পর্ব-১৫ঃ দাস দাসী মুক্ত করা ( কৃতদাস আযাদ করা সর্বোত্তম )

দাস দাসী মুক্ত করা

দাস দাসী মুক্ত করা >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ১ঃ দাস দাসী মুক্ত করা

পরিচ্ছেদ ০১. দাস-দাসী আযাদ করার ফযীলাত প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ – কোন কৃতদাস আযাদ করা সর্বোত্তম
পরিচ্ছেদ ০২. শরীকানা দাস-দাসীর মুক্তকারীর সম্পর্কে
পরিচ্ছেদ – পিতাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার ফযীলাত
পরিচ্ছেদ ০৩. কোন ব্যক্তি মাহরামের মনিব হলে ঐমাহরাম দাস আযাদ বলে গণ্য হইবে
পরিচ্ছেদ ০৪. মৃত্যুর সময় সকল দাসকে মুক্ত করার বিধান যখন ঐ দাসগুলোই তার একমাত্র সম্পদ
পরিচ্ছেদ ০৫. যে ব্যক্তি স্বীয় দাসকে আযাদ করে দেয় এবং তাকে সেবা করার শর্ত করে
পরিচ্ছেদ ০৬. ওয়ালা [ দাসত্ব মুক্তি সুত্রে উত্তরাধিকার ] ঐ ব্যক্তির সাবাস্ত হইবে যে দাসকে আযাদ করে দেয়
পরিচ্ছেদ ০৭. ওয়ালার বিধানাবলী

পরিচ্ছেদ ০১. দাস-দাসী আযাদ করার ফযীলাত প্রসঙ্গে

১৪১৮

আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যে কোন মুসলিম কোন মুসলিমকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দান করিবে ঐ দাসের প্রতিটি অঙ্গের মুক্তির বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রত্যেক অঙ্গকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করবেন। {১৫২৬}

{১৫২৬} বোখারী ৬৭১৫, মুসলিম ১৫০৯, তিরমিজি ১৫৪১, আহম্মদ ৫১৫৪, ৯২৫৭, ৯২৭৮।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৪১৯

আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যে মুসলিম দুজন মুসলিম মহিলাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দান করিবে ঐ দুজন মহিলার মুক্তির বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হতে তার মুক্তি লাভ হইবে। ঈমাম তিরমিজি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। {১৫২৮}

{১৫২৭} তিরমিজি ১৫৪৭।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৪২০

কাব ইবনি মুররা হইতে বর্ণীতঃ

কোন মুসলিম নারী যদি কোন মুসলিম নারীকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তবে এটা তার জাহান্নাম হতে মুক্তিলাভের কারণ হইবে।

{১৫২৮} আবু দাউদ ৩৯৬৭, তিরমিযির হাদিস সহিহ ও আবু দাউদের হাদিস মাকবুল; তাওযিহুল আহকাম ৭/২৪৩

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ – কোন কৃতদাস আযাদ করা সর্বোত্তম

১৪২১

আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল উত্তম? তিনি বলিলেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাহাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম? তিনি বলিলেন, যে ক্রীতদাসের মূল্য অধিক এবং যে ক্রীতদাস তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। {১৫২৯}

{১৫২৯} বোখারীতে আরো রহিয়াছে, [আরবি] আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ যদি আমি করিতে না পারি? তিনি বলিলেন, তাহলে কাজের লোককে [তার কাজে] সাহায্য করিবে কিংবা বেকারকে কাজ দিবে। আমি [আবারও] বললাম, এও যদি না পারি? তিনি বলিলেন, মানুষকে তোমার অনিষ্টতা হতে মুক্ত রাখবে। বস্তুতঃ এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ হতে সাদাকাহ। বোখারী ২৫১৮, মুসলিম ৮৪, নাসায়ী ৩১২৯, ইবনি মাজাহ ২৫২৩, আহম্মদ ২০৮২৪, দারিমী ২৭৩৮।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০২. শরীকানা দাস-দাসীর মুক্তকারীর সম্পর্কে

১৪২২

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কেউ যদি কোন ক্রীতদাস হতে নিজের অংশ মুক্ত করে আর ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হইবে ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদেরকে তাহাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করিবে এবং ক্রীতদাসটি তার পক্ষ হতে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু [সে পরিমাণ অর্থ] না থাকলে তার পক্ষ হতে ততটুকুই মুক্ত হইবে যতটুকু সে মুক্ত করেছে। {১৫৩০}

{১৫৩০} [আরবি] এ শব্দের অর্থ [আরবি] অথাৎ অংশ, ভাগ। বোখারী ২৪৯১, ২৪০৩, ২৫২১, ২৫২৫, ২৫২৪, মুসলিম ১৫০১, তিরমিজি ১৩৪৬, নাসায়ী ৪৬৯৯, আবু দাউদ ৩৯৪০, ৩৯৪৩।টুকু সে মুক্ত করেছে। {১৫৩০}

দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৪২৩

আবু হুরাইরা [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ

একাকী পূর্ণ আযাদ করিতে সক্ষম না হলে মূল্য ধার্য করা হইবে আর মূল্য সংগ্রহের জন্য দাসের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলবে। এতে তার উপরে কোন কঠোরতা আরোপ করা হইবে না।{১৫৩১}

বলা হয়ে থাকে যে, চেষ্টা করার জন্য যে বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে তা মুদরাজ বা কোন রাবীর নিজস্ব বক্তব্য- হাদিসের অংশ নয়। প্রকৃত পক্ষে এটিও হাদিসেরই অংশ। {১৫৩২}

{১৫৩১} বোখারী এবং মুসলিমে এর প্রথমাংশটুকু হলো কেউ শরীকী ক্রীতদাস হতে নিজের ভাগ বা অংশ [রাবীর দ্বিধা] মুক্ত করে দিলে অর্থ ব্যয়ে সেই ক্রীতদাসকে নিস্কৃতি দেয়া তার উপর কর্তব্য, যদি তার কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে। তার পরের অংশটুকু উপরে বর্ণিত।

{১৫৩২} বোখারী ২৪৯২, ২৫০৪, মুসলিম ১৫০৩, তিরমিজি ১৩৪৩, আবু দাউদ ৩৯৩৭, ৩৯৩৮, ইবনি মাজাহ ২৫২৭, আহম্মদ ৭৪১৯, ৮৩৬০, ১০৪৯১ ।

দাস মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ – পিতাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার ফযীলাত

১৪২৪

আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ কোন পুত্র তার পিতার হাক্ব আদায় করিতে সক্ষম হইবে না, কিন্তু যদি পিতাকে গোলাম অবস্থায় পায় আর তাকে ক্রয় করে আযাদ করে [তবে তার পিতার হক পরিশোধ হতে পারে]। {১৫৩৩}

{১৫৩৩} নাসাঈর বর্ণনায় আরো রয়েছে,তুমি তোমার পরিবারের পিছনে ব্যয় করিবে। মুসলিম ১৫১০, তিরমিজি ১৯০৬, আবু দাউদ ৫১৩৭, ইবনি মাজাহ ৩৬৫৯, আহম্মদ ৭৫১৬, ৮৬৭৬।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. কোন ব্যক্তি মাহরামের মনিব হলে ঐমাহরাম দাস আযাদ বলে গণ্য হইবে

১৪২৫

সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, যে ব্যক্তি এমন কোন আত্মীয়ের [রক্ত সম্পর্কযুক্ত লোকের] মনিব হয় যাদের মধ্যে বিয়ে হারাম তবে সে [উক্ত গোলাম] আযাদ হয়ে যায়।একদল হাদিস বিশেষজ্ঞ এটিকে মাওকুফ বলেছেন।{১৫৩৪}

{১৫৩৪} আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, তাহকিক ইবনি মাযাহ। আবু দাউদের বর্ণনায় রয়েছে, [আরবি] যে কোন দাস নিজের মুক্তির জন্য একশত উকুয়া ধার্য অতঃপর দশ উকিয়া ব্যতিত সম্পূর্ণই পরিশোধ করে তাহলে সেই দাস [বলে গণ্য হইবে]। যে কোন দাস একশত দিনারের বিনিময়ে নিজের মুক্তি চায় অতঃপর দশ দিনার ব্যতিত আর সবটুকুই প্রিশোধ করে তাহলেও সে দাস বলে গণ্য হইবে। আবু দাউদ ৩৯৪৯, তিরমিজি ১৩৬৫, ইবনি মাজাহ ২৫২৪, আহম্মদ ১৯৬৫৪, ১৯৬৯২, ১৯৭১৫।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৪. মৃত্যুর সময় সকল দাসকে মুক্ত করার বিধান যখন ঐ দাসগুলোই তার একমাত্র সম্পদ

১৪২৬

ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন এক ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তার ছয়টি দাস মুক্ত করে দেন। ঐ দাসগুলা ছাড়া তার আর কোন সম্পদ ছিল না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে ডেকে পাঠালেন ও তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলেন। তার পর প্রত্যেক ভাগের উপর লটারি দিয়ে এর ভিত্তিতে দুটো দাসকে মুক্ত করে দিলেন ও চারজনকে দাস করে রাখলেন। এবং তাকে [এদের মনিবকে] কঠোর কথা বলিলেন। {১৫৩৫}

{১৫৩৫} মুসলিম ১৬৬৮, তিরমিজি ১৩৬৪, নাসাঈ ১৯৫৮, আবু দাউদ ৩৯৬১, ইবনি মাজাহ ২৩৪৫, আহম্মদ ১৯৩২৫, ১৯৫৭, দারিমী ১৫০৬।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৫. যে ব্যক্তি স্বীয় দাসকে আযাদ করে দেয় এবং তাকে সেবা করার শর্ত করে

১৪২৭

সাফীনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি [নাবীর সহধর্মিণী] উম্মে সালামাহ [রাদি.] এর দাস ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, আমি তোমাকে এর শর্তে আযাদ করে দিচ্ছি যে, তুমি তোমার জীবন কাল পর্যন্ত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর খিদমত করিবে।। {১৫৩৬}

{১৫৩৬} আবু দাউদ ৩৯৩২, ইবনি মাজাহ ২৫২৬।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. ওয়ালা [ দাসত্ব মুক্তি সুত্রে উত্তরাধিকার ] ঐ ব্যক্তির সাবাস্ত হইবে যে দাসকে আযাদ করে দেয়

১৪২৮

আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, [ওয়ালা দাসত্ব মুক্তিসুত্রে উত্তরাধিকার] ঐ ব্যক্তির জন্য সাব্যস্ত হইবে যে দাসকে আযাদ করে দেয়। {১৫৩৭}

{১৫৩৭} বোখারী ৪৫৫, ২১৫৫, ২১৬৮ , মুসলিম ১৫০৪, তিরমিজি ১২৫৬, আবু দাউদ ৩৯২৯, ইবনি মাজাহ ৩৮৩৪, মালেক ১৫১৯।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. ওয়ালার বিধানাবলী

১৪২৯

ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ওয়ালা একটা বলিষ্ঠ সম্পর্ক যেমন রক্তের সম্পর্ক [ঘনিষ্ঠ ও স্হায়ী হয়ে থাকে]। অতএব তা বিক্রি করা যায় না, এবং দান করাও যায় না । {১৫৩৮}

{১৫৩৮} আবু দাউদ ৩৯২৯ , ইবনি মাজাহ ৩৮৩৫, মালিক ১৫১৯।

দাস দাসী মুক্ত করা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

Comments

One response to “পর্ব-১৫ঃ দাস দাসী মুক্ত করা ( কৃতদাস আযাদ করা সর্বোত্তম )”

Leave a Reply