নবী সাঃআঃ-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার আদেশ
নবী সাঃআঃ-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার আদেশ >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ২৪৩: নবী সাঃআঃ-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার আদেশ, তার মাহাত্ম্য ও শব্দাবলী
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [الاحزاب: ٥٦]
“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাহাঁর ফিরিশতাগণ নবীর নবীর প্রতি সালাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাহাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” [সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত]
১৪০৫. ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আম্র আ’স রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করিবে, আল্লাহ তার দরুন তার উপর দশটি রহমত (করুণা) অবতীর্ণ করিবেন।”
(মুসলিম) (মুসলিম ৩৮৪, তিরমিজী ৩৬১৪, নাসাঈ ৬৭৮, আবু দাঊদ ৫২৩, আহমাদ ৬৫৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪০৬. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে।”
(তিরমিজী ৪৮৪) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪০৭. আওস ইবনে আওস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন।” (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।)
(আবু দাঊদ ১০৪৭, ১৫৩১, নাসাঈ ১৩৭৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৬, আহমাদ ১৫৭২৯, দারেমী ১৫৭২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪০৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই অভিশাপ দিলেন যে, “সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।” (অর্থাৎ, ‘(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ বলল না।)
(তিরমিজী ৩৫৪৫, আহমাদ ৭৪০২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪০৯. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে করে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।”
(আবু দাঊদ ২০৪২, আহমাদ ৭৭৬২, ৮২৩৮, ৮৫৮৬, ৮৬৯৮, ৮৮০৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১০. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।”
(আবু দাঊদ ২০৪১, আহমাদ ১০৪৩৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১১. আলী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।”
(তিরমিজী ৩৫৪৬, আহমাদ ১৭৩৮) .হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪১২. ফাযালা ইবনে উবাইদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, “যখন কেউ দু‘আ করিবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দু‘আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।”
(আবু দাঊদ ১৪৮১, তিরমিজী ৩৪৭৬, ৩৪৭৭, নাসাঈ ১২৮৪, আহমাদ ২৩৪১৯) দীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১৩. আবু মুহাম্মাদ কা‘ব ইবনে উজরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) আমাদের নিকট এলেন। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ-
اَللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، إنَّكَ حَمِيدٌ مَجيدٌ . اَللهم بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، إنَّكَ حَمِيدٌ مَجْيدٌ
‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ তথা মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ কর; যেমন রহমত বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযেল কর; যেমন বরকত নাযেল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, মুসলিম ৪০৬, তিরমিজী ৪৮৩, নাসাঈ ১২৮৭-১২৮৯, আবু দাঊদ ৯৭৬, ইবনু মাজাহ ৯০৪, আহমাদ ১৭৬৩৮, ১৭৬৩১, ১৭৬৬৭, দারেমী ১৩৪২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১৪. আবু মাসঊদ বদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা সা’দ ইবনে উবাদা রাঃআঃ-এর মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এলেন। বাশীর ইবনে সা‘দ তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহ আমাদেরকে আপনার প্রতি দরূদ পড়তে আদেশ করিয়াছেন, কিন্তু কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিরুত্তর থাকলেন। পরিশেষে আমরা আশা করলাম, যদি (বাশীর) তাঁকে প্রশ্ন না করতেন (তো ভাল হত)। ক্ষণেক পর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা বলো,
اَللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْت عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، إنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَالسَّلاَمُ كَمَا قَدْ عَلِمْتُمْ
‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ তথা মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ কর; যেমন রহমত বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। আর তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযেল কর; যেমন বরকত নাযেল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।
আর সালাম কেমন, তা তো তোমরা জেনেছ।”
(মুসলিম ৪০৫, তিরমিজী ৩২২০, নাসাঈ ১২৮৫, ১২৮৬, আবু দাঊদ ৯৭৯, আহমাদ ১৬৬১৯, ১৬৬২৪, ২১৮৪৭, মুওয়াত্তা মালিক ৩৯৮, দারেমী ১৩৪৩)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১৫. আবু হুমাইদ সায়েদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পেশ করব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলো,
اَللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ إنَّكَ حَميدٌ مَجِيدٌ
“আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর; যেমন তুমি ইব্রাহীমের বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। আর তুমি মুহাম্মাদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর যেমন তুমি ইবরাহীমের বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম ৪০৭, নাসাঈ ১২৯৪, আবু দাঊদ ৯৭৯, ইবনু মাজাহ ৯০৫, আহমাদ ২৩০৮৯, মুওয়াত্তা মালিক ৩৯৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply