নামাজের পবিত্রতা – গোসল, বীর্য, পেশাব, জুতা, হায়িযকালীন

নামাজের পবিত্রতা – গোসল, বীর্য, পেশাব, জুতা, হায়িযকালীন

নামাজের পবিত্রতা – গোসল, বীর্য, পেশাব, জুতা, হায়িযকালীন >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ১৩০-১৪৪ =১৫টি

অনুচ্ছেদ- ১৩০ঃ জুমুআহ্‌র নামাজের জন্য গোসল করা
অনুচ্ছেদ- ১৩১ঃ জুমুআহ্‌র দিন গোসল না করার অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ১৩২ঃ কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেয়া
অনুচ্ছেদ-১৩৩ঃ মহিলাদের হায়িযকালীন সময়ের পরিধেয় কাপড় ধোয়া
অনুচ্ছেদ-১৩৪ঃ সহবাসকালীন সময়ের পরিধেয় কাপড়ে নামাজ আদায় করা
অনুচ্ছেদ-১৩৫ঃ মহিলাদের গায়ে জড়ানো কাপড়ে নামাজ আদায় প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ১৩৬ঃ মহিলাদের গায়ে জড়ানো কাপড়ে নামাজ আদায় করার অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ১৩৭ঃ কাপড়ে বীর্য লাগলে
অনুচ্ছেদ- ১৩৮ঃ শিশুদের পেশাব কাপড়ে লাগলে
অনুচ্ছেদ- ১৩৯ঃ মাটিতে পেশাব লাগলে
অনুচ্ছেদ- ১৪০ঃ মাটি শুকিয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ- ১৪১ঃ কাপড়ের আঁচলে [শুষ্ক] অপবিত্রতা লাগলে
অনুচ্ছেদ- ১৪২ঃ জুতায় অপবিত্রতা লাগলে
অনুচ্ছেদ- ১৪৩ঃ অপবিত্র কাপড়ে আদায়কৃত নামাজ পুনরায় আদায় করা
অনুচ্ছেদ- ১৪৪ঃ কাপড়ে থু থু লাগলে

অনুচ্ছেদ- ১৩০ঃ জুমুআহ্‌র নামাজের জন্য গোসল করা

৩৪০. আবু সালামাহ্‌ ইবনি আবদুর রহমান হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরাইরা [রাঃআ:] তাকে অবহিত করেন যে, একদা উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:] জুমুআহ্‌র খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে উমার [রাঃআ:] তাকে বলিলেন, জুমুআহ্‌র নামাজে [সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে] তোমাদের কিসে বাধা দিল? লোকটি বলিল, না বিষয়টি তেমন নয়। বরং আযান শোনার পরই আমি উযু করে [এখানে এসেছি, কেবল এ সময়টুকুই বিলম্ব হয়েছে]। উমার [রাঃআ:] বলিলেন, শুধু উযুই করেছ? তোমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে বলিতে শোনোনিঃ তোমাদের কেউ জুমুআহ্‌র নামাজে গেলে যেন গোসল করে নেয়?

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪১. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর জুমুআহ্‌র দিন গোসল করা ওয়াজিব।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪২. হাফসাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য জুমুআহ্‌র নামাজে যাওয়া একান্ত কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি জুমুআহ্‌র নামাজে যাবে তার জন্যে গোসল করা জরুরী।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, কোন ব্যক্তি জুমুআর দিন ফাজ্‌রের পর গোসল করলেও যথেষ্ট হইবে, যদিও তা জানাবাতের গোসল হয়। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] ও আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তারা উভয়ে বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ্‌র দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করিবে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করিবে, তারপর জুমুআহ্‌র নামাজ আদায়ের জন্য মাসজিদে যাবে, সেখানে [সামনে যাওয়ার জন্য] লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত নামাজ আদায় করে ইমামদের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করিবে- তাহলে এটা তার জন্য এ জুমুআহ্‌ ও তার পূর্ববর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ্‌র কাফ্‌ফারা হয়ে যাবে। আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বলেন, আরো তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হইবে। কেননা নেক কাজের সাওয়াব [কমপক্ষে] দশ গুণ হয়।

{৩৪২} আহমদ [৩/৮১, ইবনি খুযাইমাহ্‌ [১৭৬২], মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক্ব সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩৪৪. আবদুর রহমান ইবনি আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] থেকে তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর জুমুআহ্‌র দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং সাধ্যানুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য। কিন্তু বুকাইর সানাদে আবদুর রহমানের নাম উল্লেখ করেননি এবং বর্ণনাকারী সুগন্ধি সম্পর্কে বলেছেন, যদিও তা মহিলাদের সুগন্ধি হয়।

সহীহঃ মুসলিম, অনুরূপ বোখারী। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৫. আওস ইবনি আওস আস-সাক্বাফী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ্‌র দিন গোসল করিবে এবং [স্ত্রীকেও] গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমুআহ্‌র জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার [মাসজিদে যাওয়ার] প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হইবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর নামাজ আদায়ের [সমান] সাওয়াব পাবে।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৬. আওস আস-সাক্বাফী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ্‌র দিন মাথা ধৌত করে এবং গোসল করে… পূবোর্ক্ত হাদীসের অনুরূপ।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ্‌র দিন গোসল করিবে, তার স্ত্রীর সুগন্ধি থাকলে তা থেকে ব্যবহার করিবে এবং উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে [মাসজিদে এসে] লোকদের ঘাড় না টপকিয়ে খুতবাহ্‌র সময় কোন নিরর্থক কথাবার্তা না বলে চুপ থাকিবে- তার দু জুমুআহ্‌র মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ্‌র জন্য তা কাফ্‌ফারা হইবে। আর যে ব্যক্তি নিরর্থক কথা বলবে এবং লোকদের ঘাড় টপকাবে সে জুমুআহ্‌র [সাওয়াব পাবে না], কেবল যুহরের নামাজের সম [সাওয়াব পাবে]।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩৪৮. আবদুল্লাহ ইবনি যুবাইর [রা] হতে আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [আয়িশাহ্‌] তাঁকে বলেন, নবি [সাঃআ:] চারটি কারণে গোসল করিতেনঃ [১] জানাবাতের দরুন, [২] জুমুআহ্‌র জন্য, [৩] শিংগা লাগানোর পর এবং [৪] মৃতের গোসল দেয়ার পর। {৩৪৭}

দুর্বলঃ শীঘ্রই আসছে ক্রমিক নং ৬৯৩ ও ৩১৬০-এ।{৩৪৭} আহমদ [৬/১৫২], ইবনি খুযাইমাহ [২৫৬], হাকিম [১/১৬৩], সকলেই যাকারিয়্যাহ ইবনি যায়িদাহ সূত্রে। ইমাম হাকিম বলেন, বোখারী ও মুসলিমের শর্তে সহিহ, তবে তাঁরা এটি বর্ণনা করেননি। যাহাবী তার সাথে একমত। কিন্তু মুসআব ইবনি শায়বাহ্‌ থেকে কেবল মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন, যেমন আত-তাক্বরীব গ্রন্থে রয়েছে। আর তিনি হাদীস বর্ণনায় শিথিল। সানাদের যাকিয়্যাহ ইবনি আবু যায়িদাহ একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্‌ আন্‌ শব্দে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৪৯. আলী ইবুন হাওশাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাকহূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে জিজ্ঞেস করলামঃ যে ধৌত করিল ও ধৌত করালো- এর অর্থ কী? তিনি বললেনঃ মাথা ধৌত করালো ও সমগ্র শরীর ধৌত করিল।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৩৫০. সাঈদ ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -ও উক্ত শব্দদ্বয়ের অর্থ বর্ণনা করিয়াছেন, মাথা ধোয়া এবং সমগ্র শরীর ধোয়া।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৩৫১. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ্‌র দিন জানাবাতের গোসালের ন্যায় গোসল করে সর্বপ্রথম জুমুআহ্‌র নামাজের জন্য মাসজিদে চলে আসবে, সে যেন একটি উট কুরবানীর সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি তার পরে আসবে, সে একটি গাভী কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর তৃতীয় নম্বরে যে আসবে সে একটি ছাগল কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর চতুর্থ নম্বরে যে আসবে সে একটি মুরগী কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর পঞ্চম নম্বরে যে আসবে সে আল্লাহর পথে একটি ডিম সদাক্বাহ করার সাওয়াব পাবে। অতঃপর ইমাম যখন খুতবাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসেন, তখন মালায়িকাহ [ফেরেশতারা] খুতবাহ্‌ শোনার জন্য উপস্থিত হন।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ

১/ জুমুআহ্‌র নামাজে উপস্থিত ব্যক্তির উপর গোসল করার প্রতি গুরুত্বদান।

২/ ইমামের উপচত, তার অধিনস্থদের [মুসল্লীদের] ব্যাপারে সচেতন থাকা। কেউ ভাল ও ফাযীলাতপূর্ণ কাজ পরিহার করলে তার কাছে এর কৈফিয়াত চাওয়া বা কারণ জানতে চাওয়া, যদিও সে বড় হয়।

৩/ প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তিকে জুমুআহর দিনে গোসলের প্রতি জোরদান, যদিও নামাজে উপস্থিত না হয়।

৪/ প্রত্যের প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জুমুআহ্‌র নামাজে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।

৫/ জুমুআহ্‌র দিনে মুমিনদের উত্তম কাপড় পরার প্রতি উৎসাহ প্রদান।

৬/ জুমুআহ্‌র দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব, যদি সুগন্ধি থাকে।

৭/ জুমুআহ্‌র দিনে যথাশিঘ্র মাসজিদে উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব ও ফাযীলাতপূর্ণ কাজ।

৮/ জুমুআহ্‌র দিনে অন্যের ঘাড় টপকিয়ে সামনে যাওয়া অপছন্দনীয়।

৯/ ইমাম মিম্বারে আসার পূর্ব পর্যন্ত মাসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির নাফ্‌ল নামাজ আদায় করা জায়িয।

১০/ ইমামের খুৎবাহ্‌ চলাকালে অহেতুক কিছু করা নিষেধ ও অপন্দনীয়।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৩১ঃ জুমুআহ্‌র দিন গোসল না করার অনুমতি প্রসঙ্গে

৩৫২. আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা নিজেদের শ্রমে নিয়োজিত থাকত এবং ঐ [বস্ত্র পরিহিত] অবস্থায়ই জুমুআহ্‌র নামাজ আদায়ে চলে যেত। তখন তাহাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে আসতে [তাহলে ভাল হত]!

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ জুমুআহ্‌র দিনে গোসল করা উচিত। এর হিকমাত হচ্ছে, [শরীরের ঘাম ও ময়লাযুক্ত] দুর্গন্ধ দূর করা, যাতে লোকেরা একে অন্যের থেকে কষ্ট না পায় এং ফিরিশতারাও কষ্ট না পান। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৫৩. ইকরিমাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

ইরাকের অধিবাসী কিছু লোক এসে বলিল, হে ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]! আপনি জুমুআহ্‌র দিন গোসল করা ওয়াজিব বলে মনে করেন কি? ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলিলেন, না, তবে করাটা ভাল এবং তাতে গোসলকারীর অধিকতর পবিত্রতা হাসিল হয়। আর যে ব্যক্তি গোসল করে না তার জন্য এটা ওয়াজিব নয়। কিভাবে গোসলের সূচনা হয় আমি তোমাদেরকে তা জানাচ্ছি। তৎকালে লোকেরা কঠোর পরিশ্রম করত, পশমী পোষাক পরত এবং নিজেদের পিঠে করে বোঝা বহন করত। তাহাদের মাসজিদও ছিল সংকীর্ণ ও খেজুরের ডালের তৈরি নিচু ছাদ বিশিষ্ট। একদা গরমের দিনে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আসলেন। লোকেদের কাপড় ঘামে ভিজে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এতে একের দ্বারা অন্যেরা কষ্ট বোধ করছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] দুর্গন্ধ পেয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! যখন এদিন [জুমুআহ্‌র দিন] আসে তখন তোমরা গোসল করে সাধ্যানুযায়ী তেল ও সুগন্ধী লাগাবে। ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেন, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ তাহাদের সম্পদশালী করেন। ফলে তারা পশমের পরিবর্তে অন্যান্য [উত্তম] কাপড় পরিধান করিতে থাকেন, কাজ-কর্ম অন্যদের দ্বারাও করাতে থাকেন এবং মাসজিদও প্রশস্তহয়, তখন পরস্পর পরস্পরের ঘামের গন্ধে কষ্ট পাওয়াও দূরীভূত হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩৫৪. সামুরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযু করিল, সে তো ভাল ও উত্তম কাজ করিল। আর যে গোসল করিল সে অধিকতর উত্তম কাজ করিল।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৩২ঃ কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেয়া

৩৫৫. ক্বাসিম ইবনি আসিম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:] -এর নিকট ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে এলে নবি [সাঃআ:] আমাকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করার নির্দেশ দিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষাঃ কাফির ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করিবে। অবশ্য তার গোসল করাটা ওয়াজিব না মুস্তাহাব এ ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করিয়াছেন। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৫৬. উসাইম ইবনি কুলাইব তার পিতা হতে তার দাদা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নবি [সাঃআ:] -এর কাছে গিয়ে বলিলেন, আমি ইসলাম ক্ববূল করেছি। নবি [সাঃআ:] তাকে বললেনঃ তুমি কুফর অবস্থার চুল ফেলে দাও [মুণ্ডন করো]। উসাইমের দাদা বলেন, আমাকে অন্য একজন বলেছেন, তার সাথে আরেকজন ছিল, তাকে নবি [সাঃআ:] বললেনঃ তুমি কুফর অবস্থার চুল ফেলে দাও এবং খাত্‌না করে নাও। {৩৫৫}

{৩৫৫} আহমদ [৩/৪১৫], বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা [১/১৭২], আবদুর রাযযাক মুসান্নাফ [হাঃ ৯৮৫৩], সকলেই আবদুর রাযযাক সূ্ত্রে। হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, সানাদে উসাইম ইবনি কুলাইব অজ্ঞাত। এছাড়া সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি আছে, যিনি ইবুন জুরাইজের শায়খ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৩ঃ মহিলাদের হায়িযকালীন সময়ের পরিধেয় কাপড় ধোয়া

৩৫৭. মুআযাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] -কে এমন ঋতুবতী মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যার কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগেছে। তিনি বলিলেন, ঐ কাপড় ধুয়ে ফেলবে। রক্তের চিহ্ন সম্পূর্ণ দূর না হলে কোন হলুদ জিনিস দ্বারা তার রং পরিবর্তন করে ফেলবে। তিনি আরো বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট একাদিক্রমে তিন তিনবার হায়িযকাল অতিক্রম করি। অথচ আমি [কাপড়ে রক্ত না লাগার কারণে] আমার কাপড় ধৌত করিনি।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৫৮. মুজাহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়িশা [রাঃআ:] বলেন, আমাদের কারও নিকট শুধু একটি কাপড় থাকত। ঋতুস্রাব অবস্থায় সেটাই তাহাঁর পরনে থাকত। কাপড়ে রক্ত লেগে গেলে তিনি মুখের লালা দ্বারা ভিজিয়ে তা ঘষে নিতেন।

সহীহঃ বোখারী নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৫৯. বাক্বার ইবনি ইয়াহ্‌ইয়াহ থেকে তার দাদীর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ্‌ [রাঃআ:] -এর নিকট গেলাম। সে সময় এক কুরাইশ মহিলা তাকে হায়িযের কাপড়ে নামাজ আদায় করা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করেন। উম্মু সালামাহ্‌ [রাঃআ:] বলিলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআ:] -এর যুগে আমাদের হায়িয হত। হায়িয চলাকালীন সময় পর্যন্ত আমাদের কেউ কেউ একই কাপড় পরিহিত থাকত। অতঃপর সে পাক হলে পরিহিত কাপড় উলটপালট করে দেখত। তাতে রক্ত লেগে থাকলে আমরা তা ধুয়ে ঐ কাপড়েই নামাজ আদায় করতাম। আর কিছু না লেগে থাকলে [ধোয়া] ছেড়ে দিতাম। ঐ কাপড় পরে নামাজ আদায়ে আমাদেরকে কোন কিছুই বিরত রাখত না। আমাদের মধ্যকার কারো চুল ঝুঁটি বাঁধা থাকলে গোসল করার সময় তা খুলত না, বরং তিন অঞ্জলি পানি হাতে নিয়ে মাথার উপর ঢেলে দিত। যখন চুলের গোরায় ভালভাবে পানি পৌঁছে যেত তখন তা ঘষে নিত। অতঃপর সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দিত। {৩৫৮}

{৩৫৮} ইবনি খুযাইমাহ্‌ [২৭৮]। এর সানাদে বাক্বার ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া এবং তার দাদা দুজন্ অজ্ঞাত। যেমন আত-তাক্বরীব গ্রন্থে রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৬০. আসমা বিনতু আবু বাক্‌র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এক মহিলাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট জিজ্ঞেস করিতে শুনিয়াছি, পবিত্র হওয়ার পর [হায়িযকালীন] কাপড় আমরা কি করব? তাতে কি নামাজ আদায় করা যাবে? তিনি বললেনঃ তা দেখে নিবে। তাতে রক্ত লেগে থাকলে সামান্য পানি দিয়ে রক্ত খুঁটে ফেলে পানি ছিটিয়ে রক্তের স্থান ধুয়ে ফেলবে যেন রক্তের চিহ্ন না থাকে। অতঃপর সেটা পরে নামাজ আদায় করিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৩৬১. আসমা বিনতু আবু বাক্‌র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মহিলা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কাপড়ে রক্ত লেগে গেলে করণীয় কি? তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগে গেলে তা হাত দিয়ে খুঁটে ফেলবে। অতঃপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ঐ কাপড়ে নামাজ আদায় করিবে।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৬২. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে উক্ত হাদীসের সমার্থক বর্ণনা আছে। তাতে রয়েছেঃ নবি [সাঃআ:] বললেনঃ কোন জিনিস দিয়ে তা দূর করে পানি দ্বারা ঘষে নিবে। তারপর তাতে পানি ছিটিয়ে ধুয়ে ফেলবে।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৬৩. আদী ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উম্মু ক্বায়িস বিনতু মিহসান [রাঃআ:] -কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, আমি নবি [সাঃআ:] এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগে গেলে কী করিতে হইবে? তিনি বললেনঃ কাঠের টুকরা দিয়ে তা [খুঁচে] দূর করে বরই পাতা মিশানো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৬৪. আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদের করো নিকট [কখনো] একটি জামা থাকত। হায়িয অবস্থায় তার পরনে ঐ জামা থাকত। তাতেই জানাবাতের গোসল ফরয হত। অতঃপর জামার কোথাও এক ফোঁটা রক্ত পরিলক্ষিত হলে তা থু থু দ্বারা রগড়ে নিত।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৬৫. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

খাওলা বিনতু ইয়াসার [রাঃআ:] নবি [সাঃআ:] -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি মাত্র পরনের কাপড় আছে। তা পরিহিত অবস্থায় আমি হায়িযগ্রস্ত হই। অতএব এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? তিনি বলিলেন, তুমি হাযিয়মুক্ত হলে পরিধেয় বস্ত্রটি ধুয়ে নিবে। অতঃপর সেটা পরে নামাজ আদায় করিবে। তিনি বলেন, যদি রক্তের চিহ্ন দূরীভূত না হয়? নবি [সাঃআ:] বললেনঃ রক্ত ধুয়ে ফেলাই তোমার জন্য যথেষ্ট। রক্তের চিহ্ন তোমার কোন ক্ষতি করিবে না।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৪ঃ সহবাসকালীন সময়ের পরিধেয় কাপড়ে নামাজ আদায় করা

৩৬৬. মুআবিয়াহ ইবনি আবু সুফিয়ান হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তার বোন ও নবি [সাঃআ:] -এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ [রাঃআ:] -কে জিজ্ঞেস করেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কি স্ত্রী সহবাসকালে পরিহিত কাপড়ে নামাজ আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ তাতে কোনরূপ অপবিত্রতা পরিদৃষ্ট না হলে আদায় করিতেন।

হাদীস থেকে শিক্ষা : কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর সাথে সহবাসকালীন সময়ে পরিহিত কাপড়ে নামাজ আদায় জায়িয আছে, যদি তাতে অপবিত্রতা দেখিতে না পায়। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৫ঃ মহিলাদের গায়ে জড়ানো কাপড়ে নামাজ আদায় প্রসঙ্গে

৩৬৭. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের কাপড়ে অথবা চাদরে নামাজ আদায় করিতেন না।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৬৮. আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] আমাদের [গায়ে জড়ানো] চাদরে নামাজ আদায় করিতেন না।

সহিহ।হাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি সাঈদ ইবনি আবু সদাক্বাহ [রাঃআ:] -কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন [রাঃআ:] -কে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি কিছু কাল যাবত এ হাদীস শুনিয়াছি কিন্তু আমার মনে নেই, কার কাছে তা শুনিয়াছি। আমি তা বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর নিকট শুনিয়াছি কিনা তাও স্মরণ নেই। অতএব তোমরা এ সম্পর্কে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৩৬ঃ মহিলাদের গায়ে জড়ানো কাপড়ে নামাজ আদায় করার অনুমতি প্রসঙ্গে

৩৬৯. মায়মূনাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] একটি চাদর গায়ে দিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। চাদরের একাংশ তাহাঁর এক ঋতুবতী স্ত্রীর গায়ে জড়ানো ছিল।

সহীহঃ অনুরূপ বোখারী ও মুসলিম। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৭০. আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এক রাতে নামাজ আদায় করছিলেন। আমি হায়িয অবস্থায় আমার একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে তাহাঁর পাশেই ছিলাম। চাদরের কিছু অংশ ছিল আমার গায়ে আর কিছু অংশ ছিল তাহাঁর গায়ে। {

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৩৭ঃ কাপড়ে বীর্য লাগলে

৩৭১. হাম্মাম ইবনিল হারিস হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়িশা [রাঃআ:] -এর মেহমান ছিলেন। তার স্বপ্নদোষ হলো। আয়িশা [রাঃআ:] -এর এক বাঁদী তাকে কাপড় থেকে বীর্য ধুতে দেখে বিষয়টি আয়িশাহ্‌কে অবহিত করেন। তখন তিনি বলেন, আমি নিজে দেখেছি এবং আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কাপড় হতে বীর্য রগড়ে তুলে ফেলেছি।

সহীহঃ মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ শুষ্ক বীর্য খুঁটে ফেললেই পাক হয়ে যায়। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৭২.আল-আসওয়াদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আয়িশা [রাঃআ:] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কাপড় থেকে বীর্য রগড়ে তুলে ফেলতাম। অতঃপর তিনি ঐ কাপড়েই নামাজ আদায় করিতেন।

সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুগীরাহ ও আবু মাশার উপরোক্ত হাদীস বর্ণনায় ঐকমত্য পোষণ করিয়াছেন এবং আমাশ হাকামের অনুরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৭৩. সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আয়িশা [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলতাম। তারপরও কাপড়ে একটি বা কয়েকটি ভিজা চিহ্ন দেখিতে পেতাম। {৩৭২}

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ বীর্য তরল অবস্থায় থাকলে তা ধুয়ে ফেললেই পাক হয়ে যায়। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৩৮ঃ শিশুদের পেশাব কাপড়ে লাগলে

৩৭৪. উম্মু কায়িস বিনতু মিহসান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্রকে নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট আসলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাকে নিজের কোলে বসালে শিশুটি তাহাঁর পরিধেয় বস্ত্রে পেশাব করে দেয়। তিনি পানি আনিয়ে তাতে ছিটিয়ে দিলেন, কিন্তু ধৌত করিলেন না।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৭৫. লুবাবাহ্ বিনতুল হারিস হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা হুসাইন ইবনি আলী [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কোলে থাকাবস্থায় পেশাব করে দিলেন। আমি বললাম, আপনি অন্য একটি কাপড় পরে নিন এবং আমার এ কাপড়টি আমাকে ধুতে দিন। তিনি বললেনঃ মেয়ে শিশু পেশাব করলে ধুতে হয়। আর ছেলে শিশু পেশাব করলে তাতে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট।

হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ.

৩৭৬. আবুস সাম্‌হ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নবি [সাঃআ:] -এর খিদমাত করতাম। তিনি গোসল করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলিতেনঃ তুমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়াও। তখন আমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখতাম। একবার হাসান অথবা হুসাইন [রাঃআ:] -কে আনা হলে তাঁদের একজন তাহাঁর বুকে পেশাব করে দিলেন। আমি তা ধৌত করিতে এলে তিনি বললেনঃ মেয়ে শিশুর পেশাব ধোয়া আবশ্যক হয়। আর ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট।

সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাসান বাসরীর মতে, সব পেশাবের হুকুমই [অপবিত্র হিসেবে] সমান। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৭৭. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মেয়েদের পেশাব ধুতে হইবে এবং ছেলেদের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট হইবে- যতক্ষণ না তারা শক্ত খাদ্য গ্রহণ করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ

৩৭৮. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর নবি [সাঃআ:] বলেছেন- পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় সে শক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত- এ কথাটুকু উল্লেখ নেই। তাতে এ কথা রয়েছে, ক্বাতাদাহ [রাঃআ:] বলেছেন, শিশু কন্যা ও পুত্রদের ব্যাপারে এ হুকুম খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রযোজ্য। [শক্ত] খাদ্য গ্রহণ করা শুরু করলে উভয়ের পেশাবই ধুতে হইবে।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৭৯. হাসান হতে তার মায়ের হইতে বর্ণিতঃ

তার মা বলেন, তিনি উম্মু সালামাহ [রাঃআ:] -কে দেখেছেন, শক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি [দুগ্ধপোষ্য] ছেলের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতেন। আর [শক্ত] খাদ্য গ্রহণ শুরু করলে [তাহাদের পেশাব করা কাপড়] ধুয়ে ফেলতেন। আর তিনি মেয়ে শিশুর পেশাবের কাপড়ও ধুয়ে ফেলতেন।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৩৯ঃ মাটিতে পেশাব লাগলে

৩৮০. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাসজিদে বসা ছিলেন এমন সময় এক বেদুঈন মাসজিদে প্রবেশ করে দু রাকআত নামাজ আদায় করিল। অতঃপর দুআ করিল, হে আল্লাহ দয়া করো আমার প্রতি ও মুহাম্মাদের প্রতি এবং আমাদের সাথে অন্য কারো প্রতি দয়া করো না। নবি [সাঃআ:] বলিলেন, তুমি ব্যাপককে সীমিত করে দিলে। কিছুক্ষণ পর ঐ লোকটি মাসজিদের এক কোণে পেশাব করে দিল। লোকেরা [তাকে শায়েস্তা করার জন্য] দ্রুত তার দিকে এগুচ্ছিল। নবি [সাঃআ:] তাহাদের নিষেধ করে বললেনঃ তোমাদের মানুষের প্রতি সহজ ও কোমল আচরণকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, রুক্ষ ও কঠোর আচরণকারী হিসেবে নয়। তোমরা এর [পেশাবের] উপর এক বালতি বা এক ডোল পানি ঢেলে দাও।

সহীহঃ বোখারী। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৮১. আবদুল্লাহ ইবনি মাক্বিল ইবনি মুক্বাররিন হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবি [সাঃআ:] -এর সাথে নামাজ আদায় করিল। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে রয়েছেঃ নবি [সাঃআ:] বললেনঃ যে মাটিতে সে পেশাব করেছে ঐ মাটি তুলে ফেলে দাও এবং ঐ জায়গায় পানি ঢালো।

সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এটি মুরসাল হাদীস। আবদুল্লাহ ইবনি মাক্বিল [রাঃআ:] নবি [সাঃআ:] -এর যুগ পাননি। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৪০ঃ মাটি শুকিয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়।

৩৮২. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর যুগে আমি রাতে মাসজিদে ঘুমাতাম। তখন আমি ছিলাম অবিবাহিত যুবক। সে সময় মাসজিদে প্রায়ই কুকুর যাতায়াত করত এবং তাতে পেশাব করে দিত। কিন্তু তাঁদের কেউ পেশাবের উপর পানি ঢালতেন না।

সহীহঃ বোখারী একে তালীক্বভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৪১ঃ কাপড়ের আঁচলে [শুষ্ক] অপবিত্রতা লাগলে

৩৮৩. ইবরাহীম ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আওফের উম্মু ওয়ালাদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নবি [সাঃআ:] -এর স্ত্রী উম্মু সালমাহ [রাঃআ:] -কে বলেন, আমার আঁচল ঝুলিয়ে রাখি এবং আমি আবর্জনার স্থানে চলাচল করে থাকি। উম্মু সালামাহ্‌ [রাঃআ:] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ এর পরবর্তী রাস্তা এ আঁচলকে পবিত্র করে দেয়।

হাদীস থেকে শিক্ষাঃ পবিত্র যমীনের উপর দিয়ে অতিক্রমের দ্বারা ময়লাযুক্ত আঁচল পবিত্র হয়ে যায়। ইমাম শাফিঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ বিধান শুষ্ক ময়লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তরল অপবিত্রতা লাগলে তা ধুয়ে পবিত্র করিতে হইবে। নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৮৪. বনু আবদুল আশহালের জনৈকা মহিলা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআ:]! আমাদের মাসজিদে যাওয়ার রাস্তাটি আবর্জনাপূর্ণ। সুতরাং বৃষ্টি হলে আমরা কী করব? তিনি বললেনঃ এর পরের রাস্তাটা কি এর চাইতে ভাল নয়? আমি বললাম, হ্যাঁ ভাল। তিনি বললেনঃ তাহলে এটা ওটার পরিপূরক। [অর্থাৎ এ রাস্তার ময়লা ঐ রাস্তা দূর করে দিবে]।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৪২ঃ জুতায় অপবিত্রতা লাগলে

৩৮৫. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কারোর জুতার তলায় আবর্জনা লেগে গেলে মাটিই তার আবর্জনা বা অপবিত্রতা দূর করার জন্য যথেষ্ট।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৮৬. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে, নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ কারো মোজায় অপবিত্রতা লেগে গেলে মাটিই তার পবিত্রকারী।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৮৭. আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৪৩ঃ অপবিত্র কাপড়ে আদায়কৃত নামাজ পুনরায় আদায় করা

৩৮৮. উম্মু জাহ্‌দার আল-আমিরিয়্যাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়িশা [রাঃআ:] -কে জিজ্ঞেস করিলেন, হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে গেলে কী করিতে হইবে? আয়িশা [রাঃআ:] বলিলেন, এক রাতে আমি [হায়িয অবস্থায়] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর সাথে রাত যাপন করলাম। আমাদের গায়ে নিজ নিজ কাপড় ছিল। সেটির উপর আমরা একটি চাদরও জড়িয়ে নিলাম। ভোর হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ঐ চাদরখানি পরিধান করে ফাজ্‌রের নামাজ আদায়ে চলে গেলেন। তিনি নামাজ আদায় করার পর বসলেন। তখন এক লোক বলিল, হে আল্লাহর রসূল! এতে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে! রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] দাগ ও তার আশেপাশের অংশ হাতের মুঠোয় ধরে ঐ অবস্থায়ই এক গোলামের দ্বারা চাদরটি আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ এটা ধুয়ে ভাল করে চিপে নিয়ে আবার আমার নিকট পাঠিয়ে দাও। আমি এক পাত্র পানি নিয়ে তা ধুয়ে ভাল করে পানি নিংড়িয়ে তাহাঁর নিকট পাঠিয়ে দিলাম। দুপুরে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ঐ চাদরটি গায়ে দিয়ে [ঘরে] ফিরলেন। {৩৮৭}

{৩৮৭} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সানাদে উম্মু ইউনূস এবং উম্মু জাহদার রয়েছে। উভয়ের অবস্থা জানা যায়নি। যেমন তা হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ- ১৪৪ঃ কাপড়ে থু থু লাগলে

৩৮৯.আবু নাদ্‌রাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কাপড়ে থুথু লাগলে তিনি কাপড়ের এক অংশ দিয়ে অপর অংশ রগড়ে দিলেন।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৯০. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

নামাজের পবিত্রতা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply