ধন সম্পদ, ধনী গরীব, সচ্ছলতা ও দরিদ্রতার মাহাত্ম্য
ধন সম্পদ, ধনী গরীব, সচ্ছলতা ও দরিদ্রতার মাহাত্ম্য >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮১, কোমল হওয়া, অধ্যায়ঃ (১০-১৭)=৮টি
৮১/১০. অধ্যায় : ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে রক্ষা পাওয়া ।
৮১/১১. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী : এ সম্পদ সবুজ ও সুমিষ্ট । আল্লাহ তাআলার বাণী : মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্তুপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ । (সুরা আল ইমরান ৩/১৪)
৮১/১২. অধ্যায় : যে ব্যক্তি তার মাল হইতে অগ্রিম (উত্তম কাজে) খরচ করিবে, তার পুণ্য সে পাবে ।
৮১/১৩. অধ্যায় : (আল্লাহর পথে ব্যয়কুন্ঠ) ধনীরাই প্রকৃতপক্ষে গরীব ।
৮১/১৪. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী : আমার জন্য উহুদ পাহাড় স্বর্ণ হয়ে যাক আমি তা পছন্দ করি না ।
৮১/১৫. অধ্যায় : প্রকৃত সচ্ছলতা হলো অন্তরের সচ্ছলতা ।
৮১/১৬. অধ্যায় : দরিদ্রতার মাহাত্ম্য
৮১/১৭. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন ।
৮১/১০. অধ্যায় : ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে রক্ষা পাওয়া ।
আল্লাহর বাণী : “তোমাদের, ধন-সম্পদ আর সন্তান- সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র ।” (সুরা আত-তাগাবুন ৮/২৮)
৬৪৩৫
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দীনার, দিরহাম, রেশমী চাদর, পশমী কাপড়ের দাসরা ধ্বংস হোক। ওদের এসব দেয়া হলে খুশি থাকে আর দেয়া না হলে নাখোশ হয়। [১০] (আঃপ্রঃ- ,৫৯৮৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯২)
[১০] দুনিয়া লোভী বিবেকহীন লোকেরা নিজেরাই পেতে চায়, অন্যেরা যে বেশী অভাবগ্রস্ত, বেশী হকদার তারা তা বুঝেনা । হকদারদের হক নষ্ট করে হলেও বিবেকহীনরা নিজে পেলেই খুশী হয়- প্রকৃত অভাবীর অভাবের কথা চিন্তাও করে না ।
৬৪৩৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যদি আদাম সন্তানের দু উপত্যকা ভরা মালধন থাকে তবুও সে তৃতীয়টার আকাঙ্খা করিবে। আর মাটি ভিন্ন বানী আদামের পেট কিছুতেই ভরবে না। [১১] আর যে তাওবাহ করিবে, আল্লাহ তার তাওবাহ কবূল করবেন। [৬৪৩৭; মুসলিম ১২/৩৯, হাদীস ১০৪৯, আহমাদ ৩৪০১] (আঃপ্রঃ- ৫৯৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৩)
[১১] এখানে বাস্তব মাটি উদ্দেশ্য নয়, বরং এর দ্বারা পরোক্ষভাবে মৃত্যু উদ্দেশ্য । অর্থ্যাৎ আদম সন্তানের চাহিদার সমাপ্তি ঘটাবে একমাত্র তার মৃত্যু । মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের চাহিদার কোন শেষ নেই । (ফাতহুল বারী)
৬৪৩৭
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেনঃ বানী আদমের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনমাল থাকে, তবুও সে আরো ঐ পরিমাণ সম্পদের জন্য লালায়িত থাকবে। বানী আদামের চোখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবে না। তবে যে তাওবাহ করিবে আল্লাহ তার তাওবাহ কবূল করবেন।
ইবনু আব্বাস বলেন, সুতরাং আমি জানি না- এটি কুরআনের অন্তর্গত কিনা। তিনি বলেন, আমি ইবনুয যুবায়রকে এটা মিম্বরের উপর বলিতে শুনিয়াছি।(আঃপ্রঃ- ৫৯৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৪)
৬৪৩৮
আব্বাস ইবনু সাহ্ল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনুয্ যুবায়র (রাদি.)-কে মাক্কাহয় মিম্বারের উপর তার খুতবার মধ্যে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেনঃ হে লোকেরা! নাবী (সাঃআঃ) বলিতেন, যদি বানী আদামকে স্বর্ণে ভরা এক উপত্যকা মাল দেয়া হয়, তথাপিও সে দ্বিতীয়টার জন্য লালায়িত হয়ে থাকবে। আর তাকে দ্বিতীয়টি যদি দেয়া হয়, তাহলে সে তৃতীয়টার জন্য লালায়িত থাকবে। বানী আদামের পেট মাটি ছাড়া ভরতে পারে না। তবে যে তাওবাহ করিবে, আল্লাহ তার তাওবাহ কবূল করবেন।(আঃপ্রঃ- ৫৯৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৫)
৬৪৩৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ যদি বানী আদামের স্বর্ণ ভরা একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকা হওয়ার কামনা করিবে। তার মুখ মাটি ব্যতীত অন্য কিছুতেই ভরবে না। তবে যে ব্যক্তি তাওবাহ করিবে, আল্লাহ তার তাওবাহ কবূল করবেন। [১২] (আঃপ্রঃ- ৫৯৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৬)
[১২] অত্র তিনটি হাদীসে পরস্পর চোখ, মুখ ও পেটের কথা বলা হয়েছে; আর এ তিনটি হচ্ছে পৃথিবী ভোগ করিতে ধোঁকায় পড়ার মাধ্যম । কাজেই আদম সন্তানকে এ তিনটি অঙ্গের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হইবে ।
৬৪৪০
উবাই ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
অন্য এক সূত্রে আনাস (রাদি.) উবাই ইবনু কাব (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা ধারণা করেছিলাম এটা কুরআনেরই অন্তর্গত। অবশেষে (সুরায়ে) তাকাসুর নাযিল হলো। [মুসলিম ১২/৩৯, হাদীস ১০৪৮] (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৬)
৮১/১১. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী : এ সম্পদ সবুজ ও সুমিষ্ট । আল্লাহ তাআলার বাণী : মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্তুপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ । (সুরা আল ইমরান ৩/১৪)
উমার (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যেসব জিনিস মনোহর করে দিয়েছেন, তজ্জন্য খুশি না হয়ে পারি না । হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, যেন আমি এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যয় করিতে পারি ।
৬৪৪১
হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে কিছু চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। আমি তাহাঁর কাছে আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। আমি তাহাঁর কাছে আবার চাইলাম। তিনি দিলেন। এরপর বললেনঃ এ ধন-সম্পদ সুফ্ইয়ানের বর্ণনামতে নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে হাকীম! এ মাল সবুজ ও সুমিষ্ট। যে লোক তা খুশি মনে গ্রহণ করিবে, তার জন্য তাতে বরকত দেয়া হইবে। আর যে ব্যক্তি তা লালসা নিয়ে গ্রহণ করিবে, তার জন্য তাতে বরকত দেয়া হইবে না। বরং সে ঐ ব্যক্তির মত যে খায়, কিন্ত তৃপ্ত না। আর উপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ। [১৩] (আঃপ্রঃ- ,৫৯৯১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৭)
[১৩] এ হাদীসে অন্যের কাছে হাত পাতাকে ঘৃণিত কাজ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং দান করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে ।
৮১/১২. অধ্যায় : যে ব্যক্তি তার মাল হইতে অগ্রিম (উত্তম কাজে) খরচ করিবে, তার পুণ্য সে পাবে ।
৬৪৪২
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) লোকদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি, নিজের সম্পদ হইতে তার উত্তরাধিকারীর সম্পদকে অধিক প্রিয় মনে করে? তারা সবাই জবাব দিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তার নিজের সম্পদকে সবচেয়ে অধিক প্রিয় মনে করে না। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই মানুষের নিজের সম্পদ তা-ই, যা সে (সৎ কাজে ব্যয়ের মাধ্যমে) আগে পাঠিয়েছে। আর সে পিছনে যা রেখে যাবে তা তার ওয়ারিছের মাল। (আঃপ্রঃ- ৫৯৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৮)
৮১/১৩. অধ্যায় : (আল্লাহর পথে ব্যয়কুন্ঠ) ধনীরাই প্রকৃতপক্ষে গরীব ।
আল্লাহর বানী : যারা এ দুনিয়ার জীবন আর তার শোভা সৌন্দর্য কামনা করে, তাদেরকে এখানে তাদের কর্মের পুরোপুরি ফল আমি দিয়ে দেই, আর তাতে তাদের প্রতি কোন কমতি করা হয় না । কিন্তু আখিরাতে তাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছুই নাই, এখানে যা কিছু তারা করেছে তা নিস্ফল হয়ে গেছে, আর তাদের যাবতীয় কাজকর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে । (সুরা হূদ ১১/১৫-১৬)
৬৪৪৩
আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাতে আমি বের হলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ)-কে একাকী হেঁটে যেতে দেখলাম, তাহাঁর সাথে অন্য লোক ছিল না। আমি মনে করলাম, তাহাঁর সাথে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চন্দ্রালোকের ছায়ায় তাহাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কে এটা? আমি বললাম, আমি আবু যার। আল্লাহ আপনার জন্য আমাকে উৎসর্গ করুন। তিনি বললেনঃ আবু যার, এসো। আমি তাহাঁর সাথে কিছুক্ষণ চললাম। তারপর তিনি বললেনঃ ধনীরাই আসলে ক্বিয়ামাতের দিন গরীব। তবে যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেন এবং সে সম্পদকে তা ডানে, বামে, আগে ও পেছনে ব্যয় করে আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, (সে ছাড়া)। তারপর আমি আরও কিছুক্ষণ তাহাঁর সঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেনঃ এখানে বস। (একথা বলে) তিনি আমাকে চারিদিকে পাহাড় বেষ্টিত একটি প্রান্তরে বসিয়ে দিয়ে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমন কি তিনি আমার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন। এবং বেশ দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাঁকে বলিতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে ব্যভিচার করে। তারপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি ধৈর্যহারা হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। আপনি এই পাথরময় প্রান্তরে কার সাথে কথা বলিলেন? আপনার কথার উত্তর দিতে কাউকে তো শুনলাম না। তখন তিনি বললেনঃ তিনি ছিলেন জিব্রীল (আঃ)। তিনি এই প্রস্তরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মাতদের খোশ-খবর দিন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আমি বললাম, হে জিব্রীল! যদিও সে চুরি করে, যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম : যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললাম : যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ যদি সে শরাবও পান করে। নযর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….. আবুদ দারদা (রাদি.) থেকে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। আবুদ দারদা হইতে আবু সালিহের বর্ণনা মুরসাল, যা সহীহ নয়। আমরা পরিচয়ের জন্য এনেছি। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তবে এ খোশ-খবর দেয়া হয়েছে, যদি সে তাওবাহ করে আর মৃত্যুর সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। [১৪](আঃপ্রঃ- ৫৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৯)
[১৪] এ হাদীসের ব্যাখ্যা ৫৮৬৭ নং হাদীসের টিকায় দ্রষ্টব্য ।
৮১/১৪. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী : আমার জন্য উহুদ পাহাড় স্বর্ণ হয়ে যাক আমি তা পছন্দ করি না ।
৬৪৪৪
যায়দ ইবনু ওয়াহ্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু যার (রাদি.) বলেন, একবার আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মাদীনাহর প্রস্তরময় প্রান্তরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ইতোমধ্যে উহুদ আমাদের নজরে পড়ল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবু যার! আমি বললাম, আমি হাজির, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ আমার নিকট এ উহুদ পরিমান স্বর্ণ হোক, আর তা ঋণ পরিশোধ করার জন্য রেখে দেয়া ছাড়া একটি দীনারও তা থেকে আমার কাছে জমা থাকুক আর এ অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত হোক তা আমাকে আনন্দ দিবে না। বরং আমি তা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এভাবে এভাবে এভাবে বিলিয়ে দেব। তিনি তাহাঁর ডান দিকে, বাম দিকে, এবং পেছন দিয়ে ইশারা করিলেন। এরপর তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে আবার বললেনঃ জেনে রেখো, ধনের অধিকারীরাই ক্বিয়ামাতের দিন গরীব হইবে। অবশ্য যারা এভাবে, এভাবে, এভাবে ডানে, বামে ও পেছনে ব্যয় করিবে, তারা এর ব্যতিক্রম। কিন্ত এ রকম লোক খুবই কম। তারপর আমাকে বললেনঃ তুমি এখানে থাক। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এ স্থান ত্যাগ কর না। অতঃপর তিনি রাতের আঁধারে চলে গেলেন। এমনকি আড়াল হয়ে গেলেন। এরপর আমি একটি উচ্চ আওয়াজ শুনলাম। এতে আমি ভীত হয়ে গেলাম যে, তিনি কোন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। কাজেই আমি তার কাছে যেতে মনস্থ করলাম। কিন্তু তখনই আমার প্রতি তাহাঁর কথা স্মরণ হল যে, আমি না আসা পর্যন্ত তুমি স্থান ত্যাগ কর না। তাই আমি সেদিকে আর গেলাম না। তিনি ফিরে আসলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটা শব্দ শুনে ভীত হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁকে ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন : তুমি কি শব্দ শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ইনি জিব্রীল (আঃ)। তিনি আমার কাছে এসে বললেনঃ আপনার উম্মাতের কেউ আল্লাহর সাথে শরীক না করা অবস্থায় মারা গেলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে? তিনি বললেনঃ যদিও সে যিনা করে, যদিও সে চুরি করে। [১৫] (আঃপ্রঃ- ৫৯৯৪ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬০০০)
[১৫] ধন-সম্পদ জমা করে না রেখে অধিক হারে দান করার জন্য এ হাদীসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে ।
৬৪৪৫
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ আমার জন্য উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও যদি হয় আর কিয়দংশ তিনদিন পার হবার পরও আমার কাছে থাকবে- তা আমাকে খুশী করিবে না। তবে যদি ঋণ পরিশোধের জন্য হয় (তবে তা ভিন্ন কথা)।(আঃপ্রঃ- ৫৯৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০১)
৮১/১৫. অধ্যায় : প্রকৃত সচ্ছলতা হলো অন্তরের সচ্ছলতা ।
আল্লাহর বাণী : তারা কি ভেবে নিয়েছে, আমি যে তাদেরকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তানাদির প্রাচুর্য দিয়ে সাহায্য করেছি…..করিতে থাকবে, পর্যন্ত । (সুরা আল-মুমিনূন ২৩/৫৫-৬৩)
৬৪৪৬
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ধনের আধিক্য হলে ধনী হয় না, অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী। [১৬][মুসলিম ১২/৪০, হাদীস ১০৫১, আহমাদ ৭৩২০] (আঃপ্রঃ- ৫৯৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০২)
[১৬] আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাওয়াক্কুলই মানুষকে প্রকৃতপক্ষে ধনী অন্তঃকরণ দান করে, যার ফলে সে গরীব হয়েও দান করিতে ভয় করে না । অপরপক্ষে আল্লাহর প্রতি যার বিশ্বাস ও নির্ভরতা দৃঢ় নয়, সে অগাধ সম্পদের অধিকারী হয়েও, গরীব হয়ে যাওয়ার ভয়ে দান করা থেকে বিরত থাকে ।
৮১/১৬. অধ্যায় : দরিদ্রতার মাহাত্ম্য
৬৪৪৭
সাহ্ল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পাশ দিয়ে গেলেন। তখন তিনি তাহাঁর কাছে উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করিলেন, এ লোক সম্পর্কে তোমার অভিমত কী? তিনি বলিলেন, এ ব্যক্তি তো একজন সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। আল্লাহর কসম! তিনি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণ করা হইবে। আর কারো জন্য সুপারিশ করলে তা শুনা হইবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নীরব থাকলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর পাশ দিয়ে গেলেন। তখন রাসুলল্লাহ (সাঃআঃ) উপবিষ্ট লোকটিকে জিজ্ঞেস করিলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার অভিমত কী? তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! এ ব্যক্তি তো এক দরিদ্র মুসলিম। এ ব্যক্তি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হইবে না। আর সে সুপারিশ করলে তা কবূলও হইবে না। এবং যদি সে কথা বলে, তার কথা শুনাও হইবে না। তখন রাসুলল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ দুনিয়া ভরা আগের ব্যক্তির চেয়ে এ ব্যক্তি উত্তম। [১৭](আঃপ্রঃ- ৫৯৯৭ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৩)
[১৭] আল্লাহর নিকট প্রকৃত মর্যাদার বিষয় হল ঈমান । একজন নিঃস্ব ফকীর ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি বিত্তশালী ঈমানহীন ব্যক্তির চেয়ে আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ ।
৬৪৪৮
আবু ওয়াহিল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
একবার আমরা খাব্বাব (রাদি.)-এর শুশ্রূষায় গেলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমরা আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে হিজরাত করেছি; শ্রমফল আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রাপ্য। আমাদের মধ্যে অনেকেই এ শ্রমফল দুনিয়াতে লাভ করার আগেই ইন্তিকাল করিয়াছেন। তন্মধ্যে মুস্আব ইবনু উমায়র (রাদি.), যিনি উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন, তিনি শুধু একখানা কাপড় রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাহাঁর মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। নাবী (সাঃআঃ) আমাদের আদেশ দিলেন, তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে দিতে এবং পায়ের উপর ইয্খির ঘাস দিয়ে দিতে। আর আমাদের মধ্যে এমনও আছে, যাঁদের ফল পেকেছে এবং তারা তা সংগ্রহ করিয়াছেন। [১৮](আঃপ্রঃ- ৫৯৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৪)
[১৮] ঈমানদার ব্যক্তি তার সৎ আমলের প্রতিফল দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে লাভ করিবে । তবে হয়তো অনেকের ক্ষেত্রে সৎ আমলের প্রতিদান এ দুনিয়াতে পাওয়া নাও যেতে পারে, কিন্তু আখিরাতে নিঃসন্দেহে তা পাওয়া যাবে ।
৬৪৪৯
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি জান্নাতের মধ্যে ঝুঁকে দেখলাম, অধিকাংশ জান্নাতবাসী দরিদ্র আর আমি জাহান্নামের দিকে ঝুঁকে দেখলাম, অধিকাংশ জাহান্নামী মহিলা। [১৯] (আঃপ্রঃ- ৫৯৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৫)
[১] اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ বর্ণনাটি সম্পদশালীর উপর দরিদ্রের ফযীলত অপরিহার্য করিবে না। কারণ বর্ণনাটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জান্নাতে ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের আধিক্যের সংবাদ প্রদান। যেমন কারো দুনিয়ার অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেয়া যে, দুনিয়ার অধিকাংশ জনগোষ্ঠী দরিদ্র। সুতরাং জান্নাতে যাওয়ার মাপকাঠী দারিদ্র্য নয় বরং সততা। কেননা- দরিদ্র যদি সৎ ও ভাল না হয় তবে তাকে মর্যাদা দেয়া যাবে না। (ফাতহুল বারী)
৬৪৫০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মৃত্যু পর্যন্ত টেবিলের উপর আহার করেননি আর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পাতলা রুটি খেতে পাননি।(আঃপ্রঃ- ৬০০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৬)
৬৪৫১
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইন্তিকাল করিলেন। তখন যৎ সামান্য যব ছাড়া কোন প্রাণী খেতে পারে এমন কিছু আমার তাকের উপর ছিল না। তাত্থেকে বেশ কিছুদিন খেলাম। একবার মেপে নিলাম, তখন তা শেষ হয়ে গেল।(আঃপ্রঃ- ৬০০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৭)
৮১/১৭. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন ।
৬৪৫২
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিতেন : আল্লাহর কসম! যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। আমি ক্ষুধার তাড়নায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি (ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে) নাবী (সাঃআঃ) ও সাহাবীগণের রাস্তায় বসে থাকলাম। আবু বকর (রাদি.) যাচ্ছিলেন। আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি কিছু করিলেন না। অতঃপর উমার (রাদি.) যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। কিছু করিলেন না। অতঃপর আবুল কাসিম (সাঃআঃ) যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচ্কি হাসলেন এবং আমার প্রাণের এবং আমার চেহারার অবস্থা কী তিনি তা আঁচ করিতে পারলেন। অতঃপর বলিলেন, হে আবু হির! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি হাযির, তিনি বললেনঃ তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তাহাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন এবং আমাকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ পেলেন। তিনি বললেনঃ এ দুধ কোত্থেকে এসেছে? তাঁরা বলিলেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ বা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহর রাসুল! তুমি সুফ্ফাবাসীদের কাছে যাও এবং তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। রাবী বলেন, সুফ্ফাবাসীরা ছিলেন ইসলামের মেহমান। তাদের ছিল না কোন পরিবার, ছিল না কোন সম্পদ এবং কারো উপর ভরসা করার মত তাদের কেউ ছিল না। যখন তাহাঁর কাছে কোন সদাকাহ আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহণ করিতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং নিজের জন্য কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করিতেন। এ আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফ্ফাবাসীদের কী হইবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমার শরীরে শক্তি আসত। যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাঁদেরকে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলের নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে আসন গ্রহণ করিলেন। তিনি বললেনঃ হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলিলেন, তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা তৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও তৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন কি আমি এভাবে দিতে দিতে শেষতক নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হলেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে রেখে মৃদু হাসলেন। আর বললেনঃ হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাযির, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ এখন তো আমি আছি আর তুমি আছ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঠিক বলেছেন। তিনি বলিলেন, এখন তুমি বস এবং পান কর। তখন আমি বসে পান করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি আমাকে পান করার নির্দেশ দিতেই থাকলেন। এমন কি আমি বললাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তাহাঁর কসম। আমার পেটে আর জায়গা পাচ্ছি না। তিনি বলিলেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন ও বিসমিল্লাহ বলে বাকী পান করিলেন। [২০](আঃপ্রঃ- ৬০০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৮)
[২০] হাদীসটি হইতে জানা যায় : (১) বসে পান করা মুস্তাহাব । (২) মেহমানদের কিছু পান করানোর সময় খাদিম নিজে পরিবেশন না করে পাত্র তাদের হাতে এভাবে ছেড়ে দেয়া যে, একজনের পান করা শেষ হলে সে তার পাশের সাথীকে পান করিতে দিবে, এটা উচিত নয় । কেননা এটা মেহমানকে অসম্মানের শামিল । (৩) এর মধ্যে বিরাট মুজিযা নিহিত রয়েছে । (৪) অভাব অনটনের কথা প্রকাশ করা ও ঘোষনা দেয়া থেকে তা গোপন রাখা বা এর ইঙ্গিত দেয়া শ্রেষ্ঠতর । (৫) রাসুল (সাঃআঃ)-এর উদারতা ও তাহাঁর নিজের, তাহাঁর খাদিমের ও তাহাঁর পরিবার পরিজনের স্বার্থ ত্যাগ । (৬) নাবী (সাঃআঃ)–এর যুগে কিছু কিছু সাহাবীর অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সঙ্কটময় । (৭) আহলে সুফ্ফার ফযীলাত । (৮) আমন্ত্রিত ব্যক্তি আমন্ত্রণকারীর বাড়ীতে এসে বিনা অনুমতিতে যেন বাড়ীতে প্রবেশ না করে । (৯) আবু বাক্র (রাদি.) ও উমার (রাদি.); নাবী (সাঃআঃ) এর সর্ব সময়ের সহযোগী-এর প্রমাণ বহন করে । (১০) বড়রা তাদের খাদেমের উপনাম ধরে ডাকতে পারে । (১১) কাউকে ডাকার সময় নাম সংক্ষিপ্ত করা যায় । যেমন আবু হুরাইরাহ (রাদি.)-কে রাসুল (সাঃআঃ) ইয়া আবা হির্ বলে ডাকতেন । (১২) নাবী (সাঃআঃ) হাদীয়া বা উপঢৌকন গ্রহন করিতেন এবং খেতেন । কিন্তু সাদাকা খেতেন না বরং তা হক্বদারদের মাঝে বন্টন করে দিতেন । (১৩) আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিতে সম্বোধিত ব্যক্তি লাব্বাইকা বলা । (১৪) খাদিমকে মালিকের ঘরে প্রবেশকালে অনুমতি নিতে হইবে । (১৫) পরিবেশনকারী শেষে পান করিবে আর বাড়ীর মালিক তার পরে পান করিবে । (ফাতহুল বারী)
৬৪৫৩
কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন, আমি সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমিই সর্বপ্রথম আরব যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। যুদ্ধের সময় আমাদের অবস্থা দেখেছি যে হুবলা পাতা ও ঝাউগাছ ব্যতীত খাবারের কিছুই ছিল না। আমাদের মল বকরির মলের মত হয়ে গিয়েছিল। যা ছিল সম্পূর্ন শুক্নো। আর এখন আবার বনূ আসাদ এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্কার করছে। এখন আমি শংকিত যে আমার পূর্বেকার চেষ্টা সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেল।[মুসলিম পর্ব ৫৩/হাদীস ২৯৬৬, আহমাদ ১৪৯৮] (আঃপ্রঃ- ৬০০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০০৯)
৬৪৫৪
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশাহ (রাদি.) বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর পরিবারবর্গ মদিনায় আসার পর থেকে এক নাগাড়ে তিন দিন গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি। এবং এ অবস্থায় তাহাঁর ওফাত হয়ে গেল। (আঃপ্রঃ- ৬০০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১০)
৬৪৫৫
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর পরিবারবর্গ একদিনে দুবেলা খানা খেয়ে একবেলা শুধু খুর্মা খেয়েই কাটিয়ে দিতেন।(আঃপ্রঃ- ৬০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১১)
৬৪৫৬
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরী এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরের ছাল (আঃপ্রঃ- ৬০০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১২)
৬৪৫৭
ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-এর কাছে এমন অবস্থায় গেলাম যে, তাহাঁর পাচক (মেহমানদারির জন্য) ছিল দাঁড়ানো। আনাস (রাদি.) বলিলেন, আপনারা খান। আমি জানি না, নাবী (সাঃআঃ) ইন্তিকালের সময় পর্যন্ত পাতলা রুটি দেখেছেন কিনা। আর তিনি কখনও ভুনা বকরির গোশত দেখেননি।(আঃপ্রঃ- ৬০০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৩)
৬৪৫৮
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের উপর দিয়ে মাস কেটে যেত, আমরা এর মধ্যে ঘরে (রান্নার) আগুন জ্বালাতাম না। আমরা কেবল খুরমা ও পানির উপর চলতাম। তবে যৎ সামান্য গোশত আমাদের নিকট এসে যেত। (আঃপ্রঃ- ৬০০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৪)
৬৪৫৯
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একবার উরওয়াহ (রাদি.)-কে বলিলেন, বোন পুত্র! আমরা দুমাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু (এর মধ্যে) আল্লাহর রাসূলের ঘরগুলোতে আগুন জ্বলত না। আমি বলিললাম, আপনারা কিভাবে দিনাতিপাত করিতেন? তিনি বলিলেন, কালো দুটি বস্তু। খেজুর আর পানি। অবশ্য রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কিছু আনসার প্রতিবেশীর কতকগুলো দুধেল প্রাণী ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তা দিত। আর আমরা তাই পান করতাম। [২১] (আঃপ্রঃ- ৬০০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৫)
[২১] ৬৪৪৯ হইতে ৬৪৫৯ নং হাদীসগুলো ধনীদের জন্য সাবধানবাণী ও দরিদ্রদের জন্য সুসংবাদবাহী । ধনী ব্যক্তিরা যেন মনে না করেন যে, আল্লাহ তাদের প্রতি খুব সন্তুষ্ট, এজন্য তাদেরকে ধনী বানিয়ে দিয়েছেন । কারণ একজন মুসলিমের জন্য দুনিয়া লাভ করা মূখ্য বিষয় নয় বরং মূখ্য বিষয় হচ্ছে আখেরাতে জান্নাত লাভ করা । আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীদের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কে হইবে? কিন্তু তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত গরীব । এ রকম গরীব ঈমানদার লোক দিয়েই জান্নাতকে পূর্ণ করা হইবে । (ফাতহুল বারী)
৬৪৬০
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুআ করিতেন : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর পরিবারবর্গকে জীবিকা দান কর।[মুসলিম ১২/৪৩, হাদীস ১০৫৫, আহমাদ ১০২৪১] (আঃপ্রঃ- ৬০১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৬)
Leave a Reply