নামাজের বিছানা চাটাই মাদুর – কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোক সামনে গেলে

নামাজের বিছানা চাটাই মাদুর – কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোক সামনে গেলে

নামাজের বিছানা চাটাই মাদুর – কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোক সামনে গেলে >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (১৩৪-১৪২)=৯টি

১৩৪. অনুচ্ছেদঃ চাটাইর উপর নামাজ আদায় করা
১৩৫. অনুচ্ছেদঃ মাদুরের উপর নামাজ আদায় করা
১৩৬. অনুচ্ছেদঃ বিছানার উপর নামাজ আদায় করা
১৩৭. অনুচ্ছেদঃ বাগানের মধ্যে নামাজ আদায় করা
১৩৮. অনুচ্ছেদঃ নামাযীর সামনে অন্তরাল [সুতরা] রাখা
১৩৯. অনুচ্ছেদঃ নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া মাকরূহ
১৪০. অনুচ্ছেদঃ নামাযীর সামনে দিয়ে কোন কিছু গেলে তাতে নামাজ নষ্ট হয় না
১৪১. অনুচ্ছেদঃ কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোক ছাড়া অন্য কিছু নামাযীর সামনে দিয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয় না
১৪২. অনুচ্ছেদঃ এক কাপড়ে নামাজ আদায় করা

১৩৪. অনুচ্ছেদঃ চাটাইর উপর নামাজ আদায় করা

৩৩১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাটাইয়ের উপর নামাজ আদায় করিতেন।

হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ, বুখারী। এ অনুচ্ছেদে উম্মু হাবীবা, ইবনি উমার, উম্মু সালামা, আয়েশা, মাইমূনা ও উম্মু কুলসূম বিনতু আবু সালামা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। উম্মু কুলসুম নাবী [সাঃআঃ] ও উম্মু-সালামাহ্ হইতে হাদীস শুনেননি। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আব্বাসের হাদীসটি হাসান সহিহ। কিছু আলিম এ হাদীসের পক্ষে মত দিয়েছেন। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক বলেন, চাটাইয়ের উপর নামাজ আদায় করা নাবী [সাঃআঃ] হইতেই প্রমাণিত। আবু ঈসা বলেনঃ খুমরা অর্থ ছোট চাটাই অথবা মাদুর। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১৩৫. অনুচ্ছেদঃ মাদুরের উপর নামাজ আদায় করা

৩৩২. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] মাদুরের উপর নামাজ আদায় করিয়াছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০২৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আনাস ও মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু সাঈদের হাদীসটি হাসান। আলিমগণ এ হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন। অত্যন্ত অল্প সংখ্যক বিদ্বান মাটিতে নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব মনে করিয়াছেন। রাবী আবু সুফ্ইয়ানের নাম তালহা ইবনি নাফি। নামাজের বিছানা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৬. অনুচ্ছেদঃ বিছানার উপর নামাজ আদায় করা

৩৩৩. আবু তাইয়াহ আয্-যুবাঈ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [কপট লোকাচার বাদ দিয়ে] স্বাভাবিকভাবে আমাদের সাথে মিলেমিশে থাকতেন। এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে বলিতেনঃ হে আবু উমাইর! কোথা তোমার নুগায়ির [লাল পাখি]। রাবী বলেন, আমাদের বিছানা পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া হল, তিনি তার উপর নামাজ আদায় করিলেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৭২০, ৩৭৪০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আনাসের হাদীসটি হাসান সহিহ। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাহাদের উত্তরসুরিগণ বিছানা ও কার্পেটের উপর নামাজ আদায় করা দোষণীয় মনে করেন না। আহমাদ এবং ইসহাক এ কথা বলেছেন। আবু তাইয়্যাহর নাম ইয়াযিদ ইবনি হুমাইদ। নামাজের বিছানা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৭. অনুচ্ছেদঃ বাগানের মধ্যে নামাজ আদায় করা

৩৩৪. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বাগানের মধ্যে নামাজ আদায় করা পছন্দ করিতেন।

যঈফ, যঈফাহ [৪২৭০]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি গারিব। কেননা আমারা এ হাদীসটি শুধু হাসান ইবনি আবু জাফরের সূত্রেই জানতে পেরেছি। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাইয়িদ ও অন্যান্যরা হাসান ইবনি আবু জাফরকে যঈফ বলেছেন। রাবি আবু যুবাইরের নাম মুহাম্মদ ইবনি মুসলিম তাদরুস। আবু তুফাইলের নাম আমির ইবনি ওয়াসিলাহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৩৮. অনুচ্ছেদঃ নামাযীর সামনে অন্তরাল [সুতরা] রাখা

৩৩৫. মূসা ইবনি তালহা [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [তালহা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নিজের সামনে হাওদার খুঁটির মত কিছু রেখে দেয়, তারপর তার দিকে নামাজ আদায় করে তখন খুঁটির বাইরে দিয়ে কেউ চলাচল করলে কোন ভয় নেই।

হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৪০]। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, সাহল ইবনি হাসমা, ইবনি উমার, সাবরা ইবনি মাবাদ, আবু জুহাইফা ও আয়েশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ তালহার হাদীসটি হাসান সহিহ। আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা বলেছেন, ইমামের সুতরাই [অন্তরাল] মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১৩৯. অনুচ্ছেদঃ নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া মাকরূহ

৩৩৬. বুসর ইবনি সাঈদ হইতে বর্ণীতঃ

যাইদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রঃ] আবু জুহাইমের নিকট লোক পাঠালেন। উদ্দেশ্য ছিল, নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া সম্পর্কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট তিনি যা শুনেছেন তা জিজ্ঞেস করা। আবু জুহাইম [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাযীর সামনে দিয়ে চলাচকারী যদি জানত তার কত বড় গুনাহ হয়, তবে সে নামাযীর সামনে দিয়ে চলাচল করা অপেক্ষা চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা নিজের জন্য ভাল মনে করত। আবু নায্র বলেন, তিনি [আবু জুহাইম] কি চল্লিশ দিন না চল্লিশ মাস না চল্লিশ বছরের কথা বলেছেন তা আমার মনে নেই।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৪৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ আল-খুদরী, আবু হুরাইরা, ইবনি উমার ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে- নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে আরো বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেনঃ “তোমাদের কোন ব্যক্তির জন্য তার নামাজরত ভাইয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার চেয়ে একশত বছর অপেক্ষা করা বেশি কল্যাণকর।” বিদ্বানগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা বলেছেন, নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া মাকরূহ। তবে কেউ গেলে তাতে নামাযীর নামাজ নষ্ট হইবে বলে তাঁরা মনে করেন না। আবু নায্রের নাম সালিম। তিনি উমার ইবনি উবাইদুল্লাহ আল-মাদীনীর আযাদকৃত গোলাম। নামাজের বিছানা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪০. অনুচ্ছেদঃ নামাযীর সামনে দিয়ে কোন কিছু গেলে তাতে নামাজ নষ্ট হয় না

৩৩৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি একটি গাধীর পীঠে ফযলের পিছনে সাওয়ার ছিলাম। আমরা মিনায় পৌঁছলাম তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সাহাবাদের নিয়ে নামাজরত অবস্থায় ছিলেন। আমরা গাধার পীঠ হইতে নেমে [নামাযের] কাতারে শামিল হয়ে গেলাম। গাধীটা কাতারের সামানে দিয়ে চলে গেল। কিন্তু তাতে তাহাদের নামাজ নষ্ট হয়নি।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৪৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌, ফযল ইবনি আব্বাস ও ইবনি ঊমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আব্বাসের হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ সাহাবা ও তাহাদের পরবর্তীদের মতে, কোন জিনিস নামাজ নষ্ট করিতে পারে না। সুফিয়ান সাওরী এবং শাফিঈও একথা বলেছেন। নামাজের বিছানা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪১. অনুচ্ছেদঃ কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোক ছাড়া অন্য কিছু নামাযীর সামনে দিয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয় না

৩৩৮. আবদুল্লাহ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু যার [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন বাক্তি নামাজ আদায় করে তখন তার সামনে হাওদার পিছনের কাঠের মত কিছু [অন্তরাল] না থাকলে কালো কুকুর, গাদা ও স্ত্রীলোক তার নামাজ নষ্ট করে দিবে। আমি আবু যার [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম, কালো কুকুর এমন কি অপরাধ করিল, অথচ লাল অথবা সাদা কুকুরও তো রয়েছে? তিনি বলিলেন হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমিও তোমার মত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এমন প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বলিলেন কালো কুকুর শাইতান সমতুল্য।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৫২], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ, হাকাম আল-গীফারী, আবু হুরাইরা ও আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু যার-এর হাদীসটি হাসান সহীহ। কিছু সংখ্যক বিদ্বান এ হাদীসের ভিত্তিতে বলেছেন, গাধা, স্ত্রীলোক ও কালো কুকুর নামাযীর সামনে দিয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। ঈমাম আহমাদ বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই যে, কালো কুকুর নামাজ নষ্ট করে দেয়; কিন্তু গাধা এবং স্ত্রীলোকের ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। ঈমাম ইসহাক বলেন, কালো কুকুর নামাজ নষ্ট করে দেয়। এছাড়া আর কোন কিছু নামাজ নষ্ট করিতে পারে না । নামাজের বিছানা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪২. অনুচ্ছেদঃ এক কাপড়ে নামাজ আদায় করা

৩৩৯. ঊমার ইবনি আবু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ঊম্মূ সালামা [রাদি.]–এর ঘরে এক কাপড়ে নামাজ আদায় করিতে দেখেছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০৪৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, জাবির, সালামা ইবনি আকওয়া, আনাস, আমর ইবনি আবু ঊসাইদ, আবু সাঈদ, কাইসান, ইবনি আব্বাস, আয়িশাহ্‌, ঊম্মূ হানী, আম্মার ইবনি ইয়াসির, তলক ইবনি আলী ও উবাদা ইবনি সামিত [রাদি.] হইতেও বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ উমার ইবনি আবী সালামার হাদীসটি হাসান সহীহ। বেশিরভাগ সাহাবা ও তাবিঈন এ হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, একই কাপড়ে নামাজ আদায় করা হলে তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিছু আলিম বলেছেন, দুই কাপড়ে নামাজ আদায় করা উচিত। নামাজের বিছানা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply