দুই ঈদের হাদীস -পোষাক, খুতবা, তাকবীর, নারীদের মাঠে যাওয়া
দুই ঈদের হাদীস -পোষাক, খুতবা, তাকবীর, নারীদের মাঠে যাওয়া >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ১৩, দুই ঈদ, অধ্যায়ঃ (১-২৬)=২৬টি
১৩/১. অধ্যায়ঃ দু ঈদ ও এতে সুন্দর পোষাক পরিধান করা।
১৩/২. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন বর্শা ও ঢালের খেলা।
১৩/৩. অধ্যায়ঃ মুসলিমগণের জন্য উভয় ঈদের রীতিনীতি।
১৩/৪. অধ্যায়ঃ ঈদুল ফিতরের দিন বের হবার আগে খাবার খাওয়া।
১৩/৫. অধ্যায়ঃ কুরবাণীর দিন আহার করা।
১৩/৬. অধ্যায়ঃ মিম্বার না নিয়ে ঈদমাঠে গমন।
১৩/৭. অধ্যায়ঃ পায়ে হেঁটে বা সওয়ারীতে আরোহণ করে ঈদের জামাআতে যাওয়া এবং আযান ও ইক্বামাত ব্যতীত খুত্বা্র পূর্বে সালাত আদায় করা।
১৩/৮. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতের পর খুতবা।
১৩/১০. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল রওআনা হওয়া ।
১৩/১১. অধ্যায়ঃ তাশ্রীকের দিনগুলোতে আমলের গুরুত্ব।
১৩/১২. অধ্যায়ঃ মিনার দিনগুলোতে এবং সকালে আরাফায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলা
১৩/১৩. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন যুদ্ধের হাতিয়ারের সম্মুখে সালাত আদায়।
১৩/১৪. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন ইমামের সামনে বর্শা পুঁতে সালাত আদায় করা।
১৩/১৫. অধ্যায়ঃ নারীদের ও ঋতুবতীদের ঈদগাহে যাওয়া।
১৩/১৬. অধ্যায়ঃ বালকদের ঈদমাঠে গমন।
১৩/১৭. অধ্যায়ঃ ঈদের খুতবা দেয়ার সময় মুসল্লীদের প্রতি ইমামের মুখ করে দাঁড়ানো।
১৩/১৮. অধ্যায়ঃ ঈদগাহে চিহ্ন রাখা।
১৩/১৯. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন নারীদের প্রতি ইমামের নসীহত করা।
১৩/২০. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য নারীদের ওড়না না থাকলে।
১৩/২১. অধ্যায়ঃ ঈদমাঠে ঋতুবতী নারীদের আলাদা অবস্থান।
১৩/২২. অধ্যায়ঃ কুরবানীর দিন ঈদমাঠে নাহর ও যবেহ।
১৩/২৩. অধ্যায়ঃ ঈদের খুতবার সময় ইমাম ও লোকদের কথা বলা এবং খুতবার সময় ইমামের নিকট কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হলে।
১৩/২৪. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন প্রত্যাবর্তন করার সময় যে ব্যক্তি ভিন্ন পথে আসে।
১৩/২৫. অধ্যায়ঃ কারো ঈদের নামায ছুটে গেলে সে দু রাকাত সালাত আদায় করিবে।
১৩/২৬. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতের আগে ও পরে সালাত আদায় করা।
১৩/১. অধ্যায়ঃ দু ঈদ ও এতে সুন্দর পোষাক পরিধান করা।
৯৪৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটি ক্রয় করে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোষাক, যার (আখিরাতে) কল্যানের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাদি.) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবাহিত করিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমর (রাদি.) তা গ্রহণ করেন এবং সেটি নিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। অথচ আপনি এ জুব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে তোমার প্রয়োজন পূরণ কর।
১৩/২. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন বর্শা ও ঢালের খেলা।
৯৪৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বকর (রাদি.) এসে আমাকে ধমক দিয়ে বলিলেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্
র [১] (দফ্) বাজান হচ্ছে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট! তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলিলেন, তাদের ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম আর তারা বেরিয়ে গেল।. [১] দফ্ এক প্রকার এক মুখো ঢোল।
৯৫০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের খেলা করত। আমি নিজে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখিতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, অতঃপর তিনি আমাকে তাহাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তাহাঁর গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বলিলেন, তোমরা যা করছিলে তা করিতে থাক, হে বনূ আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বলিলেন, তোমার দেখা কি যথেষ্ট হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বলিলেন, তা হলে চলে যাও।
১৩/৩. অধ্যায়ঃ মুসলিমগণের জন্য উভয় ঈদের রীতিনীতি।
৯৫১. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -কে খুতবা দিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেনঃ আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে আসব এবং কুরবাণী করব। তাই যে এ রকম করে সে আমাদের রীতি সঠিকভাবে মান্য করিল।
৯৫২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবু বকর (রাদি.) এলেন তখন আমার কাছে আনসারী দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে গান গাইছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাদার গায়িকা ছিল না। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবু বক্র! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দের দিন।
১৩/৪. অধ্যায়ঃ ঈদুল ফিতরের দিন বের হবার আগে খাবার খাওয়া।
৯৫৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হইতেন না। অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।
১৩/৫. অধ্যায়ঃ কুরবাণীর দিন আহার করা।
৯৫৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সালাতের পূর্বে যে যবেহ করিবে তাকে পুনরায় যবেহ করিতে হইবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, আজকের এ দিনটিতে গোশত খাবার আকাঙ্ক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করিলেন। সে বলিল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার নিকট দুটি হৃষ্টপুষ্ট বক্রীর চাইতেও অধিক পছন্দনীয়। নাবী (সাঃআঃ) তাকে সেটা কুরবাণী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি-না?
৯৫৫. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঈদুল আযহার দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশে খুতবা দান করেন। খুতবা্য় তিনি বলেনঃ যে আমাদের মত সালাত আদায় করিল এবং আমাদের মত কুরবাণী করিল, সে কুরবাণীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করিল। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবাণী করিল তা সালাতের পূর্বে হয়ে গেল, এতে তার কুরবাণী হইবে না। বারাআ-এর মামা আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাদি.) তখন বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জানা মতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পছন্দ করলাম যে, আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ করা হোক আমার বক্রীই। তাই আমি আমার বক্রীটি যবেহ করেছি এবং সালাতে আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশ্তাও করেছি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার বক্রীটি গোশ্তের উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়েছে। তখন তিনি আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের নিকট এমন একটা ছয় মাসের মেষ শাবক আছে যা আমার নিকট দুটি বক্রীর চাইতেও পছন্দনীয়। এটি (কুরবাণী করলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হইবে না।
১৩/৬. অধ্যায়ঃ মিম্বার না নিয়ে ঈদমাঠে গমন।
৯৫৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদমাঠে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করিতেন তা হল সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নসীহত করিতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করিতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করিতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করিতেন তবে তা জারি করিতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশে আমি তাহাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদমাঠে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখিতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনু সাল্ত (রাদি.) তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরোহণ করিতে উদ্যত হলেন। আমি তাহাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলিল, হে আবু সাঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গেছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলিল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই ওটা সালাতের আগেই করেছি।
১৩/৭. অধ্যায়ঃ পায়ে হেঁটে বা সওয়ারীতে আরোহণ করে ঈদের জামাআতে যাওয়া এবং আযান ও ইক্বামাত ব্যতীত খুত্বা্র পূর্বে সালাত আদায় করা।
৯৫৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত আদায় করিতেন। আর সালাতের পরে খুতবা দিতেন।
৯৫৮. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঈদুল ফিতরের দিন বের হন। অতঃপর খুতবা্র পূর্বে সালাত শুরু করেন।
৯৫৯. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাবী বলেন, আমাকে আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, ইবনু যুবায়র (রাদি.) এর বায়আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইবনু আব্বাস (রাদি.) তাহাঁর কাছে এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাতে আযান দেয়া হতো না এবং খুতবা হল সালাতের পরে।
৯৬০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ঈদুল ফিতরের সালাতে কিংবা ঈদুল আযহার সালাতে আযান দেয়া হত না।
৯৬১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করিলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। যখন নাবী (সাঃআঃ) খুতবা শেষ করিলেন, তিনি (মিম্বর হইতে) নেমে মহিলাগণের (কাতারের) নিকট আসলেন এবং তাঁদের নসীহত করিলেন। তখন তিনি বিলাল (রাদি.)-এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল (রাদি.) তাহাঁর কাপড় ছড়িয়ে ধরলে, নারীরা এতে সদাকার বস্তু ফেলতে লাগলেন। আমি আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এখনো যরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে নারীদের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন? তিনি বলিলেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাদের কী হয়েছে যে, তাঁরা তা করিবে না?
১৩/৮. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতের পর খুতবা।
৯৬২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু বক্র, উমর এবং উসমান (রাদি.)-এর সঙ্গে সালাতে হাযির ছিলাম। সকলেই খুতবার আগে সালাত আদায় করিতেন।
৯৬৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর এবং উমর (রাদি.) উভয়ে ঈদের সালাত খুতবার আগে আদায় করিতেন।
৯৬৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ঈদুল ফিতরে দু রাকআত সালাত আদায় করেন। এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। অতঃপর বিলাল (রাদি.)-কে সঙ্গে নিয়ে নারীদের নিকট এলেন এবং সদাকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁরা দিতে লাগলেন। নারীদের কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।
৯৬৫. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত আদায় করা। অতঃপর আমরা ফিরে আসব এবং কুরবাণী করব। কাজেই যে ব্যক্তি তা করিল, সে আমাদের নিয়ম পালন করিল। যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবাণী করিল, তা শুধু গোশ্ত বলেই গণ্য হইবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য পূর্বেই করে ফেলেছে। এতে কুরবাণীর কিছুই নেই। তখন আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাদি.) নামক এক আনসারী বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চেয়ে উৎকৃষ্ট। তিনি বলিলেন, সেটির স্থলে এটাকে যবেহ করে দাও। তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ট হইবে না।
১৩/৯. অধ্যায়ঃ ঈদের জামাআতে এবং হারাম শরীফে অস্ত্রবহন করা নিষিদ্ধ।
হাসান বাসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, শত্রুর ভয় ছাড়া ঈদের দিনে অস্ত্র বহণ করিতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে।
৯৬৬. সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.)-এর সংগে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তাহাঁর পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তাহাঁর পা রেকাবের সঙ্গে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এটা ঘটেছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌঁছলে তিনি তাঁকে দেখিতে আসেন। হাজ্জাজ বললো, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তবে তাকে শাস্তি দিতাম)। তখন ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, তুমিই আমাকে আঘাত করেছ। সে বলিল, তা কিভাবে? ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, তুমিই সেদিন (ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র বহন করা হতো না। তুমিই অস্ত্রকে হারামের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছ অথচ হারামের মধ্যে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না।
৯৬৭. সাঈদ ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাদি.)- এর নিকট হাজ্জাজ এলো। আমি তখন তাহাঁর নিকট ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞেস করলো, তিনি কেমন আছেন? ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, ভাল। হাজ্জাজ জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে কে আঘাত করেছে? তিনি বলিলেন আমাকে সে ব্যক্তি আঘাত করেছে যে, সে দিন অস্ত্র বহনের আদেশ দিয়েছে যে দিন তা বহন করা বৈধ নয়। অর্থাৎ হাজ্জাজ।
১৩/১০. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল রওআনা হওয়া ।
আবদুল্লাহ ইবনু বুস্র (রাদি.) বলেছেন, আমরা চাশ্তের সালাতের সময় ঈদের সালাত সমাপ্ত করতাম।
৯৬৮. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশে খুতবা দেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করিবে সে আমাদের রীতি পালন করিল। যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বেই যবেহ করিবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হইবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানী সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তখন আমার মামা আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আমি তো সালাতের পূর্বেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা মুসিন্না
[১] মেষের চাইতেও উত্তম। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তার স্থলে এটিই (কুরবানী) করে নাও। অথবা তিনি বললেনঃ এটিই যবেহ কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষ শাবক যথেষ্ট হইবে না।. [১] মুসিন্না অর্থ যার বয়স এক বছর পূর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বছরে পড়েছে।
১৩/১১. অধ্যায়ঃ তাশ্রীকের দিনগুলোতে আমলের গুরুত্ব।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন,
وَاذكُرُوا اللهِ فِي اَيَّامِ مَعلُومَاتٍ (সুরা আল-বাকারা ২/২০৩) দ্বারা (যিলহাজ্জ মাসের) দশ দিন বুঝায় এবং وَالاَيَّامُ المَعدُودَاتُ দ্বারা আইয়ামুত তাশরীক বুঝায়। ইবনু উমর ও আবু হুরাইরা (রাদি.) এই দশ দিন তাকবীর বলিতে বলিতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবীরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবীর বলত। মুহাম্মদ ইবনু আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নফল [১] সালাতের পরেও তাকবীর বলিতেন।
[১] এটি তাহাঁর নিজস্ব মত। অন্য ইমামগণের মতে শুধু ফরয সালাতের পরেই তাকবীর বলিতে হয়।
৯৬৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করিলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।
১৩/১২. অধ্যায়ঃ মিনার দিনগুলোতে এবং সকালে আরাফায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলা
উমর (রাদি.) মিনায় নিজের তাবূতে তাকবীর বলিতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলিতেন এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলিতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরে আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। ইবনু উমর (রাদি.) সে দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলিতেন এবং সালাতের পরে, বিছানায়, খীমায়, মজলিসে এবং চলার সময় এ দিনগুলোতে তাকবীর বলিতেন। মাইমূনা (রাদি.) কুরবানীর দিন তাকবীর বলিতেন এবং মহিলারা আবান ইবনু উসমান ও উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর পিছনে তাশরীকের রাতগুলোতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলিতেন।
৯৭০. মুহাম্মদ ইবনু আবু বাক্র সাক্বাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা হইতে যখন আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-এর নিকট তালবিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কিরূপ করিতেন? তিনি বলিলেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়া পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না।
৯৭১. উম্মু আতিয়্যাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের বের হবার আদেশ দেয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহল হইতে বের করতাম এবং ঋতুবতী মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দুআর সাথে দুআ করত- সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা তারা আশা করত।
১৩/১৩. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন যুদ্ধের হাতিয়ারের সম্মুখে সালাত আদায়।
৯৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নাবী (সাঃআঃ) এর সামনে যুদ্ধের হাতিয়ার রেখে দেয়া হত। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করিতেন।
১৩/১৪. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন ইমামের সামনে বর্শা পুঁতে সালাত আদায় করা।
৯৭৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নাবী (সাঃআঃ) এর সামনে বর্শা পুঁতে দেয়া হত। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করিতেন।
১৩/১৫. অধ্যায়ঃ নারীদের ও ঋতুবতীদের ঈদগাহে যাওয়া।
৯৭৪. উম্মু আতিয়্যাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন (ঈদের সালাতের উদ্দেশে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাবার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হতো। আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাফসা (রাদি.) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা (রাদি.) হইতে বর্ণিত রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে, ঈদগাহে ঋতুবতী নারীরা আলাদা থাকতেন।
১৩/১৬. অধ্যায়ঃ বালকদের ঈদমাঠে গমন।
৯৭৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর খুতবা দিলেন। অতঃপর নারীদের নিকট গিয়ে তাঁদের নসীহত করিলেন এবং তাঁদেরকে সদকা করার নির্দেশ দিলেন।
১৩/১৭. অধ্যায়ঃ ঈদের খুতবা দেয়ার সময় মুসল্লীদের প্রতি ইমামের মুখ করে দাঁড়ানো।
আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুসল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন।
৯৭৬. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) ঈদুল আযহার দিন বাকীতে (নামক কবরস্থানে) যান। অতঃপর তিনি দু রাকআত সালাত আদায় করে আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং তিনি বলিলেন, আজকের দিনের প্রথম ইবাদাত হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে গিয়ে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করিবে সে আমাদের নীতি অনুযায়ী কাজ করিবে। আর যে এর পূর্বেই যবেহ করিবে তা হলে তার যবেহ হইবে এমন একটি কাজ, যা সে নিজের পরিবারবর্গের জন্যই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে, এর সাথে কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। তখন এক ব্যক্তি [আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাদি.)] দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আমি (পূবেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা পূর্ণবয়স্ক মেষের চেয়ে উত্তম। (এটা কুরবানী করব কি?) তিনি বলিলেন, এটাই যবেহ কর। তবে তোমার পর আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হইবে না।
১৩/১৮. অধ্যায়ঃ ঈদগাহে চিহ্ন রাখা।
৯৭৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে কখনো ঈদে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বলিলেন হাঁ। যদি তাহাঁর নিকট আমার মর্যাদা না থকত তা হলে কম বয়সী হবার কারণে আমি ঈদে উপস্থিত হইতে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইবনু সলাতের গৃহের নিকট স্থাপিত নিশানার নিকট এলেন এবং সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর খুতবা দিলেন। অতঃপর তিনি মহিলাগণের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তাহাঁর সঙ্গে বিলাল (রাদি.) ছিলেন। তিনি নারীদের উপদেশ দিলেন, নসীহত করিলেন এবং দান সদকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন নারীদেরকে হইতে বাড়িয়ে বিলাল (রাদি.)- এর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। অতঃপর তিনি এবং বিলাল (রাদি.) নিজ বাড়ির দিকে চলে গেলেন।
১৩/১৯. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন নারীদের প্রতি ইমামের নসীহত করা।
৯৭৮. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ঈদুল ফিতরের দিন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিলেন, পরে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে নেমে নারীদের নিকট আসলেন এবং তাঁদের নসীহত করিলেন। তখন তিনি বিলাল (রাদি.)-এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল (রাদি.) তাহাঁর কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। এতে নারীগণ দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন আমি (ইবনু জুরায়জ) আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি ঈদুল ফিতরের সদকা? তিনি বলিলেন না, বরং এ সাধারণ সদকা যা তাঁরা ঐ সময় দিচ্ছিলেন। কোন মহিলা তাহাঁর আংটি দান করলে অন্যান্য নারীরাও তাঁদের আংটি দান করিতে লাগলেন। আমি আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে (আবার), জিজ্ঞেস করলাম, মহিলাগণকে উপদেশ দেয়া কি ইমামের জন্য জরুরী? তিনি বলিলেন, অবশ্যই, তাদের উপর তা জরুরী। তাঁদের (অর্থাৎ ইমামগণের) কী হয়েছে যে, তাঁরা তা করবেন না?
৯৭৯. ইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
হাসান ইবনু মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) আবু বক্র, উমর ও উসমান (রাদি.)-এর সঙ্গে ঈদুল ফিতরে আমি উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করিতেন, পরে খুতবা দিতেন। নাবী (সাঃআঃ) বের হলেন, আমি যেন দেখিতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইঙ্গিতে (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে নাবী ! যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়আত করিতে আসেন
يَا اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا جَاءَكَ المُؤمِنَاتَ يُبَايِعنَكَ – الاية (সুরা মুমতাহিনাহ ৬০/১২)।
এ আয়াত শেষ করে নাবী (সাঃআঃ) তাদের জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা এ বায়আতের উপর আছ? তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা বলিল, হাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জানেন না, সে মহিলা কে? অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা সদকা কর। সে সময় বিলাল (রাদি.) তাহাঁর কাপড় প্রসারিত করে বলিলেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন নারীগণ তাঁদের ছোট-বড় আংটিগুলো বিলাল (রাদি.)-এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। আবদুর রাযযাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, — হলো বড় আংটি যা জাহিলী যুগে ব্যবহৃত হতো।
১৩/২০. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য নারীদের ওড়না না থাকলে।
৯৮০. হাফসা বিনত সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হইতে নিষেধ করতাম। একদা জনৈকা মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসাদে অবস্থান করিলেন। আমি তাহাঁর নিকট গেলে তিনি বলিলেন, তাহাঁর ভগ্নিপতি নাবী (সাঃআঃ)- এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তাহাঁর বোনও স্বামীর সাথে অংশগ্রহণ করিয়াছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের শুশ্রূষা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হইবে না? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করিতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের দুআয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যখন উম্মু আতিয়্যাহ (রাদি.) এলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ, হাফসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমরা পিতা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর নাম উল্লেখ করিতেন, তখনই একথা বলিতেন। তাঁবুতে অবস্থানকারিণী যুবতীরা এবং ঋতুবতী নারীরা যেন বের হন। তবে ঋতুবতী নারীরা যেন সালাতের স্থান হইতে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের দুআয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি তাকে বললাম, ঋতুবতী নারীরাও? তিনি বলিলেন, হাঁ, ঋতুবতী নারী কি আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না? (১)
১৩/২১. অধ্যায়ঃ ঈদমাঠে ঋতুবতী নারীদের আলাদা অবস্থান।
৯৮১. উম্মু আতিয়্যাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাই আমরা ঋতুবতী, যুবতী এবং তাঁবুতে অবস্থানকারিণী নারীদেরকে নিয়ে বের হতাম। ইবনু আওন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, অথবা তাঁবুতে অবস্থানকারিণী যুবতী নারীদেরকে নিয়ে বের হতাম। অতঃপর ঋতুবতী মহিলাগণ মুসলমানদের জামাআত এবং তাদের দুআয় অংশগ্রহণ করিতেন। তবে ঈদমাঠে পৃথকভাবে অবস্থান করিতেন। (২)
(১) ও (২) অত্র হাদীস দ্বারা নারীদের ঈদের মাঠে গমনের উপর কী পরিমাণ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা স্পষ্ট প্রমাণিত।
১৩/২২. অধ্যায়ঃ কুরবানীর দিন ঈদমাঠে নাহর ও যবেহ।
৯৮২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ঈদমাঠে নাহর করিতেন কিংবা যবেহ করিতেন।
১৩/২৩. অধ্যায়ঃ ঈদের খুতবার সময় ইমাম ও লোকদের কথা বলা এবং খুতবার সময় ইমামের নিকট কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হলে।
৯৮৩. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কুরবানীর দিন সালাতের পর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি বলিলেন, যে আমাদের মতো সালাত আদায় করিবে এবং আমাদের কুরবানীর মত কুরবানী করিবে, তার কুরবানী যথার্থ বলে গণ্য হইবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করিবে তার সে কুরবানী গোশ্ত খাওয়া ছাড়া আর কিছু হইবে না। তখন আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আমি তো সালাতে বের হবার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি ভেবেছি যে, আজকের দিনটি তো পানাহারের দিন। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে ফেলেছি। আমি নিজে খেয়েছি এবং আমার পরিবারবর্গ ও প্রতিবেশীদেরকেও আহার করিয়েছি। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ ওটা গোশ্ত খাবার বকরী ছাড়া আর কিছু হয়নি। আবু বুরদাহ (রাদি.) বলেন, তবে আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা দুটো (গোশ্ত খাওয়ার) বকরীর চেয়ে ভাল। এটা কি আমার পক্ষে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তবে তোমার পরে অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হইবে না।
৯৮৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করেন, অতঃপর খুতবা দিলেন। অতঃপর নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করেছে সে যেন পুনরায় কুরবানী করে। তখন আনসারদের মধ্য হইতে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার প্রতিবেশীরা ছিল উপবাসী অথবা বলেছেন দরিদ্র। তাই আমি সালাতের পূর্বেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে আমার নিকট মেষশাবক আছে যা দুটি হৃষ্টপুষ্ট বকরির চাইতেও আমার নিকট অধিক পছন্দসই। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দেন।
৯৮৫. জুনদাব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করেন, অতঃপর খুতবা দেন। অতঃপর যবেহ করেন এবং তিনি বলেনঃ সালাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ করিবে তাকে তার স্থলে আর একটি যবেহ করিতে হইবে এবং যে যবেহ করেনি, আল্লাহর নামে তার যবেহ করা উচিত।
১৩/২৪. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন প্রত্যাবর্তন করার সময় যে ব্যক্তি ভিন্ন পথে আসে।
৯৮৬. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঈদের দিন (বাড়ি ফেরার পথে) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইবনু মুহাম্মদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে হাদীস বর্ণনায় আবু তুমাইলা ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর অনুসরণ করিয়াছেন। তবে জাবির (রাদি.) হইতে হাদীসটি অধিকতর বিশুদ্ধ।
১৩/২৫. অধ্যায়ঃ কারো ঈদের নামায ছুটে গেলে সে দু রাকাত সালাত আদায় করিবে।
নারীগণ এবং যারা বাড়ী ও পল্লীতে অবস্থান করে তারাও এরুপ করিবে। কেননা, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হে মুসলিমগণ! এ হলো আমাদের ঈদ। আর আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) যাবিয়া নামক স্থানে তাহাঁর আযাদকৃত গোলাম ইবনু আবু উতবাকে এ আদেশ করেছিলেন। তাই তিনি তার পরিবারবর্গ ও সন্তান সন্ততিদের নিয়ে শহরের অধিবাসীদের ন্যায় তাকবীরসহ সালাত আদায় করেন এবং ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, গ্রামের অধিবাসীরা ঈদের দিন সমবেত হয়ে ইমামের ন্যায় দু রাকআত সালাত আদায় করিবে। আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যখন কারো ঈদের সালাত ছুটে যায় তখন সে দু রাকআত সালাত আদায় করিবে।
৯৮৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু বক্র (রাদি.) তাহাঁর নিকট এলেন। এসময় মিনার দিবসগুলোর এক দিবসে তাহাঁর নিকট দুটি মেয়ে দফ বাজাচ্ছিলো, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর চাদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন। তখন আবু বক্র (রাদি.) মেয়ে দুটিকে ধমক দিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) মুখমণ্ডল হইতে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বলিলেন, হে আবু বক্র! ওদের বাধা দিওনা। কেননা, এসব ঈদের দিন। আর সে দিনগুলো ছিলো মিনার দিন।
৯৮৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হাবশীরা যখন মসজিদে (এর প্রাঙ্গণে) প্রাঙ্গণে খেলাধূলা করছিল, তখন আমি তাদের দেখছিলাম এবং আমি দেখেছি, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে আড়াল করে রেখেছেন। উমর (রাদি.) হাবশীদের ধমক দিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওদের ধমক দিওনা। হে বনূ আরফিদা! তোমরা যা করছিলে তা কর।
১৩/২৬. অধ্যায়ঃ ঈদের সালাতের আগে ও পরে সালাত আদায় করা।
আবু মুয়াল্লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে ইবনে আব্বাস (রাদি.) হইতে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি ঈদের পূর্বে সালাত আদায় করা মাকরুহ মনে করিতেন।
৯৮৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বিলাল (রাদি.)-কে সঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু রাকাআত সালাত আদায় করেন। তিনি এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি।
Leave a Reply