নামাজে হাত উত্তোলন করা ও হাত বাঁধার স্থান

নামাজে হাত উত্তোলন করা ও হাত বাঁধার স্থান

নামাজে হাত উত্তোলন করা ও হাত বাঁধার স্থান >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ১১৬-১২০ =৫টি

অনুচ্ছেদ-১১৬ রাফউল ইয়াদাইন (নামাজে দুহাত উত্তোলন)
অনুচ্ছেদ-১১৭ নামায শুরু করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১১৮ দু রাকআত নামায আদায়ের পর (তৃতীয় রাকআতের জন্য) উঠার সময় দু হাত উত্তোলন
অনুচ্ছেদ-১১৯ রুকুর সময় হাত না উঠানোর বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-১২০ নামাযরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা

অনুচ্ছেদ১১৬ রাফউল ইয়াদাইন (নামাজে দুহাত উত্তোলন)

৭২১. সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে নামায আরম্ভকালে নিজের দু হাত স্বীয় কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। অনুরূপভাবে রুকুতে গমনকালে এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরও তাকে হাত উঠাতে দেখেছি। তবে তিনি দুসাজদাহ্‌র মাঝে হাত উঠাতেন না।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২২,.আবদুল্লা ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে দাঁড়ানোর সময় স্বীয় দুহাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকুতে গমনকালেও দুহাত উপরে উঠাতেন। রুকু থেকে উঠার সময়ও দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে “সামিআল্লাহু লিমান্‌ হামিদাহ্‌”-বলিতেন। তবে তিনি সাজদাহ্‌র সময় হাত উঠাতেন না। প্রত্যেক রুকুর জন্য তাকবীর বলার সময়, দুহাত উঠাতেন এবং এভাবেই নামায সম্পন্ন করতেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২৩. আবু ওয়ায়িল ইবনি হুজর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে নামায আদায় করেছি। তিনি তাকবীর বলার সময় স্বীয় দুহাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর স্বীয় হাত কাপড়ে ঢুকিয়ে ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি রুকুতে গমনকালে স্বীয় দুহাত বের করে উপরে উঠাতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময়ও দুহাত উপরে উঠাতেন। তারপর সাজদাহ্‌তে স্বীয় চেহারা দু হাতের তালুর মধ্যবর্তী স্থানে রাখতেন। অতঃপর সাজদাহ্‌ থেকে মাথা উত্তোলনের সময়ও দুহাত উত্তোলন করতেন। এরূপে তিনি তাহাঁর নামায শেষ করতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বলেন, আমি হাসান ইবনি হাসানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামায আদায়ের পদ্ধতি এরূপই ছিল। যে লোক এর অনুসরণ করেছে- সে তো করেছে আর যে তা বর্জন করেছে-সে তো তা বর্জন করেছে।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিস ইবনি জাহদাহ হইতে হাম্মাদ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাতে সাজদাহ্‌ থেকে মাথা উঠানোর সময় হাত উত্তোলনের কথা উল্লেখ নেই। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২৪.আবদুল জব্বার ইবনি ওয়ায়িল থেকে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তাহাঁর পিতা নাবী (সাঃআঃ) কে নামাজে দাঁড়িয়ে স্বীয় দুহাত কাঁধ পর্যন্ত এবং বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবীর বলিতে দেখেছেন। {৭২৩}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭২৫. আবদুল জাব্বার ইবনি ওয়ায়িল হইতে বর্ণিতঃ

আমার পরিবারের লোকজন আমার পিতার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি (আমার পিতা) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে তাকবীর বলার সময় দুহাত উঠাতে দেখেছেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২৬. ওয়ায়িল ইবনি হুজর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রসূলুলাহ (সাঃআঃ) এর নামায আদায়ের পদ্ধতি দেখাব। তিনি বলেন, (তা হচ্ছে এরূপঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ক্বিবলাহ্‌মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে স্বীয় দুহাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করেন। তারপর ডান হাত দিয়ে স্বীয় বাম হাত ধরেন এবং রুকুতে গমনকালে স্বীয় দুহাত তদ্রূপ উত্তোলন করেন। অতঃপর তিনি তাহাঁর উভয় হাতকে হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখেন। রুকু হইতে মাথা উত্তোলনের সময়ও তিনি উভয় হাত ঐভাবে উত্তোলন করেন। এরপর তিনি তাহাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন এবং বাম হাত বাম ঊরুর উপর এবং ডান হাত ডান ঊরুর উপর আলাদাভাবে রাখেন। অতঃপর তিনি তাহাঁর ডান হাতের কনিষ্ট ও অনামিকা অঙ্গুলিদ্বয় আবদ্ধ রাখেন এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ঈশারা করেন। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি তাকে এভাবে বলিতে দেখেছি। আর বিশ্‌র নিজের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২৭. আসিম হইতে বর্ণিতঃ

এ সুত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজের ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি ও জোড়া আঁকড়ে ধরেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি কয়েকদিন পর সেখানে গিয়ে দেখলাম, সাহাবীগন প্রচণ্ড শীতের দরুণ শরীর আবৃত করে রেখেছেন। এ সময় তাঁদের হাতগুলো নিজ নিজ কাপড়ের নীচে নড়াচড়া করছিল (রফউল ইয়াদাইনের কারণে)।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২৮. ওয়ায়িল ইবনি হুজর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে নামায আরম্ভকালে স্বীয় দু হাত নিজের কান পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কয়েকদিন পর সেখানে গিয়ে দেখলাম, সাহাবীগণ নামায আরম্ভকালে তাহাঁদের হাতগুলো বুক পর্যন্ত উঠাচ্ছেন। এ সময় তাঁদের শরীর কোট ও অন্যান্য কাপড়ে আবৃত ছিল।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১১৭ নামায শুরু করা সম্পর্কে

৭২৯. ওয়ায়িল ইবনি হুজর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি শীতের সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে দেখলাম যে, তাহাঁর সাহাবীগণ নামাযরত অবস্থায় তাহাঁদের কাপড়ের ভিতর থেকে নিজ হাত উত্তোলন করছিলেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩০. মুহাম্মাদ ইবনি আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুমায়িদ আস-সাঈদী (রাঃআঃ) কে দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে- যাঁদের মধ্যে আবু কাতাদাহ (রাঃআঃ) ছিলেন- বলিতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নামায সম্পর্কে আমি আপনাদের চেয়ে অধিক অবগত। তাঁরা বলিলেন, সেটা আবার কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো তাহাঁর অনুসরণ ও সাহচর্যের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে বেশি অগ্রগামী নন। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। এরপর তারা বলিলেন, এখন আপনি আপনার বক্তব্য পেশ করুন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে দাঁড়ানোর সময় নিজের দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে পূর্ণরূপে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এরপর ক্বিরাআত পড়ে তাকবীর বলে রুকুতে গমনকালে স্বীয় দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তারপর রুকুতে গিয়ে দু হাতের তালু দ্বারা হাটুদ্বয় দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতেন। রুকুতে তাহাঁর মাথা পিঠের সাথে সমান্তরাল থাকতো। এরপর রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌” বলে তিনি স্বীয় দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তিনি সাজদাহ্‌য় যেতেন, সাজদাহ্‌তে বাহুদ্বয় স্বীয় পাঁজরের পাশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। তারপর সাজদাহ্‌ হইতে মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তাতে সোজা হয়ে বসতেন এবং সাজদাহ্‌কালে স্বীয় পায়ের আঙ্গুলগুলি ফাঁকা করে রাখতেন। এরপর আবার সাজদাহ্‌য় যেতেন এবং আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্‌ হইতে মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তাতে সোজা হয়ে বসতেন, এমনকি প্রতিটি হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত। এরপর পরের রাকআতও অনুরূপভাবে আদায় করতেন। অতঃপর যখন দু রাকাত শেষে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলে দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন, ঠিক যেমনটি করতেন নামায আরম্ভকালে তাকবীর বলে। অতঃপর এভাবেই তাহাঁর অবশিষ্ট নামায আদায় করতেন। অতঃপর শেষ রাকআতে স্বীয় বাম পা ডান পাশে বের করে বাম পাশের পাছার উপর ভর করে বসতেন। তখন তারা সকলেই বলিলেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এভাবেই নামায আদায় করতেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩১. মুহাম্মাদ ইবনি আমর আল-আমিরী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি সাহাবীগনের মাজলিসে উপস্থিত হই। সেখানে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামায সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। তখন আবু হুমায়দ(রাঃআঃ) বলেন….. তারপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদিসের অংশ বিশেষ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিনি রুকুতে স্বীয় হাতের তালু দ্বারা হ্যাঁটু মজবুতভাবে ধরতেন, হাতের অঙ্গুলিগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন রাখতেন এবং স্বীয় মাথা পিঠের সাথে সমান্তরাল রাখতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দু রাকাত নামায শেষে বসার সময় বাম পায়ের উপর বসতেন এবং ডান পায়ের পাতা দাঁড় করে রাখতেন। তারপর চতুর্থ রাকআতে বসার সময় স্বীয় দু পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম পাশের পাছার উপর ভর করে বসে যেতেন।

সহিহ, তবে তাহাঁর (আরবী) কথাটি বাদে। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩২. মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনিআত্বা সুত্র হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সাজদাহ্তে নিজের দু হাত একেবারে বিছিয়েও দিতেন না আবার তা শরীরের সাথে মিলিয়েও রাখতেন না। তিনি তাহাঁর পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলাহ্মুখী করে রাখতেন।

সহীহঃ বোখারি। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩৩. আব্বাস অথবাআইয়্যাশ ইবনি সাহল আস-সাঈদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি সাহাবীগনের একটি মাজলিসে উপস্থিত হন, যেখানে তাহাঁর পিতা, আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ), আবু হুমায়িদ আস-সাঈদী এবং আবু উসায়িদ (রাঃআঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। এ সুত্রে উপরোক্ত হাদিস কিছুটা হ্রাসবৃদ্ধিসহ বর্ণিত হয়েছে। তাতে বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাঃআঃ) রুকু হইতে মাথা উঠিয়েসামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌ আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হাম্‌দ বলে নিজের দু হাত উত্তোলন করতেন। তারপর আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্‌য় যেতেন এবং সাজদাহ্‌তে হাতের তালু, হাঁটু ও পায়ের পাতার উপর ভর করতেন। তারপর তিনি আল্লাহু আকবার বলে (সাজদাহ্‌ হইতে উঠে) বাম পার্শ্বের পাছার উপর ভর করে বসতেন আর অন্য পা সোজা করে রাখতেন। তারপর তাকবীর বলে সাজদাহ্‌য় যেতেন এবং পুনরায় তাকবীর বলে সাজদাহ্‌ হইতে উঠে বাম পার্শ্বের পাছার উপর না বসে দাঁড়িয়ে যেতেন। অতঃপর (পুরো) হাদিস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি দু রাকআত নামায শেষে বসার পর (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়ানোর ইচ্ছা করলে তাকবীর বলে দাঁড়াতেন এবং (এভাবে) অবশিষ্ট দু রাকআত নামায আদায় করতেন। কিন্তু তাতে শেষ বৈঠকে বাম পার্শ্বের পাছার উপর বসার কথা উল্লেখ নেই। {৭৩২}

{৭৩২} দারিমী (অধ্যায়ঃ নামায, হাঃ ১৩০৭) ফালীহ ইবনি সুলায়মান সুত্রেআব্বাস ইবনি সাহল হইতে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৩৪. আব্বাস ইবনি সাহল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুমায়িদ, আবু উসায়িদ, সাহল ইবনি সাদ এবং মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ (রাঃআঃ) একটি মাজলিসে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নামাজের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তখন আবু হুমায়দ (রাঃআঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামায সম্পর্কে আমি আপনাদের চেয়ে অধিক অবগত … অতঃপর তিনি এখানে অংশ বিশেষ বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) রুকুতে নিজের দু হাতে শক্তভাবে হাঁটুদ্বয় ধরে রাখতেন এবং দু হাতকে তাহাঁর পার্শ্বদেশ হইতে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সাজদাহ্তে নাক ও কপাল মাটির সাথে মিলিয়ে রাখতেন এবং দু হাতকে তাহাঁর পার্শ্বদেশ হইতে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে মাথা উঠাতেন যে, শরীরের সমস্ত সংযোগ স্থান স্ব স্ব স্থানে স্থাপিত হত। অতঃপর বসে বাম পা বিছিয়ে দিতেন, ডান পায়ের সম্মুখ ভাগ ক্বিবলামুখী করে রাখতেন, ডান হাতের তালু ডান পায়ের ঊরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম পায়ের ঊরুর উপর রাখতেন এবং তাহাঁর (শাহাদাত) আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাদিসটিউত্বাহ ইবনি আবু হাকীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)আবদুল্লা হইতেআব্বাস ইবনি সাহল সুত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাতে বাম পার্শ্বের পাছার উপর বসার কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি ফুলাইহর এর অনুরূপ হাদিস উল্লেখ করেন। আর হাসান ইবনিল হুর বসার পদ্ধতি উল্লেখ করিয়াছেন ফুলাইহ্ ওউত্বাহর বর্ণনার অনুরূপ। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩৫. আবু হুমায়িদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

সুত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি সাজদাহ্তে স্বীয় পেট উরু থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। {৭৩৪}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাদিসটি ইবনিল মুবারাক ও অন্যান্য সুত্রেও বর্ণিত হয়েছে। {৭৩৪} তিরমিযী (অধ্যায়ঃ নামায, হাঃ ২৬০, ঈমাম তিরমিযী বলেন, আবু হুমাইদের হাদিসটি হাসান সহিহ), ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ নামায কায়িম, অনুঃ রুকুতে গমনকালে রফউল ইয়াদাইন করা, হাঃ ৮৬৩), ইবনি খুযাইমাহ (৫৮৯), সকলেআব্বাস ইবনি সাহল হইতে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৩৬. আবদুল জাব্বার ইবনি ওয়ায়িল তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এর সুত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাঃআঃ) সিজদায় গমনকালে যমীনে স্বীয় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখতেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, সাজদাহ্তে তিনি নিজের দু হাতের তালুর মধ্যবর্তী স্থানে কপাল রাখতেন এবং দু হাত বগল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। {৭৩৫}

দুর্বল। আসিম ইবনি কুলাইব তাহাঁর পিতা হইতে নাবী (সাঃআঃ) এর সুত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, যথা সম্ভব মুহাম্মাদ ইবনি জুহাদাহ্র বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি দাঁড়ানোর সময় উরু ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।{৭৩৫} ৭২৪ নং হাদীসে এর সনাদের উপর আলোচনা গত হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৩৭.আবদুল জাব্বার ইবনি ওয়ায়িল থেকে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে তাকবীর বলার সময় তাহাঁর দুহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের নিম্নভাগ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। {৭৩৬}

{৭৩৬} আহমাদ (৪/৩১৬), নাসায়ী (৮৮১), সকলে ফিত্বর ইবনি খুলাইফা সূত্রেআবদুল জাব্বার হইতে। আল্লামা মুনযিরী বলেন, হাদিসটিআবদুল জাব্বার তার পিতা হইতে শুনেননি। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৩৮. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজের জন্য তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় নিজের দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। এমনিভাবে রুকুতে গমনকালে, রুকু হইতে সোজা হওয়ার সময় এবং দু রাকআত শেষে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময়ও দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৩৯. মায়মূন আল-মাক্কী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি দেখলেন যে,আবদুল্লা ইবনিয যুবায়ির (রাঃআঃ) লোকদের নামায আদায়কালে দাঁড়ানোর সময়, রুকু হইতে সোজা হওয়ার সময়, সাজাদাহ্‌কালে*, এবং (দু রাকআত শেষে তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় তাহাঁর দু হাত উঠালেন। অতঃপর আমি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ)-এর কাছে গিয়ে তাকে ইবনিয যুবায়িরের নামায সম্পর্কে বললাম, কাউকে তো এভাবে হাত উঠিয়ে নামায আদায় করতে দেখিনি। তিনি বলিলেন, তুমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নামাজের পদ্ধতি অবলোকন করতে চাইলে ইবনিয যুবায়িরের নামাজের অনুসরণ কর।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৪০. নাদ্‌র ইবনি কাসীর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদাআবদুল্লা ইবনি তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) খায়িফের মসজিদে আমার পাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায়কালে প্রথম সাজদাহ্‌য় যাওয়ার পর সাজদাহ্‌ হইতে মাথা উঠানোর সময় চেহারা বরাবর দু হাত উত্তোলন করিলেন। বিষয়টি আমার কাছে অপ্রীতিকর মনে হওয়ায় আমি এ ব্যাপারে উহায়িব ইবনি খালিদকে জিজ্ঞাসা করি। ফলে উহায়িব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)আবদুল্লাকে বলিলেন, তুমি এমন একটি কাজ করেছ, যা আমি ইতোপূর্বে আর কাউকে করতে দেখিনি।আবদুল্লা ইবনি তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আমার পিতাকে এরুপ করতে দেখিছি এবং আমার পিতা বলেছেন, আমিআবদুল্লা ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ)-কে এরুপ করতে দেখিছি। আমি নিশ্চিত অবগত, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এরূপ করতেন। {৭৩৯}

{৭৩৯} নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক, হাঃ ১১৪৫) নাযর ইবনি কাসীর আবু সাহল আসাদী সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৪১.নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনি উমার (রাঃআঃ) নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলার সময়, রুকুতে গমনকালে, রুকু হইতে মাথা উত্তোলনকালে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌ বলে এবং দু রাকআত নামায আদায়ের পর (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় উভয় হাত উত্তোলন করতেন। তিনি এর বর্ণনা সূত্র রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন (অর্থাৎ এটি মারফূ হাদিস)। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন, প্রথম হাদিসের দু রাকআত নামায শেষে দাঁড়ানোর সময় হাত উত্তোলনের কথাটি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সূত্রে বর্ণিত নয়। আর সাক্বাফী এটিউবাইদুল্লাহ সূত্রে ইবনি উমার (রাঃআঃ)-এর মাওকূফ বর্ণনা হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। তাতে উল্লেখ আছেঃ “তিনি দু রাকআত নামায শেষে দাঁড়ানোর সময় উভয় হাত বক্ষ পর্যন্ত উঠাতেন।” এ বর্ণনাটি সহিহ।

সহীহঃ বোখারি। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন, লাইস ইবনি সাদ, মালিক, আইউব ও ইবনি জুরায়িজ প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ এর বর্ণনা সূত্র সহাবী পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। হাম্মাদই কেবল এককভাবে হাদিসকে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী ইবনি জুরায়িজ বলেন, আমি নাফিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইবনি উমার (রাঃআঃ) কি অন্য সময়ের চেয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাহাঁর হাত অধিক উঠাতেন? তিনি বলেন, না; বরং তিনি সব সময়ই একইভাবে হাত উঠাতেন। আমি বললাম, আমাকে ইশারায় দেখিয়ে দিন। তিনি তার বুক বা তার চেয়ে একটু নীচে পর্যন্ত ইশারা করে দেখালেন। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৪২. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আবদুল্লা ইবনি উমার (রাঃআঃ) নামায আরম্ভের সময় নিজের দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন এবং রুকু হইতে মাথা উঠাবার সময় দু হাত একটু কম উপরে উঠাতেন।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমর জানা মতে বর্ণনাকারী মালিক ছাড়া কেউ হাত কম উঠানোর কথা উল্লেখ করেননি। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১১৮ দু রাকআত নামায আদায়ের পর (তৃতীয় রাকআতের জন্য) উঠার সময় দু হাত উত্তোলন

৭৪৩. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজের দু রাকআত আদায় শেষে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে উভয় হাত উঠাতেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৪৪.আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফরয নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে তাহাঁর দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি ক্বিরাআত শেষে রুকুতে গমনকালে এবং রুকু হইতে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে বসে নামায আদায়কালে তিনি এরুপ হাত তুলতেন না। তিনি দু সাজদাহ্‌র পর (অর্থাৎ দু রাকআত শেষে) দাঁড়ালে হাত উঠিয়ে তাকবীর বলিতেন।

হাসান সহিহ।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুমায়িদ আস-সাঈদী (রাঃআঃ)-এর হাদীসে রয়েছেঃ যখন তিনি নামাজের দু রাকআত আদায় শেষে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর বলে তাহাঁর দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন, যেরুপ তিনি নামায আরম্ভকালে উঠাতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭৪৫.মালিক ইবনিল হুওয়াইরিস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়, রুকুতে গমনকালে এবং রুকু হইতে উঠার সময় দু হাত কানের উপরিভাগ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৪৬. বাশীর ইবনি নাহীক হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ) বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সম্মুখে দাঁড়ালে তাহাঁর বগল দেখিতে পেতাম (অর্থাৎ তিনি হাত এতটা পৃথক রাখতেন)।উবাইদুল্লাহ ইবনি মুআয আরো উল্লেখ করেন যে, বর্ণনাকারী নাহীক বলেন, তুমি কি দেখনি আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) নামাজের সময় নাবী (সাঃআঃ) -এর সামনে যেতে পারেন না। বর্ণনাকারী মূসা ইবনি মারওয়ান তাহাঁর হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, তিনি তাকবীর বলার সময় দু হাত উত্তোলন করতেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৪৭. আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আবদুল্লা (রাঃআঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে নামাজের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাহাঁর দু হাত উঠিয়েছেন এবং রুকুতে দু হাত একত্র করে দু হাঁটুর মাঝখানে রেখেছেন। এ সংবাদ সাদ (রাঃআঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, আমার ভাই (আবদুল্লা ইবনি মাসউদ) সত্যই বলেছেন। পূর্বে আমরা এরূপই করেছি। পরবর্তীতে আমাদেরকে এরূপ (দু হাঁটুর মাঝখানে হস্তদ্বয় স্থাপন) করা হইতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১১৯ রুকুর সময় হাত না উঠানোর বর্ণনা

৭৪৮. আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আবদুল্লা ইবনি মাসউদ (রাঃআঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামায কিরূপ ছিল তা শিক্ষা দেব না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি নামায আদায় করিলেন এবং তাতে কেবলমাত্র একবার হাত উত্তোলন করিলেন। {৭৪৭}

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি একটি দীর্ঘ হাদিসের সারসংক্ষেপ। উপরোক্ত শব্দে হাদিসটি সহিহ নয়।

তিরমিযী (অধ্যায়ঃ নামায হাঃ ২৫৭, অনুঃ নাবী (সাঃআঃ) কেবল প্রথমবারই হাত উঠিয়েছেন), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক, অনুঃ ঐরূপ না করার অনুমতি প্রসঙ্গে, হাঃ ১০৫৭) উভয়ে ওয়াকী হইতে। হাদিসটিকে ঈমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন এবং ইবনি হাযাম বলেছেন সহিহ। পক্ষান্তরে অন্যান্য ঈমামগণ এটিকে দূর্বল আখ্যায়িত করিয়াছেন। যেমন ঈমাম বোখারি, ঈমাম আহমাদ ইবনি হাম্বাল, ঈমাম নাববী, ঈমাম শওকানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমূখ ঈমামগণ হাদিসটিকে দূর্বল বলেছেন। (আল-মাজমুআহ ফী আহাদীসিল মাওযুআহ, ২০ পৃষ্ঠা)

হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৭৪৯. বারাআ ইবনিআযিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আরম্ভের সময় কেবল একবার কানের কাছাকাছি পর্যন্ত হাত উঠাতেন। এরপর আর হাত উঠাতেন না।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫০. সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিস এ সানাদে বর্ণিত হয়েছে। বর্ননাকারী বলেন, অতঃপর তিনি শুধুমাত্র প্রথমবারই একবার হাত উঠিয়েছেন। কতিপয় বর্ণনাকারী বলেন, তিনি শুধুমাত্র একবার হাত উঠান।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৫১. ইয়াযীদ হইতে এ সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

শারীকের হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাতে “তিনি এরপর আর হাত তুলেননি” কথাটির উল্লেখ নেই। সুফিয়ান বলেন, অতঃপর বর্ণনাকারী (ইয়াযীদ) আমাদের নিকট কূফা শহরে “তিনি এরপর আর হাত তুলেননি” কথাটি উল্লেখ করেন। {৭৫০}

দূর্বল।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হুশাইম, খালিদ এবং ইবনি ইদরীসও হাদিসটি ইয়াযীদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তারা “তিনি এরপর আর হাত তুলেননি” কথাটি উল্লেখ করেননি।

{৭৫০} হুমাইদীমুসনাদ (২/৩১৬) জারীর ইবনি ইয়াযীদ সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫২. বারাআ ইবনিআযিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাহাঁর দু হাত উঠাতে দেখেছি। অতঃপর নামায শেষ করা পর্যন্ত তিনি দু হাত আর উত্তোলন করেননি। {৭৫১}

দূর্বল।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি সহিহ নয়।

{৭৫১} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আল্লামা মুনযিরী বলেন, সানাদে মুহাম্মাদ ইবনিআবদুর রাহমান ইবনি আবু লায়লাহ দূর্বল। হাফিজআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার স্মরণশক্তি খুবই মন্দ। ঈমাম নাসায়ী বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। (দেখুন আওনুল মাবুদ) হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫৩. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আরম্ভকালে দু হাত উপরের দিকে প্রসারিত করে উঠাতেন।

নামাজে হাত উত্তোলন – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২০ নামাযরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা

৭৫৪. আবদুর রহমান হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনিয যুবায়ির (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, নামাজে দু পা সমান রাখা এবং এক হাতের উপর অপর হাত রাখা সুন্নাত। {৭৫৩}

{৭৫৩} এর সানাদেআলা ইবনি সালিহ এবং যুরআহ ইবনিআবদুর রহমান রহিয়াছে। হাফিজআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, মাক্ববুল। ইবনি হাজারও তাকে উল্লেখ করিয়াছেনতাহযীবুত তাহযীব গ্রন্থে (৩/২৮১) এবং বলেছেন, আবু দাউদ তার একটি মাত্র হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর তিনি হাদিসটি উল্লেখ করেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫৫. ইবনি মাসঊদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা তিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায আদায় করলে নাবী (সাঃআঃ) তা দেখিতে পেয়ে তাহাঁর বাম হাতের উপর ডান হাতকে রাখেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৫৬. আবু জুহাইফাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

আলী (রাঃআঃ) বলেছেন, নামায আদায়কালে বাম হাতের তালুর উপর ডান হাতের তালু নাভির নীচে রাখা সুন্নাত। {৭৫৫}

{৭৫৫} আহমাদ (১/১১০)। হাদিসের সানাদেআবদুর রহমান ইবনি ইসহাক্ব আল ওয়াসিত্বী দূর্বল। ইবনি সাদ, আবু দাউদ, নাসায়ী ও অন্যান্যরাও তাকে দূর্বল বলেছেন। ঈমাম বোখারিআয-যুআফা (২১) গ্রন্থে বলেন, আহমাদ বলেছেন, হাদিসটি মুনকার। সানাদে যিয়াদ ইবনি যায়িদ অজ্ঞাত। আর এ হাদিসটিআবদুল্লার অতিরিক্ত সংযোজন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫৭. ইবনি জুরাইজ হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমিআলী (রাঃআঃ)-কে নামায আদায়কালে নাভির উপরে ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরে রাখতে দেখেছি। {৭৫৬}

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাঈদ ইবনি জুবাইর সূত্রেনাভির উপরে কথাটি বর্ণিত আছে। আর আবু মিজলায বলেছেন,নাভির নীচে। আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। কিন্তু সেটি শক্তিশালী নয়।

{৭৫৬} সানাদের ইবনি জারীর যাব্বীর নাম হচ্ছে গাযওয়ান। তিনি এবং তার পিতা জারীর যাব্বী দুজনেই অজ্ঞাত। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫৮. আবু ওয়ায়িল হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি নামাজের সময় (বাম) হাতের উপর (ডান) হাতকে নাভির নীচে রাখি। {৭৫৭}

দূর্বল।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি শুনিয়াছি, ঈমাম আহমাদ ইবনি হাম্বাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সানাদেরআবদুর রাহমান ইবনি ইসহাক আল-কূফীকে দূর্বল বর্ণনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন।

{৭৫৭} সানাদেরআবদুর রহমান ইবনি ইসহাক্ব কূফীকে ঈমাম আহমাদ ও ইবনি হাজার দূর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৫৯. তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আদায়কালে স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের উপর বাঁধতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply