ত্বওয়াফে কুদূম , অতঃপর সাঈ ও ইহরাম খুলার বর্ণনা
হাজীদের জন্য ত্বওয়াফে কুদূম , অতঃপর সাঈ মুস্তাহাব >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২৮. অধ্যায়ঃ হাজীদের জন্য ত্বওয়াফে কুদূম, অতঃপর সাঈ মুস্তাহাব
২৯. অধ্যায়ঃ উমরার উদ্দেশে ইহরামকারীর জন্য ত্বওয়াফের পরে সাঈর পূর্বে ইহরাম খোলা জায়িয নয়, হাজ্জের উদ্দেশে ইহরামকারীও ত্বওয়াফে কুদূমের পর ইহরাম খুলতে পারবে না, ক্বিরান হাজ্জকারীর হুকুমও অনুরূপ
২৮. অধ্যায়ঃ হাজীদের জন্য ত্বওয়াফে কুদূম , অতঃপর সাঈ মুস্তাহাব
২৮৮৭. ওয়াবারাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি ইবনি উমর [রাদি.]-এর নিকট বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট এসে জিজ্ঞেস করিল, আল মাওক্বিফ [আরাফাহ্]-এ যাবার পূর্বে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা আমার জন্য সঠিক হইবে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। সে বলিল, কিন্তু ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, তুমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করো না-যে পর্যন্ত না মাওক্বিফে আসো! ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হজ্জ করিয়াছেন এবং মাওক্বিফে যাবার পূর্বেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিয়াছেন। অতএব তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে বল, তোমার কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কথা মত আমাল করা উচিত, না ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর কথা মত?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬২]
২৮৮৮. ওয়াবারাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি ইবনি উমর [রাদি.]-এর কাছে জিজ্ঞেস করিল, আমি কি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করব অথচ আমি হজ্জের ইহরাম বেঁধেছি? তিনি বলিলেন, কিসে তোমাকে বাধা দিচ্ছে? সে বলিল, আমি অমুকের পুত্রকে দেখেছি, তিনি তা পছন্দ করেন না কিন্তু তার তুলনায় আপনি আমাদের অধিক প্রিয়। আমরা লক্ষ্য করছি যে, এ দুনিয়া তাকে প্রলুব্ধ করেছে। ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যাকে দুনিয়া প্রলুব্ধ করেনি? অতঃপর তিনি বলিলেন, আমরা দেখেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করিয়াছেন। অতএব তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর হুকুম ও তাহাঁর রসুল [সাঃআঃ]-এর সুন্নাত অমুকের সুন্নাতের তুলনায় অনুসরণের বেলায় অগ্রগণ্য।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৩]
২৮৮৯. আম্র ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইবনি উমর [রাদি.]-এর নিকট এক লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, উমরাহ্ করার উদ্দেশে আগমন করেছে, অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছে কিন্তু সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করেনি- সে কি তার স্ত্রীর সাথে মিলতে পারে? ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কাহ্ আগমন করে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, মাক্বামে ইব্রাহীমের পিছনে দু রাকআত নামাজ আদায় করেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করেন। আর তোমাদের জন্য অবশ্যই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৪]
২৮৯০. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৫]
২৯. অধ্যায়ঃ উমরার উদ্দেশে ইহরামকারী র জন্য ত্বওয়াফের পরে সাঈর পূর্বে ইহরাম খোলা জায়িয নয়, হজ্জের উদ্দেশে ইহরামকারীও ত্বওয়াফে কুদূমের পর ইহরাম খুলতে পারবে না, কিরান হজ্জকারীর হুকুমও অনুরূপ
২৮৯১. মুহাম্মাদ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইরাকের অধিবাসী এক ব্যক্তি তাকে বলিল, আমার পক্ষ থেকে আপনি উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে জিজ্ঞেস করুন যে, এক ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাঁধল, সে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের পর ইহরাম খুলতে পারবে কিনা? তিনি যদি আপনাকে বলেন, সে ইহরাম খুলতে পারবে না- তবে তাকে বলুন, এক ব্যক্তি বলেছে, সে ইহরাম খুলতে পারবে। রাবী বলেন, অতএব আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে, সে তা সমাধান না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারবে না। আমি বললাম, কিন্তু এক ব্যক্তি তাই বলেছে। তিনি বলিলেন, সে যা বলছে তা দুঃখজনক।
ইরাকের লোকটি আমার সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ করলে আমি তাকে উপরোক্ত কথা বললাম। সে বলিল, আপনি তাকে বলুন, কিন্তু এক ব্যক্তি বলে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাই করিয়াছেন এবং আসমা [রাদি.] ও যুবায়র [রাদি.] অনুরূপ করিয়াছেন কেন? রাবী বলেন, আমি তার নিকট গিয়ে এ বিষয় তাকে জানাই। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, লোকটি কে? আমি বললাম, জানি না। তিনি বলিলেন, তার কী হয়েছে যে, সে নিজে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করছে না? আমার মনে হয়, সে ইরাকী। আমি বললাম, জানি না। তিনি বলিলেন, সে মিথ্যা বলেছে।
রসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হজ্জ সম্পর্কে আয়িশা [রাদি.] আমাকে অবহিত করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কায় পৌঁছে সর্বপ্রথম যে কাজ করিয়াছেন তা ছিল এই যে, তিনি ওযূ করেন, এরপর বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিয়াছেন, অতঃপর আবু বকর [রাদি.] হজ্জ করিয়াছেন। তিনি [মাক্কায় পৌঁছে] সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিয়াছেন এবং এরপর উমর [রাদি.]-ও অনুরূপ করিয়াছেন। অতঃপর উসমান [রাদি.] হজ্জ করিয়াছেন। আমি তাকে সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিতে দেখেছি এবং এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর মুআবিয়াহ্ [রাদি.] ও আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.]-ও [অনুরূপ করিয়াছেন]। এরপর আমি আমার পিতা যুবায়র ইবনিল আও্ওয়াম [রাদি.]-এর সাথে হজ্জ করেছি। তিনিও সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিয়াছেন। এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর আমি মুহাজির ও আনসারদের অনুরূপ করিতে দেখেছি। এছাড়া তারা অন্য কিছু করেননি।
অতঃপর সর্বশেষে আমি যাকে অনুরূপ করিতে দেখেছি, তিনি হচ্ছেন আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.]। তিনি হজ্জকে উমরাহ্ দ্বারা ভঙ্গ করেননি। আর সে ইবনি উমর [রাদি.] তো তাদের মধ্যে বর্তমান আছে। তারা কেন তাকে জিজ্ঞেস করছে না?
এভাবে যত লোক অতীত হয়েছে, তারা মাক্কায় পা রেখেই সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিতেন। অতঃপর তারা ইহরাম খুলতেন না। আর আমি, আমার মা {আসমা বিনতু আবু বকর [রাদি.]} ও আমার খালা {আয়িশা [রাদি.]}-কেও দেখেছি যে, তারা মাক্কায় পৌঁছে প্রথমেই বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিয়াছেন। এরপরও ইহরাম খুলেননি। আমার মা [আসমা] আমাকে অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি তার বোন [আয়েশাহ], যুবায়র [রাদি.] এবং অমুক অমুক শুধুমাত্র উমরার ইহরাম বেঁধে মাক্কায় এসেছেন এবং তারা [তাওয়াফ ও সাঈর পরে] রুকন [হাজারে আসওয়াদ] চুম্বন করার পর ইহরাম খুলেছেন। এ ব্যক্তি [ইরাকী] এ ব্যাপারে যা বলেছে, মিথ্যা বলেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৭ ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৬]
২৮৯২. আসমা বিনতু আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যার সাথে কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন ইহরাম অবস্থায় থাকে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আমার সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, তাই আমি ইহরাম খুলে ফেললাম। কিন্তু [আমার স্বামী] যুবায়র [রাদি.]-এর সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তাই তিনি ইহরাম খুলেননি।
রাবী বলেন, আমি আমার স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে বের হয়ে গিয়ে যুবায়র [রাদি.]-এর পাশে বসলাম। তিনি বলিলেন, আমার নিকট থেকে উঠে যাও। আমি বললাম, তুমি কি আশংকা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৭]
২৮৯৩. আসমা বিনতু আবু বাক্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে হজ্জের ইহরাম বেঁধে [মাক্কায়] পৌঁছলাম। অবশিষ্ট বর্ণনা ইবনি জুরায়জের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে, যুবায়র [রাদি.] বলিলেন, “তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও, দূরে সরে যাও।” আমি [আসমা] বললাম, তুমি কি আশংকা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব?”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৮]
২৮৯৪. আসমা [রাদি.]-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ হইতে বর্ণীতঃ
আসমা [রাদি.] যখনই আল-হাজুন [হারাম শরীফের সীমার মধ্যে মাক্কার উচ্চভূমিতে একটি পাহাড়] অতিক্রম করিতেন, তখনই তিনি তাকে বলিতে শুনতেন, সল্লাল্লাহু আলা রসূলিহী [আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-কে অনুগ্রহ করুন]। আমরা তাহাঁর সঙ্গে এখানে অবতরণ করেছিলাম, আমাদের বোঝা ছিল কম, বাহনের সংখ্যা অত্যন্ত কম এবং রসদও ছিল সামান্য। আমি, আমার বোন আয়িশা [রাদি.], যুবায়র [রাদি.] এবং আরও অমুক অমুক উমরাহ্ পালন করেছিলাম। আমরা যখনই বায়তুল্লাহ স্পর্শ করলাম, তখনই ইহরাম খুলে ফেললাম। এরপর তৃতীয় প্রহরে হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম।
অধঃস্তন রাবী হারূন তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, “আসমা [রাদি.]-এর মুক্তদাস” এবং তিনি আবদুল্লাহ নাম উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৮৭০, ইসলামিক সেন্টার- ২৮৬৯]
Leave a Reply