তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত । ফরজ এর পূর্বে ও পড়ে নফল, সুন্নাত সালাত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত । ফরজ এর পূর্বে ও পড়ে নফল, সুন্নাত সালাত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত । ফরজ এর পূর্বে ও পড়ে নফল, সুন্নাত সালাত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১৯, তাহাজ্জুদ, অধ্যায়ঃ (১-৩৭)=৩৭টি

১৯/১. অধ্যায়ঃ রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ (ঘুম হইতে জেগে) সালাত আদায় করা।
১৯/২. অধ্যায়ঃ রাত জেগে ইবাদত করার গুরুত্ব।
১৯/৩. অধ্যায়ঃ রাতের সালাতে সিজদা দীর্ঘ করা।
১৯/৪. অধ্যায়ঃ রুগ্ন ব্যক্তির তাহাজ্জুদ আদায় না করা।
১৯/৫. অধ্যায়ঃ তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদতের প্রতি নাবী (সাঃআঃ)-এর উৎসাহ দান করা, অবশ্য তিনি তা আবশ্যক করেননি।
১৯/৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর তাহাজ্জুদের সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর ফলে তাহাঁর উভয় পা ফুলে যেত।
১৯/৭. অধ্যায়ঃ সাহরীর সময় যে নিদ্রা যায়।
১৯/৮. অধ্যায়ঃ সাহরীর পর ফজ্‌রের সালাত পর্যন্ত জেগে থাকা।
১৯/৯. অধ্যায়ঃ তাহাজ্জুদের সালাত দীর্ঘ করা।
১৯/১০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সালাত কিরূপ ছিল এবং রাতে তিনি কত রাকআত সালাত আদায় করিতেন?
১৯/১১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর ইবাদাতে রাত জাগরণ এবং তাহাঁর ঘুমানো আর রাত জাগার যতটুকু রহিত করা হয়েছে।
১৯/১২. অধ্যায়ঃ রাতে সালাত না আদায় করলে ঘাড়ের পশ্চাদংশে শয়তানের গ্রন্থী বেঁধে দেয়া।
১৯/১৩. অধ্যায়ঃ সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়লে তার কানে শয়তান পেশাব করে দেয়।
১৯/১৪. অধ্যায়ঃ রাতের শেষভাগের ও সালাতে দুআ করা।
১৯/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি রাতের প্রথমাংশে ঘুমিয়ে থাকে এবং শেষ অংশকে (সালাত ও যিক্‌রের মাধ্যমে) প্রাণবন্ত করে।
১৯/১৬. অধ্যায়ঃ রমযানে ও অন্যান্য সময়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর রাত্রি জেগে ইবাদাত করা।
১৯/১৭. অধ্যায় : রাতে ও দিনে তাহারাত (পবিত্রতা ) হাসিল করার মর্যাদা এবং উযু করার পর রাতে ও দিনে সালাত আদায়ের ফাযীলাত।
১৯/১৮. অধ্যায় : ইবাদাতে কঠোরতা অবলম্বন করা অপছন্দনীয় ।
১৯/১৯. অধ্যায় : রাত জেগে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির ইবাদাত পরিত্যাগ করা মাকরূহ।
১৯/২০. অধ্যায় :
১৯/২১. অধ্যায় : যে ব্যক্তি রাত জেগে সালাত আদায় করে তার ফযীলত।
১৯/২২. অধ্যায় : দুরাকআত ফজ্‌রের (সুন্নাত) অব্যাহতভাবে আদায় করা।
১৯/২৩. অধ্যায় : ফজ্‌রের দুরাকআত সুন্নাতের পর ডান কাতে শোয়া।
১৯/২৪. অধ্যায় : দুরাকআত (ফজ্‌রের সুন্নাত) এরপর কথাবার্তা বলা এবং নিদ্রা না যাওয়া।
১৯/২৫. অধ্যায়ঃ নফল সালাত দুদুরাকআত করে আদায় করা।
১৯/২৬. অধ্যায়ঃ ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতের পর কথাবার্তা বলা।
১৯/২৭. অধ্যায়ঃ ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতের হিফাযত করা আর যারা এ দুরাকআতকে নফল বলেছেন।
১৯/২৮. অধ্যায়ঃ ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতে কতটুকু কিরআত পড়া প্রয়োজন।
১৯/২৯. অধ্যায়: ফরজ সালাতের পর নফল সালাত।
১৯/৩০. অধ্যায়: ফর্‌জের পর নফল সালাত না আদায় করা।
১৯/৩১.অধ্যায়: সফরে যুহা সালাত আদায় করা।
১৯/৩২. অধ্যায়: যারা যুহা সালাত আদায় করেন না, তবে বিষয়টিকে প্রশস্ত মনে করেন (কারো ইচ্ছাধীন মনে করেন)।
১৯/৩৩. অধ্যায়: মুকিম অবস্থায় যুহা সালাত আদায় করা।
১৯/৩৪. অধ্যায় : যুহরের (ফরজের) পূর্বে দুরাকআত সালাত।
১৯/৩৫. অধ্যায় : মাগরিবের (ফরজ এর) পূর্বে সালাত।
১৯/৩৬. অধ্যায় : নফল সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা।
১৯/৩৭. অধ্যায় : নফল সালাত ঘরের মধ্যে আদায় করা।

১৯/১. অধ্যায়ঃ রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ (ঘুম হইতে জেগে) সালাত আদায় করা।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “আর আপনি রাতের এক অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করুন, যা আপনার জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য”। (সুরা আল-ইসরা ১৭/৭৯)

১১২০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশে যখন দাঁড়াতেন, তখন দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ 

“হে আল্লাহ! আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, আপনি আসমান যমীন ও এ দুয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আসমান যমীন এবং তাদের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীনের নূর। আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আকাশ ও যমীনের মালিক, আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য; আপনার সাক্ষাৎ সত্য; আপনার বাণী সত্য; জান্নাত সত্য; জাহান্নাম সত্য; নাবীগণ সত্য; মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনার নিকটই আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরেই তাওয়াক্‌কুল করলাম, আপনার দিকেই রুজূ করলাম; আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বাপর ও প্রকাশ্য গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই অগ্র পশ্চাতের মালিক। আপনি ব্যতীত সত্য প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, অথবা (অপর বর্ণনায়) আপনি ব্যতীত প্রকৃত কোন সত্য মাবূদ নেই।

সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আবু উমাইয়্যাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর বর্ণনায় (আরবি বাক্যটি) অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন। সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

১৯/২. অধ্যায়ঃ রাত জেগে ইবাদত করার গুরুত্ব।

১১২১. সালিম (রাদি.) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর জীবিতকালে কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর খিদমতে বর্ণনা করত। এতে আমার মনে আকাঙ্ক্ষা জাগলো যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করব। তখন আমি যুবক ছিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময়ে আমি মসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দুজন ফেরেশ্‌তা আমাকে ধরে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলেছেন। তা যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধানো। তাতে দুটি খুঁটি রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলিতে লাগলাম, আমি জাহান্নাম হইতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বলেন, তখন অন্য একজন ফেরেশ্‌তা আমাদের সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বলিলেন, ভয় পেয়ো না।

১১২২. সালিম (রাদি.) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

আমি এ স্বপ্ন (আমার বোন উম্মুল মুমিনীন) হাফ্‌সা (রাদি.)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। অতঃপর হাফ্‌সা (রাদি.) তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ কতই ভাল লোক! যদি রাত জেগে সে সালাত ( তাহাজ্জুদ) আদায় করত! তারপর হইতে আবদুল্লাহ (রাদি.) খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন।

১৯/৩. অধ্যায়ঃ রাতের সালাতে সিজদা দীর্ঘ করা।

১১২৩. উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়েশা (রাদি.) আমাকে জানিয়েছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (তাহাজ্জুদে) এগার রাকআত সালাত আদায় করিতেন এবং তা ছিল তাহাঁর (স্বাভাবিক) সালাত। সে সালাতে তিনি এক একটি সিজদা এত পরিমাণ করিতেন যে, তোমাদের কেউ (সিজদা হইতে) তাহাঁর মাথা তোলার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করিতে পারত। আর ফজরের (ফরজ) সালাতের পূর্বে তিনি দু রাকআত সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর তিনি ডান কাতে শুতেন যতক্ষণ না সালাতের জন্য তাহাঁর কাছে মুআয্‌যিন আসত। (৬২৬)

(আ.প্র. ১০৫২, ই.ফা. ১০৫৬)

১৯/৪. অধ্যায়ঃ রুগ্ন ব্যক্তির তাহাজ্জুদ আদায় না করা।

১১২৪. জুনদাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (একবার) অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে এক রাত বা দু রাত তিনি ( তাহাজ্জুদের জন্য) উঠেননি।

১১২৫.জুনদাব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার সাময়িকভাবে জিব্রাঈল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযিরা হইতে বিরত থাকেন। এতে জনৈকা কুরায়শ নারী বলিল, তার শয়তানটি তাহাঁর নিকট আসতে দেরী করছে। তখন অবতীর্ণ হল-

‏وَالضُّحَى * وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى * مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى‏

“শপথ পূর্বাহ্ণের ও রজনীর! যখন তা হয় নিঝুম। আপনার প্রতিপালক আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি”-

(সুরা ওয়ায্‌যুহা ৯৩/১-৩)।

১৯/৫. অধ্যায়ঃ তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদতের প্রতি নাবী (সাঃআঃ)-এর উৎসাহ দান করা, অবশ্য তিনি তা আবশ্যক করেননি।

নাবী (সাঃআঃ) তাহাজ্জুদ সালাতে উৎসাহ দানের জন্য একরাতে ফাতিমা ও আলী (রাদি.)-এর ঘরে গিয়েছিলেন।

১১২৬. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একরাতে ঘুম হইতে জেগে বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! আজ রাতে কত না ফিতনা নাযিল করা হল! আজ রাতে কতই না (রহমাতের) ভাণ্ডার নাযিল করা হল! কে জাগিয়ে দিবে বাড়িগুলোর লোকজনকে? ওহে! শোন, দুনিয়ার অনেক পোশাক পরিহিতা আখিরাতে উলঙ্গ হয়ে যাবে।

১১২৭. আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক রাতে তাহাঁর কন্যা ফাতিমা (রাদি.)-এর নিকট এসে বললেনঃ তোমরা কি সালাত আদায় করছ না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহ তাআলার হাতে রয়েছে। তিনি যখন আমাদের জাগাতে ইচ্ছা করবেন, জাগিয়ে দিবেন। আমরা যখন একথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। পরে আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে আপন উরুতে করাঘাত করছিলেন এবং কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন-

‏وَكَانَ الإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَىْءٍ جَدَلاً

“মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়”-

(সুরা আল-কাহফ ১৮/৫৪)।

১১২৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যে আমল করা পছন্দ করিতেন, সে আমল কোন কোন সময় এ আশঙ্কায় ছেড়েও দিতেন যে, সে আমল লোকেরা করিতে থাকবে, ফলে তাদের উপর তা ফরজ হয়ে যাবে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুহা সালাত আদায় করেননি।

[১] আমি সে সালাত আদায় করি।. [১] আয়েশা (রাদি.) তাহাঁর জানা অনুযায়ী এ কথা বলেছেন। উম্মু হানী (রাদি.)-এর রিওয়ায়াত হইতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চাশত্ আদায় প্রমাণিত।

১১২৯. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করছিলেন, কিছু লোক তাহাঁর সাথে সালাত আদায় করিল। পরবর্তী রাতেও তিনি সালাত আদায় করিলেন এবং লোক আরো বেড়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতে লোকজন সমবেত হলেন, কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বের হলেন না। সকাল হলে তিনি বললেনঃ তোমরা যা করেছ আমি লক্ষ্য করেছি। তোমাদের নিকট বেরিয়ে আসার ব্যাপারে এ আশঙ্কাই আমাকে বাধা দিয়েছে যে, তোমাদের উপর তা ফরজ হয়ে যাবে। এটা ছিল রমযান মাসের ঘটনা।

১৯/৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর তাহাজ্জুদের সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর ফলে তাহাঁর উভয় পা ফুলে যেত।

আয়েশা (রাদি.) বলেছেন, এমনকি তাহাঁর পদযুগল ফেটে যেতো। (কুরআনের শব্দ) الفُطورٌ অর্থ ফেটে যাওয়া إِنفَطَرَت ফেটে গেল।

১১৩০. মুগীরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাত্রি জাগরণ করিতেন অথবা রাবী বলেছেন, সালাত আদায় করিতেন; এমনকি তাহাঁর পদযুগল অথবা তাহাঁর দু পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাঁকে বলা হলে তিনি বলিতেন, আমি কি একজন শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না?

১৯/৭. অধ্যায়ঃ সাহরীর সময় যে নিদ্রা যায়।

১১৩১. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় সালাত হল দাঊদ (আঃ)-এর সালাত। আর আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাঊদ (আঃ)-এর সিয়াম। তিনি [দাঊদ (আঃ)] অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করিতেন এবং রাতের এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি একদিন সিয়াম পালন করিতেন, একদিন সাওমবিহীন অবস্থায় থাকতেন।

১১৩২. মাসরূক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট কোন আমলটি সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল? তিনি বলিলেন, নিয়মিত আমল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন? তিনি বলিলেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন।

আশআস (রাদি.) তাহাঁর বর্ণনায় বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মোরগের ডাক শুনে উঠতেন এবং সালাত আদায় করিতেন।

১১৩৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি আমার নিকট ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়ই সাহরীর সময় হত। অর্থাৎ নাবী (সাঃআঃ)।

১৯/৮. অধ্যায়ঃ সাহরীর পর ফজ্‌রের সালাত পর্যন্ত জেগে থাকা।

১১৩৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এবং যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) সাহরী খেলেন। যখন তারা দুজন সাহরী শেষ করিলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সালাত আদায় করিলেন। [ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁদের সাহরী সমাপ্ত করা ও (ফজরের) সালাত শুরু করার মধ্যে কি পরিমাণ ব্যবধান ছিল? তিনি বলিলেন, কেউ পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করিতে পারে এতটা সময়।

১৯/৯. অধ্যায়ঃ তাহাজ্জুদের সালাত দীর্ঘ করা।

১১৩৫. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাতে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করেছিলাম। (আবু ওয়াইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন) আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কী ইচ্ছে করেছিলেন? তিনি বলিলেন, ইচ্ছে করেছিলাম, বসে পড়ি এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর ইক্‌তিদা ছেড়ে দেই।

১১৩৬. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য উঠতেন তখন মিস্ওয়াক দ্বারা তাহাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন।

১৯/১০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সালাত কিরূপ ছিল এবং রাতে তিনি কত রাকআত সালাত আদায় করিতেন?

১১৩৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একজন জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রাতের বেলা সালাতের পদ্ধতি কি? তিনি বললেনঃ দু দু রাকআত করে। আর ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলে এক রাকআত মিলিয়ে বিতর করে নিবে।

১১৩৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর সালাত ছিল তের রাকআত অর্থাৎ রাতে।

১১৩৯. মাসরূক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-কে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, ফজরের দু রাকআত (সুন্নাত) বাদে সাত বা নয় কিংবা এগার রাকআত।

১১৪০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতের বেলা তের রাকআত সালাত আদায় করিতেন, যার ভিতর আছে বিতর এবং ফজ্‌রের দু রাকআত (সুন্নাত)।

১৯/১১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর ইবাদাতে রাত জাগরণ এবং তাহাঁর ঘুমানো আর রাত জাগার যতটুকু রহিত করা হয়েছে।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “হে চাদর আবৃত রাসুল! রাতে সালাতে দণ্ডায়মান থাকুন সামান্য পরিমাণে রাত বাদ দিয়ে। অর্ধ রাত্রি কিংবা তার চেয়ে কিছু কম। অথবা তার চেয়ে কিছু বৃদ্ধি করুন। আর কুরআন পাঠ করুন ধীরে ধীরে, খুব স্পষ্টভাবে। অবশ্যই আমি আপনার প্রতি অচিরেই এক গুরুভার বাণী অবতীর্ণ করছি। নিশ্চয় রাত্রি জাগরণ প্রবৃত্তি দলনে প্রবলতর এবং বক্তব্যের ব্যাপারে বিশেষ ক্রিয়াশীল। দিনের বেলায় তো রয়েছে আপনার বহু কাজ।” (সুরা মুয্‌যাম্মিল ৭৩/১-৭) আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তিনি অবগত আছেন যে, তোমরা এর যথাযথ হিসাব রাখতে পার না। অতএব, তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন। সুতরাং কুরআনের যতটুকু তোমাদের পক্ষে পাঠ করা সহজ, ততটুকু পাঠ করো। তিনি অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশভ্রমণ করিবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জিহাদ করিবে। অতএব, কুরআনের যতটুকু তিলাওয়াত করা সহজ, ততটুকু তোমরা তিলাওয়াত করো। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম কর্জ দাও। আর তোমরা নিজেদের মঙ্গলের জন্য যা কিছু নেক কাজ অগ্রে প্রেরণ করিবে, আল্লাহর কাছে তা তোমরা পাবে তদপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হিসেবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা মুযযাম্মিল ৭৩/২০)।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, হাবশী ভাষায় (আরবি) শব্দটির অর্থ (উঠে দাঁড়াল) আর (আরবি) শব্দের অর্থ হল- কুরআনে অধিক অনুকূল। অর্থাৎ তাহাঁর কান, চোখ এবং হৃদয়ের অধিক অনুকূল এবং তাই তা কুরআনের মর্ম অনুধাবনে অধিকতর উপযোগী। (আরবি) শব্দের অর্থ হল যাতে তারা সামঞ্জস্য বিধান করিতে পারে।

১১৪১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কোন কোন মাসে সিয়াম পালন করিতেন না। এমন কি আমরা ধারণা করতাম যে, সে মাসে তিনি সিয়াম পালন করবেন না। আবার কোন কোন মাসে সিয়াম পালন করিতে থাকতেন, এমন কি আমাদের ধারণা হত যে, সে মাসে তিনি সিয়াম ছাড়বেন না। তাঁকে তুমি সালাত রত অবস্থায় দেখিতে চাইলে তাই দেখিতে পেতে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিতে চাইলে তাও দেখিতে পেতে। সুলাইমান ও আবু খালিদ আহমার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনু জাফার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

১৯/১২. অধ্যায়ঃ রাতে সালাত না আদায় করলে ঘাড়ের পশ্চাদংশে শয়তানের গ্রন্থী বেঁধে দেয়া।

১১৪২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পড়ে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে।

১১৪৩. সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর স্বপ্ন বর্ণনার এক পর্যায়ে বলেছেন, যে ব্যক্তির মাথা পাথর দিয়ে বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ লোক যে কুরআন শিখে তা পরিত্যাগ করে এবং ফরজ সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে। [১]

[১] হাদীসখানা এখানে অংশ বিশেষ উল্লিখিত হয়েছে, পূর্ণাংগ হাদীস রয়েছে “كتاب الجنائز” এ।

১৯/১৩. অধ্যায়ঃ সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়লে তার কানে শয়তান পেশাব করে দেয়।

১১৪৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর সামনে এক ব্যক্তির ব্যাপারে আলোচনা করা হল- সকাল বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, সালাতের জন্য জাগ্রত হয়নি, তখন তিনি (নাবী (সাঃআঃ) ) ইরশাদ করলেনঃ শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে।

১৯/১৪. অধ্যায়ঃ রাতের শেষভাগের ও সালাতে দুআ করা।

আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেনঃ রাতের সামান্য পরিমাণ (সময়) তাঁরা নিদ্রারত থাকেন, শেষ রাতে তাঁরা ইসতিগফার করেন। (সুরা আয-যারিয়াতঃ ১৮)

১১৪৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করিতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।

১৯/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি রাতের প্রথমাংশে ঘুমিয়ে থাকে এবং শেষ অংশকে (সালাত ও যিক্‌রের মাধ্যমে) প্রাণবন্ত করে।

সালমান (রাদি.) আবু দারদা (রাদি.) -কে (রাতের প্রথমাংশে) বলিলেন, (এখন) ঘুমিয়ে পড়, শেষ রাত হলে তিনি বলিলেন (এখন) উঠে পড়। (বিষয়টি অবগত হয়ে) নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করলেনঃ সালমান যথার্থ বলেছে।

১১৪৬. আসওয়াদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাতে নাবী (সাঃআঃ)-এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বলেন, তিনি প্রথমাংশে ঘুমাতেন, শেষাংশে জেগে সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর তাহাঁর শয্যায় ফিরে যেতেন, মুআয্‌যিন আযান দিলে শীঘ্র উঠে পড়তেন, তখন তাহাঁর প্রয়োজন থাকলে গোসল করিতেন, নইলে উযূ করে (মসজিদের দিকে) বেরিয়ে যেতেন।

১৯/১৬. অধ্যায়ঃ রমযানে ও অন্যান্য সময়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর রাত্রি জেগে ইবাদাত করা।

১১৪৭. আবু সালামাহ ইবনু আবদুর রাহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করেন, রমযান মাসে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাকআতের অধিক সালাত আদায় করিতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করিতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করিতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাকআত (বিতর) সালাত আদায় করিতেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দুটি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।

১১৪৮. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাতের কোন সালাতে আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বসে কিরআত পড়তে দেখিনি। অবশ্য শেষ দিকে বার্ধক্যে উপনীত হলে তিনি বসে কিরআত পড়তেন। যখন (পঠিত) সুরার ত্রিশ চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তখন দাড়িঁয়ে যেতেন এবং সেগুলো পড়ার পর রুকু করিতেন।

১৯/১৭. অধ্যায় : রাতে ও দিনে তাহারাত (পবিত্রতা ) হাসিল করার মর্যাদা এবং উযু করার পর রাতে ও দিনে সালাত আদায়ের ফাযীলাত।

১১৪৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একদা ফজরের সালাতের সময় বিলাল (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করিলেন, হে বিলাল! ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক সন্তুষ্টিব্যঞ্জক যে আমল তুমি করেছ, তার কথা আমার নিকট ব্যক্ত কর। কেননা, জান্নাতে (মিরাজের রাতে ) আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল (রাদি.) বলিলেন, আমার নিকট এর চেয়ে (অধিক ) সন্তুষ্টিব্যঞ্জক হয় এমন কিছুতো আমি করিনি। দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি তাহারাত ও পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে তাহারাত দ্বারা সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তাক্‌দীরে লেখা ছিল।

১৯/১৮. অধ্যায় : ইবাদাতে কঠোরতা অবলম্বন করা অপছন্দনীয় ।

১১৫০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) (মসজিদে ) প্রবেশ করে দেখিতে পেলেন যে, দুটি স্তম্ভের মাঝে একটি রশি টাঙানো রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ রশিটি কী কাজের জন্য? লোকেরা বললো, এটি যায়নাবের রশি, তিনি (ইবাদাত করিতে করিতে) অবসন্ন হয়ে পড়লে এটির সাথে নিজেকে বেঁধে নেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ না, এটা খুলে ফেল। তোমাদের কারো প্রাণবন্ত থাকা পর্যন্ত ইবাদাত করা উচিত। যখন সে ক্ লান্ত হয়ে পড়ে তখন যেন সে বসে পড়ে।

১১৫১. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বনূ আসাদের এক মহিলা আমার নিকট উপস্হিত ছিলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার নিকট আসলেন এবং তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ মহিলাটি কে? আমি বললাম, অমুক। তিনি রাতে ঘুমান না। তখন তাহাঁর সালাতের কথা উল্লেখ করা হলে তিনি (নাবী (সাঃআঃ) ) বললেনঃ রাখ রাখ। সাধ্যানুযায়ী আমল করিতে থাকাই তোমাদের কর্তব্য। কেননা, আল্লাহ তাআলা (সাওয়াব দানে ) ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।

১৯/১৯. অধ্যায় : রাত জেগে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির ইবাদাত পরিত্যাগ করা মাকরূহ।

১১৫২. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদাত করত, পরে রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে। আবু সালামা (রাদি.) হইতেও এ রকম বর্ণিত আছে।

১৯/২০. অধ্যায় :

১১৫৩. আবুল আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ আমাকে কি জানানো হয়নি যে, তুমি রাতভর ইবাদাতে জেগে থাক আর দিনভর সিয়াম পালন কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, তা আমি করে থাকি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ একথা নিশ্চিত যে, তুমি এমন করিতে থাকলে তোমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তোমার দেহের অধিকার রয়েছে, তোমার পরিবার পরিজনেরও অধিকার রয়েছে। কাজেই তুমি সিয়াম পালন করিবে এবং বাদও দেবে। রাতে জেগে ইবাদাত করিবে এবং ঘুমাবেও।

১৯/২১. অধ্যায় : যে ব্যক্তি রাত জেগে সালাত আদায় করে তার ফযীলত।

১১৫৪. উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন। যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে (উপরোক্ত ) দুআ পড়ে –

اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ‏.‏ الْحَمْدُ لِلَّهِ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ

(দুআর অর্থ ) “এক আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাহাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাহাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাহাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় হামদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ হইতে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত”।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

অতঃপর বলে, “হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা করুন”। বা (অন্য কোন ) দুআ করে, তাহাঁর দুআ কবুল হয়। অতঃপর উযু করে (সালাত আদায় করলে ) তার সালাত কবুল হয়।

১১৫৫. হায়সাম ইবনু আবু সিনান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) তারঁ ওয়াজ বর্ণনাকালে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তোমাদের এক ভাই অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) অনর্থক কথা বলেননি”। [১]

“ আর আমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রাসুল,

যিনি তিলাওয়াত করেন তাহাঁর (আল্লাহর কিতাব),

যখন ফজ্‌রের আলো উদ্ভাসিত হয়।

তিনি আমাদের গোমরাহীর পর হিদায়াতের পথ দেখিয়েছেন,

তাই আমাদের অন্তরগুলো তাহাঁর প্রতি এ বিশ্বাস রাখে যে

যা তিনি বলেছেন তা অবশ্যই সত্য।

তিনি রাত যাপন করেন পার্শ্বদেশকে শয্যা হইতে দূরে সরিয়ে রেখে.

যখন মুশরিকরা থাকে আপন শয্যাসমূহে নিদ্রামগ্ন”।

আর উকায়ল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। যুবাইদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …… আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রেও বর্ণনা করিয়াছেন।

[১] আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) আনসারী কর্তৃক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এ প্রশংসায় রচিত কবিতার কয়েকটি পংক্তি তিনি মুতা যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।

১১৫৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)–এর সময়ে আমি (এক রাতে) স্বপ্নে দেখলাম যেন আমার হাতে একটুকরা মোটা রেশমী কাপড় রয়েছে এবং যেন আমি জান্নাতের যে স্হানে যেতে ইচ্ছা করছি কাপড় (আমাকে) সেখানে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অপর একটি স্বপ্নে আমি দেখলাম, যেন দুজন মালাক আমার নিকট এসে আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তখন অন্য একজন মালাক তাঁদের সামনে এসে বলিলেন, তোমার কোন ভয় নেই। (আর ঐ দুজনকে বলিলেন) তোমরা ওকে ছেড়ে দাও।

১১৫৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(উম্মুল মুমিনীন) হাফসা (রাদি.) আমার স্বপ্নদ্বয়ের একটি নাবী (সাঃআঃ)–এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ কত ভাল লোক ! যদি সে রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করত। তারপর হইতে আবদুল্লাহ (রাদি.) রাতের এক অংশ সালাত আদায় করিতেন।

১১৫৮. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সাহাবীগণ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট (তাঁদের দেখা ) স্বপ্নের বর্ণনা দিলেন। লাইলাতুল কদর রমযানের শেষ দশকের সপ্তম রাতে। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি মনে করি যে, ( লাইলাতুল কদর শেষ দশকে হবার ব্যাপারে ) তোমাদের স্বপ্নগুলোর মধ্যে পরস্পর মিল রয়েছে। কাজেই যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করিতে চায় সে যেন তা শেয দশকে অনুসন্ধান করে।

১৯/২২. অধ্যায় : দুরাকআত ফজ্‌রের (সুন্নাত) অব্যাহতভাবে আদায় করা।

১১৫৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করিলেন অতঃপর আট রাকআত সালাত আদায় করেন এবং দুরাকআত আদায় করেন বসে। আর দুরাকআত সালাত আদায় করেন আযান ও ইক্বামাত–এর মাঝে। এ দুরাকআত তিনি কখনো পরিত্যাগ করিতেন না।

১৯/২৩. অধ্যায় : ফজ্‌রের দুরাকআত সুন্নাতের পর ডান কাতে শোয়া।

১১৬০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফজ্‌রের দুরাকআত সালাত আদায় করার পর ডান কাতে শয়ন করিতেন।

১৯/২৪. অধ্যায় : দুরাকআত (ফজ্‌রের সুন্নাত) এরপর কথাবার্তা বলা এবং নিদ্রা না যাওয়া।

১১৬১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (ফজ্‌রের সুন্নাত) সালাত আদায় করার পর আমি জেগে থাকলে, তিনি আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন, নতুবা সালাতের সময় হওয়া সম্পর্কে অবগত করানো পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।

১৯/২৫. অধ্যায়ঃ নফল সালাত দুদুরাকআত করে আদায় করা।

মুহাম্মদ ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বিষয়টি আম্মার আবু যার্র, আনাস, জাবির ইবনু যায়দ (রাদি.) এবং ইকরিমাহ যুহরি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতেও উল্লিখিত হয়েছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আনসারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমাদের শহরের (মদীনার ) ফকীহ্গণকে দিনের সালাতে প্রতি দুরাকআত শেষে সালাম ফিরাতে দেখেছি।

১১৬২. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের সব কাজে ইস্তিখারাহ [১] শিক্ষা দিতেন। যেমন পবিত্র কুরআনের সুরা সমূহ আমাদের শিখাতেন। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করলে সে যেন ফরজ নয় এমন দুরাকআত সালাত আদায় করার পর এ দুআ পড়ে : প্রভু হে ! আমি তোমার জ্ঞানের ওয়াসিলাহ্তে তোমার অনুমতি কামনা করছি; তোমার কুদরতের ওয়াসিলায় শক্তি চাচ্ছি আর তোমার অপার করুণা ভিক্ষা করছি। কারণ তুমিই সর্বশক্তিমান আর আমি দুর্বল। তুমিই জ্ঞানী আর আমি অজ্ঞ এবং তুমিই সর্বজ্ঞ। প্রভু হে ! তুমি যদি মনে কর যে, এই জিনিসটি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায়, ইহকালে ও পরকালে সত্বর কিংবা বিলম্বে আমার পক্ষে মঙ্গলজনক হইবে তা হলে আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দাও এবং তার প্রাপ্তি আমার জন্য সহজতর করে দাও। অতঃপর তুমি তাতে বরকত দাও। আর যদি তুমি মনে কর এই জিনিসটি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায় ইহকালে ও পরকালে আমার জন্য ক্ষতিকর হইবে শীঘ্র কিংবা বিলম্বে তাহলে তুমি তাকে আমা হইতে দূর করে দাও এবং আমাকে তা হইতে দূরে রাখো ; অতঃপর তুমি আমার জন্য যা মঙ্গলজনক তা ব্যবস্হা কর সেটা যেখান থেকেই হোক না কেন এবং আমাকে তার প্রতি সন্তুষ্টচিত্ত করে তোল”।

তিনি ইরশাদ করেন তার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করিবে।

(৬৩৮২, ৭৩৯০) (আ.প্র. ১০৮৮, ই.ফা. ১০৯৩). [১] সালাত ও দুআর মাধ্যমে উদ্দিষ্ট বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।

১১৬৩. আবু কাতাদা ইবনু রিবআ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুরাকআত সালাত (তাহিয়্যাতুল–মসজিদ ) আদায় করার পূর্বে বসবে না।

(৪৪৪). (আ.প্র. ১০৮৯, ই.ফা. ১০৯৪)

১১৬৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন, তারপর চলে গেলেন।

(৩৮০). (আ.প্র. ১০৯০, ই.ফা. ১০৯৫)

১১৬৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সঙ্গে যুহরের পূর্বে দুরাকআত, যুহ্রের পরে দুরাকআত, জুমুআর পরে দুরাকআত, মাগরিবের পরে দুরাকআত এবং ইশার পরে দুরাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করেছি। (৯৩৭)

(আ.প্র. ১০৯১, ই.ফা. ১০৯৬ )

১১৬৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর খুতবা প্রদানকালে ইরশাদ করিলেন : তোমরা কেউ এমন সময় মসজিদে উপস্হিত হলে, যখন ইমাম (জুমুআর) খুতবা দিচ্ছেন, কিংবা মিম্বরে আরোহণের জন্য (হুজরাহ হইতে) বেরিয়ে পড়েছেন, তাহলে সে তখন যেন দুরাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (৯৩০)

(আ.প্র. ১০৯২, ই.ফা. ১০৯৭)

১১৬৭. মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমর (রাদি.)-এর বাড়িতে এসে তাঁকে খবর দিল, এইমাত্র আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাবা শরীফে প্রবেশ করিলেন। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, আমি অগ্রসর হলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাবা ঘর হইতে বের হয়ে পড়েছেন। বিলাল (রাদি.) দরজার নিকট দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম, হে বিলাল! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাবার ভিতরে সালাত আদায় করিয়াছেন কি? তিনি বলিলেন, হাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন স্থানে? তিনি বলিলেন, দুস্তম্ভের মাঝখানে। [১] তারপর তিনি বেরিয়ে এসে কাবার সামনে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন।(৩৯৭)

ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে দু রাকআত সলাতুয্ যুহা (চাশ্ত-এর সালাত)-এর আদেশ করিয়াছেন। ইতবান (ইবনু মালিক আনসারী ) (রাদি.) বলেন, একদা অনেকটা বেলা হলে নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর এবং উমর (রাদি.) আমার এখানে আসলেন। আমরা তাহাঁর পিছনে কাতারে দাঁড়ালাম আর তিনি (আমাদের নিয়ে ) দুরাকআত সালাত (চাশ্ত) আদায় করিলেন।

(আ.প্র. ১০৯৩, ই.ফা. ১০৯৮). [১] কাবার অভ্যন্তরের সারিতে ছয়টি স্তম্ভ রয়েছে। সামনের সারিতে দুটি স্তম্ভ ডানে এবং একটি স্তম্ভ বামে রেখে দাঁড়ালে তা দরজা বরাবরে সামনের দুস্তম্ভের মাঝখানে হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দরজা বরাবর অগ্রসর হয়ে দেয়ালের কাছে সালাত আদায় করেছিলেন।

১৯/২৬. অধ্যায়ঃ ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতের পর কথাবার্তা বলা।

১১৬৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (ফজরের) দুরাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর আমি জেগে থাকলে আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন, নইলে (ডান) কাতে শয়ন করিতেন। (বর্ণনাকারী আলী বলেন), আমি সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ কেউ এ হাদীসে (দুরাকআত স্থলে) ফজরের দু রাকআত রিওয়ায়াত করে থাকেন। (এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?) সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, এটা তা-ই। (১১১৮)

(আ.প্র.১০৯৪, ই.ফা.১০৯৯)

১৯/২৭. অধ্যায়ঃ ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতের হিফাযত করা আর যারা এ দুরাকআতকে নফল বলেছেন।

১১৬৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কোন নফল সালাতকে ফজরের দুরাকআত সুন্নাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করিতেন না।

(মুসলিম ৬/১৪, হাদীস ৭২৪). (আ.প্র.১০৯৫, ই.ফা.১১০০)

১৯/২৮. অধ্যায়ঃ ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতে কতটুকু কিরআত পড়া প্রয়োজন।

১১৭০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত সালাত আদায় করিতেন, অতঃপর সকালে আযান শোনার পর সংক্ষিপ্তভাবে দুরাকআত সালাত আদায় করিতেন। (৬২৬)

(আ.প্র.১০৯৬, ই.ফা.১১০১)

১১৭১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফজরের সালাতের পূর্বের দুরাকআত (সুন্নাত) এত সংক্ষিপ্ত করিতেন এমনকি আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি কি (শুধু) উম্মুল কিতাব (সুরা ফাতিহা) তিলাওয়াত করিলেন?

(আ.প্র. ১০৯৭, ই.ফা. ১১০২)

১৯/২৯. অধ্যায়: ফরজ সালাতের পর নফল সালাত।

১১৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুহরের পূর্বে দুরাকআত, যুহরের পর দুরাকআত, মাগরিবের পর দুরাকআত, ইশার পর দুরাকআত এবং জুমুআর পর দুরাকআত সালাত আদায় করেছি। তবে মাগরিব ও ইশার পরের সালাত তিনি তাহাঁর ঘরে আদায় করিতেন। (৯৩৭)

(আ.প্র. ১০৯৭, ই.ফা. ১১০৩)

১১৭৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমার বোন (উম্মুল মুমিনীন) হাফসা (রাদি.) আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) ফজর হবার পর সংক্ষিপ্ত দুরাকআত সালাত আদায় করিতেন। (ইবনু উমর (রাদি.) বলেন,) এটি ছিল এমন একটি সময়, যখন আমরা কেউ নাবী (সাঃআঃ)-এর খিদমতে হাযির হতাম না। ইবনু আবু যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মূসা ইব‌্নু উক্বাহ (রাদি.) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে ইশার পরে তাহাঁর পরিজনের মধ্যে কথাটি বর্ণনা করিয়াছেন।

(৬১৮; মুসলিম ৬/১৫, হাদীস ৭২৯) (আ.প্র. ১০৯৭ শেষাংশ, ই.ফা. ১১০৩ শেষাংশ)

১৯/৩০. অধ্যায়: ফর্‌জের পর নফল সালাত না আদায় করা।

১১৭৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আট রাকআত একত্রে (যুহর ও আসরের) এবং সাত রাকআত একত্রে (মাগরিব-ইশার) সালাত আদায় করেছি। সে ক্ষেত্রে সুন্নাত আদায় করা হয়নি। আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি বললাম, হে আবুশ্ শাসা ! আমার ধারণা, তিনি যুহর শেষ ওয়াক্তে এবং আসর প্রথম ওয়াক্তে আর ইশা প্রথম ওয়াক্তে ও মাগরিব শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমিও তাই মনে করি।

১৯/৩১.অধ্যায়: সফরে যুহা সালাত আদায় করা।

১১৭৫. মুওয়ার্‌রিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.)-কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি যুহা সালাত আদায় করে থাকেন? তিনি বলিলেন, না। আমি প্রশ্ন করলাম, আবু উমর (রাদি.) তা আদায় করিতেন কি? তিনি বলিলেন, না। আমি প্রশ্ন করলাম, আবু বকর (রাদি.)? তিনি বলিলেন, না। আমি প্রশ্ন করলাম, নাবী (সাঃআঃ)? তিনি বলিলেন, আমি তা মনে করি না।

১১৭৬. আবদুর রহমান ইবনু আবু লায়লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উম্মু হানী (রাদি.) ব্যতীত অন্য কেউ নাবী (সাঃআঃ)-কে চাশ্‌তের সালাত আদায় করিতে দেখেছেন, এমন আমাদের নিকট কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মু হানী (রাদি.) অবশ্য বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাহাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করিয়াছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাহাঁর) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত দেখিনি। তবে কিরআত ছাড়া তিনি রুকু ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছিলেন।

১৯/৩২. অধ্যায়: যারা যুহা সালাত আদায় করেন না, তবে বিষয়টিকে প্রশস্ত মনে করেন (কারো ইচ্ছাধীন মনে করেন)।

১১৭৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে যুহা-এর সালাত আদায় করিতে আমি দেখিনি। তবে আমি তা আদায় করে থাকি।

১৯/৩৩. অধ্যায়: মুকিম অবস্থায় যুহা সালাত আদায় করা।

ইতবান ইবন্ মালিক (রাদি.) বিষয়টি নাবী কারীম (সাঃআঃ) থেকে উল্লেখ করিয়াছেন।

১১৭৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু [নাবী (সাঃআঃ)] আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করিয়াছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হলঃ)

১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা।

২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)।

৩. বিতর (সালাত) আদায় করে শয়ন করা।

১১৭৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক স্থুল দেহ বিশিষ্ট আনসারী নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আরয্‌ করিলেন, আমি আপনার সঙ্গে (জামাআতে) সালাত আদায় করিতে পারি না। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর উদ্দেশে খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং একটি চাটাই এর এক অংশে (কোমল ও পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশে) পানি ছিটিয়ে (তা বিছিয়ে) দিলেন। তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] সে চাটাইয়ের উপরে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। ইবনু জারূদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করিলেন নাবী (সাঃআঃ) কি চাশ্‌ত-এর সালাত আদায় করিতেন? আনাস (রাদি.) বলিলেন, সেদিন বাদে অন্য সময়ে তাঁকে এ সালাত আদায় করিতে দেখিনি।

১৯/৩৪. অধ্যায় : যুহরের (ফরজের) পূর্বে দুরাকআত সালাত।

১১৮০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হইতে আমি দশ রাকআত সালাত আমার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। যুহরের পূর্বে দুরাকআত পরে দুরাকআত, মাগরিবের পরে দুরাকআত তাহাঁর ঘরে, ইশার পরে দুরাকআত তাহাঁর ঘরে এবং দুরাকআত সকালের (ফজ্‌রের) সালাতের পূর্বে। [ইবনু উমর (রাদি.) বলেন] আর সময়টি ছিল এমন, যখন নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট (সচরাচর) কোন লোককে প্রবেশ করিতে দেয়া হত না।

১১৮১. উম্মুল মুমিনীন হাফ্‌সা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যখন মুআয্‌যিন আযান দিতেন এবং ফজর উদিত হত তখন নাবী (সাঃআঃ) দুরাকআত সালাত আদায় করিতেন।

১১৮২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের পূর্বে চার রাকআত এবং (ফজ্‌রের পূর্বে) দুরাকআত সালাত ছাড়তেন না। ইবনু আবু আদী ও আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

১৯/৩৫. অধ্যায় : মাগরিবের (ফরজ এর) পূর্বে সালাত।

১১৮৩. আবদুল্লাহ মুযানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ তোমরা মাগরিবের (ফরজের) পূর্বে (নফল) সালাত আদায় করিবে; লোকেরা এ আমলকে সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করিতে পারে, এটার কারণে তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ এ তার জন্য যে ইচ্ছে করে।

১১৮৪. মার্‌সাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইয়াযানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উক্‌বাহ ইবনু জুহানী (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আবু তামীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সম্পর্কে এ কথা বলে কি আমি আপনাকে বিস্মিত করে দিব না যে, তিনি মাগরিবের (ফরজ) সালাতের পূর্বে দু রাকআত (নফল) সালাত আদায় করে থাকেন। উক্‌বাহ (রাদি.) বলিলেন, (এতে বিস্ময়ের কী আছে?) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময়ে তো আমরা তা আদায় করতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হলে এখন কিসে আপনাকে বাধা দিচ্ছে? তিনি বলিলেন, কর্মব্যাস্ততা।

১৯/৩৬. অধ্যায় : নফল সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা।

এ বিষয়ে আনাস ও আয়েশা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

১১৮৫. ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাহমূদ ইবনু রাবী আনসারী (রাদি.) আমাকে জনিয়েছেন যে, (শিশুকালে তাহাঁর দেখা) নাবী (সাঃআঃ)-এর কথা তাহাঁর ভাল স্মরণ আছে এবং নাবী (সাঃআঃ) তাঁদের বাড়ির কুপ হইতে (পানি মুখে নিয়ে বরকতের জন্য) তার মুখমন্ডলে যে ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন সে কথাও তার ভাল মনে আছে।

১১৮৬. মাহমূদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাদি.)-কে (যিনি ছিলেন বদর জিহাদে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে উপস্থিত বদরী সাহাবীগণের অন্যতম) বলিতে শুনেছেন যে, আমি আমার কাওম বনূ সালিমের সালাতে ইমামাত করতাম। আমার ও তাদের (কাওমের মসজিদের) মধ্যে ছিল একটি উপত্যকা। বৃষ্টি হলে উপত্যকা আমার মসজিদ গমনে বাধা সৃষ্টি করতো এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হতো। তাই আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলাম, (হে আল্লাহর রাসুল!) আমি আমার দৃষ্টিশক্তির কমতি অনুভব করছি (উপরন্তু) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমার একান্ত আশা যে আপনি শুভাগমন করে আমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করবেন; আমি সে স্থানটিকে সালাতের স্থানরূপে নির্ধারিত করে নিব। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেন, শীঘ্রই তা করবো। পরের দিন সূর্যের উত্তাপ যখন বেড়ে গেল, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এবং আবু বকর (রাদি.) আসলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (প্রবেশের) অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে স্বাগত জানালাম, তিনি উপবেশন না করেই আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার সালাত আদায় করা তুমি পছন্দ কর? যে স্থানে সালাত আদায় করা আমার মনঃপূত ছিল, তাঁকে আমি সে স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে দিলাম আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে তাক্‌বীর বলিলেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাহাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তাহাঁর সালাম ফেরানোর সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। অতঃপর তাহাঁর উদ্দেশে যে খাযীরা প্রস্তুত করা হচ্ছিল তা আহারের জন্য তাহাঁর প্রত্যাগমনে আমি বিলম্ব ঘটালাম। ইতিমধ্যে মহল্লার লোকেরা আমার বাড়িতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর অবস্থানের সংবাদ শুনতে পেয়ে তাঁদের কিছু লোক এসে গেলেন। এমন কি আমার ঘরে অনেক লোকের সমাগম ঘটলো। তাঁদের একজন বলিলেন, মালিক (ইবনু দুখায়শিন) করিল কী? তাকে দেখছি না যে? তাঁদের একজন জবাব দিলেন, সে মুনাফিক! আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকে ভালবাসে না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করিলেন : এমন কথা বলবে না। তুমি কি লক্ষ্য করছ না যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু উচ্চারণ করেছে। সে ব্যক্তি বলিল, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই অধিক অবগত। তবে আল্লাহর কসম! আমরা মুনাফিকদের সাথেই তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচনা দেখিতে পাই। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করিলেন : আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু উচ্চারণ করে। মাহমূদ (রাদি.) বলেন, এক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদল লোকের নিকট বর্ণনা করলাম তাঁদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাহাবী আবু আইয়ুব (আনসারী) (রাদি.) ছিলেন। তিনি সে যুদ্ধে ওফাত পেয়েছিলেন। আর ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া (রাদি.) রোমানদের দেশে তাদের আমীর ছিলেন। আবু আইয়ুব (রাদি.) আমার বর্ণিত হাদীসটি অস্বীকার করে বলিলেন, আল্লাহর কসম! তুমি যে কথা বলেছ তা যে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন, তা আমি বিশ্বাস করিতে পারি না। ফলে তা আমার নিকট ভারী মনে হল। তখন আমি আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, যদি এ যুদ্ধ হইতে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তিনি আমাকে নিরাপদ রাখেন, তাহলে আমি ইতবান ইবনু মালিক (রাদি.)-কে তাহাঁর কাউমের মসজিদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবো, যদি তাঁকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে যাই। অতঃপর আমি ফিরে চললাম এবং হজ্জ কিংবা উমরার নিয়্যাতে ইহরাম করলাম। অতঃপর সফর করিতে করিতে আমি মাদীনায় উপনীত হয়ে বনূ সালিম গোত্রে উপস্থিত হলাম। দেখিতে পেলাম ইতবান (রাদি.) যিনি তখন একজন বৃদ্ধ ও অন্ধ ব্যক্তি কাউমের সালাতে ইমামাত করছেন। তিনি সালাত সমাপ্ত করলে আমি তাঁকে সালাম দিলাম এবং আমার পরিচয় দিয়ে উক্ত হাদীস সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি প্রথমবারের মতই হাদীসটি আমাকে শুনালেন।

১৯/৩৭. অধ্যায় : নফল সালাত ঘরের মধ্যে আদায় করা।

১১৮৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করিবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না। আবদুল ওহহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইউব (রাদি.) হইতে হাদীস বর্ণনায় ওয়াহব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply