ফরজ নামাজ কত রাকাত
ফরজ নামাজ কত রাকাত -Sunan Nasai Bangla Pdf >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১, নামাজ, হাদিসঃ (৪৪৮ – ৪৯৩)
১.পরিচ্ছেদঃ নামাজের ফরযসমূহ এবং আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বর্ণনাকারীদের সনদ সম্পর্কিত মতভেদ ও শব্দ প্রয়োগে তাঁদের বিভিন্নতা
২.পরিচ্ছেদঃ নামাজ কোথায় ফরয হয়েছে
৩.পরিচ্ছেদঃ নামাজ কিভাবে ফরয হয়েছে
৪.পরিচ্ছেদঃ দিন-রাতে কত ওয়াক্ত [নামাজ] ফরয
৫.পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপর বায়আত গ্রহণ
৬.পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হিফাযত করা
৭.পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফযীলত
৮.পরিচ্ছেদঃ নামাজ তরককারী সম্পর্কে বিধান
৯.পরিচ্ছেদঃ নামাজের হিসাব-নিকাশ
১০.পরিচ্ছেদঃ নামাজ আদায়কারীর সওয়াব
১১.পরিচ্ছেদঃ আবাসে যোহরের নামাজের রাকাত সংখ্যা
১২.পরিচ্ছেদঃ সফর অবস্থায় যোহরের নামাজ
১৩.পরিচ্ছেদঃ আসরের নামাজের ফযীলত ও মাহাত্ম্য
১৪.পরিচ্ছেদঃ আসরের নামাজ নিয়মিত যত্ন সহকারে আদায় করা।
১৫.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আসরের নামাজ তরক করে
১৬.পরিচ্ছেদঃ আবাসে আসরের নামাজের রাকাত সংখ্যা
১৭.পরিচ্ছেদঃ সফর অবস্থায় আসরের নামাজ
১৮.পরিচ্ছেদঃ মাগরিবের নামাজ
১৯.পরিচ্ছেদঃ ইশার নামাজের ফযীলত
২০.পরিচ্ছেদঃ জামাআতে নামাজ আদায় করার ফযীলত
২১.পরিচ্ছেদঃ কিবলামুখী হওয়া ফরয
২২.পরিচ্ছেদঃ কোন্ অবস্থায় কিবলা ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা যায়
২৩.পরিচ্ছেদঃ কিবলার ব্যাপারে ভুল প্রকাশিত হলে কি করিতে হইবে
১.পরিচ্ছেদঃ নামাজের ফরযসমূহ এবং আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বর্ণনাকারীদের সনদ সম্পর্কিত মতভেদ ও শব্দ প্রয়োগে তাঁদের বিভিন্নতা
৪৪৮. মালিক ইবনি সাসাআ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃআমি কাবার নিকট তন্দ্রাচ্ছন্নাবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ দেখিতে পেলাম, তিনজনের একটি দলের মধ্যবর্তী ব্যক্তিটি এগিয়ে আসল। আমার নিকট হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হলো। তারপর ঐ ব্যক্তি আমার সিনার অগ্রভাগ থেকে নাভি পর্যন্ত বিদীর্ণ করলো। তারপর যমযমের পানি দ্বারা কল্ব ধৌত করলো। তারপর হিকমত ও ঈমান দ্বারা তা ভরে দেয়া হলো। পরে আমার নিকট আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় এরূপ একটি জন্তু আনা হলো। আমি জিব্রাঈল [আঃ] -এর সঙ্গে চলতে থাকি। পরে আমরা দুনিয়ার [নিকটবর্তী] আকাশ পর্যন্ত পৌঁছি। তখন বলা হলো, কে? জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, [আমি] জিব্রাঈল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, মুহাম্মদ [সাঃআঃ]। বলা হলো, তাঁকে আনার জন্য কি দূত প্রেরণ করা হয়েছে? তাঁকে স্বাগতম, তাহাঁর আগমন কতই না শুভ। এরপর আমি আদম [আঃ] -এর নিকট আসলাম, তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, স্বাগতম [হে] পুত্র ও নাবী। তারপরে আমার দ্বিতীয় আসমানে আসলাম। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, [আমি] জিব্রাঈল। বলা হলো, আপনার সঙ্গে কে? জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, মুহাম্মদ [সাঃআঃ]। পূর্ববৎ তাঁকে স্বাগতম জানানো হলো। এরপর আমি ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা [আঃ] -এর নিকট আসলাম এবং তাঁদের উভয়কে সালাম করলাম। তাঁরা বলিলেন, স্বাগতম [হে] ভাই ও নাবী। তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে আসলাম। এখানেও জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? তিনি বলিলেন, আমি জিব্রাইল। বলা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মদ [সাঃআঃ]। পূর্ববৎ তাঁকে স্বাগতম জানানো হলো। এখানে আমি ইউসুফ [আঃ] -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনিও বলিলেন স্বাগতম [হে] ভাই ও নাবী। এর আমরা চতুর্থ আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্ববৎ প্রশ্নোত্তর ও সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হলো। তারপর আমি ইদ্রীস [আঃ] -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, স্বাগতম [হে] ভাই ও নাবী। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্ববৎ প্রশ্নোত্তর হলো ও সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হলো। পরে আমি হারুন [আঃ] -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি স্বাগতম [হে] ভাই ও নাবী। এরপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে আসলাম। এখানেও প্রশ্ন উত্তর সম্বর্ধনার পর আমি মূসা [আঃ] -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, স্বাগতম [হে] ভাই ও নাবী। আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে যাই, তখন তিনি কাঁদতে থাকেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলিলেন হে আমার রব! এ যুবক, যাকে আপনি আমার পর নাবীরূপে প্রেরণ করিয়াছেন, আমার উম্মত হইতে যত সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে, তাহাঁর উম্মত থেকে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে এবং তাঁরা মর্যাদায় হইবেন শ্রেষ্ঠতর। তারপর আমরা সপ্তম আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্ন-উত্তর ও সম্বর্ধনার পর আমি ইবরাহীম [আঃ] -এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, খোশ আমদেদ [হে] পুত্র ও নাবী। তারপর আমার সামনে বায়তুল মামূর তুলে ধরা হলো। আমি জিব্রাঈল [আঃ] -কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কোন স্থান? তিনি বলিলেন, এ বায়তুল মামূর। এখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশ্তা নামাজ আদায় করেন। একদিনে যারা এখানে নামাজ আদায় করেন, তারা এখানে কোন দিন প্রত্যাবর্তন করবেন না। এটাই তাহাদের শেষ [প্রবেশ]। তারপর সামনে সিদরাতুল মুনতাহা তুলে ধরা হলো। তার [সিদরাতুল মুনতাহার] গাছের ফল আকারে হাজর [নামক স্থান-এর] কলসীর ন্যায় এবং পাতাগুলো হাতির কানের মত এবং দেখলাম যে, তার মূল হইতে চারটি নহর প্রবহমান। দুটি অপ্রকাশ্য ও দুটি প্রকাশ্য। আমি জিব্রাইল [আঃ] -কে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলিলেন, অপ্রকাশ্য নহর দুটি জান্নাতে প্রবহমান। আর প্রকাশ্য নহর দুটির একটি ফুরাত ও অন্যটি নীল। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হলো। ফেরার পথে আমি মূসা [আঃ] -এর নিকট এলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি কি করে আসলেন? বললাম, আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি মানুষের [প্রকৃতি] সম্পর্কে আপনার চেয়ে অধিক অবগত। আমি বনী ইসরাঈলকে নিয়ে কঠিনভাবে চেষ্টা করেছি। একথা নিশ্চিত যে, এগুলো আদায় করিতে আপনার উম্মত সক্ষম হইবে না। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং এ নির্দেশ সহজ করে নিয়ে আসুন। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় গেলাম এবং এ বিধান সহজ করার আবেদন জানালাম। এতে তিনি চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আমি আবার মূসা [আঃ] -এর নিকট এলাম। তিনি বলিলেন, আপনি কি করে আসলেন? আমি বললাম, চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিয়েছেন। তিনি এবারও আমাকে পূর্বের ন্যায় বলিলেন। আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি এবার ত্রিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আমি আবার মূসা [আঃ] -এর নিকট এলাম এবং তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে পূর্বের মত বলিলেন। আমি আবার প্রতিপালকের নিকট হাযির হলাম। তিনি বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর দশ ওয়াক্ত এবং তারপর পাঁচ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপরে আমি মূসা [আঃ] -এর নিকট এলাম। তিনি পূর্বের মত একই কথা বলিলেন। আমি বললাম, আমি আবার আল্লাহর নিকট যেতে লজ্জাবোধ করছি। তারপর আল্লাহর তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া হলো, আমি আমার বিধান চূড়ান্ত করলাম এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। আর আমি একটি নেক কাজের বিনিময় দশটি প্রতিদান দেব।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৪৯. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃআল্লাহ পাক আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেন। আমি ঐ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে মূসা [আঃ] -এর নিকট ফিরে আসলাম। তখন মূসা [আঃ] আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করিয়াছেন? তখন আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন। মূসা [আঃ] আমাকে বলিলেন যে, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের নিকট হাযির হোন। কারণ আপনার উম্মত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। তারপর আমি আমার প্রতিপালক নিকট উপস্থিত হলাম। আল্লাহ পাক পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কিছু কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা [আঃ] -এর নিকট এসে তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি বলিলেন, আপনি আবার হাযির হোন। কেননা আপনার উম্মত তা আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। পরে আমি আবার আমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আল্লাহ পাক বলিলেন, এটা [গণনার] পাঁচ কিন্তু [প্রতিদানে] এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সমান এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয় না। তারপর আমি মূসা [আঃ] -এর নিকট ফিরে যাই। মূসা [আঃ] বলিলেন, আবার আপনার প্রতিপালকের নিকট হাযির হোন। তখন আমি বললাম, আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট এ বিষয় নিয়ে আবার উপস্থিত হইতে লজ্জাবোধ করছি।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৫০. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃআমার সামনে এমন একটি জন্তু আনা হলো যা আকারে গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট এবং যার কদম পড়ত দৃষ্টির শেষ সীমায়। আমি তার উপর আরোহণ করলাম। জিব্রাঈল [আঃ] আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা সফর করলাম [মদীনা পর্যন্ত]। জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, আপনি নেমে নামাজ আদায় করুন। আমি নামাজ আদায় করলাম। জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, আপনি কোথায় নামাজ আদায় করিয়াছেন তা কি জানেন? আপনি নামাজ আদায় করিয়াছেন তায়বায়। এ শহরেই আপনি হিজরত করবেন। আবার জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, আপনি অবতরণ করে নামাজ আদায় করুন। আমি তখন নেমে নামাজ আদায় করলাম। জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, আপনি কি জানেন কোন জায়গায় নামাজ আদায় করিয়াছেন? আপনি তূরে সায়ন নামক স্থানে নামাজ আদায় করিয়াছেন। যেখানে আল্লাহ পাক মূসা [আঃ] -এর সাথে কথা বলেছিলেন। তারপর আবার এক স্থানে গিয়ে জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, অবতরণ করে নামাজ আদায় করুন। আমি তা-ই করলাম। জিব্রাঈল [আঃ] বলিলেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় নামাজ আদায় করিয়াছেন? আপনি বায়ত লাহম নামক স্থানে নামাজ আদায় করিয়াছেন। যেখানে হয়রত ঈসা [আঃ] জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারপর আমি বায়তুল মাকদিস-এ প্রবেশ করলাম এবং সমস্ত নাবীকে আমার নিকট একত্র করা হলো এবং জিব্রাঈল [আঃ] আমাকে সম্মুখে এগিয়ে দিলেন আমি সকলের ঈমামতি করলাম।
তারপর আমাকে নিয়ে প্রথম আসমানে উঠলেন। সেখানে আদম [আঃ] -এর সাক্ষাত লাভ করলাম। পরে আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। সেখানে পরপর দুখালাত ভাই ঈসা [আঃ] ও ইয়াহইয়া [আঃ] -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন, সেখানে ইউসুফ [আঃ] -এর সাথে দেখা হলো। এরপর আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে উঠলেন এবং সেখানে হারুন [আঃ] -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে উঠলেন সেখানে ইদ্রিস [আঃ] -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানে উঠলেন। সেখানে মূসা [আঃ] -এর সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে ইবরাহীম [আঃ] -এর সাথে সাক্ষাত হলো। এরপর আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের উপরে উঠলেন। তখন আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হলাম। সেখানে একখন্ড ধুঁয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল-আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। তখন আমাকে বলা হলো-যেদিন আমি এ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, সেদিন আপনার উপর ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছি। সুতরাং আপনি এবং আপনার উম্মত এই নামাজ কায়েম করুন। তখন আমি ইবরাহীম [আঃ] -এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করিলেন না। পরে মূসা [আঃ] -এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করিয়াছেন? আমি বললাম পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন। তখন মূসা [আঃ] বলিলেন, নিশ্চয়ই আপনি এবং আপনার উম্মত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ আদায় করিতে সক্ষম হইবেন না। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং কমানোর জন্য আরয করুন। আমি প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি আমার থেকে দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর আবার মূসা [আঃ] -এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বলিলেন। আমি ফিরে গেলাম। তখন তিনি আরো দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর মূসা [আঃ] -এর নিকট আসার পর তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বলিলেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। তিনি দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর সর্বশেষ নামাজকে পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করা হলো। মূসা [আঃ] বলিলেন, আপনি পুনরায় প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং নামাজ আরও কমানোর আবেদন করুন। কেননা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর শুধু দুই ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছিলেন। তারা এই দুই ওয়াক্তও আদায় করেনি। তখন আমি আবার আল্লাহর নিকট ফিরে গিয়ে নামাজ কমিয়ে দেয়ার জন্য আরয করলাম। তখন তিনি বলিলেন, নিশ্চয়ই আমি যেদিন এই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি সেদিন আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছি। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান বলে গণ্য হইবে। আপনি ও আপনার উম্মত এটা আদায় করুন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহ পাকে পক্ষ হইতে অবশ্য পালনীয়। এরপর আমি মূসা [আঃ] -এর নিকট ফিরে আসলাম। এবারও তিনি আমাকে ফিরে যেতে বলিলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম যে পাঁচ ওয়াক্ত আল্লাহ্র পক্ষ হইতে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই আমি আর ফিরে গেলাম না।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
৪৫১. আবদুল্লাহ [ইবনি মাসউদ] [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে যখন মিরাজের রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছিল তখন তাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিদরাতুল মুনতাহা ষষ্ঠ আকাশে অবস্থিত।{১} তার নীচ থেকে যেসব জিনিস [নেক আমল, আত্মা ইত্যাদি] উর্দ্ধে উঠানো হয় এবং তার উপর হইতে আল্লাহ্র যেসব নির্দেশ অবতীর্ণ হয়, সবকিছুই এখানে পৌঁছে থেমে যায়। তারপর এখান থেকেই তা গ্রহণ করা হয়।
আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন:
إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى} [النجم: 16]
[যখন বৃক্ষটিকে আচ্ছাদিত করিল, যা আচ্ছাদিত করার]। [৫৩:১৬]
আবদুল্লাহ বলেন, তা হল সোনার প্রজাপতি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তিনটি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। [১] পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, [২] সূরা বাকারার শেষ কয়েকটি আয়াত এবং [৩] তাহাঁর উম্মতের যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করিবে, তার মাগফিরাত।{১} সিদ্রা বলিতে যে বৃক্ষ বুঝানো হয়েছে তার মূল ষষ্ঠ আসমানে এবং শীর্ষভাগ সপ্তম আসমানে। এই নিরিখে আলোচ্য হাদিসটি এবং হযরত আনাস [রাঃআঃ] -এর হাদিসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২.পরিচ্ছেদঃ নামাজ কোথায় ফরয হয়েছে
৪৫২. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নামাজ মক্কায় ফরয হয়েছে। দুজন ফেরেশতা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আসেন। ফেরেশতাদ্বয় তাঁকে নিয়ে যমযমের নিকট যান। তারা তাহাঁর পেট বিদীর্ণ করেন এবং তাহাঁর ভেতরের বস্তু বের করে স্বর্ণের পাত্রে রাখেন ও যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করেন। তারপর তাহাঁর মধ্যে ইলম ও হিকমত পূর্ণ করে দেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩.পরিচ্ছেদঃ নামাজ কিভাবে ফরয হয়েছে
৪৫৩. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃপ্রথমত নামাজ দুই রাকাত করে ফরয হয়েছিল। পরে সফরের নামাজ পূর্ববৎ রাখা হয় এবং আবাসে নামাজ পূর্ণ করা হয়।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৫৪. আওযাঈ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি যুহ্রী [রাঃআঃ] -কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্বেকার নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন, উরওয়াহ [রহঃ] আমাকে আয়িশাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃআল্লাহ তাআলা প্রথমত তাহাঁর রাসূলের উপর দুই-দুই রাকাত নামাজ ফরয করেন। পরে আবাসে নামাজ চার রাকাত পূর্ণ করা হয় এবং সফরে পূর্বের বিধান অনুযায়ী দুই রাকাতই বহাল রাখা হয়।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৫৫. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃনামাজ দুই দুই রাকাত করে ফরয করা হয়। কিন্তু সফর অবস্থায় নামাজ পূর্ববৎ থাকে এবং আবাস অবস্থায় তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৫৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর উপর আবাসে চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত এবং ভয়কালীন অবস্থায় [ইমামের সঙ্গে] এক রাকাত করে নামাজ ফরয করা হয়েছে।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৫৭. উয়াইয়া ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি খালিদ ইবনি উসায়দ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞসা করিলেন, আপনি কসরের নামাজ কেমন করে আদায় করেন? আল্লাহ তো বলেন, “তোমরা যদি [কাফিরদের] ভয়ের আশংকা কর তাহলে নামাজ কসর করলে গুনাহ হইবে না।” ইব্ন উমর [রাঃআঃ] বলিলেনঃভাতিজা! রাসূলুল্লঅহ [সাঃআঃ] -এর আবির্ভাব আমাদের মধ্যে এমন অবস্থায় হয়েছে যে, তখন আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দান করিয়াছেন। তাহাঁর শিক্ষার মধ্যে এও ছিল যে, আল্লাহ আমাদেরকে সফরে নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুআইসী বলেছেন, ঈমাম যুহ্রী আবদুল্লাহ ইবনি আবু বকর [রাঃআঃ] থেকে এ হাদিস বর্ণনা করিতেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪.পরিচ্ছেদঃ দিন-রাতে কত ওয়াক্ত [নামাজ] ফরয
৪৫৮. তাল্হা ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃনজদ এলাকার অধিবাসী একটি লোক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আসল। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। তার গুন গুন আওয়াজ শুনছিলাম কিন্তু সে কি বলছিল তা আমরা বুঝতে পারছিলাম না। সে আরো নিকটবর্তী হলো এবং লক্ষ্য করা গেল যে, ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তোমার জন্য ফরয। সে জিজ্ঞাসা করিল, এগুলো ব্যতীত আমার উপর আরো [অতিক্তি করণীয়] কিছু আছে কি? তিনি বলিলেন, না, তবে নফল পড়তে পার। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আর রমযানের এক মাসে সিয়াম। সে জিজ্ঞাসা করলো, এ ছাড়া আমার উপর আরো [সাওম] আছে কি? তিনি বলিলেন, না, তবে নফল [সাত্তম] পালন করিতে পার। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে যাকাতের কথা বলিলেন। সে জিজ্ঞাসা করিল, তা ছাড়া আমার উপর আরো কোন [দানের হুকুম] আছে কি? তিনি বলিলেন, না, তবে নফল [দান] করিতে পার। তারপর সে ব্যক্তি এই কথা বলিতে বলিতে চলে গেলঃ“আল্লাহ্র শপথ! আমি এই [হুকুম] -গুলোর উপর অতিরিক্ত কিছু করব না এবং এগুলো থেকে কমও করব না।” রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃসে সফল হয়ে গেল যদি তার কথায় সত্যবাদী হয়।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৫৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃএক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে জিজ্ঞাসা করিল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর বান্দাদের উপর কত ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন? তিনি উত্তরে বলিলেন, আল্লাহ্ তাহাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন। সে ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এগুলোর আগে ও পরে আরো কিছু [করণীয়] আছে কি? তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ তাহাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন। তারপর সে ব্যক্তি শপথ করে বলিল যে, সে এগুলোর চেয়ে অতিরিক্ত কিছু করিবে না এবং কমও করিবে না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃসে যদি সত্যবাদী হয় তাহলে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫.পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপর বায়আত গ্রহণ
৪৬০. আওফ ইবনি মালিক আশজাঈ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃআমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট ছিলাম। তিনি বলিলেনঃতোমরা কি আল্লাহ্র রাসূলের নিকট বায়আত গ্রহণ করিবে না? এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। আমরা হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং তাহাঁর নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম। তারপর আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা তো পূর্বেই আপনার নিকট বায়আত হয়েছি, তবে এ বায়আত কোন বিষয়ের উপর? তিনি বলিলেনঃএ বায়আত হলো এ কথার উপর যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করিবে এবং তাহাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করিবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিবে। তারপর আস্তে করে মৃদু স্বরে বলিলেনঃমানুষের নিকট কিছু চাইবে না।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬.পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হিফাযত করা
৪৬১. ইবনি মুহায়রিয [রহঃ] হইতে বর্ণীত
মুখদাজী নামক বনূ কিনানার জনৈক ব্যক্তি আবু মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তিকে সিরিয়ায় বলিতে শুনেছেন যে, বিতরের নামাজ ওয়াজিব।{১} মুখদাজী বলেন, আমি একথা শুনে উবাদা ইবনি সামিত [রাঃআঃ] -এর নিকট গেলাম। আমি যখন তাহাঁর নিকট পৌঁছি তখন তিনি মসজিদে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে আবু মুহাম্মদের বক্তব্য শুনালাম। উবাদা [রাঃআঃ] বলিলেনঃআবু মুহাম্মদ ভুল বলেছেন।{২} আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ্ তাআলা বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন। যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিবে এবং এগুলোর মধ্যে কোন নামাজ হালকা জ্ঞানে ছেড়ে দেবে না, তার জন্য আল্লাহ্র ওয়াদা হলো-তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিবেনা, তার জন্য আল্লাহ্র কোন ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে জান্নাতেও প্রবেশ করাতে পারেন।
{১} অর্থাৎ অন্যান্য ফরযের ন্যায় ফরয।{২} আসলে দুই কথার মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কেননা আবু মুহাম্মদ বিতরকে ফরয নয়, বরং ওয়াজিব বলেছেন, যা ফরয অপেক্ষা নিম্নস্তরের, আর উবাদা [রাঃআঃ] ফরয হওয়াকে রদ করিয়াছেন। অনেক সময় ওয়াজিব দ্বারা ফরযও বুঝানো হয়। সে কারণেই এ ভূল বোঝাবুঝির সৃষ্টি।নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭.পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফযীলত
৪৬২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃতোমাদের কারো গৃহদ্বারে যদি নহর [প্রবাহিত] থাকে এবং সে যদি তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার শরীরে কোন প্রকার ময়লা থাকতে পারে? সাহাবায়ে কিরাম বলিলেন, না তার শরীরের কোন ময়লা থাকতে পারে না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃপাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এরূপ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দ্বারা আল্লাহ্ গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮.পরিচ্ছেদঃ নামাজ তরককারী সম্পর্কে বিধান
৪৬৩. বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন আমাদের এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল হলো নামাজ। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরী করিল।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৪. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃনামাজ ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত বান্দা ও কুফরের মাঝে কোন অন্তরায়ই নেই।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৯.পরিচ্ছেদঃ নামাজের হিসাব-নিকাশ
৪৬৫. হুরায়স ইবনি কাবীসা [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন যে, আমি মদীনা এসে আল্লাহ্র নিকট দোয়া করি, হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে একজন সৎ সঙ্গী দান করুন। তারপর আমি এসে আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] -এর মজলিসে বসলাম এবং তাঁকে বললাম যে, আমি মহান আল্লাহ্র নিকট একজন সৎ সঙ্গী পাওয়ার জন্য দোয়া করেছি। অতএব আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট থেকে শোনা এমন একটি হাদিস আমাকে বর্ণনা করুন যা দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছিঃকিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম তাহাঁর বান্দা থেকে নামাজের হিসাব নেওয়া হইবে। নামাজ যথাযথভাবে আদায় হয়ে থাকলে সে সফল হইবে ও মুক্তি পাবে। নামাজ যথাযথ আদায় না হয়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হইবে। হাম্মাম বলেন আমি জানি না- এটা কাতাদার কথা না বর্ণনা। যদি ফরয নামাজ কিছু কম হয়ে থাকে তবে আল্লাহ্ [ফেরেশতাহাদের] বলবেন, আমার বান্দার কোন নফল নামাজ আছে কিনা? থাকলে তা দ্বারা ফরয পূর্ণ করে দেওয়া হইবে। এরপর অন্যান্য আমলের ব্যাপারেও একই অবস্থা হইবে।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃকিয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব-নিকাশ নেওয়া হইবে। যদি নামাজ পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায়, তবে তা পরিপূর্ণ লেখা হইবে। যদি কিছু কম পাওয়া যায়, তাহলে আল্লাহ্ বলবেন, তার নফল নামাজ কিছু আছে কিনা? [যদি থাকে] এগুলোর দ্বারা ফরয নামাজের ক্ষতিপূরণ করে দেওয়া হইবে। তারপর অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রেও এরূপ করা হইবে।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃকিয়ামতের দিন বান্দার থেকে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হইবে। নামাজ পুরোপুরি আদায় করে থাকলে তো ভাল কথা, অন্যথায় আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, দেখ, আমার বান্দার কোন নফল নামাজ আছে কিনা? নফল নামাজ থাকলে বলবেন, এই নফল নামাজ দ্বারা ফরয নামাজ পূর্ণ করে দাও।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১০.পরিচ্ছেদঃ নামাজ আদায়কারীর সওয়াব
৪৬৮. আবু আইয়্যূব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃআল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাহাঁর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক করিবে না। নামাজ কায়েম করিবে, যাকাত আদায় করিবে, আত্নীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে। [জবাব দেয়ার পর] প্রশ্নকারীকে বলিলেন, উটের লাগাম ছেড়ে দাও। যেহেতু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন উটের উপর সওয়ার হয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১.পরিচ্ছেদঃ আবাসে যোহরের নামাজের রাকাত সংখ্যা
৪৬৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে মদীনায় যোহরের নামাজ চার রাকাত আদায় করেছি এবং যুল-হুলায়ফায় আসরের নামাজ [সফরের কারণে] দুই রাকাত আদায় করেছি।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১২.পরিচ্ছেদঃ সফর অবস্থায় যোহরের নামাজ
৪৭০. আবু জুহায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দ্বিপ্রহরে বাতহা নামক স্থানে আসেন। তারপর উযু করেন এবং যোহর ও আসরের নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করেন। এ সময়ে তাহাঁর সামনে একটি লাঠি ছিল। [অর্থাৎ লাঠিটি সুতরা হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন]।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩.পরিচ্ছেদঃ আসরের নামাজের ফযীলত ও মাহাত্ম্য
৪৭১. উমারা ইবনি রুওযাইবা সাকাফী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃআমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয় হওয়ার পূর্বের [ফজরের] নামাজ এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের [আসরের] নামাজ আদায় করিবে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪.পরিচ্ছেদঃ আসরের নামাজ নিয়মিত যত্ন সহকারে আদায় করা।
৪৭২. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃআয়িশাহ [রাঃআঃ] আমাকে এক কপি কুরআনুল করীম লিখার জন্য নির্দেশ দেন এবং যখন আয়াতঃ১
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى [البقرة: 238]
পর্যন্ত পৌঁছবে তখন আমাকে খবর দিও। তারপর আমি ঐ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তাঁকে জানালাম। তিনি আমার দ্বারা লিখালেন:
[আরবী]
অর্থঃতোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হইবে, বিশেষত মধ্যবর্তী নামাজ ও আসর নামাজের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে।
তারপর বলিলেনঃ“আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট থেকে এরূপ শুনিয়াছি।”
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭৩. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
[সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ[খন্দকের রণক্ষেত্রে] কাফিররা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদেরকে সালাতুল উসতা থেকে বিরত রেখেছিল।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৫.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আসরের নামাজ তরক করে
৪৭৪. আবুল মালিহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃএকদা মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা বুরায়দা [রাঃআঃ] -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বলিলেনঃঅবিলম্বে নামাজ আদায় করে নাও, কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃযে ব্যক্তি আসরের নামাজ তর্ক করলো, তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে গেল।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬.পরিচ্ছেদঃ আবাসে আসরের নামাজের রাকাত সংখ্যা
৪৭৫. আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যোহর ও আসরের নামাজে কতক্ষণ কিয়াম করিতেন [দাঁড়িয়ে থাকতেন] আমরা অনুমান করতাম। একবার আমরা যোহরের নামাজে তাহাঁর কিয়ামের অনুমান করলাম যে, তিনি প্রথম দুই রাকআতে সূরায়ে সাজদার ত্রিশ আয়াত পরিমাণ এবং পরবর্তী দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ পড়ার পরিমাণ কিয়াম করিলেন। আসরের নামাজে কিয়ামের অনুমান করলাম যে, প্রথম দুই রাকআতে যোহরের শেষ দুই রাকআতের সময় পরিমাণ এবং শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ সময় কিয়াম করিলেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭৬আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যোহরের নামাজে দাঁড়াতেন এবং প্রত্যেক রাকআতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করিতেন এবং আসরের প্রথম দুই রাকআতে পনের আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করিতেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭.পরিচ্ছেদঃ সফর অবস্থায় আসরের নামাজ
৪৭৭. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদীনাতে যোহরের নামাজ চার রাকাত এবং যুল-হুলায়ফায় [সফর অবস্থায়] আসরের নামাজ দুই রাকাত আদায় করেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭৮. নাওফাল ইবনি মুআবিয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ফওত হলো. তার পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন ছিনতাই হয়ে গেল। এ হাদিসের বর্ণনাকারী ইরাক ইবনি মালিক বলেন, আমাকে আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছেন, যে ব্যক্তির আসরের নামাজ কাযা হলো, তার পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন লুট হয়ে গেল।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭৯. নাওফাল ইবনি মুআবিয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃআমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নামাজের মধ্যে এমন নামাজ রয়েছে যদি কারো থেকে তা ফওত হয়, তাহলে তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন লুট হয়ে গেল। আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে [এ সম্পর্কে] বলিতে শুনিয়াছি, তা হচ্ছে আসরের নামাজ।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮০. ইরাক ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃআমি নাওফাল ইবনি মুআবিয়া [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি ঃনামাজের মধ্যে এমন নামাজ রয়েছে যে ব্যক্তি থেকে তা ছুটে গেল, তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন ছিনতাই হয়ে গেল। ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃতা হচ্ছে আসরের নামাজ।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮.পরিচ্ছেদঃ মাগরিবের নামাজ
৪৮১. সালামা ইবনি কুহায়ল [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃআমি সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] -কে দেখেছি যে, তিনি [মুযদালিফায়] মাগরিবের তিন রাকাত এবং ইশার দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] তাঁদেরসহ এই স্থানে এরূপ করিয়াছেন এবং বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –ও এই স্থানে এরূপই করেছিলেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯.পরিচ্ছেদঃ ইশার নামাজের ফযীলত
৪৮২. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার ইশার নামাজ আদায় করিতে বিলম্ব করিলেন। ফলে উমর [রাঃআঃ] তাঁকে আহবান করে বলিলেন যে, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হয়ে তাঁকে বলিলেন, তোমাদের ব্যতীত আর কেউ এ নামাজ আদায় করে না। তখন মদীনাবাসী ব্যতীত আর অন্য কেউ এ নামাজ আদায় করত না।{১}
{১} এভাবে ইশার নামাজ জামাতের সাথে মদীনা ব্যতীত অন্য কোথাও আদায় করা হতো না। মক্কায় যে সব মুসলমান বসবাস করিতেন তাহাদের গোপনে নামাজ আদায় করিতে হতো। [ফাতহুল বারী]নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০.পরিচ্ছেদঃ সফরে ইশার নামাজ
৪৮৩. হাকাম [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃসাঈদ ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মুযদালিফায় মাগরিবের তিন রাকাত এবং ইশার দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এরপর বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] এরূপ করিয়াছেন এবং তিনি বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –ও এরূপ করিয়াছেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৪৮৪. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃআমি আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ]-কে মুযদালিফায় মাগরিবের তিন রাকাত এবং ইশার দুই রাকাত নামাজ আদায় করিতে দেখেছি এবং তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –কে এখানে এরূপ করিতে দেখেছি।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২১.পরিচ্ছেদঃ জামাআতে নামাজ আদায় করার ফযীলত
৪৮৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃরাত ও দিনে ফেরেশতাগণ পালাক্রমে তোমাদের নিকট আগমন করে এবং ফজর ও আসরের সময় তারা একত্রিত হয়। তারপর যে সকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের নিকট ছিল, তারা উপরে উঠে যায়, আল্লাহ্ তাহাদের জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি সর্বজ্ঞ, আমার বান্দাদের তোমরা কোন্ অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলে থাকে, আমরা যখন চলে আসি তখন আপনার বান্দারা [ফজরের] নামাজ আদায় করছিল। আমরা যখন তাহাদের নিকট গিয়েছিলাম তখন তারা [আসরের] নামাজ আদায় করছিল।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃএকা নামাজ আদায় করার চেয়ে জামাআতে নামাজ আদায় করা পঁচিশ গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ। রাত ও দিনে [আগমনকারী] ফেরেশতার দল ফজরের নামাজের সময় একত্রিত হয়। সুতরাং এতদ্বিষয়ে তোমরা এই আয়াতটি তিলাওয়াত করিতে পার ঃ{১}
وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا [الإسراء: 78]
{১} এবং কায়েম করিবে ফজরের নামাজ ; ফজরের নামাজ পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে। [১৭ ঃ৭৮]
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮৭. উমারা ইবনি রুওয়ায়বা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃআমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফজরের নামাজ এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে [আসরের] নামাজ আদায় করিবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২২.পরিচ্ছেদঃ কিবলামুখী হওয়া ফরয
৪৮৮. বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃআমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে ষোল মাস বা সতর মাস [বর্ণনাকারী সুফিয়ানের সন্দেহ] বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী হয়ে নামাজ আদায় করি। পরে তাঁকে [নাবী [সাঃআঃ] -কে] কাবার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮৯. বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদীনায় আগমনের পর ষোল মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি কাবা অভিমুখী হয়ে নামাজ আদায় করার নির্দেশ প্রাপ্ত হন। কিবলা পরিবর্তনের সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর সঙ্গে নামাজ আদায়কারী এক ব্যক্তি [নামাজের পর] আনসারদের এক জামাআতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। [তাঁরা তখন নামাজরত অবস্থায় ছিলেন] তিনি বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবা অভিমুখী হয়ে নামাজ আদায় করিতে আদিষ্ট হয়েছেন- একথা শুনে তাঁরা কাবা অভিমুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন। {১}
{১} বায়তুল মুকাদ্দাস মদীনার উত্তরদিকে এবং কাবা দক্ষিনদিকে অবস্থিত। অতএব মুসল্লীগণ উত্তরদিক থেকে দক্ষিন-দিকে ফিরে যান।নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৩.পরিচ্ছেদঃ কোন্ অবস্থায় কিবলা ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা যায়
৪৯০. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃকাবা অভিমুখী হয়ে নামাজ আদায় করার হুকুম আসার পূর্বে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উটের পিঠের উপর [নফল] নামাজ আদায় করিতেন তাতে উট যে দিকেই মুখ করে থাকুক এবং বিতরের নামাজ উটের উপরই আদায় করে নিতেন। তবে ফরয নামাজ এভাবে আদায় করিতেন না।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৯১. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখে যাওয়ার সময় নিজ বাহনের উপর [নফল] নামাজ আদায় করিতেন। এ সম্পর্কেঃ
فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ [البقرة: 115]
এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। {১}
{১} এবং যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকেই আল্লাহ্র দিক। [২ ঃ১১৫]
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৯২. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সফরে সওয়ারীর উপর নামাজ আদায় করিতেন সওয়ারীর মুখ যেদিকেই থাকুক না কেন। মালিক [রহঃ] বলেন ঃআবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রহঃ] বলেছেনঃ ইবনি উমর [রাঃআঃ] -ও অনুরূপ করিতেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ কিবলার ব্যাপারে ভুল প্রকাশিত হলে কি করিতে হইবে
৪৯৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন ঃএকবার কুবার মসজিদে লোকেরা ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় সেখানে এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলিলেন যে, রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর উপর [আল্লাহ্র কালাম] অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাঁকে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আপনারাও কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করুন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী ছিলেন, একথা শুনে তাঁরা [নামাজ অবস্থাতেই] কাবার দিকে ঘুরে গেলেন।
নামাজ কত রাকাত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply