খাদ্য পোশাক বণ্টন ও দানের ব্যাপারে হাদিস
খাদ্য পোশাক বণ্টন ও দানের ব্যাপারে হাদিস >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৩৫, অনুচ্ছেদঃ (৩৩-৪৫)=টি
৩৩. অনুচ্ছেদঃ দানকৃত বস্তুই অবশিষ্ট থাকে
৩৪. অনুচ্ছেদঃ রাসূল [সাঃআঃ]-এর দারিদ্র্যতা
৩৫. অনুচ্ছেদঃ দারিদ্রতা স্বচ্ছলতার চাইতে উত্তম
৩৬. অনুচ্ছেদঃ আহলে সুফফার মধ্যে দুধ বন্টন
৩৭. অনুচ্ছেদঃ পেট পূর্ণ করে খাদ্যগ্রহণকারী ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন ক্ষুধার্ত থাকিবে
৩৮. অনুচ্ছেদঃ সাহাবীদের জীর্ণ পোশাক
৩৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বিনয়ের পোশাক পরিধান করে
৪০. অনুচ্ছেদঃ সব ব্যয় আল্লাহ তাআলার পথে, অট্টালিকা নির্মাণের ব্যয় ব্যতীত
৪১. অনুচ্ছেদঃ বস্ত্র দানকারী আল্লাহ্র হিফাযাতে থাকে
৪২. অনুচ্ছেদঃ সালামের প্রসার, খাদ্যদান ও গভীর রাতে নামাজ
৪৩. অনুচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ভোজনকারী
৪৪. অনুচ্ছেদঃ মুহাজিরদের প্রতি আনসারদের উদারতা
৪৫. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম
৩৩. অনুচ্ছেদঃ দানকৃত বস্তুই অবশিষ্ট থাকে
২৪৭০. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন সাহাবীগণ একটি ছাগল যবেহ করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] প্রশ্ন করিলেন, এর আর কি বাকী আছে? তিনি {আয়িশা [রাদি.]} বলিলেন, এর কাঁধের অংশ ছাড়া আর কিছু বাকী নেই [দান করা হয়েছে]। তিনি বলিলেন, কাঁধ ব্যতীত সবটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে [যা কিছু দান করা হয়েছে তা-ই আল্লাহ্র নিকট বাকী রয়েছে]।
সহীহঃ সহীহা [২৫৪৪]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ। আবু মাইসারার নাম আমর ইবনি শুরাহবিল আল-হামদানী।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৪. অনুচ্ছেদঃ রাসূল [সাঃআঃ]-এর দারিদ্র্যতা
২৪৭১. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মদ [সাঃআঃ]-এর পরিবারের সদস্যগণ সারামাস যাবত এমন অবস্থায়ও কাটিয়েছি যে, চুলায় আগুন ধরাইনি। আমাদের খাবারের জন্য পানি ও খেজুর ব্যতীত আর কিছুই থাকতো না।
সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [১১১], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে আল্লাহ্র পথে যেভাবে ভয় দেখানো হয়েছে, আর কাউকে ঐভাবে ভয় দেখানো হয়নি। আমাকে আল্লাহ্ তাআলার উদ্দেশ্যে যেভাবে যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে আর কোন ব্যক্তিকে সেইভাবে যন্ত্রণা প্রদান করা হয়নি। আমার উপর দিয়ে ত্রিশটি দিবারাত্রি এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে যে, বিলালের বগলের মধ্যে রক্ষিত সামান্য খাদ্য ছিল আমার ও বিলালের সম্বল। তা ছাড়া এতটুকু আহারও ছিল না যা কোন প্রাণধারী প্রাণী খেয়ে বাঁচতে পারে।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৫১]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসের অর্থ হলো নাবী [সাঃআঃ] বিলাল [রাদি.]-কে নিয়ে যখন মক্কা হইতে [তায়িফে] পলায়ন করেছিলেন, তখন বিলাল [রাদি.] তারঁ বগলের নিচে দাবিয়ে নিতে পারে এতটুকু খাবার সাথে বহন করে নিয়েছিলেন। তাঁরা এই খাবার খেয়ে দীর্ঘ একমাস অতিবাহিত করেন।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭৩. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি এক শীতের দিনে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঘর হইতে বের হলাম। এর পূর্বে আমি একটি লোমহীন চামড়া নিয়ে তা মাঝামাঝি কেটে গলায় ঢুকালাম এবং খেজুরের পাতা দিয়ে কোমরে শক্ত করে বাঁধলাম। আমি তখন খুব বেশী ক্ষুধার্ত ছিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঘরে কোন খাদ্যসামগ্রী থাকলে তা অবশ্য খেয়ে ফেলতাম। আমি খাদ্যের খোঁজে বের হয়ে গেলাম। তারপর জনৈক ইয়াহূদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, সে তার বাগানে [কপিকল জাতীয়] চরকির সাহায্যে কুয়া হইতে পানি তুলছিল। আমি প্রাচীরের একটি ছিদ্র দিয়ে তাকে দেখলাম। সে প্রশ্ন করিল, হে বিদুঈন! কি চাও? তুমি প্রতি বালতির বিনিময়ে একটি করে খেজুর পাবে, আমার বাগানের পানি তুলে দিবে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, দরজা খোল, আমি ভেতরে আসি। সে দরজা খুললে আমি ভেতরে গেলাম। তারপর সে একটি বালতি এনে দিল। আমি বালতি ভরে পানি উঠাতে লাগলাম আর সে প্রতি বালতিতে একটি করে খেজুর দিতে লাগল। অবশেষে খেজুরে আমার হাতের মুঠি ভরে গেল। আমি তখন বালতি রেখে দিয়ে বললাম, আমার যথেষ্ট হয়েছে। আমি খেজুরগুলো খেয়ে পানি পান করলাম এবং মসজিদে এসে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সেখানে পেলাম।
যঈফ, তালীকুর রাগীব [৩/১০৯, ১১০]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৪৭৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার তাহাদেরকে দুর্ভিক্ষে পেল। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে একটি করে খেজুর দেন।
শাজ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪১৫৭]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায
২৪৭৫. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক অভিযানে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের তিনশত লোকের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। আমরা আমাদের রসদপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী আমাদের কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। রসদ [পাথেয় ছিল খুবই সামান্য, কাজেই তাড়াতাড়ি তা] ফুরিয়ে গেল। এমনকি প্রতি জনের জন্য দিনশেষে একটি করে খেজুর নির্ধারিত হতো। তাকে বলা হলো, হে আবু আব্দুল্লাহ! একজন লোকের জন্য সারাদিনে একটি খেজুরে কি হতো? তিনি বলিলেন, একটি খেজুরে কিছুই হতো না, কিন্তু আমরা একটির উপকারিতাও তখন বুঝতে পারলাম, যখন হইতে একটি করে খেজুর পাবার সুযোগও ফুরিয়ে গেল। তারপর আমরা সাগরের সামনে এসে একটি বিরাট আকারের মৎস্য দেখিতে পেলাম। সমুদ্র তা নিক্ষেপ করেছে। আমরা আঠার দিন পর্যন্ত এটা খেলাম। আমাদের নিকট তা কতই না প্রিয় ছিল।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৪১৫৯], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসটি জাবির [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এটিকে ওয়াহাব ইবনি কাইসানের সূত্রে মালিক ইবনি আনাস [রাদি.] আরো পরিপূর্ন ও লম্বা করে বর্ণনা করিয়াছেন।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৫. অনুচ্ছেদঃ দারিদ্রতা স্বচ্ছলতার চাইতে উত্তম
২৪৭৬. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা [সাঃআঃ]-এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় চামড়ার তালিযুক্ত একটি ছেড়া চাদর গায়ে জড়িয়ে মুসআব ইবনি উমাইর [রাদি.] এসে আমাদের সামনে হাযির হন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার বর্তমান করুণ অবস্থা দেখে এবং তার পূর্বের স্বচ্ছল অবস্থার কথা মনে করে কেঁদে ফেললেন। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সে সময় তোমাদের কি অবস্থা হইবে, যখন তোমাদের কেউ সকালে এক জোড়া পোশাক পরবে আর বিকেলে পরবে অন্য জোড়া। আর তার সামনে খাদ্যভর্তি একটি পেয়ালা রাখা হইবে আর অন্যটি উঠিয়ে নেয়া হইবে। তোমরা তোমাদের ঘরগুলো এমনভাবে পর্দায় ঢেকে রাখবে, যেভাবে কাবা ঘরকে গেলাফে ঢেকে রাখা হয়। সাহাবীগণ আরয করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তখন বর্তমানের চাইতে অনেক স্বচ্ছল থাকব। বিপদাপদ ও অভাব-অনটন হইতে নিরাপদ থাকব। ফলে ইবাদাত বন্দিগীর জন্য যথেষ্ট অবসর পাব। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ বরং বর্তমানটাই তোমাদের জন্য তখনকার তুলনায় অনেক ভালো।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫৩৬৬] দেখুন হাদীস নং [২৫৯১]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইয়াযীদ ইবনি যিয়াদ হলেন ইবনি মাইসারা, তিনি মাদীনার অধিবাসী। মালিক ইবনি আনাস-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ আলিম তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর ইয়াযীদ ইবনি যিয়াদ আদ-দিমাশকী যুহরীর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং তার সূত্রে ওয়াকী, মারওয়ান ইবনি মুআবিয়া হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর কূফার অধিবাসী ইয়াযীদ ইবনি আবু যিয়াদের সূত্রে সুফিয়ান, শুবা, ইবনি উআইনা-সহ একাধিক ঈমাম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩৬. অনুচ্ছেদঃ আহলে সুফফার মধ্যে দুধ বন্টন
২৪৭৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সুফফাবাসীগণ ছিলেন মুসলিমদের অতিথি, তাহাদের আশ্রয় লাভের মতো ধন-দৌলত, পরিবার-স্বজন কিছুই ছিল না। আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই! আমি ক্ষুধার কষ্টে আমার পেট মাটিতে চেপে ধরে থাকতাম, আর কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। কোন একদিন আমি তাহাদের [সাহাবাদের] পথে বসে গেলাম। এমন সময় আবু বাকর [রাদি.] আমাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করলাম। উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাকে তার পিছনে যেতে বলেন [এবং কিছু খেতে দেন]। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করিলেন না। এরপর উমার [রাদি.] এই পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আমি তাকেও আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে সেই একই উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম, কিন্তু তিনিও চলে গেলেন এবং কিছুই করিলেন না। তারপর আবুল কাসিম [সাঃআঃ] আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখা মাত্রই [আসল ব্যাপার বুঝতে পেরে] মুচকি হাসলেন এবং বলিলেন, হে আবু হুরায়রা্! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]। তিনি বলিলেন, চলো, তারপর তিনি চললেন, আমি তার অনুসরণ করলাম। তিনি তার গৃহে প্রবেশ করিলেন, আমিও ঢোকার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে সম্মতি প্রদান করিলেন। তিনি ঘরে এক পেয়ালা দুধ দেখে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের জন্য এই দুধ কোথা হইতে এসেছে? বলা হলো, আমাদের জন্য অমুক ব্যক্তি উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আবু হুরায়রা্! আমি বললাম, লাব্বাইকা। তিনি বলিলেন, যাও সুফফাবাসীদেরকে ডেকে নিয়ে এসো, তারা তো মুসলিমদের অতিথি, তাহাদের নির্ভর করার মতো ধন-সম্পদ, পরিবার পরিজন বলিতে কিছুই নেই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট সাদাকাহর কোন মাল আসলে তিনি তার কোন অংশই না রেখে তাহাদের জন্য সবটুকু পাঠিয়ে দিতেন। আর উপহার আসলে তিনি তা হইতে তাহাদের জন্য কিছু পাঠিয়ে দিতেন এবং নিজেও কিছু নিতেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম এবং [মনে মনে] বললাম, এই এক পেয়ালা দুধ দিয়ে আসহাবে সুফফার কি হইবে? অথচ আমাকে তাহাদের নিকট পাঠানো হচ্ছে। এই দুধ তাহাদের মধ্যে পরিবেশন করার জন্য তো তিনি আমাকেই আদেশ করবেন। তখন তার কোন অংশই আমার জন্য জুটবে না। অথচ আমি আশা করছিলাম যে, আমি এটুকু পান করিতে পারলে আমার জন্য যথেষ্ট হইবে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ পালন করা ব্যতীত আর কোন পথও নেই। অতএব আমি তাহাদের নিকট এসে তাহাদেরকে ডাকলাম। তারা এসে ঘরে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলে তিনি বললেনঃ হে আবু হুরাইরা! পেয়ালাটা নিয়ে তাহাদেরকে দুধ পরিবেশন কর। আমি পেয়ালাটি নিলাম তারপর আমি একজন করে দিতে থাকলাম। সে পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে পেয়ালাটি আমাকে ফিরত দিলে আমি অন্যজনকে দিতাম। সেও পরিতৃপ্ত হতো। এভাবে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌছলাম। সমবেত সকলেই পরিতৃপ্ত হলো। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পেয়ালাটি তার হাতে নিয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচুকি হাসলেন এবং বলিলেন, আবু হুরায়রা্! এখন তুমি পান কর। আমি পান করলাম। তিনি আবার বলিলেন, পান কর। তারপর আমি পান করিতেই থাকলাম আর তিনি বলিতেই থাকলেন, পান কর। অবশেষে আমি বলিতে বাধ্য হলাম যে, আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই। তারপর তিনি পেয়ালা হাতে নিয়ে আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করিলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করিলেন।
সহীহঃ বুখারী [৬৪৫২]।. আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭. অনুচ্ছেদঃ পেট পূর্ণ করে খাদ্যগ্রহণকারী ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন ক্ষুধার্ত থাকিবে
২৪৭৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে ঢেকুর তুললো। তিনি বলিলেন, আমাদের সামনে তোমার ঢেকুর তোলা বন্ধ কর। অবশ্যই যে সকল ব্যক্তি দুনিয়াতে বেশি পরিতৃপ্ত হইবে তারাই কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত থাকিবে।
হাসানঃ ইবনি মা-জাহ [৩৩৫০-৩৩৫১]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান, এই সনদসূত্রে গারীব। আবু জুহাইফা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৮. অনুচ্ছেদঃ সাহাবীদের জীর্ণ পোশাক
২৪৭৯. আবু বুরদা [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [আবু মূসা] বলেন, হে বাছা! যদি তুমি আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে বৃষ্টিতে সিক্ত অবস্থায় দেখিতে তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের শরীরের গন্ধকে ভেড়ার গন্ধ বলে ধারণা করিতে।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৫৬২]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ। এই হাদীসের মর্ম এই যে, তাহাদের শরীরে পশমী কাপড় থাকতো, বৃষ্টির পানিতে ভিজলে তা হইতে ভেড়ার শরীরের দুর্গন্ধের মতো দুৰ্গন্ধ বের হতো।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বিনয়ের পোশাক পরিধান করে
২৪৮০. ইবরাহীম নাখঈ হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ দালান কোঠা সবই বিপদের কারণ। আবু হামযা বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম যা না হইলেই নয় সে সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ এতে সাওয়াবও নেই, গোনাহ্ও নেই।
দুর্বল সনদ, বিচ্ছিন্ন।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৪৮১. মুআয ইবনি আনাস আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক ক্ষমতা থাকার পরেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নম্রতাবশতঃ দামী জামা পরা ছেড়ে দিবে, তাকে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং ঈমানদারদের পোশাকের মধ্যে যে কোন পোশাক পরিধান করার অধিকার দিবেন।
হাসানঃ সহীহা [৭১৭]।এ হাদীসটি হাসান। “হুলালুল ঈমান শব্দের অর্থ ঈমানদারগণকে জান্নাতের যে পোশাক পরতে দেয়া হইবে তা।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৪০. অনুচ্ছেদঃ সব ব্যয় আল্লাহ তাআলার পথে, অট্টালিকা নির্মাণের ব্যয় ব্যতীত
২৪৮২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দালানকোঠা নির্মাণের খরচ ব্যতীত জীবন যাপনের সকল খরচই আল্লাহ তাআলার রাস্তায় বলে পরিগণিত। দালানকোঠা নির্মাণের খরচের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।
যঈফ, যঈফা [১০৬১], তালীকুর গারীব [২/১১৩]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৪৮৩. হারিসা ইবনি মুযাররিব [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রুগ্ন খাব্বাব [রাদি.]-কে দেখিতে গেলাম। তখন তিনি তার শরীরে সাতবার উত্তপ্ত লোহার দাগ দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, আমার রোগ দীর্ঘস্থায়ী হলো। যদি আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে না শুনতামঃ “তোমরা মৃত্যু কামনা করো না”, তাহলে আমি নিশ্চয়ই মৃত্যু কামনা করতাম। তিনি আরো বলিলেন, মানুষকে শুধুমাত্র মাটিতে খরচ [দালান-কোঠা স্থাপনে খরচ] ছাড়া, সকল খরচেই নেকি দেয়া হইবে।
সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। ৯৫৭ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪১. অনুচ্ছেদঃ বস্ত্র দানকারী আল্লাহ্র হিফাযাতে থাকে
২৪৮৪. হুসাইন [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ভিক্ষুক এসে ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট কিছু চাইল। ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করিলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহ্র রাসূল? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করিলেন, তুমি কি রমযানের রোযা রাখ? সে বলিল, হ্যাঁ। এবার তিনি বলিলেন, তুমি আমার নিকট কিছু চেয়েছ। আর যাঞ্চাকারীর অধিকার আছে। এখন তোমার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করা আমার কর্তব্য। এ কথা বলে তিনি তাকে একটি কাপড় দান করিলেন, তারপর বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় পরতে দিলে সে তত দিন আল্লাহ্ তাআলার হিফাযাতে থাকে, যত দিন পর্যন্ত সেই কাপড়ের সামান্য অংশও তার শরীরে থাকে।
যইফ, মিশকাত[১৯২০], তালীকুর রাগীব[৩/১১২]আবু ঈসা বলেন,এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪২. অনুচ্ছেদঃ সালামের প্রসার, খাদ্যদান ও গভীর রাতে নামাজ
২৪৮৫. আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] হ হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মাদীনায় এসে পৌছলেন, মানুষ তখন দলে দলে তার নিকট দৌঁড়ে গেল। বলাবলি হইতে লাগলো যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসেছেন। অতএব তাকে দেখার জন্য আমিও লোকদের সাথে উপস্থিত হলাম। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা কোন মিথ্যুকের চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বলিলেন তা এইঃ হে মানুষগণ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান কর এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় [তাহাজ্জুদ] নামাজ আদায় কর। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহীহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৩৩৪, ৩২৫১]।আৰু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩. অনুচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ভোজনকারী
২৪৮৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোযাদারের সমান মর্যাদাশীল।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৭৬৪, ১৭৬৫]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৪. অনুচ্ছেদঃ মুহাজিরদের প্রতি আনসারদের উদারতা
২৪৮৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন মাদীনায় আগমন করিলেন, মুহাজিরগণ তখন তার নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা যাদের কাছে হিজরাত করে এসেছি, তাহাদের মতো আর কাউকে দেখিনি সম্পদশালী অবস্থায় ও অস্বচ্ছল অবস্থায় [আল্লাহ তাআলার পথে] এত ব্যয় করিতে এবং এত উত্তমরূপে সহানুভূতি দেখাতে। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা কমানোর জন্য তারাই যথেষ্ট এবং তারা নিজেদের পরিশ্রমে অর্জিত সম্পদে আমাদেরকে ভাগীদার করিয়াছেন। এমনকি আমাদের ভয় হচ্ছে যে, তারাই সমস্ত সাওয়াব নিয়ে যাবেন। এসব কথা শুনে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, না, তোমরা যতদিন তাহাদের জন্য দুআ করিবে এবং তাহাদের গুণগান করিবে ততদিন তোমাদেরও সাওয়াব হইতে থাকিবে।
সহীহঃ মিশকাত [৩২০৬], তালীকুর রাগীব [২/৫৬]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ, এই সূত্রে গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম
২৪৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি [জনপ্রিয়], সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।
সহীহঃ সহীহাহ [৯৩৫]।আৰু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গরীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৮৯. আসওয়াদ ইবনি ইয়াযীদ [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাদি.] কে প্রশ্ন করলাম, নাবী [সাঃআঃ] ঘরে থাকাবস্থায় কি করিতেন? তিনি বলিলেন, তিনি সংসারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করিতেন, তারপর নামাযের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি উঠে গিয়ে নামাজ আদায় করিতেন।
সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [২৯৩]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply