দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ এবং দুনিয়াতে তার অবস্থান, ঈসা [আ:]-এর অবতরণ

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ এবং দুনিয়াতে তার অবস্থান, ঈসা [আ:]-এর অবতরণ

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ এবং দুনিয়াতে তার অবস্থান, ঈসা [আ:]-এর অবতরণ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

২৩. অধ্যায়ঃ দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ এবং দুনিয়াতে তার অবস্থান, ঈসা [আ:]-এর অবতরণ এবং তাহাঁর দ্বারা দাজ্জালকে হত্যা, দুনিয়া থেকে ভাল লোক এবং ঈমানের বিদায় গ্রহণ এবং নিকৃষ্ট লোকেদের অবস্থান, তাদের দ্বারা মূর্তিপূজা, শিঙ্গার ফুঁৎকার এবং কবর থেকে [সকলের] উত্থান

৭২৭১. ইয়াকুব ইবনি আসিম ইবনি উরওয়াহ্ ইবনি মাসউদ আস্ সাকাফী [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাযি:]-কে আমি এ কথা বলিতে শুনেছি যে, একদা জনৈক লোক তার কাছে এসে বলিলেন, এ কেমন হাদীস আপনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, এতো এতো দিনের মধ্যে কিয়ামাত সংঘটিত হইবে। এ কথা শুনে তিনি বলিলেন, সুবহানাল্লাহ অথবা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ অথবা অবিকল কোন শব্দ। তারপর তিনি বলিলেন, আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম যে, অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করিবে যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে। এ ঘটনা কায়িম হইবেই হইবে। এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]বললেনঃআমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হইবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করিবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা[আ:]-কে প্রেরণ করবেন। তাহাঁর আকৃতি উরওয়াহ্ ইবনি মাসউদ-এর অবিকল হইবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করিবে যে, দুব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকিবে না। তখন আল্লাহ তায়ালা সিরিয়ার দিক হইতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকিবে, এ ধরণের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকিবে না। বরং এ ধরণের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তায়ালা কবয করে নিবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌঁছে তার জান কবয করে নিবে। আবদুল্লাহ [রাযি:] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, তখন খারাপ লোকগুলো পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকিবে। দ্রুতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রাণীর ন্যায় তাদের স্বভাব হইবে। তারা কল্যাণকে অকল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করিবে না। এ সময় শাইতান এক আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে, তোমরা কি আহবানে সাড়া দিবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন বিষয়ের আদেশ করিয়াছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তি পূজার নির্দেশ দিবে। এমতাবস্থায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা থাকিবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপন করিবে। তখনই শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হইবে। যে এ আওয়াজ শুনবে সে তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করিবে এবং অন্যদিকে উত্তোলন করিবে। এ আওয়াজ সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে, যে তার উটের জন্য হাওয সংস্করণের কাজে নিযুক্ত থাকিবে। আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। সাথে সাথে অন্যান্য লোকেরাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। অত:পর মহান আল্লাহ শুক্র ফোঁটার অথবা ছায়ার ন্যায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বর্ণনাকারী নুমান [রহ] সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হইবে। আবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হইবে। অকস্মাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকিবে। অত:পর আহবান করা হইবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আসো। অত:পর [ফেরেশতাদের বলা হইবে] তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হইবে। তারপর আবারো বলা হইবে, জাহান্নামী দল বের করো। জিজ্ঞেস করা হইবে, কত জন? উত্তরে বলা হইবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শ নিরানব্বই জন। অত:পর তিনি বলিলেন, এ-ই তো ঐদিন, যেদিন কিশোরকে পরিনত করিবে বৃদ্ধে এবং এ-ই চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৬৮]

৭২৭২. ইয়াকুব ইবনি আসিম ইবনি উরওয়াহ্ ইবনি মাসউদ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এক লোককে শুনেছি যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি আমর্ কে প্রশ্ন করিয়াছেন, আপনি কি বলেছেন, অমুক অমুক সময় কিয়ামাত সংঘটিত হইবে? এ কথা শুনে তিনি বলিলেন, আমি ইচ্ছা করেছি, তোমাদেরকে কোন কথাই আমি আর বলব না। আমি তো এ কথাই বলেছি যে, অল্প কিছু দিন পরেই তোমরা একটি ভয়ানক কাহিনী দেখিতে পাবে। যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দিবে। বর্ণনাকারী শুবাহ এ কথা বা অনুরূপ কথাই বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাযি:] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হইবে। অত:পর তিনি মুআয-এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এতে তিনি বলেছেন, যার হৃদয়ে অণুপরিমাণ ঈমান থাকিবে, এ ধরণের কোন লোকই তখন আর অবশিষ্ট থাকিবে না। বরং তার জান কবয করে নেয়া হইবে।

মুহাম্মাদ ইবনি জাফার [রহ:] বলেন, শুবাহ [রহ:] এ হাদীস আমার কাছে কয়েকবার বর্ণনা করিয়াছেন এবং আমিও তার নিকট সেটা উত্থাপন করেছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৬৯]

৭২৭৩. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আমি একটি হাদীস আয়ত্ত্ব করেছি, যা কক্ষণো আমি ভুলিনি। আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের প্রথম নিদর্শন হলো, পশ্চিম দিক হইতে সূর্যোদয় হওয়া এবং একটা উদ্ভট জন্তু মানুষের নিকট চাশতের সময় বের হওয়া। এ দুটির যে কোনটি প্রথমে প্রকাশ পাবে, পরক্ষণে অপরটিও দ্রুত প্রকাশ পাবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৭০]

৭২৭৪. আবু যুরআহ্‌ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাদীনায় মারওয়ান ইবনিল হাকাম-এর কাছে তিনজন মুসলিম বসে ছিলেন। তিনি কিয়ামাতের আলামতসমূহের বর্ণনা করছিলেন এবং তারা তা শুনছিলেন। আলোচনায় তিনি বলছিলেন যে, কিয়ামাতের আলামতসমূহের প্রথম আলামত হলো, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হওয়া। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাযি:] বলিলেন, মারওয়ানের কথা কিছুই হয়নি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এমন একটি হাদীস আমি সংরক্ষণ করেছি, যা কক্ষণো আমি ভুলে যাইনি। আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি। তারপর তিনি অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৭১]

৭২৭৫. আবু যুরআহ্‌ [রহ:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা মারওয়ান-এর কাছে লোকেরা কিয়ামাতের বিষয়ে আলোচনা করিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাযি:] বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পূর্বোক্ত হাদীস দুটোর অবিকল বর্ণনা করিতে শুনেছি। কিন্তু এতে তিনি পূর্বাহ্নের কথা উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১১৮, ইসলামিক সেন্টার- নেই]

Comments

Leave a Reply