ইমাম মাহদী, ঈসা মারইয়াম ও দাজ্জাল আগমনের লক্ষণ

ইমাম মাহদী, ঈসা মারইয়াম ও দাজ্জাল আগমনের লক্ষণ

ইমাম মাহদী, ঈসা মারইয়াম ও দাজ্জাল আগমনের লক্ষণ >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৩১, অনুচ্ছেদঃ (৫২-৮০)=২৯টি

৫২. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম মাহ্দী প্রসঙ্গে
৫৩. অনুচ্ছেদঃ [মাহ্দীর রাজত্বকাল]
৫৪. অনুচ্ছেদঃ ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] এর অবতরণ প্রসঙ্গে
৫৫. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৫৬. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালের আবির্ভাবের লক্ষণ
৫৭. অনুচ্ছেদঃ কোন স্থান হইতে দাজ্জালের আগমন ঘটবে ?
৫৮. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জাল আগমনের আলামত
৫৯. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালের অনাচার
৬১. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করিতে পারবে না
৬২. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালকে ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] হত্যা করবেন
৬৩. অনুচ্ছেদঃ ইবনি সাইয়্যাদ প্রসঙ্গে
৬৪. অনুচ্ছেদঃ [শত বছর পর কেউ আর থাকিবে না]
৬৫. অনুচ্ছেদঃ বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ
৬৬. অনুচ্ছেদঃ জাস্সাসা ও দাজ্জাল সংক্রান্ত একটি ঘটনা
৬৭. অনুচ্ছেদঃ [সামর্থের বাহিরে কোন কাজে লিপ্ত হওয়া অনুচিত]
৬৮. অনুচ্ছেদঃ অত্যাচারী ও নির্যাতিতকে সাহায্য প্রদান
৬৯. অনুচ্ছেদঃ [তিন প্রকার কাজের জন্য তিন ধরনের ফল]
৭০. অনুচ্ছেদঃ রাসুল [সাঃআঃ] এর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী জাহান্নামী
৭১. অনুচ্ছেদঃ ফিতনার বন্ধ দরজা ভেঙ্গে যাবে
৭২. অনুচ্ছেদঃ শাসকের অন্যায়ের সমর্থন করা ও না করার পরিণাম
৭৩. অনুচ্ছেদঃ ধর্মে অটল থাকা হাতে অগ্নি রাখার মতো কঠিন বিষয় হইবে
৭৪. অনুচ্ছেদঃ পুরুষের উপর নারীর কর্তিত্ব
৭৫. অনুচ্ছেদঃ যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে
৭৬. অনুচ্ছেদঃ উত্তম লোক ও নিকৃষ্ট লোক
৭৭. অনুচ্ছেদঃ উত্তম শাসক ও নিকৃষ্ট শাসক
৭৮. অনুচ্ছেদঃ শাসকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করিতে হইবে
৭৯. অনুচ্ছেদঃ [যে স্থান হইতে ফিতনার উৎপত্তি]
৮০. অনুচ্ছেদঃ কর্তব্যকর্মের এক-দশমাংশ ত্যাগ করলেই ধ্বংস

৫২. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম মাহ্দী প্রসঙ্গে

২২৩০. আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার পরিবারের একজন আরবের অধিপতি না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবী ধ্বংস হইবে না। আমার নামের অনূরূপই তার নাম হইবে।

হাসান সহিহ, মিশকাত[৫৪৫২], ফাযাইলুশশাম [১৬], বাওযুন নাযীর [৬৪৭]। আবু ঈসা বলেন, আলী, আবু সাঈদ, উম্মু সালামা ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সছিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২২৩১. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার পরিবারের মধ্যে একজন লোক রাজাধিপতি হইবে, তার নাম হইবে আমার নামের অনূরূপ। আসিম [রঃ] বলেনঃ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে আবু সালিহ [রঃ] আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, যদি পৃথিবী ধ্বংসের মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তার রাজত্বের জন্য আল্লাহ্ তাআলা সে দিনটিকেই দীর্ঘায়িত করে দিবেন।

হাসান সহিহ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৫৩. অনুচ্ছেদঃ [মাহ্দীর রাজত্বকাল]

২২৩২. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, আমাদের রাসূল [সাঃআঃ] এর পরে নতুন কোন দুর্ঘটনা ঘটবে। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে মাহ্‌দীর আগমন ঘটবে, সে পাঁচ অথবা সাত অথবা নয় বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকিবে [যাইদ সন্দেহে পতিত হয়েছে যে, উর্ধ্বতন বর্ণনাকারী কোন সংখ্যাটি বলেছেন]। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, এই সংখ্যায় কি বুঝায়? তিনি বললেনঃ বছর। মানুষ তার নিকট এসে বলবে, হে মাহদী! আমাকে কিছু দান করুন, আমাকে কিছু দান করুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তারপর সে তার কাপড় বা থলেতে যেটুকু পরিমাণ বহন করে নিতে পারবে তিনি তাকে সেটুকু পরিমাণ দান করবেন।

হাসান, ইবনি মা-জাহ[৪০৮৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-র এ হাদীসটি আবু সাঈদ [রাদি.] এর বরাতে অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবাস সিদ্দীক আন-নাজীর নাম বাক্র ইবনি আমর, মতান্তরে বাক্‌র ইবনি কাইস। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৫৪. অনুচ্ছেদঃ ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] এর অবতরণ প্রসঙ্গে

২২৩৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] খুব শীঘ্রই ন্যায়বিচারক শাসক হিসাবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভঙ্গ করবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিয্য়া বাতিল করবেন। তখন এতই ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হইবে যে, কেউ তা গ্রহণ করিবে না।

সহিহ, সহীহাহ [২৪৫৭], বুখারী, মুসলিম আরো পূর্ণাঙ্গ রূপে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জাল প্রসঙ্গে

২২৩৪. আবু উবাইদা ইবনিল জাররাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ নূহ্ [আঃ]-এর পর হইতে এমন কোন নাবী আসেননি যিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে তাহাঁর জাতিকে সতর্ক করেননি। আর আমিও তোমাদেরকে তার [দাজ্জাল] প্রসঙ্গে সতর্ক করে দিচ্ছি। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকটে দাজ্জালের পরিচয় বর্ণনা করিলেন তারপর তিনি বলিলেন, যারা আমাকে দেখেছ বা আমার কথা শুনেছ তাহাদের কেউ হয়ত তার সাক্ষাত পাবে। উপস্থিত জনতা প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সে সময় আমাদের অন্তরের অবস্থা কেমন হইবে? তিনি বললেনঃবর্তমানে যে রকম আছে সেই রকম বা তার চেয়েও ভাল হইবে।

যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী [৫৪৮৬] আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি বুসর, আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস আল-জুযাঈ আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল, ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু উবাইদা ইবনিল জাররাহ [রাদি.] বর্ণিত হাদীস হিসাবে এটি হাসান গারীব। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালের আবির্ভাবের লক্ষণ

২২৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন জনগনের মাঝে খুতবাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহ্ তাআলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করার পর দাজ্জালের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেনঃ আমি অবশ্যই দাজ্জাল সমন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করছি। আর এমন কোন নাবী অতিবাহিত হননি যিনি তাহাঁর জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেননি, এমনকি নূহ [আঃ] ও তাহাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করিয়াছেন। কিন্তু আমি তার ব্যাপারে এমন একটি কথা বলিতে চাই যা আর কোন নাবী তাহাঁর জাতিকে বলেননি। নিশ্চয়ই সে হইবে অন্ধ। অথচ আল্লাহ্ তাআলা তো অন্ধ নন।

সহিহ, সহিহ আদাবুল মুফরাদ, বুখারী, মুসলিম। যুহরী [রঃ] বলেন, আমাকে উমার ইবনি সাবিত আনসারী [রঃ] বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কয়েকজন সাহাবী তার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, সেদিন জনগনকে ফিতনা প্রসঙ্গে সাবধান করিতে গিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, জেনে রাখ, তোমাদের কেউই মৃত্যুর আগে তার প্রভুকে দেখিতে পাবে না, বিশেষতঃ তার [দাজ্জালের] দুই চোখের মধ্যবর্তী স্থানে কাফির শব্দটি লিখিত থাকিবে। যে তার কান্ডক্রিয়া অপছন্দ করিবে, সে তা পড়তে সক্ষম হইবে। সহিহ, সহীহাহ[২৮৬১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৩৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করিবে। তাতে তোমরা তাহাদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করিবে। এমনকি পাথর পর্যন্ত বলবে, হে মুসলিম! এই যে আমার অন্তরালে এক ইয়াহুদী [লুকিয়ে] আছে, তাকে হত্যা কর।

সহিহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭. অনুচ্ছেদঃ কোন স্থান হইতে দাজ্জালের আগমন ঘটবে ?

২২৩৭. আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলেছেনঃ প্রাচ্যের খোরাসান হইতে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এমন কতক জাতি তার অনুসরণ করিবে, যাদের মুখমন্ডল হইবে স্তর বিশিষ্ট চওড়া ঢালের মতো।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৪০৭২]। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। অধিকন্তু এ হাদীসটি আবুত তাইয়াহ হইতে আবদুল্লাহ ইবনি শাওযাব প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন। আমরা এই হাদীস প্রসঙ্গে শুধমাত্র আবুত তাইয়াহ্র সূত্রেই জেনেছি। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জাল আগমনের আলামত

২২৩৮. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মহা হত্যাকান্ড, কনষ্টান্টিনোপল বিজয় এবং দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে সাত মাসের মধ্যে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪০৯২] আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে সাব ইবনি জাসসামা, আবদুল্লাহ ইবনি বুসর, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ ও আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২২৩৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কনষ্টান্টিনোপল বিজয় সংঘটিত হইবে কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে।

সনদ সহিহ, মাওকুফ। মাহমূদ বলেন, এ হাদীসটি গারীব। কনষ্টান্টিনোপল রোম সাম্রাজ্যের [বর্তমান তুরস্কের] একটি প্রসিদ্ধ শহর। দাজ্জালের আবির্ভাবকালে এটা বিজিত হইবে। এটা অবশ্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-র কিছু সাহাবীদের যামানায় [আমীর মুআবিয়ার রাজত্বকালে] বিজিত হয়েছে। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ

৫৯. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালের অনাচার

২২৪০. আন-নাওয়াস ইবনি সামআন আল-কিলাবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক সকালে দাজ্জাল প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি এর ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতা তুলে ধরেন। এমনকি আমাদের ধারণা সৃষ্টি হলো যে, সে হয়তো খেজুর বাগানের ওপাশেই বিদ্যমান। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হইতে চলে গেলাম, তারপর আবার আমরা তাহাঁর নিকট ফিরে এলাম। তিনি আমাদের মধ্যে দাজ্জালের ভীতির চিহ্ন দেখে প্রশ্ন করেনঃ তোমাদের কি হয়েছে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আপনি সকালে দাজ্জাল প্রসঙ্গে আলোচনা করিয়াছেন এবং এর ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতা এমন ভাষায় উত্থাপন করিয়াছেন যে, আমাদের ধারণা হচ্ছিল যে, হয়তো সে খেজুর বাগানের পাশেই উপস্থিত আছে। তিনি বললেনঃ তোমাদের ক্ষেত্রে দাজ্জাল ছাড়াও আমার আরো কিছু আশংকা রয়েছে। যদি সে আমার জীবদ্দশাতেই তোমাদের মাঝে আসে তাহলে আমিই তোমাদের পক্ষে তার প্রতিপক্ষ হবো। আর সে যদি আমার অবর্তমানে আবির্ভূত হয়, তাহলে তোমরাই তার প্রতিপক্ষ হইবে। আর আল্লাহ্ তাআলাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আমার পরিবর্তে সহায় হইবেন। সে [দাজ্জাল] হইবে কুঞ্চিত [কোঁকড়া] চুলবিশিষ্ট, স্থির দৃষ্টিসম্পন্ন যুবক, সে হইবে আবদুল উযযা ইবনি কাতানের অনুরুপ। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার দেখা পায় তাহলে যেন সে সূরা কাহফ-এর প্রাথমিক আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে। তিনি বললেনঃ সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী কোন এলাকা হইতে আত্মপ্রকাশ করিবে। তারপর সে ডানে-বামে ফিতনা ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা দৃঢ়তার সাথে অবস্থান করিবে আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! সে কত দিন দুনিয়াতে থাকিবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। এর একদিন হইবে একবছরের সমান, একদিন হইবে একমাসের সমান এবং একদিন হইবে এক সপ্তাহের সমান, আর অবশিষ্ট দিনগুলো হইবে তোমাদের বর্তমান দিনের মতো। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আপনার কি ধারণা, যে দিনটি একবছরের সমান হইবে, তাতে একদিনের নামাজ আদায় করলেই আমাদের জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বললেনঃ না, বরং তোমরা সেদিনের সঠিক অনুমান করে নেবে [এবং সে অনুযায়ী নামাজ আদায় করিবে]। আমরা আবার প্রশ্ন করলাম, দুনিয়াতে তার চলার গতি কত দ্রুত হইবে? তিনি বললেনঃ তার চলার গতি হইবে বায়ূচালিত মেঘের অনুরূপ; তারপর সে কোন জাতির নিকট গিয়ে তাহাদেরকে নিজের দলের দিকে আহবান জানাবে, কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করিবে এবং তার দাবি প্রত্যাখ্যান করিবে। সে তখন তাহাদের নিকট হইতে ফিরে আসবে এবং তাহাদের ধন-সম্পদও তার পিছনে পিছনে চলে আসবে। তারা পরদিন সকালে নিজেদেরকে নিঃস্ব অবস্থায় পাবে। তারপর সে অন্য জাতির নিকট গিয়ে আহবান করিবে। তারা তার আহবানে সাড়া দিবে এবং তাকে সত্য বলে মেনে নিবে। সে তখন আকাশকে বৃষ্টি বর্ষনের জন্য আদেশ করিবে এবং সে অনুযায়ী আকাশ বৃষ্টি বর্ষন করিবে। তারপর সে যামীনকে ফসল উৎপাদনের জন্য নির্দেশ দিবে এবং সে মুতাবিক যামীন ফসল উৎপাদন করিবে। তারপর বিকেলে তাহাদের পশুপালগুলো পূর্বের চেয়ে উঁচু কুঁজবিশিষ্ট মাংসবহুল নিতস্ববিশিষ্ট ও দুগ্ধপুষ্ট স্তনবিশিষ্ট হইবে। তারপর সে নির্জন পতিত ভূমিতে গিয়ে বলবে, তোর ভিতরের খনিজভান্ডার বের করে দে। তারপর সে সেখান হইতে ফিরে আসবে এবং সেখানকার ধনভান্ডার তার অনুসরণ করিবে যেভাবে মৌমাছিরা রানী মৌমাছির অনুসরণ করে। তারপর সে পূর্ণযৌবন এক তরুণ যুবককে তার দিকে আহবান করিবে। সে তলোয়ারের আঘাতে তাকে দুই টুকরা করে ফেলবে। তারপর সে তাকে ডাক দিবে, অমনি সে হাস্যোজ্জল চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় এদিকে দামিস্কের পূর্ব প্রান্তের এক মসজিদের সাদা মিনারে হলুদ রংয়ের দুটি কাপড় পরিহিত অবস্থায় দুজন ফেরেশতার ডানায় ভর করে ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] অবতরণ করবেন। তিনি তাহাঁর মাথা নীচু করলে ফোঁটায় ফোঁটায় এবং উঁচু করলেও মনিমুক্তার ন্যায় [ঘাম] পড়তে থাকিবে। তাহাঁর নিঃশ্বাস যে ব্যক্তিকেই স্পর্শ করিবে সে মারা যাবে; আর তাহাঁর শ্বাসবায়ূ দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত পৌছবে। তারপর তিনি দাজ্জালকে খোঁজ করবেন এবং তাকে লুদ্দ-এর নগরদ্বারপ্রান্তে পেয়ে হত্যা করবেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর নিকট ওয়াহী প্র্র্রেরণ করিবেনঃ “আমার বান্দাহদেরকে তূর পাহাড়ে সরিয়ে নাও। কেননা, আমি এমন একদল বান্দাহ অবতীর্ণ করছি যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই” তিনি বলেন, তারপর আল্লাহ্ ইয়াজূজ-মাজূজের দল পাঠাবেন। আল্লাহ্ তাআলার বাণী অনুযায়ী তাহাদের অবস্থা হলো, “তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি হইতে ছুটে আসবে” [সূরাদি. আম্বিয়া-৯৬]। তিনি বলেন, তাহাদের প্রথম দলটি [সিরিয়ার] তাবারিয়া উপসাগর অতিক্রমকালে এর সমস্ত পানি পান করে শেষ করে ফেলবে। এদের শেষ দলটি এ স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে বলবে, নিশ্চয়ই এই জলাশয়ে কোন সময় পানি ছিল। তারপর বাইতুল মাকদিসের পাহাড়ে পৌঁছার পর তাহাদের অভিযান সমাপ্ত হইবে। তারা পরস্পর বলবে, আমরা তো দুনিয়ায় বসবাসকারীদের ধ্বংস করেছি, এবার চল আকাশে বসবাসকারীদের ধ্বংস করি। তারা এই বলে আকাশের দিকে তাহাদের তীর নিক্ষেপ করিবে। আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের তীরসমূহ রক্তে রঞ্জিত করে ফিরত দিবেন। তারপর ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] তাহাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তারা [খাদ্যভাবে] এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত হইবেন যে, তখন তাহাদের জন্য একটা গরুর মাথা তোমাদের এ যুগের একশত দীনারের চাইতে বেশি উত্তম মনে হইবে। তিনি বলেন, তারপর ঈসা [আঃ] ও তাহাঁর সাথীরা আল্লাহ্ তাআলার দিকে রুজু হয়ে দুআ করবেন। আল্লাহ্ তাআলা তখন তাহাদের [ইয়াজূজ-মাজূজ বাহিনীর] ঘাড়ে মহামারীরূপে নাগাফ নামক কীটের উৎপত্তি করবেন। তারপর তারা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে যেন একটি প্রাণের মৃত্যু হয়েছে। তখন ঈসা [আঃ] তার সাথীদের নিয়ে [পাহাড় হইতে] নেমে আসবেন। সেখানে তিনি এমন এক বিঘত পরিমাণ জায়গাও পাবেন না, যেখানে সেগুলোর পঁচা দুর্গন্ধময় রক্ত-মাংস ছড়িয়ে না থাকিবে। তারপর তিনি সাথীদের নিয়ে আল্লাহ্ তাআলার নিকট দুআ করবেন। আল্লাহ্ তাআলা তখন উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি প্রেরণ করবেন। সেই পাখি ওদের লাশগুলো তুলে নিয়ে গভীর গর্তে নিক্ষেপ করিবে। এদের পরিত্যক্ত তীর, ধনুক ও তূণীরগুলো মুসলমানগণ সাত বছর পর্যন্ত জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করিবে। তারপর আল্লাহ্ তাআলা এমন বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যা সমস্ত ঘর-বাড়ী, স্থলভাগ ও কঠিন মাটির স্তরে গিয়ে পৌছবে এবং সমস্ত পৃথিবী ধুয়েমুছে আয়নার মতো ধকধকে হয়ে উঠবে। তারপর যামীনকে বলা হইবে, তোর ফল ও ফসলসমূহ বের করে দে এবং বারকাত ও কল্যাণ ফিরিয়ে দে। তখন এরূপ পরিস্থিতি হইবে যে, একদল লোকের জন্য একটি ডালিম পর্যাপ্ত হইবে এবং একদল লোক এর খোসার ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারবে। দুধেও এরুপ বারকাত হইবে যে, বিরাট একটি দলের জন্য একটি উটনীর দুধ, একটি গোত্রের জন্য একটি গাভীর দুধ এবং একটি ছোট দলের জন্য একটি ছাগলের দুধই যথেষ্ট হইবে। এমতাবস্থায় কিছুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর হঠাৎ আল্লাহ্ তাআলা এমন এক বাতাস প্রেরণ করবেন যা সকল ঈমানদারের আত্মা ছিনিয়ে নেবে এবং অবশিষ্ট থাকিবে শুধুমাত্র দুশ্চরিত্রের লোক যারা গাধার মতো প্রকোশ্যে নারী সম্ভোগে লিপ্ত হইবে। তারপর তাহাদের উপর কিয়ামাত সংঘটিত হইবে।

সহিহ, সহীহাহ [৪৮১], তাখরীজ ফাযায়েলুশশাম [২৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবদুর রাহমান ইবনি উয়াযীদ ইবনি জাবিরের সুত্রেই জেনেছি। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬০. অনু্চ্ছেদঃদাজ্জালের পরিচয়

২২৪১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

দাজ্জালের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ জেনে রাখ, তোমাদের প্রভু অন্ধ নন। জেনে রাখ, দাজ্জালের ডান চোখ অন্ধ। তার ডান চোখটি মনে হইবে যে ফুলে উঠা একটি আঙ্গুর।

সহিহ, বুখারী [৩৪৯৩], মুসলিম [১/১০৭] প্রশ্নের উল্লেখ ব্যতীত। আবু ঈসা বলেন, সাদ হুযাইফা, আবু হুরাইরা, আসমা, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, আবু বাকরা, আইশা, আনাস, ইবনি আব্বাস ও ফালাতান ইবনি আসিম [রাদি.] হইতে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] এর রিওয়ায়াত হিসাবে গারীব। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬১. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করিতে পারবে না

২২৪২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দাজ্জাল মদীনায় উপস্থিত হয়ে দেখিতে পাবে যে, ফেরেশতাগণ তা পাহারা দিচ্ছেন। অতএব, আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছায় মহামারী ও দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করিতে পারবে না।

সহিহ, সহীহাহ্ [২৪৫৮], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা, ফাতিমা বিনতু কাইস, উসামা ইবনি যাইদ সামুরা, ইবনি জুনদাব ও মিহজান [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৪৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমান হলো ইয়ামানে, কুফর হলো প্রাচ্যে, বকরীওয়ালাদের মধ্যে আছে শান্তি এবং উচ্চঃস্বরে চিৎকারকারী ঘোড়াওয়ালা ও উটওয়ালাদের মধ্যে আছে গর্ব-অহংকার ও প্রদর্শনেচ্ছা। দাজ্জাল মাসীহ আত্মপ্রকাশ করে যখন উহুদের পিছনে উপস্থিত হইবে, ফেরেশতারা তখন তার মুখমন্ডল [চলার গতি] কে সিরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিবেন। আর সে ঐস্থানেই ধ্বংস হইবে।

সহিহ, সহীহাহ [১৭৭০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬২. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালকে ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] হত্যা করবেন

২২৪৪. bআমর ইবনি আওফ বংশের আবদুর রাহমান ইবনি ইয়াযীদ আল-আনসারী [রঃ হইতে বর্ণীতঃ

আমি আমার চাচা মুজাম্মি ইবনি জারিয়া আল-আনসারী [রাদি.] কে বলিতে শুনেছিঃ ঈসা [আঃ] লুদ্দ এর দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

সহিহ, কিচ্ছাতুল মাসীহি দ্দাজ্জালি ওয়া কাত্লুহু। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে ইমরান ইবনি হুসাইন, নাফী ইবনি উতবা, আবু বারযা, হুযাইফা ইবনি উসাইদ, আবু হুরাইরা, কাইসান, উসমান ইবনি আবীল আস, জাবির, আবু উমামা, ইবনি মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, সামুরা ইবনি জুনদাব, নাওয়াস ইবনি সামআন, আমর ইবনি আওফ হুযাইফা ইবনিল ইয়ামান [রাদি.] হইতে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৪৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমন কোন নাবী প্রেরিত হননি, যিনি তাহাঁর সম্প্রদায়কে কানা মিথ্যাবাদীর [দাজ্জালের] ব্যাপার সর্তক করেননি। জেনে রাখ, সে অবশ্যই কানা হইবে। আর তোমাদের প্রভু তো অন্ধ নন। ঐ মিথ্যাবাদীর দু চোখের মধ্যবর্তী স্থানে কাফ, ফা, রা  শব্দটি লিখিত থাকিবে।

সহিহ, তাখরীজু শারহিল আক্বীদাতিত্ তাহাবীয়া [৭৬২], “কিচ্ছাতুল মাসীহিদ্দাজ্জাল” বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ ইবনি সাইয়্যাদ প্রসঙ্গে

২২৪৬.আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন ইবনি সাইদি হাজ্জ কিংবা উমরাহ উপলক্ষ্যে আমার সঙ্গী হলো। সবাই চলে গেল কিন্তু আমি ও সে পিছনে পড়ে গেলাম। আমি তার সাথে একা হয়ে গেলে তার ব্যাপারে জনগন যা বলাবলি করত তা মনে উদয় হলে আমি ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। আমি এক জায়গায় বিশ্রামের জন্য অবতরণ করে তাকে বললাম, তোমার ঐ গাছের নিকট তোমার মালামাল রেখে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর সে একপাল বকরী দেখে একটি পেয়ালা নেয় সেদিকে গেল এবং কিছু দুধ দোহন করে আমার নিকট নিয়ে এল। সে আমাকে বলিল, হে আবু সাঈদ! দুধ পান করুন। তার ব্যাপারে লোকজন বিভিন্ন কথা বলাবলি করার দুরুন আমি তার হাতের কিছু পান করা অপছন্দ করলাম। অতএব, আমি তাকে বললাম, আজকের দিনটি প্রচন্ড গরমের, আমি এরকম দিনে দুধপান করিতে পছন্দ করি না। তখন সে আমাকে বলিল, হে আবু সাঈদ! আমাকে ও আমার ব্যাপারে মানুষেরা যে নানা কথা বলে সেজন্য আমার ইচ্ছা হয় একটি গাছে দড়ি বেঁধে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করি। আপনি কি মনে করেন, আমার বিষয় কারো নিকট অজানা থাকলেও আপনাদেরও নিকট তো তা মোটেই অস্পষ্ট নয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-র হাদীস সম্বন্ধে তো আপনারা অধিক অবহিত। হে আনসার সম্প্রদায়! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেননি যে, সে [দাজ্জাল] হইবে কাফির? অথচ আমি মুসলমান। সে হইবে নিঃসন্তান? অথচ আমি আমার সন্তান মদীনায় রেখে এসেছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেননি যে, মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করাটা তার জন্য বৈধ [সম্ভব] নয়? আমি কি মদীনাবাসী নই? আমি সেখান হইতেই তো আপনার সাথে মক্কায় এসেছি। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! সে একটার পর একটা অনবরতভাবে যুক্তি দেখাতে লাগল। অবশেষে আমি মনে মনে বললাম, তার উপর হয়তো মিথ্যারোপ করা হয়েছে। সে আবার বলিল, হে আবু সাঈদ, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে সঠিক সংবাদ দিব। আল্লাহর শপথ! আমি নিঃসন্দেহে তাকে [দাজ্জালকে] চিনি, তার বাবাকেও চিনি এবং সে এথন কোন এলাকায় আছে তাও জানি। তখন আমি বললাম, তোর পুরো দিনটাই বিফলে যাক।

সহিহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৪৭. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন মদীনার একটি গলিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইবনি সাইদের সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি তাকে আটক করিলেন। সে ছিল একজন ইয়াহূদী বালক। তার চুল ছিল বেণীবদ্ধ। আবু বকর ও উমার [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-র সাথে ছিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলিল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমিও আল্লাহর রাসূল? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি ঈমান এনেছি আল্লাহ্ তাআলার উপর, তাহাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাহাঁর গ্রন্থসমূহে ও তাহাঁর রাসূলদের উপর এবং পরকালের উপর। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে প্রশ্ন করেনঃ তুমি কী দেখিতে পাও? সে বলিল, আমি পানির উপর একটি সিংহাসন দেখিতে পাই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি সমুদ্রে শাইতানের আসন দেখিতে পাও। তিনি আরো প্রশ্ন করেনঃ তুমি আর কি দেখ? সে বলিল, আমি একজন সত্যবাদী ও দুজন মিথ্যাবাদী অথবা দুজন সত্যবাদী ও একজন মিথ্যাবাদী দেখিতে পাই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একথা শুনে বলিলেন, বিষয়টা তার কাছে তালগোলে পাকিয়ে গেছে। তোমরা দুজনেই একে ত্যাগ কর।

সহিহ, সহীহাহ, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, উমার, হুসাইন ইবনি আলী, ইবনি উমার, আবু যার, ইবনি মাসউদ, জাবির ও হাফসা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৪৮.আবদুর রহমান ইবনি আবু বাকর [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দাজ্জালের পিতা-মাতার ত্রিশ বছর পর্যন্ত কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করিবেনা। তারপর একটি কানা ছেলে জন্ম নেবে। সে হইবে খুবই ক্ষতিকর এবং অত্যন্ত অনুপকারী। তার দুই চোখ ঘুমালেও তার অন্তর ঘুমাবে না। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকটে তার পিতা-মাতার বিবরণ দিলেন। তিনি বললেনঃতার পিতার দৈহিক আকৃতি হইবে লম্বাটে, হালকা-পাতলা গড়নের এবং তার নাকটা হইবে পাখীর ঠোঁটের মত লম্বা। আর তার মা হইবে স্থুলকায়, মোটা ও লম্বা হস্তবিশিষ্টা। আবু বকরা [রাদি.] বলেন, তারপর একসময় আমরা শুনতে পেলাম যে, মাদীনার ইয়াহূদী পরিবারে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তখন আমি ও যুবাইর ইবনিল আওয়াম [রাদি.] সেখানে গেলাম। আমরা তার পিতা-মাতার নিকট উপস্থিত হলাম এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বর্ণিত বিবরণ তাহাদের মাঝে দেখিতে পেলাম। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনাদের কোন সন্তান আছে কি? তারা বলিল, আমাদের ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। অবশেষে আমাদের একটি কানা পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, কিন্তু সে অধিক ক্ষতিকর এবং কম উপকারী। তার দুচোখ ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। রাবী বলেন, আমরা তাহাদের নিকট হইতে বের হয়ে এসে দেখলাম সে রোদে চাদর মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে এবং বিড়বিড় করছে। সে তার চাদর হইতে মাথা বের করে প্রশ্ন করিল, তোমরা কি বলেছ? আমরা বললাম, তুমি কি আমাদের কথা শুনতে পেরেছ? সে বলিল, হ্যাঁ। কেননা আমার দুচোখ ঘুমিয়ে থাকলে ও অন্তর ঘুমায় না।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫৫০৩] আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটি হাসান গারীব। শুধুমাত্র হাম্মাদ ইবনি সালমান সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২২৪৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদল সাহাবী নিয়ে ইবনি সাইয়্যাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] ও ছিলেন। সে তখন মাগালা গোত্রের দুর্গের পাশে বালকদের সাথে খেলা করছিল। সেও তখন কিশোর ছিল। সে সাড়া পাওয়ার আগেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] গিয়ে তার পিঠে হাত চাপড় দিয়ে প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল? ইবনি সাইয়্যাদ তাহাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিরক্ষরদে রাসূল! বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিল, আপনি কি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমিও আল্লাহর রাসূল? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি তো আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে আবার প্রশ্ন করলেনঃ তোমার নিকট কী আসে? ইবনি সাইয়্যাদ বলিল, আমার নিকট সত্যবাদীও আসে মিথ্যাবাদীও আসে। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার বিষয়টা তালগোল পাকিয়ে গেছে। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি একটি বিষয় তোমার জন্য ঠিক করে রেখেছি। বলতো তা কি? এই বলে তিনি মনে মনে পাঠ করলেনঃ “আকাশ সেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে” [সূরাদি. আদ-দুখান-১০]। উত্তরে ইবনি সাইয়্যাদ বলিল, সেটা তো “আদ-দুখ” [ধোঁয়া]। একথা শুনে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ দুর হও! তুই কখনো তোর ভাগ্যকে অতিক্রম করিতে পারবি না। উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আমাকে সম্মতি দিন, একে মেরে ফেলি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সে যদি সত্যিই [দাজ্জাল] হয়ে থাকে তাহলে তার উপর তুমি জয়লাভ করিতে পারবে না। আর সে তা না হয়ে থাকলে তবে তাকে মেরে ফেলায় তোমার কোন কল্যাণ নেই। আবদুর রাযযাক বলেন, শব্দটিতে দাজ্জাল বুঝান হয়েছে।

সহিহ আদাবুল মুফরাদ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ [শত বছর পর কেউ আর থাকিবে না]

২২৫০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুনিয়াতে এখন যে সকল ব্যাক্তি জীবিত আছে, শতবছর পর এদের কেউ অবশিষ্ট থাকিবে না।

সহিহ, রাওযুন নাযীর [১১০০], সহিহ, আদাবুল মুফরাদ [৭৫৫], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার, আবু সাঈদ ও বুরাইদা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৫১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে আমাদের নিয়ে এশার নামাজ আদায় করেন। তিনি সালাম ফিরিয়ে খুতবাহ দিতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি আজকের এই রাতের প্রতি লক্ষ্য করছ? এখন যে সকল ব্যক্তি বেঁচে আছে শতবছর পর তারা আর দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকিবে না। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-র বক্তব্য “শতবছরের” বিষয়ে লোকেরা আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হয়ে ভুল করে বসে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-র বাণীঃ “শতবছর পর কেউ দুনিয়াতে বেঁচে থাকিবে না” –এর তাৎপর্য হলোঃ বর্তমানের এই শতাব্দীটি তখন সমাপ্ত হয়ে যাবে।

সহিহ, [রাওয], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৫. অনুচ্ছেদঃ বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ

২২৫২. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাতাসকে তোমরা গালি দিও না। অপছন্দনীয় কোন কিছু দেখিতে পেলে তোমরা এই দুআ পড়বে,

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ

“হে আল্লাহ্! আমরা আপনার নিকট আকাঙ্ক্ষা করি এ বাতাসের কল্যাণ, এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং সে যে বিষয়ে আদেশ প্রাপ্ত হয়েছে তার কল্যাণ। আমরা এ বাতাসের অকল্যাণ হইতে তোমর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, এর মধ্যে নিহিত ক্ষতি হইতে এবং সে যে বিষয়ে আদেশ প্রাপ্ত হয়েছে তার অকল্যাণ হইতে”।

সহিহ, মিশকাত [১৫১৮], সহীহাহ্ [২৭৫৬], রাওযুন নাযীর [১১০৭], কালিমুত তাইয়্যিব [১৫৪]। আবু ঈসা বলেন, আইশা, আবু হুরাইরা, উসমান ইবনি আবীল আস, আনাস, ইবনি আব্বাস ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৬. অনুচ্ছেদঃ জাস্সাসা ও দাজ্জাল সংক্রান্ত একটি ঘটনা

২২৫৩. ফাতিমা বিনতু কাইস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক সময় মিম্বারে উঠে হাসতে হাসতে বললেনঃ আমাকে তামীম আদ-দারী একটি খবর শুনিয়েছে। আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়েছি এবং আমি তোমাদেরকেও তা শুনাতে পছন্দ করি। কোন একদিন ফিলিষ্তীনের কয়েকজন লোক নৌযানে চড়ে সমুদ্র বিহারে যাত্রা করেছিল। হঠাৎ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে তারা দিকক্রান্ত হয়ে পড়ে। এবং এক অচেনা দ্বীপে এসে পড়ে। তারা সে জায়গাতে এক বিচিত্র ধরনের প্রানীর সন্ধান পায়, যার চুলগুলো ছিল চারদিকে ছাড়ানো। তার প্রশ্ন করিল, তুমি কে? সে উত্তর দিল, জাস্সাসা [অনুসন্ধানকারী]। তারা বলিল, তুমি আমাদেরকে কিছু অনুসন্ধান দাও। সে বলিল, আমি তোমাদেরকে কিছু বলবও না এবং তোমাদের নিকট কিছু জানতেও চাইব না, বরং তোমরা এ জনপদের শেষ সীমানায় যাও। সে স্থানে এমন একজন লোক আছে যে তোমাদেরকে কিছু বলবে এবং তোমাদের নিকট কিছু জানার ইচ্ছা করিবে। তারপর আমরা গ্রামের শেষ সীমানায় পৌছে দেখিতে পেলাম, একটি লোক শিকলে বাঁধা আছে। সে আমাদের বলিল তোমরা [সিরিয়ার] যুগার নামক স্থানের ঝর্ণার খবর বল। আমরা বললাম, তা পানিপূর্ণ এবং এখনো সবেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সে বলিল, বুহাইরা [তাবারিয়া উপসাগর] এর কি সংবাদ, তা আমাকে বল। আমরা বললাম, তাও পানিপূর্ণ এবং তা হইতে সবেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সে আবার বলিল, জর্দান ও ফিলিস্তীনের মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থিত বাইসান নামক খেজুর বাগানের খবর বল। তাতে কি ফল উৎপন্ন হয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে আবার প্রশ্ন করিল, নাবী প্রসঙ্গে বল, তিনি কি প্রেরিত হয়েছেন? আমরা বললাম হ্যাঁ। সে বলিল, তাহাঁর নিকট জনগণ ভিড়ছে কেমন? আমরা বললাম, খুবই দ্রুত। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে সে এমন এক লাফ দিল যে, শৃঙ্খলা প্রায় ছিন্ন করে ফেলেছিল। আমরা তাকে প্রশ্ন করলাম তুমি কে? সে বলিল, আমি দাজ্জাল। সে তাইবা ব্যতীত সমস্ত শহরেই প্রবেশ করিবে। তাইবা মদীনা মুনাওয়ারা।

সহিহ, “কিচ্ছাতু নুযূলে ঈসা আলাইহিস সালাম” মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং কাতাদা-শাবীর সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াত হিসাবে গারীব। এ হাদীসটি ফাতিমা বিনতু কাইস [রাদি.] হইতে শাবীর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭. অনুচ্ছেদঃ [সামর্থের বাহিরে কোন কাজে লিপ্ত হওয়া অনুচিত]

২২৫৪. হুযাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুমিন ব্যক্তির জন্য নিজেকে অপমানিত করাটা শোভনীয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, সে নিজেকে কিভাবে অপমানিত করে? তিনি বললেনঃ এমন কঠিন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া যার সামর্থ্য তার নেই।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৪০১৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৮. অনুচ্ছেদঃ অত্যাচারী ও নির্যাতিতকে সাহায্য প্রদান

২২৫৫.আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে নির্যাতনকারী হোক কিংবা নির্যাতিতই হোক না কেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! নির্যাতিতকে তো সাহায্য করবই কিন্তু নির্যাতনকারীকে কেমন করে সাহায্য করিতে পারি? তিনি বললেনঃ তাকে অত্যাচার করা হইতে বিরত রাখাই তার জন্য তোমার সাহায্য।

সহিহ, ইরওয়া [২৪৪৯], রাওযুন নাযীর [৩২], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৯. অনুচ্ছেদঃ [তিন প্রকার কাজের জন্য তিন ধরনের ফল]

২২৫৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গ্রামে বসবাসকারী ব্যক্তি হয় কঠোর প্রকৃতির। শিকারের পিছনে লেগে থাকা ব্যক্তি হয় অসচেতন। আর রাজ-দরবারে গমনকারী ব্যক্তি বিপদে জড়িয়ে যায়।

সহিহ, মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৭০১], সহিহ আবু দাঊদ [২৫৪৭]। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর রিওয়ায়াত হিসাব গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র সুফিয়ান সাওরীর সূত্রেই জেনেছি।ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭০. অনুচ্ছেদঃ রাসুল [সাঃআঃ] এর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী জাহান্নামী

২২৫৭. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন আমি রাসুলূল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা অবশ্যই সাহায্য প্রাপ্ত হইবে, বিপদগ্রস্তও হইবে এবং তোমাদের মাধ্যমে অনেক জায়গা বিজিতও হইবে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সেই যুগ পায় তাহলে সে যেন আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করে এবং সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে বাঁধা প্রদান করে। আর যে লোক ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামেই তার থাকার জায়গা তৈরী করে নেয়।

সহিহ সহীহাহ্ [১৩৮৩], দেখুন হাদীস নং [২৮০৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭১. অনুচ্ছেদঃ ফিতনার বন্ধ দরজা ভেঙ্গে যাবে

২২৫৮. হুযাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময় উমার [রাদি.] প্রশ্ন করিলেন, ফিতনা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে সকল কথা বলে গেছেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সেগুলোকে বেশি মনে রাখতে সক্ষম হয়েছে? হুযাইফা [রাদি.] বলিলেন, আমি। তারপর হুযাইফা [রাদি.] বলিলেন, কোন লোকের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি ও প্রতিবাশীর ক্ষেত্রে যে বিপদ অর্থাৎ ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় এগুলোর জন্য নামাজ, রোযা, দান-খাইরাত, সৎকাজের প্রতি আদেশ ও মন্দ কাজে বাঁধা দেয়া হচ্ছে কাফফারা স্বরূপ।

উমার [রাদি.] তখন বলেন, আমি এ সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করিনি, বরং সেই ফিতনা প্রসঙ্গে যা সমুদ্রের তরঙ্গের ন্যায় মাথা তুলে আসবে। তিনি বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সেই ফিতনা ও আপনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা আছে। উমার [রাদি.] প্রশ্ন করিলেন, সেই দরজা কি ভাঙ্গা হইবে, না খুলে দেয়া হইবে? তিনি বলেন বরং তা ভাঙ্গা হইবে। তিনি বলিলেন, তাহলে তো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তা আর বন্ধ হইবে না। আবু ওয়াইল [রঃ] বলেন, হাম্মাদ বর্ণিত হাদীসে আছেঃ আমি মাসরুককে বললাম, আপনি সেই দরজা প্রসঙ্গে হুযাইফা [রাদি.] কে প্রশ্ন করুন। তিনি এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করিলেন। তিনি [হুযাইফা] উত্তরে বলেন, উমার [রাদি.] হলেন সেই দরজা।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৫৫৫]  বুখারী, মুসলিম। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭২. অনুচ্ছেদঃ শাসকের অন্যায়ের সমর্থন করা ও না করার পরিণাম

২২৫৯. কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হয়ে আমাদের সামনে আসলেন। আমরা সংখ্যায় ছিলাম নয় জন; পাঁচজন আরব এবং চারজন অনারব অথবা এর বিপরীত। তিনি বললেনঃ তোমরা শোন, তোমরা কি শুনেছ? খুব শীঘ্রই আমার পরে এমন কিছু সংখ্যক শাসক আবির্ভূত হইবে, যে লোক তাহাদের সংস্পর্শে গিয়ে তাহাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করিবে এবং তাহাদেরকে অত্যাচারে সহায়তা দান করিবে সে আমার দলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমিও তার দলে অন্তর্ভুক্ত নই। আর সে ব্যক্তি হাওযে কাওসারে আমার সামনে পৌঁছতে পারবে না। আর যে লোক তাহাদের সংস্পর্শে যাবে না, তাহাদের অত্যাচারে সহায়তা দান করিবেনা না তাহাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করিবে না, সে আমার এবং আমিও তার। সে হাওযে কাওসারে আমার সাক্ষাত লাভ করিবে।

সহিহ, ৬১৪ নং হাদীস আরও অধিক বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহিহ গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই মিসআরের বর্ণিত হাদীস হিসাবে জেনেছি। হারুন বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুল ওয়াহহাব [রঃ] পূর্বোক্ত হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন সুফিয়ান হইতে, তিনি আবু হুসাইন হইতে, তিনি শাবী হইতে, তিনি আসিম আল-আদাবী হইতে, তিনি কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে, তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে। হারুন আরো বলেন, মিসআর বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীসটি সুফিয়ান-যুবাইদ হইতে, তিনি ইবরাহীম [ইনি ইবরাহীম নাখঈ নন] হইতে, তিনি কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে, তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্রে মুহাম্মাদ [রঃ] বর্ণনা করেন। হুযাইফা ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৩. অনুচ্ছেদঃ ধর্মে অটল থাকা হাতে অগ্নি রাখার মতো কঠিন বিষয় হইবে

২২৬০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন একটি যুগের আগমন ঘটবে যখন তার পক্ষে ধর্মের উপর ধৈর্য ধারন করে থাকাটা জ্বলন্ত অঙ্গার মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা ব্যক্তির মতো কঠিন হইবে।

সহিহ, সহীহাহ্ [৯৫৭]। আবু ঈসা বলেন, এ সূত্রে হাদীসটি গারীব। উমার ইবনি শাকির বসরার অধিবাসী মুহাদ্দিস। তার সূত্রে একাধিক হাদীস বিশারদ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৪. অনুচ্ছেদঃ পুরুষের উপর নারীর কর্তিত্ব

২২৬১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন আমার উম্মাত দাম্ভিকতার সাথে চলবে এবং পারস্য ও রোমের রাজবংশের লোকেরা তাহাদের দাসানুদাস হইবে তখন এই উম্মাতের উত্তম ব্যক্তিদের উপর দুষ্ট ব্যক্তিদের কর্তিত্ব চাপিয়ে দেয়া হইবে।

সহিহ, সহীহাহ্ [৯৫৪]। আবু ঈসা বলেন, এ সূত্রে হাদীসটি গারীব। এটি ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-আনসারী এর সূত্রে আবু মুআবিয়া [রঃ] বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল আল-ওয়াসিতী-আবু মুআবিয়া হইতে, তিনি ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-আনসারী হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে, তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আবু মুআবিয়া-ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.] এর সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতটির মূল প্রসঙ্গে কিছু জানা যায়নি। মূসা ইবনি উবাইদার বর্ণনাটি প্রসিদ্ধ। অধিকন্তু এ হাদীসটি ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে মালিক ইবনি আনাস [রঃ] মুরসালভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি দীনার-ইবনি উমার [রাদি.] হইতে এই সূত্রটি তাতে উল্লেখ করেননি। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৫. অনুচ্ছেদঃ যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে

২২৬২. আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট হইতে শুনা একটি উক্তি দ্বারা আল্লাহ্ তাআলা আমাকে [উষ্ট্রের যুদ্ধে অংশগ্রহন হইতে] রক্ষা করিয়াছেন। পারস্য সম্রাট কিস্‌রা নিহত হওয়ার পর তিনি প্রশ্ন করেনঃ তারা কাকে শাসক হিসেবে নিয়োগ করেছে? সাহাবীগণ বলেন, তার কন্যাকে। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে সে জাতির কখনো কল্যাণ হইতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আইশা [রাদি.] বসরায় আসার পর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ঐ বানী আমার মনে পরে গেল। অতএব এর মাধ্যমেই আল্লাহ্ তাআলা আমাকে [আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ হইতে] রক্ষা করেন।

সহিহ, ইরওয়া [২৪৫], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৬. অনুচ্ছেদঃ উত্তম লোক ও নিকৃষ্ট লোক

২২৬৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসে থাকা কয়েকজন লোকের পাঁশে এসে দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম কে এবং সবচাইতে নিকৃষ্ট কে তা কি আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না? বর্ণনাকারী বলেন, সকলেই চুপ করে রইল। তারপর তিনি ঐ কথা তিনবার জিজ্ঞেস করেন। তারপর এক ব্যক্তি বলিল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! আমাদেরকে জানিয়ে দিন যে, আমাদের মধ্যে কে সর্বাধিক উত্তম এবং কে সর্বাধিক নিকৃষ্ট। তিনি বললেনঃ সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম যার নিকট কল্যাণ কামনা করা যায় এবং যার ক্ষতি হইতে মুক্ত থাকা যায়। আর সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট যার নিকট কল্যাণের আশা করা যায় না এবং যার ক্ষতি হইতেও নিরাপদ থাকা যায় না।

সহিহ, মিশকাত [৪৯৯৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৭. অনুচ্ছেদঃ উত্তম শাসক ও নিকৃষ্ট শাসক

২২৬৪. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে উত্তম শাসক [নেতা] ও নিকৃষ্ট শাসকদের ব্যাপারে জানিয়ে দিব না? উত্তম শাসক হচ্ছে তারাই যাকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে, আর তোমরা তাহাদের জন্য দুআ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দুআ করে। নিকৃষ্ট শাসক হচ্ছে তারাই যাকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে আর তোমরা তাহাদেরকে অভিশাপ প্রদান কর এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ প্রদান করে।

সহিহ, সহীহাহ্ [৯০৭], মুসলিম প্রশ্নের উল্লেখ ব্যতীত। আবু ঈসা বলেন, এ সূত্রে হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র মুহাম্মাদ ইবনি হুমাইদের বর্ণনায় জেনেছি। আর মুহাম্মাদ তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে সমালোচিত। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৮. অনুচ্ছেদঃ শাসকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করিতে হইবে

২২৬৫. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তি শাসক হইবে যাদের কতগুলো কাজ তোমরা পছন্দ করিবে এবং কতগুলো কাজ অপছন্দ করিবে। যে লোক [তাহাদের] অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে, আর যে লোক তাকে ঘৃণা করিবে সেও দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যে লোক তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকিবে এবং তার অনুসরণ করিবে সে অন্যায়ের অংশীদার বলে গণ্য হইবে। প্রশ্ন করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! আমারা কি তাহাদের বিরুদ্ধে অস্র ধারণ করব না? তিনি বলিলেন, না, তারা যে পর্যন্ত নামাজ আদায় করে।

সহিহ, মুসলিম [৬/২৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২৬৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক তোমাদের শাসক হইবে তোমাদের সম্পদশালীরা দানশীল হইবে এবং তোমাদের কর্ম পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হইবে, তখন ভূতলের তুলনায় ভূ-পৃষ্ঠই তোমাদের জন্য উত্তম হইবে। আর যখন তোমাদের মধ্যকার খারাপ লোক তোমাদের শাসক হইবে, তোমাদের সম্পদশালীরা কৃপণ হইবে এবং তোমাদের কার্যাবলী তোমাদের নারীদের ওপর ন্যস্ত করা হইবে তখন ভূতলই ভূপৃষ্ঠের তুলনায় তোমাদের জন্য উত্তম হইবে [অর্থাৎ জীবনের চেয়ে মৃত্যুই উত্তম]।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র সালিহ আল-মুররীর সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। সালিহ-এর রিওয়ায়াত অত্যন্ত গারীব [অখ্যাত] যার কোন সমর্থক পাওয়া যায় না। তিনি সজ্জন হলেও হাদীসের ব্যাপারে তাকে অনুসরণ করা যায় না। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

২২৬৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা এমন এক যুগে অবস্থান করছ যে, যদি তোমাদের কোন ব্যাক্তি নির্দেশিত বিষয়ের [কর্তব্যকর্মের] এক-দশমাংশ পরিমাণও ত্যাগ করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর এমন এক যুগের আগমন ঘটবে যে, কোন ব্যাক্তি যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশ পরিমাণও পালন করে তাহলে সে মুক্তি লাভ করিবে।

সহিহ, সহিহাহ্‌ [২৫১০]। আবু ইসা বলেন, এ হাদীসটি গরীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র নুআইম ইবনি হাম্মাদের সূত্রে সুফিয়ান ইবনি উআইনা হইতে জেনেছি। আবু যার ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৯. অনুচ্ছেদঃ [যে স্থান হইতে ফিতনার উৎপত্তি]

২২৬৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে প্রাচ্যের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এই দিকেই ফিতনার স্থান, যে প্রান্ত হইতে শাইতানের শিং উদিত হয়।

সহিহ, তাখরীজ ফাজা-ইলুশশাম [হাদীস নং ৮], বুখারী, মুসলিম। আবু ইসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮০. অনুচ্ছেদঃ কর্তব্যকর্মের এক-দশমাংশ ত্যাগ করলেই ধ্বংস

২২৬৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খুরাসানের দিক হইতে কালো পতাকাবাহীগণ আবির্ভূত হইবে [মাহ্দীর সর্মথনে]। অবশেষে সেগুলো ইলিয়া [বায়তুল মাকদিস]-এ স্থাপিত হইবে এবং কোন কিছুই তা ফিরাতে পারবে না।

সনদ দুর্বল, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। ইয়াজুজ মাজুজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

Comments

Leave a Reply