নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা বা আড়
নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা বা আড় >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় ৪ঃ নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা বা আড়
পরিচ্ছেদ ৫৫. মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিধান
পরিচ্ছেদ ৫৬. সলাতে সুতরাহ – এর উচ্চতার পরিমাণ
পরিচ্ছেদ ৫৭. সুতরাহ গ্রহনের নির্দেশ ও তার প্রশস্ততার কোন সীমারেখা নেই
পরিচ্ছেদ ৫৮. নামাজ বিনষ্টকারী বিষয়সমূহের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৫৯. মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর সাথে কেমন আচরণ করা হইবে
পরিচ্ছেদ ৬০. কোন কিছু না থাকলে রেখা টেনে সুতরাহ দেয়া বৈধ
পরিচ্ছেদ ৬১. নামাজকে কোন কিছু বিনষ্ট করিতে পারে না
পরিচ্ছেদ ৫৫. মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিধান
২২৮ – আবূ জুহাইম বিন্ হারিস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজ আদায় কারী ব্যক্তির সন্মুখে দিয়ে অতিক্রম করার পাপ সম্বন্ধে যদি অতিক্রমকারী জানতো তবে সে তার সন্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ [বছর] দাঁড়িয়ে থাকাকেই তার জন্য শ্রেয় মনে করতো। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। {২৬২} বায্যারে ভিন্ন সানাদে`চল্লিশ বছর’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। {২৬}
{২৬২} বুখারী ৫১০; মুসলিম ৫০৭; হাদিসের শব্দবিন্যাস বুখারী-মুসলিম উভয়ের। সুতরাং ইবনু হাজারের পক্ষে এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, [আরবী] শব্দ বিন্যাস বুখারীর। ইবনু হাজার যদি [আরবী] শব্দের কারনে একে বুখারীর শব্দ উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন তা সঠিক নয়। কেননা, এ শব্দ বুখারীতে নেই, তেমনি মুসলিমেও নেই। সুতরাং এ শব্দটি বিলুপ্ত হওয়ার যোগ্য। বিঃ দ্রঃ বুখারী ও মুসলিম আবূ নাযর- এর থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের কিছু অংশ হচ্ছেঃ [আরবী] আমি জানি নাঃ তিনি চল্লিশ দিনের না মাসের নাকি বছরের কথা বলিলেন। {২৬৩} এ কথাটি শেষ। এটা ইবনু উয়ায়নাহ [রহঃ] এর ভুলসমূহের একটি। তিনি হাদিসের সনদে এবং মতনে ভুল করিতেন। মতনের ভুল হচ্ছেঃ [আরবী] কথাটি। আর সনদের ভুল হচ্ছেঃ তিনি সাওরী, মালিক এবং অন্যান্যের বিপরীত করিয়াছেন। নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫৬. সলাতে সুতরাহ – এর উচ্চতার পরিমাণ
২২৯ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,`তাবুক যুদ্ধে’ নাবী [সাঃআঃ] নামাজ আদায়কারীর সুত্রা [আড়] সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেনঃ তা উটের পালানের পেছনের কাঠির সমপরিমাণ হইবে। {২৬৪}
{২৬৪} মুসলিম ৫০০। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫৭. সুতরাহ গ্রহনের নির্দেশ ও তার প্রশস্ততার কোন সীমারেখা নেই
২৩০ – সাবরাহ বিন্ মা’বাদ আল জুহ্নী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজ আদায় করার সময় সুত্রা করে নেবে যদিও একখানা তীর দিয়ে তা করা হয়। হাকিম। {২৬৫}
{২৬৫} হাসান। হাকিম ১/২৫২ । যে শব্দে ইবনু হাজার আসক্বালানী হাদিসটি উল্লেখ করিয়াছেন তা মুসান্নিফ ইবনু আবূ শাইবার [১/২৭৮] হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫৮. নামাজ বিনষ্টকারী বিষয়সমূহের বর্ণনা
২৩১ – আবূ যার গিফারী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজ আদায় করার সময় যদি উটের পালানের শেষাংশের কাঠির পরিমাণ একটা সুত্রাহ দেয়া না হয় আর উক্ত মুসল্লীর সন্মুখ দিয়ে [প্রাপ্ত বয়স্কা] স্ত্রীলোক, গাধা ও কালো কুকুর অতিক্রম করলে নামাজ [এর-একাগ্রতা] নষ্ট হয়ে যাবে। এটা একটা দীর্ঘ হাদিসের খণ্ডাংশ।’ তাতে একস্থানে আছেঃ কাল কুকুর হচ্ছে শয়তান। {২৬৬}
{২৬৬} মুসলিম ৫১০। হাফেজ ইবনু হাজার এখানে হাদিস বর্ণনায় অর্থগত দিককে গ্রহণ করিয়াছেন। কেননা, হাদিসের শব্দ মুসলিমে যেভাবে রয়েছে, তা হচ্ছেঃ [আরবী] যখন তোমাদের কেউ সলাতে দাঁড়াবে তখন সে উটের পালানের শেষ অংশের লাঠির মত এক কিছু দিয়ে তার সামনে [সুতরা] আড়াল করে নেয়। তার সামনে যদি এ পরিমাণ কোন আড়াল না থাকে তাহলে গাধা, নারী এবং কালো কুকুর তার নামাজকে কর্তন [নষ্ট] করে দিবে। আব্দুল্লাহ বিন সামিত বলেন, আমি বললাম, হে আবূ জার! লাল, হলুদ কুকুর চেয়ে কালো কুকুরের আবার কি হলো? তিনি বলিলেন হে ভাতিজা! আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেন`কালো কুকুর হলো শয়তান। নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস।
২৩২ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
সহিহ মুসলিমে কুকুরের কথা ব্যতীত আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। {২৬৭}
{২৬৭} মুসলিম ৫১১; মুসলিমের শব্দসমূহ হচ্ছেঃ “[আরবী]” নামাজকে কর্তন [নষ্ট] করে দেয়- নারী, গাধা, কুকুর। আর এ হতে রক্ষা করিবে`উটের পালানের শেষ অংশের লাঠির মত কিছুর [সুতরা] আড়াল’। “[আরবী]” বলাটা হয়ত ইবনু হাজারের ভুল। যেহেতু এই [আরবী] শব্দটি মুসলিমে রয়েছে। অথবা তিনি এখানে কুকুরের গুণ বর্ণনা করিয়াছেন। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
২৩৩ – আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তবে তাতে উক্ত হাদিসের শেষাংশ [কুকুরের উল্লেখ] নাই এবং তাতে নারীকে`হায়িযা [হায়িয শুরু হয়েছে এমন বয়সের] বিশেষণের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। {২৬৮}
{২৬৮} মারফূ হিসেবে সহিহ। আবূ দাউদ ৭০৩; আবূ দাউদের শব্দসমূহ হচ্ছেঃ “[আরবী]” নামাজকে কর্তন [নষ্ট] করে দেয় হায়েযা নারী ও কুকুর। নাসায়ি হাদিস [২/৬৪] ইবনু আব্বাস হতে হাদিসটিকে মারফূ’ ও মাওকূফ’ উভয় সূত্রেই বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ মারফু
পরিচ্ছেদ ৫৯. মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর সাথে কেমন আচরণ করা হইবে
২৩৪ – আবূ সা’ঈদ খুদ্রী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি লোকেদের জন্য সামনে সুতরা রেখে নামাজ আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে সে যেন তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যক্তি [মুসল্লী] যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে শয়তান। {২৬৯}
{২৬৯} বুখারী ৫০৯ মুসলিম ৫০৫। মুসলিমে আছে- “[আরবী]” সে তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বাধা দিবে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
২৩৫ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
ভিন্ন এক বর্ণনায় রয়েছে,`ঐ ব্যক্তির সঙ্গে শয়তান তার সাথী রয়েছে।’ {২৭০}
{২৭০} মুসলিমে [৫০৬] ইবনু উমার হতে বর্ণিত। আল্লামা সনয়ানী সুবুলুস সালামে ভুলক্রমে এ হাদিসটিকে আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত বলে উল্লেখ করিয়াছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৬০. কোন কিছু না থাকলে রেখা টেনে সুতরাহ দেয়া বৈধ
২৩৬ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করিতে যাবে তখন যেন তার সন্মুখে কিছু স্থাপন করে, না পেলে লাঠি খাড়া করে দেয়, তাও যদি না হয় তাহলে একটা রেখা টেনে দিবে। এর ফলে সুত্রার বাইরে সামনে দিয়ে কেউ গেলে কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। আহমাদ, ইবনু মাজাহ। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। যিনি এটিকে`মুযতারিব্’ [শব্দ বিন্যাসে ত্রুটি] বলে ধারনা করিয়াছেন তিনি ভুল করিয়াছেন। বরং হাদিসটি হাসান। {২৭১}
{২৭১} সনদে ইযতিরাব এবং কতক রাবীর সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে হাদিসটি জঈফ। হাদিসটিকে যারা জঈফ বলেছেন তারা হচ্ছেনঃ সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ, শাফিয়ী, বাগাবী, ইরাকী এবং অন্যান্য আয়েম্মাগণ। হাদিসটিকে আহমাদ [২/২৪৯, ২৫৫, ২৬৬], ইবনু মাযাহ [৯৪৩]; ইবনু হিব্বান [২৩৬১] বর্ণনা করিয়াছেন। হাফেজ ইবনু হাজার হাদিসটিকে ইযতিরাব হওয়া অস্বীকার করিয়াছেন। তবে হাদিসটিকে সুন্দর বলা যাবে না। কেননা, যদি আমরা ইযতিরাব না হওয়া মেনে নেই তবুও তাতে [আরবী] তথা অস্পষ্টতা থেকে যায়। আর হাফিয ইবনু হাজার নিজেই এর কতক রাবী সম্পর্কে অজ্ঞতার হুকুম দিয়েছেন। ইবনু হাজার আসকালানসী তাহাঁর তালখীসে [২/৪৭১] বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনু মাদীনী সহিহ বলেছেন। সুফীয়ান বিন ওয়াইনাহ হাদিসটিকে দুর্বল বলে অভিহিত করিয়াছেন। ইমাম যাহাবী মিযানুল ই’তিদাল গ্রন্থে [১/৪৭৫] ইমাম যাহাবী বলেন, হাদিসটি উযরী থেকে ইসমাঈল বিন`উমাইয়া এককভাবে বর্ণনা করেন এবং হাদিসটিতে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে।তামামুল মিন্নাহ ৩০০, যয়ীফুল জামে’ ৫৬৯, ইবনু মাজাহ ৬৮৯ গ্রন্থত্রয়ে হাদিসটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদরীবুর রাবী [১/৪২৯] গ্রন্থে ইমাম সুয়ূতী বলেন, আলী ইসমাঈলকে নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হয়েছে।নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ৬১. নামাজকে কোন কিছু বিনষ্ট করিতে পারে না
২৩৭ – আবূ সা’ঈদ খুদ্রী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন কিছুই নামাজকে বিনষ্ট করিতে পারবে না; তবে তোমরা সাধ্যানুযায়ী প্রতিহত করিতে [বাধা দিতে] থাকিবে। এর সানাদ দুর্বল। {২৭২}
{২৭২} জঈফ। আবূ দাউদ ৭১৯, হাদিসের বাকী অংশ হচ্ছেঃ [আরবী] সে তো শয়তান। এ হাদিসের এক বারীতে ত্রুটি রয়েছে। তিনি হচ্ছেন, মুজালিদ বিন সাঈদ। সে দুর্বল। তারপরও কথা হচ্ছে যে, ঐ রাবী হাদীসে ইযতিরাব করেছে। সে কখনও হাদিসটিকে মারফূ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন আবার কখনো মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তানকীহুত তাহক্বীক্ব [১/১৮৭] গ্রন্থে ইমাম যাহাবী বলেন,এ হাদিসের সনদে ইবরাহীম খুযী আছে,তিনি পরিত্যক্ত।নাইলুল আওতার [৩/১৫] গ্রন্থে ইমাম শাওকানীর উক্ত রাবীকে দুর্বল আখ্যায়িত করিয়াছেন।ফাতহুর বারতে [২/১৯৬] গ্রন্থে ইবনে রজব উক্ত রাবীকে অত্যন্ত দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন।এছাড়া তুহফাতুল আহওয়াযী [২/১৩৭] গ্রন্থে আব্দুর রহমান মুবারকপুরী,ইবরাহীম বিন ইয়াযিদ আলখুযীকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন।নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply