মসজিদ ও নামাজের স্থান সমূহের বর্ণনা

মসজিদ ও নামাজের স্থান সমূহের বর্ণনা

মসজিদ ও নামাজের স্থান সমূহের বর্ণনা , এই পর্বের হাদীস =১০০ টি (২৯৮ – ৩৯৭) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৫ঃ মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের বর্ণনা

০/০. মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের বর্ণনা
৫/১. মাসজিদে নাববী [সাঃআঃ] নির্মাণ।
৫/২. বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কাবার দিকে ক্বিবলা পরিবর্তন।
৫/৩. ক্ববরের উপর মাসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ।
৫/৪. মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান।
৫/৫. রুকূতে গিয়ে দু হাত হাঁটুতে রাখার নির্দেশ এবং তাত্‌বীক [দুহাত মিলিয়ে দু হাঁটুর মধ্যে রাখা] মানসুখ হওয়া।
৫/৭. সলাতে কথা বলা নিষিদ্ধ এবং তা [কথা বলা]র বৈধতা রহিত হওয়া প্রসঙ্গে।
৫/৮. সলাতের মধ্যে শয়তানকে অভিসম্পাত করা বৈধ।
৫/৯. সলাত আদায়কালে শিশুদেরকে বহন করা বৈধ।
৫/১০. সলাতরত অবস্থায় দুএক পা আগ পিছ হওয়া বৈধ।
৫/১১. সলাতাবস্থায় কোমরে হাত রাখা মাকরূহ [অপছন্দনীয়]
৫/১২. সলাতে কঙ্কর স্পর্শ করা এবং মাটি সমান করা অপছন্দনীয়।
৫/১৩. সলাতে বা সলাতের বাইরে মাসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ।
৫/১৪. জুতা পরে সলাত আদায় করা বৈধ।
৫/১৫. নক্‌শা বিশিষ্ট কাপড় পরে সলাত অপছন্দনীয়।
৫/১৬. খাবার উপস্থিত হলে সলাত অপছন্দনীয়।
৫/১৭. রসুন, পিঁয়াজ অথবা ঐ জাতীয় জিনিস খেয়ে মাসজিদে গমন নিষিদ্ধ।
৫/১৯. সলাতে ভুল-ভ্রান্তি হওয়া এবং তার জন্য সাজদাহ।
৫/২০. কুরআন তিলাওয়াতের সাজদাহ্।
৫/২৩. সলাতের পর পঠিতব্য যিক্‌র।
৫/২৪. ক্ববরের আযাব বা শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা বৈধ হওয়া।
৫/২৫. সলাতে যে সকল জিনিস থেকে আশ্রয় চাইতে হইবে।
৫/২৬. সলাত আদায়ের পর দুআ পাঠ মুস্তাহাব এবং তার পদ্ধতি।
৫/২৭. তাকবীর তাহরীমা ও সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে কী বলবে?
৫/২৮. সলাতের জন্য ধীরস্থির ও শান্তভাবে আসা মুস্তাহাব এবং দৌড়ে আসা অপছন্দনীয় হওয়া।
৫/২৯. মানুষ সলাতের জন্য কখন দাঁড়াবে।
৫/৩০. যে ব্যক্তি কোন সলাতের এক রাকআত পেল সে যেন সে সলাতই পেল।
৫/৩১. পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের সময়।
৫/৩২. যুহরের সলাত প্রখর গরমের সময় ঠাণ্ডা করে পড়া মুস্তাহাব ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি জামাআতে যায় এবং রাস্তায় তাকে রৌদ্রের তাপ লাগে।
৫/৩৩. গরমের তীব্রতা না থাকলে যুহরের সলাত নির্ধারিত সময়ের প্রারম্ভে পড়া মুস্তাহাব।
৫/৩৪. আসরের সলাত প্রথম সময়ে পড়া উত্তম।
৫/৩৫. আসরের সলাত ছুটে যাওয়ার ভয়াবহতা।
৫/৩৬. ঐ ব্যক্তির দলীল, যিনি বলেন- সলাতুল উসত্বা হচ্ছে আসরের সলাত।
৫/৩৭. ফাজ্‌র ও আসরের সলাতের মর্যাদা এবং এ দু সলাতের প্রতি যত্নবান হওয়া।
৫/৩৮. সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় মাগরিবের সলাতের প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার বর্ণনা।
৫/৩৯. ইশার সলাতের সময় এবং তা বিলম্ব করা।
৫/৪০. ফাজ্‌রের সলাত প্রথম ওয়াক্তে পড়া মুস্তাহাব আর তা হচ্ছে গালাস এবং তাতে কিরাআতের পরিমাণের বর্ণনা।
৫/৪২. জামাআতে সলাতের ফাযীলাত এবং তা থেকে পিছিয়ে থাকার ভয়াবহতার বর্ণনা।
৫/৪৭. ওজরের কারণে জামাআত থেকে পিছিয়ে থাকার অনুমতি।
৫/৪৮. নফল সলাত জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করার বৈধতা এবং মাদুর, কাপড় ইত্যাদি পবিত্র জিনিসের উপর সলাত আদায় করা।
৫/৪৯. জামাআতে সলাতের ফাযীলাত এবং সলাতের জন্য অপেক্ষা করা।
৫/৫০. দূর হইতে মাসজিদে আসার ফাযীলাত।
৫/৫১. সলাতের জন্য হেঁটে যাওয়া পাপ মোচন করে ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
৫/৫৩. ইমামাতের জন্য কে বেশি হকদার।
৫/৫৪. মুসলিমদের প্রতি কোন বিপদ পতিত হলে প্রত্যেক সলাতে কুনূতে নাযিলাহ পড়া মুস্তাহাব।
৫/৫৫. ছুটে যাওয়া সলাত আদায় করা এবং তা অবিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব।

০/০. মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের বর্ণনা

২৯৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ তৈরী করা হয়েছে? তিনি বলিলেন, মাসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোন্‌টি? তিনি বলিলেন, মাসজিদে আক্‌সা। আমি বললাম, উভয় মাসজিদের [তৈরীর] মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বলিলেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সলাতের সময় হইবে, সেখানেই সলাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফাযীলাত নিহিত রয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৬০ : /১০ হাঃ ৩৩৬৬, মুসলিম হাঃ] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২৯৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ.

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নাবীকে দেয়া হয়নি। [১] আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। [২] সমস্ত যমীন আমার জন্যে সলাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সলাতের ওয়াক্ত হয় [সেখানেই] যেন সলাত আদায় করে নেয়। [৩] আমার জন্যে গনীমত হালাল করা হয়েছে। [৪] অন্যান্য নাবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হইতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। [৫] আমাকে সার্বজনীন সুপারিশের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৫৬ হাঃ ৪৩৮, মুসলিম হাঃ] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তিসহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ।

[বোখারী পর্ব ৫৬ : /১২২ হাঃ ২৯৭৭, মুসলিম ৫/৫ হাঃ ৫২৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১. মাসজিদে নাববী [সাঃআঃ] নির্মাণ।

৩০১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] মাদীনায় পৌঁছে প্রথমে মাদীনার উচ্চ এলাকার অবস্থিত বানূ আমর ইবনি আওফ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাহাদের সঙ্গে নাবী [সাঃআঃ] চৌদ্দ দিন [অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন] অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হলো। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখিতে পাচ্ছি যে, নাবী [সাঃআঃ] ছিলেন তাহাঁর বাহনের উপর, আবু বকর [রাদি.] সে বাহনেই তাহাঁর পেছনে আর বানূ নাজ্জারের দল তাহাঁর আশেপাশে। অবশেষে তিনি আবু আয়্যূব আনসারী [রাদি.]-র ঘরের সাহানে অবতরণ করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] যেখানেই সলাতের ওয়াক্ত হয় সেখানেই সলাত আদায় করিতে পছন্দ করিতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোঁয়াড়েও সলাত আদায় করিতেন। এখন তিনি মাসজিদ তৈরি করার নির্দেশ দেন। তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বানূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ হইতে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ না, আল্লাহ্‌র কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকটই আশা করি। আনাস [রাদি.] বলেনঃ আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুর গাছ। নাবী [সাঃআঃ]-এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হলো, অতঃপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হলো, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো, অতঃপর মাসজিদের কিবলায় সারিবদ্ধ করে রাখা হলো এবং তার দু পাশে পাথর বসানো হলো। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নাবী [সাঃআঃ]-ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেনঃ

اللهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْفَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ

“ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত [প্রকৃত] আর কোন কল্যাণ নেই। তুমি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা কর।”

[বোখারী পর্ব ৮ : /৪৮ হাঃ ৪২৮, মুসলিম পর্ব ৫ :/১ হাঃ ৫২৪]নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২. বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কাবার দিকে ক্বিবলা পরিবর্তন।

৩০২. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সলাত আদায় করিয়াছেন। আর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] কাবার দিকে কিবলাহ করা পছন্দ করিতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ

قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ

“আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি”- [আল-বাক্বারাহঃ ১৪৪]। অতঃপর তিনি কাবার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা- তারা ইয়াহুদী, বলতো, “তারা এ যাবত যে কিবলাহ অনুসরণ করে আসছিলো, তা হইতে কিসে তাহাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বলুনঃ [হে নাবী] পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্‌রই। তিনি যাকে ইচ্ছে সঠিক পথে পরিচালিত করেন”- [আল-বাক্বারাহঃ ১৪২]। তখন নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এক ব্যক্তি সলাত আদায় করিলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সলাতের সময় আনসারগণের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ [তিনি নিজেই] সাক্ষী যে, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এর সঙ্গে তিনি সলাত আদায় করিয়াছেন, আর তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কাবার দিকে মুখ করিয়াছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩১ হাঃ ৩৯৯, মুসলিম পর্ব ৫ : /২ হাঃ ৫২৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৩. বারাআ [ইবনি আযিব] [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ষোল অথবা সতের মাস ব্যাপী [মাদীনাহ্‌তে] বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছি। অতঃপর আল্লাহ তাঁকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ : /১৮ হাঃ ৪৪৯২, মুসলিম পর্ব ৫ : /২ হাঃ ৫২৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাহাদের নিকট এক ব্যক্তি এসে বলিলেন যে, এ রাতে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। আর তাঁকে কাবামুখী হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই তোমারা কাবার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল শামের [বায়তুল মুকাদ্দাসের] দিকে। একথা শুনে তাঁরা কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩২ হাঃ ৪০৩, মুসলিম ৫/২, হাঃ ৫২৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩. ক্ববরের উপর মাসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ।

৩০৫,. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উম্মু হাবীবাহ ও উম্মু সালামাহ [রাদি.] হাবশায় তাঁদের দেখা একটা গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বর্ণনা করিলেন। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাহাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মাসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরি করে রাখতো। কিয়ামাত দিবসে তারাই আল্লাহ্‌র নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে পরিগণিত হইবে

। [বোখারী পর্ব ৮ : /৪৮ হাঃ ৪২৭, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫২৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এর যে রোগে মৃত্যু হয়েছিল, সে রোগাবস্থায় তিনি বলেছিলেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারা সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্‌র অভিশাপ, তারা তাহাদের নাবীদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, সে আশঙ্কা না থাকলে তাহাঁর [নাবী [সাঃআঃ]-এর] ক্ববরকে উন্মুক্ত রাখা হত, কিন্তু আমি আশঙ্কা করি যে, [উন্মুক্ত রাখা হলে] একে মাসজিদে পরিণত করা হইবে।

[বোখারী পর্ব ২৩ : /৬২ হাঃ ১৩৩০, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫২৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। কেননা তারা তাহাদের নাবীদের কবরকে মাসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৫৫ হাঃ ৪৩৭, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫৩০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০৮. আয়েশা [রাদি.] ও আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেছেনঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাহাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করিতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হইতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অভিশাপ, তারা তাহাদের নাবীদের কবরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। [এ বলে] তারা যে [বিদআতী] কার্যকলাপ করত তা হইতে তিনি সতর্ক করেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৫৫ হাঃ ৪৩৬, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫৩১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৪. মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান।

৩০৯. উবায়দুল্লাহ খাওলানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উসমান ইবনি আফ্‌ফান [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, তিনি যখন মাসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেনঃ তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মাসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমার মনে হয় রাবী আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করিয়াছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৬৫ হাঃ ৪৫০, মুসলিম ৫/৪, হাঃ ৫৩৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৫. রুকূতে গিয়ে দু হাত হাঁটুতে রাখার নির্দেশ এবং তাত্‌বীক [দুহাত মিলিয়ে দু হাঁটুর মধ্যে রাখা] মানসুখ হওয়া।

৩১০. মুসআব ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলাম। এবং [রুকুর সময়] দু হাত জোড় করে উভয় উরুর মাঝে রাখলাম। আমার পিতা আমাকে এরূপ করিতে নিষেধ করিলেন এবং বলিলেন, পূর্বে আমরা এরূপ করতাম; পরে আমাদেরকে এ হইতে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাত হাঁটুর উপর রাখার আদেশ করা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১১৮ হাঃ ৭৯০, মুসলিম ৫/৫, হাঃ ৫৩৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৭. সলাতে কথা বলা নিষিদ্ধ এবং তা [কথা বলা]র বৈধতা রহিত হওয়া প্রসঙ্গে।

৩১১. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর সলাতরত অবস্থায় সালাম করতাম; তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিতেন। পরে যখন আমরা নাজাশীর নিকট হইতে ফিরে এলাম, তখন তাঁকে [সালাত আদায়রত অবস্থায়] সালাম করলে তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না এবং পরে ইরশাদ করলেনঃ সলাতে অনেক ব্যস্ততা ও নিমগ্নতা রয়েছে।

[বোখারী পর্ব ২১: /২ হাঃ ১১৯৯, মুসলিম ৫/৭, হাঃ ৫৩৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩১২. যায়দ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সময়ে সলাতের মধ্যে কথা বলতাম। আমাদের যে কেউ তার সঙ্গীর সাথে নিজ দরকারী বিষয়ে কথা বলত। অবশেষে এ আয়াত নাযিল হল-

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا للهِ قَانِتِينَ

“তোমরা তোমাদের সলাতসমূহের সংরক্ষণ কর ও নিয়ানুমবর্তিতা রক্ষা কর; বিশেষ মধ্যবর্তী [আসর] সলাতে, আর তোমরা [সলাতে] আল্লাহ্‌র উদ্দেশে একাগ্রচিত্ত হও”- [আল-বাক্বারাহ্ঃ ২৩৮। তারপর থেকে আমরা সলাতে নীরব থাকতে আদিষ্ট হলাম

। [বোখারী পর্ব ৬৫ : /৪৩ হাঃ ১২০০, মুসলিম ৫/৭, হাঃ ৫৩৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩১৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর একটি কাজে পাঠালেন, আমি গেলাম এবং কাজটি সেরে ফিরে এলাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ]-কে সালাম করলাম। তিনি জবাব দিলেন না। এতে আমার মনে এমন খটকা লাগল যা আল্লাহ্ই ভাল জানেন। আমি মনে মনে বললাম, সম্ভবত আমি বিলম্বে আসার কারণে নাবী [সাঃআঃ] আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম; তিনি জওয়াব দিলেন না। ফলে আমার মনে প্রথম বারের চেয়েও অধিক খটকা লাগল। [সলাত শেষে] আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবার তিনি সালামের জওয়াব দিলেন এবং বললেনঃ সলাতে ছিলাম বলে তোমার সালামের জওয়াব দিতে পারিনি। তিনি তখন তাহাঁর বাহনের পিঠে কিব্‌লা হইতে ভিন্নমুখী ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ২১ : /১৫ হাঃ ১২১৭, মুসলিম ৫/৭, হাঃ ৫৪০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৮. সলাতের মধ্যে শয়তানকে অভিসম্পাত করা বৈধ।

৩১৪. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গত রাতে একটা অবাধ্য জিন হঠাৎ আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যাতে সে আমার সলাতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, তাকে মাসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোর বেলা তোমরা সবাই তাকে দেখিতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান [আ]-এর এ উক্তি আমার স্মরণ হলো,

رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لأَحدٍ مِنْ بَعْدِي

“হে প্রভু! আমাকে এমন রাজত্ব দান কর, যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়”- [সূরা সোয়াদঃ ৩৫]। [বর্ণনাকারী] রাওহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] সে শয়তানটিকে অপমানিত করে ছেড়ে দিলেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৭৫ হাঃ ৪৬১, মুসলিম ৫/৮, হাঃ ৫৪১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৯. সলাত আদায়কালে শিশুদেরকে বহন করা বৈধ।

৩১৫. আবু কাতাদাহ্ আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাহাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইবনি রাবীআহ ইবনি আবদ শামস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ঔরসজাত কন্যা উমামাহ [রাদি.]-কে কাঁধে নিয়ে সলাত আদায় করিতেন। তিনি যখন সাজদাহ্য় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /১০৬ হাঃ ৫১৬, মুসলিম ৫/৯, হাঃ ৫৪৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১০. সলাতরত অবস্থায় দুএক পা আগ পিছ হওয়া বৈধ।

৩১৬. সাহল ইবনি সাদ আস সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হাযিম ইবনি দীনার [রাদি.] বলেছেন যে, [একদিন] কিছু লোক সাহল ইবনি সাদ সাঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বরটি কোন্ কাঠের তৈরি ছিল, এ নিয়ে তাহাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে তাহাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বসেন তা আমি দেখেছি। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আনসারদের অমুক মহিলার {বর্ণনাকারী বলেন, সাহল [রাদি.] তার নামও উল্লেখ করেছিলেন} নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলিতে পারি। অতঃপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে [মদীনা হইতে নয় মাইল দূরবর্তী] গাবার ঝাউ কাঠ দ্বারা তা তৈরি করে নিয়ে আসে। মহিলাটি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। অতঃপর আমি দেখেছি, এর উপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] সলাত আদায় করিয়াছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে [দাঁড়িয়ে] রুকূ করিয়াছেন। অতঃপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বরের গোড়ায় সাজদাহ্ করিয়াছেন এবং [এ সাজদাহ্] পুনরায় করিয়াছেন, অতঃপর সলাত শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার অনুসরণ করিতে এবং আমার সলাত শিখে নিতে পার।

[বোখারী পর্ব ১১ : /২৬ হাঃ ৯১৭, মুসলিম ৫/১০ হাঃ ৫৪৪৪] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১১. সলাতাবস্থায় কোমরে হাত রাখা মাকরূহ [অপছন্দনীয়]

৩১৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোমরে হাত রেখে সলাত আদায় করিতে লোকদের নিষেধ করা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ২১ : /১৭ হাঃ ১২২০, মুসলিম ৫/১১, হাঃ ৫৪৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১২. সলাতে কঙ্কর স্পর্শ করা এবং মাটি সমান করা অপছন্দনীয়।

৩১৮. মুআইকিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, যে সাজদাহ্‌র স্থান হইতে মাটি সমান করে। তিনি বলেন, যদি তোমার একান্তই করিতে হয়, তবে একবার।

[বোখারী পর্ব ২১ : /৮ হাঃ ১২০৭, মুসলিম ৫/১২, হাঃ ৫৪৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১৩. সলাতে বা সলাতের বাইরে মাসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ।

৩১৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল্ [সাঃআঃ] কিবলাহর দিকের দেয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সলাত আদায় করে সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সলাত আদায় করে তখন তার সামনের দিকে আল্লাহ তাআলা থাকেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩৩ হাঃ ৪০৬, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] একদা মাসজিদের কিবলাহর দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। অতঃপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করিলেন। কিন্তু [প্রয়োজনে] বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলতে বলিলেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩৬ হাঃ ৪১৪, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১. আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ [খুদরী] [রাযিয়াল্লাহু আনহুমা] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] মাসজিদের দেয়ালে কফ দেখে কাঁকর নিয়ে তা মুছে ফেললেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তা তার বাম দিকে অথবা তার বাম পায়ের নীচে ফেলে।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩৪ হাঃ ৪০৮, ৪০৯, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২২. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] কিবলাহর দিকের দেয়ালে নাকের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /২৩ হাঃ ৪০৭, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন যখন সলাতে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা [বাম] পায়ের নীচে ফেলে।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩৬ হাঃ ৪১৩, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৫১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারা [প্রতিকার] হচ্ছে তা দাবিয়ে দেয়া [মুছে ফেলা]।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩৭ হাঃ ৪১৫, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৫২] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১৪. জুতা পরে সলাত আদায় করা বৈধ।

৩২৫. সাঈদ ইবনি ইয়াযীদ আল-আয্‌দী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নাবী [সাঃআঃ] কি তাহাঁর নালাইন [চপ্পল] পরে সলাত আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, হাঁ।

[বোখারী পর্ব ৮ : /২৪ হাঃ ৩৮৬, মুসলিম ৫/১৪, হাঃ ৫৫৫]নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১৫. নক্‌শা বিশিষ্ট কাপড় পরে সলাত অপছন্দনীয়।

৩২৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একবার নাবী [সাঃআঃ] একটি নক্‌শা করা চাদর পরে সলাত আদায় করিলেন। সলাতের পরে তিনি বললেনঃ এ চাদরের কারুকার্য আমার মনকে নিবিষ্ট করে রেখেছিল। এটি আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে একটি আম্বজানিয়্যাহ [নকশাবিহীন মোটা কাপড়] নিয়ে এসো।

[বোখারী পর্ব ১০: /৯৩ হাঃ ৭৫২, মুসলিম ৫/১৫, হাঃ ৫৫৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১৬. খাবার উপস্থিত হলে সলাত অপছন্দনীয়।

৩২৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি খাবার উপস্থিত হয়ে যায় আর সলাতের ইকামাত দেয়া হয়, তাহলে প্রথমে রাতের খাবার খাবে।

[বোখারী পর্ব ৭০: /৫৮ হাঃ ৫৪৬৫, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিকেলের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের সলাতের পূর্বে তা খেয়ে নিবে খাওয়া রেখে সলাতে তাড়াহুড়া করিবে না।

[বোখারী পর্ব ১০: /৪২ হাঃ ৬৭২, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর সে সময় সলাতের ইক্বামাত হয়ে যায়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও।

[বোখারী পর্ব ১০: /৪২ হাঃ ৬৭১, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৬০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে থাক, তখন সলাতের ইক্বামাত হয়ে গেলেও খাওয়া শেষ না করে তাড়াহুড়া করিবে না। আবু আবদুল্লাহ্ [ঈমাম বোখারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাকে ইব্রাহীম ইবনি মুনযির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ হাদীসটি ওয়াহ্ব ইবনি উসমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং ওয়াহ্ব হলেন মাদীনাবাসী।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৪২ হাঃ ৬৭৪, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১৭. রসুন, পিঁয়াজ অথবা ঐ জাতীয় জিনিস খেয়ে মাসজিদে গমন নিষিদ্ধ।

৩৩১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ হইতে অর্থাৎ কাঁচা রসুন খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের মাসজিদে না আসে। ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ যদি এ জাতীয় গাছ হইতে খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন, সে যেন আমাদের মাসজিদে না আসে। [রাবী আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন] আমি জাবির [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী [সাঃআঃ]-এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন [জাবির [রাদি.] বলেন, আমার ধারণা যে, নাবী [সাঃআঃ]-এর দ্বারা কাঁচা রসুন বুঝিয়েছেন এবং মাখ্লাদ ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইবনি জুরাইজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে দুর্গন্ধযুক্ত হবার কথা উল্লেখ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৬০ হাঃ ৮৫৩, মুসলিম ৫/১৭ হাঃ ৫৬১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩২. আবদুল আযীয [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি নাবী [সাঃআঃ]-কে রসুন খাওয়া সম্পর্কে কী বলিতে শুনেছেন? তখন আনাস [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ জাতীয় গাছ হইতে খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের নিকট না আসে এবং আমাদের সাথে সলাত আদায় না করে।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৬০ হাঃ ৮৫৬, মুসলিম ৫/১৭, হাঃ ৫৬৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৩.জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রসুন বা পিঁয়াজ খায় সে যেন আমাদের হইতে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মাসজিদ হইতে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে। [উক্ত সনদে আরো বর্ণিত আছে যে] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট একটি পাত্র যার মধ্যে শাক-স্বব্জী ছিল, আনা হলো। নাবী [সাঃআঃ] এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলেন, তখন তাঁকে সে পাত্রে রক্ষিত শাক-সব্জী সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন একজন সাহাবী [আবু আইয়ুব [রাদি.]-কে উদ্দেশ্য করে বলিলেন, তাহাঁর নিকট এগুলো পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ মনে করবেন, এ দেখে নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি খাও। আমি যাঁর সাথে গোপনে আলাপ করি তাহাঁর সাথে তুমি আলাপ কর না [ফেরেশ্‌তার সাথে আমার আলাপ হয়, তাঁরা দুর্গন্ধকে অপছন্দ করেন]।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৬০ হাঃ ৮৫৫, মুসলিম ৫/১৭, হাঃ ৫৬৪]নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/১৯. সলাতে ভুল-ভ্রান্তি হওয়া এবং তার জন্য সাজদাহ।

৩৩৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন সলাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হইতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সলাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইক্বামাত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমনকি সে সলাত আদায়রত ব্যক্তির মনে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলিতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ কর, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাকআত সলাত আদায় করেছে তা স্মরণ করিতে পারে না। তাই, তোমাদের কেউ তিন রাকআত বা চার রাকআত সলাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দুটি সাজদাহ্ করিবে।

[বোখারী পর্ব ২২ : /৬ হাঃ ১২৩১, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৩৮৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৫. আবদুল্লাহ্ ইবনি বুহায়নাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সলাতে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] দুরাকআত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাহাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তাহাঁর সলাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তাহাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে তাক্‌বীর বলে বসে বসেই দুটি সাজদাহ্ করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন।

[বোখারী পর্ব ২২ : /১ হাঃ ১২২৪, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৬. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] সলাত আদায় করিলেন। [রাবী ইব্‌রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমার জানা নেই, তিনি বেশী করিয়াছেন বা কম করিয়াছেন।] সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! সলাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ এরূপ সলাত আদায় করিলেন। তিনি তখন তাহাঁর দুপা ঘুরিয়ে কিবলাহমুখী হলেন। আর দুটি সাজদাহ আদায় করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সলাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সলাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সলাত পূর্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দুটি সাজদাহ দেয়।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৩১ হাঃ ৪০১, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭২] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৭. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী [সাঃআঃ] আমাদের নিয়ে যুহরের সলাত দুরাকআত আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর সাজদাহর জায়গার সামনে রাখা একটা কাঠের দিকে অগ্রসর হয়ে তার উপর তাহাঁর এক হাত রাখলেন। সেদিন লোকেদের মাঝে আবু বকর, উমার [রাদি.]-ও হাযির ছিলেন। তাঁরা তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিতে ভয় পেলেন। কিন্তু তাড়াহুড়া করে [কিছু] লোক বেরিয়ে গিয়ে বলিতে লাগলঃ সলাত খাট করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছিল, যাকে নাবী [সাঃআঃ] যুল্ ইয়াদাইন [দু হাতাওয়ালা অর্থাৎ লম্বা হাতাওয়ালা] বলে ডাকতেন, সে বললঃ হে আল্লাহ্‌র নাবী! আপনি কি ভুল করিয়াছেন, না সলাত ছোট করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলে যাইনি এবং [সলাত] ছোটও করা হয়নি। তারা বললেনঃ বরং আপনিই ভুলে গেছেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! তখন তিনি বললেনঃ যুল্ ইয়াদাইন ঠিকই বলেছে। অতঃপর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন ও সালাম ফিরালেন। এরপর তাকবীর বলে আগের সাজদাহ্‌র মত অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ করিলেন। অতঃপর আবার মাথা তুললেন এবং তাকবীর বলিলেন এবং আগের সাজদাহর ন্যায় অথবা তার চেয়েও দীর্ঘ সাজদাহ করিলেন। এরপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর বলিলেন।

[বোখারী পর্ব ৭৮ : /৪৫ হাঃ ৬০৫১, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২০. কুরআন তিলাওয়াতের সাজদাহ্।

৩৩৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] একবার আমাদের সামনে এমন এক সূরাহ তিলাওয়াত করিলেন, যাতে সাজদাহ্‌র আয়াত রয়েছে। তাই তিনি সাজদাহ্ করিলেন এবং আমরাও সাজদাহ্ করলাম। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল রাখার জায়গা পাচ্ছিলেন না।

[বোখারী পর্ব ১৭ : /৮ হাঃ ১০৭৫, মুসলিম ৫/২০, হাঃ ৫৭৫ ] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯. আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মাক্কাহয় সূরাহ আন্-নাজ্‌ম তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করেন এবং একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তাহাঁর সঙ্গে সবাই সাজদাহ্ করেন। বৃদ্ধ লোকটি এক মুঠো কঙ্কর বা মাটি হাতে নিয়ে তার কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে বলিল, আমার জন্য এ যথেষ্ট। আমি পরবর্তী যমানায় দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ১৭ : /১ হাঃ ১০৬৭, মুসলিম ৫/২০, হাঃ ৫৭৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪০. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আতা ইবনি ইয়াসার যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, তার ধারণা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট সূরা وَالنَّجْمِ [ওয়ান্ নাজ্‌ম] তিলাওয়াত করা হল অথচ এতে তিনি সাজদাহ্ করেননি।

[বোখারী পর্ব ১৭ : /৬ হাঃ ১০৭২, মুসলিম ৫/ ২০০, হাঃ ৫৭৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪১. আবু রাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সঙ্গে ইশার সলাত আদায় করলাম। তিনি إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ সূরাটি তিলাওয়াত করে সাজদাহ্ করিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এ সাজদাহ্ কেন? তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম [সাঃআঃ]-এর পিছনে এ সূরায় সাজদাহ্ করেছি, তাই তাহাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি এতে সাজদাহ্ করব।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১০১ হাঃ ৭৬৮, মুসলিম ৫/২০, হাঃ ৫৭৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২৩. সলাতের পর পঠিতব্য যিক্‌র।

৩৪২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তাক্‌বীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সলাত শেষ হয়েছে। আলী [রাদি.] বলেন, সুফইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবু মাবাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর আযাদকৃত দাসসমূহের মধ্যে অধিক সত্যবাদী দাস ছিলেন। আলী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তার নাম ছিল নাফিয।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৫৫ হাঃ ৮৪২, মুসলিম ৫/২৩, হাঃ ৫৮৪]

৫/২৪. ক্ববরের আযাব বা শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা বৈধ হওয়া।

নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমার নিকট মাদীনাহ্‌র দুজন ইয়াহূদী বৃদ্ধা মহিলা এলেন। তাঁরা আমাকে বলিলেন যে, ক্ববরবাসীদের তাহাদের ক্ববরে আযাব দেয়া হয়ে থাকে। তখন আমি তাহাদের এ কথা মিথ্যা বলে অভিহিত করলাম। আমার বিবেক তাঁদের কথাটিকে সত্য বলে মানতে চাইল না। তাঁরা দুজন বেরিয়ে গেলেন। আর নাবী [সাঃআঃ] আমার নিকট এলেন। আমি তাঁকে বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমার নিকট দুজন বৃদ্ধা এসেছিলেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাঁদের কথা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তারা দুজন সত্যই বলেছে। নিশ্চয়ই ক্ববরবাসীদের এমন আযাব দেয়া হয়ে থাকে, যা সকল চতুষ্পদ জীবজন্তু শুনে থাকে। এরপর থেকে আমি তাঁকে সর্বদা প্রত্যেক সলাতে ক্ববরের আযাব থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করিতে দেখেছি।

[বোখারী পর্ব ৮০ : /৩৭ হাঃ ৬৩৬৬, মুসলিম ৫/২৩, হাঃ ৫৮৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২৫. সলাতে যে সকল জিনিস থেকে আশ্রয় চাইতে হইবে।

৩৪৪.আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] কে তাহাঁর সলাতে দাজ্জালের ফিতনা হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন করিতে শুনিয়াছি

। [বোখারী পর্ব ১০ : /১৪৯ হাঃ ৮৩৩, মুসলিম ৫/২৫, হাঃ ৫৮৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৫. উরওয়াহ ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] সলাতে এ বলে দুআ করিতেনঃ

“কবরের আযাব হইতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিত্‌নাহ হইতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিত্‌নাহ হইতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হইতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।” তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলিল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি [আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]] বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৪৯ হাঃ ৮৩২, মুসলিম পর্ব ৫ :/২৫, হাঃ ৫৮৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] দুআ করিতেন, হে আল্লাহ্! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি ক্ববরের শাস্তি হইতে, জাহান্নামের শাস্তি হইতে, জীবন ও মরণের ফিত্‌নাহ হইতে এবং মাসীহ্ দাজ্জাল এর ফিত্‌নাহ হইতে।

[বোখারী পর্ব ২৩ : /৮৮ হাঃ ১৩৭৭, মুসলিম ৫/২৫, হাঃ ৫৮৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২৬. সলাত আদায়ের পর দুআ পাঠ মুস্তাহাব এবং তার পদ্ধতি।

৩৪৭. ওয়ার্‌রাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] আমাকে দিয়ে মুআবিয়াহ [রাদি.]-কে [এ মর্মে] একখানা পত্র লিখালেন যে, নাবী [সাঃআঃ] প্রত্যেক ফার্‌য সলাতের পর বলিতেনঃ

اَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

“এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাহাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাহাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুই উপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করিতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার নিকট [সৎকাজ ভিন্ন] কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।”

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৫৫ হাঃ ৮৪৪, মুসলিম ৫/২৬, হাঃ ৫৯৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দরিদ্রলোকেরা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাহাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মত সলাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হাজ্জ, উমরা, জিহাদ ও সদাকাহ করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাহাদের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করিবে তাহাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সলাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ্ [সুবহানাল্লাহ্], তাহ্‌মীদ [আলহামদু ল্লিল্লাহ্] এবং তাক্‌বীর [আল্লাহু আকবার] পাঠ করিবে। [এ বিষয়টি নিয়ে] আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলিল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ্ পড়ব, তেত্রিশ বার তাহ্‌মীদ আর চৌত্রিশ বার তাক্‌বীর পড়ব। অতঃপর আমি তাহাঁর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বলিলেন, :………….. বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার করে হয়ে যায়

। [বোখারী পর্ব ১০ : /১৫৫ হাঃ ৮৪৩, মুসলিম ৫/২৬, হাঃ ৫৯৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২৭. তাকবীর তাহরীমা ও সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে কী বলবে?

৩৪৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাক্‌বীরে তাহ্‌রীমাহ ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাক্‌বীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলি-

হে আল্লাহ আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ আমাকে আমার গুনাহ হইতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৮৯ হাঃ ৭৪৪, মুসলিম ৫/২৭, হাঃ ৫৯৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২৮. সলাতের জন্য ধীরস্থির ও শান্তভাবে আসা মুস্তাহাব এবং দৌড়ে আসা অপছন্দনীয় হওয়া।

৩৫০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যখন সলাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সলাতে যোগদান করিবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সলাতে যোগদান করিবে। সলাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামাআতের সাথে সলাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও।

[বোখারী পর্ব ১১ : /১৮ হাঃ ৯০৮, মুসলিম ৫/২৮, হাঃ ৬০২] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫১. আবু কাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সলাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের [আগমনের] আওয়ায শুনতে পেলেন। সলাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন তোমাদের কী হয়েছিল? তাঁরা বলিলেন, আমরা সলাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এরূপ করিবে না। যখন সলাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে [ইমামের সাথে] যতটুকু পাও আদায় করিবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা [ইমামের সলাত ফিরানোর পর] পূর্ণ করিবে।

[বোখারী পর্ব ১০ : /২০ হাঃ ৬৩৫, মুসলিম ৫/২৮, হাঃ ৬০৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/২৯. মানুষ সলাতের জন্য কখন দাঁড়াবে।

৩৫২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একবার সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করছিলেন, তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমাদের সামনে বেরিয়ে আসলেন। তিনি মুসাল্লায় দাঁড়ালে তাহাঁর মনে হলো যে, তিনি জানাবাত অবস্থায় আছেন। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ স্ব স্ব স্থানে দাঁড়িয়ে থাক। তিনি ফিরে গিয়ে গোসল করে আবার আমাদের সামনে আসলেন এবং তাহাঁর মাথা হইতে পানি ঝরছিল। তিনি তাকবীর [তাহ্‌রীমাহ] বাঁধলেন, আর আমরাও তাহাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম।

[বোখারী পর্ব ৫ : /১৭ হাঃ ২৭৫, মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩০. যে ব্যক্তি কোন সলাতের এক রাকআত পেল সে যেন সে সলাতই পেল।

৩৫৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো সলাতের এক রাকআত পায়, সে সলাত পেলো।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২৯ হাঃ ৫৮০, মুসলিম ৫/৩০, হাঃ ৬০৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩১. পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের সময়।

৩৫৪. বশীর ইবনি আবু মাসউদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, একবার জিব্‌রীল [আ.] আসলেন, অতঃপর তিনি আমার ঈমামত করিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাহাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গুনছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৫৯ : /৬ হাঃ ৩২২১, মুসলিম ৫/৩১, হাঃ ৬১০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৫. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একদা কোনো এক সলাত আদায়ে বিলম্ব করিলেন। তখন উরওয়াহ ইবনি যুবাইর [রাদি.] তাহাঁর নিকট গেলেন এবং তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিলেন যে, ইরাকে অবস্থানকালে মুগীরাহ ইবনি শুবা [রাদি.] একদা এক সলাত আদায়ে বিলম্ব করেছিলেন। ফলে আবু মাসউদ আনসারী [রাদি.] তাহাঁর নিকট গিয়ে বলিলেন, হে মুগীরাহ! এ কী? তুমি কি অবগত নও যে, জিব্‌রাঈল [আ.] অবতরণ করে সলাত আদায় করিলেন, আর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ও সলাত আদায় করিলেন। আবার তিনি সলাত আদায় করিলেন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ও সলাত আদায় করিলেন। পুনরায় তিনি সলাত আদায় করিলেন এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ও সলাত আদায় করিলেন। আবার তিনি সলাত আদায় করিলেন এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ও সলাত আদায় করিলেন। পুনরায় তিনি সলাত আদায় করিলেন এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ও সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর জিব্‌রাঈল [আ.] বলিলেন, আমি এজন্য আদিষ্ট হয়েছি। উমার [ইবনি আবদুল আযীয] [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিলেন, “তুমি যা রিওয়ায়াত করছ তা একটু ভেবে দেখ। জিব্‌রাঈলই কি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর জন্য সলাতের ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন?” উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, বাশীর ইবনি আবু মাসউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার পিতা হইতে এরূপই বর্ণনা করিতেন

[বোখারী পর্ব ৯ : /১ হাঃ ৫২১, মুসলিম ৫/৩১, হাঃ ৬১০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৬. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

অবশ্য আয়িশাহ্ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এমন মুহূর্তে আসরের সলাত আদায় করিতেন যে, সুর্যরশ্মি তখনও তাহাঁর হুজরার মধ্যে থাকতো। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার পূর্বেই।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১ হাঃ ৫২২, মুসলিম ৫/৩১, হাঃ ৬১০, ৬১১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩২. যুহরের সলাত প্রখর গরমের সময় ঠাণ্ডা করে পড়া মুস্তাহাব ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি জামাআতে যায় এবং রাস্তায় তাকে রৌদ্রের তাপ লাগে।

৩৫৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন গরম বেড়ে যায় তখন তোমরা তা কমে এলে [যুহরের] সলাত আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৯ হাঃ ৫৩৬, মুসলিম ৫/৩২, হাঃ ৬১৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর মুআয্‌যিন যুহরের আযান দিলে তিনি বললেনঃ ঠাণ্ডা হইতে দাও, ঠাণ্ডা হইতে দাও। অথবা তিনি বলিলেন, অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। তিনি আরও বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফলেই সৃষ্টি হয়। কাজেই গরম যখন বেড়ে যায় তখন গরম কমলেই সলাত আদায় করিবে। এমনকি [বিলম্ব করিতে করিতে বেলা এতটুকু গড়িয়ে গিয়েছিল যে] আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখিতে পেলাম।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৯ হাঃ ৫৩৫, মুসলিম ৫/৩২, হাঃ ৬১৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট এ বলে নালিশ করেছিলো, হে আমার প্রতিপালক! [দহনের প্রচণ্ডতায়] আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ্ তাআলা তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব কর তাই।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৯ হাঃ ৫৩৭, মুসলিম ৫/৩২, হাঃ ৬১৫, ৬১৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৩. গরমের তীব্রতা না থাকলে যুহরের সলাত নির্ধারিত সময়ের প্রারম্ভে পড়া মুস্তাহাব।

৩৬০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আমরা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সলাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে তার চেহারা [কপাল] স্থির রাখতে সক্ষম না হলে সে তার কাপড় বিছিয়ে তার উপর সাজদাহ্ করত।

[বোখারী পর্ব ২১ : /৯ হাঃ ১২০৮, মুসলিম ৫/৩৩, হাঃ ৬২০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৪. আসরের সলাত প্রথম সময়ে পড়া উত্তম।

৩৬১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আসরের সলাত আদায় করিতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকতো। সলাতের পর কোনো গমনকারী আওয়ালীর দিকে রওয়ানা হয়ে তাহাদের নিকট পৌঁছে যেতো, আর তখনও সূর্য উপরে থাকতো। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মাদীনা হইতে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৩ হাঃ ৫৫০, মুসলিম ৫/৩৪, হাঃ ৬২১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬২. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা উমার ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সঙ্গে যুহরের সলাত আদায় করলাম। অতঃপর সেখান হইতে বেরিয়ে আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। আমরা গিয়ে তাঁকে আসরের সলাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম চাচা! এ কোন্ সলাত যা আপনি আদায় করিলেন? তিনি বলিলেন, আসরের সলাত আর এ হলো আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সলাত, যা আমরা তাহাঁর সাথে আদায় করতাম।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৩ হাঃ ৫৪৯, মুসলিম ৫/৩৪, হাঃ ৬২৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে আসরের সলাত আদায় করে উট যবেহ করতাম। তারপর সে গোশত দশ ভাগে ভাগ করা হত এবং সূর্যাস্তের পূর্বেই আমরা রান্না করা গোশত আহার করতাম।

[বোখারী পর্ব ৪৭ : /১ হাঃ ২৪৮৫, মুসলিম ৫/৩৪, হাঃ ৬২৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৫. আসরের সলাত ছুটে যাওয়ার ভয়াবহতা।

৩৬৪. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তির আসরের সলাত ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। আবু আবদুল্লাহ্ [ঈমাম বোখারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, [আরবী পরিভাষায়] ………….. বাক্যটি ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কাউকে হত্যা করে অথবা মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৪ হাঃ ৫৫২, মুসলিম ৫/৩৫, হাঃ ৬২৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৬. ঐ ব্যক্তির দলীল, যিনি বলেন- সলাতুল উসত্বা হচ্ছে আসরের সলাত।

৩৬৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] দুআ করেন, আল্লাহ তাহাদের [মুশরিকদের] ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা তারা মধ্যম সলাত [তথা আসরের সলাত] থেকে আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।

[বোখারী পর্ব ৫৬ : /৯৮ হাঃ ২৯৩১, মুসলিম ৫/৩৫ হাঃ ৬২৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভর্ৎসনা করিতে লাগলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমি এখনও আসরের সলাত আদায় করিতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন আল্লাহ্‌র শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি সলাতের জন্য উযূ করিলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে আসরের সলাত আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের সলাত আদায় করেন।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৩৬ হাঃ ৫৯৬, মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৭. ফাজ্‌র ও আসরের সলাতের মর্যাদা এবং এ দু সলাতের প্রতি যত্নবান হওয়া।

৩৬৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ফেরেশ্‌তামণ্ডলী পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফাজরের সলাতে উভয় দল একত্র হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাহাদের ব্যাপারে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। উত্তরে তাঁরা বলেন ; আমরা তাহাদের সলাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাহাদের নিকট গিয়েছিলাম তখনও তারা সলাত আদায়রত অবস্থায় ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৬ হাঃ ৫৫৫, মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩২] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৮. জরীর ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে [পূর্ণিমার] চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখিতে পাবে। তাঁকে দেখিতে তোমরা কোনো ভীড়ের সম্মুখীন হইবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সলাত [শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে] আদায় করিতে পারলে তোমরা তাই করিবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করিলেন,

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ

“কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে।” [ক্বাফঃ ৩৯] ইসমাঈল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এর অর্থ হল : এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করিবে যেন কখনো ছুটে না যায়

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৬ হাঃ ৫৫৪, মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৯. আবু বকর ইবনি আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের [ফাজর ও আসরের] সলাত আদায় করিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২৬ হাঃ ৫৭৪, মুসলিম ৫/৩৭, হাঃ ৬৩৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৮. সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় মাগরিবের সলাতের প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার বর্ণনা।

৩৭০. সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে মাগরিবের সলাত আদায় করতাম।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৮ হাঃ ৫৬১, মুসলিম ৫/৩৮, হাঃ ৬৩৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭১. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে মাগরিবের সলাত আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ [তীর নিক্ষেপ করলে] নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হবার স্থান দেখিতে পেতো।

[বোখারী পর্ব ৯ : /১৮ হাঃ ৫৫৯, মুসলিম ৫/৩৮, হাঃ ৬৩৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৩৯. ইশার সলাতের সময় এবং তা বিলম্ব করা।

৩৭২. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ইশার সলাত আদায় করিতে বিলম্ব করিলেন। এ হলো ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের পূর্বের কথা। [সালাতের জন্য] তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি উমার [রাদি.] বলিলেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মাসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমরা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ইশার সলাতের জন্য অপেক্ষায় নেই। [

বোখারী পর্ব ৯ : /২২ হাঃ ৫৬৬, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৩৮] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৩. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক রাতে কর্মব্যস্ততার কারণে আল্লাহর রসূল  ইশার সলাত আদায়ে দেরী করিলেন, এমন কি আমরা মাসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর জেগে উঠে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর পুনরায় জেগে উঠলাম। তখন আল্লাহর রসূল  আমাদের নিকট বেরিয়ে এলেন, অতঃপর বলিলেন, তোমরা ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ এ সলাতের অপেক্ষা করছে না।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২৪ হাঃ ৫৭০, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৩৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৪. হুমাইদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনাস [রাদি.]-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হয় যে, নাবী [সাঃআঃ] আংটি পরেছেন কিনা? তিনি বললেনঃ নাবী [সাঃআঃ] এক রাতে এশার সলাত আদায়ে অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করেন। এরপর তিনি আমাদের মাঝে আসেন। আমি যেন তাহাঁর আংটির চমক দেখিতে লাগলাম। তিনি বললেনঃ লোকজন সলাত আদায় করে শুয়ে পড়েছে। আর যতক্ষণ থেকে তোমরা সলাতের অপেক্ষায় রয়েছ, ততক্ষণ তোমরা সলাতের মধ্যেই রয়েছ।

[বোখারী পর্ব ৭৭ : /৪৮ হাঃ ৫৮৬৯, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৪০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ও আমার সাথিরা-যারা [আবিসিনিয়া হইতে] জাহাজ মারফত আমার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, বাকীয়ে বুতহানের একটা মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ] থাকতেন মাদীনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে ইশার সলাতের সময় আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ইশার সলাতের সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোনো কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সলাত আদায়ে বিলম্ব করিলেন। এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেলো। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সলাত আদায় করিলেন। সলাত শেষে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে তোমাদের জন্য এটি এক নিয়ামত যে, তোমরা ব্যতীত মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সলাত আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ব্যতীত কোনো উম্মাত এ সময় সলাত আদায় করেনি। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] কোন্ বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলিতে পারেননি। আবু মূসা [রাদি.] বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরলাম।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২২ হাঃ ৫৬৭, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৪১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ইশার সলাত আদায় করিতে দেরী করেছিলেন, এমন কি লোকজন একবার ঘুমিয়ে জেগে উঠল, আবার ঘুমিয়ে পড়ে জাগ্রত হলো। তখন উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] উঠে গিয়ে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিলেন, আস-সালাত। অতঃপর আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ] বেরিয়ে এলেন- যেন এখনো আমি তাঁকে দেখছি, তাহাঁর মাথা হইতে পানি টপ্‌কে পড়ছিলো এবং তাহাঁর হাত মাথার উপর ছিলো। তিনি এসে বললেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হইবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাহাদেরকে এভাবে [বিলম্ব করে] ইশার সলাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম। ইবনি জুরাইজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [অত্র হাদীসের এক রাবী] বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যে মাথায় হাত রেখেছিলেন তা কিভাবে রেখেছিলেন, বিষয়টি সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করার জন্য আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বললাম। আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁক করিলেন, অতঃপর সেগুলোর অগ্রভাগ সম্মুখ দিক হইতে [চুলের অভ্যন্তরে] প্রবেশ করালেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো একত্রিত করে মাথার উপর দিয়ে এভাবে টেনে নিলেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুল কানের সে পার্শ্বকে স্পর্শ করে গেলো যা মুখমণ্ডল সংলগ্ন চোয়ালের হাড্ডির উপর শ্মশ্রুর পাশে অবস্থিত। তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] চুলের পানি ঝরাতে কিংবা চুল চাপড়াতে এরূপই করিতেন। এবং তিনি বলেছিলেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হইবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাহাদেরকে এভাবেই [বিলম্ব করে] সলাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২৪ হাঃ ৫৭১, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৩৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৪০. ফাজ্‌রের সলাত প্রথম ওয়াক্তে পড়া মুস্তাহাব আর তা হচ্ছে গালাস এবং তাতে কিরাআতের পরিমাণের বর্ণনা।

৩৭৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ফাজরের জামাআতে হাযির হইতেন। অতঃপর সলাত আদায় করে তারা যার যার ঘরে ফিরে যেতেন। আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২৭ হাঃ ৫৭৮, মুসলিম ৫/৪০ হাঃ ৬৪৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

 ব্যাখ্যা

৩৭৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যুহরের সলাত প্রচণ্ড গরমের সময় আদায় করিতেন। আর আসরের সলাত সূর্য উজ্জ্বল থাকতে আদায় করিতেন, মাগরিবের সলাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সলাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করিতেন। যদি দেখিতেন, সকলেই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল আদায় করিতেন। আর যদি দেখিতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করিতেন। আর ফাজরের সলাত তাঁরা কিংবা রাসলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] অন্ধকার থাকতে আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৯ : /২৭ হাঃ ৫৬০, মুসলিম ৫/৪০ হাঃ ৬৪৬] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯. বারযাহ আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তাকে সলাতসমূহের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তিনি বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ] যুহরের সলাত সুর্য ঢলে গেলেই আদায় করিতেন। আর আসর [এমন সময় যে, সলাতের শেষে] কোনো ব্যক্তি সূর্য সজীব থাকতে থাকতেই মাদীনার প্রান্ত সীমায় ফিরে আসতে পারতো। [রাবী বলেন] মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি ইশা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করিতে কোন দ্বিধা করিতেন না এবং ইশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করিতেন না। আর তিনি ফাজর আদায় করিতেন এমন সময় যে, সলাত শেষে ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। এর দু রাকআতে অথবা রাবী বলেছেন, এক রাকআতে তিনি ষাট হইতে একশত আয়াত পাঠ করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১০৪ হাঃ ৭৭১, মুসলিম ৫/৪০, হাঃ ৬৪৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৪২. জামাআতে সলাতের ফাযীলাত এবং তা থেকে পিছিয়ে থাকার ভয়াবহতার বর্ণনা।

৩৮০. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রসুল [সাঃআঃ]- কে বলিতে শুনেছেন যে, জামাআতের সলাত তোমাদের কারো একাকী সলাত হইতে পঁচিশ গুণ অধিক সওয়াব রাখে। আর ফাজরের সলাতে রাতের ও দিনের মালাকগণ একত্রিত হয়। অতঃপর আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] বলিতেন, তোমরা চাইলে [এর প্রমান স্বরূপ] …………………… অর্থাৎ “ফাজরের সলাতে [মালাকগণ] উপস্থিত হয়” পাঠ কর। শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাকে নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনা করে শুনিয়েছেন যে, জামাআতের সলাতে একাকী সলাত হইতে সাতাশ গুণ বেশী সওয়াব হয়।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩১ হাঃ ৬৪৯, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮১. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জামাআতে সলাতের ফাযীলত একাকী আদায়কৃত সলাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশী।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩০ হাঃ ৬৪৫, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫০] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাহাঁর শপথ! আমার ইচ্ছে হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করিতে আদেশ দেই, অতঃপর সলাত কায়েমের নির্দেশ দেই, অতঃপর সলাতের আযান দেয়া হোক, অতঃপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ঈমামত করার নির্দেশ দেই। অতঃপর আমি লোকদের নিকট যাই এবং [যারা সলাতে শামিল হয় নাই] তাহাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাহাঁর কসম! যদি তাহাদের কেউ জানত যে, একটি গোশ্‌তহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দুটি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ইশা সলাতের জামাআতেও উপস্থিত হতো।

[বোখারী পর্ব ১০ : /২৯ হাঃ ৬৪৪, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুনাফিকদের জন্য ফাজর ও ইশার সলাত অপেক্ষা অধিক ভারী সলাত আর নেই। এ দু সলাতের কী ফাযীলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা হাযির হতো। [রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেন] আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, মুয়ায্‌যিনকে ইকামাত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ঈমামত করিতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে অতঃপর যারা সলাতে আসেনি, তাহাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩৪ হাঃ ৬৫৭, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫১] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৪৭. ওজরের কারণে জামাআত থেকে পিছিয়ে থাকার অনুমতি।

৩৮৪. মাহমূদ ইবনি রাবী আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

ইতবান ইবনি মালিক [রাদি.], যিনি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট হাযির হয়ে আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাহাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা পার হয়ে তাহাদের মাসজিদে পৌঁছতে এবং তাহাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করিতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছে যে, আপনি আমার ঘরে এসে কোন এক স্থানে সলাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সলাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। রাবী বলেনঃ তাঁকে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ইতবান [রাদি.] বলেনঃ পরদিন সূর্যোদয়ের পর আল্লাহর রাসূল্ [সাঃআঃ] ও আবু বাক্র [রাদি.] আমার ঘরে তাশরীফ আনেন। আল্লাহর রাসূল্ [সাঃআঃ] ভেতরে প্রবেশ করিতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ঘরের কোন্ স্থানে সলাত আদায় করা পসন্দ কর? তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল্ [সাঃআঃ] দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বলিলেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। তিনি [ইতবান] বলেনঃ আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাহাঁর জন্য তৈরি খাযীরাহ নামক খাবার তাহাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেনঃ এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, মালিক ইবনি দুখাইশিন কোথায়? অথবা বললেনঃ ইবনি দুখশুন কোথায়? তখন তাঁদের একজন জবাব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল কে ভালবাসে না। তখন আল্লাহর রাসূল্ [সাঃআঃ] বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে? তখন সে ব্যক্তি বললেনঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল ই ভাল জানেন। আমরা তো তার সম্পর্ক ও নাসীহাত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তো এমন ব্যক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৪৬ হাঃ ৪২৫, মুসলিম ৫/৪৭, হাঃ ৩৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৫. মাহমূদ ইবনি রাবী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কথা তাহাঁর স্পষ্ট মনে আছে, যে তাঁদের বাড়িতে রাখা একটি বালতির [পানি নিয়ে] নাবী [সাঃআঃ] কুল্লি করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৫৪ হাঃ ৮৩৯, মুসলিম ৫/৪৭, হাঃ ৩৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৪৮. নফল সলাত জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করার বৈধতা এবং মাদুর, কাপড় ইত্যাদি পবিত্র জিনিসের উপর সলাত আদায় করা।

৩৮৬. মায়মূনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যখন সলাত আদায় করিতেন তখন হায়েয অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমি তাহাঁর বরাবর বসে থাকতাম। কখনো কখনো তিনি সাজদাহ করার সময় তাহাঁর কাপড় আমার গায়ে লাগতো। আর তিনি ছোট চাটাইয়ের উপর সলাত আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৮ : /১৯ হাঃ ৩৭৯, মুসলিম ৫/৪৮, হাঃ ৫১৩] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৪৯. জামাআতে সলাতের ফাযীলাত এবং সলাতের জন্য অপেক্ষা করা।

৩৮৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জামাআতের সাথে সলাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সলাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সলাতের উদ্দেশেই মাসজিদে আসে, সে মাসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা ক্রমান¦য়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক-একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মাসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সলাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সলাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ ফেরেশতামণ্ডলী তার জন্যে এ বলে দুআ করেনঃ

اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللهُمَّ ارْحَمْهُ

ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, ইয়া আল্লাহ! তাকে রহম করুন, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, সেখানে উযূ ভঙ্গের কাজ না করে।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৮৭ হাঃ ৪৭৭, মুসলিম ৫/৪৯, হাঃ ৬৪৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৫০. দূর হইতে মাসজিদে আসার ফাযীলাত।

৩৮৮. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [মসজিদ হইতে] যে যত অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে সলাতে আসে, তার তত অধিক পুণ্য হইবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সলাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার পুণ্য সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক, যে একাকী সলাত আদায় করে ঘুমিয়ে যায়।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩১ হাঃ ৬৫১, মুসলিম ৫/৫০, হাঃ ৬৬২] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৫১. সলাতের জন্য হেঁটে যাওয়া পাপ মোচন করে ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

৩৮৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, “বলত যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকিবে? তারা বলিলেন, তার দেহে কোনোরূপ ময়লা বাকী থাকিবে না। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা [বান্দার] গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৬ হাঃ ৫২৮, মুসলিম ৫/৫১, হাঃ ৬৬৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মাসজিদে যায়, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩৭ হাঃ ৬৬২, মুসলিম ৫/৫১, হাঃ ৬৬৯] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৫৩. ইমামাতের জন্য কে বেশি হকদার।

৩৯১. মালিক ইবনি হুয়াইরিস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এলাম এবং আমরা তাহাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু বৎসল ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করিলেন, তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাহাদের মধ্যে বসবাস কর, আর তাহাদের দ্বীন শিক্ষা দিবে এবং সলাত আদায় করিবে। যখন সলাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ঈমামত করিবে।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৭ হাঃ ৬২৮, মুসলিম ৫/৫৩, হাঃ ৬৭৪] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৫৪. মুসলিমদের প্রতি কোন বিপদ পতিত হলে প্রত্যেক সলাতে কুনূতে নাযিলাহ পড়া মুস্তাহাব।

৩৯২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যখন রুকূ হইতে মাথা উঠাতেন তখনঃ………….. বলিতেন। আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দুআ করিতেন। দুআয় তিনি বলিতেন, ইয়া আল্লাহ্! ওয়ালীদ ইবনি ওয়ালীদ, সালামা ইবনি হিশাম, আইয়্যাস ইবনি আবু রাবীআ [রাদি.] এবং অপরাপর দুর্বল মুসলমানদেরকে রক্ষা করুন। ইয়া আল্লাহ্! মুদার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াও কঠোর করুন, ইউসুফ [আ]-এর যুগে যেমন খাদ্য সংকট ছিল তাহাদের জন্যও অনুরূপ খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে দিন। [রাবী বলেন] এ যুগে পূর্বাঞ্চলের অধিবাসী মুদার গোত্রের লোকেরা নাবী [সাঃআঃ]-এর বিরোধী ছিল।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১২৮ হাঃ ৮০৪, মুসলিম ৫/৫৪, হাঃ ৬৭৫] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মাস ব্যাপী নাবী [সাঃআঃ] রিল ও যাক্ওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে কুনূতে দুআ পাঠ করেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ১৪ : /৭ হাঃ ১০০৩, মুসলিম ৫/৫৪, হাঃ ৬৭৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯৪. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক তো বলে যে, আপনি রুকুর পরে বলেছেন। তিনি বলিলেন, সে মিথ্যা বলেছে। অতঃপর তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এক মাস পর্যন্ত রুকুর পরে কুনূত পড়েন। তিনি বানূ সুলাইম গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে দুআ করেছিলেন। আনাস [রাদি.] বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] চল্লিশজন কিংবা সত্তর জন ক্বারী কয়েকজন মুশরিকের কাছে পাঠালেন। তখন বানূ সুলাইমের লোকেরা তাঁদের হামলা করে তাঁদের হত্যা করে। অথচ তাহাদের এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর মধ্যে সন্ধি ছিল। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে এ ক্বারীদের জন্য যতটা ব্যথিত দেখেছি আর কারো জন্য এতখানি ব্যথিত দেখিনি।

[বোখারী পর্ব ৫৮ : /৮ হাঃ ৩১৭০, মুসলিম ৫/৫৩ হাঃ ৬৭৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] একটা সারীয়্যাহ [ক্ষুদ্র বাহিনী] পাঠালেন। তাহাদের কুর্‌রা বলা হতো। তাহাদের হত্যা করা হলো। আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে এদের ব্যাপারে যেরূপ রাগানি¦ত দেখেছি অন্য কারণে সেরূপ রাগানি¦ত দেখিনি। এজন্য তিনি ফজরের সলাতে মাসব্যাপী কুনূত পড়লেন। তিনি বলিতেনঃ উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।

[বোখারী পর্ব ৮০ : /৫৮ হাঃ ৬৩৯৪, মুসলিম ৫/৫৪, হাঃ ৬৭৭] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫/৫৫. ছুটে যাওয়া সলাত আদায় করা এবং তা অবিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব।

৩৯৬. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক সফরে তাঁরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলেন। সারা রাত পথ চলার পর যখন ভোর কাছাকাছি হল, তখন বিশ্রাম নেয়ার জন্য থেমে গেলেন এবং গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন। অবশেষে সূর্য উদিত হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল, {ইমরান [রাদি.] বলেন} যিনি সর্বপ্রথম ঘুম হইতে জাগলেন তিনি হলেন আবু বাক্র [রাদি.]। আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] নিজে জাগ্রত না হলে তাঁকে জাগানো হত না। অতঃপর উমার [রাদি.] জাগলেন। আবু বাক্র [রাদি.] তাহাঁর শিয়রের নিকট গিয়ে বসে উচ্চৈঃস্বরে আল্লাহু আকবার বলিতে লাগলেন। শেষে নাবী [সাঃআঃ] জেগে উঠলেন এবং অন্যত্র চলে গিয়ে অবতরণ করে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় করিলেন। তখন এক ব্যক্তি আমাদের সাথে সলাত আদায় না করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। নাবী [সাঃআঃ] সলাত শেষ করে বলিলেন, হে অমুক! আমাদের সঙ্গে সলাত আদায় করিতে কিসে বাধা দিল? লোকটি বলিল, আমি অপবিত্র হয়েছি। নাবী [সাঃআঃ] তাকে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর সে সলাত আদায় করিল। [ইমরান [রাদি.] বলেন] নাবী [সাঃআঃ] আমাকে অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এই অবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ উষ্ট্রে আরোহী এক মহিলা আমাদের নযরে পড়ল। সে পানি ভর্তি দুটি মশকের মাঝখানে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায়? সে বলিল, [আশেপাশে] কোথায়ও পানি নেই। আমরা বললাম, তোমার ও পানির জায়গার মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলিল একদিন ও এক রাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট চল। সে বলিল, আল্লাহর রসূল  কী? আমরা তাকে যেতে না দিয়ে তাকে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে গেলাম। নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসেও ঐ রকম কথাই বলিল যা সে আমাদের সঙ্গে বলেছিল। তবে সে তাহাঁর নিকট বলিল, সে কয়েকজন ইয়াতীম সন্তানের মা। নাবী [সাঃআঃ] তার মশক দুটি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করিলেন। অতঃপর তিনি মশক দুটির মুখে হাত বুলালেন। আমরা তৃষ্ণার্ত চল্লিশ জন মানুষ পানি পান করে পিপাসা মিটালাম। অতঃপর আমাদের সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলোকে পানি পান করান হয়নি। এত সবের পরও মহিলার মশকগুলো এত পানি ভর্তি ছিল যে তা ফেটে যাবার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের নিকট যা কিছু আছে উপস্থিত কর। কিছু খেজুর ও রুটির টুকরা জমা করে তাঁকে দেয়া হল। এ নিয়ে নারীটি খুশীর সঙ্গে তার গৃহে ফিরে গেল। গৃহে গিয়ে সকলের নিকট সে বলিল, আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, এক মহা যাদুকরের সঙ্গে অথবা মানুষে যাকে নাবী বলে ধারণা করে তার সঙ্গে। আল্লাহ্ এই মহিলার মাধ্যমে এ বস্তিবাসীকে হিদায়াত দান করিলেন। স্ত্রীলোকটি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করিল এবং বস্তিবাসী সকলেই ইসলাম গ্রহণ করিল।

[বোখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৫৭১, মুসলিম ৫/৫৫, হাঃ ৬৮২] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কেউ কোনো সলাতের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হইবে, তখন তাকে তা আদায় করিতে হইবে। এ ব্যতীত সে সলাতের অন্য কোনো কাফ্‌ফারা নেই। [কেননা, আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন]

وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي

“আমাকে স্মরণের উদ্দেশে সলাত কায়েম কর”-[ত্বা–হা ১৪]।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৩৭ হাঃ ৫৯৭, মুসলিম ৫/৫৫, হাঃ ৬৮৪] নামাজের স্থান-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “মসজিদ ও নামাজের স্থান সমূহের বর্ণনা”

Leave a Reply