নামাজের সময়। কিভাবে নিদিষ্ট ওয়াক্তের সলাত পাওয়া যায়?

নামাজের সময়। কিভাবে নিদিষ্ট ওয়াক্তের সলাত পাওয়া যায়?

 নামাজের সময়। কিভাবে নিদিষ্ট ওয়াক্তের সলাত পাওয়া যায়? >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় ১ঃ নামাজের সময় সমুহ

পরিচ্ছেদ ০১. নামাজের সময়
পরিচ্ছেদ ০২. – কখন নবী [সাঃআঃ] ফরয সলাত আদায় করিতেন তার বিবরণ
পরিচ্ছেদ ০৩. মাগরিবের সলাত ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আদায় করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৪. এশার সলাতকে প্রথম ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৫. যুহরের সলাতকে সূর্যের প্রখরতা ঠাণ্ডা হলে পড়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৬. -ফযরের সলাত স্পষ্ট সুবহে সাদিক ও আলোকজ্জল ভোরে পরা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ০৭. কিভাবে নিদিষ্ট ওয়াক্তের সলাত পাওয়া যায়?
পরিচ্ছেদ ০৮. নামাজের নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ০৯. -সলাত ও মৃত দাফনের নিষিদ্ধ সময় সূচি
পরিচ্ছেদ ১০. সব সময় [বাইতুল্লাহ শরীফ] তাওয়াফ করা বৈধ
পরিচ্ছেদ ১১. শাফাক্ব [সূর্যাস্তের পরে পশ্চিম আকাশের লাল আভা] যার কারণে মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যায় তার ব্যাখ্যা
পরিচ্ছেদ ১২. ফজর দু’প্রকার এবং উভয়ের মাঝে গুণগত ও হুকুমগত পার্থক্যের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ১৩. সলাতকে প্রথম ওয়াক্তে পড়ার ফযীলত
পরিচ্ছেদ ১৪. নামাজের সময় এর স্তর অনুযায়ী ফযীলত কম-বেশি হয়
পরিচ্ছেদ ১৫. ফজর উদয়ের পর দুরাকয়াত সুন্নাত ব্যতীত অন্য সলাত আদায় করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১৬. আসর নামাজের পর যুহরের সুন্নাত আদায়ের বিধান

পরিচ্ছেদ ০১. নামাজের সময়

১৫১ – আব্‌দুল্লাহ্‌ বিন্‌`আমর [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন,`যুহরের সময় হচ্ছে, যখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে, আর মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত, তথা`আসরের সময় উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত।`আসরের সময় হচ্ছে, [কোন বস্তুর ছায়া তার সমান হবার পর হতে] সূর্যের রঙ হালকা বা ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। মাগরিবের সময় সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিমকাশে লালিমা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত। ইশার নামাজের সময় হলো, [মাগরিবের সময় শেষ হওয়া থেকে শুরু হয়ে] মধ্যরাত অবধি বিদ্যমান থাকে। ফাজ্‌রের সময়, সুবহ্‌ সাদিক থেকে আরম্ভ হয়ে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত।’ {১৭৮}

{১৭৮} মুসলিম ১৭৩, ৬১২; পূর্ণাঙ্গ হাদিস হচ্ছে- [আরবী] যখন সূর্য উদিত হয় তখন সলাত থেকে বিরত থাকো। কেননা সূর্য শয়তানের দু’ শিংয়ের মাঝ দিয়ে উদিত হয়। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৫২ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

মুসলিমে বুরাইদাহ [রাঃআঃ] -এর হাদীসে আসর সম্পর্কে রয়েছে [সূর্য আলোক উজ্জ্বল থাকা পর্যন্ত]। {১৭৯}

{১৭৯} মুসলিম ৬১৩; ইমাম মুসলিমের মতে [আরবী] এর অর্থ [আরবী] অর্থাৎ স্বচ্ছ ও পরিস্কার সাদা। তথা তাতে হলদে রঙয়ের কোন মিশ্রণ থাকিবে না। আর পূর্ববর্তী হাদীসে রয়েছে- [আরবী] অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য হলুদাভ না হয়। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৫৩ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আর আবূ মূসা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে,`এবং সূর্য উঁচুতে থাকা পর্যন্ত’ [‘আসরের সময় থাকে]। {১৮০}

{১৮০} মুসলিম ৬১৩ এটা বড় একটি হাদিসের অংশ বিশেষ। তাতে আছে- তাকে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আসরের সলাত আদায় করিলেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০২. – কখন নবী [সাঃআঃ] ফরয সলাত আদায় করিতেন তার বিবরণ

১৫৪ – আবূ বার্‌যাহ আল-আসলামী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]`আসরের সলাত আদায় করিতেন তার পর আমাদের কোন ব্যক্তি রওয়ানা হয়ে মদীনার দূর প্রান্তের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরও সূর্য জীবিত তথা সূর্যের উজ্জ্বলতা বাকী থাকতো। আর নাবী [সাঃআঃ] ইশার সলাত দেরিতে আদায় করা পছন্দ করিতেন এবং`ইশা নামাজের পূর্বে ঘুমান ও পরে কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করিতেন। আর তিনি ফাজ্‌রের সলাত আদায় করে এমন সময় ফিরতেন যখন লোক তার পাশে বসে থাকা সঙ্গীকে চিনতে পারত। আর ষাট আয়াত থেকে একশো আয়াত তিলাওয়াত করিতেন। {১৮১}

{১৮১} বুখারী ৫৪৭; মুসলিম ৬৪৭। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। এখানে [আরবী] শব্দটির র [আরবী] অক্ষরে যাবার হা [আরবী] অক্ষরে সাকিন সহ পড়তে হইবে। [আরবী] অর্থাৎ স্বচ্ছ পরিস্কার সাদা যেমন পূর্ববর্তী বর্ণনায় রয়েছে। আর একজন তাবেয়ী হতে তার এ কথাটি সহিহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে [আরবী] সূর্য জীবিত থাকার অর্থ হচ্ছে সূর্যে উত্তাপ পাওয়া। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৫৫ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

ইশার সালাত কখনও দ্রুত কখনও দেরিতে পড়তেন। যখন দেখিতেন লোক একত্রিত হয়ে গেছে তখন তাড়াতাড়ি করিতেন। আর তারা বিলম্বে উপস্থিত হলে বিলম্বেই আদায় করিতেন। আর তিনি ফজরের সালাত খানিকটা অন্ধকারে আদায় করিতেন। {১৮২}

{১৮২} বুখারী ৫৬০; মুসলিম ৬৪৬ শব্দবিন্যাস বুখারীর। মুসলিমের বর্ণনায় আছে- [আরবী] এশার সালাত কখনো বিলম্বে আদায় করিতেন আবার কখনো তাড়াতাড়ি পড়ে নিতেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৫৬ – আবূ মূসা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

ঐ সময় ফাজ্‌রের সলাত আদায় করিতেন যখন ফজর প্রকাশ অর্থাৎ সুবহি সাদিক হতো। কিন্তু লোকেরা পরস্পরকে তখনও ভালভাবে চিনতে সক্ষম হতো না।

হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. মাগরিবের সলাত ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আদায় করার বিধান

১৫৭ – রাফি‘ বিন্ খাদীজ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী [সাঃআঃ] -এর সাথে আমরা মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। অতঃপর সেখান থেকে ফিরার পরও আমাদের লোক তার`নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হবার দূরবর্তী স্থানটি’ দেখিতে পেতেন। {১৮৩}

{১৮৩} বুখারী ৫৫৯; মুসলিম ৬৩৭; হাফিজ ইবনু হাজার তাহাঁর ফাতহুল বারিতে [২/৪১] বলেনঃ [আরবী] সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মাগরিব সালাত আদায় করা কর্তব্য। এমনকি সালাত শেষ হওয়ার পরেও যেন উজ্জলতা অবশিষ্ট থাকে । হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৪. এশার সলাতকে প্রথম ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করার বিধান

১৫৮ -আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] কোন এক রাতে`ইশার সলাত আদায় করিতে অনেক বিলম্ব করেছিলেন। এমন কি রাতের বেশ কিছু সময় গত হয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি বের হয়ে সলাত আদায় করে বলিলেন, এটাই হচ্ছে`ইশা সলাত আদায়ের উপযুক্ত সময়, যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্ট মনে না করতাম তবে এসময়টাকেই নির্ধারণ করতাম। {১৮৪}

{১৮৪} মুসলিম ২১৯, ৬৩৮, [আরবী] অর্থাৎঃ বিলম্ব করিতেন এমনকি রাতের অন্ধকার খুব ঘনীভূত হয়ে আসত । হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৫. যুহরের সলাতকে সূর্যের প্রখরতা ঠাণ্ডা হলে পড়ার বিধান

১৫৯ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন দিনের উত্তাপ খুব বেড়ে যাবে তখন উত্তাপ কমে [আবহাওয়া] ঠাণ্ডা হলে [যুহরের] সলাত পরবে। কেননা কঠিন উত্তাপ জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা থেকে হয়। {১৮৫}

{১৮৫} বুখারী ৫৩৬; মু, ৬১৫০; হাদিসের [আরবী] যুহর সলাতকে ঠাণ্ডা হওয়া সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা । হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. -ফযরের সলাত স্পষ্ট সুবহে সাদিক ও আলোকজ্জল ভোরে পরা মুস্তাহাব

১৬০ – রাফি‘ বিন্ খাদীজ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ফযরের সলাত স্পষ্ট সুবহি সাদিক হলে আদায় কর। কেননা তা তোমাদের জন্য আধিক পুণ্যের কারন। তিরমিজি ও ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন। {১৮৬}

{১৮৬} আবূ দাউদ ৪২৪; নাসায়ি হাদিস ১৭২; তিরমিজি ১৫৪; ইবনু মাজাহ ৬৭২; আহমাদ ৩/১৪০,১৪২,১৪৩,৪৪০,৪৬৫; ইবনু হিব্বান ১৪৯০, ১৪৯১; ইমাম তিরমিজি বলেনঃ রাফে বিন খাদীজ এর হাদিসটি হাসান সহিহ। আর এখানে [আরবী] বলিতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাঁদনী রাতসমূহের ক্ষেত্রে এ শব্দ প্রয়োগ করিয়াছেন যেহেতু এমন রাতে ফযর উদয়ের উজ্জলতা স্পুস্তভাবে বোঝা যায় না। এটা এজন্য যে, লোকেরা যেন ফযর উদয় হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস না হওয়া পর্যন্ত ফযরের সলাত আদায় না করে। কেননা, হাদীসে আমাদেরকে যে সময় ফযর সলাত আদায়ের বলা হয়েছে সে সময় আদায় করলে অত্যন্ত বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে ঐ সময়ের চেয়ে যে সময় ফযর দৃঢ়তা না নিয়েই সলাত আদায় করা হয়। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. কিভাবে নিদিষ্ট ওয়াক্তের সলাত পাওয়া যায়?

১৬১ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি ফযরের নামাজের এক রাক‘আত সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে আদায় করিতে পারলো সে পূর্ণ সলাতই পেলে, আর যে ব্যক্তি`আসরের নামাজের এক রাক‘আত সূর্যাস্তের পূর্বে আদায় করলো, সে`আসরের পূর্ণ সলাতই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেলে। {১৮৭}

{১৮৭} বুখারী ৫৭৯; মুসলিম ৬০৮, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৬২ -আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

অনুরূপ কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে রাক‘আতের পরিবর্তে সাজদাহ শব্দ রয়েছে এবং পরে তিনি বলেন, এখানে সাজদাহর অর্থ রাক‘আত হইবে। {১৮৮}

{১৮৮} মুসলিম ৬০৯; মুসলিমের সব্দসমুহ হচ্ছেঃ [আরবী] যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আসরের নামাজের একটি সিজদাহ পেল সে আসরের সলাত পেয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফযরের নামাজের এক সিজদা পেল সে ফযরের সলাত পেয়ে গেল। এখানে সিজদাহ হতে রাকয়াত উদ্দেশ্য। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৮. নামাজের নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১৬৩ -আবূ সা‘ঈদ খুদরী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -এর নিকট শুনিয়াছি তিনি বলেন; ফযরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফযরের সালাত ব্যতীত অন্য কোন সলাত [আদায় জায়েজ] নেই। আর`আসর নামাজের পরেও সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সলাত নেই। {১৮৯}

{১৮৯} বুখারী ৫৮৬; মুসলিম ৮২৭; হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৯. -সলাত ও মৃত দাফনের নিষিদ্ধ সময় সূচি

১৬৪ -উক্বাহ বিন`আমির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

এমন তিনটি সময় রয়েছে যে সময় নাবী [সাঃআঃ] সলাত আদায় করিতে, মৃতকে কবর দিতে নিষেধ করেছেনঃ [১] সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠা হতে কিছুটা উপরে উঠা পর্যন্ত, [২] এবং ঠিক দুপুর হলে যে পর্যন্ত না সূর্য [পশ্চিম আকাসে] ঝুঁকে পড়ে। [৩] আর যখন সূর্য ঝুঁকে পড়ে অস্ত যাবার উপক্রম হয়। {১৯০}

{১৯০} সহীহ্ মুসলিম ৮৩১. [আরবী] দ্বারা উদ্ধেশ্য হলো সূর্য ঢলে যাবার পূর্বে স্থীর হওয়া। এ সময় ঠিক আকাশের মাঝ বরাবর অবস্থান করে এবং সূর্যের গতি কিছুক্ষনের জন্য স্থির থাকে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৬৫ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

‘ঈফ সানাদে বর্ণনা করে তাতে বৃদ্ধি করেছেনঃ “জুমু‘আহর দিন ব্যতিত”। {১৯১}

{১৯১} অত্যন্ত জঈফ। শাফিয়ী তাহাঁর মুসনাদে [১৩৯, ৪০৮] আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেন, নবী [সাঃআঃ] ঠিক দুপুরে সলাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন যতক্ষন না তা ঢলে যায়। তবে শুক্রবার ব্যতীত। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসে দু’জন মাতরূক রাবী আছে । হাদিসের তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

১৬৬ -আবূ কাতাদাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদিস রয়েছে। {১৯২}

{১৯২} জঈফ। আবূ দাউদ ১০৮৩ আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিত, নবী [সাঃআঃ] ঠিক দুপুরে সলাত আদায় করা অপছন্দ করিয়াছেন। আল্লামা ইবনুল কায়্যেম তাহাঁর যাদুল মায়াদে [১/৩৮০] বলেন, ঠিক দুপুরে সলাত আদায় অপছন্দনীয় হওয়ার ব্যাপারে মানুষেরা তিনটি অভিমত পোষণ করিয়াছেন। ১. সেটা কোন অপছন্দনীয় সময় নয়। এটা ইমাম মালিকের অভিমত ২. জুমুআহ এবং অন্যান্য সব সালাতের ক্ষেত্রেই সে সময়টায় সলাত আদায় অপছন্দনয় । এটা ইমাম আবূ হানীফার অভিমত এবং ইমাম আহমাদ [রহঃ] এর প্রসিদ্ধ অভিমত। ৩. সে সময়টা জুমুআহ ব্যতীত অন্যান্য দিনের জন্য সলাত আদায় অপছন্দনীয় সময়। জুমুআর দিনে কোন অপছন্দনীয় সময় নেই। এটা ইমাম শাফিয়ীর [রহঃ] এর অভিমত। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ ইমাম শাফিয়ীর অভিমতই ন্যায়ভিত্তিক অভিমত। এ অভিমতের পক্ষে সহিহ হাদিসসমূহ প্রমাণিত রয়েছে। ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, হাদিসটি মুরসাল। কেননা; বর্ণনাকারী আব্দুল খালীল আবূ কাতাদাহ থেকে শুনেননি। এছাড়া এ হাদীসে লাইস বিন আবূ সুলাইম রয়েছেন। তিনি দুর্বল রাবী [আত্-তালখীসুল হাবীর ১/৩১১], ঈমাম শাওকানী বলেন, হাদিসটি মুনকাতি। এর মধ্যে লাইস বিন আবূ সুলাইম দুর্বল। [নাইলুল আওতার ৩/১১২], ইমাম যাহাবীও লাইসকে দুর্বল বলেছেন । [তানকীহুত তাহকীক ১/২০২] । ইবনু হাজার বলেন, মুহাম্মদ বিন ইয়াযিদ হচ্ছে একক বর্ণনাকারী আর তিনি সত্যবাদী। [আত-তালখীসুল হাবীর ১/২৮৬], ইমাম শাওকানীও অনুরূপ মন্তব্য করিয়াছেন। [নাইলুল আওতার ১/১৪১], দারাকুতনী বলেন, হাদিসটি গরীব, এর সকল রাবী বিস্বস্ত [আল-বাদরুল মুনীর ৩/১৮৮] ।।হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১০. সব সময় [বাইতুল্লাহ শরীফ] তাওয়াফ করা বৈধ

১৬৭ -যুবাইর বিন মুত’ঈম [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, হে`আবদি মানাফ এর বংশধরগণ, তোমরা কাউকে এ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিতে এবং সালাত আদায় করিতে নিষেধ করিবে না যে কোন সময় যে কেউ তা করিতে চায়। তিরমিয়ী ও ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন।” {১৯৩}

{১৯৩} আবু দাউদ ১৮৯৪; নাসায়ী ১৮৪, ৫২৩; তিরমিয়ী ৮৬৮; ইবনু মাজাহ ১২৬৫; আহমাদ ৪/৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪; ইবনু হিব্বান ১৫৫২, ১৫৫৩, ১৫৫৪ । ইমাম তিরমিয়ী বলেনঃ হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১. শাফাক্ব [সূর্যাস্তের পরে পশ্চিম আকাশের লাল আভা] যার কারণে মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যায় তার ব্যাখ্যা

১৬৮ -ইবনু`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] হতে বর্ণনা করিয়াছেন,`শাফাক্ব’ এর অর্থ হুমরা [সূর্যাস্তের পরবর্তী পশ্চিমাকাশে দৃশ্যমান লাল আভা]। ইমাম দারাকুতনী এটিকে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনু খুজাইমাহ একে সহিহ বলেছেন এবং অন্যান্যরা একে মাওকৃফ বলেছেন।” {১৯৪}

{১৯৪} যইফ। দারাকুতনী ১/৩/২৬৯। হাদিসটির শব্দসমষ্টি হচ্ছেঃ [আরবী] যখন শাফাক্ব অস্তমিত হইবে ইশার নামাজের সময় উপস্থিত হইবে।

শাইখ আলবানী তার সিলসিলা যঈফাহ [৩৭৫৯] গ্রন্থে, যঈফুল জামে [৩৪৪০] গ্রন্থে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল [৩৩৩] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে হাশীম বিন বাশীর রহিয়াছে সে আবদুল্লাহ আল উমরী থেকে কোন হাদিসই শুনেনি। ইমাম নববী তার তাহযীব আল আসমা ওয়াল লুগাত [৩/১৬৫] গ্রন্থে বলেন, ইবনু উমার থেকে হাদিসটি সহিহ সনদে বর্ণিত, তবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে এর কোন প্রমাণ নেই। হাদিসের তাহকীকঃ জাল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১২. ফজর দু’প্রকার এবং উভয়ের মাঝে গুণগত ও হুকুমগত পার্থক্যের বর্ণনা

১৬৯ -ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ফজর দু প্রকার- প্রথমতঃ ঐ ফজর [যাতে সওম-এর নিয়্যাতে] পানাহার করা হারাম করে দেয় আর তাতে সালাত আদায় করা হালাল, আর দ্বিতীয়তঃ সেই ফজর [সুবহি কাযিব] যাতে ফজরের সালাত আদায় করা হারাম এবং খাদ্য খাওয়া হালাল। ইবনু খুযাইমাহ এবং হাকিম এটিকে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাঁরা উভয়ে একে সহিহ বলেছেন। {১৯৫}

{১৯৫} ইবনু খুযাইমাহ ৩৫৬; তার থেকে হাকিম ১৯১। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৭০ -হাকিমে জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

যে ফজরে [সওমের নিয়াতে] পানাহার করা হারাম তার আলোক রশ্মি পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে [যাকে সুবহি সাদিক্ব বলা হয়]। আর অন্য ফজরের আলোক রেখা নেকড়ে বাঘের লেজের মতো উৰ্দ্ধমুখী থাকে [যাকে সুবহি কাযিব বলা হয়]। {১৯৬}

{১৯৬} হাকিম, ১৯১; হাকিম বলেছেন হাদিসের সনদ সহিহ। জাহাবী বলেছেন। সহিহ। [আরবী] অর্থ নেকড়ে বাঘ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এ আলোক রশ্মিটা খুব বিস্তৃত ও লম্বা হইবে না। বরং একটা খুঁটির মত আকাশের দিকে খাড়া থাকিবে। এটা ইমাম সনয়ানীর অভিমত। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৩. সলাতকে প্রথম ওয়াক্তে পড়ার ফযীলত

১৭১ – ইবনু মাসউদ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নবী [সাঃআঃ] বলেছেন সবচেয়ে উৎকৃষ্টতর পুণ্য কাজ হচ্ছে ওয়াক্তের প্রথম ভাগে সালাত আদায় করা। তিরমিজি এবং হাকিম একে বর্ণনা করিয়াছেন। তারা উভয়েই এ হাদিসকে সহিহ বলেছেন। {১৯৭} আর এ হাদিসের মূল রহিয়াছে বুখারী ও মুসলিমে]

{১৯৭} সহিহ । তিরমিয়ী ১৭৩; হা, ১৮৮। হাদিসের শব্দ বিন্যাস হাকিমের। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৪. নামাজের সময় এর স্তর অনুযায়ী ফযীলত কম-বেশি হয়

১৭২ – আৰূ মাহযুরাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ নামাজের সময় এর প্রথমাংশ সালাত কায়িম করা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, মধ্যমাংশে ক্বায়িম করা তাহাঁর অনুগ্রহ এবং শেষাংশে আল্লাহর ক্ষমা লাভের কারণ। [ইমাম দারাকুতনী অত্যন্ত দুর্বল সনদে এটি বর্ণনা করিয়াছেন।] {১৯৮}

{১৯৮} হাদিসটি মাওজু’ বা জাল। দারাকুতনী ১৫৯-২৫০২। ইমাম সনআনী তাহাঁর সুবুলুস সালাম [১/১৮৫] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে ইয়াকুব ইবনুল ওয়ালীদ আল-মাদানী রহিয়াছে। তার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেন, সে বড় মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত, ইবনু মুঈনও তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম নাসাঈ তাকে পরিত্যাগ করিয়াছেন, আর ইবনু হিব্বান তাকে হাদিস জালকারী হিসেবে চিহ্নিত করিয়াছেন। ইবনুল মুলকিন তার বদরুল মুনীর গ্রন্থে [৩/২০৯], ইবনু উসাইমীন তার শরহে বুলুগুল মারাম [১/৪৪৭] গ্রন্থে, শাইখ আলবানী যঈফুল জামে [২১৩১] গ্রন্থে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন, তবে জঈফ তারগীব [২১৮] গ্রন্থে একে জাল হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। ইবনুল কীসরানী তার দাখীরাতুল হুফফায [১৪৪] ও মারিফাতুত তাযকিরাহ [১৩০] গ্রন্থে বলেন, সে বিশ্বস্ত রাবীদের নামে হাদিস জাল করত। ইবনু আদী বলেন, আল কামিল ফিয যুআফা [২/২৭০] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে দুজন অপরিচিত বর্ণনাকারী রহিয়াছে। শুধুমাত্র ইমাম সুয়ূত্বী [ভুলক্রমে] আল জামেউস সগীর [২৮০৮] গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলে ফেলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৩ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

তিরমিজিতে ইবনু উমার হতে এরূপ একটি হাদিস রহিয়াছে। তাতে মধ্যমাংশ শব্দ নেই। এটির সনদও দুর্বল। {১৯৯}

{১৯৯} মাওজু। তিরমিয়ী ১৭২। হাফিজ ইবনু হাজারের মতে জঈফ। জঈফ বলে শিথিলতা প্রদর্শন করা হয়েছে। কেননা, এ হাদিসের সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ নাম একজন রাবী আছেন যার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেছেন সে বড় মিথ্যুকদের একজন। হাদিসের তাহকীকঃ জাল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৫. ফজর উদয়ের পর দুরাকয়াত সুন্নাত ব্যতীত অন্য সলাত আদায় করা নিষেধ

১৭৪ – ইবনু উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন ফজর সালাতের সময় সমাগত হলে ফজরের দুরাকা‘আত [সুন্নাত] ব্যতীত অন্য কোন নফল সালাত [আদায় বৈধ] নেই।” {২০০} আব্দুর রাজ্জাকের বর্ণনায় রহিয়াছেঃ ফজর উদিত হওয়ার পর ফজরের দু রাকা‘আত [সুন্নাত] ছাড়া অন্য কোন সলাত নেই। {২০১}

{২০০} আবু দাউদ ১২৭৮; তিরমিজি ৪১৯ আহমাদ ৫৮১১ । {২০১} মুসান্নিফ আব্দুল রাজ্জাক ৩/৫৩/৪৭৬০। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

১৭৫ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আমর ইবনুল`আস [রাঃআঃ] এর পুত্র [‘আব্দুল্লাহ] হতে দারাকুত্বনীতে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে। {২০২}

{২০২} দারাকুতনী ১/৩/৪১৯। দারাকুতনীর শব্দসমূহ হচ্ছে- [আরবী] ফযর নামাজের পর দু‘রাকয়াত ব্যতীত আর কোন সলাত নেই। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৬. আসর নামাজের পর যুহরের সুন্নাত আদায়ের বিধান

১৭৬ – উম্মু সালামাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসরের সলাত আদায় করার পর আমার ঘরে প্রবেশ তাশরীফ আনলেন। অতঃপর দুরাকা‘আত সলাত আদায় করিলেন। আমি তাঁকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেনঃ “যুহরের পরের দুরাকাআত সুন্নাত সলাত সময়ের অভাবে পড়া হয় নি তাই এখন তা পড়ে নিলাম” আমি তাকে বললামঃ “আমরাও কি তা ছুটে গেলে [এভাবে কাযা হিসেবে] পড়ে নিব?” নাবী ঃ উত্তরে বললেনঃ “না [তা করিবে না]”। {২০৩}

{২০৩} জঈফ। আহমাদ ২৬১৩৮, নাসায়ী ৫৭৯, ৫৮০, ইবনু মাজাহ ১১৫৯, দারেমী ১৪৩৬; শাইখ বিন বায তাহাঁর বুলুগুল মারামের হাশিয়া [১৫৮] গ্রন্থে এর সনদকে উত্তম বলেছেন। তবে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। যেমন শাইখ সালিহ আল ফাওযান তার মিনহাতুল আল্লাম কী শরহে বুলুগিল মারামে [১৭৬, ১৭৭] গ্রন্থে বলেন, এ হাদিসের দুটি ক্রটি রহিয়াছে। প্রথমতঃ যাকওয়ান [আবু আমর আল মাদানী] ও আবু সালামার মাঝে বিচ্ছিন্নতা রহিয়াছে। দ্বিতীয়তঃ … গ্রন্থে ইমাম বায়হাকীর কথা নকল করে বলেন, এ অতিরিক্ত অংশটি দুর্বল। এর দ্বারা দলিল সাব্যস্ত হয় না। [ফাতহুল বারি ২/৬৪]। ইবনু হযম তার মুহাল্লা [২/২৬৭] গ্রন্থে হাদিসটিকে মুনকার ও মুনকাতি বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৭ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

উক্ত মর্মে হাদিস বর্ণিত আছে। {২০৪}

{২০৪} যইফ। আবূ দাউদ ১২৮০, নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, এর সনদে ইনকিতার কারনে ত্রুটি রয়েছে। [ইরওয়া ২/১৮৮], সিলসিলা যঈফা ৯৪৬ মুনকাররুপে। এ হাদিসের রাবীতে রয়েছে যাকওয়ান। আর উম্মু মাসালাম থেকে তার বর্ণিত হাদিসটি মুনকার [আল-মুহাল্লা আহমাদ শাকের ২/২৬৭], হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস


by

Comments

Leave a Reply