নামাজের ওয়াক্তসমূহ – নামায ফরয হওয়ার বর্ণনা ও হিফাযাত করা

নামাজের ওয়াক্তসমূহ – নামায ফরয হওয়ার বর্ণনা ও হিফাযাত করা

নামাজের ওয়াক্তসমূহ – নামায ফরয হওয়ার বর্ণনা ও হিফাযাত করা >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ১-১১ =১১টি

অনুচ্ছেদ– ১ নামায ফরয হওয়ার বর্ণনা
অনুচ্ছেদ– ২ নামাজের ওয়াক্তসমূহের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-৩ নাবী (সাঃআঃ) -এর নামাজের ওয়াক্ত ও তাহাঁর নামায আদায় করার নিয়ম
অনুচ্ছেদ-৪ যুহরের নামাজের ওয়াক্ত
অনুচ্ছেদ-৫ আছরের নামাজের ওয়াক্ত
অনুচ্ছেদ-৬ মাগরিবের ওয়াক্ত
অনুচ্ছেদ-৭ ইশার নামাজের ওয়াক্ত
অনুচ্ছেদ-৮ ফাজ্‌র নামাজের ওয়াক্ত
অনুচ্ছেদ-৯ নামাযসমূহের হিফাযাত করা
অনুচ্ছেদ-১০ ঈমাম ওয়াক্ত মোতাবেক নামায আদায়ে বিলম্ব করলে
অনুচ্ছেদ-১১ কেউ নামাজের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে থাকলে বা নামাজের কথা ভুলে গেলে

অনুচ্ছেদ– ১ নামায ফরয হওয়ার বর্ণনা

৩৯১: আবু সুহাইল ইবনি মালিক থেকে তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ত্বালহা ইবনিউবায়দুল্লাহ (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, উষ্কখুস্ক চুল বিশিষ্ট নাজদের জনৈক অধিবাসী রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট আসল। তখন তার মুখ হইতে গুনগুন শব্দ শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু কথাগুলো বোঝা যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় সে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকটবর্তী হয়ে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করিল। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ (ইসলাম হচ্ছে) দিবা-রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা। লোকটি বললো, এছাড়া আরও (নামায) আছে কি? তিনি বলিলেন, না, তবে তুমি নফল (নামায) আদায় করতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার উদ্দেশে রমাযান মাসের সিয়ামের কথা উল্লেখ করিলেন। লোকটি বলিল, আমার উপর এছাড়া আরও (সিয়াম) আছে কি? তিনি বললেনঃ না, তবে তুমি নফল (সিয়াম) পালন করতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে যাকাতের কথাও বলিলেন। লোকটি বলিল, আমাকে এছাড়াও কোন দান করতে হইবে কি? তিনি বললেনঃ না, তবে নফল হিসেবে (দান) করতে পার। অতঃপর লোকটি এই বলিতে বলিতে চলে যেতে লাগল যে, আল্লাহর শপথ! আমি এর চেয়ে বেশীও করব না কমও করব না। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সফলকাম হয়ে গেল।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৯২: আবু সুহাইল নাফি ইবনি মালিক ইবনি আবুআমির হইতে বর্ণিতঃ

একই সানাদে উপরোক্ত হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রয়েছেঃ (রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন) তার পিতার শপথ! {১} সে অবশ্যই সফলকাম হইবে যদি সত্য বলে থাকে। তার পিতার শপথ! সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। {৩৯২}

শাযঃ “তার পিতার শপথ” কথাটি অতিরিক্ত যোগে। {১}তার পিতার শপথ! সে অবশ্যই সফলকাম হইবে- এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগের কথা। হয়ত তৎকালীন আরবের প্রথানুসারে এরূপ বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে শপথ করা নিষেধ করা হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর নামে কসম করিল সে শিরক করিল”। (হাদিস) {৩৯২} মুসলিম (অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুঃ ইসলামরে অন্যতম স্তম্ভ নামায সম্পর্কে বর্ণনা), ইবনি খুযাইমাহ (অনুঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয, হাঃ ৩০৬), বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (২/৪৬৬), সকলেই আবু সুহাইল সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ শায

অনুচ্ছেদ– ২ নামাজের ওয়াক্তসমূহের বর্ণনা

৩৯৩: ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বাইতুল্লাহর নিকট জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দুবার আমার নামাজে ঈমামতি করিয়াছেন। (প্রথমবার) সূর্য (পশ্চিম আকাশে) ঢলে যাওয়ার পর আমাকে নিয়ে তিনি যুহর নামায আদায় করিলেন। তখন (পূর্ব দিকে) জুতার ফিতার সমান ছায়া দেখা দিয়েছিল। অতঃপর তিনি আমাকে নিয়েআসরের নামায আদায় করিলেন, যখন (প্রত্যেক বস্তুর) ছায়া তার সমান হয়। এরপর আমাকে নিয়ে তিনি মাগরিবের নামায আদায় করিলেন, যখন ছায়া তার দ্বিগুণ হলো। তিনি আমাকে নিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করিলেন, যখন সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময় হয়। তিনি আমাকে নিয়েইশা নামায আদায় করিলেন রাতের তৃতীয়াংশে এবং ফাজ্‌র নামায আদায় করিলেন ভোরের আলো ছড়িয়ে যাওয়ার পর। অতঃপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমার দিকে ফিরে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ ( আঃ) ! এটাই হচ্ছে আপনার পূর্ববর্তী নাবীগণের নামাজের ওয়াক্ত এবং নামাজের ওয়াক্তসমূহ এ দুসময়ের মাঝখা ই নিহিত। {৩৯৩}

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৩৯৪: উসামাহ ইবনি যায়িদ আল-লাইসী হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে অবহিত করিয়াছেন যে, একদাউমার ইবনিআবদুলআযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মিম্বারের উপর বসে (কর্মব্যস্ত) ছিলেন। ফলে তিনিআসরের নামায আদায়ে কিছুটা বিলম্ব করিলেন। তখনউরওয়াহ ইবনিয যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে বলিলেন, আপনি জানেন না, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করিয়াছেন?উমার (রাঃআঃ) বলিলেন, আপনি যা বলছেন, বুঝে শুনে বলুন।উরওয়াহ বলিলেন, আমি বাশীর ইবনি আবু মাসঊদকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আমি আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছিঃ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে আমাকে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করিয়াছেন। আমি তাহাঁর সাথে নামায আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাহাঁর সাথে নামায আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাহাঁর সাথে নামায আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাহাঁর সাথে নামায আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাহাঁর সাথে নামায আদায় করেছি। এভাবে তিনি আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায গণনা করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথেই যুহরের নামায আদায় করতে দেখেছি। প্রচণ্ড গরমের দিনে তিনি কখনো দেরী করেও আদায় করিয়াছেন। আমি তাকে ঐ সময়আসরের নামায আদায় করতে দেখেছি যখন সূর্য উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত, তখনো তাতে হলুদ রং আসেনি। কোন ব্যক্তিআসরের নামায আদায় করে সূর্য ডোবার পূর্বেই যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে যেত। তিনি মাগরিবের নামায আদায় করতেন সূর্য ডোবার পরপরই, আরইশার নামায আদায় করতেন যখন (পশ্চিম আকাশ) কালো রঙে আচ্ছাদিত হত, অবশ্য তিনি কখনো লোকজনের একত্র হওয়ার আশায় তা বিলম্বেও আদায় করতেন। একবার তিনি ফাজরের নামায অন্ধকারে আদায় করেন, অতঃপর পরের বার আদায় করেন ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার পর। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদা ফজরের নামায অন্ধকারেই আদায় করেন, পুনরায় আর কখনোই তিনি ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষা করেননি।

হাসান। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে মামার, মালিক, ইবনি উয়াইনাহ, শুআইব ইবনি আবু হামযাহ ও লাইস ইবনি সাদ প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তারা নামায আদায়ের সময় উল্লেখ করেননি, এবং তার কোন ব্যাখ্যাও দেননি। ওয়াহ্হাব ইবনি কায়সান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে নাবী (সাঃআঃ) -এর সূত্রে মাগরিবের ওয়াক্ত সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ পরের দিন সূর্যাস্তের পরে একই সময়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) মাগরিবের নামায আদায় করতে আসলেন। সহিহ। আবু হুরায়রা্ (রাঃআঃ) হইতেও নাবী (সাঃআঃ) -এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ আমাকে নিয়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) পরের দিন একই সময়ে মাগরিবের নামায আদায় করিলেন। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯৫. আবু মূসা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -কে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি তার কোন জবাব না দিয়ে বিলালকে (ইক্বামাতের) নির্দেশ দিলেন। বিলাল সুবহি সাদিক হওয়ার পরপরই ফজর নামাজের জন্য ইক্বামাত দিলেন। তারপর তিনি এমন সময় ফজর নামায আদায় করিলেন যখন (অন্ধকারের কারণে) একজন আরেকজনকে চিনতে পারত না অথবা একজন তার পার্শ্ববর্তী লোককে চিনতে পারত না। অতঃপর সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়লে তিনি বিলালকে নির্দেশ দিলে বিলাল যুহর নামাজের জন্য ইক্বামাত দিলেন। তখন কেউ বলিল, দুপুর হয়েছে। অথচ (সূর্য ঢলে পড়া সম্পর্কে) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) অধিক জ্ঞাত। অতঃপর তিনি বিলালকে নির্দেশ দিলে বিলালআসর নামাজের জন্য ইক্বামাত দিলেন। তখন সূর্য সাদা ও উঁচুতে ছিল। অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে তিনি বিলালকে মাগরিব নামাজের জন্য ইক্বামাতের নির্দেশ দিলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর পশ্চিমাকাশের লাল আভা (শাফাক্ব) দূরীভূত হলে তিনি বিলালকেইশা নামায আদায়ের জন্য ইক্বামাত দেয়ার নির্দেশ দিলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। পরের দিন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফজরের নামায আদায় শেষে প্রত্যাবর্তন করলে আমরা বললাম, সূর্য উদয় হয়েছে কি? (এ দিন) তিনি যুহর নামায আদায় করিলেন পূর্বের দিনেরআসরের ওয়াক্তে। তিনিআসরের নামায আদায় করিলেন যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তিনি মাগরিবের নামায আদায় করিলেন আকাশের লালিমা (শাফাক্ব) দূরীভূত হওয়ার পূর্বে। আর তিনিইশার নামায আদায় করিলেন রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর। অতঃপর বলিলেন, নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? এই দু সময়সীমার মধ্যবর্তী সময়ই হচ্ছে নামাজের ওয়াক্ত (অর্থাৎ পূর্বের দিন ও পরের দিন যে যে সময়ে নামায আদায় করা হয়েছে তার মাঝামাঝি সময়)।

সহীহঃ মুসলিম। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জাবির (রাঃআঃ) নাবী (সাঃআঃ) -এর সূত্রে মাগরিব (নামাজের ওয়াক্ত) সম্পর্কে এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, কারো মতে তিনি (সাঃআঃ)ইশার নামায আদায় করিয়াছেন রাতের এক তৃতীয়াংশে, আবার কারো মতে অর্ধরাতে। সহিহ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৯৬. আবদুল্লা ইবনি আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃআসরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যুহরের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। সূর্য হলুদ রং ধারণ না করা পর্যন্তআসরের ওয়াক্ত থাকে। মাগরিবের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে (পশ্চিমাকাশে) লাল রংয়ের আভা বিলোপ না হওয়া পর্যন্ত।ইশার ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে অর্ধরাত পর্যন্ত। আর ফাজ্‌র নামাজের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩ নাবী (সাঃআঃ) -এর নামাজের ওয়াক্ত ও তাহাঁর নামায আদায় করার নিয়ম

৩৯৭. মুহাম্মাদ ইবনি “আমর ইবনি হাসান ইবনি “আলী ইবনি আবু ত্বালিব হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা জাবির (রাঃআঃ) -কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি যুহরের নামায আদায় করতেন ঠিক দ্বিপ্রহরের পরপরই। আর “আসরের নামায আদায় করতেন ঐ সময় যখন সূর্য জীবন্ত থাকত। মাগরিবের নামায আদায় করতেন সূর্যাস্তের পরপরই। লোকজন জড়ো হলে “ইশার নামায তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন, আর লোকজনের উপস্থিতি কম হলে বিলম্বে আদায় করতেন। তিনি ফাজরের নামায অন্ধকারে আদায় করতেন।

সহিহ ঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৯৮. আবু বারযা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে যুহরের নামায আদায় করতেন, আসরের নামায আদায় করতেন ঐ সময় যখন আমাদের কেউ মাদীনাহর শেষ প্রান্তে গিয়ে ফিরে আসতে পারত এবং সূর্যের প্রখরতা বিদ্যমান থাকত। মাগরিবের কথা আমি ভুলে গেছি। “ইশার নামায রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে তিনি পরোয়া করতেন না, কখনো বা অরধরাত পর্যন্ত। “ইশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করতেন। তিনি ফাজরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যখন আমাদের কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত না। ফাজরের নামাজে তিনি ষাট আয়াত থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪ যুহরের নামাজের ওয়াক্ত

৩৯৯. জাবির ইবনিআবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সাথে যুহরের নামায আদায় করতাম। আমি এক মুষ্ঠি পাথর কণা তুলে নিতাম, যেন সেগুলো আমার হাতে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমি সাজদাহ্‌র সময় প্রচণ্ড গরমের কারণে সেগুলো কপালের নিচে রেখে সেগুলোর উপর সাজদাহ করতাম।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪০০. আসওয়াদ হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লা ইবনি মাসউদ (রাঃআঃ) বলেন, গ্রীষ্মকালে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর (যুহর) নামায আদায়ের সময় ছিল (ছায়ার) তিন কদম হইতে পাঁচ কদম পর্যন্ত। আর শীতকালে ছিল পাঁচ কদম হইতে সাত কদম পর্যন্ত।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০১. যায়িদ ইবনি ওয়াহহাব হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু যার (রাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সাথে ছিলাম। মুয়াজ্জিন যুহরের আযানের জন্য প্রস্তুত হলে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, থাম, ঠাণ্ডা হোক। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুবার অথবা তিনবার এরূপ বলিলেন। এমনকি আমরা টিলা সমূহের ছায়া দেখিতে পেলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন, গ্রীষ্মের খরতাপ জাহান্নামের অংশ বিশেষ। কাজেই প্রচণ্ড গরমে ঠাণ্ডা করে (বিলম্বে) নামায আদায় করিবে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০২. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, অত্যধিক গরমে তোমরা যুহরের নামায ঠাণ্ডা করে (বিলম্বে) আদায় করিবে। কারণ অত্যধিক গরম জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ বিশেষ।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০৩. জাবির ইবনি সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

সূর্য (পশ্চিম আকাশে) ঢলে পেলে বিলাল (রাঃআঃ) যুহরের নামাজের আযান দিতেন।

হাসান সহীহঃ মুসলিম। নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-৫ আছরের নামাজের ওয়াক্ত

৪০৪. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) “আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। নামাজের প্র লোকজন “আওয়ালী (মদীনার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম) পর্যন্ত যেত। অথচ সূর্য তখনো উঁচুতেই থাকত।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০৫. আয-যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আওয়ালীর দূরত্ব মাদীনাহ থেকে দুই অথবা তিন মাইল। বর্ণনাকারী বলেন, সম্ভবত তিনি (যুহরী) চার মাইলের কথাও বলেছেন।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৪০৬. খায়সামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূর্যের জীবন্ত হওয়ার অর্থ হলও, তাহাঁর তাপ অবশিষ্ট থাকা বা অনুভূত হওয়া।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৪০৭. উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাঃআঃ) আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) “আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যখন রোদ তাহাঁর ঘরের মধ্যে থাকত এবং দেয়াল রোদ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই এরূপ হত।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০৮. আলী ইবনি শায়বান (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা মাদীনাহয় রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি সূর্যের রং উজ্জ্বল থাক পর্যন্ত “আসরের নামায বিলম্ব করে আদায় করিলেন।{৪০৮}

{৪০৮} এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াযীদ ইয়ামামী এবং তাহাঁর শায়খ ইয়াযীদ ইবনি “আবদুর রহমান দুজনেই অজ্ঞাত। নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪০৯. আলী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খন্দকের যুদ্ধের দিন বলেন, তারা (কাফিররা) আমাদেরকে মধ্যবর্তী নামায অর্থাৎ “আসরের নামায আদায় করা হইতে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তাহাঁদের ঘর ও ক্ববরগুলোকে জাহান্নামের আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১০. “আয়েশা (রাঃআঃ) -এর মুক্ত দাস আবু ইউনুস হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, “আয়েশা (রাঃআঃ) আমাকে তাহাঁর জন্য এক জিলদ কুরআন লিখে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলিলেন, যখন তুমি

 حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى

“তোমরা নামায সমূহের হিফাযাত কর, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াও”- (সূরাহ বাক্বারাহ, ২৩৮)

এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছবে তখন আমাকে অবহিত করে অনুমতি চাইবে। অতঃপর আমি উক্ত আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তাকে অবহিত করে অনুমতি চাইলাম। তিনি বলিলেন, তুমি এভাবে লিখ, “তোমরা নামাযসমূহের হিফাযাত কর, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের এবং “আসরের নামাজের।” অতঃপর “আয়েশা (রাঃআঃ) বলেন, আমি এটা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে শুনিয়াছি।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১১. যায়িদ ইবনি সাবিত (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহরের নামায দুপুরে (সূর্য ঢলার পরপরই প্রচণ্ড গরমে) আদায় করতেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সাহাবীগণের নিকট অন্যান্য নামাজের চেয়ে এ নামাযই ছিল বেশি কষ্টদায়ক। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى

“তোমরা নামায সমূহের হিফাযাত কর, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের” (সূরাহ বাক্বারাহ, ২৩৮)।

যায়িদ (রাঃআঃ) বলেন, এ নামাজের পূর্বে এবং পরে দু ওয়াক্ত করে নামায রহিয়াছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১২. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে “আসরের নামায এক রাক”আত আদায় করতে পারল সে (যেন ওয়াক্তের মধ্যেই পুরো) “আসর নামায পেয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফাজরের নামায এক রাক”আত আদায় করতে সক্ষম হল সে (যেন ওয়াক্তের মধ্যেই পুরো) ফাজর পেয়ে গেল।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১৩. আল-“আলা ইবনি “আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা যুহর নামায আদায়ের পর আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) -এর নিকট গিয়ে দেখলাম, তিনি “আসরের নামায আদায় করতে দাঁড়িয়েছেন। তার নামায আদায় শেষে আমরা তাহাঁর বেশী আগে (“আসর) নামায আদায় করা নিয়ে আলোচনা করলাম। অথবা তিনিই এ বিষয়ে আলোচনা করিলেন এবং (এর কারণ সম্পর্কে) বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছিঃ এটা মুনাফিক্বদের নামায! এটা মুনাফিক্বদের নামায!! এটা মুনাফিক্বদের নামায!!! এদের কেউ বসে থাকে আর যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তা শাইত্বানের দু শিংয়ের মধ্যখানে বা উপরে অবস্থান করে তখন সে দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর মারে। তাতে সে খুব সামান্যই আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে।

সহীহঃ মুসলিম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১৪. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি “আসরের নামায ছুটে গেল (আদায় করিল না) তার যেন পরিবার-পরিজন ধ্বংস হয়ে গেলো এবং তার ধনসম্পদ লুট হয়ে গেল (নিঃসম্বল হয়ে গেল)।

ঈমাম আবু দাউদ বলেন, “আবদুল্লা ইবনি “আমর, আইয়ুব ও যুহরী “উতিরু” শব্দের বানানে কিছুটা পার্থক্য করিয়াছেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস আবু আমর আল-আওযাঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

৪১৫. “আসরের নামাজে বিলম্ব করার অর্থ হচ্ছে, সূর্যের হলুদ রং জমিনে প্রতিভাত হইতে দেখা (পর্যন্ত বিলম্ব করা)।{৪১৫}

দুর্বল মাক্বতূ {৪১৫}এর দোষ হচ্ছে, এর সানাদ মাক্বতূ নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাকতু

অনুচ্ছেদ-৬ মাগরিবের ওয়াক্ত

৪১৬. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। অতঃপর তীর নিক্ষেপ করতাম। আমদারে যে কেউ তখনো তার তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখিতে পেত।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১৭. সালামাহ ইবনিল আকওয়া (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মাগরিবের নামায সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়ার পরপরই আদায় করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১৮. মারসাদ ইবনিআবদুল্লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আবু আইউব (রাঃআঃ) জিহাদ হইতে ফিরে আমাদের নিকট আসলেন, সে সময় উক্ববাহ্‌ ইবনিআমির (রাঃআঃ) মিশরের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি মাগরিবের নামায আদায়ে বিলম্ব করলে আবু আইউব (রাঃআঃ) উক্ববাহ্‌ (রাঃআঃ)-এর সামনে দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে উক্ববাহ্‌! এটা আবার কেমন নামায? উক্ববাহ্‌ (রাঃআঃ) বলিলেন, আমরা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বলিলেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেননিঃ আমার উম্মাত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকিবে অথবা মূল অবস্থায় থাকিবে যতদিন তারা মাগরিবের নামায আদায়ে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করিবে না।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-৭ ইশার নামাজের ওয়াক্ত

৪১৯. নুমান ইবনি বাশীর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এইইশার নামাজের শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি অবগত। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) উক্ত নামায (এ পরিমাণ সময়ের পর) আদায় করতেন, যখন তৃতীয়বার চাঁদ অস্তমিত হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২০. আবদুল্লা ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমরাইশার নামায আদায়ের জন্য রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে তিনি আসলেন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা এর চেয়েও কিছু সময়ের পর। তিনি কোন কাজে ব্যস্ততার জন্য নাকি অন্য কিছুর কারণে বিলম্ব করিলেন তা আমরা অবগত নই। তিনি এসে বললেনঃ তোমরা কি এ (ইশার) নামাজের জন্য অপেক্ষা করছো? আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হলে আমি এ সময়েই (ইশার নামায) আদায় করতাম। অতঃপর তিনি মুয়াজ্জিনকে ইক্বামাত দেয়ার নির্দেশ দিয়ে নামায আদায় করিলেন।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২১. আসিম ইবনি হুমাইদ আস-সুকুনী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, আমরাইশার নামাজের জন্য নাবী (সাঃআঃ) -এর প্রতীক্ষায় ছিলাম। তিনি আসতে এতটা বিলম্ব করিলেন যে, কেউ কেউ ধারণা করিল, হয়তো তিনি বের হইবেন না। আবার কেউ এরূপ মন্তব্য করিল যে, হয়তো তিনি (ঘরে) নামায আদায় করে ফেলেছেন। আমাদের এসব আলোচনার এক পর্যায়ে নাবী (সাঃআঃ) বের হয়ে এলেন। অতঃপর লোকেরা যা কিছু বলাবলি করছিল, তা তাকে ও বলিল। তিনি বললেনঃ তোমরা এই (ইশার) নামায বিলম্বে আদায় করিবে। কারণ এ নামাজের মাধ্যমে অন্য সকল জাতির উপর তোমাদেরকে মর্যাদা দান করা হয়েছে। তোমাদের পূর্বে কোন জাতি এ নামায আদায় করেনি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২২. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সাথেইশার নামায আদায় করলাম। সেদিন তিনি প্রায় অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নামাজের জন্য বের হয়ে আসেন এবং বলেনঃ তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর। সুতরাং আমরা নিজেদের জায়গায় অবস্থান করলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ ইতোমধ্যে অনেকেই ইশার নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের জন্য অপেক্ষামাণ থাকলে, ততক্ষন তোমাদেরকে নামায আদায়কারী হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে। দুর্বলের দুর্বলতা এবং রোগীর রুগ্নতার আশংকা না থাকলে আমি অবশ্যই এ নামায অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করতাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৮ ফাজ্‌র নামাজের ওয়াক্ত

৪২৩. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজ্‌র নামায এমন সময় আদায় করতেন যে, মহিলারা নামায আদায় করে গায়ে চাদর জড়িয়ে প্রত্যাবর্তন করত এবং অন্ধকারের কারণে তাহাঁদের চেনা যেত না।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৪. রাফি ইবনি খাদীজ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, ভোরের আলো প্রকাশিত হলে ফাজ্‌র নামায আদায় করিবে। কারণ এতে তোমাদের জন্য অত্যাধিক সওয়াব বা অতি উত্তম বিনিময় রহিয়াছে।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-৯ নামাযসমূহের হিফাযাত করা

৪২৫. আবদুল্লা ইবনিস সুনাবিহী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু মুহাম্মাদের মতে, বিত্‌র নামায ওয়াজিব। একথা শুনেউবাদাহ্‌ ইবনিস সামিত (রাঃআঃ) বলিলেন, আবু মুহাম্মাদ মিথ্যা (ভুল) বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছিঃ সম্মানিত মহান আল্লাহ্‌ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণরূপে রুকু ও পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে নামায আদায় করিবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ্‌ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর যে ব্যাক্তি এরূপ করিবে না, তার জন্য আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন অন্যথায় শাস্তি দিবেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৬. উম্মু ফারওয়াহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) –কে সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে (প্রথম ওয়াক্তেই) নামায আদায় করা।

সহিহ। খুযাঈ তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে তার ফুফু উম্মু ফারওয়াহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ) –এর নিকট বাইআত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) –কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭. আবু বাক্‌র ইবনিউমারাহ ইবনি রুয়াইবাহ হইতে তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বাসরাহর এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করিল, আপনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে যা শুনেছেন আমাকে তা বলুন। তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) –কে বলিতে শুনেছিঃ ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না, যে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে নামায আদায় করিবে। লোকটি বললো, আপনি কি একথা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে শুনেছেন? এরূপ তিনবার বলিল। এর জবাবে তিনি প্রত্যেকবারই বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আমার কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে। অতঃপর লোকটি বলিল, আমিও তো রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) –কে এরূপ বলিতে শুনিয়াছি।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮. আবদুল্লা ইবনি ফাদালাহ হইতে তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে (শারীআত সম্পর্কে) শিক্ষা দেন। তন্মধ্যে তিনি আমাকে এটাও শিক্ষা দেন যে, তুমি (নির্ধারিত সময়ে) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হিফাযাত করিবে। আমি বললাম, এ সময়গুলোতে আমার কর্মব্যস্ততা থাকে। অতএব আমাকে এমন একটা পরিপূর্ণ সময়ের (বা কাজের) নির্দেশ দিন যা করলে আমার পক্ষ হইতে আদায় হয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি দুইআসরের হিফাযাত করিবে। আমাদের ভাষায় দুইআসর শব্দটি প্রচলিত না থাকায় আমি বললাম, দুইআসর কি? তিনি বলিলেন, দুটি নামায, একটি হচ্ছে সূর্যোদয়ের পূর্বে, অপরটি সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফাজ্‌র ওআসর নামায)।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯. আবু দারদা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু ও রুকু সাজদাহ্‌ সহকারে নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করিবে, (২) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করিবে, (৩) পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ করিবে, (৪) সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত আদায় করিবে, এবং (৫) আমানত আদায় করিবে। লোকেরা বলিল, হে আবু দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বলিলেন, অপবিত্র হলে গোসল করা।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৩০. আবু ক্বাতাদাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সম্মানিত মহান আল্লাহ্‌ বলেন, আমি তোমার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হইতে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব নামাজের হিফাযাত করিবে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করিবে না তার জন্য আমার পক্ষ হইতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই।

নামাজের ওয়াক্তসমূহ -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১০ ঈমাম ওয়াক্ত মোতাবেক নামায আদায়ে বিলম্ব করলে

৪৩১. আবু যার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ হে আবু যার! যখন তোমার শাসকগণ নামাযকে মেরে ফেলবে বা বিলম্ব করে নামায আদায় করিবে তখন তুমি কী করিবে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে কী নির্দেশ করেন? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করিবে, অতঃপর তাহাঁদেরকে ঐ ওয়াক্তের নামায আদায় করতে দেখলে তাহাঁদের সাথেও আদায় করে নিবে। সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হইবে।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩২. আমর ইবনি মায়মূন আল-আওদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) –এর দূত হিসেবে মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) ইয়ামানে আমাদের নিকট আসলেন। আমি ফাজ্‌রের নামাজে তাহাঁর তাকবীর শুনতে পেলাম। তিনি উচ্চ কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। তার সাথে আমার ভালবাসা সৃষ্টি হওয়ায় তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাহাঁর সাহচর্য ত্যাগ করিনি। অতঃপর তার মৃত্যু হলে সিরিয়ায় তাকে দাফন করি। এরপর আমি ভাবলাম, তার পরবর্তী সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কে হইতে পারে? অবশেষে আমিআবদুল্লা ইবনি মাসউদ (রাঃআঃ) –এর কাছে যাই এবং তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তাহাঁর সাহচর্যে থাকি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেন, যখন তোমাদের উপর এমন শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা বিলম্ব করে নামায আদায় করিবে তখন তোমরা কী করিবে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ কী? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করিবে। আর পুনরায় তাহাঁদের সাথে আদায়কৃত নামাযকে নফল হিসেবে ধরে নিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩. উবাদাহ ইবনিস সামিত (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেনঃ অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় হইতে বিরত রাখবে, এমনকি নামাজের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি কি ঐ নামায পুনরায় তাহাঁদের সাথেও আদায় করব? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার। সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছেঃ লোকটি বলিল, আমি তাহাঁদের সাথে ঐ নামায পেলে তাহাঁদের সাথেও আদায় করব কি? রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৪. কাবীসাহ ইবনি ওয়াক্কাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার পরে তোমাদের এমন শাসকগণ আসবে, যারা বিলম্বে নামায আদায় করিবে। এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই, বরং তাহাঁদের জন্যই ক্ষতিকর। যতদিন পর্যন্ত তারা কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করিবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা তাহাঁদের সাথে নামায আদায় করতে থাকিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১১ কেউ নামাজের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে থাকলে বা নামাজের কথা ভুলে গেলে

৪৩৫. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খায়বার যুদ্ধ হইতে প্রত্যাবর্তনের একরাতে বিরতিহীনভাবে সফর করতে থাকলে আমাদের ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। ফলে শেষ রাতে তিনি যাত্রা বিরতি করেন এবং বিলাল (রাঃআঃ)–কে বলেনঃ তুমি জেগে থাকিবে এবং রাতের দিকে লক্ষ্য রাখবে। কিন্তু বিলাল (রাঃআঃ)–ও নিদ্রাকাতর হয়ে তার উটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে নাবী (সাঃআঃ) , বিলাল এবং তাহাঁর সহাবীদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর সূর্যের তাপ তাহাঁদের গায়ে এসে পড়লে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) জাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) অস্থির হয়ে বললেনঃ কী হলো বিলাল! বিলাল বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! যে সত্তা আপনাকে অচেতন রেখেছেন, আমাকেও তিনিই অচেতন রেখেছেন। অতঃপর তারা নিজেদের বাহন নিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর নাবী (সাঃআঃ) উযু করিলেন এবং বিলালকে নির্দেশ করলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) সকলকে নিয়ে ফাজ্‌রের নামায আদায় শেষে বললেনঃ

 أَقِمِ الصَّلاَةَ لِلذِّكْرَى

কেউ নামায আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই উক্ত নামায আদায় করে নেয়।

কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার স্মরণার্থে নামায প্রতিষ্ঠা কর।” (সূরাহ ত্বাহা, ১৪)

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা ঐ স্থান ত্যাগ কর যেখানে তোমাদেরকে গাফলতি পেয়ে বসেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বিলালকে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান ও ইক্বামাত দিলেন এবং তিনি নামায আদায় করালেন।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাদিসটি মালিক, সুফিয়ান ইবনিউয়াইনাহ, আল-আওযাঈ ওআবদুর রায্যাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), মামার ও ইবনি ইসহাক্ব সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু মামার সূত্রে আওযাঈ এবং আবান আল-আত্তার ব্যতীত কেউই যুহরীর এ হাদীসে আযানের উল্লেখ করেননি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৭. আবু ক্বাতাদাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) কোন এক সফরে ছিলেন। সে সময় নাবী (সাঃআঃ) একদিকে মনোনিবেশ করলে আমিও তাহাঁর সাথে মনোনিবেশ করি। তিনি বললেনঃ লক্ষ্য রাখ। আমি বললাম, এই একজন যাত্রী, এই দুজন যাত্রী, এই তিনজন যাত্রী। এভাবে আমরা সাতজন হয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাদের ফাজ্‌র নামাজের ব্যাপারে সজাগ থাক। কিন্তু তাহাঁদের সবার কান বন্ধ হয়ে গেল (সকলেই ঘুমিয়ে পড়লেন) এবং গায়ে সূর্যতাপ না লাগা পর্যন্ত তাঁরা ঘুম হইতে জাগতে পারলেন না। অতঃপর ঘুম থেকে জেগে কিছু দূর সফর করে তারা (এক স্থানে) অবতরণ করে উযু করিলেন। বিলাল (রাঃআঃ) আযান দিলে সবাই প্রথমে ফাজ্‌রের দু রাকআত সুন্নাত, অতঃপর ফরয নামায আদায় করে সওয়ারীতে আরোহণ করিলেন। তারপর পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, আমরা (নির্ধারিত সময়ে) নামায আদায়ে অবহেলা করেছি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ঘুমের কারণে গাফলতি হলে দোষ নেই। কিন্তু জাগ্রতাবস্থায় গাফিলতি করা অন্যায়। তোমাদের কেউ নামায আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হলেই নামায আদায় করে নেয়। আর পরবর্তী দিন যেন নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করে (অর্থাৎ নামায ক্বাযা করা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়)।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৮. খালিদ ইবনি সুমাইর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আবদুল্লা ইবনি রাবাহ আল-আনসারী (রাঃআঃ) মাদীনাহ থেকে আমাদের এখানে আসলেন। আনসারগণ তাকে জ্ঞানী লোক (বিশিষ্ট ফাক্বীহ) হিসেবে গণ্য করতেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর ঘোড়া রক্ষক আবু ক্বাতাদাহ্‌ আল-আনসারী (রাঃআঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুতার যুদ্ধে সামরিক বাহিনী প্রেরণ করিলেন। তারপর পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

বর্ণনাকারী আবু-ক্বাতাদাহ্‌ (রাঃআঃ) বলেন, সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর আমরা নামাজের জন্য অস্থির ও ভীত অবস্থায় জাগ্রত হলাম। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ শান্ত হও, শান্ত হও। এমনকি সূর্য উঁচুতে উঠে গেল। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার যারা ফাজ্‌রের দু রাকআত সুন্নাত আদায়ে অভ্যস্ত তারা যেন তা আদায় করে নেয়। এ কথা শুনে যারা ঐ দু রাকআত সুন্নাত আদায় করত এবং যারা আদায় করত না তারা সকলেই দু রাকআত সুন্নাত আদায় করে নিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজের আযান দেয়ার নির্দেশ দিলে আযান দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে নামায আদায় করিলেন এবং নামায শেষে বললেনঃ জেনে রাখ, আমরা আল্লাহ্‌রই প্রশংসা করছি, দুনিয়ার কোন কাজ আমাদেরকে আমাদের নামায থেকে বিরত রাখেনি। বরং আমাদের রূহগুলো আল্লাহ্‌র হাতে নিবন্ধ ছিল। তিনি স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক তা ছেড়েছেন। অতএব তোমাদের কেউ আগামীকাল নির্ধারিত সময়ে ফাজ্‌রের নামায পেলে সে যেন তার সাথে অনুরূপ আরেক ওয়াক্ত নামায (অর্থাৎ এ ক্বাযা নামাযটিও) আদায় করে নেয়।{৪৩৮} হাদিসের তাহকিকঃ শায

৪৩৯. আবু ক্বাতাদাহ্ (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তাহাঁর ইচ্ছা মোতাবেক তোমাদের রূহসমূহকে আঁটকে রেখেছিলেন, আবার তাহাঁর ইচ্ছা মোতাবেক ছেড়েও দিয়েছেন। উঠো এবং নামাজের আযান দাও। অতঃপর সকলে উঠে উযু করে নিল। ইতিমধ্যে সূর্যও উপরে উঠে গেল। নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং লোকদের নিয়ে নামায আদায় করিলেন।

সহীহঃ বোখারি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪০. আবদুল্লা ইবনি আবু ক্বাতাদাহ্ তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) থেকে অনুরূপ অর্থবোধক হাদিস বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছেঃ সূর্য উপরে উঠার পর তিনি উযু করে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করিলেন।

সহীহঃ অনুরূপ বোখারি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪১. আবু ক্বাতাদাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ঘুমের কারণে নামাজের গাফলতি হলে দোষ নেই। কিন্তু জাগ্রতাবস্থায় গাফলতি করে বিলম্ব নামায আদায় করা অন্যায়, এতে করে আরেক নামাজের ওয়াক্ত এসে যায়।

সহীহঃ মুসলিম, অনুরূপ গত হয়েছে ৪৩৭ নং এ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪২. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ নামায আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেন। এটাই তার নামাজের কাফ্‌ফারা।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪৩. ইমরান ইবনি হুসাইন (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর কোন এক সফরে ছিলেন সে সময় লোকেরা ফাজ্‌রের নামাজের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে ছিল। অতঃপর সূর্যের তাপে তাহাঁদের ঘুম ভাঙ্গে। তারা কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর সূর্য উপরে উঠে গেলে রসূল (সাঃআঃ) মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দিলে মুয়াজ্জিন আযান দেন। অতঃপর তিনি প্রথমে ফাজ্‌রের পূর্বের দু রাকআত সুন্নাত আদায় করেন এবং ইক্বামাত দেয়ার পর ফাজ্‌রের ফারয্‌ নামায আদায় করিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪৪. আমর ইবনি উমায়্যাহ আদ-দামরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সাথে তাহাঁর কোন এক সফরে ছিলাম। তিনি ফাজ্‌রের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে ছিলেন। সূর্যোদয়ের পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) জেগে উঠে বলিলেন, এ জায়গা থেকে সরে পড়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর (অন্য এক স্থানে গিয়ে) বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সকলে উযু করে দু রাকআত সুন্নাত আদায় করিল। অতঃপর নির্দেশ মোতাবেক বিলাল নামাজের ইক্বামাত দিলে তিনি ফাজ্‌রের নামায আদায় করালেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪৫. যু-মিখ্‌বার আল-হাবাশী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমাত করতেন। তার বর্ণনায় রয়েছেঃ তখন নাবী (সাঃআঃ) এতটুকু পরিমাণ পানি দিয়ে উযু করিলেন যে, তাতে জমিন ভিজল না। অতঃপর বিলালকে নির্দেশ দিলে তিনি আযান দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে ধীরেসুস্থে শান্তভাবে দু রাকআত সুন্নাত পড়ে বিলালকে নামাজের ইক্বামাত দিতে বলিলেন। এরপর তিনি ধীরেসুস্থে ফরয নামায আদায় করালেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪৬.নাজ্জাশীর ভ্রাতুষ্পুত্র যু-মিখ্‌বার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি অনুরূপ ঘটনার বর্ণনাতে বলেন, অতঃপর বিলাল কোনরূপ তাড়াহুড়া না করে ধীরেসুস্থে আযান দিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ শায

৪৪৭. আবদুল্লা ইবনি মাসঊদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদকালে আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে আগমন করলাম। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ (রাতের বেলায়) আমাদের পাহারা দেয়ার দায়িত্ব কে নেবে? বিলাল (রাঃআঃ) বলিলেন, আমি। অতঃপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ল, এমনকি সূর্যোদয় হয়ে গেল। এমতাবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) জেগে উঠে বললেনঃ তোমরা ঐরূপ কর যেরূপ তোমরা করে থাকতে (অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বে যেরূপ নামায আদায় করতে এখনও তাই কর)। সুতরাং আমরা তাই করলাম। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ কেউ ঘুমিয়ে পড়লে বা ভুলে গেলে সেও এরূপই করিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply