। [ইরশাদুল ফকীহ ১/১৫৩] নামাজ পড়ার নিয়ম হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
২০৬ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির বমি, নাকের রক্ত বা মযি বের হইবে সে যেন নামাজ ছেড়ে দিয়ে অযু করে, আর [এর মাঝে] কোন কথা না বলে নামাজের বাকী অংশ আদায় করে নেয়। ইবনু মাজাহ বর্ণনা করিয়াছেন এবং আহমাদ একে জঈফ বলেছেন। {২৩৯}
{২৩৯} জঈফ। ইবনু মাজাহ [১২২১] ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর আদ দিরায়াহ [১/৩১] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে ইসমাইল বিন আইয়াশ রয়েছে, তিনি যখন শামবাসী ব্যতীত অন্যদের থেকে হাদিস বর্ণনা করবেন তখন তা দুর্বল হিসেবে বিবেচিত হইবে। ইমাম দারাকুতনী বলেন, ইবনু জুরাইয কর্তৃক তাহাঁর পিতা থেকে বর্ণিত হাদিসটি মুরসাল হিসেবে সকল মুহাদ্দিসের নিকট স্বীকৃত। ইমাম শওকানী তাহাঁর নাইলুল আওত্বার [১/২৩৬] গ্রন্থে বলেন, হাদিসটিকে বিতর্ক থাকার কারনে যথাযথ বলে বিবেচিত নয়। মুহাদ্দিস আযীমাবাদী তাহাঁর গায়াতুল মাকসূদ [২/২১৩] বলেন, কেউ এটিকে সহিহ বলেননি। আর তিনি তাহাঁর আওনুল মা‘বুদ [১/১৮০] গ্রন্থে বলেন, আহমাদ ও অন্যান্যরা এক দুর্বল বলেছেন, দুর্বল হওয়ার কারণ হলো এটিকে মারফূ‘ বলাটা ভূল সঠিক হল এটি মুরসাল সূত্রে বর্ণিত। আবদুর রহমান মুবারকপুরী তাহাঁর তুহফাতুল আহওয়াযী [১/২১৩] গ্রন্থে বলেন, এটি দুর্বল আর সঠিক হচ্ছে এটি মুরসাল। শাইখ আলবানী তাহাঁর জঈফ ইবনু মাজাহ [২২৫], যঈফুল জামে’ [৫৪২৬] গ্রন্থে, ইবনু উসাইমীন তাহাঁর বুলুগুল মারামের শরাহ [১/২৬১] গ্রন্ত্রে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ৩৭. বালেগা মহিলা উড়না ব্যতীত নামাজ আদায় করিবে না
২০৭ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] হতে বর্ণনা করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন- হায়িযা [সাবালিকা] মেয়েদের ওড়না [মস্তকাবরণ] ব্যতিত আল্লাহ্ নামাজ কবুল করবেন না। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ্ বলেছেন। {২৪০}
২৪০} কেউ কেউ এর ত্রুটি বর্ণনা করলেও তা ক্ষতিকর নয়। আবু দাউদ ৬৪১; তিরমিজি ৩৭৭; ইবনু মাজাহ ৬৫৫; আহমাদ ৬/১৫০, ২১৮, ২৫৯; ইবনু খুযাইমাহ ৭৭৫, নামাজ পড়ার নিয়ম হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৩৮. এক কাপড়ে নামাজ আদায় করা বৈধ ও তা পরিধানের পদ্ধতি
২০৮ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলেছেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। মুসলিমে আছে, [বড়] চাদর হলে তার কিনারাদ্বয়কে দু-কাঁধের উপর বিপরীতমুখী করে রেখে নেবে। [অর্থাৎ বড় প্রশস্ত একটি কাপড়ে গলা পর্যন্ত ঢেকে নামাজ আদায় করা চলবে]। আর যদি ছোট হয় তাহলে লুঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করিবে। {২৪১}
{২৪১} বুখারী ৩৬১; মুসলিম ৩০১০। হাদিসের শব্দ বিন্যাস বুখারীর। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
২০৯ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
[বড় কাপড় থাকলে] ঘাড়ের উপর কিছু না দিয়ে যেন কেউ এক কাপড়ে নামাজ আদায় না করে । {২৪২}
{২৪২} বুখারী ৩৫৯; মুসলিম ৫১৯, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৩৯. সলাতে মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্র
২১০ – উম্মু সালামাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] -কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মেয়েরা কি জামা ও দোপাট্টা [ওড়না] পরে নামাজ আদায় করিতে পারবে? তিনি বলিলেন, হাঁ, পারবে- যদি জামা দ্বারা পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢাকা যায়। মুহাদ্দিসগণ এর মাওকুফ [সাহাবীর বক্তব্য] হওয়াকে সঠিক বলে মন্তব্য করিয়াছেন। {২৪৩}
{২৪৩} মারফূ‘ ও মাওকূফ‘ উভয় হিসেবেই জঈফ। আবূ দাউদ ৬৪০। ইবনুল কাত্তান বলেন, হাদিসটি মুনকাতি [আহকামুন নাযর ১৮৪], আলবানী হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। কেননা, এতে রয়েছে উম্ম মুহাম্মাদ তিনি অপরিচিত। [ইরওয়াউল গালীল ১/৩০৪], হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪০. যে ব্যক্তি মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় কেবলা ব্যতীত নামাজ আদায় করিবে তার বিধান
২১১ – আমির বিন রাবি’আহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে কোন এক অন্ধকার রাত্রে ছিলাম। নামাজের সময় কিবলার দিক নির্ণয় করা আমাদের উপর কঠিন হয়ে পড়লো। আমরা নামাজ সমাধান করলাম। কিন্তু ভোরে যখন সূর্যোদয় হল তখন জানা গেল যে, আমরা কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করিনি। অতঃপর আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “তোমরা যেদিকেই মুখ কর না কেন, সেই দিকেই আল্লাহ্র চেহারা রয়েছে।” –তিরমিজি একে য‘ঈফ [দুর্বল] রূপে বর্ণনা করিয়াছেন। {২৪৪}
{২৪৪} তিরমিজি ৩৪৫, ২৯৫৭ অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম সনয়ানী বলেন, এ হাদীসে আলআস বিন সাঈদ আস সাসান রয়েছে, সে দুর্বল । [সুবুলুস সালাম ১/২১২], নামাজ পড়ার নিয়ম হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪১. কেবলা থেকে সামান্য পরিমাণ সরে গেলে তার বিধান
২১২ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলবাসীদের জন্যে] পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে কিবলাহ রয়েছে। তিরমিজি; – বুখারী [রহঃ] একে কাবী [মজবুত] সানাদের হাদিসের মধ্যে গণ্য করিয়াছেন। {২৪৫}
{২৪৫} তিরমিজি ৩৪৪; তিরমিজি বলেছেনঃ হাদিসটি হাসান সহিহ। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদিসের সনদে ইমাম তিরমিজির শায়খ হাসান বিন বাকর ব্যতিত আর কারো ব্যাপারে অস্পষ্টতা নেই। এ হাদিসের আরো কতক সূত্র এবং সমর্থক হাদীসে রয়েছে যা একে সহিহ হাদিসে উন্নীত করে দেয়। তাছাড়া এ সূত্রটিকে বুখারী শক্তিশালী মন্তব্য করিয়াছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪২. সফর অবস্থায় মুসাফিরের পক্ষে নফল নামাজ আদায়ের বর্ণনা
২১৩ – আমির বিন রাবি’আহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে যে কোন দিকে গমনকারী সওয়ারী [জন্তুর] উপর নামাজ আদায় করিতে দেখেছি। {২৪৬} বুখারি বৃদ্ধি করেছেনঃ [রুকূ‘ সাজদাহর সময়] তিনি তাহাঁর মাথা নুইয়ে ইঙ্গিত করিতেন। আর তিনি ফারয সলাতে এরূপ করিতেন না। {২৪৭}
{২৪৬} বুখারী ১০৯৩; মুসলিম ৭০১। হাদীসে উল্লেখিত নামাজ ছিল নফল নামাজ। মুসলিমের রেওয়ায়েতে এর বর্ণনা রয়েছে। তাছাড়া বুখারীরও কতক বর্ণনায় রয়েছে। এখানে শব্দ বিন্যাস বুখারীর।{২৪৭} এখানে অতিরিক্ত অংশটুকু ইমাম বুখারীর [১০৯৭]। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
২১৪ – আনাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] সফরের অবস্থায় যখন নফল নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করিতেন তখন তিনি সওয়ারী জন্তুটিকে কিবলামুখী করে নিয়ে আল্লাহু আকবার [তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে] বলে নামাজ আরম্ভ করিতেন, তারপর তাহাঁর সওয়ারীর মুখ যে কোন দিকে যেতো। এর সানাদটি হাসান। {২৪৮}
{২৪৮} হাসান । আবূ দাউদ ১২২৫, হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৩. যে সকল স্থানে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ
২১৫ – আবূ সা’ঈদ খুদরী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতিত পৃথিবীর সব জায়গাই নামাজ আদায়ের স্থান। এ হাদিসের সানাদে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি রয়েছে। {২৪৯}
{২৪৯} তিরমিজি ৩১৭। হাদিসটিতে যদিও ইরসাল এর ত্রুটি বিদ্যমান তবুও এমন কোন দোষত্রুটি নেই যা ক্ষতিকর। এ কারনে হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর আত্-তালখীসুল হাবীরে এ হাদিসটির সহিহ হওয়ার মত ব্যক্ত করিয়াছেন। আর ইবনু তাইমিয়্যাহ তাহাঁর “ফাতাওয়া’য় ২২/১৬০ কতক হাদিসের হাফেজের এ হাদিসটি সহিহ হওয়ার মন্তব্য বর্ণনা করিয়াছেন । হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২১৬ – ইবনু`উমার [রাঃআঃ থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] সাতটি জায়গায় নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়াছেন- [১] ময়লা ফেলার স্থানে, [২] পশু যবহ করার স্থানে, [৩] কবরস্থানে, [৪] চলাচলের রাস্তায়, [৫] হাম্মামে [গোসল খানায়], [৬] উট বাঁধবার স্থানে, [৭] বাইতুল্লাহর ছাদের উপর। -তিরমিজি বর্ণনা করে একে য’ঈফ [দুর্বল] বলেছেন । {২৫০}
{২৫০} মুনকার। তিরমিজি ৩৪৬-৩৪৭, এ হাদীসে রয়েছে যায়েদ বিন জুবাইরাহ। তাকে ইমাম যাহাবী ওয়াহিন দুর্বল বলেছেন তালকীহুত তাহকীক ১/১২৪, ইমাম যায়লাঈ বলেন, তার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকলেই ঐক্যমত। [নাসবুর রায়াহ ২/৩২৩], ইবনু কাসীর বলেন, সে হচ্ছে মাতরূক [ইরশাদুল ফাকীহ ১/১১৩], ইবনু হাজার তাকে অত্যন্ত দুর্বল আখ্যায়িত করিয়াছেন। এর সনদে ইবনু মাজেদ আব্দুল্লাহ বিন সালিহ ও আব্দুল্লাহ বিন উমার আল আমরী দুর্বল রাবী । [আত-তালখীসুল হাবীর ১/৩৫৩], হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৪. সলাতে কবরকে সামনে রাখা নিষেধ
২১৭ – আবু মারসাদ আল-গানাবী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি তিনি বলেছেন, তোমরা কবরকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করিবে না ও তার উপর বসো না।” {২৫১}
{২৫১} মুসলিম ৯৭২, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৫. জুতা জোড়া পবিত্র হলে তাতে নামাজ আদায় করা বৈধ
২১৮ – আবু সাঈদ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম মাসজিদে আসলে সে যেন তার জুতার প্রতি লক্ষ্য করে, যদি তাতে কোন নাপাকি বা ময়লা বস্তু দেখে তবে যেন তা মুছে পরিষ্কার করার পর তা পরে নামাজ আদায় করে। ইবনু মাজাহ একে সহিহ বলেছেন। {২৫২}
{২৫২} আবু দাউদ ৬৫০; ইবনু খুজাইমাহ [৭৮৬] এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের শব্দ হচ্ছে [আরবী] আবু সাঈদ [রাঃআঃ] বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদা সাহাবীদের নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। হঠাৎ নামাজের মধ্যেই তিনি জুতা খুলে তার বাম পার্শ্বে রাখলেন। লোকেরা তা দেখে তারাও তাদের জুতা খুলে ফেলল। যখন রসূলুল্লাহ ঃ নামাজ শেষ করিলেন, তখন বলিলেন, কিসে তোমাদেরকে জুতাসমূহ খুলে ফেলতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁরা বলিলেন, আমরা আপনাকে আপনার জুতা খুলে ফেলতে দেখেছি, তাই আমরা আমাদের জুতাসমূহ খুলে ফেলেছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, জিবরিল [আঃ] আমার কাছে এসে বলেছিলেন যে, আপনার জুতাতে নাপাকী রহিয়াছে [তাই আমি জুতা খুলে ফেলেছিলাম]। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উপর্যুক্ত উক্তি করেন। নামাজ পড়ার নিয়ম হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৬. মোজাকে নাপাকী থেকে পবিত্র করার পদ্ধতি
২১৯ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কেউ তার চামড়ার মোজায় কোন নাপাক বস্তু পাড়ায় তবে ঐ মোজাদ্বয়ের পবিত্রতাকারী হচ্ছে মাটি। [অর্থাৎ মাটিতে ঘসে পাক ও সাফ করে নেবে]- ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন। {২৫৩}
{২৫৩} আবু দাউদ ৮৬৩; ইবনু হিব্বান হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসটির সনদ হাসান হলেও কয়েকটি সমর্থক হাদিস থাকার কারণে সহিহ হাদীসে পরিণত হয়েছে। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৭. সলাতে কথা-বার্তা বলা নিষেধ এবং এ বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির হুকুম
২২০ – মু’আবিয়াহ বিন হাকাম [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অবশ্যই নামাজ মানুষের কথা-বার্তা বলার ক্ষেত্র নয়, এটা তো কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্যই সুনির্দিষ্ট। {২৫৪}
{২৫৪} মুসলিম ৫৩৭, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৮. সলাতে কথা-বার্তা বলার বিধান
২২১ – যায়দ ইবনু আরক্বাম থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ] -এর সময়ে নামাজের মধ্যে কথা বলতাম। আমাদের যে কেউ তার সঙ্গীর সাথে নিজ দরকারী বিষয়ে কথা বলত। অবশেষে এ আয়াত নাযিল হল-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ (238)} [الْبَقَرَة: 238]
“তোমরা তোমাদের নামাজসমূহের সংরক্ষণ কর ও নিয়ানুমবর্তিতা রক্ষা কর; বিশেষ মধ্যবর্তী [আসর] সলাতে, আর তোমরা [সলাতে] আল্লাহর উদ্দেশে একাগ্রচিত্ত হও”- [সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩৮]।
অতঃপর আমরা সলাতে নীরব থাকতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম এবং নিজেদের মধ্যে কথা বলা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। {২৫৫}
{২৫৫} বুখারী ১২০০; মুসলিম ৫৩৯, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৪৯. সলাতে কম-বেশি হলে মুক্তাদী যা করিবে
২২২ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ [ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য] পুরুষদের বেলায় তাসবীহ-সুবহানাল্লাহ বলা। তবে মহিলাদের বেলায় তাসফীক’ [এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে মারা]। মুসলিমে নামাজের মধ্যে শব্দটি অতিরিক্ত আছে। {২৫৬}
{২৫৬} বুখারী ১২০৩; মুসলিম ৪২২, নামাজ পড়ার নিয়ম হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫০. সলাতে ক্ৰন্দন করায় [নামাজ] বিনষ্ট হয় না
২২৩ – মুতাররিফ ইবনু`আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -কে নামাজ [এমন বিনয়ের সহিত] আদায় করিতে দেখেছি যে, নামাজের মধ্যে তার কান্নার ফলে হাড়ির মধ্যে টগবগ করে ফুটা পানির শব্দের ন্যায় তার বক্ষদেশে শব্দ বিরাজ করত। ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন। {২৫৭}
{২৫৭} আবু দাউদ ৯০৪ না, ৩/১৩; তিরমিয়ী তাহাঁর শামায়েলে [৩১৫]; আহমাদ ৪/২৫, ২৬ ইবনু খুযাইমাহ ৬৬৫, ৭৫৩ একে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫১. সলাতে গলা-খাকড়ানি দেয়াতে নামাজ নষ্ট হয় না
২২৪ – আলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সমীপে, দিনে দুটি সময় আমার উপস্থিতি ছিল। ফলে, যখন তাহাঁর [নফল] নামাজ আদায় করার সময় আমি যেতাম তখন তিনি [অনুমতি জ্ঞাপক] গলা খোকড় [কাশির ন্যায় শব্দ] দিতেন। {২৫৮}
{২৫৮} এখানে বর্ণিত শব্দে হাদিসটি জঈফ। কিন্তু [আরবী] এর পরিবর্তে [আরবী] শব্দে বর্ণিত হাদিসটি হাসান। আমি তাহাবীর`মুশকিলুল আসার’ গ্রন্থের তাখরজে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। হাদিসের তাহকীকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৫২. মুসল্লী ব্যক্তি ইঙ্গিতের মাধ্যম সলামের উত্তর দিবে
২২৫ – ইবনু উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি বিলাল [রাঃআঃ] -কে বললাম, কেমন করে নাবী [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করার সময় তাদের [সহাবীগণের] সালামের জবাব দিতেন? রাবী বলেন, বিলাল [রাঃআঃ] বলিলেন, তিনি এভাবে হাত উঠাতেন, [অর্থাৎ হাতের ইশারায় জবাব দিতেন]। তিরমিয়ী একে সহিহ বলেছেন। {২৫৯}
২৫৯ আবু দাউদ ৯২৭; তিরমিজি ৩৬৮ তিরমিয়ী বলেছেনঃ হাদিসটি হাসান। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫৩. সলাতে ছোট বাচ্চা কোলে নেয়া ও কোল থেকে নামানোর বিধান
২২৬ – আবু কাতাদাহ্ আনসারী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তার মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত কন্যা উমামাহ [রাঃআঃ] -কে কাধে নিয়ে নামাজ আদায় করিতেন। তিনি যখন সাজদাহয় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন। {260} মুসলিমে আছে- তিনি তখন মাসজিদে লোকেদের সলাতে ইমামতি করছিলেন।
{২৬০} বুখারী ৫১৬; মুসলিম ৫৪৩, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫৪. সলাতে সাপ ও বিচ্ছু হত্যা করার বিধান
২২৭ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন- দুটি কালো জন্তুকে নামাজ আদায়ের সময়েও হত্যা করিবে, সাপ ও বিচ্ছু। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {২৬১}
{২৬১} আবূ দাউদ ৯২১; নাসায়ি হাদিস ৩/১০; তিরমিজি ৩৯০; ইবনু মাজাহ ১২৪৫; ইবনু হিব্বান [২৩৫২] হাদিসটিকে সহীহ্ বলেছেন। আর তিরমিজি বলেছেনঃ হাদিসটি হাসান। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply