তিলাওয়াতের সিজদা
তিলাওয়াতের সিজদা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ২১
- অধ্যায়ঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ
১০২৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] সূরাহ্ আন্ নাজ্ম- এ সাজদাহ্ করিয়াছেন। তার সাথে মুসলিম, মুশরিক, জিন্ ও মানুষ সাজদাহ্ করেছে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১০৭১। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সূরাহ্ ইনশিক্বাক্ব ও সূরাহ্ আল আলাক্ব-এ সাজদাহ্ করেছি। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৭৮। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোন সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করিতেন, আর আমরা তাহাঁর নিকটে থাকতাম, তখন তিনি সাজদায় গেলে আমরাও তাহাঁর সঙ্গে সঙ্গে সাজদাহ্ করতাম। এ সময় এত ভিড় হত যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল মাটিতে রাখার জায়গা পেতো না যার উপর সে সাজদাহ্ করিবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১০৭৬, মুসলিম ৫৭৫। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২৬. যায়দ বিন সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সম্মুখে সূরাহ্ নাজম পাঠ করেছি। তিনি এতে সাজদাহ্ করেননি। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১০৭২, মুসলিম ৫৭৭। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সূরাহ্ সাদ-এর সাজদাহ্ বাধ্যতামূলক নয়। অবশ্য আমি নবী [সাঃআঃ]-কে এ সূরায় সাজদাহ্ করিতে দেখেছি। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১০৬৯। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২৮. মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, সূরাহ্ সাদ-এ সাজদাহ্ করবো কি-না? উত্তরে তিনি [ইবনি আব্বাস] “তাহাঁর বংশধরের মধ্যে থেকে দাউদ ও সুলায়মান” পাঠ করিতে করিতে এই বাক্য পৌঁছলেন- আর-বি “সুতারাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর”- [সূরাহ্ আল আন্আম ৮৪-৯০]। অতঃপর বললেন, তোমাদের নবী [সাঃআঃ] ঐ লোকদের মধ্যে গণ্য যাদের প্রতি আগের নবীর আনুগত্য করার নির্দেশ ছিল। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৪২১। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১০২৯. আমর ইবনুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে কুরআনে ১৫টি সাজদাহ্ শিখিয়েছেন। এর মাঝে তিনটি সাজদাহ্ মুফাসসাল সূরায় এবং দু সাজদাহ্ সূরাহ্ আল হাজ্জ-এর মধ্যে। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ২৪০১, ইবনি মাজাহ ১০৫৭, হাকিম ৮১১। কারণ এর সানাদে আবদুল্লাহ বিন মুনায়ন একজন মাজহূল বারী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৩০. উক্ববাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সূরাহ্ আল হাজ্জ-এর কি দুটি সাজদাহ্ করার কারণে এমন মর্যাদা? জবাবে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, হ্যাঁ। যে ব্যক্তি এ দুটি সাজদাহ্ করিবে না সে যেন এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত না করে। [আবু দাউদ, তিরমিজি; ঈমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদিসের সূত্র মজবুত নয়। আর মাসাবীহ হইতে শারহুস্ সুন্নাহ্র মতো “সে দুটো সাজদার আয়াত যেন না পড়ে”-এর স্থলে “তাহলে সে যেন এ সূরাকে না পড়ে” এসেছে।] {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৪০২, আত তিরমিজি ৫৭৮, জইফ আল জামি ৩৯৮২। কারণ এর সানাদে আবদুল্লাহ বিন লিহ্ইয়্যাহ্ একজন দুর্বল রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৩১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যুহরের সলাতে সাজদাহ্ করিলেন, তারপর কিয়াম করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন। মানুষেরা মনে করিলেন, তিনি [সাঃআঃ] তানযীল আস্ সাজদাহ্ সূরাহ পড়েছেন। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৮০৭। কারণ সুলায়মান এবং আবু মিজলায-এর মধ্যবর্তী রাবী উমাইয়্যাহ্ একজন মাজহূল রাবী যাকে মামার ছাড়া অন্য কেউ উল্লেখ করেননি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৩২. উক্ত রাবী {আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সামনে কুরআন মাজীদ পাঠ করিতেন। যখন সাজদার আয়াতে পৌছতেন তাকবীর বলে সাজদাহ্ দিতেন। আমরাও তাহাঁর সাথে সাজদাহ্ করতাম।১}
{১} মুনকার : আবু দাউদ ১৪১৩। কারণ এর সানাদে আবদুল্লাহ বিন উমার আল উমরী আল মুকাব্বির একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ মুনকার
১০৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন সাজদার আয়াত পাঠ করিলেন। তাই [উপস্থিত] সকল সহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সঙ্গে সাজদাহ্ করিলেন। সাজদাকারীদের কেউ তো সওয়ারীর উপর ছিলেন, আর কেউ জমিনে সাজদাকারী। আরোহীরা তাদের হাতের ওপরই সাজদাহ্ করিলেন। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৪১১। কারণ এর সানাদে রাবী মুস্আব বিন সাবিত বিন আবদুল্লাহ বিন যুবায়র হাদিস বর্ণনায় শিথিল হিসাবে পরিচিত। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৩৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] মাদীনায় যাওয়ার পর মুফাস্সাল সূরার কোন সূরায় সাজদাহ্ করেননি। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৪০৩। কারণ এর সানাদে মাত্র আল ওয়ার্রাক্ব একজন অধিক ভুলকারী রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৩৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতে তিলাওয়াতের সাজদায় এ দুআ পড়তেনঃ
سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَه وَشَقَّ سَمْعَه وَبَصَرَه بِحَوْلِه وَقُوَّتِه
“সাজাদা ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী খলাক্বাহূ ওয়া শাক্বা সাম্আহু ওয়া বাসারাহূ বিহাওলিহী ওয়া ক্যুওয়াতিহী” [অর্থাৎ আমার চেহারা ওই জাতে পাককে সাজদাহ্ করিল যিনি একে সৃষ্টি করেছে। নিজের শক্তি ও কুদরতের দ্বারা তাতে কান ও চোখ দিয়েছেন]।
[আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী; ঈমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ] {১};{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৪১৪, আত তিরমিজি ৫৮০, নাসায়ী ১১২৯, হাকিম ৮০০, আহমাদ ২৫৮২১। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০৩৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এস আবেদন করিল, হে আল্লাহর রসূল! আজ রাত্রে আমি আমার নিজকে স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি একটি গাছের নিচে সলাত আদায় করছি। আমি যখন সাজদায়ে তিলাওয়াত করলাম তখন এ গাছটিও আমার সাথে সাজদায়ে তিলাওয়াত করিল। আমি শুনলাম গাছটি এ দুআ পড়ছেঃ
اللّهُمَّ اكْتُبْ لِىْ بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّىْ بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِىْ عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّىْ كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ
“আল্ল-হুম্মাক্তুব্ লী বিহা-ইনদাকা আজ্রান ওয়াযা আন্নী বিহা- বেযরান, ওয়াজ্আল্হা-লী ইন্দাকা যুখরান ওয়াতা ক্বব্বালহা- মিন্নী কামা- তাক্বব্বালতাহা- মিন আব্দিকা দাঊদা” [অর্থাৎ হে আল্লাহ! এ সাজদার জন্যে তোমার কাছে আমার জন্যে সাওয়াব নির্দিষ্ট করো। এর মাধ্যমে আমার গুনাহ মাফ করে দাও। এ সাজদাকে তোমার নিকট সঞ্চিত সম্পদ বানিয়ে দাও। এ সাজদাহ্কে এমনভাবে কবূল করো যেভাবে তুমি তোমার বান্দা দাউদ [আঃ] থেকে কবূল করেছ।” ইবনি আব্বাস বলেন, এরপর নবী [সাঃআঃ] সাজদার আয়াত পাঠ করিলেন, সাজদাহ্ দিলেন। আমি তাকে ঐ বাক্যগুলো বলিতে শুনিয়াছি যা ঐ লোকটি গাছটিকে বলেছে বলে বর্ণনা করিয়াছেন।
[তিরমিজি; ইবনি মাজাহও এ হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু তার বর্ণনায় “ওয়াতাক্বব্বালহা- মিন্নী কামা- তাক্বব্বালতাহা- মিন আব্দিকা, দাউদ” উল্লেখ হয়নি। আর তিরমিজি বলেন, এ হাদিসটি গরীব পর্যায়ের।] {১}; {১} হাসান : আত তিরমিজি ৫৭৯, সহীহ আত তারগীব ১৪৪১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
অধ্যায়ঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১০৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] সূরাহ্ আন্ নাজম তিলাওয়াত করিলেন এবং তাতে সাজদাহ্ করিলেন। তাহাঁর কাছে যেসব মানুষ ছিলেন তারাও সাজদাহ্ করলো। কিন্তু কুরায়শ বংশের এক বৃদ্ধ পাথর অথবা এক মুষ্টি মাটি নিয়ে নিজের কপালের দিকে উঠাল এবং বলিল, আমার জন্যে এটাই যথেষ্ট হবে। আবদুল্লাহ ইবনি মাস্উদ [রাদি.] বলেন, আমি এ ঘটনার পর দেখেছি ঐ বৃদ্ধ মানুষটিকে কুফ্রী অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে।
[বোখারী, মুসলিম; বোখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে বুড়া লোকটি ছিল উমাইয়্যাহ্ বিন খাল্ফ।] {১}; {১} সহীহ : বোখারী ১০৬৭, ৪৮৬৩, মুসলিম ৫৭৬। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০৩৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] সূরাহ্ সাদ-এ সাজদাহ্ করিয়াছেন এবং বলেছেন, দাউদ [আঃ] সূরায়ে সাদ-এর সাজদাহ্ দুআ কবুলের জন্যে করিয়াছেন। আর আমরা তার তাওবাহ্ কবূলের কৃতজ্ঞতা স্বীকারস্বরূপ সাজদাহ্ করছি। [নাসায়ী] {১}
{১} সহীহ : নাসায়ী ৯৫৭, আহমাদ ২৫২১, মুজাম আল কাবীর ১১০৯৬। তিলাওয়াতের সিজদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply