নফল নামাজের মাসআলা , কিয়ামে রমাযান ও কিরাত পাঠ করা
নফল নামাজের মাসআলা , কিয়াম করা ও কিরাত পাঠ করা >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, নবম অনুচ্ছেদ : নফল নামাজ
ফজরের পূর্বে দু-রাকাআত, যুহরের পূর্বে চার রাকাআত এবং তারপরে দুরাকাআত এবং আসরের পূর্বে চার রাকাআত, তবে ইচ্ছা করিলে দুই রাকাআত এবং মাগরিবের পরে দুই রাকাআত এবং ‘ঈশার পূর্বে চার রাকাআত এবং ঈশার পরে চার রাকাআত, তবে ইচ্ছা করিলে দুই রাকাআত সুন্নাত।
এ সম্পর্কে মূল সূত্র হলো রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর হাদিস-
যে ব্যক্তি দিনে ও রাত্রে বার রাকাআত (সুন্নাত নামাজ) নিষ্ঠার সাথে আদায় করবে আল্লাহ পাক তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।
এরপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঐ ভাবেই তাফসীর করেছেন, যেভাবে (মাবসূত) কিতাবে বর্ণীত হইয়াছে। তবে আসরের পূর্ববর্তী চার রাকাআতের কথা হাদিসে নেই। এ কারণে (মুহাম্মাদ ইবনূল হাসান (রঃআঃ) আল-আসল কিতাবে এটাকে (সুন্নতের পরিবর্তে) ‘উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। এবং (চার রাকাআত) পড়া না পড়ায় ইখতিয়ার দিয়েছেন। কেননা এ সম্পর্কে হাদিস বিভিন্ন রকমের রহিয়াছে। তবে চার রাকাআতই উত্তম। ঈশার পূর্ববর্তী চার রাকাআতের কথা উল্লেখ করা হয় নি। এজন্যই নিয়মিতি না থাকার কারণে এটাকে মুসতাহাব ধরা হইয়াছে। তদ্রুপ আলোচ্য হাদিসে ‘ ঈশার পরে দুই রাকাআতের কথা বলা হইয়াছে। পক্ষান্তরে অন্য হাদিসে চার রাকাআতের কথা বলা হইয়াছে। এ জন্যই ইমাম কুদূরী ‘ইচ্ছা করিলে বলেছেন। তবে চার রাকাআতই উত্তম। বিশেষতঃ আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর সুপরিচিত মত অনুসারে। (কেননা তার মতে রাত্রে এক সালামে চার রাকাআত আদায় উত্তম)। ( নফল নামাজের মাসআলা )
আর যুহরের পূর্বের চার রাকাআত আমাদের মতে এক সালামে আদায় উত্তম। যেমন (আবূ দাঊদ বর্ণীত হাদিসে) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) (আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃআঃ) কে বলেছেন। এ বিষয়ে শাফিঈ (রঃআঃ) এর দ্বিমত রহিয়াছে।
ইমাম কুদূরী বলেন, দিনের ইচ্ছা করিলে এক সালামে দুই রাকাআত আদায় করবে আর ইচ্ছা করিলে চার রাকাআত আদায় করবে। এর বেশী আদায় করা মাকরূহ হবে। আর রাত্রের নফল সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) বলেছেন, এক সালামে আট রাকাআত পর্যন্ত আদায় করা জাইয। কিন্তু এর বেশী মাকরূহ। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেছেন- রাত্রে এক সালামে দুই রাকাআতের বেশী আদায় করবে না।
জামেউস সগীর কিতাবে রাত্রের নফলের ক্ষেত্রে আট রাকাআতের উল্লেখ নেই। ছয় রাকা্আতের কথা আছে। মাকরূহ হওয়ার দলিল এই যে, নাবী করিম (সাঃআঃ) এর বেশী আদায় করেননি। যদি মাকরূহ না হতো তাহলে বৈধতার বিষয়টি শিক্ষাদানের জন্য অবশ্যই তিনি বেশী আদায় করিতেন।
আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে রাত্রে দুই রাকাআত করে পড়া আর দিনে চার রাকাআত করে আদায় করা উত্তম। পক্ষান্তরে ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর মতে উভয় ক্ষেত্রেই দুই রাকাআত করে আদায় করা উত্তম। আর ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে উভয় ক্ষেত্রেই চার রাকাআত করে আদায় করা উত্তম।
শাফিঈ (রঃআঃ) এর দলিল হলো রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর হাদিস- রাত্র ও দিনের নামাজ দুই রাকাআত করে।
ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) তাহারাবীহের উপর কিয়াস করেন। আর ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর প্রমাণ এই যে, নাবী (সাঃআঃ) ‘ঈশার পর চার রাকাআত পড়তেন। ‘আঈশা (রাঃআঃ) এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (আবূ দাঊদ) তাছাড়া চাশতের সময় নিয়মিত চার রাকাআত পড়তেন।
তাছাড়া এতে তাহরীমা দীর্ঘতর হয়। সুতরাং তা অধিক কষ্টকর হবে এবং অধিক ফযীলতপূর্ণ হবে। এ কারণেই কেউ যদি এক নামাজে চার রাকাআত নামায পড়ার মান্নত করে থাকে তবে দুই সালামে নামায পড়া দ্বারা মান্নত থেকে মুক্ত হবে না। পক্ষান্তরে বিপরীত ক্ষেত্রে দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে।
(তাহারাবীহ –এর উপর সাধারণ নফলকে কিয়াস করা ঠিক নয়) কেননা তাহারাবীহ জামাআতের সাথে আদায় করা হয়। সুতরাং তাতে সহজ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হইয়াছে।
আর ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বর্ণীত হাদিসের অর্থ হলো জোড় রাকাআত আদায় করিতেন বেজোড় রাকাআত আদায় করিতেন না। আল্লাহই উত্তম জানেন।
পরিচ্ছেদঃ কিরাত সংক্রান্ত
ফরয নামাজের দুই রাকাআতে কিরাআত ওয়াজিব
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) সকল রাকাআতে ওয়াজিব বলেন। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- কিরাত ছাড়া নামাজ শুদ্ধ নয়। আর প্রতিটি রাকাআতঈ নামাজ। ইমাম মালিক (রঃআঃ) তিন রাকাআতে কিরাত ফরয বলেন। সহজ করার নিমিত্ত অধিকাংশকে সমগ্রের তুল্য মনে করেন।
আমাদের দলিল হলো আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- কুরআনের যতটুকু সহজ হয় পাঠ কর। আর কোন কাজের আগে পুনরাবৃত্তির দাবী রাখে না। তবে দ্বিতীয় রাকাআতে আমরা কিরাত ওয়াজিব করেছি প্রথম রাকাআতের সাথে তুলনা করে। কেননা উভয় রাকাআত সকল দিক থেকে সদৃশ। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দুই রাকাআতের পার্থক্য রহিয়াছে প্রথম দুই রাকাআত থেকে। সফর বাইর হওয়ার এবং কিরাতের গুণে (উচ্চৈস্বরে নীরব
পড়ার ব্যাপারে) এবং কিরাতের পরিমাণের ব্যাপারে।দ্বিতীয় দুই রাকাআত প্রথম দুই রাকাআতের সাথে মিলিত হবে না।
আর শাফিঈ (রঃআঃ) বর্ণীত হাদিসে নামাজ শব্দটি সুস্পষ্ট রূপে উল্লেখিত হইয়াছে। সুতরাং তা পূর্ণ নামাজের উপর প্রযোজ্য হবে। আর তা সাধারণ ব্যবহারে দুই রাকাআতই হয়। যেমন কেউ কোন নামাজ আদায় করবেন বলে শপথ করল (এতে দুই রাকাআত পড়লেই শপথ ভঙ্গ হবে)। পক্ষান্তরে যদি শপথ করে যে, সে ‘নামাজ আদায় করবে না (এতে এক রাকাআত পড়লেও সে শপথভঙ্গকারী হবে)। ( নফল নামাজের মাসআলা )
শেষ দুই রাকাআতে সে তার ইচ্ছার উপর ন্যস্ত। অর্থাত্ ইচ্ছা করিলে সে নীরব থাকবে। ইচ্ছা করিলে কিরাত পড়বে। আবার ইচ্ছা করিলে তাসবীহ পাঠ করবে। আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে এরূপই বর্ণীত হইয়াছে। আলী (রাঃআঃ) ইবন মাসঊদ ও ‘আইশা (রাঃআঃ) থেকে এ-ই বর্ণীত হইয়াছে। তবে কিরাত পড়াই উত্তম। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) (প্রায় সর্বদাই এরূপ করেছেন) একারণেই জাহিরী রিওয়ায়াত মতে তা তরক করার কারণে সাজদা সাহু ওয়াজিব হয় না।
নকলের সকল রাকাআতে এবং বিতরের সকল রাকাআতে কিরাত ওয়াজিব।
নফলে ওয়াজিব হওয়ার কারণ এই যে, নফলের প্রতি দুই রাকাআত আলাদা নামাজ বিশিষ্ট। এবং তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাড়ানো নতুন তাহরীমা বাধার সমতুল্য। একারণেই আমাদের ইমামদের প্রসিদ্ধ মতে প্রথম তাহরীমা দ্বারা দুই রাকাআতই শুধু ওয়াজিব হয়। তাই ফকীহ্গণ বলেছেন যে, তৃতীয় রাকাআতে (প্রথম রাকাআতের ন্যায়) ছানা পড়বে। অর্থাত্ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা পড়বে। আর বিতরে ওয়াজিব করা হইয়াছে সতর্কতার দৃষ্টিকো্ণে।
ইমাম কুদুরী (রঃআঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নফল শুরু করে তা ভেঙ্গে ফেলে, তবে তা কাযা করবে। আর ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, তার উপর কাযা ওয়াজিব নয়। কেননা, সে তা স্বেচ্ছায় আরম্ভ করেছে। আর সে স্বেচ্ছায় কিছু করে, তার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয় না। আমাদের দলিল এই যে, আদায়কৃত অংশটুকু ইবাদতে গণ্য হইয়াছে। সুতরাং তা পূর্ন করা অনিবার্য। যেহেতু আমলকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা জরুরী।
যদি চার রাকাআত নামাজ শূরু করে এবং প্রথম দুই রাকা্আতে কিরাত পড়ে ও বৈঠক করে, এরপর শেষ দুই রাকাআত নষ্ট করে ফেলে তবে দুই রাকাআত কাযা করবে। কেননা, প্রথম দুরাকাআত পূর্ণ হয়ে গেছে। আর তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাড়ানো নতুনভাবে তাহরীমা করার সমতুল্য। সুতরাং তা সে ওয়াজিব করে নিয়েছে।
এ হুকুম তখনকার জন্য, যখন শেষ দুই রাকাআত শুরু করার পর নষ্ট করে। আর যদি দ্বিতীয় দুরাকাআত শুরু করার আগেই নষ্ট করে ফেলে তবে শেষ দুরাকাআত কাযা করবে না।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, নামাজ শুরু করাকে মান্নতের উপর কিয়াস করে চার রাকাআত কাযা করবে।
ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, আরম্ভ অবশ্য পালনীয় করে ঐ অংশকে, যা আরম্ভ করা হইয়াছে এবং যে অংশ ছাড়া ঐ কর্ম শূদ্ধ হয় না। আর প্রথম দুই রাকাআতের শুদ্ধতা দ্বিতীয় অংশের সাথে সম্পৃক্ত নয়। দ্বিতীয় রাকাআতের বিষয়টি এর বিপরীত। যুহরের সুন্নাত সম্পর্কেও একই মতভিন্নতা। কেননা, মূলতঃ এটা নফল কোন কোন মতে সতর্কতা হিসাবে চার রাকাআতই কাযা করবে। কেননা তা সম্পূর্ণ একই নামাজ হিসাবে গণ্য।
আর যদি কেউ চার রাকাআত (নফল নামাজ) আদায় করিলেন আর তাতে কোন কিরাত পড়ল না, তবে সে দুই রাকাআতই দোহরাবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ)এর মত। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ)এর মতে চার রাকাআত কাযা করবে।
এ মাসআলা আট প্রকারের। মাসাআলার মূল কথা এই যে, মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে প্রথম দুই রাকাআতে কিংবা দুই রাকাআতের যে কোন একটিতে কিরাআত তরক করা তাহরীমাকে বাতিল করে দেয়। কেননা তাহরীমা বাধা হয় কর্ম সম্পাদনের জন্য।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে প্রথম দুই রাকাআতে কিরাতে তরক করা তাহরীমাকে বাতিল করে না, বরং নামাজ আদায় হও্রয়াকে ফাসিদ করে। কেননা কিরাত হলো নামাজের অতিরিক্ত রুকন। দেখূন না কিরাত ছাড়াও নামাজের অস্তিত্ব হয়ে যায়। যেমন (বোবা মানুষের) তবে কিরাতে ছাড়া নামাজ আদায় বিশুদ্ধ নয়। আ আদায় ফাসিদ হওয়া রুকন তরক করার চেয়ে গুরুতর নয়। সুতরাং তাহরীমা বাতিল হবে না। ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে প্রথম দুই রাকাআতে কিরাত তরক করা তাহরীমাকে বাতিল করে দেয় কিন্তু দুই রাকাআতের শুধু এক রাকাআতে তরক করা বাতিল করে না। কেননা প্রতি দুই রাকাআত স্বতন্ত্র নামায। আর এক রাকাআতে কিরাত তরফ করার কারণে নামায নষ্ট হওয়া বিতর্কিত বিষয়। তাই সতর্কতা অবলম্বনে আমরা কাযা ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে নামায নষ্ট হওয়ার রায় দিয়েছি। আর দ্বিতীয় রাকাআতদ্বয় আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে তাহরীমা অব্যাহত থাকার রায় দিয়েছি। ( নফল নামাজের মাসআলা )
এই মূলনীতি সাব্যস্ত হওয়ার পর আমাদের বক্তব্য হলো; কোন রাকাআতেই যকি কিরাত না পড়ে থাকে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে দুই রাকাআত কাযা করবে। কেননা প্রথম রাকাআতদ্বয়ে কিরাত তরক করার কারণে তাহাদের মতে তাহরীমা বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং দ্বিতীয় রাকাআতদ্বয় শুরূ করা শূদ্ধ হয়নি। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে তাহরীমা অব্যাহত আছে। সুতরাং দ্বিতীয় রাকাআতদ্বয় শুরু করা শূদ্ধ হইয়াছে। অতঃপর যেহেতু কিরাত তরফ করার কারণে পুরা নামায ফাসিদ হয়ে গেছে, সেহেতু তার মতে চার রাকাআতই কাযা করিতে হবে।
যদি শূধু প্রথম দুই রাকাআতে কিরাত পড়ে থাকে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে শেষ দুই রাকাআত কাযা করবে। কেননা তাহরীমা বাতিল হয়নি। সুতরাং দ্বিতীয় রাকাআতদ্বয় শুরু করা শূদ্ধ হইয়াছে। অতঃপর কিরাত তরক করার কারণে তা ফাসিদ হওয়া প্রথম রাকাআদ্বয়ের ফাসিদ হওয়াকে সাব্যস্ত করে না।
যদি শুধু শেষ দুই রাকাআতে কিরাত পড়ে থাকে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম দুই রাকাআত কাযা করা ওয়াজিব হবে। কেননা ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে দ্বিতীয় অংশ করা শুদ্ধ হয়নি।
পক্ষান্তরে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে শুরু যেহেতু শূদ্ধ হইয়াছে, তেমনি তা আদায়ও হইয়াছে।
যদি প্রথম দুই রাকাআত এবং দ্বিতীয় রাকাআতদ্বয়ের এক রাকাআতে কিরাত পড়ে থাকে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে শেষ দুই রাকাআত তাকে কাযা করিতে হবে। আর যদি শেষ দুই রাকাআতে এবং রাকাআতদ্বয়ের এক রাকাআতে কিরাত পড়ে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম দুই রাকাআত কাযা করিতে হবে। আর যদি উভয় অংশের এক রাকাআত কাযা করবে। আবূ হানীফা (রঃআঃ)এর মতও তাই। কেননা তাহরীমা অব্যাহত রহিয়াছে। মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে প্রথম দুই রাকাআত কাযা করিতে হবে। কেননা (প্রথম রাকাআতদ্বয়ের এক রাকাআতে কিরাত তরফ করার কারণে) তার মতে তাহরীমা রহিত হয়ে অস্বীকার করেছেন। (ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) কে সম্বোধন করে) তিনি বলেছেন, আমি তোমাকে আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর পক্ষ হতে এ বর্ণনা শূনিয়েছি যে, তাকে দুই রাকাআত কাযা করিতে হবে। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর পক্ষ হতে তার এ বর্ণনা প্রত্যাহার করেন নি।
যদি শুধু প্রথম রাকাআতদ্বয়ের এক রাকাআতে কিরাত পড়ে তাহলে বড় ইমামদ্বয়ের মতে চার রাকা্আত কাযা করবে। আর মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে দুই রাকাআত কাযা করবে। আর দ্বিতীয় এক রাকাআতে কিরাত পড়ে তাহলে আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে চার রাকাআত কাযা পড়বে। আর ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ)এর মতে দুই রাকাআত কাযা করবে।
ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর হাদিস কোন নামাজের পর অনুরূপ নামাজ পড়বে না।
এর অর্থ হলো, দুই রাকা্আত কিরাতসহ পড়া এবং দুই রাকাআত কিরাত ছাড়া পড়া। সুতরাং এ হাদিস দ্বারা নফলের সকল রাকাআতে কিরাত ফরয হওয়া বয়ান করা উদ্দেশ্য। ( নফল নামাজের মাসআলা )
দাড়ানোর সার্মথ্য থাকা সত্ত্বেও বসে নফল পড়তে পারে। কেননা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন-
বসা অবস্থায় নামাযের সাওয়াব দাড়ানো অবস্থার নামাযের অর্ধেক।
তাছাড়া নামায হলো শ্রেষ্ঠ ইবাদত, যা সর্বসময়ে আদায়যোগ্য। অথচ মাঝেমধ্যে দাড়ানো তার জন্য কষ্টকর হতে পারে। তাই কিয়াম তরক করা তার জন্য জাইয হবে যাতে নামায পড়া থেকে (শূধূ এই কারণে) বিরত না হয়।
বসার ধরন সম্পর্কে আলিমগণ মতভিন্নতা পোষণ করেন। তবে পসন্দনীয় (ও ফাতওয়া রূপে গৃহীত) মত এই যে, তাশাহুদে যেভাবে বসা হয় সেভাবে বসবে। কেননা এটা নামাযে বসার সুন্নাত তরীকা রূপে পরিচিত।
যদি দাড়ানো অবস্থায় নামাজ শূরু করে তারপর ওযর ছাড়া বসে পড়ে তবে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে জাইয হবে।
এটা হলো সূক্ষ কিয়াস। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে জাইয হবে না। এটা হলো সাধারণ কিয়াস। কেননা আরম্ভ করা মান্নতের সাথে তুলনীয়।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর যুক্তি এই যে, অবশিষ্ট নামাযে তো সে কিয়াম গ্রহণ করেনি। আর নামাযের যতটুকু অংশ সে আদায় করেছে কিয়াম ছাড়াই তার বিশুদ্ধতা রহিয়াছে। নযর বা মান্নতের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা স্পষ্ট ভাষায় এই বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করেছে। এমন কি যদি কিয়ামের বিষয়টি স্পষ্ট না বলে থাকে তবে কোন কোন মাশায়েখের মতে তার জন্য কিয়াস জরুরী হবে না।
যে ব্যক্তি শহরের বাইরে রহিয়াছে সে তার সাওয়ারির জন্তুর ইশারা করে নফল পড়তে পারে, সওয়ারি যে দিকেই অভিমুখী হোক। কেননা বর্ণীত আছে যে, ইবন উমর (রাঃআঃ) বলেছেন, রাসূলু্ল্লাহ্ (সাঃআঃ) কে আমি খায়বার অভিমুখী গাধার পিঠে ইশারা করে নামায পড়তে দেখেছি (মুসলিম)।
তাছাড়া নফল বিশেষ কোন ওয়াক্তের সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমতাবস্থায় যদি আমরা সওয়ারি হতে নামা এবং কিবলামুখী হওয়া তার জন্য বাধ্যতামুলক করে দেই তবে হয় সে নফল ছেড়ে দেবে অথবা কাফেলা থেকে পিছনে পড়ে যাবে। পক্ষান্তরে ফরয নামাযগুলো নির্ধারিত সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। নিয়মিত সুন্নাত নামাযগুলো নফলের অন্তর্ভূক্ত। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত এক রিওয়ায়াত মতে ফজরের সু্ন্নাতের জন্য সওয়ারি হতে নামতে হবে। কেননা এটা অন্যান্য সুন্নতের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
শহরে বাইরে হওয়ার শর্ত দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে নিয়মিত সফর হওয়া শর্ত নহে। তদ্রুপ শহরের ভিতরে এরুপ আদায় করা জাইয হবে না। আর ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত এক মতে শহরেও জাইয আছে। জাহিরী রিওয়ায়াতের কারণ এই যে, হাদিস শহরের বাইরে সম্পর্কেই রহিয়াছে। আর সওয়ারির প্রয়োজনীয়তা শহরের বাইরেই বেশী।
যদি নফল নামায সওয়ার অবস্থায় শূরু করে এরপর সওয়ারি থেকে নেমে যায় তাহলে ‘বিনা করবে। আর যদি নামা অবস্থায় এক রাকাআত পড়ে তারপর আরোহণ করে তবে নতুন ভাবে শূরু করবে। কেননা নামতে সক্ষম হওয়ার কারণে আরোহীর তাহরীমা সংগঠিত হইয়াছে, রুকু-সাজদার বৈধতা সহকারে। সুতরাং যখন সে নেমে রুকু-সাজদা করবে তখন তা জাইয হবে। পক্ষান্তরে অবতরণকারীর তাহরীমা রুকু সাজদা ওয়াজিবকারী রূপে সংগঠিত হইয়াছে। সুতরাং যা তার উপর বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে, তা সে বিনা ওযরে তরক করিতে পারে না।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে একটি বর্ণনা আছে যে, সওয়ারি হতে নামলেও নতুন করে শুরু করবে। তদ্রুপ মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, এক রাকাআত পড়ার পর অবতরণ করিলে নতুন করে শূরু করবে। তবে উপরোক্ত জাহিরী রিওয়ায়াতই হলো অধিকতর বিশুদ্ধ।
পরিচ্ছেদঃ কিয়ামে রমাযান
মুসতাহাব এই যে, মানূষ রমাযান মাসে ‘ঈশার পরে একত্র হবে এবং ইমাম সাহেব তাহাদেরকে নিয়ে পাচ তাহারাবীহা (অর্থাত্ চার চার রাকাআতী নামাজ) পড়বেন। প্রতিটি তাহারাবীহা (চার রাকাআত) দুই সালামে হবে। এবং প্রতিটি তারবীহার পরে এক তাহারাবীহা পরিমাণ সময় বসবে। এরপর ইমাম সাহেব তাহাদেরকে নিয়ে বিতর পড়বেন।
(ইমাম কুদূরী) মুসতাহাব শব্দটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অধিকতর বিশুদ্ধ মত এই যে, তা সুন্নাত। হাসান ইবন যিয়াদ ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে তাই বর্ণনা করেছেন। কেননা উমর (রাঃআঃ), উছমান (রাঃআঃ) ও ‘আলী (রাঃআঃ) এই তিন} খূলাফায়ে বাশিদীন তা নিয়মিত আদায় করেছেন। আর নাবী (সাঃআঃ) নিজে নিয়মিত আদায় বর্জন করার কারণ বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো আমাদের উপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশংকা। ( নফল নামাজের মাসআলা )
তাহারাবীতে জামাআতে করা সুন্নাত। তবে তা সুন্নাত (মুয়াক্কাদা) কিফায়া। সুতরাং কোন মসজিদের মুসল্লীরা যদি তাহারাবীর জামাআতি কায়েম করা হতে বিরত থাকে তবে সকলেই গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে যদি একাংশ তা কায়েম করে তবে অন্যরা শুধু জামাআতের ফযীলত তরককারী হবে। কেননা কিছু সংখ্যক সাহাবী (রাঃআঃ) হতে তাহারাবীর জামাআতে হাযির না হওয়া বর্ণীত আছে।
দুই তাহারাবীহার মধ্যে এক তাহারাবীহা পরিমাণ সময় বসা মুসতাহাব। তদ্রুপ পণ্চম তাহারাবীহা ও বিতরের মাঝেও (ঐ পরিমাণ বসা মুসতাহাব)। কেননা হারমায়নের অধিবাসীদের মধ্যে এরূপ চলে আসছে। আবার কেউ কেউ পাচ সালামের পর বিশ্রাম নেয়া উত্তম বলেছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) এর বক্তব্য ‘ এরপর তিনি তাহাদেরকে নিয়ে বিতর পড়বেন এদিকে ইংগিত করে যে, তাহারাবীর সময় হলো ‘ঈশার নামাযের পর বিতরের আগে। সাধারণ মাশায়েখগণ এ মতই পোষণ করেন। এটা বিতরের পূর্বেও হতে পারে, পরেও হতে পারে, কেননা তাহারাবীহ হলো নফল বিশেষ, যা ‘ঈশার পরে আদায় করার জন্য সুন্নাত হিসাবে প্রবর্তিত হইয়াছে।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) কিরাতের পরিমাণ উল্লেখ করেন নি। তবে অধিকাংশ মাশায়েখের মতে সুন্নাত হলো তাহারাবীর নামাজে একবার কুরআন খতম করা। সুতরাং মুসল্লীদের অলসতার কারণে তা বাদ দেওয়া যাবে না। পক্ষান্তরে তাশাহুদের পরে দুআগুলো বাদ দেয়া যেতে পারে। কেননা এগুলো সুন্নাত নয়।
রমাযান মাস ছাড়া অন্য কোন সময় জামাআতের সাথে বিতর পড়বে না। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রহিয়াছে। আল্লাহই উত্তম জানেন। ( নফল নামাজের মাসআলা )
Leave a Reply