৫ ওয়াক্ত নামাজের কেরাত – নামাজে কেউ সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে

৫ ওয়াক্ত নামাজের কেরাত – নামাজে কেউ সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে

৫ ওয়াক্ত নামাজের কেরাত – নামাজে কেউ সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ১২৯-১৩৯ =১১টি

অনুচ্ছেদ-১২৯ যুহর নামাজের কেরাত
অনুচ্ছেদ-১৩০ শেষের দু রাকআত সংক্ষেপ করা
অনুচ্ছেদ-১৩১ যুহর ও আসর নামাজে ক্কিরাআতের পরিমান
অনুচ্ছেদ-১৩২ মাগরিব নামাজে ক্বিরাআতের পরিমাণ
অনুচ্ছেদ-১৩৩ মাগরিব নামাজে কেরাত সংক্ষেপ করা
অনুচ্ছেদ-১৩৪ উভয় রাকআতে একই সূরাহ পাঠ প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৩৫ ফাজ্‌র নামাজের কেরাত
অনুচ্ছেদ-১৩৬ নামাজে কেউ সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে
অনুচ্ছেদ-১৩৭: স্বরব ক্বিরাআতের নামাজে (মুক্তাদীর) সূরাহ ফাতিহা পাঠ যে অপছন্দ করে
অনুচ্ছেদ-১৩৮ঃ নীরব ক্বিরাআতের নামাজে মুক্তাদীর কেরাত পাঠ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৩৯ নিরক্ষক ও অনারব লোকের কেরাতের পরিমাণ

অনুচ্ছেদ১২১ যে দুআ পড়ে নামায আরম্ভ করতে হয়

৭৬০. আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলার পর নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করতেনঃ “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহী রাব্বিলআলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লহুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলাহা লী ইল্লা আনতা, আনতা রাব্বি ওয়া আনাআবদুকা। যালামতু নাফসী ওয়াতারাফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামীআন। লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লি-আহসানীল আখলাক্ব। লা ইয়াহদিনী লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফআন্নী সাইয়্যিআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল- খায়রু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইকা, ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা আনাবিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।” অতঃপর রুকুকালে তিনি এ দুআ পাঠ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, খাসাআ লাকা সামঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখয়ী ওয়াইযামী ওয়াআসাবী।” তারপর রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে তিনি এ দুআ পাঠ করতেনঃ “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌, রাব্বানা লাকাল হাম্‌দ মিলউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মিলউ মা বায়নাহুম ওয়া মিলউ মাশিতা মিন শাইয়ান বাদু।” তারপর সাজদাহ্‌র সময় এ দুআ পাঠ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ফাআহ্‌সানা সূরাতাহু ওয়া শাক্বা সামআহু ওয়া বাসারাহু ওয়া তাবারাকাল্লাহু আহ্‌সানুল খালিক্বীন।” তারপর নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি এ দুআ পাঠ করতেনঃ “আল্লাহুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্‌খারতু, ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আলানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আলামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়াল মুআখখিরু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।”

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৬১. আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফরয নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি কেরাত পাঠ শেষে রুকুতে গমনকালে এবং রুকু হইতে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে তিনি বসা অবস্থায় হাত উত্তোলন করতেন না। তিনি দু সাজদাহ্‌র শেষে (অর্থাৎ দু রাকআত আদায় শেষে) উঠার সময়ও অনুরূপভাবে হাত উঠাতেন এবং তাকবীর বলেআবদুল আযীয বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে উল্লিখিত দুআ পাঠ করতেন। তবে এ বর্ণনায় দুআ কিছুটা কম-বেশী রহিয়াছে এবং “ওয়াল খায়রু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা”- বাক্যটির উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারী এতে আরো উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শেষে বললেনঃ “আল্লাহুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া আখখারতু ওয়া আসরারতু ওয়াআলানতু আনতা ইলাহী লা ইলাহা ইল্লা আনতা।”

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭৬২. শুআইব ইবনি আবু হামযাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির, ইবনি আবু ফারওয়াহ এবং মাদীনাহ্‌র অন্যান্য ফাক্বীহ্‌গণ আমাকে বলেছেন, উপরোক্ত দুআ পাঠকালে তুমি “ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন” এর স্থলে “ওয়া আনা মিনাল-মুসলিমীন” বাক্যটি বলবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৭৬৩. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দ্রুত গতিতে ক্লান্ত অবস্থায় মাসজিদে (নামাজে) উপস্থিত হয়ে বলিল, “আল্লাহু আকবার আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ।” অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শেষে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যকার কে এ দুআটি পড়েছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন লোকটি বলিল, আমি হে আল্লাহর রাসূল! আমি ক্লান্ত অবস্থায় মাসজিদে এসে এ দুআটি পড়েছি। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি দেখিতে পেলাম, বারজন মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতা) এজন্য প্রতিযোগীতায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, কে সর্বাগ্রে দুআটি আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাবেন। বর্ণনাকারী হুমায়িদের বর্ণনায় আরো রহিয়াছে, তোমাদের কেউ (মাসজিদে) এলে যেন স্বাভাবিক গতিতে আসে। অতঃপর ইমামের সাথে যেটুকু নামায পাবে আদায় করিবে এবং নামাজের ছুটে যাওয়া অংশ (ইমামের সালাম ফিরানোর পর) একাকী আদায় করে নিবে।

সহীহঃ মুসলিমে অতিরিক্ত অংশ বাদে। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৬৪. ইবনি জুবায়ির ইবনি মুত্বঈম হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কোন এক নামায আদায় করতে দেখেছেন। বর্ণনাকারীআমর বলেন, সেটা কোন নামায ছিল (ফরয না নফল) তা আমার জানা নেই। তিনি (সাঃআঃ) (নামায আদায়কালে) বলেছেন, “আল্লাহু আকবার কাবীরান, আল্লাহু আকবার কাবীরান, আল্লাহু আকবার কাবীরান, আলহামদু লিল্লাহি কাসীরান, আলহাম দুলিল্লাহি কাসীরান, আলহাম দুলিল্লাহি কাসীরান, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসীলা”, (তিনবার) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাজীমি মিন নাফখিহী ওয়া নাফসিহী ওয়া হামযিহি।” বর্ণনাকারী (আমর ইবনি মুররাহ) বলেন, নাফখিহী হচ্ছে শাইত্বানের কবিতা, নাফসিহী হচ্ছে শাইত্বানের অহঙ্কার এবং হামযিহি হচ্ছে শাইত্বানের কুমন্ত্রণা। {৭৬৩}

দূর্বলঃ মিশকাত ৮১৭, ইরওয়া ৩৪২।

{৭৬৩} ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ নামায, অনুঃ নামাজে আশ্রয় প্রার্থণা করা, হাঃ ৮০৭), তায়ালিসি (৯৪৭), ইবনি জারুদ (৯৬), আহমাদ (৪/৮৫), ত্বাবারানীকাবীর এবং ইবনি হাজমমুহাল্লা (৩/২৪৮)। সানাদেরআসিম ইবনিআনাযীকে কেউ সিক্বাহ বলেননি। কেবল ইবনি হিব্বান তাকেসিক্বাত গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু সেখানে তার নাম নিয়ে মতভেদ আছে। সম্ভবতঃ এ কারনে ঈমাম বোখারি বলেছেনঃ সহিহ নয়। তবে হাদিসটির এ সানাদ যদিও দূর্বল কিন্তু এর শাওয়াহিদ বর্ণনাবলীর কারনে হাদিসটি সহিহ। (বিস্তারিত দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ৩৪২ নং) হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৬৫. নাফি ইবনি জুবায়ির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে নফল নামায আদায়কালে বলিতে শুনিয়াছি ….. পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। {৭৬৪}

{৭৬৪} পূর্বের হাদীসে গত হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৬৬. আসিম ইবনি হুমায়িদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতের নামায কিসের দ্বারা আরম্ভ করতেন সে সম্পর্কে আমিআয়েশা (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তুমি আমাকে এমন একটি প্রশ্ন করেছ যা ইতোপূর্বে কেউ করেনি। অতঃপর তিনি বলেন, তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথমে দশবার আল্লাহু আকবার, দশবার আলহামদুলিল্লাহ, দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং দশবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলিতেন। তারপর এ দুআ পড়তেনঃ “আল্লাহুম্মাগফির লী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী, ওয়াআফিনী।” এছাড়া তিনি ক্বিয়ামাতের দিনের সংকীর্ণ স্থান হইতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করতেন। {৭৬৫}

হাসান সহিহ।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বর্ণনাকারী খালিদ ইবনি মাদান রবীআহ হইতেআয়িশা (রাঃআঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭৬৭. আবদুর রহমান ইবনিআওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমিআয়েশা (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতের নামায কিসের দ্বারা আরাম্ভ করতেন? তিনি বলিলেন, তিনি রাতে দন্ডায়মান হয়ে এ দুআ দ্বারা নামায আরাম্ভ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফিলা ফাত্বিরাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা,আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি, আনতা তাহকুমু বাইনাইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন। ইহ্দিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বক্বি বি-ইযনিকা, ইন্নাকা আনতা তাহদী মান তাশাউ ইলা সিরাত্বিম মুসতাক্বীম।”

হাসানঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৬৮. ইকরামাহ হইতে বর্ণিতঃ

ইকরামাহ একই সানাদে ভিন্ন শব্দে ও অর্থে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতে (তাহাজ্জুদ) নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে বলিতেন … (হাদিস)।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৬৯. মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ফারয ও নাফল যে কোন নামাজেই নামাজের প্রথমে, মাঝে বা শেষ দিকের যে কোন সময়ে দুআ পড়া যায়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৭৭০. রিফাআহ ইবনি রাফি আয-যুরাকী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বললে এক ব্যক্তি বলে উঠেন-আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ”। নামায শেষে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এ দুআ পাঠকারী কে? লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি দেখলাম, তিরিশেরও অধিক মালিয়িকাহ্ (ফেরেশতা) তা সর্বাগ্রে লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

সহীহঃ বোখারি।নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭১. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মধ্য রাতে (তাহাজ্জুদ) নামাজে দন্ডায়মান হয়ে বলিতেনঃ “আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা নূরুস-সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি, ওয়া লাকাল-হামদু আনতা রব্বুস-সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি, ওয়া মান ফীহিন্না, আনতাল হাক্কু, ওয়া ক্বাওলুকাল-হাক্কু, ওয়া ওয়াদুকাল-হাক্কু, ওয়া লিক্বাউকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান-নারু হাক্কুন, ওয়াস্-সাআতু হাক্কুন। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়াআলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বিকা খাসমতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু ফাগফির লী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া আখ্খারতু ওয়া আসরারতু ওয়া আলানতু, আনতা ইলাহী, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” {৭৭০}

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭২. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহু আকবার বলার পর বলিতেন…. পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭৩. মুআয ইবনি রিফাআহ ইবনি রাফি হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর পেছনে নামায আদায় করি। এমন সময় রিফাআহ হাঁচি দিয়ে বলেন,আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি মুবারাকানআলাইহি কামা ইউহিব্বু রব্বুনা ওয়া ইয়ারদা।” নামায শেষে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ নামাজের মধ্যে এ দুআটি কে পাঠ করেছে? অতঃপর অবশিষ্ট হাদিস মালিক বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৭৪.আবদুল্লা ইবনিআমির হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর পেছনে নামায আদায়কালে আনসার গোত্রের জনৈক যুবক হাঁচি দিয়ে বলিল, “আলহামদু লিল্লাহে হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি হাত্তা ইয়ারদা রব্বুনা ওয়া বাদু মা ইয়ারদা মিন আমরিদ্-দুনয়া ওয়াল-আখিরাহ।” নামায শেষে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এ কথাগুলো কে বলেছে? যুবকটি এ সময় নিরব থাকল। তিনি পুনরায় বলিলেন, এ কথাগুলো কে বলেছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন যুবকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো আমিই বলেছি এবং আমি ভাল উদ্দেশ্যই বলেছি। তিনি বললেনঃ এ উক্তিগুলো কোথাও অপেক্ষা করেনি, বরং মহীয়ান রহমানের আরশে পৌঁছে গেছে। {৭৭৩}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ১১২ যারা বলেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা বলে নামায শুরু করতে হইবে

৭৭৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে নামাজের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এ দুআ পড়তেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।” অতঃপর তিনবার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” ও তিনবার “আল্লাহু আকবার কাবীরান” বলার পর “আউযু বিল্লাহিস সামিইল-আলীমি মিনাশ-শাইত্বানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলিতেন। তারপর কেরাত পাঠ করতেন।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭৬. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আরম্ভকালে এ দুআ পড়তেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।”

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৩ নামাজের শুরুতে চুপ থাকা

৭৭৭. আল-হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সামুরাহ (রাঃআঃ) বলেন, নামাজে নিশ্চুপ থাকার দুটি স্থান (দু সাকতা) আমি স্মরণ রেখেছি। প্রথম সাকতা হলো ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলা থেকে কেরাত আরাম্ভ করা পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় সাকতা হলো ইমামের সূরাহ ফাতিহা ও অন্য সূরাহ পড়ার পর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে। কিন্তুইমরান ইবনি হুসায়িন (রাঃআঃ) একথা মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ফলে তারা এ বিষয়ে জানার জন্য মাদীনাহইতে উবাই ইবনি কাব (রাঃআঃ)-এর নিকট পত্র লিখে পাঠালে তিনি সামুরাহ (রাঃআঃ)-এর বর্ণনাকে সত্যায়িত করেন। {৭৭৬}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদীসে হুমায়িদও অনুরূপভাবে বলেছেন যে, কেরাত শেষে একটি সাকতা রহিয়াছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৭৮. সামুরাহ ইবনি জুনদুব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে দুজায়গায় চুপ থাকতেন। নামায আরাম্ভকালে (অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা বলার পর) এবং কেরাত শেষ করার পর …. অতঃপর ইউনুস সূত্রে বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। {৭৭৭}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৭৯. আল-হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

একদা সামুরাহ ইবনি জুনদুব ওইমরান ইবনি হুসায়িন (রাঃআঃ) পরস্পরে আলোচনাকালে প্রসঙ্গক্রমে সামুরাহ (রাঃআঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে নামাজের দু স্থানে চুপ থাকা (দু সাকতা) সম্পর্কিত জ্ঞান হিফয করিয়াছেন। প্রথম সাকতা হচ্ছে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এবং দ্বিতীয় সাকতা হচ্ছে, “গাইরিল মাগযূবিআলাইহিম ওয়ালায্যলীন” পাঠের পর। সামুরাহ ইবনি জুনদুব (রাঃআঃ) বিষয়টি স্মরণ রাখলেওইমরান ইবনি হুসায়িন (রাঃআঃ) তা অস্বীকার করেন বসেন। ফলে তাঁরা দুজনেই এ বিষয়ে জানার জন্য উবাই ইবনি কাব-এর নিকট পত্র লিখেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে লিখেন যে, সামুরাহ (রাঃআঃ) বিষয়টি যথাযথ স্মরণ রেখেছেন। {৭৭৮}

দুর্বলঃ মিশকাত ৮১৮। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮০. সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নামাজে দুস্থানে চুপ থাকা সম্পর্কিত জ্ঞান আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে হিফয করেছি। বর্ণনাকারী সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদাহ্ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে দুস্থানে চুপ থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন কেউ নামায আরাম্ভ করিবে এবং যখন কেরাত শেষ করিবে (তখন চুপ থাকিবে)। পরে তিনি বলেন, (কেরাত শেষ করা অর্থ হচ্ছে) যখন কেউ গাইরিল মাগযূবিআলাইহিম ওয়ালায্যলীন বলবে। {৭৭৯}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮১. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে চুপ থাকতেন। ফলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে কেন চুপ থাকেন তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, (এ সময় আমি নিশ্চুপে এ দুআ পড়ে থাকি)ঃ “আল্লাহুম্মা বাঈদ বাইনী ওয়া বাইনা খত্বা ইয়া ইয়া কামা বাআদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা আনকিনী মিন খত্বা ইয়া ইয়া কাসাওবিল আবয়াযি মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মা মাগসিলনী বিস সালজি ওয়াল মায়ি ওয়াল বারদ।”

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৪ সশব্দে বিসমিল্লাহ না বলা প্রসঙ্গে

৭৮২. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর (রাঃআঃ),উমার (রাঃআঃ) ওউসমান (রাঃআঃ) “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিলআলামিন” হইতে কেরাত আরাম্ভ করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৮৩. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শুরু করতেন তাকবীরে তাহরীমার দ্বারা আর কেরাত শুরু করতেন আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিলআলামীন দ্বারা। তিনি রুকুতে স্বীয় মাথা উঁচুও করতেন না আবার নীচুও করতেন না বরং পিঠের সাথে সমান্তরাল করে রাখতেন। তিনি রুকু হইতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বে সিজদায় যেতেন না এবং এক সাজদাহর পর সোজা হয়ে বসার পূর্বে দ্বিতীয় সাজদাহ্ করতেন না। তিনি প্রত্যেক দু রাকআত নামায শেষেআত্তাহিয়্যাতু (তাশাহুদ) পড়তেন। অতঃপর বসার সময় বাম পা বিছিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে রাখতেন। তিনি শাইত্বানের ন্যায় (দু গোড়লির উপর পাছা রেখে) বসতে এবং চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় (মাটিতে দু হাত বিছিয়ে) সাজদাহ্ করতে নিষেধ করতেন। তিনি সালামের দ্বারা নামায সমাপ্ত করতেন।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৮৪. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ “বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম, ইন্না আত্বায়না কাল-কাওসার….” সূরাটি শেষ পর্যন্ত। তিনি বলিলেন, তোমরা কি জান! কাওসার কী? তাঁরা বলিলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূল (সাঃআঃ) -ই সর্বাধিক অবগত। তিনি বলিলেন, তা হচ্ছে একটি নাহর, আমার রব্ব আমাকে জান্নাতে তা দান করবেন বলে অঙ্গীকার করিয়াছেন।

হাসানঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৮৫. উরওয়াহ হইতেআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইফকের ঘটনা উল্লেখ পূর্বক বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বসা ছিলেন। (অতঃপর ওয়াহী হওয়া শেষে) তিনি মুখ খুলে বলিলেন,আউযু বিস্ সামিইলআলীম মিনাশ শাইত্বনির রজীম, “ইন্নাল্লাযীনা জাউ বিল-ইফকিউসবাতুম মিনকুম…” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। অর্থঃ “যারা মিথ্যা অপপ্রচার করেছে তারা তোমাদের মধ্যেরই লোক….।” {৭৮৪}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি মুনকার। কারণ একদল এ হাদিসটি ঈমাম যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহাঁদের বর্ণনায় উক্ত আয়াতের সাথে আউযু বিল্লাহ্-এর উল্লেখ নেই। আমরা আশঙ্কা হচ্ছে আউযু বাক্যটি বর্ণনাকারী হুমায়িদের উক্তি। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৫ সশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠের বর্ণনা

৭৮৬. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমিউসমান(রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কিভাবে সূরাহ বারাআতকে সূরাহ আল-আনফালের অন্তর্ভুক্ত করে আল-কুরআনের সাবউল মাসানী (সাতটি দীর্ঘ সূরাহ)-এর মধ্যে গণ্য করেন এবং উভয় সূরার মধ্যস্থলে বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম কেন লিখেন না? অথচ সূরাহ্ বারাআত মিআতাইন (তথা ১০০-এর অধিক আয়াত সম্বলিত সূরাহ্)-এর অন্তর্ভুক্ত (কারণ সূরাহ্ বারাআতে ১২৯টি আয়াত আছে)। পক্ষান্তরে সূরাহ আল-আনফাল মাসানীর অন্তর্ভুক্ত (কারণ তাতে আয়াতের সংখ্যা ১০০-এর কম অর্থাৎ ৭৫ টি)।উসমান (রাঃআঃ) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর উপর কোন আয়াত অবতীর্ণ হওয়া মাত্রই তিনি ওয়াহী লিখক সাহাবীদের ডেকে বলিতেনঃ এ আয়াত অমুক সূরাহর অমুক স্থানে সন্নিবেশিত কর যেখানে এই এই বিষয় আলোচিত হয়েছে। তাহাঁর উপর একটি অথবা দুটি আয়াত অবতীর্ণ হলেও তিনি ঐরুপ বলিতেন। সূরাহ আল-আনফাল হচ্ছে মাদীনাহইতে আগমণের পরপরই নাবী (সাঃআঃ) -এর উপর অবতীর্ণ সূরাহ সমূহের অন্যতম সূরাহ। আর সূরাহ বারাআত হচ্ছে কুরআন অবতীর্ণের শেষ পর্যায়ে নাযিলকৃত সূরাহ সমূহের অন্যতম। তথাপি সূরাহ আল-আনফালের ঘটনাবলীর সাথে সূরাহ বারাআতে বর্ণিত ঘটনাবলীর সাদৃশ্য আছে। সেজন্য আমার মনে হলো, এটি সূরাহ্ আল-আনফালের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমি সূরাহ দুটি একত্রে সাবউ-তিওয়াল-এর অন্তর্ভুক্ত করি এবং এ উভয় সূরাহ মধ্যস্থলে বিসমিল্লাহ-হির রহমা-নির রহীম লিখি নাই। {৭৮৫}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮৭. ইবনি আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্নিত আছে।তিনি বলেছেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইন্তেকাল করিয়াছেন। কিন্তু সূরা্হ আনফালের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ ব্যাপারে তিনি পরিস্কারভাবে কিছুই বলেননি। ঈমাম দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,শাবী, আবু মালিক, ক্বাতাদা্হ ও সাবিতইবনি উমারা্হ বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর উপর সূরা্হ আন-নামল অবতীর্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি (কোনো সূরাহর শুরুতে) বিসমিল্লাহ লিখেননি।

দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮৮. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর উপর বিসমিল্লাহ-হির রহমানির রহীম অবতীর্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো সুরা্র শুরুতে দিক চিহ্নিত করতে পারতেন না।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৬ কোনো অনিবার্য কারনে নামায সংক্ষেপ করা

৭৮৯. আবদুল্লা ইবনি আবু ক্বাতাদা্হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি কখনো নামায দীর্ঘায়িত করতে চাই, কিন্তু শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে তার মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে নামায সংক্ষেপ করি।

সহীহঃ বোখারি। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৭ নামায সংক্ষিপ্ত করা

৭৯০.জাবির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

মুআয (রাঃআঃ) নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে নামায আদায়ের পর ফিরে এসে আমাদের নামায ঈমামতি করতেন। বর্ননাকারী পুনরায় বলেন, তিনি ফিরে এসে স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নামায ঈমামতি করতেন। এক রাতে নাবী (সাঃআঃ)ইশার নামায আদায়ে বিলম্ব করেন। সেদিনও মুআয (রাঃআঃ) নাবী (সাঃআঃ) এর সাথেইশার নামায আদায়ের পর স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট গিয়ে তাহাঁদের ঈমামতি করেন। এবং উক্ত নামাজে তিনি সূরাহ আল-বাক্বারা্হ পাঠ করলে এক ব্যাক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী নামায আদায় করে নেয়। ফলে বলা হলো, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে নাকি? লোকটি বললোঃ আমি মুনাফিক্ব হই নাই। পরে লোকটি নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! মুআয (রাঃআঃ) আপনার সাথে নামায আদায় শেষে ফিরে গিয়ে আমাদের নামাজের ঈমামতি করেন। আমরা মেহনতি মজদুর লোক এবং নিজেরাই ক্ষেতের কাজ-কর্ম করে থাকি। অথচ মুআয (রাঃআঃ) আমাদের নামায ঈমামতিকালে সূরাহ বাক্বারাহ পড়েন (অর্থাৎ দীর্ঘ সূরাহ পাঠ করে থাকেন)। হে কথা শুনে নাবী (সাঃআঃ) (মুআযকে সম্বোধন করে) বললেনঃ হে মুআয! তুমি কি ফিতনাহ সৃষ্টিকারী? তুমি কি লোকদের ফিতনাহয় ফেলতে চাও? তুমি নামায অমুক অমুক (ছোট) সূরাহ পাঠ করিবে। আবুয যুবায়ির বলেন, সূরাহ আল-আলা, ওয়াল লাইলি, ইযা ইয়াগশা এ ধরনের (ছোট) সুরা্ পাঠ করিবে। অতঃপর আমরা তা (বর্ননাকারী)আমরের নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমার ধারনা, তিনি সেটাও উল্লেখ করিয়াছেন।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯১. হাযম ইবনি উবাই ইবনি কাব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) এর নিকট এমন সময় এলেন যখন তিনি মাগরিব এর নামাজের ঈমামতি করছিলেন। বর্ননাকারী এ হাদীসে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুআয (রাঃআঃ) কে ডেকে বললেনঃ হে মুআয! তুমি ফিতনাহ সৃষ্টিকারী হয়ো না। কেননা তোমার পেছনে বৃদ্ধ, রোগগ্রস্হ, কর্মব্যস্ত, এবং মুসাফির লোকেরা নামায আদায় করে। {৭৯০}

মুসাফিরের উল্লেখের দ্বারা মুনকার।

{৭৯০} বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (৩/১১৭) আবু দাউদের সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার

৭৯২. আবু সালি্হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে নাবী (সাঃআঃ) এর জনৈক সহাবীর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যাক্তিকে বলিলেন, তুমি নামাজে কি দুআ পাঠ করো? লোকটি বললো, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি–) পাঠ করি এবং বলি আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউযুবিকা মিনান নার। কিন্তু আমি আপনার ও মুআযের অস্পস্ট শব্দগুলো বুঝতে পারিনা।

(অর্থাৎ আপনি ও মুআয কি দুআ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ আমরাও তার আশে পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত পার্থনা করি)।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৩. জাবির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মুআয (রাঃআঃ) এর ঘটনা বর্ননা করে বলেন, নাবী (সাঃআঃ) জনৈক যুবককে বলিলেন, হে ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি নামাজে কী পড়? সে বললো ,আমি সুরা্ ফাতিহা পড়ি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা ও জাহান্নাম হইতে আশ্রয় চাই। আমি আপনার ও মুআয এর অস্পস্ট শব্দগুলো বুঝিনা। (অর্থাৎ আপনি এবং আমাদের ঈমাম মুআয নামায নিরবে কোন কোন শব্দযোগে দুআ ও মুনাজাত করেন তা আমি অবহিত নই)। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এবং মুআয উভয়েই আশে-পাশেই ঘুরে থাকি (অর্থাৎ আমরাও জান্নাতের প্রত্যাশা এবং জাহান্নাম হইতে আশ্রয় প্রত্যাশা করি) অথবা অনুরুপ কিছু বলেছেন।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৪. আবু হুরাইরা্হ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামায ঈমামতিকালে যেন নামায সংক্ষেপ করে। কেননা, মুক্তাদীদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন, এবং বৃদ্ধ লোকও থাকে। অবশ্য কেও একাকী নামায আদায় করলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী নামায দীর্ঘায়িত করতে পারে।

সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৫. আবু হুরাইরা্হ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন তোমাদের কেও নামাজে ঈমামতি করলে যেনো নামায সংক্ষেপ করে। কারন মুক্তাদীদের মধ্যে দুর্বল ,বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকেরাও থাকে।

সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৮ নামাজের জন্য ক্ষতিকর দিক

৭৯৬. আম্মার ইবনি ইয়াসির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছিঃ এমন লোকও আছে (যারা নামায আদায় করা সত্ত্বেও নামাজের রুকুন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুযু না থাকায় তারা নামাজের পরিপূর্ন সাওয়াব পায় না)। বরং তারা দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ্ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ, বা অর্ধাংশ সাওয়াব প্রাপ্ত হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৯ যুহর নামাজের কেরাত

৭৯৭. আত্বা ইবনি আবু রাবাহ হইতে বর্ণিতঃ

আবু হূরাইরাহ (রাঃআঃ) বলেন, প্রত্যেক নামাজেই কেরাত পড়তে হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যেসব নামাজে আমাদেরকে শুনিয়ে কেরাত পড়েছেন, আমরাও তোমাদেরকে সেসব নামাজে সশব্দে কেরাত পড়ে শুনাই। পক্ষান্তরে তিনি যেসব নামাজে নিঃশব্দে কেরাত পড়েছেন, আমারাও তাতে নিঃশব্দে কেরাত পড়ে থাকি।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৮. আবু ক্বাতাদাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতেন। তিনি যুহর ওআসর নামাজের প্রথম দু রাকআতে সূরাহ ফাতিহা ও অন্য দুটি সূরাহ পাঠ করতেন। তিনি কোন কোন সময় আমাদেরকে শুনিয়ে আয়াত পড়তেন। তিনি যুহর নামাজের প্রথম রাকাআত কিছুটা দীর্ঘ করতেন এবং ২য় রাকাআত সংক্ষেপ করতেন। তিনি ফাজর নামাযও অনুরূপ করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুসাদ্দাদ তার বর্ণনাতে সূরাহ ফতিহা ও অন্য সূরাহ পাঠের কথা উল্লেখ করেননি। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৯. আবদুল্লা ইবনি আবু ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে এও রয়েছেঃ নাবী (সাঃআঃ) নামাজের শেষ দু রাকআতে শুধু সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতেন। হাম্মামের বর্ণনায় আরও রয়েছেঃ রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) দ্বিতীয় রাকআতের তুলনায় প্রথম রাকআত কিছুটা দীর্ঘ করতেন। তিনি ফাজর ওআসরনামাযও অনুরূপ করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০০. আবদুল্লা ইবনি আবু ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমাদের ধারনা, নাবী (সাঃআঃ) প্রথম রাকআত হয়ত এজন্যই দীর্ঘ করতেন যাতে লোকেরা প্রথম রাকআত থেকেই জামাআতে শরীক হওয়ার সুযোগ পান।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০১. আবু মামার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহর ওআসর নামাজে কেরাত পাঠ করতেন কি না এ বিষয়ে আমরা খাব্বাব (রাঃআঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হ্যা, (পাঠ করতেন)। আমরা তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা তা কিভাবে জানতেন (বা বুঝতেন)? তিনি বলেন, আমরা তাহাঁর দাড়ি আন্দোলিত হইতে দেখে বুঝে ফেলতাম।

সহীহঃ বোখারি। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০২. আবদুল্লা ইবনি আবুআওফা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) যুহর নামাজের প্রথম রাকআতে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, কারো (আগমনের) পদধ্বনি শোনা যেত না। {৮০২}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩০ শেষের দু রাকআত সংক্ষেপ করা

৮০৩. জাবির ইবনি সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবারউমার (রাঃআঃ) সাদ (রাঃআঃ) কে বলেন, লোকেরা আপানার প্রতিটি বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি আপনার নামায সম্পর্কেও।

সাদ (রাঃআঃ) বলেন, আমি নামাজের প্রথম দু রাকআতে ক্কিরাআত দীর্ঘ করি এবং শেষের দু রাকআতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পাঠ করি। তিনি আরো বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর পিছনে যেভাবে নামায আদায় করেছি- তার কোন ব্যতিক্রম করিনি।উমার (রাঃআঃ) বলেন, আপানার ব্যাপারে আমার ধারনাও তা-ই।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহর ওআসর নামায কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা তা নির্ণয় করেছি। আমরা নির্ণয় করি যে, তিনি যুহর নামায প্রথম দু রাকআতে ত্রিশ আয়াত পড়ার পরিমান দাঁড়াতেন- যেমন সূরাহ “আলিফ লাম মীম আস-সাজদাহ” ইত্যাদি এবং শেষের দু রাকআতে তিনি প্রথম দু রাকআতের চেয়ে অর্ধেক পরিমান দাঁড়াতেন। তিনি যুহরের শেষ দু রাকআতে যতক্ষণ দাঁড়াতেনআসরের প্রথম দু রাকআতেও ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি আসরের শেষ দু রাকআতে তার প্রথম দু রাকআতে অর্ধেক পরিমান সময় দাড়াতেন।

সহীহঃ মুসলিম নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩১ যুহর ও আসর নামাজে ক্কিরাআতের পরিমান

৮০৫. জাবির ইবনি সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহর ওআসর নামাজে সূরাহ “ওয়াস-সামায়ি ওয়াত- ত্বারিক” এবং “ওয়াস-সামায়ি যাতিল-বুরুজ”- এর অনুরূপ সূরাহ পড়তেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৮০৬. জাবির ইবনি সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ত, তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহরের নামায আদায় করতেন এবং তাতে সূরাহ “ওয়াল-লাইলি ইযা ইয়াগশা”-এর অনুরূপ সূরাহ পড়তেন। তিনিআসর ও অন্যান্য নামাজেও অনুরূপ সূরাহ পড়তেন। তবে তিনি ফাজর নামাজে দীর্ঘ সূরাহ পড়তেন।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০৭. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহর নামাজে (তিলাওয়াতে সাজদাহ্‌ পাঠ করে) সাজদাহ্‌ দিয়ে দাড়ালেন, তারপর রুকু করিলেন। আমরা তাঁকে সূরাহ “তানযিল আস-সাজদাহ্‌” পাঠ করতে দেখেছি। ইবনি ঈসা বলেন, মুতামির ছাড়া কেউই এ হাদিস উমাইয়্যাহ হইতে বর্ণনা করেননি। {৮০৭}

দুর্বলঃ মিশকাত ১০৩১। {৮০৭} আহমাদ (২/৮৩, হাঃ ৫৫৫৬) ইয়াযীদ ইবনি হারুন সূত্রে সুলায়মান হাদিসটি আবু মিজলায হইতে শুনেননি। তাহাঁদের দু জনের মাঝে একজন অজ্ঞাত বর্ণনাকারীও রহিয়াছে।আওনুল মাবুদে রয়েছেঃ মুনযিরী হাদিসটির ব্যাপারে নীরব থেকেছেন। সানাদে সুলায়মানের শায়খ উমাইয়্যাহকে চেনা যায়নি। মীশকাতের তাহক্বীক্বে রয়েছেঃ সানাদে ইনকিতা হওয়ায় সানাদটি দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮০৮. আব্দুল্লাহ ইবনিউবাইদুল্লাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি বনু হাশিমের কয়েকজন যুবকের সাথে ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম। আমি আমাদের মধ্যকার এক যুবককে বললাম, ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহর ওআসর নামাজে কেরাত করতেন কি? ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) বলিলেন, না, না। তাঁকে বলা হলো, তিনি (সাঃআঃ) সম্ভবত মনে মনে পড়তেন। তিনি রেগে বলিলেন, মনে মনে পড়ার চেয়ে না পড়াই উত্তম। তিনি (সাঃআঃ) ছিলেন আল্লাহর পক্ষ হইতে নির্দেশিত ব্যাক্তি, তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ বিষয় তিনি অকপটে প্রচার করিয়াছেন। আমরা তিনটি বিষয়ে অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। (তা হলো) আমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে উযু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমাদের জন্য সদাক্বাহ খাওয়া নিষেধ, এবং আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে গাধাকে ঘোডার সাথে সংগম করাতে।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০৯. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) যুহর ওআসর নামাজে কেরাত করতেন কিনা আমি তা অবহিত নই।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩২ মাগরিব নামাজে ক্বিরাআতের পরিমাণ

৮১০. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার উম্মুল ফাদল বিনতুল হারিস (রাঃআঃ) তাঁকে “ওয়াল মুরসালাতিউরফা” শীর্ষক সূরাহ পড়তে শুনে বলিলেন, হে বৎস! তুমি এ সূরাহ পাঠ করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সর্বশেষ মাগরিব নামাজে এ সূরাহ পড়তে শুনিয়াছি।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮১১. জুবাইর ইবনি মুত্বইম হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে মাগরিবের নামাজে সূরাহ তূর পাঠ করতে শুনিয়াছি।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮১২. মারওয়ান ইবনিল হাকাম হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যায়িদ ইবনি সাবিত (রাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, আপনি মাগরিব নামাজে “কিসারে মুফাস্‌সাল” পাঠ করেন কেন? অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে মাগরিব নামাজে দুটি লম্বা সূরাহ পড়তে শুনিয়াছি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ লম্বা সূরাহ দুটি কি কি? তিনি বলিলেন, সূরাহ আল-আরাফ ও সূরাহ আল-আনআম। (ইবনি জুরাইজ বলেন) এরপর আমি এ বিষয়ে ইবনি আবু মুলায়কাহকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজের পক্ষ হইতে বলিলেন লম্বা সূরাহ দুটি হচ্ছে সূরাহ আল-মায়িদাহ্‌ ও সূরাহ আল-আরাফ।

সহীহঃ বোখারি সংক্ষেপে। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৩ মাগরিব নামাজে কেরাত সংক্ষেপ করা

৮১৩. হিশাম ইবনিউরওয়াহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা মাগরিবের নামাজে তোমাদের মতই সূরাহ আলআদিয়াত ও অনুরূপ দীর্ঘ সূরাহ পড়তেন।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিস প্রমাণ করে, মাগরিব নামাজে দীঘ সূরাহ পাঠ রহিত হয়ে গেছে। আর এটাই সহিহ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৮১৪. আমর ইবনি শুআইব হইতে পর্যায়ক্রমে তাহাঁর পিতা ও দাদার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ফরয নামাজে ঈমামতিকালে মুফাস্‌সালের ছোট-বড় সব সূরাহই পড়তে শুনিয়াছি। {৮১৪}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮১৫. আবুউসমান আন-নাহদী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার তিনি ইবনি মাসঊদ (রাঃআঃ) এর পিছনে মাগরিবের নামায আদায় করেন। তিনি সূরাহ ইখলাস পাঠ করেন। {৮১৫}

{৮১৫} সম্ভবত এর দোষ হচ্ছে সানাদের নায্‌যার ইবনিআম্মার, হাফিযআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, তিনি মাকবূল, এবং তিনি ইবনি আব্বাস  সূত্রে হাদিস মুরসাল করেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৪ উভয় রাকআতে একই সূরাহ পাঠ প্রসঙ্গে

৮১৬. মুআয ইবনিআব্দুল্লাহ আল-জুহানী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জুহায়নাহ গোত্রের এক ব্যক্তি তাঁকে অবহিত করেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে ফাজ্‌র নামাজে উভয় রাকআতে “ইজা যুলযিলাতিল আরজু” পাঠ করতে শুনেছেন। তিনি আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ভুলবশতঃ এরূপ করেছিলেন না ইচ্ছাকৃতভাবে, তা আমি অবহিত নই।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৫ ফাজ্‌র নামাজের কেরাত

৮১৭. আমর ইবনি হূরাইস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর ফাজ্‌রের নামাজে “ফালাউক্বসিমু বিল খুন্নাস, আল জাওয়ারিল কুন্নাস” সূরাহ (তাকবীর) পাঠ করার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৬ নামাজে কেউ সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে

৮১৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেন নামাজে সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে কুরআন থেকে সহজপাঠ্য কোন আয়াত পড়ি।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮১৯. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ তুমি মাদিনাহ্‌র রাস্তায় বের হয়ে ঘোষনা করো যে, কুরআন পাঠ ছাড়া নামায হয় না; অন্তত সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) অবশ্যই মিলাবে।

হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার

৮২০. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে আদেশ করেন যে, আমি যেন ঘোষনা করি, সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) না মিলালে নামাযই হইবে না।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২১. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি নামায আদায় করিল, যার মধ্যেকুরআনের মা অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহা পাঠ করিল না, তার ঐ নামায ত্রুটিপূর্ণ, তার নামায ত্রুটিপূর্ণ, তার নামায ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বলিলেন, হে ফারসী! তুমি মনে মনে পাঠ করিবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি নামাযকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দাহর মধ্যে দু ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দাহর জন্য এবং আমার বান্দাহ আমার কাছে যা কিছু চায়, তাকে তাই দেয়া হয়।

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। বান্দাহ যখন বলে, “আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিলআলামিন”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “আর-রহমানির রহীম”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার গুনগান করছে। বান্দাহ যখন বলে, “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমাকে সম্মান প্রদর্শন করছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন”- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দাহ যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হইবে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম, সীরাতালাযীনা আনআমতাআলাইহিম, গাইরিল মাগদূবিআলাইহিম ওয়ালাদ্দালীন”- তখন আল্লাহ বলেন, এর সবই আমার বান্দাহর জন্য আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হইবে।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২২. উবাদাহ্‌ ইবনিস সামিত (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এ হাদিসের সানাদ নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অতিরিক্ত কিছু পরবে না, তার নামায পূর্ণাঙ্গ হইবে না।

বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, এ নির্দেশ একাকী নামায আদায়কারীর জন্য।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিমে তার বক্তব্যের এ অংশটুকু বাদে “তার সাথে অতিরিক্ত কিছু..” শেষ পর্যন্ত। আর মুসলিমে (আরবী) রহিয়াছে। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২৩. উবাদাহ ইবনিস সামিত (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আর পিছনে ফাজ্‌রের নামায আদায় করছিলাম। নামাজে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কেরাত পড়াকালে কেরাত তাহাঁর জন্য ভারী হয়ে গেল। নামায শেষে তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, সম্ভবতঃ তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কেরাত করেছ। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হ্যাঁ। তখন তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, এমনটি কর না, তবে তোমাদের সূরাহ ফাতিহা পড়াটা স্বতন্ত্র। কেননা যে ব্যাক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না, তার নামায হয় না।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮২৪. নাফী ইবনি মাহমুদ ইবনি রাবী আল-আনসারী হইতে বর্ণিতঃ

নাফী বলেন, একবারউবাদাহ ইবনিস সামিত (রাঃআঃ) ফাজ্‌র নামাজে বিলম্বে উপস্থিত হন। ফলে মুয়াজ্জিন আবু নুআইম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নামাজের তাকবীর বলে লোকদের নিয়ে নামায আরম্ভ করেন। তখন আমি এবংউবাদাহ ইবনিস সামিত (রাঃআঃ) উপস্থিত হয়ে আবু নুআইমের পিছনে ইকতিদা করি। আবু নুআইম নামাজে স্বরবে কেরাত পড়ছিলেন।উবাদাহ (রাঃআঃ) (তার পিছনে) সূরাহ ফাতিহা পড়েন। নামায শেষে আমিউবাদাহ (রাঃআঃ)-কে বললামঃ আবু নুআইমের স্বরবে কেরাত পাঠকালে আমি আপনাকেও সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে শুনলাম? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। একবার রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোন এক ওয়াক্তের স্বরব ক্বিরাআতের নামাজে আমাদের ঈমামতি করেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ক্বিরাআতের সময় আটকে গেলেন। অতঃপর নামায শেষে তিনি (সাঃআঃ) আমাদের লক্ষ্য করে বলেনঃ আমার স্বরবে কেরাত পাঠকালে তোমরাও কি কেরাত করেছ? জবাবে আমাদের কেউ কেউ বলিলেন, হ্যাঁ, আমরাও কেরাত করেছি। তখন তিনি (সাঃআঃ) বলেন, এমনটি করিবে না। তিনি (সাঃআঃ) আরও বলেন, কেরাত পাঠের সময় তাইতো ভাবছিলাম, আমার কুরআন পাঠে কিসে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে? অতএব আমি নামাজে যখন স্বরবে কেরাত করি, তখন তোমরা কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮২৫. ইবনি জাবির, সাঈদ ইবনিআবদুল আযীয এবংআবদুল্লা ইবনি আলা হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা মাকহুল হইতেউবাদাহ (রাঃআঃ) সূত্রে আর-রাবী ইবনি সুলাইমানের হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, ঈমাম মাকহুল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাগরিব,ইশার ও ফাজ্‌র নামাজে (ইমামের পিছনে) প্রত্যেক রাকআতেই নিঃশব্দে সূরাহ ফাতিহা পরতেন।

ঈমাম মাকহুল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যে নামাজে ঈমাম উচ্চৈঃস্বরে কেরাত পড়েন এবং থামেন তুমি তখন সূরাহ ফাতিহা নীরবে পড়ে নিবে। আর ঈমাম যদি বিরতিহীনভাবে কেরাত করেন, তাহলে তুমি হয় ইমামের আগে, পরে বা ইমামের সাথেই সূরাহ ফাতিহা পড়ে নিবে এবং কোন অবস্থাতেই তা পাঠ করা ছেড়ে দিবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৭: স্বরব ক্বিরাআতের নামাজে (মুক্তাদীর) সূরাহ ফাতিহা পাঠ যে অপছন্দ করে

৮২৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) স্বরব ক্বিরাআতের নামায আদায় শেষে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমাদের কেউ কি এইমাত্র আমার সাথে (নামাজে) কুরআন পাঠ করেছ? জবাবে এক ব্যাক্তি বলেনঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাঃআঃ) বলেন, তাইতো ভাবছিলাম আমার কুরআন পাঠে কেন বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে লোকেরা জেহরী নামাজে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে কেরাত করা থেকে বিরত থাকেন।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনি উকায়মাহ্‌র এ হাদিসটি মামার, ইউনুস ও উসামাহ ইবনি যায়িদ যুহরী সূত্রে বর্ণনাকারী মালিকের হাদিসের অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করিয়াছেন।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২৭. সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ) কে বলিতে শুনেছিঃ একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করেন। সম্ভবতঃ তা ফাজ্‌রের নামায। অতঃপর পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ উল্লেখ করে “আমার কুরআন পাঠে কিসে বিঘ্ন সৃষ্টি হল” এই পর্যন্ত বর্ণনা করেন।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুসাদ্দাদ তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, মামার বলেন, অতঃপর লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর স্বরব কেরাত সম্পন্ন নামাজে কেরাত পাঠ হইতে বিরত থাকেন। ইবুনস সারহ্‌ তার বর্ণিত হাদীসে বলেন যে, মামার যুহরী সূত্রে বলেন, আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ) বলেন, আতঃপর লোকেরা কেরাত হইতে বিরত থাকেন। আরআবদুল্লা ইবনি মুহাম্মাদ আয-যুহরীর বর্ণনায় (আরবী) শব্দের উল্লেখ আছে। বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, ঈমাম যুহরী এমন কিছু কথা বলেছেন যা আমি শুনিনি। তখন মামার বলেন, তিনি বলেছেন, অতঃপর লোকেরা বিরত থাকেন।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, হাদিসটিআব্দুর রহমান ইবনি ইসহাক্ব ঈমাম যুহরী সূত্রে (আরবী) পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম আওযাঈ যুহরী সুত্রের বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, যুহরীর বর্ণনায় এ কথাও আছে যে, ঐ ঘটনায় মুসলিমগণ উপদেশ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁরা স্বরব কেরাত সম্পন্ন নামাজে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পিছনে কেরাত পড়তেন না।

সহিহ। ঈমাম আবু দউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়াহ ইবনি ফারিসকে বলেতে শুনিয়াছি যে, “অতঃপর লোকেরা ইমামের পিছনে কেরাত পাঠ হইতে বিরত থাকেন” কথাটুকু ঈমাম যুহরীর। হাদিস হইতে শিক্ষাঃ ইমামের পিছনে মুক্তাদীগন সূরাহ ফাতিহা নিঃশব্দে পাঠ করিবে।নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৩৮ঃ নীরব ক্বিরাআতের নামাজে মুক্তাদীর কেরাত পাঠ সম্পর্কে

৮২৮. ইমারান ইবনি হুসায়ন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) যুহ্‌রের নামায আদায় করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে তাহাঁর পিছনে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল- আলা” (সূরাহ আলা) পাঠ করিল। নামায শেষে নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যকার কে কেরাত করেছে? জবাবে তাঁরা বলেন, এক ব্যক্তি। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি তোমাদের কেউ আমাকে (কুরাআন পাঠে) জটিলতায় ফেলেছে।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবুল ওয়ালীদ তার বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, শুবাহ বলেন, আমি ক্বাতাদাহকে বললাম- সাঈদ কি বলেননি যে, “কুরআন পাঠের সময় চূপ থাক?” তিনি বললেনঃ এ হুকূম স্বরব কেরাত সম্পন্ন নামাজের জন্য।

ঈমাম ইবনি কাসীর তার বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, (শুবাহ বলেন) আমি ক্বাতাদাহকে বললাম, সম্ভবতঃ নাবী (সাঃআঃ) যেন কেরাত পাঠ অপছন্দ করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, যদি তিনি (সাঃআঃ) অপছন্দ করতেন তাহলে তিনি কেরাত পাঠে নিষেধ করতেন।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২৯. ইমরান ইবনি হুসায়ন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁদের সাথে যুহ্‌রের নামায আদায় শেষে বলিলেন, তোমাদের মধ্যকার কে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা” (সূরাহ আলা) পড়েছে? এক ব্যক্তি বলিল, আমি। তখন তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, তোমাদের কেউ আমাকে নামাজে কুরআন পাঠে জটিলতায় ফেলেছে।

সহীহঃ মুসলিম।

হাদিস হইতে শিক্ষাঃ

১। ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সশব্দে কেরাত পাঠ অপছন্দনীয়।

২। স্বরব কেরাত সম্পন্ন নামাজের ন্যায় নীরব কেরাত সম্পন্ন নামাজেও মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা চুপি চুপি পাঠ করবেন।

৩। নীরব কেরাত সম্পন্ন নামাজে মুক্তাদীগণ সূরাহ ফাতিহার সাথে অন্য সূরাহও পাঠ করবেন।

৪। নামাজে ক্বিরাআতের ন্যায় রুকু, সাজদাহ্‌, তাশাহুদ ইত্যাদিতে পঠিতব্য দুআবলীও মুক্তাদীগণ নীরবে পাঠ করবেন, যাতে জোরে পড়ার কারণে ঈমামসহ পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর কেরাত, দুআ পাঠ ও একাগ্রতায় বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। তবে সেসব দুআর কথা ভিন্ন যেগুলো জোরে পড়ার অনুমতি হাদীসে এসেছে। যেমন, স্বরব কেরাত সম্পন্ন নামাজে ইমামের সাথে মুক্তাদীগণের জোরে আমীন বলা। এটি সহিহভাবে প্রমাণিত আছে।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৯ নিরক্ষক ও অনারব লোকের কিরাআতের পরিমাণ

৮৩০. জাবির ইবনি আবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা কিরাআত করছিলাম, এমনসময় সেখানে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আসলেন। তখন আমাদের মধ্যে আরব বেদুইন এবং অনারব লোকজন ছিল।তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা (কুরআন) পড়, প্রত্যেকেই উত্তম। কেননা অচিরেই এমন সম্প্রদায়ের অর্বিভাবঘটবে যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় ঠিক করিবে (তাজবীদ নিয়ে বারাবাড়ি করিবে), তারা কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করিবে, অপেক্ষা করিবে না।

নামাজের কেরাত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৩১. সাহল ইবনি সাদ আস-সাঈদী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমরা কিরাআত করছিলাম এমন সময় নাবী (সাঃআঃ) উপস্থিত হয়ে বলিলেন, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর কিতাব একটাই। আর তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা এবং কেউ বা কালো রঙ্গের। তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে (কুরআন) পড় যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় দৃঢ় করিবে। তারা কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করিবে, অপেক্ষা করিবে না (অর্থাৎ আখিরাতের অপেক্ষা না করে এর বিনিময় দুনিয়াতেই পেতে চাইবে)।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৮৩২. আবদুল্লা ইবনি আবু আওফা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট এক লোক এসে বলিল, আমি কুরআন মুখস্থ করতে পারি না। অতএব আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা কুরআনের পরিবর্তে যথেষ্ট হইবে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি বলোঃ “সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” তখন লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রসূল (সাঃআঃ)! এটা তো মহা সম্মানিত আল্লাহর জন্য, আমার জন্য কি? নাবী(সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি বলোঃ “আল্লাহুম্মা ইরহামানী, ওয়ারযুক্বনী, ওয়াআফিনী ওয়াহদিনী।” বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি ওগুলো হাতের অঙ্গুলিতে গণনা করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এই লোক তার হাতকে উত্তম বস্ত দ্বারা পরিপূর্ণ করেছে।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৮৩৩. জাবির ইবনি আবদুল্লা (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আমরা নাফল নামাজে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় দুআ করতাম এবং রুকু ও সাজদাহ্ অবস্থায় তাসবীহ পড়তাম।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ

৮৩৪. হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমায়িদ সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে নফল নামাজের কথা উল্লেখ নেই। তিনি (হুমায়িদ) বলেন, হাসান (রাঃআঃ) যুহর এবংআসর নামাজে- ঈমাম কিংবা মুক্তাদী উভয় অবস্থায়ই সূরাহ ফাতেহা পড়তেন এবং তিনি উক্ত নামায সূরাহ ক্বাফ ও সূরাহ যারিয়াত পাঠের অনুরূপ সময় পর্যন্ত তাসবীহ তাহলীল ও তাকবীর পড়তেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply