দরুদ শরীফ ও দোয়া
দরুদ শরীফ ও দোয়া , এই অধ্যায়ে মোট = ১৩৭ টি হাদীস (৬০৮ – ৭৪৪) << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৯ দোয়া-দুরুদ
২৭২. অনুচ্ছেদঃ যে কোন ব্যক্তি ভোরে উপনীত হয়ে যা বলবে।
২৭৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অপরের জন্য দোয়া করে।
২৭৪. অনুচ্ছেদঃ অন্তর নিংড়ানো দোয়া।
২৭৫. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যয় সহকারে দোয়া করিবে। কারণ আল্লাহর জন্য বাধ্যতামূলক করণীয় কিছু নাই।
২৭৬. অনুচ্ছেদঃ হাত তুলে মোনাজাত করার বিধান
২৭৭. অনুচ্ছেদঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার [ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া]
২৭৮. অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করা।
২৭৯. অনুচ্ছেদঃ বিবিধ।
২৮০. অনুচ্ছেদঃ মহানাবী [সাঃআঃ]-এর উপর দুরূদ পাঠ।
২৮১. অনুচ্ছেদঃ কারো উপস্থিতিতে মহানাবী [সাঃআঃ]-এর নামোল্লেখ হওয়া সত্বেও সে তাহাঁর প্রতি দুরূদ না পড়লে।
২৮৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি দীর্ঘায়ু কামনা করে।
২৮৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বলে, তাড়াহুড়া না করলে বান্দার দোয়া কবুল হয়।
২৮৫. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অলসতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।
২৮৬. অনুচ্ছেদঃ যে লোক আল্লাহর নিকট চায় নাসায়ী, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন।
২৮৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর পথে জিহাদে কাতারবাদী হয়ে দেয়া করা।
২৮৮. অনুচ্ছেদঃ মহানাবী [সাঃআঃ]-এর দোয়াসমূহ।
২৮৯. অনুচ্ছেদঃ ঝড়-বৃষ্টির সময় দেয়া করা।
২৯০. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু কামনা করে দোয়া করা নিষেধ।
২৯১. অনুচ্ছেদঃ মহানাবী [সাঃআঃ]-এর দোয়াসমূহ।
২৯২. অনুচ্ছেদঃ বিপদাপদের সময় দেয়া করা।
২৯৩. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিখারার দোয়া।
২৯৪. অনুচ্ছেদঃ কারো শাসকের যুলুমের ভয় হলে।
২৯৫. অনুচ্ছেদঃ দোয়াকারীর জন্য যে সওয়াব ও প্রতিদান সঞ্চিত করা হয়।
২৯৬. অনুচ্ছেদঃ দোয়ার ফযীলাত।
২৯৭. অনুচ্ছেদঃ প্রবল বায়ু প্রবাহের সময় দোয়া করা।
২৯৮. অনুচ্ছেদঃ তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।
২৯৯. অনুচ্ছেদঃ বজ্রধ্বনির সময় দোয়া করা।
৩০০. অনুচ্ছেদঃ কেউ বজ্রধ্বনি শুনলে।
৩০১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করে।
৩০২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বিপদ কামনা করে দোয়া করা অপছন্দ করে।
৩০৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কঠিন বিপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
৩০৪. অনুচ্ছেদঃ অসন্তোষের সময় যে ব্যক্তি কারো কথার পুনরাবৃত্তি করে।
৩০৫. অনুচ্ছেদঃ [গীবতের দুর্গন্ধময় বায়ু]।
৩০৬. অনুচ্ছেদঃ গীবত। আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ “তোমাদের কেউ যেন অপরের গীবত না করে” [৪৯ : ১২]।
৩০৭. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির গীবত।
৩০৮. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পিতার সাথে উপস্থিত পুত্রের মাথায় হাত বুলায় এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করে।
৩০৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানদের খাদ্য-পানীয় ও তৈজসপত্র বিনা অনুমতিতে পরস্পরের ব্যবহার।
২৭২. অনুচ্ছেদঃ যে কোন ব্যক্তি ভোরে উপনীত হয়ে যা বলবে।
৬০৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] ভোরে উপনীত হয়ে বলিতেনঃ
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْحَمْدُ كُلُّهُ لِلَّهِ، لَا شَرِيكَ لَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
আসবাহনা ওয়া আসবাহাল হামদু কুল্লুহু লিল্লাহি, লা সারিকা লাহু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া ইলায়হিন নুসুর
“আমরা ভোরে উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজত্ব [সৃষ্টিকুল] ভোরে উপনীত হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তার কোন শরীক নাই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নাই এবং পুনরুত্থান তার কাছে।
তিনি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলিতেনঃ
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ، وَالْحَمْدُ كُلُّهُ لِلَّهِ، لَا شَرِيكَ لَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ
আমসাইনা ওয়া আমসাল মুল্কু লিল্লাহি, ওয়াল হামদু কুল্লুহু লিল্লাহি, লা সারিকা লাহু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া ইলায়হিল মাসির
“আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। আল্লাহর রাজত্ব ভোরে উপনীত হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং তার কোন শরীক নাই। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং তার কাছেই ফিরে যেতে হইবে”।
[আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, ইবনি হিব্বান, আবু আওয়া নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২৭৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অপরের জন্য দোয়া করে।
৬০৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মর্যাদাবানের পুত্র মর্যাদাবানের পুত্র মর্যাদাবানের পুত্র ইউসুফ ইবনি ইয়াকুব ইবনি ইসহাক ইবনি ইবরাহীম [আঃ], যিনি বরকতময় মহান আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ ইউসুফ [আঃ] যতো কাল কারাগারে ছিলেন আমি যদি ততো কাল কারাগারে থাকতাম এবং অতঃপর রাজদূত আমার নিকট এসে আহবান জানালে আমি [তার ডাকে] সাড়া দিতাম। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পড়েন
ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ اللَّاتِي قَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ
[অনুবাদ] : “রাজদূত যখন তার নিকট উপস্থিত হলো তখন সে বললো, তুমি তোমার মনিবের নিকট ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে নারীরা নিজেদের হাত কেটেছিলো তাহাদের অবস্থা কি” [সূরা ইউসুফ : ৫০]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ লুত [আঃ]-এর উপর আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। তিনি মজবুত দুর্গে আশ্রয় গ্রহণের আকাঙ্খা করেছিলেন। তিনি তাহাঁর কাওমকে বলিলেন,
لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ
“তোমাদের উপর যদি আমার জোর খাটতো অথবা যদি আমি কোন সুদৃঢ় দুর্গের আশ্রয় নিতে পারতাম” [সূরা হূদ : ৮০]। তার পর থেকে আল্লাহ যে কোন জাতির মর্যাদাবান ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মধ্য থেকেই নাবীগণকে পাঠিয়েছেন।
[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৭৪. অনুচ্ছেদঃ অন্তর নিংড়ানো দোয়া।
৬১০. আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
রবী [রাহিমাহুল্লাহ] প্রতি জুমুআর দিন আলকামা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট আসতেন। আমি তথায় উপস্থিত না থাকলে তারা আমার জন্য লোক পাঠিয়ে দিতেন। একদা রবী [রাহিমাহুল্লাহ] এলেন। কিন্তু আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম না। তাই আলকামা [রাহিমাহুল্লাহ] আমার সাথে সাক্ষাত করে আমাকে বলেন, তুমি কি দেখেছো রবী কি নিয়ে এসেছে? তিনি বলেন, আপনি কি লক্ষ্য করেন নাসায়ী, লোকে প্রচুর দোয়া করে কিন্তু তাহাদের দোয়া কতো কম কবুল হয়? তার কারণ এই যে, মহামহিম আল্লাহ অন্তর নিঃসৃত দোয়া ছাড়া কবুল করেন না। আমি বললাম, আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-ও কি তাই বলেননি? তিনি জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেন, আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ এমন লোকের দোয়া কবুল করেন নাসায়ী, যে লোককে শুনাবার জন্য, প্রদর্শনীর জন্য এবং অভিনয়ের ভঙ্গিতে দোয়া করে। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করে তিনি তার দোয়া কবুল করেন। রবী বলেন, আলকামা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর স্মরণ হলে তিনি বলেন, হাঁ [তিনি তাই বলেছেন]।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৫. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যয় সহকারে দোয়া করিবে। কারণ আল্লাহর জন্য বাধ্যতামূলক করণীয় কিছু নাই।
৬১১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে তখন সে যেন এরূপ না বলে, যদি তুমি চাও [তবে আমার দোয়া কবুল করো]। বরং সে যেন দৃঢ়তার সাথে এবং পরম আগ্রহভরে দোয়া করে। কেননা কিছু দান করা আল্লাহর কাছে বিরাট কিছু নয়।
[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, ইবনি হিব্বান, আওয়া নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬১২. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দোয়া করলে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে করিবে। দোয়ায় এরূপ বলবে না যে, হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও তবে আমাকে দাও। কেননা আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নাই।
[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী, আহমাদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৬. অনুচ্ছেদঃ হাত তুলে মোনাজাত করার বিধান
৬১৩. আবু নাঈম ওয়াহব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ] ও ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-কে দোয়া করে হাতের তালু মুখমণ্ডলে মলতে দেখেছি।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬১৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর দুই হাত তুলে দোয়া করিতে দেখেছেন। তিনি তাহাঁর দোয়ায় বলেনঃ
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَلَا تُعَاقِبْنِي، أَيُّمَا رَجُلٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ آذَيْتُهُ أَوْ شَتَمْتُهُ فَلَا تُعَاقِبْنِي فِيهِ
ইন্নামা আনা নাসর ফালা তুআকিবনি, আয়্যুমা রজুলুন মিনাল মুও,মিনিনা আজায়তুহু আও সাতামতুহু ফালা তুয়াকিবনি ফিহি
“আমি একজন মানুষই। অতএব তুমি আমাকে শাস্তি দিও না। আমি যদি কোন মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি, তবে তুমি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিও না
[মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৬১৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তুফাইল ইবনি আমর আদ-দাওসী [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খেদমতে হাযির হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দাওস গোত্র নাফরমান হয়েছে এবং ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অতএব আপনি তাহাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদদোয়া করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিবলামুখী হয়ে তাহাঁর উভয় হাত উপরে তুললেন। লোকজন মনে করলো, নাবী [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বদদোয়া করবেন। কিন্তু তিনি বলেনঃ
اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا، وَائْتِ بِهِمْ
হে আল্লাহ! দাওস গোত্রকে হেদায়াত দান করো এবং তাহাদেরকে মুসলমানদের সাথে মিলিয়ে দাও।–]
[বোখারী, মুসলিম] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬১৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক বছর অনাবৃষ্টি হলো। মুসলমানদের একজন জুমুআর দিন নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে দাড়িয়ে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! অনাবৃষ্টি চলছে, ভূমি শুষ্ক [চৌচির] হয়ে গেছে, সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর দুই হাত উর্ধ্বে তুললেন। তখন আকাশে মেঘ ছিলো না। তিনি তাহাঁর দুই হাত এতো প্রসারিত করিলেন যে, আমি তাহাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখিতে পেলাম। তিনি আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করিলেন। আমরা জুমুআর নামায শেষ না করিতেই এমন বৃষ্টি হলো যে, নিকটস্থ বাড়ি-ঘরের যুবকরা ফিরে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। সপ্তাহ ধরে অবিরত বৃষ্টি হইতে থাকলো। পরবর্তী জুমুআ উপস্থিত হলে লোকজন বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ছে। কাফেলার চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আদম সন্তানের এতো তাড়াতাড়ি বিরক্ত হয়ে যাওয়াতে মৃদু হাসলেন এবং হাত তুলে বলেনঃ
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا، وَلَا عَلَيْنَا
আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা
“হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের উপর আর নয়”। ফলে মদীনার আকাশ থেকে মেঘ চলে গেলো
[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬১৭. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর দুই হাত তুলে দোয়া করিতে দেখেছেন। তিনি তাহাঁর দোয়ায় বলেনঃ
اللَّهُمَّ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَلَا تُعَاقِبْنِي، أَيُّمَا رَجُلٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ آذَيْتُهُ أَوْ شَتَمْتُهُ فَلَا تُعَاقِبْنِي فِيهِ
আল্লাহুম্মা ইন্নামা আনা নাসরু ফালা তুআকিবনি, আইয়্যুমা রজুলুন মিনাল মুও,মিনিনা আজায়তুহু আও সাতামতুহু ফালা তুয়াকিবনি ফিহি
“হে আল্লাহ! আমি একজন মানুষই। অতএব তুমি আমাকে শাস্তি দিও না। আমি যদি কোন মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি, তবে তুমি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিও না”
[মুসলিম, আবু দাউদ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬১৮. জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তুফাইল ইবনি আমর [রাহিমাহুল্লাহ] নাবী [সাঃআঃ]-কে বলেন, আপনার কি দুর্গ ও প্রতিরক্ষার প্রয়োজন আছে? দাওস গোত্রের দুর্গ? রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিলেন। এজন্য যে, আল্লাহ আনসারদের জন্যই তাহাঁর প্রতিরক্ষা [সংক্রান্ত] সওয়াবের ভাণ্ডার সংরক্ষিত করিয়াছেন। অতঃপর তুফাইল [রাঃআঃ] হিজরত করে চলে আসলেন। তার সাথে তার সগোত্রীয় এক ব্যক্তিও আসলো। লোকটি রোগাক্রান্ত হলো এবং [রোগ যাতনায়] জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে গেলো। তাই সে শিং-এর মধ্যে থেকে একটি ছুরি নিয়ে তার ঘাড়ের [দুইবনি মাজাহ] দিকের রগ কেটে ফেললো। তাতে তার মৃত্যু হলো। তুফাইল [রাঃআঃ] তাকে স্বপ্নে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করা হলো। সে বললো, নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আমার হিজরত করার কারণে আমাকে ক্ষমা করা হয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার দুই হাতের অবস্থা কি? রাবী বলেন, বলা হলো, তোমার হাতের দ্বারা তুমি যা নষ্ট করেছে তা আমরা আর সংস্কার করবো না। রাবী বলেন, তুফাইল [রাঃআঃ] স্বপ্নের কথা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বর্ণনা করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আল্লাহ! তার দুই হাতকে ক্ষমা করে দাও এবং [দোয়ায় ] তিনি তাহাঁর দুই হাত উঠালেন।
[মুসলিম, আওয়ানাসায়ী, হাকিম, ইবনি হিব্বান, আহমাদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬১৯. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আশ্রয় প্রার্থনা করে বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল কাসালি, ওয়া আউযু বিকা মিনালওয়া আউযু বিকা মিনাল হারামি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই ভীরুতা থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে
-[বোখারী, মুসলিম]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার বান্দার জন্য সেইরূপ যেরূপ সে আমার সম্পর্কে ধারণা পোষণ করে। আমি তার সাথেই থাকি যখন সে আমাকে ডাকে
-[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ]।দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৭. অনুচ্ছেদঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার [ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া]
৬২১. শাদ্দাদ ইবনি আওস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো,
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ. أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু।
“হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছে এবং আমি তোমার বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনে বদ্ধপরিকর। আমি তোমার দেয়া নিয়ামতের কথা স্বীকার করি এবং আমার পাপের কথাও তোমার কাছে স্বীকার করি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফকারী আর কেউ নাই। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই”।
যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এরূপ বলে [ঐ রাতে] মারা গেলে সে বেহেশতে প্রবেশ করিবে বা বেহেশতীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে। আর সে ভোরে উপনীত হয়ে ঐরুপ বললে এবং সেদিন মারা গেলে বেহেশতে প্রবেশ করিবে বা বেহেশতীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
[বোখারী, তিরমিজী, নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২২. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর মজলিসে অবশ্যই গণনা করে দেখতাম যে, তিনি এক মজলিসে শতবার বলিতেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
রব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়া, ইন্নাকা আন্তাল তাওওয়াবুর রাহিম
“প্ৰভু! আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয় তুমিই একমাত্র তওবা কবুলকারী, দয়াময়”।
-[আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, আহমাদ, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাশতের নামায পড়লেন, অতঃপর বলেনঃ
للَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
রব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়া, ইন্নাকা আন্তাল তাওওয়াবুর রাহিম
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী, দয়াময়”। এমনকি তিনি তা শতবার বলিলেন
[নাসায়ী, আহমাদ]।দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২৪. শাদ্দাদ ইবনি আওস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, কারো এভাবে বলাঃ
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।
“হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছে এবং আমি তোমার বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার দেয়া ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনে বদ্ধপরিকর। আমি আমার কৃতকর্মের ক্ষতি থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি তোমার কাছে তোমার দেয়া নিয়ামতরাজির স্বীকারোক্তি করছি এবং আমি তোমার কাছে আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফকারী আর কেউ নাই”।
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয়সহ দিনের বেলা তা বললে এবং সেদিনই সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে মারা গেলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে। আর কোন ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয়সহ তা রাতের বেলা বললে এবং ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা গেলে সেও জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
[বোখারী, তিরমিজী, নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো। আমি দৈনিক শতবার আল্লাহর কাছে তওবা করি।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২৬. কাব ইবনি উজরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নামাযের পরে পড়ার কলেমা আছে, যেগুলোর পাঠকারী ক্ষতিগ্রস্থ হয় নাঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ
সুবহানাল্লাহ,ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার।
“আল্লাহ মহাপবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আল্লাহ মহান”।
রাবী আবু উনাইস ও আমর ইবনি কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি মারফু সুত্রে বর্ণনা করিয়াছেন।
[মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৮. অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করা।
৬২৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সত্বর কবুল হওয়ার মতো দোয়া হলো এক অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য অপর অনুপস্থিত ব্যক্তির দোয়া।
[তিরমিজী, আবু দাউদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬২৮. আবু বাকর সিদ্দীক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ভাইয়ের দোয়া কবুল হয়।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬২৯. সাফওয়ান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি সাফওয়ান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবু দারদা [রাঃআঃ]-এর কন্যা দারদা তার স্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় আমার শ্বশুরালয়ে আসলাম। আমি বাড়িতে দারদার মাকে [আমার শাশুড়ীকে] পেলাম, কিন্তু দারদার পিতাকে [আমার শ্বশুরকে] পেলাম না। শাশুড়ী বলেন, তুমি কি এ বছর হজ্জ করার ইচ্ছা করেছো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তাহলে আমাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করিবে। কেননা নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ “অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য মুসলমানের দোয়া কবুল হয়ে থাকে। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা মোতায়েন থাকেন। যখন সে তার কোন ভাইয়ের কল্যাণের জন্য দোয়া করে, তখন সেই ফেরেশতা বলেন, আমীন এবং তোমারও অনুরূপ কল্যাণ হোক”। রাবী বলেন, বাজারে আবু দারদা [রাঃআঃ]-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনিও অনুরূপ বলিলেন এবং তা নাবী [সাঃআঃ]-এর বরাতে বলিলেন।
[মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ, ইবনি হিব্বান, আবু আওয়া নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৩০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ! কেবল আমাকে ও মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে ক্ষমা করুন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি অনেক লোককে দোয়া থেকে বঞ্চিত করলে
[বোখারী, আহমাদ, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৩১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে এক মজলিসে আল্লাহর কাছে শতবার ক্ষমা প্রার্থনা করিতে শুনেছিঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيَّ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
রব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়া, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আন্তাল তাওওয়াবুর রাহিম
“হে প্ৰভু! আমাকে ক্ষমা করো, আমার তওবা কবুল করো এবং আমাকে অনুগ্রহ করো। কেননা তুমিই তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু” [নাসায়ী]।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৯. অনুচ্ছেদঃ বিবিধ।
৬৩২. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি আমার প্রতিটি ব্যাপারেই দোয়া করে থাকি, এমনকি আমার জন্তুযানকে দ্রুত গতিসম্পন্ন করে দেওয়ার জন্যও দোয়া করি। তাতে আমি আনন্দদায়ক ফলই লাভ করি।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৩৩. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তার দোয়াসমূহের মধ্যে একটি ছিলোঃ
اللَّهُمَّ تَوَفَّنِي مَعَ الْأَبْرَارِ، وَلَا تُخَلِّفْنِي فِي الْأَشْرَارِ، وَأَلْحِقْنِي بِالْأَخْيَارِ
আল্লাহুম্মা তাওয়াক্কানি মায়াল আবড়ার ওয়া লা তু খাল্লিকনি ফিল আসরার ওয়াল হিকনি বিল আখইয়ার
“হে আল্লাহ! সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমার মৃত্যু দান করো, নিকৃষ্ট লোকদের মধ্যে আমাকে জীবিত রেখো না এবং উত্তম লোকদের সাথে আমার মিলন ঘটাও”।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৩৪. শাকীক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বেশীর ভাগ নিম্নোক্ত বাক্যে দোয়া করিতেনঃ
رَبَّنَا أَصْلِحْ بَيْنَنَا، وَاهْدِنَا سَبِيلَ الْإِسْلَامِ، وَنَجِّنَا مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ، وَاصْرِفْ عَنَّا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهْرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَبَارِكْ لَنَا فِي أَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُلُوبِنَا وَأَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا، وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ، وَاجْعَلْنَا شَاكِرِينَ لِنِعْمَتِكَ، مُثْنِينَ بِهَا، قَائِلِينَ بِهَا، وَأَتْمِمْهَا عَلَيْنَا
“আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের সংশোধন করে দাও, আমাদেরকে ইসলামের পথে পরিচালিত করো, আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে মুক্তি দাও, প্রকাশ্য ও গুপ্ত সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে আমাদের দূরে রাখো, আমাদের শ্রবণেন্দ্রীয়, অন্তরসমূহ ও আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের মধ্যে বরকত দান করো এবং আমাদের তওবা কবুল করো। কেননা তুমিই তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। তুমি আমাদেরকে নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ, এগুলোর প্রশংসাকারী ও আলোচনাকারী বানাও এবং তা আমাদেরকে পূর্ণরূপে দান করে”
।-[আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ, তাবারানি] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৩৫. সাবিত [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আনাস [রাঃআঃ] তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সময় বলিতেন,
جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْهِ صَلَاةَ قَوْمٍ أَبْرَارٍ لَيْسُوا بِظَلَمَةٍ وَلَا فُجَّارٍ، يَقُومُونَ اللَّيْلَ، وَيَصُومُونَ النَّهَارَ
“আল্লাহ তার প্রতি সৎকর্মপরায়ণ লোকদের দোয়া বর্ষণ করুন, যারা যালেম বা পাপাচারী নন, যারা রাত জেগে ইবাদত করেন এবং দিনের বেলা রোযা রাখেন”।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৬৩৬. আমর ইবনি হুরাইস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমার মা আমাকে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলেন। তিনি আমার মাথা মলে দিলেন এবং আমার রিযিকের জন্য দোয়া করিলেন।
-[উসদুল গা বাযযার] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৩৭. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি যাবিয়ায় অবস্থানকালে তাকে বলা হলো, আপনার ভাই-বন্ধু তাহাদের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করানোর উদ্দেশ্যে বসরা থেকে আপনার নিকট এসেছে। তিনি বলেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا، وَارْحَمْنَا، وَآتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
আল্লাহুম্মাগফির লানা, ওয়া আরহামনা, ওয়া আতানা ফিদদুনইয়া হাসানাতান, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিন আজাবান্নার
“হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের দয়া করুন, আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন”।
তারা আরো অধিক দোয়ার আবেদন করলে তিনি পূর্বোক্ত দোয়া করেন। তিনি বলেন, তোমাদের যদি তা দান করা হয় তাহলে তোমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করা হলো।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৩৮. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] একটি গাছের ডাল ধরে নাড়া দিলেন কিন্তু পাতা ঝরলো না। তিনি পুনরায় তা ধরে নাড়া দিলেন কিন্তু এবারও পাতা ঝরলো না। তিনি পুনরায় ডাল ধরে নাড়া দিলে এবার পাতা ঝরলো। তিনি বলেনঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدَ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ
“সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বাক্য গুনাহ ঝরিয়ে দেয়, যেমন গাছ তার পাতাসমূহ ঝরিয়ে দেয়
[তিরমিজী, আহমাদ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৬৩৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক মহিলা তার কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলো। তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়েও উত্তম কিছু বলে দিবো না? তোমার শয়নকালে তুমি তেত্রিশবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, তেত্রিশবার “সুবহানাল্লাহ” এবং চৌত্রিশবার “আলহামদু লিল্লাহ” বলবে, তাতে এক শতবার হইবে এবং তা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।
[মুসনাদ আহমাদ, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৪০. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আরও বলেনঃ যে ব্যক্তি এক শতবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এক শতবার সুবহানাল্লাহ এবং এক শতবার আল্লাহু আকবার বলবে তার জন্য তা দশটি গোলাম আযাদ করা এবং সাতটি উট কোরবানী করার চেয়ে উত্তম।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৪১. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! কোন দোয়া সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। সে পরদিন সকালে তার নিকট এসে আবার বললো, হে আল্লাহর নাবী! কোন দোয়া সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো, সুখ-শান্তি প্রার্থনা করো। যদি তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা দান করা হয় তবে তুমি সফলকাম হলে।-
[তিরমিজী, ইবনি মাজাহ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৪২. আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম কথা হচ্ছেঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ
“সুবহানাল্লাহ লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি”
[আল্লাহ মহাপবিত্র, তাহাঁর কোন শরীক নাই। রাজত্ব তাহাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাহাঁর এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। মন্দকে রোধ করা এবং কল্যাণ হাসিল করার শক্তি আল্লাহ ব্যতীত কারো নাই । আল্লাহ মহাপবিত্র ও সকল প্রশংসা তাহাঁরই”]
-[মুসলিম] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৪৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আমার ঘরে প্রবেশ করিলেন। আমি নামায পড়ছিলাম। তার কি একটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি তাতে বিলম্ব করলাম। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! তুমি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া করিবে। নামায শেষ করে আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া কি? তিনি বলেনঃ তুমি বলো,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ، عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ. وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمُ. وَأَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ. وَأَسْأَلُكَ مِمَّا سَأَلَكَ بِهِ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِمَّا تَعَوَّذَ مِنْهُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَا قَضَيْتَ لِي مِنْ قَضَاءٍ فَاجْعَلْ عَاقِبَتَهُ رُشْدًا
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসালুকা মিনাল খয়রি কুল্লিহি আজিলিহি ওয়া আজিলিহি মা আলিমতু মিনহু ওয়া মা লাম আ’লাম। ওয়া আউজু বিকা মিনাস সাররি কুল্লিহি আজিলিহি ওয়া আজিলিহি মা আলিমতু মিনহু ওয়া মা লাম আ’লাম। ওয়া আসালুকাল জান্নাতা ওয়া মা কাররাবা ইলায়হা মিন কাওলি আও আমালিন । ওয়া আসালুকা মিম্মা সাআলাকা বিহি মুহাম্মাদু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ওয়া মা কদায়তাহু লিয় মিন কদাইয়ান ফাজআল আকিবাতাহু রুসদান
“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট বিলম্বে ও অবিলম্বে, আমার জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সব রকম কল্যাণ কামনা করছি। আমি তোমার নিকট বিলম্বে ও অবিলম্বে আমার জানা ও অজানা সব রকম ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি তোমার নিকট বেহেশত এবং যে কথা ও কাজ বেহেশতের নিকটবর্তী করে দেয় তা প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট দোযখ থেকে এবং যে কথা ও কাজ দোযখের নিকটবর্তী করে দেয় তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট সেই জিনিস প্রার্থনা করছি যা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তোমার নিকট প্রার্থনা করিয়াছেন। আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই জিনিস থেকে যা থেকে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করিয়াছেন। আমার ব্যাপারে তুমি যে ফয়সালা করেছো পরিণামে তাকে [আমার] হেদায়াতের উপায় বানাও”
[ইবনি মাজাহ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮০. অনুচ্ছেদঃ মহানাবী [সাঃআঃ]-এর উপর দুরূদ পাঠ।
৬৪৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে মুসলমান ব্যক্তির দান-খয়রাত করার সামর্থ্য নাই, সে যেন তার দোয়ায় বলে,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়া সাল্লি আলাল-মুমিনীনা ওয়াল-মুমিনাত ওয়াল-মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত” [হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদকে দয়া করো এবং মুমিন নারী-পুরুষ ও মুসলিম নারী-পুরুষ সকলকে দয়া করো]। এটাই তার জন্য যাকাতস্বরূপ।-
-[হাকিম, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৪৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি বলবে,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ، وَتَرَحَّمْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا تَرَحَّمْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ، شَهِدْتُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِالشَّهَادَةِ، وَشَفَعْتُ لَهُ
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লায়তা আলা ইবরাহীম, ওয়া আলা আলি ইবরাহীম,ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বা-রাক্তা আলা ইব্রাহীম, ওয়া আলি ইবরাহীম, ওয়া তারাহহাম আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা তারাহহামতা আলা ইবরাহীম, ওয়া আলি ইবরাহীম সাহিদতু লাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি বিস সাহাদাতি ওয়া সাফাআতু লাহু, “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের প্রতি অনুগ্রহ করো এবং তাহাঁর পরিবারবর্গের প্রতিও অনুগ্রহ করো, যেমন তুমি অনুগ্রহ করেছো ইবরাহীম [আবু দাউদ]-কে, ইবরাহীমের পরিজনের প্রতি। আর তুমি বরকত দান করো মুহাম্মাদকে এবং তাহাঁর পরিবারবর্গকে, যেমন তুমি বরকত দান করেছো ইবরাহীমকে ও তাহাঁর পরিজনকে। আর তুমি রহমাত বর্ষণ করো মুহাম্মাদের উপর এবং তাহাঁর পরিজনদের উপর, যেমন তুমি রহমাত বর্ষণ করেছে ইবরাহীমের উপর এবং তার পরিজনের উপর”। কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে সাক্ষী দিবো এবং তার জন্য শাফাআত করবো
[তাবারীর তাহযীব, ফাতহুল বারী]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৪৬. আনাস [রাঃআঃ] ও মালেক ইবনি আস ইবনি হাদাসান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নবী (সাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়তে বের হলেন, কিন্তু সাথে যাওয়ার মতো কাউকে পেলেন না। উমার (রাঃ) মাটির ঘড়া বা পানির পাত্র নিয়ে তাঁর পিছে পিছে গেলেন। তিনি তাঁকে একটি শুষ্ক পাহাড়ী নালার মধ্যে সিজদারত অবস্থায় পেলেন। তিনি সরে গিয়ে তাঁর পিছনে বসলেন। শেষে নবী (সাঃ) তাঁর মাথা তুলে বলেনঃ হে উমার! তুমি আমাকে সিজদারত দেখে একপাশে সরে গিয়ে ভালোই করেছো। জিবরাঈল (আবু দাউদ) এসে আমাকে বলেন, যে ব্যক্তি আপনার প্রতি একবার দরূদ পড়ে, আল্লাহ তাঁর প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন এবং তার মর্যাদা দশ গুণ বাড়িয়ে দেন।
(আহমাদ, মুসনাদে আবু ইয়ালা, সাখাবী)।
৬৪৭. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন এবং তার দশটি গুনাহ মুছে দেন। [আহমাদ, মুসনাদ আবু নাঈম ইসফাহানী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮১. অনুচ্ছেদঃ কারো উপস্থিতিতে মহানাবী [সাঃআঃ]-এর নামোল্লেখ হওয়া সত্বেও সে তাহাঁর প্রতি দুরূদ না পড়লে।
৬৪৮.জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] মিম্বারে উঠলেন। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠে বলেনঃ আমীন। তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ আমরা আপনাকে তিনবার আমীন বলিতে শুনলাম। তিনি বলেনঃ আমি প্রথম সিঁড়িতে উঠতেই জিবরাঈল [আবু দাউদ] এসে বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে রমযান মাস পেলো এবং তা শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও তার গুনাহর ক্ষমা হলো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে নিজ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাহাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তারা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করালো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর তৃতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যার নিকট আপনার উল্লেখ হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়েনি। আমি বললামঃ আমীন।
[ইবনুস সুন্নী]দ রুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৪৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন বাক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন
। [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, আহমাদ, দারিমি, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৫০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] মিম্বারে আরোহণ করে বলেনঃ আমীন আমীন, আমীন। তাহাঁকে বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ। আপনি তো কখনও এরূপ করেননি। তিনি বলেনঃ জিবরাল [আবু দাউদ] বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাহাদের একজনকে জীবিত পেলো, অথচ তারা তার বেহেশতে প্রবেশের কারণ হলো নাসায়ী, সে অপমানিত হোক। আমি বললামঃ আমীন [তাই হোক]। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রমযান মাস পেলো, অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না সে অপমানিত হোক। আমি বললামঃ আমীন। তিনি পুনরায় বলেন, যার সামনে আপনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়লো না সে অপমানিত হোক। আমি বললামঃ আমীন।
– [মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান, ইবনি হিব্বান, ইবনি খুজাইমাহ, আবু আওয়া নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৬৫১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] তার নিকট থেকে বের হয়ে গেলেন। তার পূর্বনাম ছিল বাররা। নাবী [সাঃআঃ] তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জুয়াইরিয়া। তিনি তার নিকট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তার নাম বাররা থাকা অবস্থায় তিনি ঘরে পুনরায় প্রবেশ করা পছন্দ করিলেন না। অতঃপর দিনের বেশ সময় চলে গেলে তিনি ফিরে এলেন, অথচ জুয়াইরিয়া [রাঃআঃ] তখনও সেই বসা অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি সেই এক নাগাড়ে বসে আছো? তোমার এখান থেকে যাওয়ার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার করে বলেছি। যদি তোমার দোয়া-কালামের সাথে সেগুলো ওজন করা হয়, তবে আমার কথিত বাক্যগুলিই অধিক ভারী হবেঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ – أَوْ مَدَدَ – كَلِمَاتِهِ
সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী আদাদা খল্ক্বিহী ওয়া রিযা- নাফসিহী ওয়া যিনাতা আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহ্),
“আমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করছি তাহাঁর অগণিত সৃষ্টির সমান ও তাহাঁর নিজের সস্তুষ্টি ও তাহাঁর আরশের ওজনের সমান এবং তাহাঁর কলেমাসমূহের সংখ্যার সমপরিমাণ”
[মুসলিম]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৫২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট দোযখ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো কবরের আযাব থেকে। তোমরা মাসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। তোমরা জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো।
[তিরমিজী,নাসায়ী, আহমাদ, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮২. অনুচ্ছেদঃ যালেমের বিরুদ্ধে মযলুমের বদদোয়া।
৬৫৩. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي سَمْعِي وَبَصَرِي، وَاجْعَلْهُمَا الْوَارِثَيْنِ مِنِّي، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ ظَلَمَنِي، وَأَرِنِي مِنْهُ ثَأْرِي
আল্লাহুম্মা আসলিহ লিয় সামইয় ওয়া বাসারি, ওয়া জায়ালহুমাল ওয়া রিসানি মিন্নি ওয়ানসুরনি আলা মান জালামনি, ওয়া আরিনিয় মিনহু ছারিয়
“হে আল্লাহ আমার শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি সংশোধন করো এবং এগুলোকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত কার্যক্ষম রাখো। যে ব্যক্তি আমার উপর যুলুম করেছে তার বিরুদ্ধে তুমি আমাকে সাহায্য করো এবং তুমি তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে আমাকে দেখাও”।
-[তাবারানির মুজামুস সাগীর] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৫৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِسَمْعِي وَبَصَرِي، وَاجْعَلْهُمَا الْوَارِثَ مِنِّي، وَانْصُرْنِي عَلَى عَدُوِّي، وَأَرِنِي مِنْهُ ثَأْرِي
আল্লাহুম্মা মাত্তিনি বিসামইয় ওয়া বাসারি, ওয়া জায়ালহুমাল ওয়া রিসা মিন্নি ওয়ানসুরনি আলা আদুওইয়ি , ওয়া আরিনিয় মিনহু ছারিয়
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার চোখ ও কানের দ্বারা উপকৃত করো এবং এগুলোকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত সুস্থ রাখো, আমার শক্রর বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো এবং তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে আমাকে দেখাও”
। [তিরমিজী, হাকিম, বাযযার] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৫৫. সাদ ইবনি তারিক ইবনি আশয়াম আল-আশযাঈ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, আমরা প্রভাতকালে সকাল সকাল নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হতাম। কোন পুরুষ বা নারী উপস্থিত হয়ে বলতো, ইয়া রসূলাল্লাহ। আমি নামায পড়াকালে কিরূপ দোয়া করবো? তিনি বলিতেনঃ তুমি বলবে,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي، فَقَدْ جَمَعَتْ لَكَ دُنْيَاكَ وَآخِرَتَكَ
আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুকনী, ফাকাদ জামাআতু লাকা দুনইয়া কা ওয়া আখিরাতাকা
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে দয়া করো, আমাকে হেদায়াত করো এবং আমাকে রিফিক দান করো”। তা তোমার দুনিয়া ও আখেরাতকে একত্র করিবে। [মুসলিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি দীর্ঘায়ু কামনা করে।
৬৫৬. উম্মু কায়েস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ উম্মু কায়েস যা বলেছে, সে দীর্ঘজীবি হোক। অধস্তন রাবী বলেন, আমার জানামতে তার মতো দীর্ঘায়ু আর কোন নারীর হয়নি
। [নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৫৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আমাদের আহলে বাইতের এখানে আসতেন। একদিন তিনি এসে আমাদের জন্য দোয়া করিলেন। উম্মু সুলাইম [রাঃআঃ] বলেন, আপনার ছোট্ট খাদেমটি, আপনি তার জন্য কি দোয়া করবেন না? তিনি বলেনঃ
اللَّهُمَّ، أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ، وَأَطِلْ حَيَاتَهُ، وَاغْفِرْ لَهُ
আল্লাহুম্মা আঁকশির মালাহু ওয়া ওয়া লাদাহু ওয়া আতিল হায়াতাহু, ওয়াগফিরলাহু
“হে আল্লাহ! তুমি তার সম্পদ ও তার সন্তান বৃদ্ধি করো, তাকে দীর্ঘজীবি করো এবং তাকে ক্ষমা করো”। আনাস [রাঃআঃ] বলেন, তিনি আমার জন্য তিনটি দোয়া করেন। অতএব আমি এক শত তিনটি সন্তানকে দাফন করেছি, আমার বাগানে বছরে দুইবার ফল ধরে এবং আমার আয়ু এতো দীর্ঘ হয়েছে যে, অধিক বয়সের জন্য আমি লোকজনের সামনে লজ্জাবোধ করি। এখন আমি ক্ষমা আশা করছি।
[মুসলিম] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বলে, তাড়াহুড়া না করলে বান্দার দোয়া কবুল হয়।
৬৫৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
বাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে। সে বলে, আমি দোয়া তো করলাম কিন্তু আমার দোয়া কবুল হলো না।
[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী,ইবনি মাজাহ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৫৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় যতক্ষণ না সে পাপাচারের বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া করে এবং তাড়াহুড়া না করে। সে বলে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হয়েছে বলে মনে হয় না। তারপর সে দোয়া করা ত্যাগ করে।
[বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,তিরমিজী,ইবনি মাজাহ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৫. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অলসতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।
৬৬০. আমর ইবনি শুআইব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْمَغْرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা বিকা মিনাল কাসালি ওয়াল মাগরাম, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহ দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিন নার
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও ঋণের বোঝা থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই মসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই দোযখের শাস্তি থেকে”।
-[নাসায়ী, আহমাদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৬৬১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিতেন
يَتَعَوَّذُ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ، وَشَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
“জীবন ও মৃত্যুর অনিষ্ট, কবরের শাস্তি ও মসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে”
[মুসনাদ আহমাদ, ইবনি হিব্বান]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৬. অনুচ্ছেদঃ যে লোক আল্লাহর নিকট চায় নাসায়ী, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন।
৬৬২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় নাসায়ী, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৬৬৩. আবু সালেহ আল-খাওযী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় নাসায়ী, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন
[তিরমিজী,ইবনি মাজাহ,আহমাদ, হাকিম]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৬৬৪. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। তোমাদের কেউ যেনো এভাবে না বলে, যদি তুমি চাও তবে আমাকে দান করো। কেননা আল্লাহর জন্য কিছুই বাধ্যতামূলক নয়
[বোখারী, মুসলিম]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৬৫. উসমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-বিকাল নিম্নোক্ত দোয়া তিনবার করে পড়বে, কোন কিছুই তার ক্ষতি করিতে পারবে নাঃ
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মা’আ’সমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
“আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান-জমিনের কিছুই ক্ষতি করিতে পারে না এবং তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন”।
হাদিসের রাবী আবান [রাহিমাহুল্লাহ] পক্ষাঘাতগ্রস্থ ছিলেন। তাই রাবী আবু যিনাদ [রাহিমাহুল্লাহ] তার দিকে তাকাতে থাকলেন। আবান [রাহিমাহুল্লাহ] তা টের পেয়ে বলেন, হাদিস তো যথাস্থানে ঠিকই আছে, যা আমি তোমাদের নিকট বর্ণনা করলাম। কিন্তু যেদিন আমি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হই সেদিন তা পড়িনি। তাই আল্লাহর লিখন [তাকদীর] কার্যকর হয়েছে
[আবু দাউদ,তিরমিজী,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ,ইবনি হিব্বান]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৮৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর পথে জিহাদে কাতারবাদী হয়ে দেয়া করা।
সাহল ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
দুইটি মুহুর্তে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। তখন দোয়াকারীদের দোয়া খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয়। [১] আযানের সময় এবং [২] যখন [মুজাহিদগণ] আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কাতারবন্দী হয়।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২৮৮. অনুচ্ছেদঃ মহানাবী [সাঃআঃ]-এর দোয়াসমূহ।
৬৬৭. আবু সিরমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ غِنَايَ وَغِنَى مَوْلَايَ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা গিনায়ি, ওয়া ইনা মাওলাইয়া
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঐশ্বর্য প্রার্থনা করি”। তাহাঁর প্রভু তাহাঁকে ঐশ্বর্য দান করেন
[আবু দাউদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৬৬৮. শুতাইর ইবনি শাকল ইবনি হুমাইদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা দ্বারা আমি উপকৃত হবো। তিনি বলেনঃ তুমি বলো,
اللَّهُمَّ عَافِنِي مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَبَصَرِي، وَلِسَانِي، وَقَلْبِي، وَشَرِّ مَنِيِّي
আল্লাহুম্মা আফিনি মিন সাররি সামই, ওয়া বাসারি, ওয়া লিসানি, ওয়া কল্বি, ওয়া সাররি মানিয়্যি
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার কান, আমার চোখ, আমার যাবান, আমার অন্তর এবং অসৎ কামনার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখো”। রাবী ওয়াকী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কামনা-বাসনার অনিষ্ট অর্থ ব্যভিচার ও পাপাচার।
[আবু দাউদ,তিরমিজী,নাসায়ী,হাকিম] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَعِنِّي وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ، وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي
আল্লাহুম্মা আয়িন্নি ওয়া লা তুয়িনু আলাইয়া, ওয়ানসুরনি, ওয়া লা তানসুর আলাইয়া, ওয়া ইয়াসিররিল হুদালি
“হে আল্লাহ! আমাকে গোপনে সাহায্য করো, আমার বিরুদ্ধে [বিরোধীকে] সাহায্য করো নাসায়ী, আমাকে প্রকাশ্যে সাহায্য করো, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করো না এবং হেদায়াতের পথকে আমার জন্য সুগম করো”।
[আবু দাউদ,তিরমিজী,ইবনি মাজাহ,হাকিম, ইবনি হিব্বান] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এভাবে দোয়া করিতেনঃ
رَبِّ أَعِنِّي وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ، وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ، وَيَسِّرْ لِيَ الْهُدَى، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ. رَبِّ اجْعَلْنِي شَكَّارًا لَكَ، ذَكَّارًا لَكَ، رَاهِبًا لَكَ، مِطْوَاعًا لَكَ، مُخْبِتًا لَكَ، أَوَّاهًا مُنِيبًا، تَقَبَّلْ تَوْبَتِي، وَاغْسِلْ حَوْبَتِي، وَأَجِبْ دَعْوَتِي، وَثَبِّتْ حُجَّتِي، وَاهْدِ قَلْبِي، وَسَدِّدْ لِسَانِي، وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِي
রব্বা আয়িন্নি ওয়া লা তুয়েন আলাইয়া, ওয়ানসুরনি ওয়ালা তানসুর আলাইয়া, ওয়ামকুরলিয় ওয়ালা তামকুর আলাইয়া, ওয়া ইসসিরিলিয়াল হুদা ওয়ান সুরনি আলা মান বাগা আলাইয়া। রব্বাজ আলনি সাক্কারান লাকা জাক্কারান লাকা রাহহাবান লাকা মিতওয়ান লাকা, মুখবিতান লাকা, আও ওয়াহান মুনিবান তাকাব্বাল তাওবাতি ওয়াগসিল হাওবাতি ওয়া আজিব দাওইয়াতি ওয়া সাব্বিত্ হুজ্জাতি ওয়াহদি কালবি ওয়া সাদ্দিদ লিসাবি, ওয়াসলুল সাখিমাতা কালবি
“হে প্রভু! আমাকে সাহায্য করো এবং আমার বিরুদ্ধে [কাউকে] সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করো না। আমার জন্য কৌশল এঁটে দাও এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে কৌশল এঁটে দিও না। আমার জন্য হেদায়াতের পথ সুগম করো এবং যে ব্যক্তি আমার উপর অত্যাচার ও সীমালংঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো। হে প্ৰভু! আমাকে তোমার জন্য কৃতজ্ঞ বান্দা বানাও, তোমার জন্য অনেক যিকিরকারী, তোমাকে অধিক ভয়কারী, তোমার অধিক আনুগত্যকারী, তোমার নিকট অনুনয়-বিনয়কারী ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বানাও। হে আমার রব! আমার তওবা কবুল করো, আমার সমস্ত গুনাহ ধুয়েমুছে সাফ করো, আমার যবানকে সোজা রাখো, আমার অন্তরকে হেদায়াত দান করো এবং আমার বক্ষ থেকে সমস্ত হিংসা দূরীভূত করো”
[তিরমিজী,আবু দাউদ,ইবনি মাজাহ,হাকিম,ইবনি হিব্বান]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭১. মুহাম্মাদ ইবনি কাব আল-কুরাযী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
মুআবিয়া ইবনি আবু সুফিয়ান [রাঃআঃ] মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলেন,
إِنَّهُ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعَ اللَّهُ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْهُ الْجَدُّ. وَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ
“প্ৰভু! তুমি যাকে দান করো তা প্রতিরোধ করার কেউ নাই। আর আল্লাহ যার প্রতিবন্ধক হন তাকে কেউ দান করিতে পারে না। কারো বংশমর্যাদা বা সম্পদশালীর সম্পদ তার কাছে কোন উপকারে আসে না। আর আল্লাহ যার কল্যাণ সাধন করিতে চান তাকে ধর্মের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন”।
অতঃপর তিনি বলেন, আমি এই কথাগুলি নাবী [সাঃআঃ]-কে এই মিম্বারের উপর বলিতে শুনিয়াছি
-[মুয়াত্তা মালিক]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৬৭২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার অতীব শক্তিশালী ও কার্যকর দোয়া হলো, তোমার এভাবে বলা,
“হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক এবং আমি তোমার বান্দা। আমি আমার উপর যুলুম করেছি এবং আমার অপরাধ স্বীকার করি। তুমি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নাই। হে প্ৰভু! আমাকে ক্ষমা করো”
[মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৭৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনের ব্যাপারে আমাকে সংশোধন করে দাও, যা আমার সকল কাজের রক্ষাকবচ। তুমি আমার পার্থিব জীবনকে সংশোধন করে দাও, যেখানে রহিয়াছে আমার জীবন-জীবিকা এবং প্রতিটি অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য আমার মৃত্যুকে আমার জন্য রহমাতের উৎস বানাও”
[মুসলিম,আবু আওয়ানা,তাবারানি]।দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আশ্রয় প্রার্থনা করিতেনঃ কঠিন দুর্বিপাক থেকে, পাপের স্পর্শ থেকে, ভাগ্যবিড়ম্বনা থেকে এবং দুশমনের দুশমনি থেকে।
[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭৫. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] পাঁচটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেনঃ অলস তাবারানি, কার্পণ্য, চরম বার্ধক্য, অন্তরের বিপর্যয় এবং কবরের আযাব থেকে।
[আবু দাউদ,মুসলিম, নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৭৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি অপারগতা থেকে, ভীরুতা থেকে এবং বার্ধক্য থেকে। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে”।
[বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসায়ী,তিরমিযি] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, অপারগতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও লোকজনের দাপট থেকে”।
[বোখারী, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-এর দোয়াসমূহের মধ্যে এটিও ছিলঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে আমার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ, আমার গোপন প্রকাশ্য সকল পাপ এবং যে পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। নিশ্চয় তুমি অগ্রসরকারী ও বিলম্বকারী। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”।
[বোখারী,মুসলিম,আহমাদ, হাকিম] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৭৯. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হেদায়াত, নিরাপত্তা ও ঐশ্বর্য প্রার্থনা করছি। উমার [রাঃআঃ]-এর বর্ণনায় তাকওয়া [আল্লাহভীতি] প্রার্থনার কথাও উল্লেখ আছে
[মুসলিম,তিরমিজী,ইবনি মাজাহ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮০. ছুমামা ইবনি হাযন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি এক প্রবীণ ব্যক্তিকে উচ্চস্বরে ডাক দিতে শুনলাম, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অনিষ্ট থেকে এমন আশ্রয় প্রার্থনা করছি যার মধ্যে কোন কিছু হস্তক্ষেপ করিতে পারে না”। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই প্রবীণ শায়েখ কে? বলা হলো, আবু দারদা [রাঃআঃ]।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮১. আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র করো বরফ, শিশিরবিন্দু ও ঠাণ্ডা পানি দ্বারা, যেমন অপরিষ্কার কাপড়-চোপড় ময়লা থেকে পবিত্র করা হয়। হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা আসমান-যমীন ও এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে এবং তুমি যা চাও এসব পূর্ণ পরিমাণ”।
[আবু দাউদ] দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮২. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] পর্যাপ্ত পরিমাণে নিম্নোক্ত দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ। আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করো, আখেরাতেও কল্যাণ দান করো এবং দোযখের শান্তি থেকে আমাদের রক্ষা করো”। আনাস [রাঃআঃ]-ও এই দোয়া পড়তেন কিন্তু তা নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে সংশ্লিষ্ট করিতেন না
[বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসায়ী,আহমাদ]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি দারিদ্র্য, দৈন্যদশা ও লাঞ্ছনা থেকে। আমি তোমার নিকট আরো আশ্রয় প্রার্থনা করি নির্যাতন করা ও নিযাতিত হওয়া থেকে”। [আবু দাউদ,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ,হাকিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮৪. আবু উমামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি অনেক দোয়া করিলেন। কিন্তু আমরা তা স্মরণ রাখতে পারিনি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি অনেক দোয়া করিয়াছেন কিন্তু আমরা তার কিছুই স্মরণ রাখতে পারিনি। তিনি বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিবো নাসায়ী, যা সেই সমস্ত দোয়ার সমষ্টি হইবে? তোমরা বলো, “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার নিকট সেই কল্যাণ কামনা করি, যা তোমার নাবী মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তোমার নিকট কামনা করিয়াছেন এবং আমরা তোমার নিকট সেই অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি যে অনিষ্ট থেকে তোমার নাবী মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আশ্রয় প্রার্থনা করিয়াছেন। তুমিই একমাত্র সাহায্যকারী এবং তুমিই কল্যাণে পৌঁছে দাও। আল্লাহ ভিন্ন ক্ষতি রোধ করার এবং কল্যাণ পৌছানোর আর কোন শক্তি নাই”। অথবা তিনি অনুরূপ কথা বলেছেন
[তিরমিজী,তাবারানি]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬৮৫. আমর ইবনি শুআইৰ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি মাসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে এবং তোমার নিকট আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি দোযখ থেকে”।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৬৮৬. সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলিতেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে রিযিক দান করেছে তাতে সন্তুষ্ট থাকার তৌফিক দাও, আমাকে তাতে বরকত দাও এবং প্রতিটি অদৃশ্য বিষয়ে কল্যাণ সহকারে আমার হেফাযত করো”।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৬৮৭, আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] প্রচুর পরিমাণে এই দোয়া পড়তেনঃ “আমাদের প্রভু! তুমি
আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করো এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করো”।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮৮. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বেশী পরিমাণে বলিতেনঃ “হে আল্লাহ, হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অবিচল রাখো”
[তিরমিজী,আহমাদ, হাকিম,ইবনি হিব্বান]। দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৮৯
আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এরূপ দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা—আসমান ও যমীন পরিপূর্ণ এবং এরপর তুমি যা চাও তা পরিপূর্ণ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র করো শিশির বিন্দু, বরফ ও শীতল পানি দ্বারা। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করো গুনাহ থেকে, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিচ্ছন্ন করা হয়” [মুসলিম,তিরমিজী,নাসায়ী,আহমাদ, আবু আওয়ানা,ইবনি হিব্বান]।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৯০
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দোয়াসমূহের মধ্যে এই দোয়াও ছিলঃ “হে আল্লাহ। আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি তোমার দেয়া নিয়ামতরাজি বিলুপ্ত হওয়া থেকে, তোমার দেয়া শান্তি ও নিরাপত্তা অন্তৰ্হিত হওয়া থেকে, তোমার আকস্মিক প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে এবং তোমার সার্বিক অসন্তুষ্টি থেকে”।[আবু দাউদ,মুসলিম,নাসায়ী,আবু আওয়া নাসায়ী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৯. অনুচ্ছেদঃ ঝড়-বৃষ্টির সময় দেয়া করা।
৬৯১
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আকাশে মেঘমালা দেখলে তার কাজকর্ম ত্যাগ করিতেন, এমনকি তিনি নামাযে রত থাকলে তাও। অতঃপর তিনি মেঘমালার দিকে তাকাতেন। আল্লাহ মেঘমালা দূর করলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিতেন। আর মেঘ বৃষ্টি বর্ষণ করলে তিনি বলিতেনঃ “হে আল্লাহ মুষলধারে কল্যাণকর বৃষ্টি দাও”। [বোখারী,আবু দাউদ,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯০. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু কামনা করে দোয়া করা নিষেধ।
৬৯২
কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি অসুস্থ বাবা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট গেলাম। তিনি তার শরীরে গরম লোহার সাতটি সেঁক দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যদি মৃত্যু কামনা করিতে আমাদেরকে নিষেধ না করিতেন, তবে আমি অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম।[বোখারী, মুসলিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯১. অনুচ্ছেদঃ মহানাবী [সাঃআঃ]-এর দোয়াসমূহ।
৬৯৩
আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এই দোয়া পড়তেনঃ “হে প্ৰভু! আমার গুনাহ, অজ্ঞতা, আমার প্রতিটি কাজে আমার বাড়াবাড়ি এবং আমার চাইতে তুমিই আমার যে অপরাধসমূহ সম্পর্কে অধিক অবগত সেগুলি ক্ষমা করো। হে আল্লাহ। অামার প্রতিটি গুনাহ, ইচ্ছাকৃত গুনাহ, অজ্ঞতা প্রসূত গুনাহ, ঠাট্টাচ্ছলে কৃত গুনাহ এবং আমার মধ্যকার সার্বিক গুনাহ ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমার পূর্বাপর গোপন-প্রকাশ্য সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও। তুমিই অগ্রসরকারী, তুমিই বিলম্বকারী এবং তুমি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান”। [বোখারী, মুসলিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৪
আবু মূসা আশআরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমায় ক্ষমা করো আমার গুনাহসমূহ, আমার মূর্খতা, আমার কাজকর্মে আমার বাড়াবাড়ি এবং তুমি আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক অবগত। হে আল্লাহ! আমায় ক্ষমা করো আমার ঠাট্টাচ্ছলে কৃত গুনাহ, বাস্তবে কৃত গুনাহ, আমার সকল গুনাহ, আমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ এবং আমার মধ্যকার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও”। [আবু দাউদ,নাসায়ী,আহমাদ, ইবনি খুজাইমাহ,হাকিম,ইবনি হিব্বান]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৫
মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আমার হাত ধরে বললেনঃ হে মুআয! আমি বললাম, আমি আপনার নিকট হাযির। তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাকে কয়েকটি কালেমা শিখিয়ে দিবো না যা তুমি তোমার প্রত্যেক নামাযের পর বলবে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করো তোমার যিকির করিতে, তোমার প্রত কৃতজ্ঞ হইতে এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করিতে”। [আবু দাউদ,নাসায়ী,তাবারানি]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৬
আবু আইউব আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে বললো, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর পর্যাপ্ত প্রশংসা পবিত্রতাপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ”। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ এই শব্দগুলি কার? সে নীরব থাকলো। সে মনে করলো যে, সে নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে তাহাঁর অমনোপূত কথা বলেছে। তিনি পুনরায় বলেনঃ কে সে? সে তো যথার্থই বলেছে। এক ব্যক্তি বললো, আমি, এর দ্বারা আমি কল্যাণই আশা করছি। তিনি বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি লক্ষ্য করেছি যে, তেরোজন ফেরেশতা এই শব্দগুলো মহামহিম আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করছে।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৬৯৭
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] পায়খানায় প্রবেশের সময় বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নিকৃষ্ট [নারী ও পুরুষ] জিনের [অনিষ্ট] থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। -[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৮
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পায়খানা থেকে বের হবার সময় বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার নিকট ক্ষমা চাই”। [আবু দাউদ,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ,আহমাদ, দার,ইবনি খুজাইমাহ,ইবনি হিব্বান]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৯
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] যেভাবে আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন তদ্রুপ [গুরুত্ব সহকারে] আমাদেরকে এই দোয়াও শিক্ষা দিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি কবরের আযাব থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি মাসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি কবরের ভয়াবহ সংকট থেকে তোমার আশ্রয় চাই”। [মুসলিম,তিরমিজী,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ,মা,আহমাদ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০০
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনা [রাঃআঃ]-র ঘরে রাত কাটালাম। নাবী [সাঃআঃ] উঠে নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধা করেন, তারপর নিজের হাত-মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পুনরায় উঠে তিনি পানির মশকের কাছে গিয়ে তার বন্ধন খুলেন। তারপর মোটামুটি উযু করিলেন, তবে অতিরিক্ত কিছু না করলেও তিনি পূর্ণাঙ্গ উযু করিলেন। তারপর দাঁড়িয়ে নামায শুরু করিলেন। আমি জেগে গা মোড়ামুড়ি দিলাম। কারণ আমি যে তাহাঁর কার্যক্রম দেখেছি তা তিনি টের পান এটা আমি পছন্দ করিনি। এরপর আমি উযু করলাম। তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। আমি তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে ঘুরিয়ে তার ডানপাশে আনলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এই রাতের [তাহাজ্জুদ] নামায তেরো রাকআত পূর্ণ হলো। তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং নাক ডাকতে লাগলেন। তিনি ঘুমালে তাহাঁর নাক ডাকতো। বিলাল [রাঃআঃ] এসে নামাযের কথা বলিলেন। তিনি উঠে পুনরায় উযু না করেই ফজরের [সুন্নাত] নামায পড়লেন। [এ রাতে] তার দোয়ার মধ্যে ছিলঃ “হে আল্লাহ! আমার কলবে নুর পয়দা করুন, আমার দৃষ্টিতে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডান দিকে নূর, আমার বাম দিকে নূর, আমার উপরে নূর, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর এবং বিরাট নূর দান করুন”। ‘রাবী ইয়াকুব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আরও সাতটি বিষয় যা আমার অন্তরে রহিয়াছে। সালামা ইবনি কুহায়ল [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এরপর আমি আব্বাস পরিবারের একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি ঐ বিষয়গুলো আমাকে বর্ণনা করিলেন। আমার শিরায় আমার গোশতে, আমার রক্তে, আমার পশমে এবং আমার ত্বকে—- আরও দু’টি বিষয় বলিলেন। [বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০১
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] রাতে ঘুম থেকে উঠলে নামায পড়তেন এবং নামাযান্তে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করিতেন। অতঃপর তাহাঁর কথার শেষ অংশ এরূপ হতোঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরে নূর দান করো, আমার কানে নূর দান করো, আমার চোখে নূর দান করো, আমার সামনে নূর দান করো, আমার পিছনে নূর দান করো এবং আমার নূর বাড়িয়ে দাও, আমার নূর বাড়িয়ে দাও, আমার নূর বাড়িয়ে দাও”। [বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসায়ী,ইবনি মাজাহ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০২
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাঝরাতে যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা, আপনিই আসমানসমূহ ও জমিনের এবং এতোদুভয়ের মধ্যকার সকলের রক্ষক। আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। আপনি আসমানসমূহ ও যমীনের এবং এতোদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রহিয়াছে সে সবের রব। আপনিই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার সাক্ষাত অবধারিত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি। আপনারই উপর ভরসা করেছি, আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি। আপনার জন্য যুক্তি-তর্কে লিপ্ত হয়েছি, আপনার কাছে ফয়সালা চেয়েছি। অতএব আমার পূর্বাপর এবং গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ ক্ষমা করুন। আপনি আমার ইলাহ! আপনি ব্যতীত আমার কোন ইলাহ নেই”। [বোখারী, মুসলিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০৩
ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি আমার দ্বীন ও আমার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা। তুমি আমার দোষ গোপন রাখো, আমার ভীত অবস্থায় আমাকে নিরাপত্তা দান করো এবং আমাকে সামনে-পিছনে, ডানে-বামে ও উপরের দিক থেকে হেফাযত করো। আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিচের দিকে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে”। [আবু দাউদ,ইবনি মাজাহ,বাযযার]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০৪
উবাইদ ইবনি রিফাআ আয-যুরাকী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন যখন মুশরিকরা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে চলে গেলো তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা সারিবদ্ধভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াও, যাতে আমি আমার মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের প্রশংসা করিতে পারি। অতএব সাহাবীগণ তাহাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকলেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা। হে আল্লাহ! তুমি যা সম্প্রসারিত করো তা কেউ সংকুচিত করিতে পারে নাসায়ী, তুমি যাকে দূরে ঠেলে দাও তাকে কেউ কাছে আনতে পারে নাসায়ী, তুমি যাকে কাছে টেনে নাও তাকে কেউ দূরে ঠেলে দিতে পারে নাসায়ী, তুমি যাকে না দাও তাকে কেউ দিতে পারে না এবং তুমি যাকে দান করো তাকে কেউ আটকে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের উপর তোমার বরকত, তোমার রহমাত, তোমার অনুগ্রহ এবং তোমার দেয়া রিফিক প্রসারিত করো। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট স্থায়ী নিয়ামত প্রার্থনা করি যা পরিবর্তন বা বিলীন হয় না। হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট দুঃখের দিনে তোমার নিয়ামত ও যুদ্ধের দিনে তোমার নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা দান করেছে তার অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমি যা আমাকে দান করোনি তার অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় বানাও, আমাদের অন্তরকে সৌন্দর্যময় করো এবং কুফর, পাপাচার ও বিদ্রোহকে আমাদের নিকট ঘৃণিত বানাও। তুমি আমাদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুসলমানরূপে মৃত্যু দান করো, মুসলমানরূপে জীবিত রাখো এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে মিলিত করো, অপমানিত ও বিপর্যস্তরূপে নয়। হে আল্লাহ! তুমি কাফেরদের ধ্বংস করো, যারা তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তোমার ক্রোধ ও আযাব তাহাদের উপর অবতীর্ণ করো। হে আল্লাহ! কিতাবপ্রাপ্ত কাফেরদের ধ্বংস করো। হে সত্য ইলাহ”। [নাসায়ী,হাকিম,ইবনি হিব্বান]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯২. অনুচ্ছেদঃ বিপদাপদের সময় দেয়া করা।
৭০৫
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] কঠিন বিপদের সময় দোয়া করিতেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি রব্বুল আরশিল আযীম” [আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি অতি মহান, অতি সহনশীল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীনের রব এবং মহান আরশের মালিক”]। [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী,ইবনি মাজাহ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসায়ী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০৬
আবদুর রহমান ইবনি আবু বাকরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবদুর রহমান ইবনি আবু বাকরা [রাহিমাহুল্লাহ] তার পিতাকে বলেন, হে পিতা! আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে এই দোয়া করিতে শুনিঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার শরীর নিরাপদ রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমার কান নিরাপদ রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমার চোখ নিরাপদ রাখো। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। আপনি বিকালে উপনীত হয়ে তিনবার এবং সকালে উপনীত হয়ে তিনবার তা পড়েন। আপনি আরো বলেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর ও দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। আপনি বিকালে উপনীত হয়ে এগুলো তিনবার এবং সকালে উপনীত হয়ে তিনবার পড়েন। তিনি বলেন, হাঁ, হে বৎস! আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এই দোয়াগুলি বলিতে শুনিয়াছি এবং আমি তাহাঁর সুন্নাত অনুসরণ করিতে ভালোবাসি। তিনি আরো বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিপদগ্ৰস্ত লোকের দোয়া হলোঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমাতের আশা করি। অতএব তুমি মুহুর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর সোপর্দ করো না এবং আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। [আবু দাউদ,আহমাদ, বাযযার, তাবারানি, নাসায়ী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭০৭
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বিপদকালে বলিতেনঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, যিনি মহান ও পরম সহিষ্ণু। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই যিনি মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই যিনি আকাশমণ্ডলীর প্রভু, পৃথিবীর প্রভু এবং সম্মানিত আরশের প্রতিপালক। হে আল্লাহ! তুমি এর অনিষ্ট দূর করে দাও”। [বোখারী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৩. অনুচ্ছেদঃ ইস্তিখারার দোয়া।
৭০৮
জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে যেমন কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, তেমনি সকল ব্যাপারে আমাদেরকে ইস্তিখারা করা শিক্ষা দিতেন। কেউ কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করলে সে যেন দুই রাকআত নামায পড়ে এবং তারপর বলেঃ “আল্লাহুম্মা ইনী আসতাখীরুকা বিইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আযম। ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু ওয়া তালামু ওয়ালা আলামু ওয়া আনতা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তালামু আন্না হাযাল আমরা খাইরুল্লী কী দীনী ওয়া মাআশী ওয়া আকিবাতি আমরা আও ফী আজেলে আমরী ওয়া আজেলিহী ফাকদুরহু লী। ওয়াইন কুনতা তালামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাআশী ওয়া আকিবাতি আমরা আও ফী আজেলে আমরী ওয়া আজেলিহী ফাসরেফহু আন্নী ওয়াসরিফনী আনহু ওয়াকদুর লিয়াল খাইরা হাইছু কানা সুম্মা রাদ্দিনী বিহী “[হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্যে তোমার কাছে কল্যাণ কামনা করছি। আমি তোমার শক্তির সাহায্যে শক্তি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ কামনা করছি। কেননা তুমিই ক্ষমতাবান এবং আমি অক্ষম। তুমি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং তুমি অদৃশ্য বিষয় সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দীন, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে এবং আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য কল্যাণকর হলে তুমি তা আমার জন্য নিধারিত করে দাও। আর যদি তোমার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দীন, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে অথবা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে তুমি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখো। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করো এবং আমাকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দাও”। আর [আমার এ কাজ এর স্থলে] নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করিবে। [বোখারী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭০৯
জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই মসজিদে অর্থাৎ মসজিদুল ফাতহ [বিজয়ের মসজিদ]-এ সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার দোয়া করিলেন এবং বুধবার নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে তাহাঁর দোয়া কবুল হলো। জাবের [রাঃআঃ] বলেন, যখনই আমার কোন গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ উপস্থিত হয়েছে তখনই আমি উক্ত সময়ে প্রার্থনার ইচ্ছা করেছি এবং বুধবার এই সময়ে দোয়া করেছি এবং তা যে কবুল হয়েছে তাও বুঝতে পেরেছি। [আবু দাউদ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭১০
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার দোয়ায় বললো, “হে আসমানসমূহের সৃষ্টিকর্তা, হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি”। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সে কোন্ নামে [আল্লাহকে ডেকে] দোয়া করছে তা কি তোমরা জানো? সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহর কাছে তাহাঁর এমন নামের উসীলায় দোয়া করেছে যে, সেই নামে কেউ তাকে ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। [আবু দাউদ,তিরমিজী,আহমাদ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭১১
আবু বাকর সিদ্দীক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলেন, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা আমি আমার নামাযে পড়তে পারি। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি এ দোয়া পড়বেঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাছীরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফির লী মিন ইনদিকা মাগফিরাতান ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম”[হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নাই। অতএব তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাকারী অতি দয়ালু]। [বোখারী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৪. অনুচ্ছেদঃ কারো শাসকের যুলুমের ভয় হলে।
৭১২
আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তোমাদের কেউ নিজের উপর তাহাদের শাসকের স্বৈরাচার বা অত্যাচারের আশংকা করলে সে যেন বলেঃ “হে আল্লাহ, সাত আসমানের প্রতিপালক, মহান আরশের অধিপতি! তুমি আমার প্রতিবেশী হও তোমার সৃষ্টিকুলের মধ্যকার অমুকের পুত্র অমুকের বিরুদ্ধে এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে, যাতে তাহাদের কেউ আমার প্রতি বাড়াবাড়ি বা অবিচার করিতে না পারে। তোমার প্রতিবেশী মহিমান্বিত, তোমার প্রশংসা মহিমামণ্ডিত এবং তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই”।[তাবারানি, বাযযার]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭১৩
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তুমি যদি স্বৈরাচারী শাসকের নিকট আসো যার কঠোরতায় তুমি শংকিত, তবে তুমি তিনবার বলবেঃ “আল্লাহ মহান, আল্লাহ তাহাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান। আমি যার ভয়ে ভীত ও শংকিত আল্লাহ তার চেয়েও অধিক সম্মানিত। আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যিনি সাত আসমানকে তার নির্দেশ ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া থেকে সুস্থির রেখেছেন, তাহাঁর অমুক বান্দার, জিন ও মানুষের মধ্য থেকে তার বাহিনী, তার অনুসারী দলবল থেকে। হে আল্লাহ! তাহাদের অনিষ্টের মোকাবিলায় তুমি আমার প্রতিবেশী হও। তোমার প্রশংসা মহিমান্বিত, তোমার প্রতিবেশী মহিমান্বিত, তোমার নাম বরকতপূর্ণ এবং তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। [ তাবারানি, ইবনু আবু শায়বাহ, ইবনু খুযাইমাহ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭১৪
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
কোন ব্যক্তি দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা বা বিপদে পতিত হলে অথবা শাসকের অত্যাচারের ভয়ে শংকিত হলে সে যেন নিম্নোক্ত বাক্যে দোয়া করে, তার দোয়া কবুল হবেঃ “আমি তোমার নিকট এই উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তুমি সাত আসমান ও মহান আরশের প্রভু। আমি তোমার নিকট এই উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তুমিই সাত আসমান ও মহিমান্বিত আরশের প্রভু! আমি তোমার নিকট এই উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং সাত আসমান, সাত যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে তুমিই সেগুলোর রব। তুমিই সর্বশক্তিমান”। অতঃপর তুমি আল্লাহর কাছে তোমার প্রয়োজন পেশ করো।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৫. অনুচ্ছেদঃ দোয়াকারীর জন্য যে সওয়াব ও প্রতিদান সঞ্চিত করা হয়।
৭১৫
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে কোন মুসলমান ব্যক্তি পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ব্যতীত যে কোন দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি দান করেনঃ [১] হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা [২] তা তার পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা [৩] অনুরূপ কোন ক্ষতি তার থেকে অপসারিত করেন। এক ব্যক্তি বললো, তাহলে সে তো অধিক পরিমাণে দোয়া করিতে পারে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চেয়েও অধিক কবুলকারী। [তিরমিজী,আহমাদ, হাকিম, তহাকিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭১৬
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি মাত্রই আল্লাহর দিকে মুখ করে তার কাছে কিছু প্রার্থনা করলে এবং [ফল লাভে] তাড়াহুড়া না করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন। হয় তা তিনি তাকে দুনিয়াতে অবিলম্বে দান করেন অথবা তার আখেরাতের জীবনের জন্য তা সঞ্চিত রাখেন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! তার তাড়াহুড়া কিরূপ? তিনি বলেনঃ সে বলে, আমি তো দোয়ার পর দোয়া করিতে থাকলাম, কিন্তু তা কবুল হইতে দেখছি না। [বোখারী, মুসলিম, আহমাদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান, আবু আওয়ানা, নাসায়ী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬. অনুচ্ছেদঃ দোয়ার ফযীলাত।
৭১৭
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার কাছে দোয়ার চাইতে অধিক সম্মানিত কিছু নাই। [বোখারী,তিরমিজী,আহমাদ, ইবনি মাজাহ,হাকিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭১৮
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দোয়া হলো সবাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭১৯
নোমান ইবনি বাশীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দোয়াও একটি ইবাদত। তারপর তিনি পড়লেনঃ [তোমাদের রব বলেন], “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো” [৪০ : ৬০]। [তিরমিজী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭২০
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ইবাদত সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ মানুষের নিজের জন্য কৃত দোয়া। [হাকিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭২১
মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি আবু বাকর সিদ্দীক [রাঃআঃ]-এর সাথে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম। তিনি বলেনঃ হে আবু বাকর! নিশ্চয় শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবু বাকর [রাঃআঃ] বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিবো নাসায়ী, তুমি যা বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই”। [ইবনুস সুনী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭. অনুচ্ছেদঃ প্রবল বায়ু প্রবাহের সময় দোয়া করা।
৭২২
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি যে কল্যাণসহ তা পাঠিয়েছে, তা লাভের জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করি এবং যে অনিষ্টসহ তা পাঠিয়েছে সেই অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই”। [আবু ইয়ালা, ইবনুস সুন্নী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭২৩
সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
জোরে হাওয়া প্রবাহিত হলে মহানাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ফলবতী করো, বন্ধ্যা করো না। [তাবারানি, সুন্নী]।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮. অনুচ্ছেদঃ তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।
৭২৪
উবাই ইবনি কাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা বায়ুকে গালি দিও না। তোমরা তাতে অপছন্দনীয় কিছু দেখিতে পেলে এই দোয়া পড়বে, “হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে কামনা করি এ বায়ুর কল্যাণ, এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং সে যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে তার কল্যাণ। আমরা তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এ বায়ুর অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যে নিহিত ক্ষতি থেকে এবং সে যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে তার অকল্যাণ থেকে”। [তিরমিজী, হাকিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭২৫
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বায়ু হলো আল্লাহর রহমাতের অংশ। তা রহমাত ও শাস্তি বয়ে আনে। অতএব তোমরা তাকে গালি দিও না। বরং তোমরা আল্লাহর কাছে তার মধ্যে নিহিত কল্যাণ প্রার্থনা করো এবং তার ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও [আবু দাউদ,ইবনি মাজাহ,নাসায়ী,হাকিম,ইবনি হিব্বান,আবু আওয়া নাসায়ী]।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯. অনুচ্ছেদঃ বজ্রধ্বনির সময় দোয়া করা।
৭২৬
সালেম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন শুনলে বলিতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার বজ্রপাত দ্বারা আমাদের হত্যা করো নাসায়ী, তোমার আযাব দ্বারা আমাদেরকে ধ্বংস করো না এবং তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দাও”। [তিরমিজী,নাসায়ী,আহমাদ, হাকিম,ইলা]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০০. অনুচ্ছেদঃ কেউ বজ্রধ্বনি শুনলে।
৭২৭
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বজ্রধ্বনি শুনতে পেলে বলিতেনঃ “মহাপবিত্র সেই সত্তা বজ্রধ্বনি যাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করলো”। তিনি বলেন, বজ্রধ্বনিকারী হলেন একজন ফেরেশতা। তিনি মেঘমালাকে হাঁকিয়ে নিয়ে যান, যেমন রাখাল তার মেষপালকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায়।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭২৮
আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
বজ্রধ্বনি শুনতে পেলে আলাপ-আলোচনা বন্ধ করে দিয়ে বলিতেনঃ “মহাপবিত্র সেই সত্তা বজ্রধ্বনি যাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাকুল যার ভয়ে শংকিত” [সূরা রাদ : ১৩]। অতঃপর তিনি বলিতেন, এটা হলো জগতবাসীর জন্য চরম ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি। -[মুয়াত্তা মালিক]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করে।
৭২৯
আওসাত ইবনি ইসমাঈল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আবু বাকর সিদ্দীক [রাঃআঃ]-কে নাবী [সাঃআঃ]-এর ইনতিকালের পর বলিতে শুনিয়াছি, নাবী [সাঃআঃ] হিজরতের প্রথম বছর আমার এই স্থানে দাঁড়ালেন। এ কথা বলে আবু বাকর [রাঃআঃ] কাঁদলেন, অতঃপর বলেন, তোমরা অবশ্যই সত্যকে আকড়ে থাকিবে। কেননা তা পুণ্যের সাথী এবং এই দু’টি জান্নাতে যাবে। তোমরা অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করিবে। কেননা তা পাপের সাথী এবং এই দু’টি দোযখে যাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করো। কেননা নিরাপত্তা হচ্ছে ঈমানের পর সর্বাধিক কল্যাণবাহী! তোমরা সম্পর্কচ্ছেদ করো নাসায়ী, একে অপরের পিছনে দুর্নাম করো নাসায়ী, পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও। [তিরমিজী,ইবনি মাজাহ,আহমাদ, তহাকিম,ইবনি হিব্বান]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৩০
মুআয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে তখন বলছিল, “হে আল্লাহ! আমি তোমার সমস্ত নিয়ামত কামনা করি”। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি জানো, সমস্ত নিয়ামত কি? সে বললো, পূর্ণ নিয়ামত হচ্ছে বেহেশতে প্রবেশ লাভ এবং দোযখ থেকে মুক্তি লাভ। অতঃপর তিনি আরেক ব্যক্তির নিকট দিয়ে গেলেন। সে বলছিলো, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ধৈর্য প্রার্থনা করি”। তিনি বলেনঃ তুমি আমার প্রভুর কাছে বিপদ কামনা করলে। অতএব তুমি তার কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। তিনি আরেক ব্যক্তির নিকট দিয়ে গেলেন। সে বলছিল, “হে গৌরব ও মহত্বের অধিকারী”। তিনি বলেনঃ তুমি এখনই তার কাছে কিছু প্রার্থনা করো। [তিরমিজী,আহমাদ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭৩১
আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করিতে পারি। তিনি বলেনঃ আপনি আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করুন। কিছু দিন গত হওয়ার পর আমি আবার গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিতে পারি। তিনি আমাকে বলেনঃ হে আব্বাস, হে আল্লাহর রাসূলের চাচা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করুন। [তিরমিজী,তাবারানি]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বিপদ কামনা করে দোয়া করা অপছন্দ করে।
৭৩২
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর উপস্থিতিতে বললো, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সম্পদ দান করোনি যে, আমি তা দান-খয়রাত করবো। অতএব তুমি আমাকে এমন বিপদে নিক্ষেপ করো যাতে সওয়াব হইবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা তোমার সামর্থ্যের বাইরে। তুমি বলো না কেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করো, আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং আমাদের দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো”।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৭৩৩
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে দেখিতে গেলেন। সে রোগ যাতনায় পালকছিন্ন মুরগীর বাচ্চাবৎ হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করো। সে বললো, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আখেরাতে যে শাস্তি দিবে তা এই দুনিয়াতে দাও। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলোঃ সুবহানাল্লাহ! তুমি তা সহ্য করিতে পারবে না বা তা সহ্য করার সামর্থ্য তোমাদের নাই। তুমি কেন বলো নাসায়ী, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করো, আখেরাতের
কল্যাণ দান করো এবং দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো”। অতঃপর তিনি তার জন্য দোয়া করিলেন এবং আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করিলেন। -[মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ, তাহাবী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কঠিন বিপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
৭৩৪
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
কোন ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট বিপদের কষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, অতঃপর ক্ষান্ত দেয়। সে উক্তরূপ বললে অবশ্যই যেন আরো বলে, তবে যে বিপদে উন্নতি নিহিত আছে তা ব্যতীত।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৩৫
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কঠিন বিপদ, ধ্বংসের মুখোমুখি হওয়া, শক্রর বিদ্বেষজাত আনন্দ ও দুর্ভাগ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন। -[বোখারী, মুসলিম]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৪. অনুচ্ছেদঃ অসন্তোষের সময় যে ব্যক্তি কারো কথার পুনরাবৃত্তি করে।
৭৩৬
আবু নাওফাল ইবনি আবু আকরাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তার পিতা নাবী [সাঃআঃ]-কে রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ তুমি প্রতি মাসে একদিন রোযা রাখো। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বলেনঃ আমাকে বাড়িয়ে দিন, আমাকে বাড়িয়ে দিন। যাও, মাসে দুই দিন রোযা রাখো। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন। কেননা আমার সামর্থ্য আছে। তিনি বলেনঃ আমার শক্তি আছে, আমার শক্তি আছে। তিনি আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন, শেষে ভাবলাম যে, তিনি বুঝি আমাকে আর অধিক রোযা রাখার অনুমতি দিবেন না। অতঃপর তিনি বলেনঃ তুমি প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখো। [নাসায়ী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৫. অনুচ্ছেদঃ [গীবতের দুর্গন্ধময় বায়ু]।
৭৩৭
জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তখন দুৰ্গন্ধময় দুষিত বায়ু প্রবাহিত হলে তিনি বলেনঃ তোমরা জানো, তা কি? এটা হলো মুমিন লোকদের গীবতকারীদের বায়ু। [আবু দাউদ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭৩৮
জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে দুৰ্গন্ধযুক্ত বায়ু উত্থিত হলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মোনাফিকদের মধ্যে কতক লোক মুমিনদের মধ্যকার কতক লোকের গীবত করেছে। তাই এই বায়ু প্রবাহিত হয়েছে। -[আহমাদ, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসায়ী]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৭৩৯
ইবনি উম্মে আবদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
কারো উপস্থিতিতে কোন মুমিন ব্যক্তির গীবত করা হলে এবং সে তার অনুপস্থিত মুমিনের সাহায্য করলে আল্লাহ তাকে এজন্য দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন। কারো উপস্থিতিতে কোন মুমিন ব্যক্তির গীবত করা হলে এবং সে তার সাহায্য না করলে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে এর মন্দ ফল [শাস্তি] ভোগ করবেন। মুমিন ব্যক্তির গীবতের চেয়ে মন্দ গ্রাস আর কেউ গ্রহণ করে না। সে যদি তার সম্পর্কে তার জ্ঞাত কথাই বলে তবে সে তার গীবতই করলো। আর সে যদি এমন কথা বলে যা সে জ্ঞাত নয়, তবে সে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটালো।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৬. অনুচ্ছেদঃ গীবত। আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ “তোমাদের কেউ যেন অপরের গীবত না করে” [৪৯ : ১২]।
৭৪০
জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তিনি দুইটি কবরের নিকট পৌঁছলেন। কবরবাসীদ্বয়কে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তিনি বলেনঃ এই ব্যক্তিদ্বয়কে কোন গুরুতর অপরাধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। হাঁ, তাহাদের একজন মানুষের গীবত করতো এবং অপরজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতো না। তিনি তাজা একটি খেজুর শাখা বা দুইটি খেজুর শাখা আনতে বলিলেন। তিনি তা দুই টুকরা করে ভাংলেন, অতঃপর
তা দুই কবরের উপর গেড়ে দিতে নির্দেশ দিলেন এবং বললেনঃ যতক্ষণ এই ডাল দুইটি তাজা থাকিবে অথবা শুকিয়ে না যাবে, ততক্ষণ এদের হাল্কা শাস্তি হইবে। -[আহমাদ, তাবারানি]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৪১
কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমর ইবনুল আস [রাঃআঃ] তার কতক সঙ্গীসহ সফর করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ যদি তা পেট পুরে আহারও করে তবুও সেটা তার কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৭. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির গীবত।
৭৪২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
মায়েয ইবনি মালেক আল-আসলামী এসে চতুর্থবার [যেনার অপরাধের] স্বীকারোক্তি করলে, নাবী [সাঃআঃ] তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার নির্দেশ দেন। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কতক সহচরসহ তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করিলেন। তাহাদের মধ্যকার একজন বললো, এই বিশ্বাসঘাতক কয়েকবারই নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এলো এবং প্রতিবারই তিনি তাকে ফিরে যেতে বলেন। পরে তাকে কুকুরের ন্যায় হত্যা করা হলো। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের কথায় কোন মন্তব্য না করে নীরব থাকলেন, শেষে একটি মৃত গাধার নিকট এসে উপনীত হলেন, যার পাগুলো উপরের দিকে উত্থিত ছিল। তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জনে এটা থেকে খাও। তারা উভয়ে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! মরা গাধার গোশত? তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জনে এইমাত্র তোমাদের ভাইয়ের যে মানহানি করেছো তা এর তুলনায় অধিক গৰ্হিত। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! সে এখন বেহেশতের ঝর্ণাসমূহের মধ্যকার একটি ঝর্ণায় আনন্দে সাতার কাটছে। [আবু দাউদ, নাসায়ী, বোখারীর তারীখ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৮. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পিতার সাথে উপস্থিত পুত্রের মাথায় হাত বুলায় এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করে।
৭৪৩
উবাদা ইবনুস সামিত [রাঃআঃ]-এর পৌত্র উবাদা ইবনুল ওয়ালীদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আমার পিতার সাথে বের হলাম। আমি তখন এক যুবা পুরুষ। আমরা এক প্রবীণ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করলাম। তার পরনে ছিল একটি কারুকার্য খচিত চাদর ও একটি কম্বল এবং তার গোলামের পরনেও ছিল অনুরূপ একখানা কারুকার্য খচিত চাদর ও একটি কম্বল। আমি বললাম, চাচাজান! আপনি তো আপনার কম্বলখানা আপনার গোলামকে দিয়ে তার এই চাদরখানাসহ দু’খানা চাদর পরতে পারতেন এবং তার পরনেও থাকতো কম্বল। এমনটি করিতে আপনাকে কিসে বাধা দিলো? তিনি আমার পিতার মুখোমুখি হয়ে বলেন, এ বুঝি তোমার পুত্র? তিনি বলেন, হাঁ। তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আল্লাহ তোমাকে তার মাধ্যমে বরকত দান করুন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা যা আহার করিবে, তাহাদেরকেও তাই আহার করাবে এবং তোমরা যা পরবে তাহাদেরকেও তাই পরাবে। হে ভাতিজা! দুনিয়ার সামগ্ৰী যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে তা আখেরাতের সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। আমি বললাম, আব্বাজান! ইনি কে? তিনি বলেন, আবুল য়ুসর কাব ইবনি আমর [রাঃআঃ]। -[মুসলিম, ইবনি মাজাহ]
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানদের খাদ্য-পানীয় ও তৈজসপত্র বিনা অনুমতিতে পরস্পরের ব্যবহার।
৭৪৪
মুহাম্মাদ ইবনি যিয়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আগেকার মহান ব্যক্তিদের [সাহাবীগণের] সাক্ষাত পেয়েছি। তারা একই বাড়িতে বেশ কয়েক পরিবার বাস করিতেন। কখনো এমনও হতো যে, তাহাদের কোন পরিবারে মেহমান এসেছে এবং অপর পরিবারের চুলায় খাবার রান্না হচ্ছে। যে ঘরে মেহমান এসেছে সেই ঘরের মালিক তার মেহামানের জন্য চুলার উপর বসানো সেই খাবার নিয়ে যেতো। আর খাদ্যের মালিক পরিবার এসে দেখতো যে, তার রান্না করা খাদ্য পাতিলসহ উধাও। সে বলতো, পাতিল কে নিয়ে গেলো? মেহমান আপ্যায়নকারীগণ বলতো, আমরা আমাদের মেহমানের জন্য তা নিয়েছি। তখন পাতিল ভর্তি খাদ্যের মালিক বলতো, আল্লাহ তাতে তোমাদের বরকত দান করুন। রাবী বাকিয়্যা [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি যিয়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, সদ্য প্রস্তুত রুটির ব্যাপারেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতো। এই দুই পরিবারের মাঝখানে একটি নল-খাগড়ার বেড়া ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। বাকিয়্যা [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনি যিয়াদ ও তার সাথীদের মধ্যেও এমন অবস্থা লক্ষ্য করেছি।
দরুদ শরীফ ও দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply