দান ও সদকা করার ফযীলত -মিসকীন ইয়াতিম আত্মীয়

দান ও সদকা করার ফযীলত -মিসকীন ইয়াতিম আত্মীয়

দান ও সদকা করার ফযীলত -মিসকীন ইয়াতিম আত্মীয় >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ২৩, যাকাত, হাদীস (২৫২৪-২৬১৮)

১..পরিচ্ছেদঃ খিয়ানতের [আত্মসাৎকৃত] মাল থেকে সাদকা করা
২.পরিচ্ছেদঃ অনটনগ্রস্তের মেহনতের [উপার্জন হইতে] দান
৩.পরিচ্ছেদঃ উপরের হাত [দাতা14 হাত]
৪.পরিচ্ছেদঃ উপরের হাত কোনটি?
৫.পরিচ্ছেদঃ নিম্নের হাত [গ্রহীতার হাত]
৬.পরিচ্ছেদঃ সচ্ছলতা হইতে [নিজের প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জিনিস] দান করা
৭.পরিচ্ছেদঃ কেউ অভাবগ্রস্ত অবস্থায় দান করলে তা কি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে?
৮.পরিচ্ছেদঃ গোলামের সাদকা করা প্রসঙ্গে
৯.পরিচ্ছেদঃ স্বামীর ঘরের সম্পদ থেকে স্ত্রীর সাদকা করা
১০.পরিচ্ছেদঃ স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর দান করা
১১.পরিচ্ছেদঃ সাদকা করার ফযীলত
১২.পরিচ্ছেদঃ সর্বোত্তম সাদকা কোনটি ?
১৩.পরিচ্ছেদঃ কৃপণের সাদকা করা
১৪.পরিচ্ছেদঃ হিসাব করে সাদকা করা প্রসঙ্গে
১৫.পরিচ্ছেদঃ সামান্য দান করা
১৬.পরিচ্ছেদঃ সাদকা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
১৭.পরিচ্ছেদঃ সাদকায় বাহাদুরী প্রকাশ করা প্রসঙ্গে
১৮.পরিচ্ছেদঃ মালিকের অনুমতিতে দান করলে খাজাঞ্চির সওয়াব প্রসঙ্গে
১৯.পরিচ্ছেদঃ গোপনে দানকারী
২০.পরিচ্ছেদঃ দানকৃত বস্তু দ্বারা খোঁটা [গঞ্জনা] দেয়া
২১.পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দেয়া
২২.পরিচ্ছেদঃ সওয়াল করা সত্ত্বেও না দেওয়া
২৩.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মহান মহিয়ান আল্লাহর নামে কিছু চায়
২৪.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মহান মহিয়ান আল্লাহর নামে চায়
২৫.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ তাআলার নামে যাঞ্চা করার পরও যে না দেয়
২৬.পরিচ্ছেদঃ দাতার সওয়াব প্রসঙ্গে
২৭.পরিচ্ছেদঃ মিসকীন এর ব্যাখ্যা
২৮.পরিচ্ছেদঃ বিধবার জন্য সাধনাকারীর ফযীলত
২৯.পরিচ্ছেদঃ মনোরঞ্জন করার জন্য দান করা
৩০.পরিচ্ছেদঃ [পাওনা আদায়ের] যামিনদার ব্যক্তিকে দান করা
৩১.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতীমকে দান-সাদকা করা
৩২.পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষা করা
৩৩.পরিচ্ছেদঃ নেক্‌কার লোকদের কাছে ভিক্ষা চাওয়া
৩৪.পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষা থেকে আত্মরক্ষা করা
৩৫.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মানুষের কাছে কিছুই চায় না তার ফযীলত
৩৬.পরিচ্ছেদঃ স্বচ্ছলতার পরিসীমা
৩৭.পরিচ্ছেদঃ পীড়াপীড়ি করে সাহায্য চাওয়া
৩৮.পরিচ্ছেদঃ কাকে পীড়াপীড়িকারী বলা হইবে?
৩৯.পরিচ্ছেদঃ যাহার নিকট দিরহাম নেই কিন্তু তার সমপরিমাণ [মূল্যের মাল] আছে সে ব্যক্তি প্রসঙ্গে
৪০.পরিচ্ছেদঃ উপার্জনে সক্ষম ও সবল ব্যক্তির সাহায্য চাওয়া প্রসঙ্গে
৪১.পরিচ্ছেদঃ শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাওয়া
৪২.পরিচ্ছেদঃ অত্যাবশ্যকীয় জিনিস চাওয়া প্রসঙ্গে
৪৩.পরিচ্ছেদঃ চাওয়া ব্যতীত আল্লাহ্ তাআলা যাকে কোন ধন-সম্পদ দান করেন তার প্রসঙ্গে
৪৪.পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর বংশধরগণকে সাদকা উসূল করার কাজে নিযুক্ত করা প্রসঙ্গে
৪৪.পরিচ্ছেদঃ ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবেই পরিগণিত
৪৬.পরিচ্ছেদঃ আযাদকৃত গোলাম নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত
৪৭..পরিচ্ছেদঃ সাদকা নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য বৈধ নয়
৪৮.পরিচ্ছেদঃ সাদকা হস্তান্তরিত হলে [ তার বিধান ]
৪৯.পরিচ্ছেদঃ সাদকা ক্রয় করা প্রসংগে

৫০.পরিচ্ছেদঃ সাদকা নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য বৈধ নয়

৫১.পরিচ্ছেদঃ সাদকা হস্তান্তরিত হলে [ তার বিধান ]

১.পরিচ্ছেদঃ খিয়ানতের [আত্মসাৎকৃত] মাল থেকে সাদকা করা

২৫২৪. উসামাহ ইবনি উমায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা [তাহারাত] ছাড়া নামাজ কবূল করেন না এবং খিয়ানতের [আত্মসাৎ, প্রতারনা, চুরি ইত্যাদির] মাল থেকেও সাদকা কবূল করেন না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫২৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কেউ পবিত্র [হালাল মাল] থেকে সাদকা করলে – আর বস্তুতঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র [হালাল] ব্যতীত কবূল করেন না – তা [দান] আল্লাহ তায়ালা তাহাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। যদিও তা একটি খেজুরই হোক না কেন এবং তা [সে দান ] রহমান–এর হাতে প্রবৃদ্ধি লাভ করিতে থাকে। এমনকি তা পাহাড় থেকেও বিরাট আকার ধারণ করে। যেরূপ তোমাদের কেউ কেউ তার ঘোড়ার শাবক বা উটের শাবকের লালন-পালন করে থাক।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২.পরিচ্ছেদঃ অনটনগ্রস্তের মেহনতের [উপার্জন হইতে] দান

২৫২৬. আবদুল্লাহ্‌ ইবনি হুবশী খাছআমী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]–কে প্রশ্ন করা হল যে, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বলিলেন, সংশয়মুক্ত ঈমান, খিয়ানত বিহীন জিহাদ এবং মাবরুর [পাপমুক্ত] হজ্জ। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম নামাজ কোন্‌টি? তিনি বলিলেন, দীর্ঘ কিরাআত [বিশিষ্ট নামাজ]। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম সাদকা কোনটি? তিনি বলিলেন, অনটনগ্রস্ত ব্যক্তির কষ্টসাধ্যের দান। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম হিজরত কোনটি? তিনি বলিলেন, মহান মহিয়ান আল্লাহ তায়ালা যা নিষেধ করিয়াছেন তা যে বর্জন করে। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বলিলেন, যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিজের জানমাল নিয়ে জিহাদ করে। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সম্মানজনক নিহত হওয়া কোনটি? তিনি বলিলেন, যাহার রক্ত প্রবাহিত করা হইয়াছে এবং ঘোড়াকে হত্যা করা হইয়াছে। [যে ব্যক্তি জিহাদে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করেছে এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে।]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫২৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক দিরহাম এক লাখ দিরহাম উপর প্রাধান্য পেয়ে গেল। তাঁরা [সাহাবিগণ] বলিলেন, এটা কিভাবে? তিনি বলিলেন, এক ব্যক্তির শুধু দুইটি দিরহাম ছিল। সেখান থেকে সে একটি দান করে দিল। আর এক ব্যক্তি তাহাঁর [বিশাল] ধন-সম্পদের মধ্য থেকে এক লাখ দিরহাম নিয়ে তা দান করিল।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৫২৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক দিরহাম এক লাখ দিরহাম উপর প্রাধান্য লাভ করিল। তাঁরা [সাহাবিগণ] বলিলেন, সেটা কিভাবে ইয়া রসূলুল্লাহ! তিনি বলিলেন, এক ব্যক্তির শুধু দুটি দিরহামই রয়েছে। সেখান থেকে সে একটি দিরহাম নিল এবং তা সাদকা করে দিল। আর এক ব্যক্তির অনেক মাল রয়েছে, তার মধ্য থেকে সে এক লাখ দিরহাম নিল এবং দান করিল।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৫২৯. আবু মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে সাদকা করার আদেশ দিতেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিল যাহার কাছে সাদকা করার মত কিছুই ছিল না। অগত্যা সে বাজারে যেত এবং বোঝা বহন করত এবং এক মূদ্দ [সের] নিয়ে এসে তা রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে দিত। আমি এমন এক ব্যক্তিকে জানি যাহার কাছে আজ লাখ দিরহাম রয়েছে। অথচ সে দিন তাহাঁর কাছে এক দিরহামও ছিল না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৩০. আবু মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন আমাদেরকে সাদকা করার আদেশ দিলেন। তখন আবু আকীল অর্ধ “সা” সাদকা করিলেন আর অন্য একজন প্রচুর মাল-সামান নিয়ে আসল। তখন মুনাফিকরা বলিল যে, আল্লাহ তাআলা এর সাদকার মুখাপেক্ষী নন। আর ঐ দ্বিতীয় ব্যক্তি তা লোক দেখানোর জন্য সাদকা করিল। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ

الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ [التوبة: 79]

বাংলা অর্থঃ মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না [এবং তা থেকেই] সাদকা করে …..] এদের যারা দোষারোপ [সমালোচনা] করে [এদের উপহাস করে, আল্লাহ তাহাদের উপহাস করবেন … ]।যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩.পরিচ্ছেদঃ উপরের হাত [দাতা হাত]

২৫৩১. হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে [একবার সাহায্য] চাইলে তিনি আমাকে দান করিলেন। আবার [সাহায্য] চাইলে আবারও তিনি আমাকে দান করিলেন। পুনরায় [সাহায্য] চাইলে তিনি আমাকে দান করিলেন এবং বলিলেন যে, এ সমস্ত ধন-সম্পদ খুবই সুদৃশ্য ও সুস্বাদু [মনোমুগ্ধকর এবং চিত্তাকর্ষক]। তাই যে ব্যক্তি সেগুলো মনের প্রশান্তির সঙ্গে [নির্লোভ হইয়া] গ্রহণ করিবে সেগুলোতে তাহাঁর জন্য বরকত দেয়া হইবে, আর যে ব্যক্তি সেগুলো লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করিবে তার জন্য সেগুলোতে বরকত দেয়া হইবে না। আর সে ব্যক্তি তার মত হইবে যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হইতে পারে না। আর উপরের [দাতা] হাত নীচের [গ্রহীতার] হাত থেকে উত্তম।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪.পরিচ্ছেদঃ উপরের হাত কোনটি?

২৫৩২. তারিক আল-মুহারিবী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা [একবার] মদীনা শরীফে আসলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেনঃ দাতার হাত হল উপরের হাত। আর [দান করা] শুরু করিবে তোমার পোষ্যদের থেকে– তোমার আম্মা, আব্বা, ভাই-বোন, তারপর ক্রমান্বয়ে তোমার নিকটাত্মীয়, নিকটাত্মীয়। [সংক্ষিপ্ত]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫.পরিচ্ছেদঃ নিম্নের হাত [গ্রহীতার হাত]

২৫৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাদকা এবং [কারো কাছে কিছু না] চাওয়া থেকে আত্মরক্ষার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেনঃ উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। উপরের হাত হল [দাতার] ব্যয়কারীর হাত আর নিচের হাত হল প্রার্থীর [গ্রহীতার] হাত।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬.পরিচ্ছেদঃ সচ্ছলতা হইতে [নিজের প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জিনিস] দান করা

২৫৩৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উত্তম দান হল নিজ সচ্ছলতা অক্ষুণ্ণ রেখে [প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস] সাদকা করা। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম এবং তোমার পোষ্য থেকে দান করা শুরু করিবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৫৩৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা সাদকা করিতে থাকো। এক ব্যক্তি বলিল ইয়া রসূলুল্লাহ! আমার কাছে [যদি] শুধু একটি দিনার থাকে? তিনি বলিলেন, তুমি তা নিজের জন্য ব্যয় কর। সে বলিল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বলিলেন, তুমি তা তোমার স্ত্রীর জন্য ব্যয় কর। সে বলিল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বলিলেন, তুমি তা তোমার সন্তানের জন্য ব্যয় কর। সে বলিল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বলিলেন, তুমি তা তোমার খাদেমের জন্য ব্যয় কর। সে বলিল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বলিলেন, সে ব্যাপারে তুমিই অধিক বিবেচনাকারী।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৭.পরিচ্ছেদঃ কেউ অভাবগ্রস্ত অবস্থায় দান করলে তা কি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে?

২৫৩৬. আবু সাইদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি জুমুআর দিনে মসজিদে প্রবেশ করিল, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]] বলিলেন, তুমি দুরাকআত নামাজ আদায় করে নাও। তারপর সে দ্বিতীয় জুমুআতেও আসল। তখনও নাবী [সাঃআঃ] খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]] বলিলেন, তুমি দুরাকআত নামাজ আদায় করে নাও। তৃতীয় জুমুআতেও সে আসল। তিনি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]] বলিলেন, তুমি দুরাকআত নামাজ আদায় করে নাও। এরপর বলিলেন, তোমরা সাদকা কর! তোমরা সাদকা কর এবং তিনি [সাঃআঃ] তাকে দুটি কাপড় দান করিলেন। আবার বলিলেন, তোমরা সাদকা কর! তখন সে তার কাপড়ের দুটির একটি দিয়ে [সাদকা করে] দিল। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি এ ব্যক্তিকে দেখেছো? সে ছিন্ন বস্ত্রে মসজিদে প্রবেশ করেছিল, তখন আমি আশা করেছিলাম যে, তোমরা তার অবস্থার প্রতি লক্ষ করে তাকে কিছু সাদকা করিবে। কিন্তু তোমরা তা করলে না। তখন আমি বললাম, তোমরা সাদকা কর। তখন তোমরা সাদকা করলে এবং আমি তাকে দুটি কাপড় দিলাম। এরপর আমি বললাম, তোমরা সাদকা কর। তখন সে তার দুটি কাপড়ের একটি দিয়ে [সাদকা করে] দিল। [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ ব্যক্তিকে বলিলেন,] তুমি তোমার কাপড় নিয়ে নাও তাকে [মৃদু] ধমক দিলেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৮.পরিচ্ছেদঃ গোলামের সাদকা করা প্রসঙ্গে

২৫৩৭. উমায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে আমার মুনিব গোশত টুকরা করিতে বলিলেন। তখন একজন মিসকীন আসলে আমি তাকে সেখান থেকে কিছু [খাওয়ার জন্য] দিলাম। আমার মুনিব তা জানিতে পেরে আমাকে প্রহার করিলেন। আমি তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম [এবং অভিযোগ [করলাম] তিনি তাকে ডাকালেন এবং বলিলেন যে, তুমি তাকে কেন প্রহার করেছ? তিনি বলিলেন, যেহেতু সে আমার খাদ্য সামগ্রী আমার অনুমতি ছাড়া খাওয়ার জন্য [দান করে] দেয়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সওয়াব তো তোমরা দুজনেই পাবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৩৮. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সাদকা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। প্রশ্ন করা হল যে, যদি সাদকা করার সামর্থ্য না থাকে [তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন]? তিনি বলিলেন, সে নিজের হাতে কাজ করিবে এবং তার দ্বারা সে নিজেকে উপকার পৌঁছাবে এবং কিছু সাদকা করিবে। প্রশ্ন করা হল যদি কেউ তা না করে [তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন]? তিনি বলিলেন, তাহলে সে নিরুপায় অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করিবে। জিজ্ঞাসা করা হল, যদি তাও না করে? তিনি বলিলেন, তাহলে সে সৎ কাজের আদেশ দেবে। প্রশ্ন করা হল যে, যদি তা-ও না করে? [তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন?] তিনি বলিলেন, তাহলে সে অনিষ্ট সাধন থেকে বিরত থাকিবে। সেটাই [তার জন্য] সাদকা স্বরূপ হইবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯.পরিচ্ছেদঃ স্বামীর ঘরের সম্পদ থেকে স্ত্রীর সাদকা করা

২৫৩৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ স্ত্রী স্বামীর ঘরের [সম্পদ] থেকে সাদকা করলে তার [স্ত্রীর] জন্যও সওয়াব হইবে এবং স্বামীর জন্যও অনুরূপ [সওয়াব] হইবে এবং খাঞ্জাঞ্চি [রক্ষণাবেক্ষণকারীও] অনুরূপ [সওয়াব] পাবে। এদের মধ্যে কেউ কারো সওয়াব হ্রাস করিবে না। স্বামীর [সওয়াব] হইবে সম্পদ উপার্জন করার কারনে এবং তার [স্ত্রীর] [সওয়াব] হইবে ব্যয় [সাদকা] করার কারনে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০.পরিচ্ছেদঃ স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর দান করা

২৫৪০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের পর খুতবা দিতে দাঁড়ালেন এবং তাহাঁর খুতবায় তিনি বললেনঃ স্ত্রীর জন্য স্বামীর বিনা অনুমতিতে দান করা বৈধ নয়। {১} [সংক্ষিপ্ত]

{১} দান করার ব্যাপারে স্বামীর অসন্তুষ্টির আশংকা থাকলে স্পষ্ট অনুমতির প্রয়োজন হইবে। বেশী দানের জন্যও অনুমতির প্রয়োজন হইবে। পূর্ব অনুমতি থাকলে, স্বামী দানশীল হলে বারবার অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১১.পরিচ্ছেদঃ সাদকা করার ফযীলত

২৫৪১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ]–এর স্ত্রীগণ [একবার] তাহাঁর কাছে একত্রিত হইয়া বললেনঃ আমাদের মধ্যে কে সর্বাগ্রে আপনার সাথে মিলিত হইবে? [মৃত্যুবরণ করিবে?] তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যে যাহার হাত দীর্ঘ। তখন তাঁরা একটি কঞ্চি নিয়ে সবার হাত মাপতে লাগলেন [আমরা ধারনা করলাম] সাওদা [রাঃআঃ] সর্বাগ্রে তাহাঁর সাথে মিলিত হইবেন। যেহেতু তাহাঁর হাত সর্বাধিক দীর্ঘ ছিল। “অথচ যাহার হাত দীর্ঘ” এর অর্থ ছিল যে অত্যাধিক সাদকা করে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

11পরিচ্ছেদঃ সর্বোত্তম সাদকা কোনটি ?

২৫৪২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে] বলিল, ইয়া রসূলুল্লাহ। সর্বোত্তম সাদকা কোনটি? তিনি বললেনঃ তুমি যখন সুস্থ থাক, মালের প্রতি তোমার লোভ থাকে, অনেক দিন বেঁচে থাকার আশা কর এবং দারিদ্র্যকে ভয় কর তখন তোমার সাদকা করা [সর্বোত্তম সাদকা]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৪৩. হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সর্বোত্তম সাদকা হল, যা স্বচ্ছল অবস্থায় [সাদকা] করা হয়। আর উপরের হাত নিম্নের হাত থেকে শ্রেয়। তুমি নিজের পোষ্যদের থেকে [দান-সাদকা] শুরু করিবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৪৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সর্বোত্তম সাদকা হল; যা স্বচ্ছল অবস্থায় [সাদকা] করা হয়। আর তুমি নিজের পোষ্যদের থেকে [সাদকা] শুরু করিবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৪৫. আবু মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য সওয়াবের নিয়্যতে খরচ করলে তা তার জন্য সাদকারূপে গণ্য হইবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৪৬. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, উযরা গোত্রের এক ব্যক্তি তার এক গোলামকে তার মৃত্যুর পর মুক্ত [আযাদ] হওয়ার ঘোষণা দিল। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে পৌছলে তিনি তাকে বলিলেন, তোমার কি এ [গোলাম] ছাড়া অন্য কোন সম্পত্তি আছে? সে বলিল, না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এ গোলামকে আমার কাছ থেকে কে খরিদ করিবে? তখন নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ আদাবী [রাঃআঃ] তাকে আটশত দিরহাম দিয়ে খরিদ করে নিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উক্ত দিরহাম নিয়ে এসে ঐ লোকটিকে দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন, তুমি নিজের থেকে [ব্যয়] শুরু কর [অর্থাৎ] নিজের জন্য সাদকা কর। কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য [খরচ কর]। তারপর কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা তোমার আত্মীয়-স্বজনের জন্য [খরচ কর।] তারপরও কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা এরকম এরকমভাবে [খরচ করিবে] অর্থাৎ ইশারা করিলেন যে, তোমার সামনে, তোমার ডানে ও তোমার বামে [ব্যয় করিবে]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩.পরিচ্ছেদঃ কৃপণের সাদকা করা

২৫৪৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, দানশীল ব্যয়কারী এবং কৃপণের উদাহরণ ঐ দুই ব্যক্তির ন্যায় যাদের বুক থেকে গলার হাঁসুলী পর্যন্ত [লম্বা] দুটি লোহার বর্ম বা জুব্বা রয়েছে [পরিধান করেছে]। [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জুব্বা বলেছেন না লোহার বর্ম বলেছেন রাবী তা নিশ্চয়তার সাথে বলিতে পারেন নি] দানশীল ব্যক্তি দান করার ইচ্ছা করলে বর্ম সম্প্রসারিত হইয়া যায় অথবা প্রলম্বিত হইয়া যায়। [এখানেও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সম্প্রসারিত হইয়া যায় বলেছেন, না প্রলম্বিত হইয়া যায় বলেছেন রাবী সেটা নিশ্চয়তার সাথে বলিতে পারেন নাই।] সম্প্রসারিত হইয়া তার আঙ্গুল ঢেকে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন মুছে দেয়। আর কৃপণ যখন ব্যয় করিতে ইচ্ছা করে তখন বর্মটি আরো সংকুচিত হইয়া যায় এবং প্রত্যেকটি কড়া নিজ নিজ স্থানে আঁটসাঁট হইয়া লেগে থাকে এবং তাকে তার হাঁসুলী অথবা ঘাড়ের সাথে আটকিয়ে দেয়। {১} আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি তা সম্প্রসারিত করিতে দেখেছি। কিন্তু তা সম্প্রসারিত হচ্ছিল না। তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-এর ব্যাপারে শুনিয়াছি যে, তিনি স্বীয় হাত দ্বারা ইশারা করে দেখিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা সম্প্রসারিত করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, কিন্তু তা সম্প্রসারিত হয়নি।

{১} রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি উদাহরণ দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, দানশীল ব্যক্তি যখন দান করে তখন তার মন বড় হইয়া যায়, সে সন্তুষ্টচিত্তে দান করে। কৃপণ ব্যক্তির মনে যদি কখনও দান করার ধারনা আসেও তখন তার মন সঙ্কুচিত হইয়া যায়, দানের প্রবৃত্তি জন্মে না। হাত যেন ছোট হইয়া যায়, দানের স্পৃহা হয় না।যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৪৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, কৃপণ এবং দানশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এমন দুজন ব্যক্তির ন্যায় যাদের গায়ে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে। [যাহার দরুন] তাহাদের হাত গলার হাঁসুলীর [কণ্ঠনালীর] সাথে লেগে রয়েছে। যখন দানশীল ব্যক্তি কোন কিছু দান করিতে চায় তখন তা সম্প্রসারিত হইয়া যায় এবং এমন কি [তা এত লম্বা হয়] যে, তার পদচিহ্নকে মুছে ফেলে। আর কৃপণ যখন কোন কিছু দান করিতে ইচ্ছা করে তখন প্রতিটি কড়া [আংটী] তার পার্শ্ববর্তীটির সংগে সংকুচিত হইয়া যায় এবং আঁটসাঁট হইয়া যায় এবং তার দুই হাত তার কণ্ঠনালীর সংগে সংযুক্ত হইয়া যায়। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বলিতে শুনিয়াছি যে, সে তা সম্প্রসারিত করিতে চায় কিন্তু সম্প্রসারিত হয় না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪.পরিচ্ছেদঃ হিসাব করে সাদকা করা প্রসঙ্গে

২৫৪৯. আবু উসামা ইবনি সাহল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, একদিন আমরা কিছু সংখ্যক মুজাহির ও আনসারসহ মসজিদে বসা ছিলাম। আমরা আয়েশা [রাঃআঃ]-এর কাছে একজন লোককে অনুমতি নেওয়ার জন্য পাঠালাম। এরপর আমরা তাহাঁর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তিনি বলিলেন যে, একবার আমার কাছে একজন ভিক্ষুক আসল। তখন নাবী [সাঃআঃ] আমার কাছে ছিলেন। আমি তাকে কিছু দেওয়ার জন্য [খাদিমকে] আদেশ করলাম। এরপর তাঁকে ডেকে তা দেখলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি চাও যে, তোমার ঘরে তোমার অবগতি ব্যতীত কোন কিছু প্রবেশ না করুক এবং কিছু বেরও না হোক? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, হে আয়েশা, তুমি কখনও এরূপ করো না; তুমি কখনও হিসাব [কষাকষি] করে খরচ করিবে না; নয়তো মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলাও তোমাকে হিসাব করে করে দেবেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৫৫০. আসমা বিন্‌ত আবু বকর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলেছেনঃ তুমি হিসাব করে খরচ [দান] করিবে না নতুবা আল্লাহ তাআলাও তোমাকে হিসাব করে দিবেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫১. আসমা বিন্‌ত আবু বকর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [একবার] নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আসলেন এবং বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার কাছে তো [আমার স্বামী] যুবায়র [রাঃআঃ]-এর দেয়া কিছু [সম্পদ] ছাড়া অন্য কিছু নেই। অতএব তার দেয়া সম্পদ থেকে আমি কি কিছু দান করলে দোষ হইবে কি? তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি অল্প-স্বল্প দান করিবে এবং আটকে রাখবে [কৃপণতা করিবে] না; নয়তো আল্লাহ তাআলাও তোমাকে [প্রদান করা] আটকে দেবেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫.পরিচ্ছেদঃ সামান্য দান করা

২৫৫২আদী ইবনি হাতিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ [নিজেদের রক্ষা কর] যদিও তা খেজুরের টুকরা দ্বারাও হয়। [সামান্য বস্তু সাদকা করিতে পারলেও তা কর।]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫৩. আদী ইবনি হাতিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, একদা- রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [জাহান্নামের] আগুনের আলোচনা করিলেন ও তিনি তাহাঁর চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন [এভাবে ফিরালেন যেন তিনি জাহান্নামকে সামনে দেখছিলেন।] এরপর তা [জাহান্নামের আগুন] থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন। শুবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনবার তিনি এরূপ করেছিলেন। তারপর বলিলেন, তোমরা [জাহান্নামের] আগুন থেকে বাঁচো, যদিও তা খেজুরের টুকরা দ্বারাও হয়। তাও যদি না পাও তাহলে অন্তত উত্তম কথা দ্বারা [জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬.পরিচ্ছেদঃ সাদকা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা

২৫৫৪. জারীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমরা একবার দুপুর বেলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে বসা ছিলাম এমতাবস্থায় কিছু নগ্নদেহী এবং নগ্নপদী লোক তলোয়ার [কাঁধে] লটকানো অবস্থায় [আমাদের কাছে] আসল। তাহাদের অধিকাংশ বরং সবাই মুদার গোত্রের ছিল। তাহাদের অনাহারে থাকার অবস্থা দেখে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ রূপ ধারণ করিল। তিনি [বাড়ির] ভিতরে গেলেন এবং বের হইয়া এসে বিলাল [রাঃআঃ]-কে আযান দিতে নির্দেশ দিলেন। তিনি আযান এবং সালাতের ইকামাত দিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [জামাআতে] নামাজ আদায় করে খুতবা [ভাষণ] দিলেন এবং বললেনঃ

অর্থঃ হে মানব। তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি [সত্ত্বা] হইতেই সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তা হইতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং দুজন হইতে বহু নর-নারী [সৃষ্টি করে] ছড়িয়ে দিয়েছেন; এবং আল্লাহকে ভয় কর যাঁহার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা কর এবং [সতর্ক থাক] জ্ঞাতিবন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রীম পাঠিয়েছে [সূরাঃআঃ ৪ নিসাঃ ৪]।

প্রত্যেকে নিজ নিজ দীনার, দিরহাম, কাপড়, এক সা গম হইতে এবং এক সা খেজুর হইতেও দান কর বলিতে বলিতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ পর্যন্ত বলিলেন যে, এক টুকরা খেজুর হলেও [দান কর]। তখন একজন আনসারী [সাহাবী] একটি থলি নিয়ে আসলেন যেন তাহাঁর হাত তা বহন করিতে অপারগ হইয়া পড়ছিল বরং অপারগ হইয়াই গিয়েছিল। এরপর অন্যান্য লোকজনও তার অনুসরণ করিল। আমি সেখানে কাপড় এবং খাদ্যের দুটো স্তূপ দেখিতে পেলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেহারা মুবারক উজ্জ্বল [ও তাঁকে প্রফুল্ল দেখিতে পেলাম]। যেন তা সোনালী প্রলেপযুক্ত। তখন তিনি বলিলেনঃ যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম প্রথা প্রবর্তন করিবে সে তার সওয়াব তো পাবেই, উপরন্তু সে অনুসারে আমলকারীদের সমপরিমান সওয়াবও পাবে। অথচ আমলকারীদের সওয়াব এর পরিমাণ কিছুমাত্র হ্রাস করা হইবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ প্রথার প্রচলন করিবে, তার জন্য তার গুনাহ তো রয়েছেই, উপরন্তু সে [খারাপ প্রথার] অনুসারে আমলকারীদের সমপরিমাণ গুনাহ্ও তার জন্য [রয়েছে]। অবশ্য তাহাদের গুনাহ্ বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হইবে না [সূরাঃআঃ ৫৯ হাশরঃ ২৮]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫৫. হারিসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তোমরা সাদকা কর। কেননা তোমাদের সামনে এমন এক সময় আসবে যখন কেউ সাদকা নিয়ে তা দেওয়ার জন্য ঘুরতে থাকিবে এবং যাকে দিতে চাইবে সে বলবে, তুমি যদি এগুলো গতকাল আনতে তাহলে আমি গ্রহন করতাম। আজ তো আমার [এগুলোর কোন প্রয়োজন নেই]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭.পরিচ্ছেদঃ সাদকা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা

২৫৫৬. আবু মুসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সুপারিশ কর, তোমাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে। [তোমরা সুপারিশ করার জন্য সওয়াবের অধিকারী হইবে।] মহান মহিয়ান আল্লাহ তাহাঁর নাবীর কথার মাধ্যমে যা ইচ্ছা তা পূর্ণ করেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫৭. মুআবিয়া ইব্‌ন্ আবু সুফিয়ান[রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তাকে নিষেধ করে দেই যাতে তোমরা তার ব্যাপারে সুপারিশ কর এবং তোমরা সওয়াব পাও। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আরও বলেছেন, তোমরা সুপারিশ কর তাহলে তোমরাও সওয়াব পাবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮.পরিচ্ছেদঃ সাদকায় বাহাদুরী প্রকাশ করা প্রসঙ্গে

২৫৫৮. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, এমন কিছু আত্মসম্মানবোধ আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, আবার তা [আত্মসম্মানবোধ] এমনও কিছু আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন। অনুরূপ এমন কিছু অহং [বাহাদুরী] আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, এবং তা [বীরত্ব] এমনও কিছু আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন। মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ হল সন্দেহ ও বদনামের ক্ষেত্রে [আত্মসম্মানবোধ]। আর মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার অপছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ হল সন্দেহ ও বদনামের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যস্থানের [সম্মানবোধ]। মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় অহং হল জিহাদের সময় ও দান করার সময় বাহাদুরী করা। আর মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার অপছন্দনীয় বাহাদুরী হল অন্যায় ক্ষেত্রে [বীরত্ব করা] {১}।

{১} হাদীসটির মর্ম হলঃ ইসলামী শরীআত বিরোধী কাজে ঘৃণাবোধ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন। পক্ষান্তরে শরীআত অনুমোদিত কার্যাবলীতে ঘৃণাবোধ করাকে আল্লাহ অপছন্দ করেন। অনুরূপভাবে জিহাদের ময়দানে বাহাদুরী প্রকাশ করা এবং সাদকা দেওয়ার সময় ধন সম্পদকে তুচ্ছ মনে করে হিম্মত ও বাহাদুরীর সংগে দান করা আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়। পক্ষান্তরে অন্যায় কাজে বীরত্ব প্রকাশ করা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়।যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৫৫৯. আমর ইবন্‌ শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা অপব্যয় ও আত্মম্ভরিতা না করে খাও, দান কর এবং পরিধান কর।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৯.পরিচ্ছেদঃ মালিকের অনুমতিতে দান করলে খাজাঞ্চির সওয়াব প্রসঙ্গে

২৫৬০. আবু মুসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য ঐ দেয়াল সমতুল্য, যাহার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। তিনি আরও বলেছেনঃ বিশ্বস্ত খাজাঞ্চির [রক্ষণাবেক্ষণকারী] যে আদেশ প্রাপ্ত হইয়া সন্তুষ্টচিত্তে দান করে সেও দুজন দানকারীর একজন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০.পরিচ্ছেদঃ গোপনে দানকারী

২৫৬১. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, সশব্দে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর ন্যায় আর নিঃশব্দে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর ন্যায়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১.পরিচ্ছেদঃ দানকৃত বস্তু দ্বারা খোঁটা [গঞ্জনা] দেয়া

২৫৬২. সালিম এর পিতা আব্দুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টি দিবেন না [রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না] পিতা মাতার অবাধ্য [সন্তান], পুরুষের বেশধারী নারী এবং দায়ূছ [নিজ স্ত্রী কন্যার পাপাচারে যে ঘৃণাবোধ করেনা।] আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবেনা – পিতা মাতার অবাধ্য [সন্তান], মাদকাসক্ত ব্যক্তি [যে মদ্যপ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করে] এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দানকারী ব্যক্তি [দান করার পর যে দানের উল্লেখ করে গঞ্জনা দেয়।]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৫৬৩. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সংগে কথা বলবেন না। তাহাদের দিকে তাকাবেন না, তাহাদের সাথে কোন কথাও বলবেন না, তাহাদের পরিশুদ্ধতা প্রত্যায়ন করবেন না। আর তাহাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত [সংশ্লিষ্ট আয়াত] পাঠ করিলেন। তখন আবু যর [রাঃআঃ] বলিলেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া গেছে, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া গেছে, [তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]] বলিলেন, [তারা হল] যারা পায়ের গিরার নিচে [পায়ের উঁচু হাড়] কাপড় পরিধান করে, মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য চালিয়ে দেয় [বিক্রয় করে], এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দেয়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৬৪. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির সাথে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাহাদের দিকে তাকাবেন না আর তাহাদের পবিত্রতা প্রত্যায়ন করবেন না। তাহাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। [তারা হল] দানকৃত বস্তুর খোঁটাদানকারী, পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয়কারী।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২.পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দেয়া

২৫৬৫. ইবনি বুজায়দ আনসারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা ভিক্ষুককে কিছু দিয়ে দাও যদিও তা খুরই [তুচ্ছ] হোক না কেন। আর হারূন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে রয়েছে পোড়া খুর। [অর্থাৎ ভিক্ষুককে খালি হাতে না ফিরায়ে যৎকিঞ্চিত হলেও দাও।]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩.পরিচ্ছেদঃ সওয়াল করা সত্ত্বেও না দেওয়া

২৫৬৬. বাহ্‌য্‌ ইবনি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি স্বীয় মুনীবের কাছে এসে তার কাছে বিদ্যমান [উদ্বৃত্ত] বস্তু চায় অথচ তাকে তা দেয়া না হয়, কিয়ামতের দিন তার জন্য একটি বিরাট সাপ ডাকা হইবে যা তার না দেয়া উদ্বৃত্ত বস্তু [জিহবা দ্বারা] চাটতে থাকিবে। [উদ্বৃত্ত সম্পদ সাপের রূপ ধারন করে চাটতে থাকিবে।]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৪.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মহান মহিয়ান আল্লাহর নামে কিছু চায়

২৫৬৭. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে প্রার্থনা করে তাকে আশ্রয় দাও, যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহর ওয়াস্তে [কিছু] চায় তাকে দিয়ে দাও, যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আত্মরক্ষা প্রার্থনা করে তাকে সুরক্ষা দাও আর যে ব্যক্তি তোমাদের উপর ইহসান করে [দান-সদাচরণ] তার প্রতিদান দিয়ে দাও। অগত্যা যদি দিতে নাই পার তাহলে তার জন্য দুআ কর যে পর্যন্ত না তোমরা মনে কর যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছ।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মহান মহিয়ান আল্লাহর নামে চায়

২৫৬৮. বাহ্‌য্‌ ইবনি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি বললাম, ইয়া নাবীয়াল্লাহ্‌! আমি আপনার কাছে আসার পূর্বে এই সংখ্যার [আমার দুই হাতের অঙ্গুলিসমূহের সংখ্যার] চেয়েও অধিক সংখ্যক শপথ করেছিলাম যে, আমি আপনার কাছে আসব না এবং আপনার ধর্মও গ্রহণ করব না। এখন আমি এমন এক ব্যক্তি, যে আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূলের শিখানো শিক্ষা ছাড়া আর কিছুই আমি বুঝিনা। আমি মহান মহিয়ান আল্লাহর ওয়াস্তে [আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য] আপনার কাছে জানিতে চাই আপনার পালনকর্তা আপনাকে কি সহ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, [আল্লাহ তাআলা আমাকে] ইসলামসহ [পাঠিয়েছেন,] আমি বললাম, ইসলামের পরিচয় কি? তিনি বলিলেন, তুমি বলবে যে, আমি আমার চেহারা মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরিয়ে দিলাম এবং [মুক্ত হলাম] [শির্‌ক পরিত্যাগ করলাম]। এবং তুমি নামাজ আদায় করিবে, যাকাত আদায় করিবে। প্রত্যেক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য সম্মানের পাত্র; তারা দুই ভাইয়ের [ন্যায়] একে অন্যের সাহায্যকারী। মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের ইসলাম গ্রহনের পরও তাহাদের কোন আমল কবুল করবেন না যতক্ষন না তারা মুশরিকদের পরিত্যাগ করে মুসলমানদের কাছে এসে যায়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৬.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ তাআলার নামে যাঞ্চা করার পরও যে না দেয়

২৫৬৯. ইবনি আব্বাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তি সম্পর্কে অবহিত করব না? আমরা বললাম কেন নয়? [নিশ্চয়ই] ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! তিনি বললেনঃ সে ঐ ব্যক্তি, যে মহান আল্লাহর রাস্তায় তাহাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরে বের হইয়া যায় এবং মৃত্যুবরণ করে বা শহীদ হইয়া যায়। তার পরবর্তী পর্যায়ের লোকের সংবাদও তোমাদেরকে দেব কি? আমরা বললাম হ্যাঁ; ইয়া রাসুলাল্লাহ্‌! তিনি বলিলেন, সে হল ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে কোন গুহায় থাকে, সেখানে সে নামাজ আদায় করে, যাকাত আদায় করে এবং লোকদের অনিষ্ঠ থেকে দূরে সরে থাকে। তোমাদেরকে কি সর্বনিকৃষ্ট লোক সম্পর্কে অবহিত করব? আমরা বললাম, হ্যাঁ; ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! [অবহিত করুন]। তিনি বলিলেন, সে হল ঐ ব্যক্তি যাহার কাছে কেও আল্লাহ তাআলার নামে [সাহায্য] চায় কিন্তু সে তাকে দান করে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭.পরিচ্ছেদঃ দাতার সওয়াব প্রসঙ্গে

২৫৭০. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তিন ব্যক্তিকে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন এবং তিন ব্যক্তিকে মহান মহিয়ান আল্লাহ অপছন্দ করেন। যাদেরকে মহান মহিয়ান আল্লাহ পছন্দ করেন তারা হলঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কাছে এসে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার নামে কিছু সাহায্য চায়। সে তার ও তাহাদের মধ্যকার আত্মীয়তার সম্পর্কের দোহাই দিয়ে সাহায্য চায় না। তারা তাকে কিছু না দিয়েই ফিরিয়ে দেয়। [তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার] পরে তাহাদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি তার পিছু পিছু যায় এবং তাকে এমনভাবে গোপনে সাহায্য করে যে, তার সাহায্য সম্পর্কে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা এবং সাহায্য গ্রহীতা ছাড়া আর কেউই জানিতে পারেনা। আর একদল লোক যারা রাতে সফর করছিল, যখন নিদ্রা তাহাদের কাছে তার সাথে তুলনায় সমুদয় বস্তু অপেক্ষা প্রিয় হইয়া গেল তখন তারা অবতরন করিল এবং তাহাদের মাথা [বালিশে] রেখে দিল। তখন এক ব্যক্তি জেগে গেল এবং আমার কাছে [আল্লাহর কাছে] অনুনয়-বিনয় [করে কান্নাকাটি করে দুআ] করিতে লাগল। আর আমার আয়াতসমূহ [কুরআন] তিলাওয়াত করিতে লাগল। আর এক ব্যক্তি জিহাদে কোন বাহিনীর সাথে ছিল, তারা শত্রুর মুখোমুখি হইয়া পরাজয় বরণ করিল। কিন্তু সে বুক পেতে দিয়ে [সাহসের সাথে] সামনে অগ্রসর হইয়া শহীদ হইয়া গেল অথবা আল্লাহ তাআলা তাকে বিজয় দান করিলেন। আর যে তিন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন তারা হল, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, অহংকারী ফকীর এবং অত্যাচারী ধনী।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

২৮.পরিচ্ছেদঃ মিসকীন এর ব্যাখ্যা

২৫৭১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, একটা দুটো খেজুর এবং এক দু লোকমা খাদ্য যাকে ফিরিয়ে দেয় সে মিসকীন নয় বরং মিসকীন হল যে নিজকে [সওয়াল ভিক্ষা থেকে] বিরত রাখে। যদি তোমাদের ইচ্ছা হয় তাহলে পাঠ কর [এ আয়াত]

لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا [البقرة: 273]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২৫৭২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, এমন ঘুরা-ফিরাকারী ব্যক্তি মিসকীন নয়, যে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরাঘুরি করে এবং এক দুলোকমা খাদ্য এবং একটা দুটা [খেজুর তাকে ফিরিয়ে দেয়। [এবং এক দুই খেজুর ও লোকমার জন্য এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ঘুরে বেড়ায়।] তাঁরা [সাহাবীগণ] বলিলেন, তাহলে মিসকিন কে? তিনি বলিলেন, যাহার এমন সচ্ছলতা নেই যা তাকে পরমুখাপেক্ষী হওয়া থেকে রক্ষা করিতে পারে। এবং তাকে [তার দারিদ্র্য] আঁচ করা যায় না। ফলে তাকে সাদকাও দেয়া হয় না আর সে এমন অবস্থায় দাঁড়ায় না যাতে লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৭৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, মিসকীন সে ব্যক্তি নয় যে, এক লোকমা বা দু লোকমা এবং একটা-দুটা খেজুর তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাঁরা [সাহাবীরা] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! তাহলে মিসকীন কে? তিনি বলিলেন, যাহার কোন সহায়-সম্বলও নেই আর লোকেরাও তার অভাবের বিষয়ে জানে না, যাতে তাকে দান-সাদকা করা হইবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৭৪. আবদুর রহমান ইবনি বুজায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে বায়আত গ্রহণকারী [নারী]-দের অন্যতমা ছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] –কে বলিলেন যে, কখনো কোন মিসকীন আমার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়, কিন্তু আমার কাছে তাকে দেয়ার মত তখন কিছুই থাকে না। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন যে, তুমি যদি তাঁকে দেয়ার মত একটি ঝলসানো খুর ব্যতীত আর কিছুই না পাও তবে তাকে তাই দাও।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯.পরিচ্ছেদঃ অহংকারী ফকীর

২৫৭৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। বৃদ্ধ ব্যভিচারী, অহংকারী ফকীর এবং মিথ্যাবাদী নেতা।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৫৭৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, চার ব্যক্তিকে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন ….. অধিকহারে শপথকারী বিক্রেতা, অহংকারী ফকীর, বৃদ্ধ ব্যভিচারী এবং অত্যাচারী শাসক।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০.পরিচ্ছেদঃ বিধবার জন্য সাধনাকারীর ফযীলত

২৫৭৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, বিধবা এবং মিসকীনদের জন্য চেষ্টা সাধনাকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের ন্যায়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১.পরিচ্ছেদঃ মনোরঞ্জন করার জন্য দান করা

২৫৭৮. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আলী [রাঃআঃ] [শাসকরূপে] ইয়ামানে অবস্থানকালে মাটি মিশ্রিত কিছু স্বর্ণ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে পাঠালেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেগুলো চারজন ব্যক্তির মধ্যে বন্টন করে দিলেনঃ আকরা ইবনি হাবিস হানযালী, উওয়ায়না উবন বদর ফাযারী, আলকামা ইবনি উলাহা আমিরী পরবর্তীতে কিলাবী, এবং যায়দ ত্বায়ী [রাঃআঃ] পরবর্তীতে নাবহানী। তখন কুরায়শ বংশের লোকজন রাগান্বিত হইয়া গেলেন। [রাবী] অন্যত্র বলেছেন …. কুরায়শের সর্দারগণ [রাগান্বিত হলেন]। তারা বলিলেন যে, আপনি নাজ্‌দের সর্দারদেরকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে বাদ দিচ্ছেন? তিনি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]] বলিলেন যে, আমি এরকম করেছি তাহাদের মনোরঞ্জনের জন্য। এমন সময় ঘন শ্মশ্রু, উত্থিত চোয়াল, কোটরাগত চোখ, উচুঁ ললাট এবং মুন্ডিত মাথা বিশিষ্ট এক ব্যক্তি এসে বলিল যে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করুন। তিনি বলিলেন যে, যদি আমিই মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাআলার অবাধ্য হই তাহলে আর কে আল্লাহ্ তাআলার বাধ্য হইবে? তিনি [আল্লাহ্ তাআলা] তো আমাকে পৃথিবীর বাসিন্দাদের ব্যাপারে বিশ্বস্ত সাব্যস্ত করে পাঠিয়েছেন আর তোমরা আমাকে বিশ্বস্ত মনে করছ না? এর পর যে ব্যক্তি চলে গেল এবং উপস্থিত লোকদের একজন তাকে হত্যা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। লোকের ধারণা যে, অনুমতি প্রার্থনাকারী ছিলেন খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাঃআঃ]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন যে, এই ব্যক্তির ঔরসে এমন কিছু লোক জন্মগ্রহণ করিবে যারা কুরআন তিলাওয়াত করিবে, কিন্ত কুরআন তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করিবে এবং প্রতিমা পূজারীদেরকে ছেড়ে দেবে। তারা ইসলাম থেকে এরকমভাবে দূরে সরে যাবে, যে রকম তীর [তীর] নিক্ষিপ্ত পশু থেকে পার হইয়া যায়। আমি যদি তাহাদেরকে পেতাম তাহলে তাহাদেরকে এমনভাবে হত্যা করতাম, যে রকমভাবে আদ গোত্রের লোকদেরকে হত্যা [ধ্বংস] করা হইয়াছিল।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২.পরিচ্ছেদঃ [পাওনা আদায়ের] যামিনদার ব্যক্তিকে দান করা

২৫৭৯. কাবীসা ইবনি মুখারিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি একজনের পাওনা আদায় করে দেয়ার যামিন হইয়াছিলাম। তখন আমি নাবী [সাঃআঃ]–এর কাছে আসলাম এবং এব্যাপারে তাহাঁর সাহায্য চাইলাম। তিনি বলিলেন, তিন ব্যক্তি ব্যতীত সাহায্য চাওয়া বৈধ নয়। এক ব্যক্তি হলে, যে সমাজের কারো পাওনা আদায় করে দেওয়ার যামিন হইয়াছে এবং এব্যাপারে অন্য কারো সাহায্য চায় এবং যাতে [সাহায্য দ্বারা] তা আদায় করে নিতে পারে। এরপর সে [সাহায্য চাওয়া থেকে] বিরত থাকে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৮০. কাবীসা ইবনি মুখারিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি একজনের পাওনা আদায় করে দেয়ার যামিন হইয়াছিলাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এসে এ ব্যাপারে তাহাঁর যাহায্য চাইলাম। তিনি বলিলেন যে, হে কাবীসা! তুমি আমার কাছে সাদকার কোন মাল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর; তবে [আসলেই] আমি তোমাকে দিয়ে দেয়ার আদেশ দেব। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে কাবীসা! সাদকা তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য বৈধ নয়; যে কারো পাওনা আদায় করে দেওয়ার যামিন হয়, তার জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ। যাতে সে জীবন ধারণের আবশ্যকীয় প্রয়োজন মিটাতে পারে। যাহার উপর কোন বিপদ নিপতিত হয় এবং তার ধন-সম্পত্তি সমূলে শেষ করে দেয় তার জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ, যাতে তার বিপদ দূর হইয়া যায়। এরপর সে [সাহায্য চাওয়া থেকে] বিরত হইয়া যায় এমন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যাহার সম্পর্কে তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, সে অভাবগ্রস্ত, তাহলে তার জন্যও সাহায্য চাওয়া বৈধ, যাতে সে নিজের জীবন ধারণের আবশ্যকীয় প্রয়োজন মিটাতে পারে। হে কাবীসা! এ তিন প্রকার ব্যক্তি ব্যতীত আর কারো জন্য সাহায্য চাওয়া সুদ [তুল্য হারাম]। যাহার আহরণকারী তা সুদ [হারাম] রূপে ভক্ষণ করে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতীমকে দান-সাদকা করা

২৫৮১. সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারের উপর বসলেন। আমরাও তাহাঁর চারপাশে বসে গেলাম। তিনি বলিলেন, আমার পরবর্তীকালে তোমাদের বিজিত পার্থিব ধন-দৌলতের আধিক্যে আমি আশংকিত। [এ প্রসংগে] তিনি দুনিয়া ও তার চাকচিক্যের কথা আলোচনা করিলেন। এক ব্যক্তি বলিল, ভাল কি মন্দ [পরিনতি] নিয়ে আসে? তিনি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তাকে [প্রশ্নকারীকে] বলা হল যে, তোমার কি হল, তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে কথা বলছ অথচ তিনি তোমার সাথে কথা বলছেন না?[রাবী বলেন] আমরা দেখলাম যে, তখন তাহাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে। যখন চেতনা ফিরে গেলেন [ওহী অবতীর্ণ হইয়া গেল] তিনি ঘাম মুছতে মুছতে বলিলেন, প্রশ্নকারী কি উপস্থিত আছে? নিশ্চয়ই ভাল মন্দ নিয়ে আসবে না। তবে দেখ, বসস্ত ঋতু যা জন্মায় তা মেরে ফেলে অথবা মেরে ফেলার উপক্রম করে [অথচ সবুজ ঘাসপাতা একটি উত্তম বস্তু কিন্তু কোন চতুষ্পদ জন্তু যখন তা তা অপরিমিত ভক্ষণ করে তখন বদহজমীর দরুন মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার উপক্রম হয় বা মরেই যায়।] কিন্তু কোন তৃণভোজি জন্তু যখন তা ভক্ষণ করে তখন তার পেট ভরে যায় আর সে সূর্যের আলোর মুখোমুখী হইয়া পায়খানা করে ও পেশাব করে। এরপর চড়ে বেড়ায়। অনুরূপভাবে এ সমস্ত মাল মুসলমানদের জন্য কত উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু এবং উপকারী সাথী, যদি তার থেকে ইয়াতীম মিসকীন এবং মুসাফিরকে দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে ধন-সম্পদ সঞ্চয় করে সে যেন আহার করিল কিন্তু পরিতৃপ্ত হইতে পারল না আর এ ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪.পরিচ্ছেদঃ আত্নীয়-স্বজনকে দান করা

২৫৮২. সালমান ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিসকীনকে দান করার মধ্যে শুধু সাদকা [র সওয়াব রয়েছে] আর আত্নীয়-স্বজনকে দান করা দুটি [সওয়াব রয়েছে] দান করা [র সওয়াব] এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা [র সওয়াব]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৮৩. যয়নাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ তোমরা সাদকা কর যদিও তা তোমাদের অলংকারই হোক না কেন। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ দরিদ্র ছিলেন, আমি তাঁকে বললাম, আমার সাদকা আপনাকে এবং আমার ইয়াতীম ভ্রাতুষ্পুত্রদেরকে দেওয়ার অবকাশ আমার আছে কি? আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞাসা কর। তিনি [যয়নাব রাঃআঃ] বলেন, তখন আমি নাবী [সাঃআঃ]–এর কাছে আসলাম, এসে দেখলাম তাহাঁর দরজার সামনে যয়নাব নামের [আর] একজন আনসারী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে এবং আমি যে ব্যাপারে প্রশ্ন করিতে এসেছি তিনিও সে ব্যাপারেই প্রশ্ন করছেন। আমাদের কাছে বিলাল [রাঃআঃ] আসলেন, আমরা তাঁকে বললাম যে, আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন। আর আমরা কারা তা তাঁকে বলবেন না। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তারা কারা? বিলাল [রাঃআঃ] বলিলেন, যয়নাব। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কোন্‌ যয়নাব? তিনি বলিলেন, আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]–এর স্ত্রী যয়নাব এবং আনসারী যয়নাব। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ; তাহাদের জন্য দুটি [দুই গুণ] সওয়াব রয়েছে, আত্মীয়তার [সম্পর্ক বজায় রাখার] সওয়াব এবং দান করার সওয়াব।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫.পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষা করা

২৫৮৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তোমাদের কারো এক বোঝা কাঠ সংগ্রহ করে তা নিজ পিঠে বহন করে আনা এবং বিক্রি করা ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম। যে সে কারো কাছে ভিক্ষা চাইবে এবং সে হয়তো তাকে দিবে অথবা দিবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৮৫. হামযা ইবনি আবদুল্লাহ্‌ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করে বেড়ায় কিয়ামাতের দিন সে এমন অবস্থায় উপস্থিত হইবে যে, তার চেহারায় গোশতের কোন টুকরাই থাকিবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৮৬. আইয ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]–এর কাছে এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] তাকে ভিক্ষা দিলেন। যখন সে দরজার চৌকাঠে পা রেখে প্রস্থান করছিল তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যদি তোমরা ভিক্ষা [র অপকারিতা] সম্পর্কে জানিতে তাহলে তোমাদের কেউ কারো কাছে কখনো কোন কিছু ভিক্ষা চাওয়ার জন্য যেতো না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৬.পরিচ্ছেদঃ নেক্‌কার লোকদের কাছে ভিক্ষা চাওয়া

২৫৮৭. ইবনি ফিরাসী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ফিরাসী [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমি কি ভিক্ষা চাইব? তিনি বলিলেন, না। অগত্যা যদি চাইতেই হয় তবে নেক্‌কার লোকদের কাছে চাইবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৩৭.পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষা থেকে আত্মরক্ষা করা

২৫৮৮. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

কিছ সংখ্যক আনসারী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি তাহাদেরকে দিলেন। এরপর তারা আবার চাইলে আবারও দিলেন। এমনিভাবে তাহাঁর কাছে যা ছিল সব শেষ হইয়া গেলে তিনি বলিলেন, আমার কাছে কোন সম্পদ থাকলে তা কখনো তোমাদের থেকে সঞ্চয় করে রাখব না। [এখন আমার কাছে আর দেওয়ার মত কিছুই নেই।] যে ব্যক্তি ভিক্ষা থেকে আত্মরক্ষা করিতে চায় আল্লাহ্ তাআলা তাকে সুরক্ষিত রাখেন আরে যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ্ তাআলা তাকে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক দেন। কাউকে ধৈর্য থেকে উত্তম কোন জিনিস দান করা হয়নি।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৮৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁহার হাতে আমার জীবন, তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে এবং কাঠ সংগ্রহ করে তা পিঠে বহন করে আনা তার জন্য এর চেয়ে উত্তম, যে মহান মহিয়ান আল্লাহর দেওয়া ধন-সম্পত্তির অধিকারী কোন ব্যক্তির কাছে এসে তার কাছে ভিক্ষা চাইবে, সে হয়তো ভিক্ষা দিবে নয়তো দেবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মানুষের কাছে কিছুই চায় না তার ফযীলত

২৫৯০. ছাওবান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে একটি কথার [প্রতিশ্রুতি দেবে] এ [বিনিময়ের] শর্তে যে, তার জন্য জান্নাত [ওয়াজিব হযে যাবে,] ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এখানে এমন এক বাক্য রয়েছে যাহার অর্থ এই যে, মানুষের কাছে কোন কিছু চাইবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৯১. কাবীসা ইবনি মুখারিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বলিতে শুনেছিঃ তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য সাহায্য চাওয়া যথার্থ [বৈধ] নয়। যাহার সম্পদ বিনাশের শিকার হইয়াছে। সে সাহায্য চেয়ে জীবন ধারণের প্রয়োজন মিটাতে পারবে, এরপর [সাহায্য চাওয়া থেকে] বিরত থাকিবে। যে কারো পাওনার যামিন হইয়াছে। সে সাহায্য চেয়ে সে [পাওনা আদায় করে দেবে, পাওনা আদায় করে দেওয়ার] এরপর [আর সাহায্য চাওয়া থেকে] বিরত থাকিবে। আর ঐ ব্যক্তি যাহার সম্পর্কে তার সমাজের তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম করে বলে যে, অমুকের জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ হইয়াছে, তাহলে সে সাহায্য চেয়ে জীবন ধারণের প্রয়োজন মিটাবে। এরপর সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকিবে। এরা ছাড়া [অন্য কেউ যদি সাহায্য চায় তাহলে তা তার জন্য] হারাম হইবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯.পরিচ্ছেদঃ স্বচ্ছলতার পরিসীমা

২৫৯২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে এই পরিমাণ মাল আছে যাতে তার প্রয়োজন মিটে যায়, তাহলে তা কিয়ামতের দিন তার মুখে ক্ষত কিংবা আঘাত অবস্থায় উত্থিত হইবে। প্রশ্ন করা হল যে, কতটুকু মাল দ্বারা প্রয়োজন মিটে যায়? [সচ্ছলতা সাব্যস্ত হয়?] তিনি বলিলেন, পঞ্চাশ দিরহাম বা তার সমপরিমাণ স্বর্ণ।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০.পরিচ্ছেদঃ পীড়াপীড়ি করে সাহায্য চাওয়া

২৫৯৩. মুআবিয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সাহায্য চাইতে পীড়াপীড়ি করিবে না আর তোমাদের কেউ আমার কাছে এমন জিনিস চাইবে না যা আমি অপছন্দনীয় মনে করি, তাহলে আমি তাকে যা দেব আল্লাহ্ তাআলা তাতে বরকত দেবেন এমন হইবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১.পরিচ্ছেদঃ কাকে পীড়াপীড়িকারী বলা হইবে?

২৫৯৪—{حكم الألباني} حسن صحيح

আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার চল্লিশটি দিরহাম রয়েছে সেই পীড়াপীড়িকারী।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৫৯৫. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার আম্মা আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে পাঠালে আমি তাহাঁর কাছে আসলাম এবং বসে গেলাম। তিনি আমার দিকে মুখ করে বলিলেন যে, যে ব্যক্তি [হাত না পেতে] স্বচ্ছলতা প্রকাশ করিতে চায় মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাআলা তাকে স্বচ্ছলতা দান করেন। আর যে ব্যক্তি কারো কাছে কিছু চাওয়া হইতে বাঁচতে চায়, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাআলা তাকে তা হইতে বাঁচিয়ে রাখেন [অভাবমুক্ত রাখেন।] আর যে ব্যক্তি যা আছে তা যথেষ্ট মনে করে [অল্পে তুষ্ট থাকতে চায়] মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা তাকে সমাধা করে দেন। [অল্পে তুষ্ট রাখেন]। আর যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে এক উকিয়া [চল্লিশটি দিরহাম] আছে তাহলে সে পীড়াপীড়ি করিল। আমি মনে মনে বললাম যে, আমার ইয়াকুতা নামক উষ্ট্রীর মূল্য তো চল্লিশ দিরহাম থেকেও বেশি হইবে, তাই আমি ফিরে আসলাম এবং তাহাঁর কাছে কিছুই চাইলাম না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৪২.পরিচ্ছেদঃ যাহার নিকট দিরহাম নেই কিন্তু তার সমপরিমাণ [মূল্যের মাল] আছে সে ব্যক্তি প্রসঙ্গে

২৫৯৬. আতা ইবনি ইয়সার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি এবং আমার স্ত্রী বকীউল গারকাদ নামক স্থানে আসলাম। আমার স্ত্রী আমাকে বলিল যে, তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে যাও এবং তাহাঁর কাছে থেকে কিছু নিয়ে আস, আমরা খাব। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম, তখন তাহাঁর সামনে এমন একজন লোক পেলাম, যে তাহাঁর কাছে কিছু সাহায্য চাচ্ছিল আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলছিলেন, আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মত কিছুই নেই। তখন সে ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হইয়া চলে যাচ্ছিল এবং বলছিল যে, আমার জীবনের কসম! আপনি যাকে ইচ্ছা তাকেই দেবেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার কাছে তাকে দেওয়ার মত কিছুই না থাকার কারণে সে আমার উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে চলএক উকিয়া [দিরহাম] বা তার সমপরিমাণ মূল্যের কোন বস্তু থাকে তবে সে যেন পীড়াপীড়ি করে সাহায্য প্রার্থনা করিল। আসাদী ব্যক্তি মনে মনে বলিল যে, আমার উষ্ট্রীর মূল্য এক উকিয়া [দিরহাম] থেকেও বেশী হইবে। এক উকিয়া হল চল্লিশ দিরহাম। তাই আমি ফিরে আসলাম এবং কোন সাহায্য চাইলাম না। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কিছু যব এবং শুষ্ক আঙ্গুর [কিশমিশ] আসলে তিনি তা থেকে আমাদের জন্যও কিছু বণ্টন করে দিলেন। এমনিভাবে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অভাবমুক্ত করে [পরমুখাপেক্ষীতা হইতে বাঁচিয়ে] দিলেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৯৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ নয় এবং সক্ষম ও সবল ব্যক্তির জন্যও নয়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩.পরিচ্ছেদঃ উপার্জনে সক্ষম ও সবল ব্যক্তির সাহায্য চাওয়া প্রসঙ্গে

২৫৯৮. উবায়দুল্লাহ ইবনি আদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

দুজন লোক তাঁকে বলেছেন, তাঁরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে তাহাঁর কাছে সাদকা [যাকাত] হইতে কিছু সাহায্য চাইলেন। তিনি তাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, তারা উভয়েই সক্ষম ব্যক্তি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যদি তোমরা চাও তবে তোমাদেরকে দেব, কিন্তু স্বচ্ছল ও উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য এতে কোন অংশ নেই।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪.পরিচ্ছেদঃ শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাওয়া

২৫৯৯. সামুরা ইবনি জুন্দুব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাহায্য চাওয়া এমন একটি ক্ষত যদ্বারা মানুষ স্বীয় চেহারাকে বিকৃত করে দেয়। তাই যাহার ইচ্ছা হয় সে চেহারাকে ক্ষতযুক্ত করুক, আর যাহার ইচ্ছা হয় সে না করুক। তবে হ্যাঁ; কোন মানুষ শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে পারে অথবা এমন কোন জিনিস সাহায্য চাইতে পারে যা তার একান্ত দরকার।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫.পরিচ্ছেদঃ অত্যাবশ্যকীয় জিনিস চাওয়া প্রসঙ্গে

২৬০০. সামুরা ইবনি জুন্দুব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সাহায্য চাওয়া একটি ক্ষত যা দ্বারা মানুষ স্বীয় চেহারাকে বিকৃত করে দেয়। তবে হ্যাঁ, কোন মানুষ শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে পারে অথবা অত্যাবশ্যকীয় বস্তু চাইতে পারে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬০১. হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে সাহায্য করিলেন। অতঃপর তাহাঁর কাছে আবারও সাহায্য চাইলে তিনি আবার আমাকে সাহায্য করিলেন। এরপর আমি তাহাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে পুনরায় সাহায্য করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরপর বলিলেন, হে হাকীম! এ সমস্ত ধন-সম্পদ মনোমুগ্ধকর বটে তবে যে ব্যক্তি এগুলো সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়, আর যে ব্যক্তি লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে কোন বরকত দেওয়া হয় না, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হয় না। আর উপরের হাত নীচের হাত[দাতা গ্রহীতার চেয়ে] থেকে উত্তম।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬০২. হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে সাহায্য করিলেন। তাহাঁর কাছে আবারও কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে কিছু সাহায্য করিলেন। পুনরায় সাহায্য চাইলে আমাকে সাহায্য করিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে হাকীম! এ সমস্ত ধন-সম্পদ উত্তম এবং উৎকৃষ্ট। যে ব্যক্তি সেগুলো সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় আর যে ব্যক্তি তা লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে কোন বরকত দেওয়া হয় না। সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হইতে পারে না। আর উপরের হাত[দাতা হাত গ্রহীতা হাত] নীচের হাত থেকে উত্তম।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬০৩. হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলাম। তিনি আমাকে সাহায্য করিলেন। আমি তাহাঁর কাছে আবার কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে আবারও সাহায্য করিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে হাকীম! এ সমস্ত ধন-সম্পদ হলো সুস্বাদু [মনোমুগ্ধকর]। যে ব্যক্তি এগুলো সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়, আর যে ব্যক্তি এগুলো লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে কোন বরকত দেওয়া হয় না। সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করিল কিন্তু পরিতৃপ্ত হইতে পারল না। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম [রাঃআঃ] বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন সহ পাঠিয়েছেন, আপনার [কাছে চাওয়ার] পরে আমি আমার দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত [জীবিত থাকাকালীন] কাউকে ঝামেলা করবনা। [কারো কাছে কিছুই চাইব না।]

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬.পরিচ্ছেদঃ চাওয়া ব্যতীত আল্লাহ্ তাআলা যাকে কোন ধন-সম্পদ দান করেন তার প্রসঙ্গে

২৬০৪. ইবনি সাঈদী মালিকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ] আমাকে সাদকা আদায়কারী রূপে নিযুক্ত করিলেন। যখন আমি সাদকা আদায় করে নিলাম এবং সেগুলো উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ]-কে দিয়ে দিলাম, তখন তিনি আমাকে কাজের বিনিময় নিতে আদেশ দিলেন। আমি তাঁকে বললাম যে, আমি এ কাজ আল্লাহর ওয়াস্তে করেছি আর এর প্রতিদান আমি আল্লাহর কাছ থেকে নেব। তিনি বলিলেন, আমি তোমাকে যা দিচ্ছি তা তুমি নিয়ে নাও। যেহেতু আমিও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সাদকা উসূল করতাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তোমার মতই বলতাম। কিন্তু তিনি আমাকে বলিতেন যে, চাওয়া ব্যতীত আমি তোমাকে কিছু দিলে সেটা নিয়ে নেবে এবং খাবে ও [দান-সাদকা] করে দেবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদী

২৬০৫. আবদুল্লাহ ইবনি সাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার সিরিয়া থেকে উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ]-এর কাছে আসলে তিনি তাঁকে বলিলেন যে, আমি শুনিয়াছি যে, তুমি মুসলমানদের কোন কাজ [যাকাত আদায়] করলে তোমাকে তার পারিশ্রমিক দেওয়া হলে তা তুমি নাকি গ্রহণ কর না? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমার কিছু ঘোড়া এবং দাস-দাসী রয়েছে এবং আমি স্বচ্ছল অবস্থায় আছি। তাই আমার ইচ্ছা আমার কাজ মুসলমানদের জন্য সাদকা স্বরূপ হোক। উমার [রাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, তুমি যা মনস্থ করেছ আমিও তাই মনস্থ করেছিলাম, কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] আমাকে সম্পদ [বিনিময়] দিতেন, আমি তাঁকে বলতামঃ যে ব্যক্তি আমার থেকেও বেশী মুখাপেক্ষী আপনি এই মাল তাকেই দিন। তিনি আমাকে একবার কিছু [মাল] দিলে আমি তাঁকে বললাম, এই [মাল] যে আমার থেকে বেশী অভাবী আপনি তাকেই দিন। তিনি বলিলেন, তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত যে মাল মহান মহিয়ান আল্লাহ তোমাকে দেন তা গ্রহণ করে নেবে এবং ইচ্ছা করলে তা তোমার কাছে রেখে দেবে নয়তো সাদকা করে দেবে। আর যা তেমন [লোভ বিহীন] নয় তার প্রতি তোমার মনকে ধাবিত করিবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬০৬. আবদুল্লাহ ইবনি সাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার উমার [রাঃআঃ]-এর খিলাফতকালে তাহাঁর কাছে গেলেন। উমার [রাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন যে, আমি শুনতে পেলাম তুমি নাকি মুসলমানদের কোন কাজে নিয়োজিত রয়েছো এবং তোমাকে তোমার কাজের পারিশ্রমিক দেওয়া হলে তা তুমি গ্রহণ কর না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, এতে তোমার উদ্দেশ্য কি? আমি বললাম যে, আমার কিছু ঘোড়া এবং দাস-দাসী রয়েছে আর আমি স্বচ্ছল অবস্থায় আছি। তাই আমি চাচ্ছিলাম যে আমার কাজগুলো মুসলমানদের জন্য সাদকা স্বরূপ হোক। উমার [রাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন যে, তুমি এরূপ করিবে না। কেননা তুমি যে রকম চাচ্ছ আমিও সে রকম চাইতাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দান [পারিশ্রমিক] দিলে আমি বলতাম যে, আপনি ইহা আমার থেকে বেশী অভাবীকে দিয়ে দিন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেন যে, তুমি এগুলো নিয়ে নাও। ইচ্ছা করলে নিজের কাজে লাগাও নতুবা সাদকা করে দাও। তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত যে মাল তোমার হস্তগত হয় তা তুমি নিয়ে যাও। [কোন মাল] এভাবে [তোমার হস্তগত] না হলে তার প্রতি আকৃষ্ট হইবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬০৭. আবদুল্লাহ ইবনি সাদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ]-এর খিলাফতকালে তাহাঁর কাছে আসলেন। উমার [রাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন , আমি শুনতে পেলাম যে, তুমি নাকি মানুষের কাজে নিয়োজিত থাক এবং তার বিনিময় দেওয়া হলে তুমি তা অপছন্দ কর? তিনি বলেন, আমি বললামঃ হ্যাঁ। উমার [রাঃআঃ] জিজ্ঞাসা করিলেন, এর দ্বারা তোমার উদ্দেশ্য কি? আমি বললাম, আমার কিছু ঘোড়া এবং দাস-দাসী রয়েছে আর আমি স্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছি। তাই আমি চাচ্ছিলাম যে, আমার কাজগুলো মুসলমানদের জন্য সাদকা স্বরূপ হোক। উমার [রাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন যে, তুমি এরূপ করিবে না। তুমি যে রকম ইচ্ছা করছ আমিও সে রকমই ইচ্ছা করতাম। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বিনিময় দিতেন আর আমি বলতাম যে, আপনি এটা আমার চেয়েও বেশী অভাবীদেরকে দিয়ে দিন। তিনি আমাকে একবার কিছু মাল দিলে আমি তাঁকে বললাম যে, আপনি ইহা আমার চেয়েও বেশী অভাবীকে দিয়ে দিন। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি এটা নিয়ে নাও; ইচ্ছা করলে নিজের কাজে লাগাও নতুবা সাদকা করে দাও। আর যে মাল তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত হস্তগত হয়, তুমি তা নিয়ে নেবে অন্যথায় তার পেছনে পড়বে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬০৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি উমার [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দান [বিনিময়] দিতেন আর আমি বলতাম, আপনি ইহা আমার চেয়েও বেশী অভাবীদেরকে দিয়ে দিন। এরপর তিনি আমাকে কিছু বিনিময় দিলে আমি তাঁকে বললামঃ আপনি এটা আমার চেয়েও কোন অভাবী ব্যক্তিকে দিয়ে দিন। তিনি বলিলেন, তুমি এটা নাও, ইচ্ছা করলে নিজের কাজে ব্যয় কর নতুবা সাদকা করে দাও। আর তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত কোন মাল যদি তোমার হস্তগত হয় তাহলে তুমি তা নিয়ে নেবে, অন্যথায় তুমি নিজেকে তার মালের পেছনে ধাবিত করিবে না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭.পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর বংশধরগণকে সাদকা উসূল করার কাজে নিযুক্ত করা প্রসঙ্গে

২৬০৯. আবদুল মুত্তালিব ইবনি রবীআ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তাহাঁর পিতা রবীআ ইবনি হারিছ [রাঃআঃ] তাঁকে এবং ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-কে বলিলেন যে, আপনারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে যান এবং তাঁকে বলুন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে সাদকা উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করুন। আমরা এই অবস্থায় থাকাকালীন হযরত আলী [রাঃআঃ] আসলেন এবং তাহাদের [আমাদেরকে] বলিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদের কাউকেও সাদকা উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করবেন না। আবদুল মুত্তালিব [রাঃআঃ] বলেন, তখন আমি এবং ফযল [রাঃআঃ] চলে আসলাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে পৌঁছালে [এবং নিবেদন করলে] তিনি আমাদেরকে বলিলেন যে, সাদকা লোকজনের ধন-সম্পত্তির ময়লা। তাই ইহা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর বংশধরদের জন্য হালাল নয়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮.পরিচ্ছেদঃ ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবেই পরিগণিত

২৬১০. শুবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু ইয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি কি আনাস [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসাবে পরিগণিত? তখন আবু ইয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বললেনঃ হ্যাঁ, [আমি শুনিয়াছি]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬১১. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত হইবে।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯.পরিচ্ছেদঃ আযাদকৃত গোলাম নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত

২৬১২. আবু রাফি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার মাখযূম গোত্রের এক ব্যক্তিকে সাদকা উসূল করার জন্য নিযুক্ত করিলেন। তখন আবু রাফি [রাঃআঃ] তাহাঁর অনুসরণ করিতে চাইলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন যে, সাদকা আমাদের জন্য বৈধ নয়। আর কারো আযাদকৃত গোলাম তার পরিবারের সদস্য হিসেবেই পরিগণিত।{১}

{১} আবু রাফি [রাঃআঃ] নাবী পরিবারের আযাদকৃত গোলাম ছিলেন।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫০.পরিচ্ছেদঃ সাদকা নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য বৈধ নয়

২৬১৩. হাযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ]-কে কোন হাদিয়া পেশ করা হলে তিনি জিজ্ঞাসা করিতেন যে, এটা হাদিয়া না সাদকা? সাদকা বলা হলে তিনি তা খেতেন না আর হাদিয়া বলা হলে তিনি হস্ত প্রসারিত করিতেন [খেতেন]।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৬১৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বারীরা [রাঃআঃ]-কে খরিদ করে মুক্ত করে দেওয়ার ইচ্ছা করিলেন। তাহাঁর মালিকেরা তাহাঁর মীরাছ প্রাপ্তির শর্ত আরোপ করলে তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একথা জানালেন। তখন তিনি বলিলেন, তুমি তাকে কিনে মুক্ত করে দাও। কেননা, মুক্তিদাতাই মীরাছের হকদার। আর মুক্তি দেয়া হলে তাকে [পূর্ববর্তী বিয়ে অক্ষুণ্ণ রাখা না রাখার] এখতিয়ার দেওয়া হল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কিছু গোশত আনা হলে তাঁকে বলা হল যে, ইহা বারীরা [রাঃআঃ]-এর সাদকা হিসাবে প্রাপ্ত গোশত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন যে, “ইহা তার জন্য সাদকা আর আমার জন্য হাদিয়া।” তার স্বামীও স্বাধীন ব্যক্তি ছিল।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৫১.পরিচ্ছেদঃ সাদকা হস্তান্তরিত হলে [ তার বিধান ]

পরিচ্ছেদঃ সাদকা ক্রয় করা প্রসংগে

২৬১৫. আসলাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি উমার [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি একবার আল্লাহর রাস্তায় বাহনরুপে একটি ঘোড়া দান করলাম। যাহার কাছে ঘোড়াটি ছিল সে ওটাকে [যত্ন না নিয়ে] নষ্ট [করে দেওয়ার উপক্রম] করলে আমি তার কাছ থেকে ওটা কিনে নিতে মনস্থ করলাম। আমার মনে হল যে, সে তা সস্তা দামেই বিক্রি করে দেবে। এ ব্যাপারে আমি রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ]–কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, তুমি সেটা খরিদ কর না, যদিও সে তোমাকে তা এক দিরহামেও দিয়ে দেয়। যেহেতু সাদকা ফিরিয়ে নেয়া ব্যক্তি নিজের বমি পুনরায় আহারকারী কুকুরের সমতুল্য।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬১৬. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার একটি ঘোড়া বাহনরুপে আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলেন। এরপর তিনি বিক্রয় হইতে দেখে তা ক্রয় করিতে চাইলেন [এবং এ ব্যাপারে রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর পরামর্শ চাইলে] তিনি [নাবী[সাঃআঃ]] বলিলেন, তুমি তোমার সাদকায় হস্তক্ষেপ কর না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬১৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার [রাঃআঃ] [একবার] একটি ঘোড়া মহান মহিয়ান আল্লাহর রাস্তায় সাদকা করে দিলেন। তারপর তা বিক্রয় হইতে দেখে তা ক্রয় করিতে চাইলেন, এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে এসে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন যে, তুমি তোমার সাদকা ঘোড়া ফিরিয়ে নিও না।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬১৮. সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

[একদা] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আত্তাব ইবনি উসায়দ [রাঃআঃ]-কে আঙ্গুরের পরিমাপ করে শুকনা আঙ্গুর [কিশমিশ] দ্বারা তার যাকাত আদায় করিতে বলিলেন, যেরূপ খেজুরের যাকাত শুকনা খেজুর দ্বারা আদায় করা হয়।

যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply