নাবী সাঃ এর নবু্য়্যাত লাভ। মক্কার মুশরিকদের দ্বারা যে দুঃখ জ্বালা ভোগ করিয়াছেন

নাবী সাঃ এর নবু্য়্যাত লাভ। মক্কার মুশরিকদের দ্বারা যে দুঃখ জ্বালা ভোগ করিয়াছেন

নাবী সাঃ এর নবু্য়্যাত লাভ। মক্কার মুশরিকদের দ্বারা যে দুঃখ জ্বালা ভোগ করিয়াছেন >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৩, আনসারগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (২৮-২৯)=২টি

৬৩/২৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর নবু্য়্যাত লাভ।
৬৩/২৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) ও সাহাবীগণ মক্কার মুশরিকদের দ্বারা যে দুঃখ জ্বালা ভোগ করিয়াছেন তার বিবরণ।

৬৩/২৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর নবু্য়্যাত লাভ।

মুহাম্মাদ সাঃআঃ ইবনু আবদুল্লাহ, ইবনু আবদুল মুত্তালিব ইবনু হাশিম ইবনু আবদ মানাফ ইবনু কুসাঈ ইবনু কিলাব ইবনু মুর্রা ইবনু কাব ইবনু লুআই ইবনু গালিব ইবনু ফিহর ইবনু মালিক ইবনু নাযর ইবনু কিনানাহ ইবনু খুযাইমাহ ইবনু মুদরিকাহ ইবনু ইলিয়াস ইবনু মুযার ইবনু নাযার ইবনু মাদ্দ ইবনু আদনান।

৩৮৫১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর উপর যখন (ওয়াহী) নাযিল করা হয় তখন তাহাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। অতঃপর তিনি মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। অতঃপর তাকেঁ হিজরত করার আদেশ দেয়া হয়। তিনি হিজরত করে মদীনায় চলে গেলেন এবং সেখানে দশ বছর অবস্থান করিলেন, তারপর তাহাঁর (সাঃআঃ) মৃত্যু হয়।

(আঃপ্রঃ ৩৫৬৪, ইঃফাঃ ৩৫৬৯)

৬৩/২৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) ও সাহাবীগণ মক্কার মুশরিকদের দ্বারা যে দুঃখ জ্বালা ভোগ করিয়াছেন তার বিবরণ।

৩৮৫২

খাববাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

খাববাব (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) নিকট হাযির হলাম। তখন তিনি তাহাঁর নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কাবা গৃহের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করছিলেন। আমরা মুশরিকদের পক্ষ হইতে কঠিন নির্যাতন ভোগ করছিলাম। তাই আমি বললাম, আপনি কি আল্লাহর কাছে দুআ করবেন না? তখন তিনি উঠে বসলেন এবং তাহাঁর চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বলিলেন, তোমাদের পূর্বের ঈমানদারদের মধ্যে কারো কারো শরীরের হাড় পর্যন্ত তামাম গোশত ও শিরা উপশিরাগুলি লোহার চিরুণী দিয়ে আঁচড়ে বের করে ফেলা হত। কিন্তু এসব নির্যাতনও তাদেরকে দ্বীন হইতে বিমুখ করিতে পারত না। তাঁদের মধ্যে কারো মাথার মাঝখানে করাত রেখে তাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হত। কিন্তু এ নির্যাতনও তাঁদেরকে তাঁদের দ্বীন হইতে ফিরাতে পারত না। আল্লাহর কসম, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দ্বীনকে পরিপূর্ণ করবেন, ফলে একজন উষ্ট্রারোহী সানআ হইতে হাযারা মাউত পর্যন্ত একাই সফর করিবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সে ভয় করিবে না। বারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বেশি বর্ণনা করেন – এবং তার মেষ পালের উপর নেকড়ে বাঘের আক্রমণ ছাড়া অন্য কোন ভয় সে করিবে না।

(আঃপ্রঃ ৩৫৬৫, ইঃফাঃ ৩৫৭০)

৩৮৫৩

আবদুল্লাহ [ইবনু মাসউদ (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সুরা আন-নাজ্‌ম তিলাওয়াত করে সাজদাহ করিলেন। তখন এক ব্যক্তি ছাড়া সকলেই সাজ্‌দাহ করিলেন। ঐ ব্যক্তিকে আমি দেখলাম, সে এক মুষ্ঠি কাঁকর তুলে নিয়ে তার উপর সাজ্‌দাহ করিল এবং সে বলিল, আমার জন্য এমন সাজ্‌দাহ করাই ষথেষ্ট। [আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন] পরবর্তী সময়ে আমি তাকে কাফির অবস্থায় নিহত হইতে দেখেছি।

(আঃপ্রঃ ৩৫৬৬, ইঃফাঃ ৩৫৭১)

৩৮৫৪

আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) সাজদাহ করিলেন। তাহাঁর আশেপাশে কয়েকজন কুরাইশ লোক বসেছিল এমন সময় উকবা ইবনু আবু মুয়াইত উটের নাড়িভূঁড়ি নিয়ে উপস্থিত হল এবং নাবী (সাঃআঃ)- এর পিঠের উপর চাপিয়ে দিল। ফলে তিনি তাহাঁর মাথা উঠাতে পারলেন না। ফাতিমাহ (রাদি.) এসে তাহাঁর পিঠের উপর হইতে তা হটিয়ে দিলেন এবং যে এ কাজটি করেছে তার জন্য বদ দূআ করিলেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহ! পাকড়াও কর কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে – আবু জাহাল ইবনু হিশাম, উৎবা ইবনু রাবিয়াহ, শায়বাহ ইবনু রাবিয়াহ, উমাইয়াহ ইবনু খালফ অথবা উবাই ইবনু খালাফ। উমাইয়াহ ইবনু খালফ না উবাই ইবনু খালফ এ বিষয়ে শুবা রাবী সন্দেহ করেন। (ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেন, আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধে নিহত অবস্থায় দেখেছি। উমাইয়া অথবা উবাই ছাড়া তাদের সকলকে সে দিন একটি কূপে ফেলা হয়েছিল। তার জোড়গুলি এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল যে তাকে কূপে ফেলা যায়নি।

(আঃপ্রঃ ৩৫৬৭, ইঃফাঃ ৩৫৭২)

৩৮৫৫

সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আবযা (রাদি.) একদিন আমাকে আদেশ করিলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) কে আয়াত দুটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর, এর অর্থ কী? আয়াতটি হল এই “আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করিবে না।” (আল ফুরকানঃ ৬৮) এবং “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে।” (আন নিসাঃ ৯৩) আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করলাম তখন তিনি বলিলেন, যখন সুরা আল-ফুরকানের আয়াতটি নাযিল করা হল তখন মক্কার মুশ্‌রিকরা বলিল, আমরা তো মানুষকে হত্যা করেছি যা আল্লাহ হারাম করিয়াছেন এবং আল্লাহর সাথে অন্যকে মাবুদ হিসেবে শরীক করেছি। আরো নানা রকম অশ্লীল কাজ কর্ম করেছি। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন, “কিন্তু যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে….” (আল ফুরকানঃ ৭০) সুতরাং এ আয়াতটি তাদের জন্য প্রযোজ্য। আর সুরা নিসার যে আয়াতটি রয়েছে তা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে ইসলাম ও তার বিধি-বিধানকে জেনে বুঝে কবুল করার পর কাউকে (ইচ্ছাকৃত) হত্যা করেছে। তখন তার শাস্তি জাহান্নাম। তারপর মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে আমি এ বিষয় জানালাম। তিনি বলিলেন, তবে যদি কেউ অনুশোচনা করে …।

(আঃপ্রঃ ৩৫৬৮, ইঃফাঃ ৩৫৭৩)

৩৮৫৬

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাদি.) এর নিকটে বললাম, মক্কার মুশরিক কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে সর্বাপেক্ষা কঠোর আচরণের বর্ণনা দিন। তিনি বলিলেন, একদিন নাবী (সাঃআঃ) কাবা শরীফের হিজর নামক স্থানে সলাত আদায় করছিলেন। তখন উকবাহ ইবনু আবু মুয়াইত এল এবং তার চাদর দিয়ে নাবী (সাঃআঃ) – এর কন্ঠনালি পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলল। তখন আবু বকর (রাদি.) এগিয়ে এসে উকবাহকে কাঁধে ধরে নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট হইতে হটিয়ে দিলেন এবং বলিলেন, “তোমরা এমন লোককে হত্যা করিতে চাও যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই আমার রব।”

(আঃপ্রঃ ৩৫৬৯, ইঃফাঃ ৩৫৭৪)

Comments

Leave a Reply