নবী [সাঃ] এর বানী- আমরা নবীগন কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না
নবী [সাঃ] এর বানী- আমরা নবীগন কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১৬. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ] এর বানী- আমরা নবীগন কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই সদাকাহ [বাইতুল মাল]
৪৪৭১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন নবী [সাঃআঃ] এর ইন্তিকাল হলো, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সহধর্মিণীগন উসমান [রাদি.] -কে আবু বাকর [রাদি.] এর নিকট পাঠাতে মনস্থ করিলেন, যেন তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছ থেকে তাঁদের মীরাস তলব করেন। তখন আয়েশাহ [রাদি.] তাঁদের বলিলেন, নবী [সাঃআঃ] কি এ কথা বলে যাননি যে, আমরা [নবীগণ] সম্পত্তিতে কাউকে ওয়ারিস রেখে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হইবে সদাকাহ সর্বসাধারনের জন্য।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২৯]
৪৪৭২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ফাতিমাহ বিনতু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবু বাকর-এর নিকট লোক পাঠালেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সম্পদে তাহাঁর মীরাস এর দাবী করে, যা আল্লাহ তাআলা তাকে মাদীনাহ ও ফিদাক-এর ফাই এবং খাইবারের অবশিষ্ট এক পঞ্চমাংশ থেকে প্রদান করিয়াছেন। তখন আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলে গিয়েছেন- আমরা আমাদের [নবীগনের] পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে কাউকে ওয়ারিস রেখে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হয় সদাকাহ [বাইতুল মাল]। মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর পরিবারবর্গ তা থেকে জীবিকা গ্রহন করবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এর সময়কালে সদাকাহর যে অবস্থা চালু ছিল, তা আমি পরিবর্তন করব না। আর এতে আমি নিশ্চয়ই সে কাজ করবো, যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] করে গিয়েছেন। অতএব, আবু বাকর [রাদি.] ফাতিমাহ [রাদি.]-কে তা থেকে কিছু প্রদান করিতে অস্বীকার করিলেন। সুতরাং ফাতিমাহ [রাদি.] এতে রাগান্বিত হয়ে তাঁকে পরিত্যাগ করিলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাহাঁর সঙ্গে কোন কথা বলেননি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এরপর যখন তিনি ইন্তিকাল করিলেন, তখন তার স্বামী আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] তাকে রাতে দাফন করিলেন এবং ফাতিমাহ-এর মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত আবু বাকর [রাদি.]-কে দেননি। আলী [রাদি.] তাহাঁর জানাযার নামাজ আদায় করিলেন। ফাতিমাহ [রাদি.]-এর জীবিতকাল পর্যন্ত আলী [রাদি.]-এর প্রতি জনগণের বিশেষ মর্যাদাবোধ ছিল। এরপর যখন তাহাঁর ইন্তিকাল হলো তখন তিনি লোকের চেহারায় অপছন্দনীয় ভাব দেখিতে পেলেন। অতএব তিনি আবু বাকর [রাদি.]-এর সঙ্গে ফায়সালা করে তাহাঁর বাইআতের প্রার্থনা করিলেন। কেননা তিনি ঐ মাসগুলোতে তার বাইআত গ্রহন করেননি। তারপর আলী [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.]-এর নিকট লোক পাঁঠিয়ে সংবাদ দিলেন যে, আপনি একাকী আমার সাথে সাক্ষাৎ করুন। আপনার সাথে অন্য কাউকে আনবেন না। কেননা, তিনি উমর [রাদি.]-এর আগমন কে অপছন্দ করছিলেন। উমর [রাদি.] আবু বাকরকে বলিলেন, আল্লাহর কসম! আপনি একাকী তাঁদের কাছে যাবেন না। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, আমি আশংকা করিনি যে, তাঁরা আমার সাথে কিছু করবেন। আল্লাহর কসম! আমি একাকীই যাব। পরিশেষে আবু বাকর [রাদি.] তাঁদের কাছে গেলেন। এরপর আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] তাশাহহুদ {তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য বাণী} পাঠ করিলেন, তারপর বলিলেন, হে আবু বাকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে সম্মান প্রদান করিয়াছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে নিআমাত প্রদান করিয়াছেন, তাতে আমাদের কোন হিংসা নেই। কিন্তু আপনি আমাদের উপেক্ষা করে খিলাফাতের দায়িত্বভার গ্রহন করিয়াছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর আত্মীয়ের কারণে আমরা মনে করতাম যে, আমাদেরও অধিকার আছে। আবু বাকরের সঙ্গে তিনি এভাবে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরিশেষে আবু বাকর [রাদি.]-এর দুচোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হলো। এরপর যখন আবু বাকর [রাদি.] কথা বলিতে শুরু করিলেন, তখন তিনি বলিলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর শপথ করে বলছি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আত্মীয়ের প্রতি উত্তম আচরণ করা আমার কাছে অধিক প্রিয় আমার নিজ আত্মীয়ের প্রতি ভাল আচরণের চেয়েও। তবে আমার এবং আপনাদের মধ্যে এ সম্পদ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তাতে আমি সত্য পরিহার করব না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এতে যা করিতে দেখেছি তা আমি পরিত্যাগ করব না। এরপর আলী [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.]-কে বলিলেন যে, আমি বাইআতের জন্য আপনাকে আজ বিকাল বেলায় কথা দিলাম। যখন আবু বাকর [রাদি.] যুহরের নামাজ শেষ করিলেন তখন তিনি মিম্বারে আরোহণ করিলেন এবং তাশাহহুদ পাঠ করিলেন। এরপর তিনি আলী [রাদি.]-এর ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তাহাঁর বাইআত গ্রহণে বিলম্ব ও এ বিষয়ে তাহাঁর ওযর বর্ণনা করেন, যা তার কাছে বর্ণনা করা হয়েছিল। এরপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারপর আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] তাশাহহুদ পাঠ করিলেন এবং আবু বাকর [রাদি.]-এর মহত্ত্ব বর্ণনা করিলেন। আর তিনি ব্যক্ত করিলেন যে, তিনি যা করিয়াছেন, তা আবু বাকর [রাদি.]-এর প্রতি হিংসা পোষণ করে নয়। আর না আছে আমাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত কোন সম্মান ও নিআমাতের অস্বীকৃতি। বরং আমরা মনে করতাম যে, খিলাফাতের মধ্যে আমাদেরও অংশ আছে। কিন্তু আবু বাকর [রাদি.] আমাদের উপেক্ষা করে এ কাজের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এতে আমরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি। এ কথা শুনে মুসলিমগণ আনন্দিত হলেন এবং তাঁরা বলিলেন যে, আপনি তা ঠিক বলেছেন। তখন তিনি কল্যাণের প্রতি ফিরে এলেন অর্থাৎ- তখন মনোমালিন্যের অবসান হলো এবং আবু বাকর [রাদি.] এর বাইআত গ্রহন করা হলো, তখন থেকে মুসলিমগণ আলী [রাদি.]-এর সংস্পর্শে আসতে লাগলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩০]
৪৪৭৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ফাতিমাহ এবং আব্বাস [রাদি.] উভয়েই আবু বাকর [রাদি.]-এর নিকট আগমন করিলেন, তখন তারা উভয়ে ফেদাকের ভূমি ও খাইবারের প্রাপ্য অংশ দাবী করিলেন। তখন আবু বাকর [রাদি.] উভয়কেই বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি… এরপর যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে উকায়ল কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মর্মার্থের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন। কিন্তু তিনি তাছাড়া এতে বর্ণনা করিলেন যে, এরপর আলী [রাদি.] দাঁড়ালেন এবং আবু বাকর [রাদি.] এর যোগ্যতা ও মর্যাদা বর্ণনা করিলেন এবং তার সর্বকাজে উল্লেখ করিলেন। এরপর তিনি আবু বাকর [রাদি.]-এর কাছে গেলেন এবং তার অগ্রগামীরা বাইআত গ্রহন করিলেন। তারপর জনগন আলী [রাদি.] এর নিকট এসে বলিলেন, আপনি ঠিকই করিয়াছেন, আপনি ভালই করিয়াছেন। যখন আলী [রাদি.] কল্যাণকর ব্যবস্থার নিকটবর্তী হলেন, তখন লোকজনও তার সংস্পর্শে আসতে লাগলো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩১]
৪৪৭৪. নবী [সাঃআঃ] এর সহধর্মিণী আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ইন্তিকালের পর আবু বাকর [রাদি.] এর নিকট রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পরিত্যক্ত সম্পত্তির যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন নিজের প্রাপ্য অংশ দাবী করেন। তখন আবু বাকর [রাদি.] তাকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমরা [নবীগণ] সম্পত্তিতে কাউকে উত্তরাধিকার রেখে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হইবে সদাকাহ।
আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ইন্তিকালের পর ফাতিমাহ [রাদি.] ছয় মাস জীবিত ছিলেন। ফাতিমাহ [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.] এর নিকট তার সে প্রাপ্য অংশ চেয়েছিলেন- যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাইবার, ফিদাক, এবং মাদীনার [সদাকাহ] দান করে রেখে গিয়েছেন। আবু বাকর [রাদি.] তাকে তা প্রদান করিতে অস্বীকার করিলেন এবং বলিলেন, আমি এমন কোন কাজ ছেড়ে দেব না যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] করিতেন। কেননা, আমি ভয় করি যে, যদি তার কোন কাজ পরিত্যাগ করি, তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো। তবে হ্যাঁ, মাদীনার [সদাকার ] দানের মাল উমর [রাদি.] তার সময়ে আলী এবং আব্বাসকে প্রদান করেছিলেন। কিন্তু আলী [রাদি.] একাকীই সে সম্পদ অধিকার করে নেন। আর খাইবার এবং ফিদাকের সম্পদ উমর [রাদি.] নিজের দায়িত্বে রাখলেন এবং বলিলেন, এ ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয়ের জন্য। এ দুটো সম্পদের দায়িত্ব থাকে মুসলিমদের আমীরের উপর। বর্ণনাকারী বলেন, এ উভয় সম্পদের বন্টন ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত তদ্রূপই আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩২]
৪৪৭৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার পরিত্যক্ত সম্পদের এক দিনারও বন্টিত হইবে না। আমি যা রেখে যাই তা থেকে আমার স্ত্রীগনের ব্যয় নির্বাহ এবং রাষ্ট্রীয় পরিচালকের বেতন ভাতার পর যা অবশিষ্ট থাকিবে, তা হইবে সদাকাহ বা দান।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৩১,ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩৩]
৪৪৭৬. আবু যিনাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৩২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩৪]
৪৪৭৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমরা কাউকে উত্তরাধিকারী করে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হইবে সদাকাহ বা দান।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩৫]
Leave a Reply