দালালী ব্যবসা ও বেচা-কেনায় অবৈধ শর্তারোপ করা
দালালী ব্যবসা ও বেচা-কেনায় অবৈধ শর্তারোপ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৩৪, ক্রয় ও বিক্রয়, অধ্যায়ঃ (৬০-৭৩)=১৪টি
৩৪/৬০. অধ্যায়ঃ ধোঁকাপূর্ণ দালালী এবং এরূপ ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ হওয়ার মতামত
৩৪/৬১. অধ্যায়ঃ ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় এবং গর্ভস্থিত বাচ্চা গর্ভ হইতে বের হওয়ার পর তা গর্ভবতী হয়ে বাচ্চা প্রসব করা পর্যন্ত মেয়াদে বিক্রয় করা।
৩৪/৬২. অধ্যায়ঃ ছোঁয়ার মাধ্যমে কেনা-বেচা করা
৩৪/৬৩. অধ্যায়ঃ মুনাবাজার (পরস্পর নিক্ষেপের) দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় করা।
৩৪/৬৪. অধ্যায়ঃ উষ্ট্রী, গাভী ও বকরীর দুধ বেশী দেখানোর জন্য পালানে দুধ জমা করা বিক্রেতার জন্য নিষেধ।
৩৪/৬৫. অধ্যায়ঃ কেউ পালানে দুধ জমা করা পশু খরিদ করার পর চাইলে ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তা দোহন করার বিনিময়ে এক সা খেজুর প্রদান করিতে হইবে।
৩৪/৬৬. অধ্যায়ঃ যিনাকার গোলামের বিক্রয়ের বর্ণনা।
৩৪/৬৭. অধ্যায়ঃ মহিলার সাথে কেনা-বেচা জায়িয
৩৪/৬৮. অধ্যায়ঃ শহরের অধিবাসী কি গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দার পক্ষ হইতে বিক্রয় করিতে কিংবা তাকে সাহায্য বা সৎ পরামর্শ প্রদান করিতে পারে?
৩৪/৬৯. অধ্যায়ঃ মজুরী নিয়ে শহরবাসী কর্তৃক পল্লীবাসীর পক্ষে বিক্রয় করাকে যারা দূষণীয় মনে করেন।
৩৪/৭০. অধ্যায়ঃ শহরবাসী পল্লীবাসীর জন্য দালালীর মাধ্যমে কোন সামগ্রী ক্রয় করিবে না।
৩৪/৭১. অধ্যায়ঃ সস্তায় কিছু ক্রয় করার মানসে অগ্রসর হয়ে কাফেলার সঙ্গে মিলিত হয়ে কিছু ক্রয় করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং এ ধরনের খরিদ এক প্রকার অবৈধ কাজ ও প্রতারণা- এ কথা জেনেও কেউ তা করলে সে অবাধ্য ও পাপী।
৩৪/৭২. অধ্যায়ঃ অগ্রসর হয়ে কাফেলার সঙ্গে (বণিক দলের সাথে) সাক্ষাতের সীমা।
৩৪/৭৩. অধ্যায়ঃ বেচা-কেনায় অবৈধ শর্তারোপ করা
৩৪/৬০. অধ্যায়ঃ ধোঁকাপূর্ণ দালালী এবং এরূপ ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ হওয়ার মতামত
ইবনু আবু আওফা (রাদি.) বলেন, দালাল হলো সুদখোর, খিয়ানতকারী। আর দালালী হল প্রতারণা, যা বাতিল ও অবৈধ। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, প্রতারণার ঠিকানা জাহান্নাম। যে এরূপ আমল করে যা আমাদের শরীআতের পরিপন্থী; তা পরিত্যাজ্য।
২১৪২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) প্রতারণামূলক দালালী হইতে নিষেধ করিয়াছেন।
(৬৯৬৩, মুসলিম ২১/৪, হাদীস ১৫১৬) (আ.প্র. ১৯৯৪, ই.ফা. ২০০৯)
৩৪/৬১. অধ্যায়ঃ ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় এবং গর্ভস্থিত বাচ্চা গর্ভ হইতে বের হওয়ার পর তা গর্ভবতী হয়ে বাচ্চা প্রসব করা পর্যন্ত মেয়াদে বিক্রয় করা।
২১৪৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) গর্ভস্থিত বাচ্চার গর্ভের প্রসবের মেয়াদের উপর বিক্রি নিষেধ করিয়াছেন। এ এক ধরনের বিক্রয়, যা জাহিলিয়াতের যুগে প্রচলিত ছিল। কেউ এ শর্তে উটনী ক্রয় করত যে, এই উটনীটি প্রসব করিবে পরে ঐ শাবক তার গর্ভ প্রসব করার পর তার মূল্য দেয়া হইবে।
৩৪/৬২. অধ্যায়ঃ ছোঁয়ার মাধ্যমে কেনা-বেচা করা
আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এরূপ বেচা-কেনা হইতে নিষেধ করিয়াছেন।
২১৪৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুনাবাযা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করিয়াছেন। তা হল, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রেতা কাপড়টি উল্টানো পাল্টানো অথবা দেখে নেয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। আর তিনি মুলামাসা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করিতেও নিষেধ করিয়াছেন। মুলামাসা হল কাপড়টি না দেখে স্পর্শ করা (এতেই বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হতো)।
২১৪৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, দুই ধরনের পোশাক পরিধান করা হইতে নিষেধ করা হয়েছে। তা হলো একটি কাপড় শরীরে জড়িয়ে তার এক পার্শ্ব কাঁধের উপর তুলে দেয়া এবং দুই ধরনের বেচা-কেনা হইতে নিষেধ করা হয়েছে; স্পর্শের এবং নিক্ষেপের বেচা-কেনা।
৩৪/৬৩. অধ্যায়ঃ মুনাবাজার (পরস্পর নিক্ষেপের) দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় করা।
আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এরূপ ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করিয়াছেন।
২১৪৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) স্পর্শ ও নিক্ষেপের পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করিয়াছেন।
২১৪৭. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুধরনের পোশাক পরিধান এবং স্পর্শ ও নিক্ষেপ এরূপ দুধরনের (পদ্ধতিতে) বেচা-কেনা নিষেধ করিয়াছেন।
৩৪/৬৪. অধ্যায়ঃ উষ্ট্রী, গাভী ও বকরীর দুধ বেশী দেখানোর জন্য পালানে দুধ জমা করা বিক্রেতার জন্য নিষেধ।
মুসাররাত সে জন্তুকে বলা হয়, যার দুধ কয়েক দিন দোহন না করে আটকিয়ে এবং জমা করে রাখা হয়। তাসরিয়ার মূল অর্থঃ পানি আটকিয়ে রাখা। এ হইতে বলা হয় ………………….. আমি পানি আটকিয়ে রেখেছি বলবে, যখন তুমি পানিকে আটকিয়ে রাখবে।
২১৪৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তোমরা উটনী ও বকরীর দুধ (স্তন্যে) আটকিয়ে রেখ না। যে ব্যক্তি এরূপ পশু ক্রয় করে, সে দুধ দোহনের পরে দুটি অধিকারের যেটি তার পক্ষে ভাল মনে করিবে তাই করিতে পারবে। যদি সে ইচ্ছা করে তবে ক্রীত পশুটি রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছা করে তবে তা ফেরত দিবে এবং এর সাথে এক সা পরিমাণ খেজুর দিবে। আবু সালিহ মুজাহিদ, ওয়ালীদ ইবনু রাবাহ ও মূসা ইবনু ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এক সা খেজুরের কথা উল্লেখ রয়েছে। কেউ কেউ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে এক সা খাদ্যের কথা বলেছেন এবং ক্রেতার জন্য তিন দিনের ইখতিয়ার থাকবে। আর কেউ কেউ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে এক সা খেজুরের কথা বলেছেন, তবে তিন দিনের কথা উল্লেখ করেননি। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অধিকাংশের বর্ণনায় খেজুরের উল্লেখ রয়েছে]।
২১৪৯. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (স্তন্যে) দুধ আটকিয়ে রাখা বকরী ক্রয় করে তা ফেরত দিতে চায়, সে যেন এর সঙ্গে এক সা পরিমাণ খেজুরও দেয়। আর নাবী (পণ্য ক্রয় করার জন্য) বণিক দলের সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে পথিমধ্যে) সাক্ষাৎ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
২১৫০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা (পণ্যবাহী) কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাৎ করিবে না তোমাদের কেউ যেন কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে। তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করিবে না। শহরবাসী তোমাদের কেউ যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। তোমরা বকরীর দুধ আটকিয়ে রাখবে না। যে এরূপ বকরী ক্রয় করিবে, সে দুধ দোহনের পরে এ দুটির মধ্যে যেটি ভাল মনে করিবে, তা করিতে পারে। সে যদি এতে সন্তুষ্ট হয় তবে বকরী রেখে দিবে, আর যদি সে তা অপছন্দ করে তবে ফেরত দিবে এবং এক সা পরিমাণ খেজুর দিবে।
৩৪/৬৫. অধ্যায়ঃ কেউ পালানে দুধ জমা করা পশু খরিদ করার পর চাইলে ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তা দোহন করার বিনিময়ে এক সা খেজুর প্রদান করিতে হইবে।
২১৫১. মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (স্তনে) দুধ আটকিয়ে রাখা বকরী ক্রয় করে, তবে দোহনের পরে যদি ইচ্ছা করে তবে সেটি রেখে দেবে আর যদি অপছন্দ করে তবে দুহিত দুধের বিনিময়ে এক সা খেজুর দিবে।
৩৪/৬৬. অধ্যায়ঃ যিনাকার গোলামের বিক্রয়ের বর্ণনা।
(কাযী) শুরায়হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ক্রেতা ইচ্ছা করলে যিনাকার হওয়ার কারণে গোলাম ফিরিয়ে দিতে পারে।
২১৫২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যদি বাঁদী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয়, তবে তাকে বেত্রাঘাত করিবে। আর তিরস্কার করিবে না। তারপর যদি আবার ব্যভিচার করে তবে তাকে বিক্রি করে দিবে; যদিও পশমের রশির (ন্যায় সামান্য বস্তুর) বিনিময়েও হয়।
২১৫৩. আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে অবিবাহিতা দাসী যদি ব্যভিচার করে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি সে ব্যভিচার করে, তবে তাকে বেত্রাঘাত কর। আবার যদি সে ব্যভিচার করে আবার বেত্রাঘাত কর। এরপর যদি ব্যভিচার করে তবে তাকে রশির বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে দাও। রাবী ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, একথা তৃতীয় বারের না চতুর্থ বারের পর বলেছেন, তা আমার সঠিক জানা নাই।
২১৫৪. আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে অবিবাহিতা দাসী যদি ব্যভিচার করে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি সে ব্যভিচার করে, তবে তাকে বেত্রাঘাত কর। আবার যদি সে ব্যভিচার করে আবার বেত্রাঘাত কর। এরপর যদি ব্যভিচার করে তবে তাকে রশির বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে দাও। রাবী ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, একথা তৃতীয় বারের না চতুর্থ বারের পর বলেছেন, তা আমার সঠিক জানা নাই।
৩৪/৬৭. অধ্যায়ঃ মহিলার সাথে কেনা-বেচা জায়িয
২১৫৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার ঘরে প্রবেশ করিলেন তখন আমি তাহাঁর নিকট (বারীরাহ নাম্নী দাসীর ক্রয় সংক্রান্ত ঘটনা) উল্লেখ করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি ক্রয় কর এবং আযাদ করে দাও। কেননা, যে আযাদ করিবে ওয়ালা [৯] (আযাদ সূত্রে উত্তরাধিকার) তারই। তারপর নাবী (সাঃআঃ) বিকালের দিকে (মসজিদে নাববীতে) দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার যথাযথ প্রশংসা বর্ণনা করেন তারপর বলিলেন, লোকদের কী হলো যে, তারা এরূপ শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। কোন ব্যক্তি যদি এমন শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল, যদিও সে শত শত শর্তারোপ করে। আল্লাহর শর্তই সঠিক ও সুদৃঢ়।
[৯] ওয়ালা বলিতে বুঝায় মুক্তিপ্রাপ্ত দাস-দাসীর স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি এবং এর মালিক হইবে যে তাকে মুক্ত করেছে।
২১৫৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাদি.) বারীরার দরদাম করেন। নাবী (সাঃআঃ) সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। যখন ফিরে আসেন তখন আয়েশা (রাদি.) তাঁকে বলিলেন যে, তারা (মালিক পক্ষ) ওয়ালা এর শর্ত ছাড়া বিক্রি করিতে রাযী নয়। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওয়ালা তো তারই, যে আযাদ করে। রাবী হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, বারীরার স্বামী আযাদ ছিল, না দাস? তিনি বলিলেন, আমি কি করে জানব?
৩৪/৬৮. অধ্যায়ঃ শহরের অধিবাসী কি গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দার পক্ষ হইতে বিক্রয় করিতে কিংবা তাকে সাহায্য বা সৎ পরামর্শ প্রদান করিতে পারে?
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের সাহায্য কামনা করে তখন সে যেন তার উপকার করে। এ বিষয়ে আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।
২১৫৭. জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর হাতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ- এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার, সালাত কায়িম করার, যাকাত দেয়ার, আমীরের কথা শুনার ও মেনে চলার এবং প্রত্যেক মুসলমানের হিত কামনা করার উপর বায়আত করেছিলাম।
২১৫৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা পণ্যবাহী কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে সস্তায় পণ্য খরিদের উদ্দেশ্যে) সাক্ষাৎ করিবে না এবং শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। রাবী তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে, তাহাঁর এ কথার অর্থ কী? তিনি বলিলেন, তার হয়ে যেন সে প্রতারণামূলক দালালী না করে।
৩৪/৬৯. অধ্যায়ঃ মজুরী নিয়ে শহরবাসী কর্তৃক পল্লীবাসীর পক্ষে বিক্রয় করাকে যারা দূষণীয় মনে করেন।
২১৫৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রয় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.)- ও অনুরূপ কথাই বলেছেন।
৩৪/৭০. অধ্যায়ঃ শহরবাসী পল্লীবাসীর জন্য দালালীর মাধ্যমে কোন সামগ্রী ক্রয় করিবে না।
ইবনু সীরীন ও ইবরাহীম (নাখয়ী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য তা নাজায়িয বলেছেন। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আরববাসী বলে, بِع لِي ثَوباً তারা এর অর্থ গ্রহণ করে ক্রয় করার অর্থাৎ আমাকে একটি কাপড় ক্রয় করে দাও।
২১৬০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ যেন তার ভাইয়ের কেনা-বেচার উপরে ক্রয় না করে। আর তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করিবে না
[১০] এবং শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রি না করে।. [১০] কেবলমাত্র ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দালালী নিষিদ্ধ।
২১৬১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রি করা হইতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
৩৪/৭১. অধ্যায়ঃ সস্তায় কিছু ক্রয় করার মানসে অগ্রসর হয়ে কাফেলার সঙ্গে মিলিত হয়ে কিছু ক্রয় করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং এ ধরনের খরিদ এক প্রকার অবৈধ কাজ ও প্রতারণা- এ কথা জেনেও কেউ তা করলে সে অবাধ্য ও পাপী।
২১৬২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, শহরে প্রবেশের পূর্বে বণিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রি করা হইতে নাবী (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন।
২১৬৩. তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসী বিক্রয় করিবে না, এ উক্তির অর্থ কী, তা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, তার পক্ষে দালালী করিবে না।
২১৬৪. আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি স্তনে দুধ আটকিয়ে রাখা (বকরী-গাভী) উটনী ক্রয় করে (তা ফেরত দিলে) সে যেন তার সাথে এক সা (খেজুরও) ফেরত দেয়। তিনি আরো বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বণিক দলের সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাৎ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
২১৬৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তোমাদের কেউ কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যেন ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তোমরা পণ্য ক্রয় করো না তা বাজারে হাজির না করা পর্যন্ত।
৩৪/৭২. অধ্যায়ঃ অগ্রসর হয়ে কাফেলার সঙ্গে (বণিক দলের সাথে) সাক্ষাতের সীমা।
২১৬৬. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা বণিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের হইতে খাদ্য ক্রয় করতাম। নাবী (সাঃআঃ) খাদ্যের বাজারে পৌঁছানোর পূর্বে আমাদের তা ক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তা হল বাজারের প্রান্ত সীমা। উবায়দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর হাদীসে এ বর্ণনা রয়েছে।
২১৬৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা বাজারের প্রান্ত সীমায় খাদ্য ক্রয় করে সেখানেই বিক্রি করে দিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) স্থানান্তর না করে সেখানেই বিক্রি করিতে তাদের নিষেধ করিয়াছেন।
৩৪/৭৩. অধ্যায়ঃ বেচা-কেনায় অবৈধ শর্তারোপ করা
২১৬৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বারীরাহ (রাদি.) আমার কাছে এসে বলিল, আমি আমার মালিক পক্ষের সাথে নয় উকিয়া দেয়ার শর্তে মুকাতাবা [১১] করেছি- প্রতি বছর যা হইতে এক উকিয়া করে দেয়া হইবে। আপনি (এ ব্যাপারে) আমাকে সাহায্য করুন। আমি বললাম, যদি তোমার মালিক পক্ষ পছন্দ করে যে, আমি তাদের একবারেই তা পরিশোধ করব এবং তোমার ওয়ালা-এর অধিকার আমার হইবে, তবে আমি তা করব। তখন বারীরাহ (রাদি.) তার মালিকদের নিকট গেল এবং তাদের তা বলিল। তারা তা অস্বীকার করিল। বারীরাহ (রাদি.) তাদের নিকট হইতে (আমার কাছে) এল। আর তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সে বলিল, আমি (আপনার) সে কথা তাদের কাছে পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা নিজেদের জন্য ওয়ালার অধিকার সংরক্ষণ ছাড়া রাযী হয় নি। নাবী (সাঃআঃ) তা শুনলেন, আয়েশা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-কে তা সবিস্তারে জানালেন। তিনি বলিলেন, তুমি তাকে নিয়ে নাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার শর্ত মেনে নাও। কেননা, ওয়ালা এর হক তারই, যে আযাদ করে। আয়েশা (রাদি.) তাই করিলেন। এরপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করিলেন। তারপর বলিলেন, লোকদের কি হল যে, তারা এমন শর্তারোপ করে যা আল্লাহর বিধানে নেই? আল্লাহর বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাতিল বলে গণ্য হইবে, শত শর্ত হলেও। আল্লাহর ফায়সালাই সঠিক, আল্লাহর শর্তই সুদৃঢ়। ওয়ালার হাক্ব তো তারই, যে মুক্ত করে।
[১১] নিজের দাস-দাসীকে কোন কিছুর বিনিময়ে আযাদ করার চুক্তিকে মুকাতাবা বলে।
২১৬৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) একটি দাসী ক্রয় করে তাকে আযাদ করার ইচ্ছা করেন। দাসীটির মালিক পক্ষ বলিল, দাসীটি এ শর্তে বিক্রি করব যে, তার ওয়ালার হক আমাদের থাকবে। তিনি এ কথা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর কাছে উল্লেখ করিলেন। তিনি বলিলেন, এতে তোমার বাধা হইবে না। কেননা, ওয়ালা তারই, যে মুক্ত করে।
Leave a Reply