তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ – ঈমান (বিশ্বাস)
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ – ঈমান (বিশ্বাস) >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১, অধ্যায়ঃ ঈমান [বিশ্বাস]
পরিচ্ছদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
إِيْمَانِ [ঈমা-ন]-এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস স্থাপন করা, সত্যায়ন করা ইত্যাদি। এর শারঈ অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হানাফীদের মতে : নবী সাঃআঃ দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় বিস্তারিত এবং সংক্ষিপ্ত যে বিধানাবলী নিয়ে এসেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন দলীল না থাকলেও চূড়ান্তভাবে তাকে সত্যায়ন করা। ঈমানটি তাদের নিকট যৌগিক কোন বিষয় নয় বরং এটি [بَسِيْطٌ] বাসীত্ব [একক] যা পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে কম-বেশি গ্রহণ করে না। [অর্থাৎ- ঈমান কোন সৎকাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় না এবং পাপ কাজের মাধ্যমে হ্রাস পায় না]। মুরজিয়াহ্ সম্প্রদায়ের মতে : ঈমান হলো শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করা। জিহবার স্বীকৃতি ঈমানের কোন রুকনও না, শর্তও না। ফলে হানাফীদের মতো তারাও আমালকে ঈমানের প্রকৃত অর্থের বহির্ভূত গণ্য করেছে এবং ঈমানের আংশিকতাকে অস্বীকার করেছে। তবে হানাফীরা এর [আমালের] প্রতি গুরুত্বারোপ, এর প্রতি উদ্বুদ্ধ এবং ঈমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটিকে একটি কারণ হিসেবে গণ্য করলেও মুরজিয়ারা এটিকে সমূলে ধ্বংস করে বলেছে আমালের কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করলেই পরিত্রাণ মিলবে তাতে যে যত অপরাধই করুক না কেন। কার্রামিয়্যাহ্ সম্প্রদায়ের মতে : ঈমান হলো শুধুমাত্র উচ্চারণ করা। ফলে তাদের নিকট নাজাতের জন্য মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট, চাই সত্যায়ন পাওয়া যাক বা না যাক।
ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদসহ জমহূর উলামাগণের মতে : ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, জিহবায় উচ্চারণ করা এবং রুকনসমূহের প্রতি আমাল করা। তাদের নিকট ঈমান একটি যৌগিক বিষয় যা কমে এবং বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এটিই হলো সর্বাধিক সঠিক অভিমত। মুতাযিলাহ্ এবং খারিজীগণের নিকট ঈমানের সংজ্ঞা জমহূরের মতই তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য হলো ঈমানের সকল অংশকে জমহূর সমান হিসেবে গণ্য করেননি। ফলে তাদের নিকট আমালসমূহ যেমন সলাতের ওয়াজিব বিষয়গুলো তার রুকনের মতো নয়।
অতএব আমাল না থাকলে কোন ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডী থেকে বের না হয়ে তার মধ্যেই থাকিবে এবং আমাল পরিত্যাগকারী অনুরূপ কাবীরাহ্ [কবিরা] গুনাহে জড়িত ব্যক্তি ফাসিক্ব-মুমিন থাকিবে সে কাফির হয়ে যাবে না। পক্ষান্তরে কারো মাঝে যদি শুধু তাসদীক না পাওয়া যায় তাহলে সে মুনাফিক্ব আর ইক্বরার বা স্বীকৃতি না পাওয়া গেলে কাফির। কিন্তু যদি শুধুমাত্র আমালগত ত্রুটি থাকে তাহলে সে ফাসিক্ব যে জাহান্নামে চিরদিন অবস্থান করা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আর খারিজী এবং মুতাজিলীরা যৌগিক ঈমানের সকল অংশকে সমান হিসেবে গণ্য করে এভাবে যে, ঈমানের কিছু অংশ বাদ পড়লে সমস্তটাই বাদ বলে পরিগণিত হবে। আর আমালটি তাদের নিকট ঈমানের একটি রুকন যেমনটি সলাতের বিভিন্ন রুকন রয়েছে। তাই আমাল পরিত্যাগকারী তাদের নিকট ঈমান বহির্ভূত লোক। খারিজীদের মতে কাবীরাহ্ [কবিরা] গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি অনুরূপ আমাল পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফির যে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করিবে। আর মুতাজিলাদের মতে সে মুমিনও নয় কাফিরও নয় বরং তাকে ফাসিক্ব বলা হবে যে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
১
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তাহাঁর নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সস্তুষ্টির জন্য হিজরত করিবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সস্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থ প্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করিবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। {১}
{১} সহীহঃ বোখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিজি ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবু দাউদ ২২০১, ইবনি মাজাহ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি দরবারে আত্মপ্রকাশ করিলেন। ধবধবে সাদা তাহাঁর পোশাক। চুল তাহাঁর কুচকুচে কালো। না ছিল তাহাঁর মধ্যে সফর করে আসার কোন চিহ্ন, আর না আমাদের কেউ তাকে চিনতে পেরেছেন। তিনি এসেই নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বসে পড়লেন। নবী [সাঃআঃ]-এর হাঁটুর সাথে তাহাঁর হাঁটু মিলিয়ে দিলেন। তাহাঁর দুহাত তাহাঁর দুই উরুর উপর রেখে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলুন অর্থাৎ ইসলাম কি? উত্তরে নবী [সাঃআঃ] বললেন, “ইসলাম হচ্ছে- তুমি সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ [উপাস্য] নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রসূল, নামাজ ক্বায়িম করিবে, যাকাত আদায় করিবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করিবে এবং বাইতুল্লাহর হাজ্জ করিবে যদি সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে।” আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।” আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম একদিকে তিনি রসূলকে [অজ্ঞের ন্যায়] প্রশ্ন করিলেন, আবার অপরদিকে রসূলের বক্তব্যকে [বিজ্ঞের ন্যায়] সঠিক বলে সমর্থনও করিলেন। এরপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, “আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন।” রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উত্তর দিলেন, ঈমান হচ্ছেঃ আল্লাহ্ তাআলা, তাহাঁর মালায়িকাহ্, তাহাঁর কিতাবসমূহ, তাহাঁর রসূলগণ এবং পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এছাড়া তাক্বদীরের উপর অর্থাৎ জীবন ও জগতে কল্যাণ-অকল্যাণ যা কিছু ঘটছে, সবই আল্লাহ্র ইচ্ছায় হচ্ছে- এ কথার উপর বিশ্বাস করা। উত্তর শুনে আগন্তুক বললেন, “আপনি ঠিকই বলেছেন”। অতঃপর তিনি আবার বললেন, “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।” রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, ইহসান হচ্ছে, “তুমি এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদাত করিবে যেন তুমি তাঁকে দেখছো। আর তুমি যদি তাঁকে না-ও দেখো, তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন”। আগন্তুক এবার বললেন, “আমাকে ক্বিয়ামাত সম্পর্কে বলুন।” উত্তরে নবী [সাঃআঃ] বললেন, এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানেন না।” আগন্তুক বললেন, “তবে ক্বিয়ামাতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বলুন।” নবী [সাঃআঃ] বললেন, “ক্বিয়ামাতের নিদর্শন হল, দাসী তাহাঁর আপন মনীবকে প্রসব করিবে, তুমি আরো দেখিতে পাবে- খালি পায়ের উলঙ্গ-কাঙ্গাল মেষ চালকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব ও অহংকার করিবে।” উমার [রাদি.] বললেন, অতঃপর আগন্তুক চলে গেলে আমি কিছুক্ষণ সেখানেই অবস্থান করলাম। পরে রসূল [সাঃআঃ] আমাকে বললেন, উমার! প্রশ্নকারী আগন্তুক কে চিনতে পেরেছো?” আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, “ইনি হচ্ছেন জিবরীল [আঃ]। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন”। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৮, আবু দাউদ ৪৬৯৫, নাসায়ী ৪৯৯০, সহীহ আত তারগীব ৩৫১, আহমাদ ৩৬৭।
এ হাদিসের য় দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ এখানে فَخِذَيْهِ [ফাখিযায়হি] দ্বারা জিবরীল [আঃ]-এর নিজের উরুদ্বয় উদ্দেশ্য। তবে সঠিক মত হলো রসূল সাঃআঃ-এর উরুদ্বয়, জিবরীল [আঃ] -এর নয় যা আল্লামা হাফিয ইবনি হাজার [রাহিমাহুল্লাহ] প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এ হাদিসের বর্ণনা প্রসঙ্গ ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.], আবু যার [রাদি.] কর্তৃক বর্ণিত ঈমাম নাসায়ীর সহীহ সানাদ বিশিষ্ট বর্ণনা তথা حَتّى وَضَعَ يَدَه عَلى رُكْبَتى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ থেকে সুস্পষ্টভাবে এটিই বুঝা যায়।
رَبَّةٌ [রব্বাতুন] অর্থ মুনীব। মুসলিম-এর বর্ণনায় أمَارَاتٌ বহুবচন শব্দের জায়গায় أَمَارَةٌ একবচন শব্দ রয়েছে।
أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا -এর অর্থ দাসী তার মুনীবের সন্তান জন্ম দিবে এবং পরবর্তীতে সে সন্তানটিই তার মুনীবের স্থলাভিষিক্ত হবে। আবার কেউ কেউ অন্য অর্থও বলেছেন।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতেও সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে হাদিসটি বর্ণিত রয়েছে। তা হচ্ছে- যখন উলঙ্গ কাঙ্গাল এবং মূক ও বধিরগণকে অর্থাৎ অযোগ্য লোকদেরকে দেশের রাজা বা শাসক হইতে দেখবে। সে পাঁচটি বিষয় ক্বিয়ামাতের আলামাতের অন্তর্গত, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তারপর তিনি প্রমাণ হিসেবে কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ [আরবী]
অর্থাৎ “আল্লাহ্ ক্বিয়ামাত সম্পর্কে ভাল জানেন কবে তা সংঘটিত হবে? কিভাবে হবে? বৃষ্টি তিনিই বর্ষিয়ে থাকেন” – [সূরাহ্ লুক্বমান ৩১:৩৪]। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫০, মুসলিম ১০, ইবনি মাজাহ ৬৪, ৪০৪৪; সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২২৪৪, আহমাদ ৯৫০১, শব্দ মুসলিমের।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪
ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রসূল, নামাজ ক্বায়িম করা, যাকাত আদায় করা, হাজ্জ পালন করা এবং রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। {১}
{১} সহীহ: বোখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিজি ২৬০৯, নাসায়ী ৫০০১, আহমাদ ৬০১৫, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ১৮৮০; শব্দ মুসলিমের।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হল “আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ [উপাস্য] নেই”- এ ঘোষণা দেয়া। সাধারণ শাখা হল, কষ্টদায়ক কোন বস্তুকে পথ থেকে অপসারিত করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৯, মুসলিম ৩৫, দারিমী ৪৬৭৬, নাসায়ী ৫০০৫, ইবনি মাজাহ ৫৭, আহমাদ ৯৩৬১, ইবনি হিব্বান ১৬৬।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পূর্ণাঙ্গ মুসলিম সে ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ হইতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির হল সে ব্যক্তি যে সে সকল কাজ পরিত্যাগ করেছে যেসব কাজ করিতে আল্লাহ্ বারণ করিয়াছেন। হাদিসের শব্দগুলো সহীহুল বোখারীর। আর মুসলিম এ শব্দে বর্ণনা করেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করিল, মুসলিমদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যার জিহবা ও হাত [র অনিষ্ট] হইতে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১০, মুসলিম ৪০, দারিমী ২৪৮১, নাসায়ী ৪৯৯৬, আহমাদ ৪৯৮৩।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ [প্রকৃত] মুমিন হইতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ হইতে প্রিয়তম হই। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৫, মুসলিম ৪৪, ইবনি মাজাহ ৬৭, দারিম২২৭৮৩, আহমাদ ১২৮১৪; শব্দ বোখারীর।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোকের মধ্যে তিনটি গুণের সমাবেশ ঘটে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে। [১] তার মধ্যে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল কিছু হইতে অধিক প্রিয়। [২] যে লোক কোন মানুষকে কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশেই ভালবাসে। [৩] যে লোক কুফরী হইতে নাজাতপ্রাপ্ত হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর পুনরায় কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে এত অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২১, মুসলিম ৪৩, নাসায়ী ৪৯৮৮, তিরমিজি ২৬২৪, ইবনি মাজাহ ৪০৩৩, আহমাদ ১২৭৬৫।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯
আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সে-ই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৩৪, তিরমিজি ২৬২৩, আহমাদ ১৭৭৮, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬৯৪, সহীহ আল জামি ৩৪২৫।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে প্রতিপালকের হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাহাঁর কসম! এ উম্মাতের যে কেউই চাই ইয়াহূদী হোক বা খ্রীষ্টান, আমার রিনামাজ ও নাবূওয়াত মেনে না নিবে ও আমার প্রেরিত শারীআতের উপর ঈমান না এনেই মৃত্যুবরণ করিবে, সে নিশ্চয়ই জাহান্নামী।{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১৫৩, আহমাদ ৮৬০৯, সহীহাহ্ ১৫৭, সহীহ আল জামি ৭০৬৩।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১
আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন লোকের জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। প্রথমতঃ যে আহলি কিতাব নিজের নবীর প্রতি ঈমান এনেছে আর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর প্রতিও ঈমান এনেছে। দ্বিতীয়তঃ যে ক্রীতদাস যথানিয়মে আল্লাহর হাক্ব আদায় করেছে পুনরায় নিজের মুনীবের হাক্বও আদায় করেছে। তৃতীয়তঃ যার তত্ত্বাবধানে ক্রীতদাসী ছিল, সে তার সঙ্গে সহবাস করেছে, তাকে উত্তমরূপে আদব-কায়দাও শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিয়ে স্বীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৯৭, মুসলিম ১৫৪, নাসায়ী ৩৩৪৪, তিরমিজি ১১১৬, দারিমী ২২৯০, সহীহ আল জামি ৩০৭৩, সহীহ আত তারগীব ১৮৮২। আলবানী বলেনঃ يَطَؤُهَا শব্দটি হাদিসের নির্ভরযোগ্য কোন উৎস গ্রন্থে আমি পাইনি।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২
ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর পক্ষ হইতে আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা এ কথা স্বীকার করে সাক্ষ্য না দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবূদ নেই, আর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর প্রেরিত রসূল এবং নামাজ আদায় করিবে ও যাকাত আদায় করিবে– ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। যখন তারা এরূপ কাজ করিবে আমার পক্ষ হইতে তাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকিবে। কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী কেউ যদি কোন দন্ড পাওয়ার উপযোগী কোন অপরাধ করে, তবে সে দন্ড তার উপর কার্যকর হবে। তারপর তার অদৃশ্য বিষয়ের [অন্তর সম্পর্কে] হিসাব ও বিচার আল্লাহর উপর ন্যস্ত। {১}
তবে সহীহ মুসলিমে “কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী” বাক্যটি উল্লেখ করেননি।
{১} সহীহ : বোখারী ২৫, মুসলিম ২২, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১৪১; মুসলিমের শব্দ হলো اِلَّا بِحَقِّهَا।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় নামাজ আদায় করে, আমাদের ক্বাবাকে কিবলাহ হিসেবে গ্রহণ করে, আমাদের যাবাহকৃত পশুর গোশত খায়, সে এমন মুসলিম যার জন্য [জান-মাল, ইজ্জাত-সম্ভ্রম রক্ষায়] আল্লাহ ও রসূলের ওয়াদা রয়েছে। তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৯১, নাসায়ী ৪৯৯৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৯৮, সহীহাহ্ ৩৫৬৫, সহীহ আল জামি ৬৩৫০।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৪
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক [বেদুঈন] লোক রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটা কাজের সন্ধান দিন যা করলে আমি সহজে জান্নাতে পৌছাতে পারি। নবী [সাঃআঃ] বললেন, আল্লাহর ইবাদাত করিতে থাকিবে, তাহাঁর সাথে কাউকে শারীক করিবে না, ফারয নামাজ ক্বায়িম করিবে, ফারয যাকাত আদায় করিবে এবং রমাযানের সিয়াম পালন করিবে। এ কথা শুনে লোকটি বলিল, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে! আমি এর থেকে বেশিও করব না, কমও করব না। সে লোক যখন চলে গেল তখন নবী [সাঃআঃ] বললেন, কেউ যদি জান্নাতী কোন লোককে দেখে আনন্দিত হইতে চায়, সে যেন এ লোককে দেখে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৩৯৭, মুসলিম ১৪, আহমাদ ৮৫, সহীহ আত তারগীব ৭৪৮; মিশকাতের লেখক বোখারী মুসলিমের বর্ণনা একত্র করিয়াছেন।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫
সুফ্ইয়ান ইবনি আবদুল্লাহ আস্ সাক্বাফী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি চূড়ান্ত কথা বলে দিন, যে সম্পর্কে আপনার পরে– অপর এক বর্ণনায় আছে, আপনি ছাড়া আমাকে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করিতে না হয়। নবী [সাঃআঃ] বললেন, আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি- তুমি এ কথা বল এবং এ ঘোষণায় দৃঢ় থাক। {১}
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬
লহাহ্ ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একজন নাজদবাসী লোক এলোমেলো কেশে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আসল। আমরা তার ফিসফিস শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু বেশ দূরে থাকার কারণে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এমনকি সে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খুব নিকটে এসে পৌঁছল। সে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল [ইসলাম কি?]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উত্তরে বললেন, দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। তখন সে লোকটি বলিল, এছাড়া কি আর কোন নামাজ আমার উপর ফারয? তিনি বললেন, না। তবে তুমি নাফল নামাজ আদায় করিতে পারো। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করিবে। সে ব্যক্তি বলিল, এছাড়া কি আর কোন সিয়াম আমার উপর ফারয? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, না। তবে ইচ্ছামাফিক [নাফল] সিয়াম পালন করিতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাকাতের কথা বর্ণনা করিলেন। পুনরায় সে লোকটি বলিল, এছাড়া কি আর কোন সদাক্বাহ আমার উপর ফারয? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, না, কিন্তু স্বেচ্ছায় দান করার ইখতিয়ার রয়েছে। অতঃপর লোকটি এ কথা বলিতে বলিতে চলে গেল– আল্লাহর কসম, এর উপর আমি কিছু বেশিও করব না এবং কমও করব না। [এটা শুনে] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, লোকটি যদি তার কথায় সত্য বলে থাকে, তাহলে [জাহান্নাম হইতে] সাফল্য লাভ করিল। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৬, মুসলিম ১১, আবু দাউদ ৩৯১, নাসায়ী ৪৫৮, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭২৪, ইরওয়া ২৯৬।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুল ক্বায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল নবী [সাঃআঃ]–এর কাছে পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, এরা কোন গোত্রের লোক [বা কোন প্রতিনিধি দল? লোকেরা জবাব দিল, এরা রবীআহ্ গোত্রের লোক। নবী [সাঃআঃ] বললেন, গোত্র বা প্রতিনিধি দলকে মুবারকবাদ! অপমান ও অনুতাপবিহীন অবস্থায় আগত প্রতিনিধি দলকে মুবারাকবাদ! প্রতিনিধি দল আরয করিল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার ও আমাদের মধ্যে কাফির যুদ্ধবাজ মুযার বংশ অন্তরায়স্বরূপ থাকায় হারাম মাস ব্যতীত অন্য মাসে আপনার নিকট আসতে পারি না। তাই আপনি হাক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী এমন কিছু পরিষ্কার নির্দেশ দিন যা আমরা মেনে চলব এবং যাদেরকে দেশে রেখে এসেছি তাদেরকে গিয়ে বলিতে পারব। যা দ্বারা আমরা [সহজে] জান্নাতে যেতে পারি। এর সাথে তারা [নবী [সাঃআঃ]-কে] পানীয় বস্তু [পান পাত্র] সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করিলেন। প্রত্যুত্তরে তিনি তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ দিলেন আর চারটি কাজ হইতে নিষেধ করিলেন। [প্রথমে] তিনি তাদেরকে এক আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার আদেশ করিলেন এবং বললেন, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার অর্থ কি, তা কি তোমরা জান? তারা জবাবে বলিল, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূলই অধিক ভাল জানেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই আর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহ্র রসূল- এ সাক্ষ্য দেয়া। [২] নামাজ ক্বায়িম করা। [৩] যাকাত আদায় করা। এবং [৪] রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। এরপর [চারটি কাজ ছাড়াও] গনীমতের [জিহাদলব্ধ মালের] খুমুস এক-পঞ্চমাংশ দেয়ার হুকুম দিলেন। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] চারটি [মদের] পানপাত্র ব্যবহার নিষেধ করিলেন। এগুলো হলঃ হানতাম [নিকেল করা সবুজ পাত্র], দুব্বা [কদুর খোল দ্বারা প্রস্ততকৃত পাত্রবিশেষ] নাকীর [গাছের বা কাঠের পাত্রবিশেষ], মুয়াফফাত [তৈলাক্ত পাত্রবিশেষ]। [এ জাতীয় পাত্রে তৎকালীন সময়ে মদ ব্যবহার করা হত] তিনি আরো বললেন, এ সকল কথা ভালভাবে স্মরণ রাখবে। যাদের দেশ ছেড়ে এসেছো তাদেরকেও বলবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৩, মুসলিম ১৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭২, আহমাদ ২০২০, সহীহ আল জামি ১০; শব্দ বোখারীর।
نَدَامى [নাদা-মা-] শব্দটি نَدْمَانُ [নাদ্মা-ন] শব্দের বহুবচন যা نَادِمٌ [না-দিম] ইস্মে ফায়িলের অর্থে তথা অনুতপ্ত, অনুশোচিত, লজ্জিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ- তারা আমাদের নিকট আসায় ক্ষতিগ্রস্থ, লজ্জিত হয়নি।
এ হাদীসে দৃশ্যত কিছু জটিলতা বা সমস্যা রয়েছে। [যদিও মূলত কোন সমস্যা নেই] তা হলো : গণনায় পাঁচটি বিষয় আদেশের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অথচ শুরুতে চারটির কথা বলা হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান হলো বাগ্মীদের একটি রীতি যে, যখন কোন বাক্যকে কোন বিশেষ উদ্দেশে স্থাপন করা বা নিয়ে আসা হয় তখন তারা তার বর্ণনা প্রসঙ্গকে এমন করে দেন যেন তা পেশকৃত বিষয়। অতএব, এখানে শাহাদাতায়নের উল্লেখটা উদ্দেশিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়, কেননা রসূলের নিকট আগমনকারী কওমটি শাহাদাত স্বীকৃতিদানকারী মুমিন ছিল যা তাদের উক্তি [اَللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَعْلَمُ] থেকে প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও বোখারীর একটি বর্ণনা তথা [اَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ وَنَهَاهُمْ بِأَرْبِعٍ أَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ، وَأَتُوْا الذَّكَاةَ وَصُوْمُوْا رَمَضَانَ وَأَعْطُوْا خُمُسَ مَا غَنِمْتُمْ…..] -টিও তা প্রমাণ করে। আর বোখারীর এ বর্ণনার মাধ্যমে উল্লেখিত সন্দেহটির বা সমস্যাটির সমাধান হয়ে যায়। [মিরকাত]
حَنْتَمٌ [হান্তাম] অর্থ সবুজ কলম যা মাটি এবং চামড়া দ্বারা তৈরি করা হয়।
اَلدُّبَّاءُ [আদ্ দুব্বা-উ] অর্থ লাউ দ্বারা তৈরিকৃত পাত্র।
اَلنَّقِيْرُ [আন্ নাক্বীর] অর্থ গাছের দ-মূল কুঁড়ে প্রস্ত্ততকৃত পাত্র যাতে নবীয প্রস্ত্তত করা হয়।
اَلْمُزَفَّتُ [আল মুযাফ্ফাত] অর্থ আলকাতরার প্রলেপ দ্বারা প্রস্ত্ততকৃত পাত্র।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নবী [সাঃআঃ]–কে ঘিরে একদল সহাবী বসেছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমার হাতে এ কথার বাইআত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্র সাথে কাউকে শারীক করিবে না, চুরি করিবে না, ব্যভিচার [যিনা] করিবে না, নিজেদের সন্তানাদি [অভাবের দরুন] হত্যা করিবে না। কারো প্রতি [যিনার] মিথ্যা অপবাদ দিবে না। শারীআতসম্মত কোন বিষয়ে অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করিতে পারবে, তাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে পুরষ্কার রয়েছে। অপরদিকে যে লোক [শির্ক ব্যতীত] অন্য কোন অপরাধ করিবে এবং এজন্যে দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে যাবে তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ্ তা ঢেকে রাখেন [বা ধরা না পড়ে], এজন্যে দুনিয়ায় এর কোন বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহ্র মর্যির উপর নির্ভর করিবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন অথবা শাস্তিও দিতে পারেন। বর্ণনাকারী [উবাদাহ্] বলেন, আমরা এ সকল শর্তানুযায়ী নবী [সাঃআঃ]–এর হাতে বায়আত করলাম। {১}
{১} সহীহ: বোখারী ১৮, মুসলিম ১৭০৯, নাসায়ী ৪১৬১, আহমাদ ২২৭৩৩, দারিমী ২৪৯৭, সহীহাহ্ ২৯৯৯, সহীহ আল জামি ২৯৫৫; শব্দ বোখারীর।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৯
আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ঈদুল ফিত্র কিংবা কুরবানীর ঈদের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঈদগাহে গেলেন এবং নারীদের নিকট পৌঁছলেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে নারী সমাজ! তোমরা দান-সদাক্বাহ্ কর। কেননা আমাকে অবগত করানো হয়েছে যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী সমাজেরই হবে”। [এ কথা শুনে] তারা বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! এর কারণ কি? নবী [সাঃআঃ] বললেন, “তোমরা অধিক মাত্রায় অভিসম্পাত করে থাক এবং নিজ স্বামীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে থাক। বুদ্ধি ও দীনদারীতে দুর্বল হবার পরও বিচক্ষণ ও সচেতন পুরুষদের বেওকুফ বানিয়ে দেবার জন্য তোমাদের চেয়ে অধিক পারঙ্গম আমি আর কাউকে দেখিনি”। [এ কথা শুনে] নারীরা আরয করিল, হে আল্লাহ্র রসূল! বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের কী দুর্বলতা রয়েছে? নবী [সাঃআঃ] বললেন, “একজন নারীর সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়”? তারা বলিল, জি হাঁ! নবী [সাঃআঃ] বললেন, “এটাই হল নারীদের বুদ্ধিমত্তার দুর্বলতা। আর নারীরা মাসিক ঋতু অবস্থায় সালাত দায় করিতে ও সিয়াম পালন করিতে পারে না। এটা কি সত্য নয়? তারা উত্তরে বলেন, হাঁ তা-ই। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ “এটাই হল তাদের দ্বীনের দুর্বলতা”। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩০৪, মুসলিম ৮০, সহীহাহ্ ১৯০, সহীহ আল জামি ৭৯৮০, ইরওয়া ৯২৪।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে মিত্যাবাদী বানাচ্ছে, অথচ এটা তাদের জন্য অনুচিত। সে আমায় মন্দ বলছে অথচ এটাও তাদের পক্ষে সমীচীন নয়। আমাকে মিথ্যা বলার অর্থ হল- তারা বলে, এমনভাবে আল্লাহ্ আমাকে [আখিরাতে] অবশ্যই সৃষ্টি করিতে পারবেন না ঠিক যেভাবে আল্লাহ্ আমাকে প্রথম [এ দুনিয়ায়] সৃষ্টি করিয়াছেন। অথচ আমার পক্ষে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার তুলনায় অধিকতর সহজ নয় কি? আর আমার ব্যাপারে মন্দ বলার অর্থ হল, তারা বলে, আল্লাহ্ নিজের পুত্র বানিয়েছেন, অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও কেউ জন্ম দেইনি, আর কেউ আমার সমকক্ষও নয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৯৭৪, নাসায়ী ২০৭৮, সহীহ ইবনি হিব্বান ২৬৭।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১
আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আর তাদের আমাকে মন্দ বলার অর্থ হলঃ তারা বলে, আল্লাহ্র সন্তান আছে, অথচ আমি স্ত্রী ও পুত্র হইতে পবিত্র। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৪৮২, সহীহ আল জামি ৪৩২৭। বোখারীতে وَسُبْحَانِيْ -এর স্থলে فَسُبْحَانِيْ রয়েছে।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেন, আদাম সন্তান আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তারা যুগ বা কালকে গালি দেয়, অথচ আমিই দাহ্র অর্থাৎ যুগ বা কাল। আমার হাতেই [কালের পরিবর্তনের] ক্ষমতা। দিন-রাত্রির পরিবর্তন আমিই করে থাকি। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬, আবু দাউদ ৫২৭৪, আহমাদ ৭২৪৫, সহীহাহ্ ৫৩১, সহীহ আল জামি ৪৩৪৩।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩
আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কষ্টদায়ক কোন বিষয় শুনেও সবর করার ক্ষমতা আল্লাহ্র চেয়ে অধিক কারো নেই। মানুষেরা তাহাঁর সন্তান আছে বলে দাবি করে। [এরপরও তিনি মানুষের ওপর কোন প্রতিশোধ গ্রহণ না করে], বরং তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদেরকে জীবিকা দান করে থাকেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৭৩৭৮, মুসলিম ২৮০৪, আহমাদ ১৯৫৮৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৬৪২; শব্দ বোখারীর।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৪
মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি এক ভ্রমণে গাধার উপর নবী [সাঃআঃ]–এর পেছনে আরোহণ করলাম। আমার আর তাহাঁর মধ্যে হাওদার পেছন দিকের হেলানো কাঠ ছাড়া আর কোন ব্যবধান ছিল না। তিনি বললেন, হে মুআয! বান্দাদের উপর আল্লাহ্র কি হাক্ব এবং আল্লাহ্র উপর বান্দার কি হাক্ব, তুমি কি জান? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রসূলই এ ব্যাপারে অধিক অবগত। তখন নবী [সাঃআঃ] বললেন, বান্দাদের উপর আল্লাহ্র হাক্ব হল, তারা আল্লাহ্র ইবাদাত করিবে, তাহাঁর সাথে কাউকে শারীক করিবে না। আর আল্লাহ্র উপর বান্দার হাক্ব হল, যারা আল্লাহ্র সাথে কাউকে শারীক করেনি, আল্লাহ্ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! তাহলে আমি কি এ সুসংবাদ মানুষদেরকে জানিয়ে দিব না? তিনি বললেন, লোকদেরকে এ সুসংবাদ দিও না। কারণ তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকিবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২৮৫৬ ও ৫৯৬৭, মুসলিম ৩০, ইবনি মাজাহ ৪২৯৬, সহীহ আল জামি ৭৯৬৮। এ বর্ণনাটি বোখারী মুসলিমের বর্ণনায় সমষ্টি।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বাহনের উপর বসা ছিলেন এবং তাহাঁর পেছনে মুআয [রাদি.] আরোহণ করেছিলেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, হে মুআয! তিনি [মুআয] বললেন, আমি উপস্থিত আছি, হে আল্লাহ্র রসূল! রসূল [সাঃআঃ] আবার বললেন, হে মুআয! মুআয [রাদি.] বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি উপস্থিত আছি। তৃতীয়বার আবার রসূল [সাঃআঃ] বললেন, মুআয! মুআয [রাদি.] বললেন, আমি উপস্থিত আছি। এভাবে মুআযকে তিনবার ডাকলেন এবং [মুআয] তিনবারই তাহাঁর উত্তর দিলেন। অতঃপর রসূল [সাঃআঃ] বললেন, আল্লাহ্র যে বান্দা খাঁটি মনে এ ঘোষণা দিবে, “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহ্র রসূল” আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। তখন মুআয [রাদি.] বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! এ সুসংবাদটি কি আমি লোকদেরকে জানিয়ে দিব? তারা যাতে এ খোশখবরী শুনলে খুশী হয়? রসূল [সাঃআঃ] বললেন, না তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকিবে। {আনাস [রাদি.] বলেন] মুআয শুধুমাত্র হাদিস গোপন করার অপরাধে অপরাধী হওয়ার ভয়েই মৃত্যুকালে এ হাদিসটি প্রকাশ করে গিয়েছেন। {১}
{১} সহীহ: বোখারী ১২৮, মুসলিম ৩২, সহীহ আত তারগীব ১৫২২, শুআবুল ঈমান ১২৫। এ বর্ণনাটি বোখারী মুসলিমের বর্ণনার সমষ্টি।
تَأَثُّمًا [তাআস্সুমান] অর্থ পাপে জড়িত হওয়ার ভয় করা। অর্থাৎ- মুআয [রাদি.] ইল্ম গোপন করার পাপ থেকে বাঁচার জন্য মৃত্যুর সময় হাদিসটি বলে দিলেন। কারণ এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে [مَنْ كَتَمَ عِلْمًا ألْجِمَ بِلِجَامٍ مِنْ نَّارٍ] অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ইল্ম গোপন করিবে তাকে ক্বিয়ামাতের [কিয়ামতের] দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৬
আবু যার গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি [একবার] নবী [সাঃআঃ]-এর খিদমতে পৌঁছলাম। তিনি একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়েছিলেন। আমি ফেরত চলে এলাম। অতঃপর পুনরায় তাহাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি জেগে ছিলেন। তিনি [আমাকে দেখে] বললেন, যে ব্যক্তি [অন্তরের সাথে] লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলবে আর এ বিশ্বাসের উপর তার মৃত্যু হবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আমি বললাম, সে চুরি ও ব্যভিচার [এর মত বড় গুনাহ] করে থাকে তবুও? রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ সে চুরি ও ব্যভিচার করলেও। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, চুরি ও ব্যভিচার করার পরও? নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ হাঁ, চুরি ও ব্যভিচারের ন্যায় গুনাহ করলেও। আবু যার-এর নাক ধূলায় মলিন হলেও। বর্ণনাকারী বলেন যখনই আবু যার [রাদি.] এ হাদিসটি বর্ণনা করিতেন [গৌরবের সাথে] এ শেষ বাক্যটি আবু যার-এর নাক ধুলায় মলিন হলেও অবশ্যই বর্ণনা করিতেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৮২৭, মুসলিম ৯৪, আহমাদ ২১৪৬৬, সহীহ আল জামি ৫৭৩৩।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে লোক [অন্তরের সাথে] এ ঘোষণা দিবে, “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তাহাঁর কোন শারীক নেই, মুহাম্মাদ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁরই রসূল এবং বিবি মারইয়াম-এর ছেলেও {ঈসা [আঃ]] আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁরই রসূল, তাহাঁর বান্দীর সন্তান ও আল্লাহর কালিমা- যা তিনি মারইয়াম-এর প্রতি প্রেরণ করেছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ, আর জান্নাত-জাহান্নাম সত্য- তার আমাল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ তাআলা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৪৩৫, মুসলিম ২৮, আহমাদ ২২৬৭৫, সহীহ ইবনি হিব্বান ২০৭, সহীহ আল জামি ৬৩২০, সহীহ আত তারগীব ১৫২১; এ বর্ণনাটি বোখারী মুসলিমের বর্ণনার সমষ্টি।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮
আমর ইবনুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাল্লালাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার দিকে আপনার হাত প্রসারিত করে দিন আমি আপনার কাছে ইসলাম গ্রহণের বায়আত করব। তিনি [সাল্লালাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর হাত প্রসারিত করে দিলেন, কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তখন তিনি [সাল্লালাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [অবাক হয়ে] বললেন, তোমার কি হল হে আমর! আমি বললাম, আমার কিছু শর্ত আছে। তিনি [সাল্লালাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, কি শর্ত? আমি বললাম, আমি চাই আমার [পূর্বের কৃ্ত] গুনাহ যেন মাফ করে দেয়া হয়। তখন তিনি [সাল্লালাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, আমর! তুমি কি জান না ইসলাম গ্রহণ পূর্বেকার সকল গুনাহ বিনাশ করে দেয়। হিজরত সে সকল গুনাহ মাফ করে দেয় যা হিজরতের পূর্বে করা হয়েছে। এমনিভাবে হাজ্জও তার পূর্বের সকল গুনাহ নষ্ট করে দেয়? {৪৫]
আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে দুটি হাদিস, প্রথমটি তিনি [সাল্লালাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি শারীককারীদের শিরক হইতে মুক্ত। …. দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অহংকার আমার চাদর- ইনশাআল্লাহ তাআলা রিয়ার অনুচ্ছেদে শীঘ্রই তা বর্ণনা করব।
{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১২১, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৫১৫, সহীহ আল জামি ১৩২৯, সহীহ আত তারগীব ১০৯৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৯৯০; অত্র হাদিসের يَا عَمْرٍو শব্দটি মুসলিমের নেই।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৯
মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে [সহজে] জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তুমি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে, কিন্তু যার পক্ষে আল্লাহ এটা সহজ করে দেন, তার পক্ষে এটা খুবই সহজ। তা হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত করিবে, কাউকে তাহাঁর সাথে শারীক করিবে না। নিয়মিত নামাজ ক্বায়িম করিবে, যাকাত দিবে, রমযানের সিয়াম পালন করিবে এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ করিবে। তারপর তিনি [সাঃআঃ] বললেন, হে মুআয! আমি কি তোমাকে কল্যাণকর দরজাসমূহ বলে দিব না? [জেনে রেখ] সিয়াম [কুপ্রবৃত্তির মুকাবিলায়] ঢালস্বরূপ। দান-সদাক্বাহ্ গুনাহকে নির্মূল করে দেয়। যেমনিভাবে পানি আগুনকে ঠান্ডা করে দেয়। এভাবে মানুষের মধ্য-রাত্রির [তাহাজ্জুদের] নামাজ [আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ শেষ হয়ে যায়]। অতঃপর [তার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত] তিনি [সাঃআঃ] পাঠ করিলেন : “সৎ মুমিনদের পাঁজর বিছানা থেকে আলাদা থাকে [অর্থাৎ তারা শয্যা ত্যাগ করে ইবাদত রত থাকে] আর নিজেদের পরওয়ারদিগারকে আশা- নিরাশার স্বরে ডাকতে খাকে। যে সম্পদ আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে। কোন মানুষই জানে না, এ সৎ মুমিনদের চোখ ঠান্ডা করার জন্য কি জিনিস লুক্কায়িত রাখা হয়েছে। এটা হল তাদের কৃত সৎ আমালের পুরস্কার”- [সূরাহ্ সাজদাহ্ ৩২ : ১৬-১৭]। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বলেন, আমি কি তোমাকে বলে দিব না, [দ্বীনের] কাজের খুঁটি স্তম্ভ কি এবং তার উচ্চশিখরই বা কি? আমি বললাম, হাঁ, বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল! তখন রসূল [সাঃআঃ] বললেন, দ্বীনের [সমস্ত কাজের] আসল হচ্ছে ইসলাম [অর্থাৎ কালিমা]। আর তার স্তম্ভ হল নামাজ, আর উচ্চশিখর হচ্ছে জিহাদ। অতঃপর তিনি তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এ সকলের মূল বলে দিব না? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর নবী! অবশ্যই তা বলে দিন। রসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর জিহ্বা ধরে বললেন, এটাকে সংযত রাখ। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল। আমরা মুখ দ্বারা যা বলি, এ সম্পর্কেও কি [পরকালে] আমাদের জবাহদিহির সম্মুখীন হইতে হবে? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, সর্বনাশ, কি বললে হে মুআয! [জেনে রেখ কিয়ামতের দিন] মানুষকে মুখের উপর অথবা নাকের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবে। তার কারণ মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অসংযত কথা। {১}
{১} সহীহ: আহমাদ ২১৫৫১, তিরমিজি ২৬১৬, ইবনি মাজাহ ৩৯৭৩, সহীহুল জামি ৫১৩৬; দ্রষ্টব্য হাদিস : ৮০৯৭, ৫৩০৩।
[১] اَمْرٌ [আমর] শব্দটি তাখরীজের কোন গ্রহণযোগ্য উৎস গ্রন্থে নেই। [২] جُنَّةٌ [জুন্নাহ্] শব্দের অর্থ জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢাল। [৩] মুদ্রণে এরূপ হয়েছে যা মূলত লেখন বিকৃতি। সঠিক ইবারত হলোঃ [اَلَا أُخْبِرُكَ عَلى بِرَأسِ الْاَمْرِ]। আবার কোন কোন বর্ণনায় [أَدُلُّكَ عَلى رَأسِ الْأَمْرِ] রয়েছে।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩০
আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান- খয়রাত করে আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান- খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৬৮১, সহীহুল জামি ৫৯৬৫।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩১
মুআয ইবনি আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বর্ণনা করিয়াছেন এবং এতে বর্ণিত হয়েছে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিয়েছে। {১}
{১} হাসান : তিরমিজি ২৫২১, সহীহুত্ তারগীব ৩০২৮।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৩২
আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : আমলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা, আর আল্লাহর জন্যই কারো সাথে ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করা। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৪৫৯৯, যঈফুত্ তারগীব ১৭৮৬। দুটি কারণে- প্রথমত সাহাবী আবু বাকর থেকে বর্ণনাকারী অপরিচিত ব্যক্তি, দ্বিতীয়ত ইয়াযীদ বিন যিয়াদ দুর্বল রাবী।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৩৩
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: সেই ব্যক্তি মুসলিম যার হাত ও মুখ হইতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর [প্রকৃত ও পরিপূর্ণ] মুমিন সে ব্যক্তি যার থেকে মানুষ নিজের জীবন ও সম্পদকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে মনে করে। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২৬২৭, নাসায়ী ৪৯৯৫, সহীহুল জামি ৬৭১০।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩৪
ফাযালাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ঈমাম বায়হাক্বী তাহাঁর শুআবুল ঈমান গ্রন্থে ফাযালাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন তাতে এ শব্দগুলো বেশি রযেছে : “আর প্রকৃত মুজাহিদ হল সে, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজের নাফসের সাথে জিহাদ করে এবং [প্রকৃত] মুহাজির সে ব্যক্তি, যে সকল অপরাধ ও গুনাহ বর্জন করে। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ৬/২১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৪৯, বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান ১০৬১১।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩৫
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ খুৎবাহ্ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে, যার আমানাতদারী নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীনও নেই। [বায়হাক্বী-এর শুআবুল ঈমান]{১}
{১} সহীহ/হাসান : আহমাদ ৩/১৩৫, সহীহুত্ তারগীব ৩০০৪, শুআবুল ঈমান ৪০৪৫।
আমি [আলবানী] বলছিঃ اَلسُّنَنُ الْكُبْرى [আসসুনানুল কুবরা]-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৮৮ নং পৃষ্ঠায় লেখক হাদিসটি এভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। আর লেখকের হাদিসটি ঈমাম বায়হাক্বী [রাহিমাহুল্লাহ]-এর দিকে সন্বোধন করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকাটা ধারণা দেয় যে, হাদিসটি বায়হাক্বীর চেয়ে প্রসিদ্ধ এবং উঁচু স্তরের কেউ বর্ণনা করেনি। তবে বিষয়টি মোটেও এরূপ নয়। কারণ ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি তাহাঁর মুসনাদের ৩য় খণ্ডের ১৩৫, ১৫৪, ২৫১ নং পৃষ্ঠায় এবং اَلسُّنَّةٌ [আস্ সুন্নাহ] গ্রন্থের ৯৭ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করিয়াছেন। উপরন্তু আল্লামা যিয়া তার রচিত فِى الْأَحَادِيْثِ الْمُخْتَارِ [ফিল আহা-দীসিল মুখতা-র] নামক গ্রন্থে আনাস [রাদি.] হইতে উভয় সূত্রেই ২/২৩৪ পৃঃ রিওয়ায়াত করিয়াছেন। আর এ হাদিসটি ভালো তার একটি সানাদ হাসান স্তরের এবং তার অনেক শাহিদ বর্ণনাও রয়েছে।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর রসূল, আল্লাহ [তাহাঁর অনুগ্রহে] তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। {১}
{১} সহীহ: মুসলিম ২৯, তিরমিজি ২৬৩৮, আহমাদ ২২৭১১, সহীহ ইবনি হিব্বান ২০২, সহীহ আল জামি ৬৩১৯।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩৭
উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি [খাঁটি মনে] এ বিশ্বাস নিয়ে মারা যাবে যে, “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। {১}
{১} সহীহ: মুসলিম ২৬, শুআবুল ঈমান ৯৪।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩৮
জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন: দুটি বিষয় দুটি জিনিসকে [জান্নাত ও জাহান্নামকে] অনিবার্য করে দেয়। এক সহাবী জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ দুটি বিষয় কি? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যে আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করে মৃত্যুবরণ করেছে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করিবে। আর যে আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করিবে। {১}
ভালো এবং মন্দ উভয়কে مُوْجِبَةٌ [আবশ্যককারী] বলা হয়। আল জামাআতের নিকট وجوب এর অর্থ পুরস্কারের ওয়াদা এবং শাস্তির অঙ্গীকার। হাদীসে বর্ণিত مُوْجِبَةٌ এর অর্থ কারণ। কেননা প্রকৃত مُوْجِبٌ হলেন মহান আল্লাহ। অতএব শির্ক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা জাহান্নামে প্রবেশের কারণ। আর তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে মৃত্যুবরণ করা জান্নাতে প্রবেশের কারণ।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৩৯
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা কয়েকজন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে ঘিরে বসা ছিলাম। আমাদের সাথে আবু বাকর ও উমার [রাদি.] ও ছিলেন। হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের মধ্য হইতে উঠে চলে গেলেন এবং এত বিলম্ব করিলেন যাতে আমরা শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। না জানি আমাদের হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবার কোন বিপদে পড়লেন কিনা। এতে আমরা ঘাবড়িয়ে গেলাম এবং উঠে বের হয়ে পড়লাম। অবশ্য সকলের মধ্যে আমিই প্রথম ভীত হয়ে পড়েছিলাম। তাই রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সন্ধানে আমি সকলের আগে বের হলাম। এমনকি খুঁজতে খুঁজতে আমি বানী নাজ্জার গোত্রের জনৈক আনসারীর প্রাচীরবেষ্টিত বাগানের নিকট পৌছলাম। ভিতরে প্রবেশ করার জন্য তার চারদিকে দরজা খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি, বাইরের একটি কূপ হইতে একটি ছোট নালা এসে বাগানের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, আমি জড়োসড়ো হয়ে তাতে প্রবেশ করলাম এবং ধীরে ধীরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট যেয়ে পৌছলাম। তিনি [আমাকে তাহাঁর সামনে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে] বললেন, আবু হুরাইরাহ নাকি! আমি বললাম, হাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, কি ব্যাপার? [তুমি এখানে?] আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের মধ্যে বসা ছিলেন, হঠাৎ উঠে চলে আসলেন। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে আপনাকে ফিরে আসতে না দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। [আল্লাহ্ না করুন] আমাদের হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনি কোনরূপ বিপদের সম্মুখীন হলেন কিনা। এজন্য আমরা সকলেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং সকলের মধ্যে আমিই প্রথম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। অতঃপর [আপনাকে খোঁজ করিতে করিতে] এ বাগানের দিকে আসি এবং শিয়ালের ন্যায় খুব সরু হয়ে বাগানে প্রবেশ করি। আর অন্যান্যরাও [আপনার জন্য] আমার পেছনে আসছে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর জুতাদ্বয় আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, হে আবু হুরাইরাহ! আমার জুতা দুটি সাথে নিয়ে যাও! [তুমি আমার কাছে এসেছিলে লোকেরা যেন বুঝতে পারে তার নিদর্শনস্বরূপ] আর বাগানের বাইরে যাদের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাদের মধ্যে যারা সত্য দৃঢ় মনে আক্বীদার সাথে এ ঘোষণা দিবে, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই”, তাদেরকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বলেন, [রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিদর্শন নিয়ে বাইরে আসলে] প্রথমেই উমার-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, আবু হুরাইরাহ! এ জুতা দুটি কার ? আমি বললাম, এ জুতা দুটি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর। তিনি [সাঃআঃ] এ জুতা দুটি আমার কাছে দিয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি সত্য দৃঢ় মনে আক্বীদার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই”, আমি যেন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেই। এ কথা শুনা মাত্রই উমার আমার বুকের উপর এমন ঘুষি মারলেন যে, আমি চিৎ হয়ে পড়ে গেলাম। অতঃপর উমার আমাকে বললেন, ফিরে যাও, হে আবু হুরাইরাহ! তাই আমি কাঁদতে কাঁদতে রসুলের কাছে ফিরে এলাম। [আমার মনে উমারের ভয় ছিল] পিছন ফিরে দেখি উমার আমার সাথে এসে পৌছেছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] [কাঁদতে দেখে] জিজ্ঞেস করিলেন, হে উমার! এমন করলে কেন? উমার [রাদি.] বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আপনি আপনার জুতা দুটি দিয়ে আবু হুরায়রাহ কে পাঠিয়েছেন এ বলে, যে ব্যক্তি অন্তরের স্থির বিশ্বাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই, তাকে যেন সে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়? রসুলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেন, হাঁ। উমার বললেন, [হে আল্লাহর রসূল! অনুগ্রহ করে] এরূপ বলবেন না। আমার আশঙ্কা হয় [এ কথা শুনে] পরবর্তী লোকেরা এর উপর নির্ভর করে বসবে [আমাল করা ছেড়ে দিবে]। সুতরাং তাদেরকে যথাযথভাবে আমাল করিতে দিন। এ কথা শুনে রসুলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেন, ঠিক আছে! তাদেরকে আমাল করিতে দাও। {১}
{১} সহীহ: মুসলিম ৩২, সহীহ ইবনি হিব্বান ৪৫৪৩।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪০
মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : জান্নাতের চাবি হচ্ছে “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই” বলে [অন্তরের সাথে] সাক্ষ্য দেয়া। {১}
{১} জইফ: আহমাদ ২১৫৯৭, যঈফুত্ তারগীব ৯২৬। কারণ শাহর খারাপ স্মৃতিশক্তির দোষে দুষ্ট একজন দুর্বল রাবী এবং সে মুআয [রাদি.]-কে পাননি।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৪১
উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যখন ইন্তিকাল হলো, [তাহাঁর ইন্তিকালে শোকাহত হয়ে] তাহাঁর সহাবীগণের মধ্যে কতক লোক অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি সহাবীগণের কারো কারো মনে নানারূপ সন্দেহ-সংশয় দেখা দেয়। [তাহাঁর ইন্তিকালের পর এ দ্বীন টিকে থাকিবে কি?] উসমান [রাদি.] বলেন, আমিও তাদের অন্যতম ছিলাম। এমতাবস্থায় আমি বসেছিলাম আর উমার আমার পাশ দিয়ে চলে গেলেন এবং আমাকে সালামও দিলেন, অথচ আমি তা টেরও পেলাম না। উমার গিয়ে আমার বিরুদ্ধে আবু বাকরের কাছে অভিযোগ পেশ করিলেন। অতঃপর তাঁরা দুজন আমার নিকট আসলেন এবং উভয়ে আমাকে সালাম করিলেন। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] বললেন, তোমার ভাই উমারের সালামের জবাব কেন দিলে না? আমি বললাম, আমি তো এরূপ করিনি। [উমার আমার কাছে এসেছেন ও সালাম দিয়েছেন আর আমি উত্তর দেইনি, এমন তো হইতে পারে না]। উমার [রাদি.] বললেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তুমি এরূপ করেছো। উসমান বললেন, আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি মোটেই বুঝতে পারিনি আপনি কখন এখান দিয়ে গেছেন ও আমাকে সালাম করিয়াছেন। [কথোপকথন শুনে] আবু বাকর [রাদি.] বললেন, উসমান সত্যই বলেছেন। নিশ্চয়ই আপনাকে কোন দুশ্চিন্তাই হয়তো বিরত রেখেছিল। তখন আমি বললাম, জি, হইতে পারে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, সে [ব্যাপারটা] কি? আমি বললাম, আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর রসূলকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন অথচ আমরা তাঁকে একটি বিষয় [মনের অযথা খটকা] হইতে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে পারিনি। আবু বাকর [রাদি.] বললেন, [চিন্তার কোন বিষয় নয়] আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। [এটা শুনে] আমি আবু বাকরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনিই এ রকম কাজের যোগ্য ব্যক্তি। তারপর আবু বাকর [রাদি.] বললেন, আমি রসূলকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বিষয়টি হইতে মুক্তির উপায় কি? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] জবাবে বললেন, যে লোক সে কালিমা গ্রহণ করিল, যা আমি আমার চাচা [আবু তালিব]-কে বলেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তার জন্য এটাই হল মুক্তির মাধ্যম। {১}
{১} জইফ: আহমাদ ২১, কারণ এর সানাদে একজন মুবহাম [নাম অস্পষ্ট] রাবী রয়েছে।
অর্থাৎ- তাদের কেউ কেউ সন্দেহে বা কুমন্ত্রণায় পড়ে গেল যে, রসূল সাঃআঃ মৃত্যুবরণ করায় এ দ্বীন শেষ হয়ে যাবে এবং ইসলামী শারীআতের উজ্জ্বল প্রদীপ নির্বাপিত হবে- [মিরকাত]। সাহাবী উসমান [রাদি.]-এর উক্তি عَنْ نَجَاةِ هَذَ الْاَمْرِ -এর দ্বারা দুটি বিষয় উদ্দেশ্য হইতে পারে। ১ম মতঃ মুমিনদের বর্তমান অবস্থা, অর্থাৎ- তারা কিভাবে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাবে যা ইসলাম ধর্মের সাথে নির্দিষ্ট। ২য় মতঃ সকল মানুষের বর্তমান অবস্থা, অর্থাৎ- তারা যে শায়ত্বনের [শয়তানের] ধোঁকা, দুনিয়ার ভালোবাসা এবং কুপ্রবৃত্তির দিকে ধাবমান অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে- [মিরকাত]।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৪২
মিক্বদাদ {ইবনি আস্ওয়াদ] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, এ জমিনের উপর এমন কোন মাটির অথবা পশমের ঘর [তাঁবু] বাকী থাকিবে না, যে ঘরে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইসলামের বাণী পৌছিয়ে দিবেন না। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে আর লাঞ্ছিতের ঘরে লাঞ্ছনার সাথে তা পৌছাবেন। আল্লাহ্ তাআলা যাদেরকে সম্মানিত করিবেন তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম কবূলের উপযুক্ত করে মর্যাদাবান ও গৌরবময় করে দিবেন। পক্ষান্তরে যারা ইসলাম গ্রহণ করিবে না, তাদের আল্লাহ্ তাআলা লাঞ্ছিত করিবেন এবং তারা এ কালিমার প্রতি অনুগত হবার জন্য বাধ্য হবে। [মিক্বদাদ বলেন, এটা শুনে] আমি বললাম, তখন তো সমগ্র বিশ্বে আল্লাহরই দ্বীন [প্রতিষ্ঠিত] হয়ে যাবে। [অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপরই ইসলাম বিজয়ী হবে]। {১}
1] সহীহ: আহমাদ ২৩৩০২।
ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি সহীহ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদিসটি অন্যরাও বর্ণনা করিয়াছেন যাদের নাম আমি [আলবানী] আমার লিখিত গ্রন্থ تَحْذِيْرُ السَّاجِدِ مِنْ اِتِّخَاذِ الْقُبُوْرِ الْمَسَاجِدَ এ উল্লেখ করেছি। ঈমাম বোখারী এ হাদিসটি মুআল্লিক্ব [সানাদবিহীন] সূত্রে তথা সানাদ ছাড়াই বর্ণনা করিয়াছেন।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪৩
ওয়াহব ইবনি মুনাব্বিহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তাকে জিজ্ঞেস করা হল, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” [আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবূদ নেই]-এ বাক্য কি জান্নাতের চাবি নয়? ওয়াহব বললেন, নিশ্চয় [এটা চাবি]। কিন্তু প্রত্যেক চাবির মধ্যেই দাঁত থাকে। তুমি যদি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও তবেই তো তোমার জন্য [জান্নাতের দরজা] খুলে দেয়া হবে, অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না। {১}
{১} সহীহ: ফাতহুল বারী ১/৪১৭; ঈমাম বোখারী হাদিসটি সানাদ ছাড়াই উল্লেখ করিয়াছেন।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪৪
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ উত্তমভাবে [সত্য ও খালিস মনে] মুসলিম হয়, তখন তার জন্য প্রত্যেক সৎ কাজের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। আর তার অসৎ কাজ-যা সে করে থাকে, তার অনুরূপই [মাত্র এক গুণই গুনাহ] আমালনামায় লেখা হয়, যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর দরবারে পৌঁছায়। {১}
{১} সহীহ: বোখারী ৪২, মুসলিম ১২৯, আহমাদ ৮২১৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ২২৮, শুআবুল ঈমান ৭০৪৬, সহীহুল জামি ২৮৭; হাদিসের শব্দ মুসলিমের।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪৫
আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! ঈমান কী? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যখন তোমাকে নেক [সৎ] কাজ আনন্দ দিবে ও খারাপ [অসৎ] কাজ পীড়া দিবে, তখন তুমি মুমিন। আবার সে লোকটি জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! খারাপ [অসৎ] কাজ কি? উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যখন কোন কাজ করিতে তোমার মনে দ্বিধা ও সন্দেহের উদ্রেক করে [তখন মনে করিবে এটা গুনাহের কাজ], তখন তা ছেড়ে দিবে। {১}
{১} সহীহ: আহমাদ ২১৬৬২, সহীহুত্ তারগীব ১৭৩৯।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪৬
আমর ইবনি আবাসাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ দীনে [ইসলামের দাওয়াতের ব্যাপারে একেবারে প্রথমদিকে] আপনার সাথে আর কারা ছিলেন? রসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেন, আযাদ ব্যক্তি [আবু বাকর] ও একজন গোলাম [বিলাল]। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, ইসলাম [তার নিদর্শন] কী? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, মার্জিত কথাবার্তা বলা ও [অভুক্তকে] আহার করানো। অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঈমান [তার পরিচয়] কী? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, [গুনাহের কাজ হইতে] ধৈর্য ধরা ও দান করা। তিনি [আমর] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যার হাত ও জিহ্বার অনিষ্ট হইতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। [আমর বলেন] আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, কোন ঈমান [ঈমানের কোন শাখা] উত্তম? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেন, সৎস্বভাব। আমর বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সলাতে কোন্ জিনিস উত্তম? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে ক্বিয়াম করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন হিজরত উত্তম। উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, মহান আল্লাহ্ যা অপছন্দ করে তুমি এমন কাজ ছেড়ে দিবে। আমি বললাম, কোন জিহাদ উত্তম ? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যার ঘোড়ার হাত-পা কর্তিত এবং নিজের রক্ত নির্গত হয়েছে [অর্থাৎ সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যার ঘোড়া যুদ্ধে মারা যায় এবং সেও শাহীদ হয়]। আমি বললাম, সর্বোত্তম কোন্ সময়? তিনি [সাঃআঃ] উত্তরে বললেন, শেষ রাতের মধ্যভাগ। [আহমাদ ১৮৯৪২]{১}
{১} সহীহ: আহমাদ ১৮৯৪২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৫১।
এখানে قُنُوْطٌ [কুনূত্ব] দ্বারা ক্বিয়াম [কিয়াম], ক্বিরাআত [কিরআত] অথবা বিনয় নম্রতা তিনটিই উদ্দেশ্য হইতে পারে। جَوْفُ الْلَيْلِ [জাওফুল লায়ল] অর্থ মধ্যরাত্রি। ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি তার মুসনাদের ৫/২৩২ নং পৃষ্ঠায় সহীহ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪৭
মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক না করে, [দৈনিক] পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে এবং রমাযানের সিয়াম পালন করে তাহাঁর কাছে পৌঁছাবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি এ সুসংবাদ তাদেরকে জানিয়ে দিব না? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, [না] তাদেরকে আমাল করিতে দাও। {১}
{১} সহীহ: আহমাদ ২১৫২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩১৫।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৪৮
মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, উত্তম ঈমান সম্পর্কে? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, কাউকে তুমি ভালবাসলে আল্লাহর ওয়াস্তেই ভালবাসবে। অপরদিকে শত্রুতা করলে তাও আল্লাহর ওয়াস্তেই করিবে এবং নিজের জিহ্বাকে [খালিস মনে] আল্লাহর যিক্রে মশগুল রাখবে। তিনি [মুআয] জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! এছাড়া আমি আর কি করব? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, অপরের জন্য সে-ই জিনিস পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ কর। আর অপরের জন্যও তা অপছন্দ করিবে যা নিজের জন্য অপছন্দ করে থাকো [অর্থাৎ সকলেরই কল্যাণ কামনা করিবে]। {১}
{১} জইফ : আহমাদ ২১৬২৫, যঈফুত্ তারগীব ১৭৮৪। এর সানাদে দুজন দুর্বর রাবী রয়েছে- ১] যিয়াদ ইবনি ফায়িদ, ২] ইবনি লাহ্ইয়া।
তাহকীক মিশকাতুল মাসাবীহ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply