নাপাক – উচ্ছিষ্ট, মাসিহ করা, গোসল, বীর্য, হায়িয, ঋতুবতী
নাপাক – উচ্ছিষ্ট, মাসিহ করা, গোসল, বীর্য, হায়িয, ঋতুবতী >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ (৬৭-১১১)=৪৫টি
৬৭. অনুচ্ছেদঃ বিনা ওযূতে সালামের উত্তর দেওয়া মাকরূহ
৬৮. অনুচ্ছেদঃ কুকুরের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে
৬৯. অনুচ্ছেদঃ বিড়ালেন উচ্ছিষ্ট [ঝুটা] সম্পর্কে
৭০. অনুচ্ছেদঃ মোজার উপর মাসিহ করা
৭১. অনুচ্ছেদঃ মুসাফির ও মুকীম ব্যক্তির মোজার উপর মাসাহ করা
৭২. অনুচ্ছেদঃ মোজার উপরের দিক ও নীচের দিক মাসিহ করা
৭৩. অনুচ্ছেদঃ মোজার বাহিরের দিক মাসাহ করা
৭৪. অনুচ্ছেদঃ জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করা
৭৫. অনুচ্ছেদঃ পাগড়ীর উপর মাসাহ করা
৭৬. অনুচ্ছেদঃ নাপাকির গোসল
৭৭. অনুচ্ছেদঃ গোসলের সময় নারীরা চুলের বাঁধন খুলবে কি?
৭৮. অনুচ্ছেদঃ প্রতিটি চুলের নীচে নাপাকি রয়েছে
৭৯. অনুচ্ছেদঃ গোসলের পর ওযূ করা
৮০. অনুচ্ছেদঃ পুরুষের লজ্জাস্থান ও স্ত্রীর লজ্জাস্থান একত্রে মিলিত হলে গোসল করা ওয়াজিব
৮১. অনুচ্ছেদঃ বীর্যপাতের ফলে গোসল ওয়াজিব হয়
৮২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ঘুম হতে জেগে [কাপড় বা বিছানা] ভিজা দেখিতে পেল অথচ তার স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ হচ্ছে না
৮৩. অনুচ্ছেদঃ বীর্য এবং বীর্যরস [মযী]
৮৪. অনুচ্ছেদঃ কাপড়ে বীর্যরস লেগে গেলে কি করিতে হইবে
৮৫. অনুচ্ছেদঃ কাপড়ে বীর্য লেগে গেলে
৮৬. অনুচ্ছেদঃ কাপড় হতে বীর্য ধোয়া
৮৭. অনুচ্ছেদঃ গোসল না করে নাপাক অবস্থায় ঘুমিয়ে যাওয়া
৮৮. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তির ঘুমের পূর্বে ওযূ করা
৮৯. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করা [হাতে হাত মিলানো]
৯০. অনুচ্ছেদঃ পুরুষদের মত স্ত্রীলোকদেরও যখন স্বপ্নদোষ হয়
৯১. অনুচ্ছেদঃ গোসলের পর শরীর গরম করার জন্য স্ত্রীর শরীরের সাথে লেগে যাওয়া
৯২. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তি পানি না পেলে তায়াম্মুম করিবে
৯৩. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযা [রক্তপ্রদর]
৯৪. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযার রোগিণী প্রতি ওয়াক্তে ওযূ করিবে
৯৫. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযার রোগিণীর একই গোসলে দুই ওয়াক্তের নামায আদায় করা
৯৬. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযার রোগিণী প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসল করিবে
৯৭. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী নারী ছুটে যাওয়া নামায কাযা করিবে না
৯৮. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তি ও ঋতুবর্তী নারী কুরআন তিলাওয়াত করিবে না
৯৯. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর সাথে একই বিছানায় ঘুমানো
১০০. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির সাথে একত্রে পানাহার এবং তাহাদের উচ্ছিষ্ট [ঝুটা] সম্পর্কে
১০১. অনুচ্ছেদঃ হায়িয অবস্থায় মাসজিদ হতে কিছু আনা
১০২. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করা অধিক গুনাহের কাজ
১০৩. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর সাথে সহবাসের কাফফারা
১০৪. অনুচ্ছেদঃ কাপড় হতে হায়িযের রক্ত ধুয়ে ফেলা
১০৫. অনুচ্ছেদঃ নিফাসগ্রস্তা নারী কত দিন নামায রোযা থেকে বিরত থাকিবে
১০৬. অনুচ্ছেদঃ একই গোসলে একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করা
১০৭. অনুচ্ছেদঃ দ্বিতীয় বার সহবাস করিতে চাইলে ওযূ করে নেবে
১০৮. অনুচ্ছেদঃ নামায শুরু হওয়ার সময়ে কারো মলত্যাগের প্রয়োজন হলে সে প্রথমে মলত্যাগ করে নেবে
১০৯. অনুচ্ছেদঃ চলাচলের পথের ময়লা আবর্জনা লাগলে ওযূ করা
১১০. অনুচ্ছেদঃ তায়াম্মুম সম্পর্কিত হাদীস
১১১. অনুচ্ছেদঃ নাপাক না হলে যে কোন অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে
৬৭. অনুচ্ছেদঃ বিনা ওযূতে সালামের উত্তর দেওয়া মাকরূহ
৯০. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি [সাঃআ:] কে সালাম করিল, তখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। তিনি তার সালামের জবাব দেননি।
হাসান সহীহ্। ইরওয়া [৫৪] সহীহ্ আবু দাউদ [১২-১৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। আমাদের মতে মলত্যাগ বা পেশাবরত অবস্থায় সালামের জবাব দেওয়া মাকরূহ। কিছু বিশেষজ্ঞ এ হাদীসের তাৎপর্য এটাই বলেছেন। এ অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা হাদীসসমূহের মধ্যে এ হাদীসটি সর্বাধিক হাসান। মুহাজির ইবনি কুনফুয, আবদুল্লাহ ইবনি হানযালা, আলক্বামা ইবনি ফাগওয়া, জাবির ও বারাআ [রাঃআ:] হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৬৮. অনুচ্ছেদঃ কুকুরের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে
৯১. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধুতে হইবে, প্রথম অথবা শেষবার মাটি দ্বারা ঘষতে হইবে। বিড়াল যদি তাতে মুখ দেয় তবে একবার ধোয়াই যথেষ্ট।
সহীহ্। সহীহ্ আবু দাউদ [৬৪-৬৬], মুসলিম অনুরূপ; কিন্তু তাতে বিড়ালের উল্লেখ নেই। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইমাম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাকের এটাই মত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাঃআ:] এর মাধ্যমে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাতে এ বর্ণনা টুকু নেইঃ “বিড়াল পাত্রে মুখ দিলে একবার ধুতে হইবে। ” এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীস রয়েছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৯. অনুচ্ছেদঃ বিড়ালেন উচ্ছিষ্ট [ঝুটা] সম্পর্কে
৯২. কাবাশা বিনতু কাব ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবু কাতাদা [রাঃআ:] এর পুত্রবধূ ছিলেন। আবু কাতাদা [শ্বশুর] তাহাঁর নিকট এলেন। তিনি বলেন, আমি তাহাঁর জন্য ওযূর পানি ঢাললাম। তিনি বলেনঃ একটি বিড়াল এসে তা পান করিতে লাগল। তিনি পাত্রটি কাত করে ধরলেন আর বিড়ালটি পানি পান করিতে থাকল। কাবশা বলেন, তিনি [শ্বশুর] দেখলেন, আমি তাহাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বলিলেন, হে ভাইঝি! তুমি কি আশ্চর্য হচ্ছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ “বিড়াল অপবিত্র নয়। এটা তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী অথবা বিচরণকারিণী। ”
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৩৬৭] কেউ কেউ মালিক হতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, কাবশা কাতাদার স্ত্রী ছিলেন। সঠিক হলো কাতাদার ছেলের স্ত্রী ছিলেন। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্ ও আবু হুরাইরা [রা] হতেও বর্ণিত হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসিটি হাসান সহিহ। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবা, তাবিঈন ও পরবর্তীদের মতে বিড়ালের ঝুটা নাপাক নয়। ইমাম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক এ মত দিয়েছেন। এ অনুচ্ছেদে এ হাদীসটি অধিকতর হাসান। ইমাম মালিকের তুলনায় আরো উত্তম সনদে আর কেউ এ হাদীসটি বর্ণনা করিতে পারেননি। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭০. অনুচ্ছেদঃ মোজার উপর মাসিহ করা
৯৩. হাম্মাম ইবনিল হারিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] পেশাব করিলেন, অতঃপর ওযূ করিলেন এবং মোজার উপর মাসিহ করিলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি এরূপ করছেন? তিনি বলিলেন, কোন জিনিস আমাকে বাধা দিবে? আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে এরূপ করিতে দেখেছি। হাম্মাম বলেন, জারীরের এ হদীস সবারই ভাল লাগত। কেননা তিনি সূরা মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পর মুসলমান হয়েছেন।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ [৫৪৩]। এ অনুচ্ছেদে উমার, আলী, হুযাইফা, মুগীরা, বিলাল, সাদ, আবু আইউব, সালমান, বুরাইদা, আমর ইবনি উমাইয়া, আনাস, সাহল ইবনি সাদ, ইয়ালা ইবনি মুররা, উবাদা ইবনিস সামিত, উসামা ইবনি শারীক, আবু উমামা, জাবির এবং উসামা ইবনি যাইদ, ইবনি উবাদাহ বা ইবনি উমারাহ বা উবাই ইবনি উমারাহ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, জারীর [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৪. শাহার ইবনি হাওশাব হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনি আবদুল্লাহকে ওয়ূ করিতে এবং মোজার উপর মাসিহ করিতে দেখলাম। আমি এ ব্যাপারে তাহাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। তিনি বলিলেন, আমি রাসূলুলাল্লাহ [সাঃআ:] কে ওযূ করিতে এবং মোজার উপর মাসিহ করিতে দেখেছি। আমি [শাহর] তাঁকে [জারীরকে] প্রশ্নে করলাম, সেটা কি সূরা মাইদা অবতীর্ণ হওয়ার আগে না পরে? তিনি বলিলেন আমি তো সূরা মাইদা অবতীর্ণ হওয়ার পরেই ইসলাম গ্রহণ করেছি।
সহিহ। ইরওয়া [১/১৩৭]। এ হাদীসটি কুতাইবা বর্ণনা করিয়াছেন খালিদ ইবনি যিয়াদ আত্-তিরমিজি হতে তিনি মুক্বাতিল হতে তিনি শাহর ইবনি হাওশাব হতে তিনি জারীর হতে। আর বাক্বিয়্যাহ্ বর্ণনা করিয়াছেন ইবরাহীম ইবনি আদহাম হতে তিনি মুক্বাতিল ইবনি হাইয়্যান হতে। তিনি শাহর ইবনি হাওশাব হতে তিনি জারীর হতে। এ হাদীস কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা পেশ করছে। কেননা একদল লোক মোজার উপর মাসিহ করা অসঙ্গত মনে করেন। তারা এ ব্যাখ্যায় বলেন, সূরা মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার আগে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মোজার উপর মাসিহ করেছিলেন। অথচ হাদীসের রাবী জারীর [রাঃআ:] উল্লেখ করিয়াছেন, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে সূরা মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরই মোজার উপর মাসিহ করিতে দেখেছেন [তাই এ হাদীস যেন ওযূ সম্পর্কিত আয়াতের ব্যাখ্যা]। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭১. অনুচ্ছেদঃ মুসাফির ও মুকীম ব্যক্তির মোজার উপর মাসাহ করা
৯৫. খুযাইমাহ্ ইবনি সাবিত [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ “মুসাফিরের জন্য তিন [দিন] এবং মুকীমের জন্য এক [দিন]”।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ [৫৫৩] ইয়াহ্ইয়া ইবনি মাঈন হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি উপরোক্ত হাদীসকে সহিহ বলেছেন। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু আব্দুল্লাহ আল-জাদালীর নাম আবদ ইবনি আবদ, এত্ত বলা হয়েছে যে, তার নাম আব্দুল্লাহ রহমান ইবনি আবদ। এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এ অনুচ্ছেদে আলী, আবু বাকার, আবু হুরাইরা, সাফওয়ান ইবনি আসসাল, আওফ ইবনি মালিক, ইবনি উমার ও জারীর [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৬. সাফওয়ান ইবনি আসসাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন সফরে থাকতাম রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের নির্দেশ দিতেন, আমরা যেন নাপাকির গোসল ছাড়া তিন দিন তিন রাত আমাদের মোজা না খুলি; এমনকি এমনকি মলত্যাগ-পেশাব ও ঘুম হতে ওঠার পর ওযূ করার সময়ও [মোজা না খুলি]।
হাসান। ইবনি মাজাহ [৪৭৮] আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। হাকমি ইবনি উতাইবা ও হাম্মাদ-ইবরাহীশ নাখঈর সূত্রে, তিনি আবু আবদুল্লাহ আল- জাদালীর সূত্রে, তিনি খুযাইমার সূত্রে মোজার উপর মাসিহ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এ বর্ণনাটি সহিহ নয়। আলী ইবনি মাদীনী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ বলেছেন, শুবা বলেছেন, আবু আবদুল্লাহ আল-জাদলীর নিকট হতে ইবরাহীম নাখাঈ মাসিহ সম্পর্কিত হাদীস শুনেননি। যায়িদাহ মানসূর হতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, আমরা ইবরাহীম তাইমীর ঘরে বসা ছিলাম। ইবরাহীশ নাখাঈও অমাদের সাথে ছিলেন। তখন ইবরাহীম তাইমী আমাদের নিকট আমর ইবনি মাইমূনের সূত্রে, তিনি আবদুল্লাহ আল-জাদালীর সূত্রে, তিনি খুযাইমা ইবনি সাবিতের সূত্রে এবং তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে মোজার উপর সামিহ সম্পর্কিথ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল [ইমাম বোখারী] বলেন, এ অনুচ্ছেদে সাফওয়ান ইবনি আসসাল আল-মুরাদী [রা] হতে বর্ণিথ হাদীসটি বেশি উত্তম।
আবু ঈসা বলেনঃ বিশেষজ্ঞ সাহাবা, তাবিঈও পরবর্তী যুগের ফিক্হবিদ যেমন সুফিয়ান সাত্তরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিউ, আহমদ ও ইসহাকের মতে মুসাফির ব্যক্তি তিন দিন তিন রাত এবং মুক্বীম ব্যক্তি এক দিন একরাত পর্যন্ত মোজার উপর মাসিহ করিতে পারবে। আবু ঈসা বলেনঃ কিছ বিদ্বান যেমন মালিখ ইবনি আনাস মোজার উপর মাসিহ করার সময়সীমা নির্দিষ্ট করেননি। কিন্তু সময়সীমা নির্ধারিত করাটাই বেশি সহিহ। এই হাদীসটি সাফওয়ান ইবনি আসসাল হতে আসিম ব্যতীত অন্য সূতেও বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭২. অনুচ্ছেদঃ মোজার উপরের দিক ও নীচের দিক মাসিহ করা
৯৭. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] মোজার উপরের অংশ মাসিহ করিয়াছেন এবং নীচের অংশও মাসিহ করিয়াছেন।
জঈফ, ইবনি মাজাহ [৫৫০]।
আবু ঈসা বলেন, নবি [সাঃআ:]-এর একাধিক সাহাবা এবং তাবিঈদের এটাই সিদ্ধান্ত যে, মোজার উপর ও নীচের দিক মাসিহ করিতে হইবে। ইমাম মালিক, শাফিঈ এবং ইসহাকেরও এই মত। এই হাদীসটি ত্রুটি যুক্ত। ওয়ালিদ ইবনি মুসলিম ব্যতীত অন্য কেহই সাওর ইবনি ইয়াযীদের দিকে এর সম্পৃক্ততা বর্ণনা করেন নাই। আবু ঈসা বলেনঃ আবু যুরআহ্ এবং ইসমাঈলকে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় তারা বলেনঃ হাদীসটি সহিহ নয়। কেননা ইবনিল মুবারাক হাদীসটি সাওর হতে রাজা ইবনি হাইওয়ার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি মুগীরার সচীব হতে মুরসাল ভাবে রাসূল [সাঃআ:] হতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি উহাতে মুগীরার নাম উল্লেখ করেননি। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭৩. অনুচ্ছেদঃ মোজার বাহিরের দিক মাসাহ করা
৯৮. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে তাহাঁর মোজা দুটির উপরিভাগ মাসাহ করিতে দেখেছি।
হাসান সহীহ্। মিশকাত- [৫২২], সহিহ আবু দাউদ- [১৫১-১৫২]।
আবু ঈসা বলেন: মুগীরার বর্ণনা করা হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটি আব্দুর রহমান ইবনি আবী জিনাদ হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা জিনাদ হতে তিনি উরওয়াহ হতে তিনি মুগীরা হতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু জিনাদ ব্যতীত অন্য কেউ উরওয়ার সূত্রে মুগীরা হতে মুজার উপর মাসিহ করার কথা উল্লেখ করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। আর এটাই [মুজার উপরিভাগ মাসিহ করা] অনেক বিদ্বানের অভিমত। সুফিয়ান সাওরী ও আহমদ এ হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন। মুহাম্মাদ বলেন, মালিক এ হাদীসের রাবী আবদুর রহমান ইবনি আবু যিনাদের দিকে ইঙ্গিত করিতেন [দুর্বল বলিতেন]। এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৭৪. অনুচ্ছেদঃ জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করা
৯৯. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] ওযূ করিলেন এবং জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করিলেন।
সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৫৫৯]। আবু ঈসা বলেন: হাদীসটি হাসান সহিহ। একাধিক বিশেষজ্ঞ যেমন, সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আমহাদ ও ইসহাক বলেছেন, জাওরাবের উপর মাসিহ করা যাবে, তার সাথে জুতা না পরা হলেও। এটা যখন মোটা বস্ত্রের হইবে। এ অনুচ্ছেদে আবু মূসা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে।
আবু ঈসা বলেন: আমি সালিহ ইবনি মুহাম্মাদ আত্-তিরমিজির নিকট শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি আবু মুকাতিল সামার কান্দীকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি ইমাম আবু হানীফার নিকট ঐ অসুখের সময় উপস্থিত হলাম যে অসুখে তিনি ইনতিকাল করিয়াছেন। তিনি পানি আনতে বলিলেন, অতঃপর ওযূ করিলেন তার পায়ে জাওরাবা ছিল, তিনি তার উপর মাসাহ করিলেন আর বলিলেন, আজ আমি এমন একটি কাজ করলাম, যা আমি পূর্বে করিনি। আমি জাওরাবার উপর মাসাহ করেছি অথচ তার সাথে জুতা ছিল না। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৫. অনুচ্ছেদঃ পাগড়ীর উপর মাসাহ করা
১০০. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযূ করিলেন এবং মোজা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করিলেন।
সহীহ্। সহীহ্ আবু দাউদ- [১৩৭, ১৩৮], মুসলিম। বাক্র বলেন, আমি এ হাদীসটি ইবনি মুগীরার নিকট শুনিয়াছি। মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্শার অন্য এক স্থানে এ হাদীসে বলেছেন, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাথার সম্মুখভাগ এবং পাগড়ীর উপর মাসাহ করিলেন।
এ হাদীসটি মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআ:]-এর নিকট হতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু রাবী বর্ণনা করিয়াছেন, “তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাথার সম্মুখভাগ ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করিয়াছেন। ” আর কিছু রাবী শুধু পাগড়ীর কথা উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু মাথার সম্মুখ ভাগের কথা উল্লেখ করেননি। আবু ঈসা বলেন: আমি আহমদ ইবনি হাসানকে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, আহ্মাদ ইবনি হাম্বাল [রহ:] বলেছেন, আমি স্বচক্ষে ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তানের মত ভালো লোক দেখিনি। এ অনুচ্ছেদে আমর ইবনি উমাইয়া, সালমান, সাওবান ও আবু উমামা [রাঃআ:] হতেও বর্ণিত হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, মুগীরার হাদীসটি হাসান সহিহ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবী যেমন, আবু বাক্র, উমার ও আনাস [রাঃআ:] পাগড়ীর উপর মাসাহ করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। ইমাম আওযাঈ, আহমদ এবং ইসহাকও একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈগণ বলেছেন, শুধু পাগড়ীর উপর মাসাহ করা যাবে না, এর সাথে মাথাও মাসাহ করিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, ইবনিল মুবারাক ও শাফিঈ এ মত ব্যক্ত করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন: আমি জারুদ ইবনি মুআযকে বলিতে শুনিয়াছি তিনি বলেন: আমি ওয়াকী ইবনিল জাররাহকে বলিতে শুনিয়াছি, কোন ব্যক্তি যদি শুধু পাগড়ীর উপর মাসাহ করে তবে তার জন্য তাই যথেষ্ট হইবে সাহাবা হতে বর্ণিত আছারের কারণে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০১. বিলাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] মোজা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করিয়াছেন।
সহিহ। ইবনি মাজাহ [৫৬১]।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০২. আবু উবাইদা ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আম্মার ইবনি ইয়াসার [রহ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:]-কে মোজার উপর মাসাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, হে ভাতিজা! এটা সুন্নাত। আমি আবার তাঁকে পাগড়ীর উপর মাসাহ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, [মাথার] চুল পানি স্পর্শ করাও।
সনদ সহীহ্। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৬. অনুচ্ছেদঃ নাপাকির গোসল
১০৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর খালা মাইমূনা [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি সহবাসজনিত নাপাকির গোসল করিলেন। তিনি বাঁ হাত দিয়ে পানির পাত্র ডান হাতের উপর কাত করিলেন, উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, অতঃপর পানির পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি তুলে লজ্জাস্থানে দিলেন, অতঃপর দেয়ালে অথবা মাটিতে হাত ঘষলেন, অতঃপর কুলি করিলেন, নাকে পানি দিলেন এবং মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, অতঃপর তিনবার মাথায় পানি ঢাললেন। অতঃপর সমস্ত শরীরে পানি ঢাললেন। অতঃপর [গোসলের] জায়গা থেকে সরে গিয়ে পা দুটো ধুলেন।
সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৫৭৩], বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। এ অনুচ্ছেদে উম্মু সালামাহ্, জাবির, আবু সাঈদ, জুবাইর ইবনি মুতইম ও আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হতেও বর্ণিত হাদীস রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৪. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন নাপাকির জন্য গোসল করিতে ইচ্ছা করিতেন, তখন পানির পাত্রে হাত দেয়ার আগে উভয় হাত ধোয়ার মাধ্যমে গোসল শুরু করিতেন। অতঃপর তিনি লজ্জাস্থান ধুতেন এবং নামাজের ওযূর মত ওযূ করিতেন। অতঃপর চুলের ভেতরে পানি পৌঁছাতেন এবং মাথায় তিন আঁজলা পানি ঢালতেন।
সহিহ। ইরওয়া- [১৩২], বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। বিদ্বানগণ নাপাকির গোসলের এ পদ্ধতিই গ্রহণ করিয়াছেন। প্রথমে নামাযের ওযূর মত ওযূ করিবে, অতঃপর তিনবার মাথায় পানি ঢালবে, অতঃপর সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করিবে, অতঃপর উভয় পা ধুবে। আলিমগণ এ পদ্ধতিই অনুসরণ করেন। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, নাপাক ব্যক্তি ওযূ না করেই যদি পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে তাহলে তার গোসল হয়ে যাবে। ইমাম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক এই মত দিয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৭. অনুচ্ছেদঃ গোসলের সময় নারীরা চুলের বাঁধন খুলবে কি?
১০৫. উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাথার চুলে শক্ত বেনী বাঁধি। আমি কি নাপাকি গোসল করার সময় তা খুলে দেব? তিনি বললেনঃনা, তুমি তোমার মাথায় তিন আঁজল পানি ঢাল, তারপর তোমার সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত কর এবং এভাবে পবিত্র হও। অথবা [রাবীর সন্দেহ] তিনি বললেনঃএভাবে তুমি নিজেকে পবিত্র করলে।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৬০৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। বিশেষজ্ঞ আলিমদের মতে মহিলাদের নাপাকির গোসলের সময় চুলের বেণী খোলার প্রয়োজন নেই, সম্পূর্ণ মাথায় পানি প্রবাহিত করাই যথেষ্ট। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৮. অনুচ্ছেদঃ প্রতিটি চুলের নীচে নাপাকি রয়েছে
১০৬. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেনঃ প্রতিটি চুলের নীচে নাপাকি আছে। অতএব চুলগুলো ভাল করে ধৌত কর এবং শরীর ভাল করে পরিষ্কার কর।
জঈফ, ইবনি মাজাহ [৫৯৭]। এ অনুচ্ছেদে আলী ও আনাস [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও আছে। আবু ঈসা বলেন, হারিস ইবনি ওয়াজীহ [রঃ]-এর হাদীসটি গারীব। কেননা রাবী হারিস ইবনিল ওয়াজীহ অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। এ বর্ণনাটি শুধু তাহাঁর মাধ্যমেই আমাদের নিকটে পৌছেছে। আরো কিছু ইমাম তাহাঁর নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি এককভাবে মালিক ইবনি দীনার হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। হারিস ইবনি ওয়াজীহকে ইবনি ওয়াজবাহ্ও বলা হয়। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭৯. অনুচ্ছেদঃ গোসলের পর ওযূ করা
১০৭. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] গোসল করার পর ওযূ করিতেন না।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৫৭৯]।আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান সহিহ হাদীস। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবা এবং তাবিঈদের এটাই মত যে, গোসলের পর ওযূ করার দরকার নেই। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮০. অনুচ্ছেদঃ পুরুষের লজ্জাস্থান ও স্ত্রীর লজ্জাস্থান একত্রে মিলিত হলে গোসল করা ওয়াজিব
১০৮. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, পুরুষাংগের খাতনার স্থান স্ত্রীর [যৌনাংগের] খাতনার স্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। আমি [আয়িশাহ্] ও রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এরূপ করেছি, অতঃপর আমরা গোসল করেছি।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৬০৮], মুসলিম।এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরাহ্, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও রাফি ইবনি খাদীজ [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৯. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ এক লজ্জাস্থান অপর লজ্জাস্থানে প্রবেশ করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়।
সহীহ্। পূর্বের হাদীসের কারণে, ইরওয়া-[১/১২১]। আবু ঈসা বলেন, আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীসটি তাহাঁর নিকট হতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ এক খাতনার স্থান অন্য খাতনার স্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবা যেমন, আবু বাকার, উমার, উসমান, আলী ও আয়িশাহ্ [রাঃআ:] এবং তাহাদের পরবর্তী কালের ফিক্হবিদ যেমন, সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক বলেছেন, [স্বামী-স্ত্রী উভয়ের] দুই যৌনাংগ একত্রে মিলে গেলেই গোসল ওয়াজিব হয়। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮১. অনুচ্ছেদঃ বীর্যপাতের ফলে গোসল ওয়াজিব হয়
১১০. উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “বীর্যপাতের ফলেই গোসল ওয়াজিব হয়” এ অনুমতি ইসলামের প্রথম যুগে ছিল, অতঃপর তা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৬০৯]।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১১. ইমাম যুহ্রী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
ইমাম যুহ্রী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে এই সূত্রে উপরের হাদীসের মত হাদীস বর্ণনা হয়েছে।
আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। বীর্যপাত হলেই শুধু গোসল ফরয হয় এ সুযোগে ইসলামের প্রথম দিকে ছিল, অতঃপর তা রহিত করা হয়। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবী হতে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তাহাদের মধ্যে রয়েছেন উবাই ইবনি কাব ও রাফি ইবনি খাদীজ [রাঃআ:]। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের এটাই অভিমত যে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই উভয়ের উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়, যদিও বীর্যপাত না হয়। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১১২. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “বীর্যপাত হলেই গোসল ওয়াজিব” এই হুকুম ইহতিলামের [স্বপ্নদোষের] ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইহতিলামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই অংশটুকুর সনদ দুর্বল। আর সেটা মাওকূফ। হাদীসের বাকী অংশ সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৬০৬-৬০৭]।আবু ঈসা বলেন, আমি জারূদকে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, আমি [জারূদ] ওয়াকীকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি শারীকের নিকট এ হাদীসটি পেয়েছি। আবুল জাহ্হাফের নাম দাঊদ ইবনি আবু আওফ। সুফইয়ান সাওরী হতে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনি একজন অতিপরিচিত বিশ্বস্ত লোক ছিলেন। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উসমান ইবনি আফফান, আলী ইবনি আবী তালিব, যুবাইর, তালহা, আবু আইউব ও আবু সাঈদ [রাঃআ:] হতে হাদীস বর্ণিত আছে, নবি [সাঃআ:] বলেনঃ বীর্যপাতের ফলেই গোসল ওয়াজিব হয়। সহিহ, ইবনি মাযাহ ৬০৬-৬০৭। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৮২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ঘুম হতে জেগে [কাপড় বা বিছানা] ভিজা দেখিতে পেল অথচ তার স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ হচ্ছে না
১১৩. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে, সে ঘুম থেকে জেগে ভিজা দেখিতে পাচ্ছে কিন্তু স্বপ্নদোষের কথা মনে করিতে পারছে না। তিনি বলিলেন, সে গোসল করিবে। অপর এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে, তার স্বপ্নদোষ হয়েছে কিন্তু বীর্যপাতের কোন আলামাত দেখিতে পাচ্ছে না। তিনি বললেনঃ “তাকে গোসল করিতে হইবে না। ” উম্মু সালামা [রাঃআ:] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রীলোক যদি এমনটি দেখিতে পায় [স্বপ্নদোষ হয়] তবে তাকে কি গোসল করিতে হইবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, স্ত্রীলোকেরা পুরুষদেরই অংশ।
সহীহ্। সহীহ্ আবু দাউদ- [২৩৪]। আবু ঈসা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমার-উবাইদুল্লাহ ইবনি উমারের সূত্রে আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর হাদীসটির অংশবিশেষ বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি স্বপ্নদোষের কথা উল্লেখ করেননি। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ এ হাদীসের এক রাবী আবদুল্লাহকে হাদীসশাস্ত্রে দুর্বল বলে উল্লেখ করিয়াছেন। নবি [সাঃআ:]-এর একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা এবং তাবিঈদের মতে কোন ব্যক্তি ঘুম হতে উঠে ভিজা দেখিতে পেলে তাকে গোসল করিতে হইবে। এটা সুফিয়ান সাওরী এবং আহমাদেরও অভিমত। কিছু বিশেষজ্ঞ তাবিঈ বলেছেন, বীর্যপাতের ফলে যদি কাপড় ভিজে থাকে তবে গোসল করিতে হইবে। এটা ইমাম শাফিঈ ও ইসহাকের মত। স্বপ্নদোষ হয়েছে কিন্তু বীর্যপাত হয়নি, এ অবস্থায় সকল ইমামের মতে গোসল করার দরকার নেই। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৩. অনুচ্ছেদঃ বীর্য এবং বীর্যরস [মযী]
১১৪. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:] কে বীর্যরস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেনঃ “বীর্যরস বের হলে ওযূ করিতে হইবে, এবং বীর্যপাত হলে গোসল করিতে হইবে”।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৫০৪] এ অনুচ্ছেদে মিকদাদ ইবনিল আসওয়াদ ও উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। বীর্যরসে ওযূ এবং বীর্যপাতে গোসল রসুলুল্লাহ নবি আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি আলী [রাঃআ:]-এর নিকট হতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল বিশেষজ্ঞ সাহাবা এবং তাবিঈদের এই মত। ইমাম শাফিঈ, আহমদ এবং ইসহাকও এই অভিমতই দিয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৪. অনুচ্ছেদঃ কাপড়ে বীর্যরস লেগে গেলে কি করিতে হইবে
১১৫. সাহল ইবনি হুনাইফ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বীর্যরস বের হওয়ার কারণে আমি কঠিন অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কেননা এ কারণে আমাকে প্রায়ই গোসল করিতে হত। আমি ব্যাপারটা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলাম এবং তার বিধান জানতে চাইলাম। তিনি বললেনঃ “এটা বের হলে তোমার জন্য ওযূই যথেষ্ট”। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তা যদি আমার কাপড়ে লেগে যায়, তবে কি করব? তিনি বললেনঃ “এক আঁজলা পানি তোমার কাপড়ের যে অংশে বীর্যরস দেখিতে পাও সেখানে ছিটিয়ে দাও, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। “
হাসান। ইবনি মাজাহ- [৫০৬]আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। মযীর ব্যাপারে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাকের এই হাদীসের মত অন্য কোন হাদীস আমাদের জানা নেই। কাপড়ে বীর্যরস লেগে গেলে এর হুকুম সম্পর্কে আলিমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিঈ ও ইসহাকের মতে কাপড় ধুতে হইবে। কেউ কেউ বলেন, মযী লাগার জায়গায় পানি ঢেলে দেওয়াই যথেষ্ট। ইমাম আহমদ বলেন, আমার মতে পানি ছিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৮৫. অনুচ্ছেদঃ কাপড়ে বীর্য লেগে গেলে
১১৬. হাম্মাম ইবনিল হারিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আয়িশা [রাঃআ:]-এর বাড়িতে একজন মেহমান এল, তিনি তার জন্য হলুদ রংয়ের একটি চাদর বিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। সে তাতে শুয়ে গেল। [ঘুমের মধ্যে] তার স্বপ্নদোষ হল। সে চাদরটি এ অবস্থায় ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করিল। তাই সে তা পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিল। অতঃপর আয়িশা [রাঃআ:]-এর নিকট তা পাঠিয়ে দিল। তিনি বলিলেন, সে আমাদের কাপড়টি খারাপ করে দিল কেন? আঙ্গুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে বীর্য তুলে ফেলাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। কখনো কখনো আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় হতে আঙ্গুল দিয়ে শুক্র খুঁটে খুঁটে তুলে ফেলতাম।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৫৩৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। অনেক সাহাবা তাবেঈ এবং একাধিক ফকীহ যেমন সুফিয়ান সাওরী, আহমদ ও ইসহাক বলেছেন, যদি কাপড়ে বীর্য লেগে যায় তবে তা খুঁটে খুঁটে তুলে ফেলাই যথেষ্ট, যদিও তা ধোয়া না হয়। মানসূর হতে তিনি ইবরহীম হতে, তিনি হাম্মাম ইবনিল হারিস হতে তিনি আয়িশাহ্ হতে, আমাশের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু মাশার এই হাদীসটি ইবরহীম হতে, তিনি আসওয়াদ হতে তিনি আয়িশাহ্ হতে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে আমাশের সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি সবচাইতে সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৬. অনুচ্ছেদঃ কাপড় হতে বীর্য ধোয়া
১১৭. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় হতে বীর্য ধুয়ে ফেলেছেন।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৫৩৬], বোখারী ও মুসলিম।আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসটির বিরোধী নয়। যদিও খুঁটে খুঁটে বীর্য তুলে ফেললেই যথেষ্ট তবুও কোন ব্যক্তির কাপড়ে এর দাগ না থাকাই ভালো। ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেছেন, বীর্য হচ্ছে নাকের কফের মত। তোমার কাপড় হতে তা দূর করে ফেল, এমনকি ইযখির ঘাস দিয়ে হলেও। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৭. অনুচ্ছেদঃ গোসল না করে নাপাক অবস্থায় ঘুমিয়ে যাওয়া
১১৮. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কখনো কখনো নাপাক অবস্থায় ঘুমিয়ে যেতেন, এমনকি পানি স্পর্শও করিতেন না।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৫৮১]। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৯. ওয়াকী হইতে বর্ণিতঃ
ওয়াকী সুফিয়ানের বরাতে আবু ইসহাকের সনদে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
আবু ঈসা বলেনঃ সাঈদ ইবনিল মুসায়্যাব প্রমুখের এই মত। আসওয়াদের সূত্রে আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত আছে, নবি [সাঃআ:] ঘুমের পূর্বে ওযূ করিতেন। আসওয়াদের সূত্রে বর্ণিত আবু ইসহাকের হাদীস হতে এই হাদীসটি অধিক সহীহ্। আবু ইসহাক হতে এই হাদীসটি শুবা, সাওরী আরো অনেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তারা মনে করেন আবু ইসহাক এ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ভুলের শিকার হয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৮৮. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তির ঘুমের পূর্বে ওযূ করা
১২০. উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবি [সাঃআ:] কে প্রশ্ন করিলেন, আমদের কেউ কি নাপাক অবস্থায় ঘুমাতে পারবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে ওযূ করে নেবে।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৫৮৫], বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আম্মার, আয়িশাহ্, জাবির, আবু সাঈদ ও উম্মু সালামাহ [রাঃআ:] হতেও বর্ণিত হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ উমার [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসটি সর্বাধিক উত্তম ও অধিকতর সহীহ্। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবা এবং তাবিঈ যেমন, সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ ও ইসহাক বলেন, নাপাক ব্যক্তি যদি ঘুমাতে চায় তবে ঘুমানোর আগে ওযূ করে নিবে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৯. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করা [হাতে হাত মিলানো]
১২১. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] তাহাঁর সাথে সাক্ষাত করিলেন। তখন তিনি [আবু হুরাইরা] নাপাক ছিলেন। তিনি [আবু হুরাইরা] বলেন, আমি চুপচাপ সরে গেলাম এবং গোসল করে তাহাঁর নিকট এলাম। তিনি বলিলেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে, অথবা কোথায় গিয়েছিলে? আমি বললাম, আমি নাপাক ছিলাম। তিনি বললেনঃ “মুমিন ব্যক্তি কখনও নাপাক হয় না”।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৫৩৪], বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে হুযাইফা ও ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইন খানাসতু শব্দের অর্থ হলো, আমি তার নিকট থেকে দূরে সরে গেলাম। বিদ্বানগণ নাপাক অবস্থায় পরস্পরকে মুসাফাহা করার অনুমতি দিয়েছেন। তাহাদের মতে, নাপাক ব্যক্তির ঘাম এবং ঋতুবতী মহিলার ঘামের মধ্যে কোন অপবিত্রতা [নাপাক] নেই। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯০. অনুচ্ছেদঃ পুরুষদের মত স্ত্রীলোকদেরও যখন স্বপ্নদোষ হয়
১২২. উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মিলহান কন্যা উম্মু সুলাইম [রাঃআ:] নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হক কথা বলিতে আল্লাহ তাআলা লজ্জাবোধ করেন না। অতএব কোন নারীর পুরুষদের মত স্বপ্নদোষ হলে কি তাকে গোসল করিতে হইবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন সে পানির [বীর্যপাতের] চিহ্ন দেখিতে পায় তখন যেন গোসল করে নেয়। উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] বলেন, আমি তাঁকে বললাম, হে উম্মু সুলাইম! আপনি তো নারীদের অপমান করিলেন।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৬০০], বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ্। ফিকহ্বিদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কোন স্ত্রীলোকের পুরুষের মত স্বপ্নদোষ হলে এবং বীর্যপাত হলে তাকে গোসল করিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী এবং শাফিঈও একথা বলেছেন। এ অনুচ্ছেদে উম্মু সুলাইম, খাওলা, আয়িশাহ্ ও আনাস [রাঃআ:] হতেও বর্ণিত হাদীস রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯১. অনুচ্ছেদঃ গোসলের পর শরীর গরম করার জন্য স্ত্রীর শরীরের সাথে লেগে যাওয়া
১২৩. আইশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] কখনও কখনও নাপাকির গোসল করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতেন শরীর গরম করার জন্য। আমি তাঁকে আমার সাথে জড়িয়ে নিতাম [ঠান্ডা দূর করার জন্য]। অথচ আমি তখনও নাপাকির গোসল করিনি।
জঈফ, ইবনি মাজাহ [৫৮০]। আবু ঈসা বলেন এ হাদীসের সনদে কোন ত্রুটি নেই। নবি [সাঃআ:]-এর একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈদের মতে, কোন ব্যক্তি নাপাকির গোসল করে এসে নাপাক স্ত্রীকে জড়িয়ে নিয়ে শরীর গরম করলে এবং তার সাথে ঐ অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলে কোন দোষ নেই। সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহমদ এবং ইসহাক ও এইমত দিয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৯২. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তি পানি না পেলে তায়াম্মুম করিবে
১২৪. আবু যার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য পবিত্রতাকারী, যদিও সে দশ বছর ধরে পানি না পায়। যখন সে পানি পাবে তখন নিজের শরীরে যেন পানি পৌঁছায় [গোসল করে]। এটাই [তার জন্য] উত্তম। মাহমূদ তার বর্ণিত হাদীসে এরূপ উল্লেখ করেছেনঃ পবিত্র মুসলমানদের জন্য ওযূ গোসলের [বিকল্প] উপকরণ।
সহীহ্। মিশকাত-[৫৩০], সহীহ্ আবু দাউদ-[৩৫৭], ইরওয়া-[১৫৩]। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ও ইমরান ইবনি হুসাইন [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ খালিদ আলহাজ্জা হতে এই হাদীসটি আরো অনেকে বর্ণনা করিয়াছেন এই হাদীসটি আইয়ূব আবু কিলাবা হতে তিনি বনু-আমির গোত্রের এক ব্যক্তি হতে তিনি আবু যার হতে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদীসটি হাসান। জামহুর ফুকাহাদের এটাই মত যে, নাপাক ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলা [ঋতুশেষে] পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি না পেলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করিবে। ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নাপাক ব্যক্তির জন্য পানি না পেলেও তায়াম্মুম জায়িয মনে করেন না। বর্ণিত আছে যে, তিনি তাহাঁর এ অভিমত পরবর্তী কালে প্রত্যাহার করিয়াছেন বলেও উল্লেখ আছে। অতঃপর তিনি পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করে নেবে। সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, মালিক, আহমদ অ ইসহাক এ মতেরই সমর্থক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৩. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযা [রক্তপ্রদর]
১২৫. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু হুবাইশের কন্যা ফাতিমা [রাঃআ:] নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন ইস্তিহাযার রোগিণী, কখনও পবিত্র হই না। আমি কি নামায ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ “না, এটা একটা শিরার রক্ত, হায়িয নয়। যখন তোমার হায়িয শুরু হইবে,নামায ছেড়ে দেবে। যখন হায়িযের সময়সীমা শেষ হইবে, তোমার শরীর হতে রক্ত ধুয়ে ফেলবে [গোসল করে নেবে] এবং নামায আদায় করিবে”।
আবু মুআবিয়া তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেন, তিনি [রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]] বলিলেন, [হায়িযের মুদ্দাত শেষ হওয়ার পর] প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযূ কর [নামায আদায় কর], যতক্ষণ পরবর্তী [হায়িযের] সময় না আসে।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৬২১], বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর এই হাদীসটি হাসান সহিহ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা এবং তাবিঈনের এই মত। সুফিয়ান সাওরী, মালিক, ইবনিল মুবারাক ও শাফিঈ বলেন, ইস্তিহাযার রোগিণী হায়িযের সময়সীমা পার হলে গোসল করিবে এবং প্রত্যেক নামযের জন্য [নতুন করে] ওযূ করিবে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৪. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযার রোগিণী প্রতি ওয়াক্তে ওযূ করিবে
১২৬. আদী ইবনি সাবিত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে পর্যায়ক্রমে তাহাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] ইস্তিহাযার রোগিণী সম্পর্কে বলেনঃ ইতোপূর্বে সে যে কয়দিন ঋতুবতী থাকতো ততদিন নামায ছেড়ে দেবে; অতঃপর গোসল করিবে এবং প্রত্যেক নামযের সময় নতুন করে ওযূ করিবে এবং রোযা রাখবে ও নামায আদায় করিবে।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৬২৫]। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৭. ‘আলী ইবনি হুজ্র হইতে বর্ণিতঃ
‘আলী ইবনি হুজ্র হতেও শুরাইক এর সূত্রে উপরের হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের রাবী শারীক একাই আবু ইয়াকযানের নিকট হতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আমি ইমাম বোখারীকে এই হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি `আদীর দাদার নাম বলিতে পারেননি। আমি তাহাঁর নিকট ইয়াহ্ইয়া ইবনি মু’ঈনের কথা উল্লেখ করলাম যে, তিনি ‘আদীর দাদার নাম দীনার বলেছেন। কিন্ত বোখারী তা নির্ভরযোগ্য মনে করিলেন না। ইমাম আহমদ ও ইসহাক বলেন, যদি ইস্তিহাযার রোগিণী প্রত্যেক নামাযের সময় গোসল করে তাহলে এটা উত্তম। আর যদি শুধু ওযূ করে নেয় তবে তাও জায়িয। সে যদি এক গোসলে দুই ওয়াক্ত নামায আদায় করে তবে তাও যথেষ্ট [অর্থাৎ এক গোসলে যুহর-আসর, দ্বিতীয় গোসলে মাগরিব-ইশা এবং তৃতীয় গোসলে ফযরের নামায আদায় করা] । হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৯৫. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযার রোগিণীর একই গোসলে দুই ওয়াক্তের নামায আদায় করা
১২৮. হামনা বিনতু জাহ্শ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি গুরুতরভাবে ও অত্যধিক পরিমাণে ইস্তিহাযাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিধান জিজ্ঞেস করিতে এবং ব্যাপারটা তাঁকে জানাতে আসলাম। আমি আমার বোন যাইনাব বিনতি জাহ্শের ঘরে তাহাঁর দেখা পেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি গুরুতররূপে ও অত্যধিক পরিমানে ইস্তিহাযাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি হুকুম করেন? এটা আমাকে রোযা-নামাযে বাধা দিচ্ছে। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে তুলা ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছি; এটা রক্ত শোষণ করিবে। তিনি [হামনা] বলেন, এটা তার চেয়েও বেশি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি [নির্দিষ্ট স্থানে কাপড়ের] লাগাম বেঁধে নাও। তিনি [হামনা] বলিলেন, এটা তার চেয়েও বেশি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি কাপড়ের পট্টি বেঁধে নাও। তিনি বলিলেন, এটা আরো অধিক গুরুতর, আমি পানি প্রবাহের মত রক্তক্ষরণ করি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাকে দু’টো নির্দেশ দিচ্ছি, এর মধ্যে যেটাই তুমি অনুসরণ করিবে তা তোমার জন্য যথেষ্ট হইবে। আর যদি তুমি উভয়টিই করিতে পার তাহলে তুমিই ভাল জান [ কোনটি অনুসরণ করিবে ]। অতঃপর তিনি তাকে বললেনঃ এটা শাইতানের একটা আঘাত ছাড়া আর কিছু নয় [অতএব চিন্তার কিছু নেই]।
এক. তুমি হায়িযের সময়সীমা ছয় দিন অথবা সাত দিন ধরে নিবে। প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানে রয়েছে। অতঃপর তুমি গোসল করিবে। তুমি যখন মনে করিবে যে, তুমি পবিত্র হয়ে গেছ তখন [মাসের অবশিষ্ট ] চব্বিশ দিন অথবা তেইশ দিন নামায আদায় করিবে এবং রোযা রাখবে। এটা তোমার জন্য যথেষ্ট হইবে। তুমি প্রতি মাসে এরূপ করিবে, যেভাবে অন্য মেয়েরা তাহাদের হায়িযের সময়ে এবং তোহরের [পবিত্রতার] সময়ে নিজেদের হায়িযের সময়সীমা ও তুহরের সময়সীমা গণনা করে থাকে।
দুই. যদি তুমি যুহরের নামায পিছিয়ে আনতে এবং আসরের নামায এগিয়ে আনতে পার তাহলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করে যুহর ও আসর উভয় নামায একত্রে আদায় করে নাও। এভাবে মাগরিবের নামায পিছিয়ে আনতে এবং ইশার নামায এগিয়ে আনতে পার এবং গোসল করে উভয় নামায এক সাথে আদায় করিতে পারলে তাই করিবে। তুমি যদি ফযরের নামাযের জন্যও গোসল করিতে পার তাহলে তাই করিবে এবং রোযাও রাখবে। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু’টি বিকল্প নির্দেশের মধ্যে শেষেরটিই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়।
হাসান। ইবনি মাজাহ- [৬২৭]। আবু ‘ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ । হাদীসটি ‘আমর ইবনি রাক্কী, ইবনি জুরাইজ এবং শারীক আব্দুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি ‘আক্কীল হতে তিনি ইবরহীম ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি তালহা হতে তিনি তার চাচা ইমরান হতে, তিনি তার মা হামনাহ হতে বর্ণনা করিয়াছেন । ইবনি জুরাইজ তার বর্ণনায় ‘উমার ইবনি তালহা বলেছেন । সঠিক হলো, ‘ইমরান ইবনি তালহা । আমি মুহাম্মাদকে [বোখারীকে] এ হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটি হাসান সহীহ্ হাদীস । অনুরুপভাবে আহমদ ইবনি হাম্বালও বলেছেন, এটা হাসান সহিহ হাদীস । ইমাম আহমদ ও ইসহাক বলেন, যদি ইস্তিহাযার রোগিণী হায়িযের শুরু এবং শেষ বুঝতে পারে, তবে রক্তস্রাব যখন আরম্ভ হয় তখন তার রং হয় কালো এবং শেষের দিকে তা হলুদ বর্ণ ধারন করে । এ ধরনের মহিলাদের জন্য ফাতিমা বিনতু আবু হুবাইশ হতে বর্ণিত হাদীসের নির্দেশ প্রযোজ্য । পূর্বে নিয়মিত ঋতুস্রাব হয়েছে এবং পরে ইস্তিহাযার রোগ দেখা দিয়েছে এরূপ মহিলার কর্তব্য হচ্ছে, হায়িযের নির্দিষ্ট দিন কয়টির নামায ছেড়ে দেবে; অতঃপর গোসল করিবে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য পৃথকভাবে ওযূ করে নামায আদায় করিবে । কোন মহিলার যদি রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং পূর্ব হতে কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা বা অভ্যাসও না থাকে যে, কত দিন হায়িয হয়; এরূপ মহিলার ক্ষেত্রে হামনা বিনতু জাহ্শ হতে বর্ণনাকৃত হাদীসের হুকুম প্রযোজ্য । আবু ‘উবাইদও এরূপ বলেন ।
ইমাম শাফিঈ বলেন, ইস্তিহাযার রোগিণীর যদি প্রথম হায়িয হয়ে থাকে এবং তা পনের দিন অথবা তার কম সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়, তবে তার এ দিনগুলো হায়িযের মধ্যে গণ্য হইবে । এ কয়দিন সে নামায আদায় করিবে না । পনের দিনের পরও যদি রক্তস্রাব চলতে থাকে তবে [উক্ত পনের দিনের মধ্যে] চৌদ্দ দিনের নামায কাযা হিসেবে আদায় করিবে এবং এক দিনের নামায ছেড়ে দিবে । কেননা [ইমাম শাফিঈর মতে] হায়িযের নিম্নতম মুদ্দাত এক দিন । আবু ‘ঈসা বলেন,হায়িযের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মুদ্দাত নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, হায়িযের সর্বনিম্ন সীমা তিন দিন এবং সর্বোচ্চ সীমা দশদিন । সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসীগণ [ইমাম আবু হানীফা ও তাহাঁর আনুসারীগণ] একথা বলেছেন । ইবনিল মুবারাক এ মতটিই গ্রহণ করিয়াছেন । অপর একদল বিদ্বান, যাদের মধ্যে আতা ইবনি আবু রাবাহ্ও রয়েছেন, বলেছেন, হায়িযের নিম্নতম মুদ্দাত এক দিন এক রাত এবং সর্বোচ্চ মুদ্দাত পনের দিন [ও রাত] । ইমাম আওযাঈ, মালিক, শাফিঈ, আহমদ, ইসহাক ও আবু ‘উবাইদ এ অভিমত দিয়েছেন । হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৯৬. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিহাযার রোগিণী প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসল করিবে
১২৯. ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাহ্শ কন্যা উম্মু হাবীবা [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফাতোয়া জানতে চাইলেন। তিনি বলিলেন, আমি সর্বদা ইস্তিহাযার রোগে আক্রান্ত থাকি এবং কখনও পবিত্র হই না। আমি কি নামায ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ “না, এটা একটি শিরার রক্ত; তুমি গোসল করে নামায আদায় করিবে। ” অতঃপর তিনি [উম্মু হাবীবা] প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসল করিতেন।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৬২৬], বোখারী ও মুসলিম। কুতাইবা বলেন, লাইস বলেছেন, ইবনি শিহাব [তাহাঁর বর্ণনায়] একথা উল্লেখ করেননি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু হাবীবাকে প্রত্যেক নামাযের সময় গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন । বরং তিনি স্বেচ্ছায় একাজ করিতেন [নিজের ইজতিহাদের ভিত্তিতে] । আবু ‘ঈসা বলেন, যুহরীও ‘আমরার সূত্রে, তিনি ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর সূত্রে এ হদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কোন কোন মনীষীর মতে ইস্তিহাযার রোগিণীকে প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসল করিতে হইবে। আওযায়ী ও যুহরী হতে পূর্বোক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৭. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী নারী ছুটে যাওয়া নামায কাযা করিবে না
১৩০. মুআযাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক মহিলা ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর নিকট প্রশ্ন করিল, আমাদের কেউ তার হায়িয চলাকালীন সময়ের নামায কি পরে আদায় করিবে? তিনি [আয়িশাহ্] বলিলেন, তুমি কি হারূরা এলাকার বাসিন্দা [খারিজী]? আমাদের কাউকে মাসিক ঋতু চলাকালীন ছুটে যাওয়া নামায পরবর্তীতে কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হত না।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৬৩১], বোখারী ও মুসলিম। আবু ‘ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ । ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর নিকট হতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ঋতুবতী নারীকে তার ছুটে যাওয়া নামায পরবর্তী সময়ে কাযা করিতে হইবে না । সমস্ত ফিক্হবিদ এ ব্যাপারে একমত । হায়িযগ্রস্তা মহিলাকে তার ছুটে যাওয়া নামায কাযা করিতে হইবে না, কিন্তু রোযার কাযা করিতে হইবে, এ ব্যাপারেও ফিক্হবিদদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৮. অনুচ্ছেদঃ নাপাক ব্যক্তি ও ঋতুবর্তী নারী কুরআন তিলাওয়াত করিবে না
১৩১. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেনঃ ঋতুবর্তী নারী ও নাপাক ব্যক্তি [যার উপর গোসল ফরয] কুরআনের কোন অংশ তিলাওয়াত করিবে না।
মুনকার, ইবনি মাজাহ [৫৯৫]। এ অনুচ্ছেদে আলী [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীস ও আছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি ইসমাঈল ইবনি আইয়াশ একটি মাত্র সনদে সূত্রেই বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাপাক ব্যক্তি ও হায়িযগ্রস্তা নারী কুরআন তিলাওয়াত করিবে না। এ সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে আমরা উপরোক্ত হাদীস জানতে পারিনি। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈ এটাই বলেছেন। তাহাদের পরবর্তীগণ যেমন, সুফইয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক বলেনঃ নাপাক ও হায়িয অবস্থায় কুরআনের কোন অংশ তিলাওয়াত করিবে না; কিন্তু কোন আয়াতের অংশবিশেষ অথবা শব্দ ইত্যাদি পাঠ করিতে পারবে। তাঁরা নাপাক ব্যক্তি ও হায়িযগ্রস্তা নারীকে তাসবীহ-তাহলীল [সুবহানাল্লাহ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ ইত্যাদি] পড়ার অনুমতি দিয়েছেন।
ইমাম তিরমিজি বলেনঃ আমি মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল [বোখারী]-কে বলিতে শুনিয়াছি, এ হাদীসের এক রাবী ইসমাঈল ইবনি আইয়াশ, হিজায ও ইরাকবাসীদের হতে অস্বীকৃত [মুনকার] হাদীসগুলো বর্ণনা করে থাকে। ইমাম বোখারী তাহাদের সূত্রে বর্ণিত তার এ ধরনের একক বর্ণনাগুলোকে জঈফ বলিতে চান। তিনি আরো বলেছেন, সিরীয়াবাসীদের নিকট হতে বর্ণিত ইসমাঈল ইবনি আইয়াশের হাদীসগুলো শক্তিশালী। আহমদ ইবনি হাম্বাল বলেছেনঃ ইসমাঈল ইবনি আইয়াশ বাকিয়ার তুলনায় অনেক ভাল। কেননা বাকিয়া সিকাহ রাবীদের বরাতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেনঃ আহমদ ইবনি হাসান আমাকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি আহমদ ইবনি হাম্বালকে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি। হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
৯৯. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর সাথে একই বিছানায় ঘুমানো
১৩২. ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যখন ঋতুবতী হতাম রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিতেনঃ ‘তুমি শক্ত করে পাজামা বেঁধে নাও। অতঃপর তিনি আমাকে আলিঙ্গন করিতেন।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [২৬০], বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে উম্মু সালামাহ্ ও মাইমূনাহ্ [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে । আবু ‘ঈসা বলেন, ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:]- এর হাদীসটি হাসান সহিহ । একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈ এটাই বলেছেন [ঋতুবতীর সাথে একত্রে ঘুমানো যাবে] । ইমাম শাফিঈ, আহমদ এবং ইসহাকও এই মত দিয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০০. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির সাথে একত্রে পানাহার এবং তাহাদের উচ্ছিষ্ট [ঝুটা] সম্পর্কে
১৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি সা’দ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হায়িযগ্রস্তা নারীর সাথে একত্রে পানাহার সম্পর্কে নবি [সাঃআ:]-এর নিকট প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তার সাথে খাও।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ- [৬৫১]। এ অনুচ্ছেদে ‘আয়িশাহ্ এবং আনাস [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে । আবু ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব । জামহুর উলামাদের মতে, হায়িযগ্রস্তার সাথে একত্রে পানাহার কোন দোষ নেই । কিন্তু স্ত্রীলোকদের ওযূ করার পর অবশিষ্ট পানি ব্যবহার করা সম্পর্কে মতের অমিল আছে । কেউ কেউ এটা ব্যবহার করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ মাকরূহ বলেছেন । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০১. অনুচ্ছেদঃ হায়িয অবস্থায় মাসজিদ হতে কিছু আনা
১৩৪. কাসিম ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:] আমাকে বলেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিলেনঃ “হাত বাড়িয়ে মাসজিদ হতে আমাকে মাদুরটি এনে দাও। ” তিনি [‘আয়িশাহ্] বলেন, আমি বললাম, আমি হায়িযগ্রস্তা। তিনি বললেনঃ তোমার হায়িয তো তোমার হাতে নয়।
সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৬৩২], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে ইবনি ‘উমার ও আবু হুরাইরা [রাঃআ:]- এর হাদীসও রয়েছে । আবু ‘ঈসা বলেন, ‘আয়িশাহ্ [রাঃআ:]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ । হায়িযগ্রস্তা নারী মাসজিদ হতে হাত বাড়িয়ে কোন কিছু তুলে আনতে পারে, এ ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০২. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করা অধিক গুনাহের কাজ
১৩৫. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করে অথবা স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে অথবা গনক ঠাকুরের নিকটে যায়- সে মুহাম্মাদ সাল্লল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা [কুরআন] অবিশ্বাস করে।
সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৬৩৯]।আবু ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হতে আবু তামীমা, তাহাঁর হতে হাকীম আল-আসরাম – এই সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই । [আবু তামীমার বিশ্বস্ততা সম্পর্কে কোন কোন হাদীস বিশারদ সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন- অনুবাদক] । মনীষীগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘অবতীর্ণ করা জিনিসের প্রতি অবিশ্বাস করে’-রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা তিরস্কার ও ধমকের সুরে বলেছেন। কেননা উল্লেখিত কাজ করলে কেউ কাফির হয়ে যায় না । রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে এরূপ বর্ণনাও আছে, তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করে সে যেন একটি দীনার [স্বর্ণমুদ্রা] সাদকা করে। ” হায়িযগ্রস্তার সাথে সহবাস করা যদি কুফরীর পর্যায়ভুক্ত হত, তাহলে এর পরিবর্তে সাদকা করার নির্দেশ দেয়া হত না । ইমাম বোখারীও সনদের দৃষ্টিকোণ হতে হাদীসটি য’ঈফ বলেছেন । আবু তামীমা আল-হুজাইমী’র নাম তারীফ ইবনি মুজালিদ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৩. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর সাথে সহবাসের কাফফারা
১৩৬. ইবনি ‘আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে হায়িয চলাকালীন সময়ে সহবাস করে তার সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সে অর্ধ দীনার সাদকা করিবে”।
সহীহ্ – এই শব্দে “এক দীনার বা অর্ধ দীনার” – সহীহ্ আবু দাউদ -[২৫৬], ইবনি মাজাহ-[৬৪০]। হাদীসে বর্ণিত অর্ধ দীনার এই শব্দে হাদীসটি য’ঈফ, য’ঈফ আবু দাউদ-[৪২]। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৩৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেনঃ যখন রক্ত লাল থাকে তখন [সহবাস করলে] এক দীনার, আর যখন রক্ত পীতবর্ণ ধারণ করে তখন অর্ধ দীনার।
জঈফ। এই বিশ্লেষণ সহিহ সনদে মাওকূফ, সহিহ আবু দাউদ-[২৫৮]। আবু ঈসা বলেন, ঋতুবতীর সাথে সহবাস করার কাফফারা সম্পর্কিত হাদীস ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]-এর সূত্রে দুইভাবে অর্থাৎ মাওকূফ এবং মারফূ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ কাফফারা আদায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। ইমাম আহমদ ও ইসহাক এই মতের সমর্থক। ইবনিল মুবারাক বলেন, সহবাসকারীকে কোন কাফফারা দিতে হইবে না, বরং সে আল্লাহ তাআলার নিকটে তাওবা করিবে। কিছু তাবিঈও তাহাঁর অনুরূপ মত দিয়েছেন। সাঈদ ইবনি জুবাইর ও ইবরাহীম নাখঈও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানগণের অভিমত। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১০৪. অনুচ্ছেদঃ কাপড় হতে হায়িযের রক্ত ধুয়ে ফেলা
১৩৮. আসমা বিনতু আবী বাকার সিদ্দীক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক মহিলা নবি [সাঃআ:]-এর নিকট হায়েইযের রক্ত লাগা কাপড়ের বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ আঙ্গুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে তা তুলে ফেল, অতঃপর পানি দিয়ে তা আঙ্গুলের মাধ্যমে মলে নাও, অতঃপর তাতে পানি গড়িয়ে দাও, অতঃপর তা পরে নামায আদায় কর।
সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৬২৯], বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা ও উম্মু ক্বাইস [রাঃআ:]-এর হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, আসমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর এ হাদীসটি হাসান সহিহ। কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগে গেলে তা না ধুয়ে নামায আদায় করা যাবে কি না এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতের অমিল আছে। তাবিঈদের মধ্যে কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যদি কাপড়ের রক্ত এক দিরহাম পরিমাণ হয় এবং তা না ধুয়েই ঐ কাপড় পরেই নামায আদায় করা হয় তাহলে নামায আবার আদায় করিতে হইবে। অপর দল বলেছে, রক্তের পরিমাণ এক দিরহামের বেশি হলেই আবার নামায আদায় করিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী ও ইবনিল মুবারাক একথা বলেছেন। কিছু সংখ্যক তাবেঈ এবং আহমদ ও ইসহাকের মতে রক্তের পরিমাণ এক দিরহামের বেশি হলেও নতুন করে নামায আদায় করিতে হইবে না। ইমাম শাফিঈর মতে, কাপড়ে এক দিরহামের কম পমান রক্ত লাগলেও তা ধুয়ে নেয়া ওয়াজিব। তিনি এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৫. অনুচ্ছেদঃ নিফাসগ্রস্তা নারী কত দিন নামায রোযা থেকে বিরত থাকিবে
১৩৯. উম্মু সালামাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর যুগে নিফাসগ্রস্তা মহিলারা চল্লিশ দিন বসে থাকত। আমরা ওয়ারস ঘাস পিষে তা দিয়ে আমাদের চেহারার দাগ তুলতাম।
হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৬৪৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র আবু সাহলের সূত্রে মুসসাহ আল-আজ দিয়াহ এর বরাতে উম্মু সালামাহ হতে জানতে পেরেছি। ইমাম বোখারী বলেন, আলী ইবনি আবদুল আলা ও আবু সাহল সিক্বাহ রাবী। মুহাম্মাদও [বোখারী] এ হাদীসটি আবু সাহলের সূত্রে জেনেছে। আবু সাহলের নাম কাছীর ইবনি যিয়াদ।নবি [সাঃআ:]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবা, তাবিঈন ও তাহাদের পরবর্তীদের মধ্যে এ ব্যাপারে অভিন্ন মত রয়েছে যে, নিফাসগ্রস্তা মহিলারা চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামায আদায় করিবে না। হ্যাঁ, যদি চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হয়ে যায় তবে গোসল করে নামায শুরু করে দেবে। যদি চল্লিশ দিন পরো রক্তস্রাব চলতে থাকে, তবে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের মতে চল্লিশ দিন পর আর নামায ছাড়া থাকা যাবে না। বেশিরভাগ ফিকহবিদেরও এই ফাতোয়া। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক [এবং ইমাম আবু হানীফাও] এই কথাই বলেছেন। হাসান বাসরী পঞ্চাশ দিন এবং আতা ইবনি আবু রাবাহ ও শাবী ষাট দিন নামায ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন, যদি ঋতুস্রাব চলতেই থাকে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১০৬. অনুচ্ছেদঃ একই গোসলে একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করা
১৪০. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] একই গোসলে তাহাঁর স্ত্রীদের নিকট যেতেন [একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করে একবারেই গোসল করিতেন]।
সহিহ। ইবনি মাজাহ –[৫৮৮], বোখারী ও মুসলিম।এ অনুচ্ছেদে আবু রাফি [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাঃআ:]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। একাধিক বিশেষজ্ঞেই মত দিয়েছে যে, ওযূ না করে দ্বিতীয়বার সহবাস করায় কোন দোষ নেই। হাসান বাসরী তাহাদের অন্তর্ভুক্ত। আনাস [রাঃআ:]-এর এ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ সুফিয়ান হতে, তিনি আবু উরওয়া হতে তিনি আবুল খাত্তাব হতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আর আবু উরওয়া হলেন মামার ইবনি রাশিদ। আবুল খাত্তাব হলেন, কাতাদা ইবনি দিআমাহ। আবু ঈসা বলেন ঃ কেউ কেউ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ হতে, তিনি সুফিয়ান হতে, তিনি ইবনি আবী উরওয়া হত্র, তিনি আবুল খাত্তাব হতে বর্ণনা করিয়াছেন। আর এই বর্ণনাটি ভুল। সঠিক হলো আবু উরওয়া। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৭. অনুচ্ছেদঃ দ্বিতীয় বার সহবাস করিতে চাইলে ওযূ করে নেবে
১৪১. আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর যদি আবার সহবাস করিতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযূ করে নেয়।
সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৫৮৭], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে উমার [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, আবু সাঈদ [রাঃআ:]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। উমার [রাঃআ:]-ও দ্বিতীয় সহবাসের পূর্বে ওযূ করার কথা বলেছেন। বিদ্বানগণ বলেন, কোন ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করিতে চাইলে সে যেন দ্বিতীয়বার সহবাস করার আগে ওযূ করে নেয়। আবু মোতাওয়াক্কিল এর নাম আলী ইবনি দাউদ। আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআ:]-এর নাম সাদ ইবনি মালিক ইবনি সিনান। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৮. অনুচ্ছেদঃ নামায শুরু হওয়ার সময়ে কারো মলত্যাগের প্রয়োজন হলে সে প্রথমে মলত্যাগ করে নেবে
১৪২. হিশাম ইবনি উরওয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
আব্দুল্লাহ ইবনি আল-আরক্বাম সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি [উরওয়া] বলেন, একদা নামাযের ইকামাত হয়ে গেল। তিনি [আব্দুল্লাহ] এক ব্যক্তির হাত ধরে তাকে সামনে ঠেলে দিলেন। তিনি [আব্দুল্লাহ ইবনি আরকাম] স্বীয় গোত্রে ইমাম ছিলেন [নামায শেষে]। তিনি বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]কে বলিতে শুনেছিঃ “নামাযের ইকামাত হয়ে যাওয়ার পর তোমাদের কারো মলত্যাগের প্রয়োজন হলে প্রথমে সে মলত্যাগ করে নেবে। “ সহিহ। ইবনি মাজাহ – [৬১৬]।
এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ, আবু হুরাইরা, সাওবান ও আবু উমামা [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি আরক্বাম [রাঃআ:]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। আব্দুল্লাহ ইবনি আরক্বাম [রাঃআ:]-এর হাদীসটি মালিক ইবনি আনাস ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল ক্বাত্তান আরো অনেকে হিশাম ইবনি উরওয়া হতে তিনি তিনি তার পিতা হতে তিনি জনৈক ব্যক্তি হতে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি আরকাম হতে বর্ণনা করিয়াছেন। নবি [সাঃআ:]-এর কয়েকজন সাহাবা ও তাবিঈর এটাই ফাতোয়া [মলত্যাগের প্রয়োজন আগে সারে নেবে]। ইমাম আহমদ ও ইসহাক এই মত সমর্থন করিয়াছেন এবং বলেছেন, প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুভূত হলে তা না সেরে নামাযে দাঁড়াবে না। হ্যাঁ যদি নামাযশুরু করার পর প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুভূত হয় তবে নামায আদায় করিতে থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত গোলমাল ও বাধা বিঘ্নের সৃষ্টির না হয়। কিছু আলিম বলেছেন, প্রাকৃতিক প্রয়োজনের কারণে যে পর্যন্ত নামাযের মধ্যে অসুবিধা সৃষ্টি না হয়, ততক্ষন পায়খানা-পেশাবের বেগ নিয়ে নামায আদায় করিতে কোন সমস্যা নেই।এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৯. অনুচ্ছেদঃ চলাচলের পথের ময়লা আবর্জনা লাগলে ওযূ করা
১৪৩. আব্দুর রহমান ইবনি আওফের উম্মু ওয়ালাদ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি [উম্মু ওয়ালাদ] বলেন, আমি উম্মু সালামাহ [রাঃআ:]-কে বললাম, আমি আমার কাপড়ের আঁচলের নীচের দিকে লম্বা করে দেই এবং ময়লা-আবর্জনার স্থান দিয়ে চলাচল করি [এর বিধান কি]। তিনি বলিলেন, রাসুলূল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ পরবর্তী পবিত্র জায়গার মাটি এটাকে পবিত্র করে দেয়।
সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৫৩১]। এ হাদীসটি আরো একটি সূত্রে বর্ণীত আছে, এ অনুচ্ছেদে আব্দুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। তিনি বলেন ঃ “আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সাথে নামায আদায় করতাম এবং পথের ময়লা আবর্জনা লাগার কারণে ওযূ করতাম না”। আবু ঈসা বলেন, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মত হল, যদি কোন ব্যক্তি ময়লাযুক্ত যমিনের উপর দিয়ে চলাচল করে তবে তার পা ধয়া ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ ময়লা যদি ভিজা হয় এবং শুকনা না হয় তাহলে ময়লা লাগার জায়গা টুকু ধুয়ে নেবে। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনিল মুবারাক মালিক ইবনি আলাস হতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি উমারাহ হতে তিনি মুহাম্মাদ ইবনি ইবরাহীম হতেতিনি হুদ ইবনি আব্দুর রহমানের উম্মু ওয়ালাদ হতে তিনি উম্মু সালামাহ হতে বর্ণনা করিয়াছেন। এটি বিভ্রাট। হুদ নামে আব্দুর রহমান ইবনি আউফের কোন ছেলে নেই। বরং বর্ণনাটি ইবরাহীম ইবনি আব্দুররহমান ইবনি আউফের উম্মু ওয়ালাদ তিনি উম্মু স্লামাহ হতে বর্ণনা করেছে। এটাই সঠিক। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১০. অনুচ্ছেদঃ তায়াম্মুম সম্পর্কিত হাদীস
১৪৪. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মুখমন্ডল এবং উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত তায়াম্মুম করিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সহিহ। সহিহ আবু দাউদ- [৩৫০, ৩৫৩], বোখারী ও মুসলিম আরো পূর্ণ রূপে বর্ণনা করিয়াছেন। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ ও ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীস রয়েছে, আবু ঈসা বলেন, আম্মার [রাঃআ:]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীসটি আম্মারের নিকট হতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। একাধিক সাহাবী যেমন, আলী, আম্মার ও ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] এবং তাবিঈদের মধ্যে শাবী, আতা ও মাকহূল বলেন, মুখমন্ডল ও উভয় হাতের জন্য একবার মাত্র [তায়াম্মুমের বস্তুর উপর] হাত মারতে হইবে। আহমদ ও ইসহাক এ মত সমর্থন করিয়াছেন। কিছু বিশেষজ্ঞ যেমন, ইবনি উমার [রাঃআ:], জাবির [রাঃআ:], ইবরাহীম নাখঈ ও হাসান বাসরী বলেন, মুখমন্ডলের জন্য একবার হাত মারতে হইবে এবং উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ করিতে একবার হাত মারতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী, মালিক, ইবনিল মুবারাক ও শাফিঈ এ মত সমর্থন করিয়াছেন। আম্মার [রাঃআ:] হতে কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি তায়াম্মুমের ব্যাপারে মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কথা বলেছেন।
আম্মার [রাঃআ:] হতে আরো বর্ণীত আছে, তিনি বলেনঃ আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সাথে কাঁধ ও বগল পর্যন্ত তায়াম্মুম করেছি। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নিকট হতে আম্মার [রাঃআ:] বর্ণিত তায়াম্মুম সম্পর্কিত হাদীসটিকে [যাতে চেহারা ও উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত তায়াম্মুম করিতে বলা হয়েছে] জঈফ বলেছেন। কেননা তিনিই আবার কাঁধ ও বগল পর্জন্ত তায়াম্মুম করার হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। ইসহাক ইবনি ইবরাহীম বলেন, মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত তায়াম্মুম করার হাদীসটি সহিহ। কাঁধ ও বগল পর্যন্ত তায়াম্মুম করার হাদীসটিও সাংঘর্ষিক নয়। কেননা আম্মার [রাঃআ:] এ হাদীসে এরূপ বলেননি যে, নবি [সাঃআ:] তাহাদেরকে এট আকরিতে বলেছে। বরং তিনি নিজের পক্ষ হতে বলেছে, আমরা এরূপ করেছি। তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস্ললামের নিকট তায়াম্মুম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি [সাঃআ:] মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত তায়াম্মুম করার জন্য তাঁকে নির্দেশ দিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর শিক্ষা অনুযায়ী তাহাঁর ইন্তিকালের পর তিনি মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত তায়াম্মুম করার ফাতোয়াই দিতেন। আর এই ফাতোয়া একথারই প্রমাণ যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যেভাবে তায়াম্মুমের শিক্ষা দিয়েছেন ইন্তিকালের পূর্বেও তিনি তাই অনুসরণ করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমি আবু যুরআ উবাইদুল্লাহ ইবনি আব্দুল হাকামকে বলিতে শুনিয়াছি বাসরাতে তিন ব্যক্তির চাইতে অধিক হাফিজ ব্যক্তি দেখিনি। তারা হলেন, আলী ইবনি মাদীনী ইবনিশ শাযাকুনী আমর ইবনি আলী আল-ফাললাস। আবু যুরআ বলেন, আফফান ইবনি মুসলিম আমর ইবনি আলী হতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁকে তায়াম্মুম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওযূর বিধান উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মহান গ্রন্থে বলেছেনঃ
فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إلى المَرَافِقِ
“তোমাদের মুখমন্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর” [সূরা মাইদাঃ ৬]। তিনি তায়াম্মুম প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ
“[মাটির ওপর হাত মেরে তা দিয়ে] নিজেদের মুখমন্ডল ও হাত মাসিহ করে নাও” [সূরা মাইদাঃ ৬]। তিনি [চোরের শাস্তি প্রসঙ্গে] বলেছেনঃ
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيِهْمَا
“চোর পুরুষ হোক আর নারী-উভইয়ের হাত কেটে দাও” [সূরা মাইদাঃ ৩৮]। আর চোরের হাত কাটার সুন্নাত তরীকা হল হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটা। এ হতে জানা গেল হাত বলিতে হাতের কব্জি পর্যন্তই বুঝায়। এজন্য তায়াম্মুমে মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসিহ করিতে হইবে।
সনদ দূর্বল।আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ্ গারীব। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১১১. অনুচ্ছেদঃ নাপাক না হলে যে কোন অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে
১৪৬. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, শরীর নাপাক না হলে রসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদের সর্বাবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করাতেন।
জঈফ, ইবনি মাজাহ [৫৯৪] ইরওয়া [১৯২, ৪৮৫]। আবু ঈসা বলেন, আলী [রাঃআ:]-এর এই হাদীসটি হাসান সহিহ। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- এর একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈনের মতে কোন লোক বিনা ওযূতে মুখস্থ কুরআন তিলাওয়াত করিতে পারে; কিন্তু কুরআন স্পর্শ করে তিলাওয়াত করিতে হলে ওযূ করা প্রয়োজন। সুফিয়ান সাওরী শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক এই মতের সমর্থক। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১১২. অনুচ্ছেদঃ মাটিতে পেশাব লাগলে তার বিধান
১৪৭. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক বিদুইন এসে মাসেজিদে [নবাবীতে] প্রবেশ করলো। নবি [সাঃআ:] তখন [ঐ স্থানে] বসা ছিলেন। লোকটি নামায আদায় করিল। তারপর সে নামায শেষে বলিল,হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর ও মুহাম্মাদের উপর অনুগ্রহ কর; আমদের সাথে আর কাউকে রাহাম কর না। ” রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ“তুমি প্রশস্ত রাহমাতকে সংকীর্ণ করে দিলে। ” লোকটি কিছুক্ষণের মধ্যে মাসজিদে পেশাব করে দিল। লোকেরা দ্রুত তার দিকে এগিয়ে গেল [আক্রমণ করার জন্য]। নবি [সাঃআ:] বললেনঃ “তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তিনি আবার বললেনঃ তোমাদেরকে সহজ পথ অবলম্বনকারী বা দয়াশীল করে পাঠানো হয়েছে; কঠোরতা করার জন্য পাঠানো হয়নি।
সহীহ্। ইবনি মাজাহ-[৫২৯],বোখারী। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:]-ও এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
সহীহ্। সহীহ্ আবু দাউদ-[৪০৫]। এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদ, ইবনি আব্বাস ও ওয়াসিলা ইবনিল আসকা[রাঃআ:] হতেও বর্ণনাকৃত হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। কোন কোন মনীষীর মতে, পেশাবের জায়গাতে পানি ঢেলে দিলে তা পবিত্র হয়ে যায়। আহমদ এবং ইসহাকও এই অভিমত দিয়েছেন। এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হতে অপর একটি সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply