হত্যা, রূপা, নারী, কাফির, দাস, সন্তান, দাত ও আঙ্গুলের দিয়াত
হত্যা, রূপা, নারী, কাফির, দাস, সন্তান, দাত ও আঙ্গুলের দিয়াত >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪৬, শপথ কাসামাহ, হাদীস (৪৭৮৫-৪৮৬৯)
১.পরিচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃত হত্যার পর নিহইতের অভিভাবক যদি কিসাস ক্ষমা করে দেয়, তবে দিয়াত গ্রহণ করা যাবে কি না
২.পরিচ্ছেদঃ কিসাস গ্রহণে নারীর প্রতিও ক্ষমা প্রদর্শন
৩.পরিচ্ছেদঃ প্রস্তর অথবা কোড়ার আঘাতে নিহত ব্যক্তি
৪.পরিচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হত্যার দিয়াত এবং বিষয়ে কাসিম ইবনি রবীআ বর্ণিত হাদীস বর্ণনায় আইয়্যূবের শাগরিদগণের মধ্যে পার্থক্য
৫.পরিচ্ছেদঃ খালিদ হায্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
৬.পরিচ্ছেদঃ ভুলক্রমে হত্যার দিয়াত
৭.পরিচ্ছেদঃ রূপা দ্বারা দিয়াত দেয়া
৮.পরিচ্ছেদঃ নারীর দিয়াত
৯.পরিচ্ছেদঃ কাফিরের দিয়াত
১০.পরিচ্ছেদঃ মুকাতাব দাসের দিয়াত
১১.পরিচ্ছেদঃ গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত
১২.পরিচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ হত্যা কাকে বলে এবং এরূপ হত্যা ও গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত কে দিবে
১৩.পরিচ্ছেদঃ একজনের অপরাধে অন্যজনকে দায়ী করা
১৪.পরিচ্ছেদঃ দৃষ্টিহীন চোখ উপড়ে ফেললে
১৫.পরিচ্ছেদঃ দাঁতের দিয়াত
১৬.পরিচ্ছেদঃ আঙ্গুলের দিয়াত
১৭.পরিচ্ছেদঃ যে যখম হাঁড় পর্যন্ত পৌঁছে
১৮.পরিচ্ছেদঃ দিয়াত বিষয়ে আমর ইবনি হাযমের হাদীস এবং এতে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
১৯.পরিচ্ছেদঃ নিজে প্রতিশোধ গ্রহণ করা
২০.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ [আরবি] {১} এর ব্যাখ্যা
১.পরিচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃত হত্যার পর নিহইতের অভিভাবক যদি কিসাস ক্ষমা করে দেয়, তবে দিয়াত গ্রহণ করা যাবে কি না
৪৭৮৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি নিহত হয়, তখন তার ওয়ারিসের জন্য দুটি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার থাকিবে। চাইলে কিসাস গ্রহণ করিবে অথবা দিয়াত গ্রহণ করিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৮৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তির কোন লোক নিহত হয়, তখন সে দুইটির যে কোন একটি বেছে নিতে পারে, হয় কিসাস, না হয় দিয়াত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৮৭. আবু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাহার কোন লোক নিহত হয়, [অতঃপর পূর্বের মত]। এটি মুরসাল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২.পরিচ্ছেদঃ কিসাস গ্রহণে নারীর প্রতিও ক্ষমা প্রদর্শন
৪৭৮৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের উচিত; কিসাস গ্রহণ হইতে বিরত থাকা, পর্যায়ক্রমে প্রথমে একজন তারপর আরেকজন; যদিও সে নারী হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩.পরিচ্ছেদঃ প্রস্তর অথবা কোড়ার আঘাতে নিহত ব্যক্তি
৪৭৮৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অথবা পাথর, কোড়া অথবা লাঠি ছোঁড়াছুড়ির মাঝে পড়ে নিহত হয়, তার দিয়াত হইবে ভুলে হত্যার দিয়াতের মত, আর যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা হয়, তবে তাতে কিসাস ওয়াজিব হইবে। আর যদি কেউ এর মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে তার উপর আল্লাহর, ফিরিশতাহাদের এবং সকল লোকের লানত। তার ফরয বা নফল কিছুই কবূল হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৯০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুলাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অথবা পাথর, কোড়া বা লাঠি ছোঁড়াছুড়ির মাঝে পড়ে নিহত হয়, তার দিয়াত হইবে ভুলে হত্যার দিয়াত। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়, তবে কিসাস ওয়াজিব হইবে। আর যে ব্যক্তি কিসাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তার উপর আল্লাহ্, ফিরিশতাগণ এবং সকল লোকের লানত। তার ফরয বা নফল কোন ইবাদতই হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হত্যার দিয়াত এবং বিষয়ে কাসিম ইবনি রবীআ বর্ণিত হাদীস বর্ণনায় আইয়্যূবের শাগরিদগণের মধ্যে পার্থক্য
৪৭৯১. শুবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আইয়্যূব সাখতিয়ানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেক, তিনি কাসিম ইবনি রবীআ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার হয়, যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ যথা কোড়া, লাঠি ইত্যাদির আঘাতে হত্যা, তার দিয়াত একশত উট, যাহার চল্লিশটি গর্ভবতী হইতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৯২. হাম্মাদ আইয়্যূব থেকে এবং তিনি কাসিম ইবনি রবীআ [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের দিন ভাষণ দিতে গিয়ে অনুরূপ বর্ণনা করেন। এটি মুরসাল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৫.পরিচ্ছেদঃ খালিদ হায্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
৪৭৯৩. হাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] খালিদ হায্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে, তিনি কাসিম ইবনি রবীআ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে, তিনি উকবা ইবনি আওস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শিব্হে আমাদ অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত হত্যার ন্যায় হত্যায়, বেত্রাঘাত বা লাঠি ইত্যাদির আঘাতে নিহত হয়, তার দিয়াত একশত উট, যাহার চল্লিশটি হইবে গর্ভবতী।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৯৪. হুশায়ম খালিদ থেকে, তিনি কাসিম ইবনি রবীআ থেকে, তিনি উকবা ইবনি আওস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এবং তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একজন সাহাবী থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী [সাঃআঃ] ভাষণে বলেনঃ শুনে রাখো, যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার হয়, যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ, যথা চাবুক, লাঠি অথবা পাথরের আঘাতে হত্যা, তার দিয়াত একশত উট, যাহার চল্লিশটি হইবে ছয় বছর হইতে নয় বছর বয়সের, বোঝা বহনের উপযুক্ত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৯৫. ইবনি আবু আদী খালিদ থেকে, তিনি কাসিম থেকে এবং তিনি উকবা ইবনি আওস [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শুনে রাখো ! ভুলক্রমে নিহত ব্যক্তি অর্থাৎ বেত্রাঘাত, লাঠি ইত্যাদি দ্বারা নিহত ব্যক্তির দিয়াত একশত উট, যাহার চল্লিশটি এমন, যেগুলোর পেটে বাচ্চা থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৯৬. বিশ্র ইবনি মুফায্যাল খালিদ হায্যা থেকে, তিনি কাসিম ইবনি রবীআ থেকে, তিনি ইয়াকূব ইবনি আওস থেকে এবং তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের একজন থেকে হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন বলেনঃ শুনে রাখো, যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার হয়, যা ইচ্ছাকৃত হত্যাসদৃশ, যথা বেত্রাঘাত, কাঠ অথবা পাথর ইত্যাদির দ্বারা নিহত ব্যক্তি, তার দিয়াত একশত উট। এগুলোর চল্লিশটি এমন হইবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৯৭. ইয়াযীদ খালিদ থেকে, তিনি কাসিম ইবনি রবীআ থেকে এবং তিনি ইয়াকূব ইবনি আওস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একজন সাহাবী তাঁকে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন বলেনঃ শুনে রাখো, ভুলক্রমে নিহত ব্যক্তি, যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ্য, অর্থাৎ বেত্রাঘাত বা লাঠির আঘাতে নিহত ব্যক্তির দিয়াত একশত উট, এর চল্লিশটি এমন হইবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৯৮. ইয়াযীদ খালিদ থেকে, তিনি কাসিম ইবনি রবীআ থেকে এবং তিনি ইয়াকূব ইবনি আওস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একজন সাহাবী তাঁকে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তিনি বলেনঃ শুনে রাখো, যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ, অর্থাৎ বেত্রাঘাত বা লাঠির আঘাতে নিহত ব্যক্তির দিয়াত একশত উট, এর চল্লিশটি এমন হইবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৯৯. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবা শরীফের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্ তাআলার হামদ-ছানা বর্ণনা করে বলেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ্ পাকের জন্যই, যিনি স্বীয় অঙ্গীকার সত্য করে দেখিয়েছেন এবং স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং একাই শত্রু সৈন্যকে পরাস্ত করিয়াছেন। তোমরা শুনে রাখ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ ভুলের দরুন নিহত হয়, যথা বেত্রাঘাত অথবা কাষ্ঠাঘাতে নিহত ব্যক্তি, তার দিয়াত হল একশত উটের কঠিন দিয়াত, যাহার চল্লিশ উট এমন হইবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৮০০. কাসিম ইবনি রবীআ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শুনে রাখো, ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ ভুলে হত্যা, অর্থাৎ বেত্রাঘাত বা লাঠির আঘাতে হত্যার দিয়াত একশত উট, এর চল্লিশটি এমন হইবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৮০১. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাকে ভুলে হত্যা করা হয়, তার দিয়াত একশত উটনী যাদের ত্রিশটি এক বছর বয়সের হইতে হইবে, আর ত্রিশটি দুই বছর বয়সের হইতে হইবে, আর ত্রিশটি চার বছর বয়সের হইতে হইবে আর দশটি উট হইতে হইবে দুই বছর বয়সের নর বাচ্চা। বর্ণনাকারী বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নগরবাসীর ক্ষেত্রে এর মূল্য নির্ধারণ করিতেন- চারশত দীনার অথবা সমমূল্যের রৌপ্য। আর তিনি উটের মালিকদের ক্ষেত্রে এর মূল্য ধার্য করিতেন সেখানখার দর আনুযায়ী, অর্থাৎ যখন উটের মূল্য বৃদ্ধি পেত, তখন এর মুল্যেও বৃদ্ধি পেত; আর যখন সস্তা হতো, তখন এর দামও কম হতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে ঐ সকল উটের মূল্য চারশত দীনার হইতে আটশত পর্যন্ত পৌঁছতো। অথবা অনুরূপ মূল্যের রৌপ্য। বর্ণনাকারী বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গরুর মালিকদের ক্ষেত্রে দিয়াত ধার্য করিতেন দুশ গরু। আর ছাগলের মালিকদের ক্ষেত্রে দুই হাজার ছাগল। আর তিনি আদেশ করিয়াছেন যে, দিয়াতের মাল নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদের মধ্যে ফারায়েয অনুযায়ী বন্টন করা হইবে। যা যাবীল ফুরুযকে দেওয়ার পর উদ্ধৃত্ত থাকিবে, তা পাবে আসাবাগণ। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নারীদের ক্ষেত্রে আদেশ করিয়াছেন যে, তাহাদের দিয়াত বহন করিবে তাহাদের আসাবাগণ, তা যারাই হোক তারা তাতে কোন মীরাস পাবে না। হ্যাঁ, যদি যবীল ফুরুযকে দেওয়ার পর কিছু উদ্ধৃত্ত থাকে, তবে তা পাবে। আর এরাই তার হত্যাকারী হইতে কিসাস আদায় করিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৬.পরিচ্ছেদঃ ভুলক্রমে হত্যার দিয়াত
৪৮০২. খাশ্ফ ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি মাসউদকে বলিতে শুনিয়াছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভুলক্রমে হত্যার দিয়াত ধার্য করিয়াছেন বিশটি বিন্তে মাখায{১}, বিশটি ইবনি মাখায{২}, বিশটি বিন্তে লাবূন{৩}, বিশটি জাযআ{৪} এবং বিশটি হিক্কাহ্{৫}।
{১} এক বছর বয়সের মাদী উট।{২} এক বছর বয়সের নর উট।{৩} দুবছর বয়সের মাদী উট।{৪} পাঁচ বছর বয়সের মাদী উট।{৫} চার বছর বয়সের মাদী উট।হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৭.পরিচ্ছেদঃ রূপা দ্বারা দিয়াত দেয়া
৪৮০৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে তিনি তার দিয়াত নির্ধারিত করেন বার হাজার দিরহাম। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসূল তাহাদেরকে স্বীয় দান দ্বারা দিয়াত গ্রহণের মাধ্যমে ধনবান করিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮০৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দিয়াতে বার হাজার দিরহাম ধার্য করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ নারীর দিয়াত
৪৮০৫. আমর ইবনি শুআয়ব তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নারীর দিয়াত নরের দিয়াতের ন্যায় ; যাবৎ এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত পর্যন্ত পৌঁছায়।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৯.পরিচ্ছেদঃ কাফিরের দিয়াত
৪৮০৬. আমর ইবনি শুআয়ব তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যিম্মি কাফিরের দিয়াত মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক আর তারা হলো ইয়াহূদী এবং নাসারা।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৪৮০৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাফিরের দিয়াত মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক নির্ধারণ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১০.পরিচ্ছেদঃ মুকাতাব দাসের দিয়াত
৪৮০৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদেশ করেছেনঃ মুকাতাব যদি নিহত হয়, তা হলে সে চুক্তির যতটুকু অর্থ আদায় করেছে, ততটুকুতে তার দিয়াত স্বাধীন ব্যক্তির সমান দিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮০৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুকাতাব দাসের দিয়াত এরূপ সাব্যস্ত করিয়াছেন যে, তার যতটুকু পরিমাণ মুক্ত হইয়াছে, ততটুকুতে স্বাধীন ব্যক্তির দিয়াত প্রদান করিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুকাতাব দাসের দিয়াতে এই মীমাংসা দিয়েছেন যে, তার যতটুকু আযাদ হইয়াছে, ততটুকুতে স্বাধীন ব্যক্তির দিয়াত আর যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তাতে গোলামের দিয়াত দেওয়া হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মুকাতাব ততটুকু আযাদ হইবে, যতটুকু সে আদায় করেছে। তার উপর ততটুকু হদ জারি করা হইবে, যতটুকু সে আযাদ হইয়াছে এবং সে যতটুকু আযাদ হইয়াছে, সেই অনুপাত মীরাস পাবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময় এক মুকাতাব দাস নিহত হলে তিনি আদেশ দেন যে, সে যতটুকু আযাদ হইয়াছে, ততটুকুর দিয়াত আযাদের মত দেওয়া হইবে। আর যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, ততটুকুর দিয়াত দাসের ন্যায় আদায় করা হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিচ্ছেদঃ গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত
৪৮১৩. বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক নারী অন্য নারীর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করলে তার গর্ভপাত হইয়া যায়। এই মোকদ্দমা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি তার সন্তানের দিয়াত পঞ্চাশটি ছাগল নির্ধারণ করেন। আর তিনি সে দিন হইতে পাথর নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১৪. আবদুল্লাহ ইবনি বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক নারী অন্য এক নারীর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করলে তার গর্ভস্থ বাচ্চা পড়ে যায়। এই ঘটনা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি তার সন্তানের দিয়াত পাঁচ শত ছাগল নির্ধারণ করেন এবং সে দিন হইতে তিনি পাথর নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করে দেন। আবু আবদুর রহমান বলেন, এটা বর্ণনাকারীর বিভ্রম। সম্ভবত তিনি একশত ছাগল বলিতে চেয়েছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮১৫. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্ফাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এক ব্যক্তিকে পাথর মারতে দেখে তাকে বলেনঃ পাথর নিক্ষেপ করো না, কেননা নাবী [সাঃআঃ] পাথর নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১৬. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাঃআঃ] গর্ভস্থ বাচ্চার ব্যাপারে পরামর্শ করিলেন, তখন হামল ইবনি মালিক [রাঃআঃ] বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এতে একটি গুররা অর্থাৎ একটি দাস অথবা দাসী দিতে আদেশ করিয়াছেন। তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বললেনঃ গুর্রা অর্থ ঘোড়া।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লেহইয়ান গোত্রের এক মহিলার উদরস্থ বাচ্চার ব্যাপারে আদেশ করেন, যে বাচ্চা মৃত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল, এর বিনিময়ে এক দাস বা এক দাসী দেওয়া হইবে। তিনি যে মহিলাকে তা দিতে আদেশ করেন সে মারা গেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদেশ করেন যে, তার মীরাস তার পুত্রদের এবং স্বামীকে দেওয়া হইবে এবং তার দিয়াত আদায় করিবে তার আত্মীয় আসাবাগণ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
হুযায়ল গোত্রের দুই নারী ঝগড়া করলে তাহাদের একজন অন্যজনের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে। ফলে সে মারা যায় এবং তার পেটের বাচ্চাও মারা যায়। ঐ লোকেরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফরিয়াদ করলে তিনি বলেনঃ বাচ্চার দিয়াত এক দাস বা দাসী, আর ঐ মহিলার দিয়াত তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়-স্বজন থেকে আদায় করে দেন। আর সেই দিয়াত পায় ঐ নারীর ছেলে, যে নারী নিহত হইয়াছিল। একথা শুনে হামল ইবনি মালিক ইবনি নাবিগা হুযালী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আমি ঐ ব্যক্তির দিয়াত কেন দিব, যে না খেয়েছে, না কোন পান করেছে, না কথা বলেছে? এই খুন তো বৃথা যাবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এই ব্যক্তি গণকদের ভাই যে ছন্দযুক্ত কথা বলে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮১৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে হুযায়ল গোত্রের দুই নারীর একজন অন্যজনকে পাথর মারে। এতে তার গর্ভস্থিত সন্তান পড়ে যায়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য একটি দাস অথবা দাসী দেওয়ার আদেশ জারী করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮২০. সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে বাচ্চাকে তার মাতৃগর্ভে হত্যা করা হয়, তার দিয়াত এক দাস বা এক দাসী দেওয়ার আদেশ জারী করেন। তিনি যাহার বিরুদ্ধে এ আদেশ দেন, সে বলিল, আমি কিরূপে দিয়াত দেব, অথচ সে খায় নি, পান করে নি, কথা বলে নি-এই হত্যা বৃথা যাবে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এই ব্যক্তি তো গণকদের অন্তর্গত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৮২১. মুগীরা ইবনি শুবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক নারী তাহাঁর সতীনকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে, আর সে নারী ছিল গর্ভবতী। এই মোকদ্দমা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলে, তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়-স্বজনের থেকে দিয়াত আদায়ের ফয়সালা দেন আর বাচ্চার বদলে এক দাস অথবা দাসী দেওয়ার আদেশ দেন। সেই আত্মীয়-স্বজনেরা বললোঃ আমরা এই বাচ্চার দিয়াত কেন দিব, যে এখনও খায় নি, পান করে নি, না চিৎকার করেছে, না কান্নাকাটি করেছে? এরকম খুন তো বৃথা যাবে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ বেদুঈনদের ন্যায় ছন্দপূর্ণ কথা।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ হত্যা কাকে বলে এবং এরূপ হত্যা ও গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত কে দিবে
৪৮২২. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক নারী তার সতীনকে তাঁবুর খুঁটি দ্বারা আঘাত করলো, সে ছিল গর্ভাবস্থায় এবং সে মারা গেল। এ মামলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়কে দিয়াত দিতে আদেশ করেন। আর বাচ্চার বদলে এক দাস আর দাসী দেওয়ার আদেশ দেন। তখন হত্যাকারীণীর এক আত্মীয় বললোঃ আমরা এই বাচ্চার বদলা কি করে দিব, যে না খেয়েছে, না পান করেছে, না ক্রন্দন করেছে ? এরকম খুনতো বাতিল বলে গণ্য হইবে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ বেদুঈনদের মত ছন্দপূর্ণ কথা। তিনি তাহাদের উপর দিয়াত আরোপ করিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮২৩. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
দুই সতীনের একজন অন্যজনকে তাঁবুর খুঁটি দ্বারা হত্যা করে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত দেওয়ার আদেশ জারি করেন; আর তার গর্ভস্থ শিশুর বদলে একটি দাস বা দাসী দিতে বলেন। আত্মীয়গণ বললোঃ আমরা এ বাচ্চার দিয়াত কেন দেব, যে বাচ্চা না খেয়েছে, না পান করেছে, না কান্নাকাটি করেছে। এ রকমের খুন তো বৃথা যাবে! তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এতো জাহিলী যুগের লোকদের ন্যায় ছন্দপূর্ণ কথা। তিনি গর্ভস্থ সন্তানের জন্য একজন দাস বা দাসী দেয়ার ফয়সালা দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮২৪. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বনী লিহইয়ানের এক নারী তার সতীনকে তাঁবুর খুঁটি দ্বারা আঘাত করলে সে মারা যায় আর সে ছিল গর্ভবতী। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অভিযোগ পেশ করা হলে তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত আরোপ করেন এবং শিশুর বদলে এক দাস অথবা দাসী দেয়ার আদেশ দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮২৫. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
হুযায়ল গোত্রের এক ব্যক্তির বিবাহে দুই নারী ছিল, তাহাদের একজন অন্যজনকে তাঁবুর কাষ্ঠ দ্বারা আঘাত করলে তার উদরস্থ বাচ্চা পড়ে যায়। তারা উভয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট মোকদ্দমা পেশ করে। আত্মীয়রা বলেঃ আমরা ঐ সন্তানের দিয়াত কিরূপে আদায় করবো; যে খায়নি, পান করেনি, কাঁদেনি, চীৎকার করে নি। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ বেদুঈনদের মত ছন্দযুক্ত বাক্য ! তিনি ঐ নারীর হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত আরোপ করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮২৬. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
হুযায়ল গোত্রের এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী ছিল, একজন অপর নারীর উপর একটি তাঁবুর কাঠ নিক্ষেপ করলে তার বাচ্চা গর্ভ্পাত হইয়া যায়। তখন বলা হয়ঃ কী বলেন, আমরা ঐ বাচ্চার পরিবর্তে দিয়াত দিব, যে খায়নি, পান করে নি, আর না কাঁদতে গিয়ে চিৎকার করেছে? তিনি বলিলেন, বেদুঈনদের মত ছন্দোবদ্ধ কথা! অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ ব্যাপারে এক দাস বা দাসী দেওয়ার ফয়সালা দেন। আর তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াতের ফয়সালা দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮২৭. ইব্রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক নারী তার সতীনকে তার গর্ভাবস্থায় প্রস্তরাঘাত করে হত্যা করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য দিয়াতের ফয়সালা দেন, আর তার দিয়াত হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর সাব্যস্ত করেন। তখন তারা বললোঃ যে বাচ্চা পান করেনি, খায়নি এবং ক্রন্দনও করেনি, আমর তার দিয়াত দিব? এরূপ বাচ্চার হত্যা তো বৃথা যাবে। তিনি বললেনঃ বেদুঈন লোকদের ন্যায় ছন্দযুক্ত কথা ! আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তাই হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৮২৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
দুই প্রতিবেশী নারীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন তাহাদের একজন অপরজনকে প্রস্তরাঘাত করলে সে মারা যায় এবং তার গর্ভের বাচ্চাও পড়ে যায়, যাহার মাথার চুল উঠেছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত সাব্যস্ত করেন। তখন তার চাচা বললোঃ ইয়া রাসূলু্ল্লাহ্ ! বাচ্চা পড়ে গেছে যাহার মাথায় চুল উঠেছে। হত্যাকারিণীর পিতা বললোঃ এই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী, আল্লাহর শপথ ঐ বাচ্চা চিৎকার দেয়নি, খায়নি, পান করেনি এরূপ বাচ্চাকে হত্যা তো বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ জাহিলী যুগের গণকদের ন্যায় ছন্দোবদ্ধ কথা ! নিশ্চয় বাচ্চার পরিবর্তে এক দাস বা দাসী দিতে হইবে। ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেনঃ তাহাদের একজনের নাম ছিল মুলায়কা, আর অপরজনের নাম ছিল উম্মু গাতীফা।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮২৯. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যেক গোত্রের উপর দিয়াত ফরয করিয়াছেন। আর কোন আযাদকৃত দাসের জন্য জায়েয নেই মুক্তিদাতা মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে মনিব স্থির করা।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩০. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকের চিকিৎসা করে, অথচ সে চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত নয়, সে [রোগীর জন্য] দায়ী থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৪৮৩১. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৩.পরিচ্ছেদঃ একজনের অপরাধে অন্যজনকে দায়ী করা
৪৮৩২. আবু রিমসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতার সাথে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলে, তিনি বললেনঃ তোমার সাথে এ কে? তিনি বললেনঃ আমার পুত্র, আপনি এর ব্যাপারে সাক্ষী থাকুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার অপরাধের জন্য সে দায়ী হইবে না, আর না তুমি তার অপরাধের জন্য দায়ী হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৩. সালাবা ইবনি যাহ্দাম য়ারবুঈ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আনসার গোত্রের কিছু লোককে সম্বোধন করে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তখন তারা বললোঃ ইয়া রসূলুল্লাহ ! ওই যে সালাবা ইবনি য়ারবু এর সন্তানেরা, এরা জাহিলী যুগে অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] উচ্চস্বরে বলেনঃ শুনে রাখ, একজনের অপরাধ অন্যজনের উপর বর্তায় না
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৪. সালাবা ইবনি যাহদাম হইতে বর্ণিতঃ
য়ারবু গোত্রের এক ব্যক্তির বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা সালাবা গোত্রের একদল লোক নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়। তখন তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলু্ল্লাহ্ ! এরা বনূ সালাবা ইবনি য়ারবু-এর লোক, যারা নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের একজনকে হত্যা করেছে। একথা শুনে নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ কেউ কারোর অপরাধে অপরাধী হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৫. সালাবা ইবনি যাহদাম য়ারবু গোত্রের এক ব্যক্তির বর্ণনা করেন, হইতে বর্ণিতঃ
একদা সালাবা গোত্রের একদল লোক নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়। তখন এক ব্যক্তি বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরা বনূ সালাবা ইবনি য়ারবু-এর লোক, যারা নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের একজনকে হত্যা করেছিল। একথা শুনে নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ কেউ কারো অপরাধে অপরাধী হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৬. আসওয়াদ ইবনি হিলাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তিনি সালাবা ইবনি য়ারবু গোত্রের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, তাহাদের কিছু লোক নাবী [সাঃআঃ]-এর একজন সাথীকে হত্যা করেছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একজন সাহাবী বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওই যে, বনূ সালাবা, যারা অমুককে হত্যা করেছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ একজনের অপরাধে অন্যজন অপরাধী হইবে না। শুবা বলেন, অর্থাৎ একজনের কারণে অন্যজনকে ধরা হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৭. বনী সালাবা ইবনি য়ারবু-এর এক ব্যক্তি হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হই যখন তিনি কথা বলছিলেন। এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা সালাবা ইবনি য়ারবু গোত্রের লোক, যারা অমুককে হত্যা করেছে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন লোক অন্যের অপরাধে অপরাধী হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৮. আশআস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
সালাবা ইবনি য়ারবু গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বলেছেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। তখন কিছু লোক দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা অমুক গোত্রের লোক যারা অমুককে হত্যা করেছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ একের অপরাধে অন্য কেউ অপরাধী হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৩৯. তারিক মুহারিবী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা সালাবা গোত্রের লোক, যারা জাহিলী যুগে অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। আপনি আমাদের বদলা নিয়ে দিন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করেন, এমনকি আমি তাহাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করি। তিনি বলেনঃ মায়ের অপরাধে পুত্র অপরাধী হইবে না, তিনি এটা দুবার বলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিচ্ছেদঃ দৃষ্টিহীন চোখ উপড়ে ফেললে
৪৮৪০. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে দৃষ্টিহীন চক্ষু নিজ স্থানে রয়েছে, তা যদি উপড়ে ফেলা হয়, তবে সে ব্যাপারে মীমাংসা দেন যে, তার জন্য এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হইবে। আর যে হাত অবশ হইয়া গেছে, তা কেটে ফেললে হাতের এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হইবে। যে দাঁত কালো হইয়া গেছে, তা উপড়ে ফেললে তার জন্য এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১৫.পরিচ্ছেদঃ দাঁতের দিয়াত
৪৮৪১. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক দাঁতের পরিবর্তে পাঁচ উট দিয়াত দিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৪৮৪২. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দন্তরাজি সমমানের, প্রত্যেক দাঁতের জন্য পাঁচ-পাঁচ উট দিয়াত দিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৬.পরিচ্ছেদঃ আঙ্গুলের দিয়াত
৪৮৪৩. আবু মূসা [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ-দশটি উট দিয়াত দিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৪৪. আবু মূসা আশআরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ উট। দিয়াতের বেলায় সবগুলো সমমানের।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৪৫. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ফায়সালা যে, সব আঙ্গুল সমান, প্রত্যেকটির জন্য দশ উট।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৪৬. সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যেব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি যখন সেই লিখিত কাগজ আমর ইবনি হাযাম-এর সন্তানদের নিকট পান- যে সম্পর্কে তারা পলে থাকে যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের জন্য তা লিখেছেন, তাতে তিনি লেখা পান যে, প্রতিটি আঙ্গুলের দিয়াত দশটি করে উট।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৪৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ এইটি ও এইটি অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা সমান-সমান।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৪৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এটা এবং ওটা সমান- অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কনিষ্ঠা।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ
৪৮৪৯. ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণিতঃ
আঙ্গুলের জন্য দশ-দশ উট [দিয়াত দিতে হইবে]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ
৪৮৫০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মক্কা জয় করেন, তখন তিনি তাহাঁর ভাষণে বলেনঃ আঙ্গুলের জন্য দশ-দশটি উট [দিয়াত দিতে হইবে]।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৪৮৫১. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর ভাষণে বলেন, যখন তিনি কাবার সাথে হেলান দেওয়া ছিলেনঃ সব আঙ্গুল সমান।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৭.পরিচ্ছেদঃ যে যখম হাঁড় পর্যন্ত পৌঁছে
৪৮৫২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মক্কা জয় করেন, তিনি তাহাঁর ভাষণে বলেনঃ যে যখমে হাঁড় বেরিয়ে যায়, তাতে পাঁচ-পাঁচটি উট দিয়াত দিতে হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৮.পরিচ্ছেদঃ দিয়াত বিষয়ে আমর ইবনি হাযমের হাদীস এবং এতে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
৪৮৫৩. আবু বকর ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি হাযাম [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়ামানবাসীদেরকে এক চিঠি লেখেন, যাতে ফরয, সুন্নত এবং দিয়াত সম্বন্ধে লিখেছিলেন। আর তিনি তা আমর ইবনি হাযামের মাধ্যমে পাঠান। ইয়ামানবাসীদেরকে তা পড়ে শুনানো হয়। তাতে লেখা ছিলঃ এটা নাবী মুহাম্মদ [সাঃআঃ]-এর পক্ষ হইতে শুরাহ্বিল ইবনি আব্দে কুলাল, নুআয়েম ইবনি আব্দে কুলাল এবং হারিছ ইবনি আব্দে কুলালকে, যারা যী রুআয়ন, মুআফির এবং হামদানের অধিপতি, তাতে লেখা ছিল; যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিবে, আর সাক্ষ্য-প্রমাণে তা প্রমাণিত হইবে, তবে বদলা নেয়া হইবে। তবে যদি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস ক্ষমা করে দেয়, তবে ক্ষমা হইবে। তোমাদের জানা দরকার যে, প্রাণের বিনিময় হলো একশত উট, আর যদি সম্পূর্ণ নাক কাটা যায়, তবুও একশত উট। এইভাবে জিহ্বা, ঠোঁট, পুরুষাঙ্গ, পেট এবং হাড়েরও পূর্ণ দিয়াত রয়েছে। আর চক্ষুদ্বয়ের পূর্ণ দিয়াত {একশ উট} রয়েছে। এক পায়ের অর্ধ দিয়াত কিন্তু পদদ্বয়ের পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে। এভাবে মস্তিস্কে পৌছেছে এমন যখমের জন্য অর্ধ দিয়াত। যে যখম পেট পর্যন্ত পৌঁছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত, যে যখমে হাড় ভেঙে যায়, তাতে পনের উট। আর হাত পায়ের আঙ্গুলে দশটি করে উট, আর এক দাঁতে পাঁচ উট। যে যখমে হাঁড় নড়ে যায়, তাতে পাঁচ উট। আর পুরুষকে নারীর পরিবর্তে হত্যা করা হইবে এবং যাদের নিকট স্বর্ণ রয়েছে, তাহাদের উপর এক হাজার দীনার। মুহাম্মদ ইবনি বাক্কার ইবনি বিলাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এতে মতভেদ করেন। {তার বর্ণনা নিম্নরূপ}
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮৫৪. আবু বকর ইবনি মুহাম্মদ ইবনি আমর ইবনি হাযম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়ামানবাসীদের নিকট একখানা পত্র লিখেন, যাতে ফরয, সুন্নত এবং দিয়াতের কথা ছিল। তিনি আমর ইবনি হাযম-এর মাধ্যমে তা পাঠান। ইয়ামানবাসীদের নিকট তাহাঁর এই পত্র পড়া হয়। তাতে অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ আছে। তবে তাতে এতটুকু অতিরিক্ত রয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ এক চক্ষুতে অর্ধ দিয়াত, এক হাতে অর্ধ দিয়াত, এক পায়ে অর্ধ দিয়াত। আবু আবদুর রহমান বলেনঃ ইহা সহীহ হওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহ অধিক অবহিত। ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এটি মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন [যা নিম্নরূপ]
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮৫৫. ইবনি শিহাব যুহরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঐ পত্রখানা পাঠ করেছি, যা তিনি আমার ইবনি হাযমের জন্য লিখেছিলেন, যখন তিনি তাকে নাজরানে প্রেরণ করেছিলেন। ঐ পত্র আবু বকর ইবনি হাযামের নিকট রয়েছে। সে বলেছিল, তাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লিখেছিলেনঃ এটা আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বর্ণনাঃ হে ইমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পরবর্তী কয়েক আয়াত ……. ইন্নাল্লাহা সরীউল হিসাব অর্থাৎ আল্লাহ দ্রুত হিসাবগ্রহণকারী পর্যন্ত। এরপর তিনি লেখেন এটা ফৌজফারি বিধি-বিধানঃ প্রাণনাশের দিয়াত একশত উট …….. ইত্যাদি।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮৫৬. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বকর ইবনি হাযাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমার নিকট একটি চাপড়ার পত্র নিয়ে আসেন যা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে লিখিত হইয়াছিল। তাতে লিখা ছিলঃ “ইহা আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূলের পক্ষ হইতে বর্ণনাঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর।” এরপর কয়েকটি আয়াত বর্ণিত হইয়াছে। তারপর তিনি বলেনঃ প্রাণের বিনিমেয়ে একশত উট, আর চক্ষুতে পঞ্চাশ উট, হাতেরে বদলে পঞ্চাশ উট, পা-এর পরিবর্তে পঞ্চাশ উট, আর যে যখম হাঁড়ের মগজ পর্যন্ত পৌছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত। আর যে যখম পেটের ভিতর পৌঁছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ, আর যে যখমে হাঁড় স্থানচ্যুত হয়, তাতে পনর উট, আর আঙ্গুলে দশ-দশটি উট, আর দাঁতে পাঁচ উট। আর যে যখমে হাঁড় দেখা দেয়, তাতে পাঁচ উট।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮৫৭. আবদুল্লাহ ইবনি আবু বকর ইবনি মুহাম্মদ ইবনি হায্ম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ দিয়াত সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমর ইবনি হায্মের জন্য যে পত্র লিখেন, তাতে ছিলঃ প্রাণের পরিবর্তে এক শত উট, আর পূর্ণ নাকের জন্য একশত উট, আর যে যখম মগজ পর্যন্ত পৌঁছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ এবং যে যখম পেট পর্যন্ত পৌঁছে, তাতেও তদ্রুপ। আর হাতের জন্য পঞ্চাশ উট, চোখের জন্য পঞ্চাশ এবং পায়ের জন্য পঞ্চাশ। প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ উট, আর দাঁতের জন্য পাঁচ উট এবং যে যখমে হাঁড় প্রকাশ পায়, তাতে পাঁচ উট।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৮৫৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরজায় এসে ছিদ্রে চক্ষু লাগিয়ে দেখিতে লাগলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা দেখিতে পেয়ে একখণ্ড কাঠ অথবা লোহা নিয়ে তার চোখ ফুঁড়ে দিতে ইচ্ছা করিলেন। সে তা দেখে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যদি তুমি সেখানে চোখ রাখতে, তবে আমি তা ফুঁড়ে দিতাম।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৫৯. সাহ্ল ইবনি সাদ সাঈদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঘরের ছিদ্রপথে দেখছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একখণ্ড কাষ্ঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাহাঁর মাথা চুলকাতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাকে দেখলেন, তখন বললেনঃ যদি আমি জানিতে পারতাম যে, তুমি আমাকে দেখছো, তবে আমি তোমার চোখে এই কাষ্ঠ ঢুকিয়ে দিতাম। অনুমতি গ্রহণের বিধান তো দেওয়া হইয়াছে এজন্যই যাতে উঁকি মেরে দেখিতে না হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯.পরিচ্ছেদঃ নিজে প্রতিশোধ গ্রহণ করা
৪৮৬০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি কারো ঘরে তার বিনা অনুমতিতে উঁকি মারে আর ঘরের মালিক তার চোখ ফুঁড়ে দেয়, তবে সে দিয়াত এবং বদলা কিছুই পাবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি অনুমতি ব্যতীত তোমার দিকে উঁকি মারে আর তুমি পাথর নিক্ষেপ করে ঐ ব্যক্তির চোখ ফুটা কর, তবে তাতে তোমার কোন পাপ হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬২. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি নামায পড়ছিলেন, এমন সময় মারওয়ানের পুত্র তাহাঁর সম্মুখে দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি নিষেধ করা সত্ত্বেও সে মানলো না। তখন আবু সাইদ [রাঃআঃ] তাকে মারলেন। সে কাঁদতে কাঁদতে মারওয়ানের নিকট গেল। মারওয়ান আবু সাইদ [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলোঃ আপনি আপনার ভাইয়ের ছেলেকে কেন মারলেন ? আবু সাইদ [রাঃআঃ] বললেনঃ আমি তাকে মারিনি বরং শয়তানকে মেরেছি। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যদি তোমাদের কারো নামায পড়ার সময় তোমাদের সামনে দিয়ে কেউ অতিক্রম করিতে চায়, তবে যতটুকু সম্ভব তাকে বাধা দেবে। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে যুদ্ধ করিবে; কেননা সে শয়তান।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ [আরবি] {১} এর ব্যাখ্যা
________________________________________
{১} অর্থঃ কেউ ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হইবে। [৪ ঃ ৯৩]
৪৮৬৩. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি আবযা [রাঃআঃ] আমাকে আদেশ করিলেন, আমি যেন ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর নিকট দুটি আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞাসা করি। এক আয়াত হলঃ [আরবি] “কেউ ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করলে . . . .”। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ এই আয়াত রহিত হয়নি। আর দ্বিতীয় আয়াত হলঃ [আরবি]{১}। আমি এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেনঃ এই আয়াত মুশরিকদের সম্বন্ধে নাযিল হইয়াছে।
{১} অর্থঃ “যারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যাহার হত্যা নিষেধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলি করে সে শাস্তি ভোগ করিবে . . . তবে তারা নয়, যারা তওবা করে. . .” [২৫ ঃ ৬৮-৭০]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬৪
সাঈদ ইব্ন জুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আয়াত [আরবি] রহিত হইয়াছে কিনা এ সম্পর্কে কূফাবাসীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। আমি ইব্ন আব্বাস [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া এ ব্যাপারে জিজ্ঞসা করলাম। তিনি বললেনঃ এই আয়াতটি তো শেষদিকে অবতীর্ণ আয়াতসমূহের একটি। একে কোন আয়াতই রহিত করেনি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬৫. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তার তওবা কবূল হইবে কি? তিনি বললেনঃ না। আমি সূরা ফুরকানের [আরবি] এ আয়াতের শেষ পর্যন্ত পাঠ করলাম। তিনি বললেনঃ এই আয়াতটি মক্কায় নাযিল হইয়াছে। আর মদীনায় অবতীর্ণ সূরা বাকারার উপরিউক্ত আয়াত এটাকে রহিত করে দিয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬৬. সালিম ইবনি আবুল জাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
কেউ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলোঃ যদি কেউ কোন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, পরে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, সোজা পথে আসে, তবে কি তাহাঁর তাওবা কবূল হইবে ? ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বললেনঃ তার তাওবা কীরুপে কবূল হইবে ? আমি তোমাদের নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে ধরে আনবে, তখনও তার ধমনী হইতে রক্তধারা প্রবাহিত হইতে থাকিবে। সে বলবেঃ হে আল্লাহ! একে জিজ্ঞাসা করুন, সে আমাকে কেন হত্যা করেছিল? ইবনি আব্বাস বলেনঃ এই আদেশ আল্লাহ নাযিল করিয়াছেন, তিনি তা রহিত করেন নি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কবীরা গুনাহগুলো হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে অন্যায়ভাবে হ্ত্যা করা এবং মিথ্যা বলা।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮৬৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন ব্যভিচার করে, তখন সে ঈমানদার অবস্থায় ব্যভিচার করে না, আর যখন সে মদ্য পান করে, তখন ঈমানদার অবস্থায় মদ্য পান করে না, মুমিন অবস্থায় চুরি করে না, আর মুমিন অবস্থায় কাউকে হত্যা করে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply