বাইন তিন তালাক সম্পর্কে হাদিস । ঈলা যিহার ও খুলা বর্ণনা

বাইন তিন তালাক সম্পর্কে হাদিস । ঈলা যিহার ও খুলা বর্ণনা

বাইন তিন তালাক সম্পর্কে হাদিস । ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ২৭,তালাক, হাদিস (৩৩৮৯-৩৪৬৫)

১.পরিচ্ছেদঃ ইদ্দাতের সুষ্ঠু হিসাবের লক্ষ্যে মহান মহিয়ান আল্লাহর নির্দেশিত তালাকের সময় প্রসঙ্গ
২.পরিচ্ছেদঃ সুন্নাত পদ্ধতির তালাক
৩.পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর হায়েয অবস্থায় এক তালাক দিলে এর হুকুম কি?
৪.পরিচ্ছেদঃ একত্রে তিন তালাক এবং সে বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি
৫.পরিচ্ছেদঃ স্বামী-স্ত্রীর সংগত হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন সময়ে তিন তালাক দিলে
৬.পরিচ্ছেদঃ সংগত হওয়ার পূর্বে তালাক দ্বারা পূর্ববর্তী স্বামীর জন্য বৈধ হওয়া প্রসঙ্গ
৭.পরিচ্ছেদঃ চূড়ান্ত তালাক
৮.পরিচ্ছেদঃ তোমার ব্যাপার তোমার হাতে প্রসঙ্গ১
৯.পরিচ্ছেদঃ তিন তালাকপ্রাপ্তাকে হালাল করে বিবাহ প্রসংগে
১০.পরিচ্ছেদঃ তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীকে হালাল করা এবং এ বিষয়ে কঠোর সতর্কবানী
১১.পরিচ্ছেদঃ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে সামনা-সামনি তালাক দেওয়া
১২.পরিচ্ছেদঃ হে নাবী। আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করিয়াছেন আপনি তা হারাম করছেন কেন? [৬৬ঃ১] – উক্ত আয়াতের তাফসীর
১৩.পরিচ্ছেদঃ এই আয়াতের ভিন্ন ব্যাখ্যা
১৪.পরিচ্ছেদঃ অর্থাৎ কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে ঃ তুমি তোমার পরিবারের লোকদের সাথে মিলিত হও
১৫.পরিচ্ছেদঃ ক্রীতদাসের তালাক
১৬.পরিচ্ছেদঃ নাবালেগের তালাক কখন কার্যকর করা হইবে?
১৭.পরিচ্ছেদঃ যে স্বামীর তালাক কার্যকর হইবে না
১৮.পরিচ্ছেদঃ মনে মনে তালাক দেয়া
১৯.পরিচ্ছেদঃ বোধগম্য ইঙ্গিতে তালাক
২০.পরিচ্ছেদঃ কথা বলে, তার সম্ভাব্য কোন অর্থ উদ্দেশ্য করা
২১.পরিচ্ছেদঃ কোন কথা বলে, এর বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য না করা
২২.পরিচ্ছেদঃ তালাক গ্রহণের জন্য প্রদত্ত ইখতিয়ারে মত প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়
২৩.পরিচ্ছেদঃ যে ইখতিয়ারপ্রাপ্তা স্বামীকে গ্রহণ করে
২৪.পরিচ্ছেদঃ যে দাসী আযাদ হইয়াছে এবং তার স্বামী দাস, তার ইখতিয়ার সম্পর্কে
২৫.পরিচ্ছেদঃ ঈলা১
২৬.পরিচ্ছেদঃ যিহার১
২৭.পরিচ্ছেদঃ খুলা১

১.পরিচ্ছেদঃ ইদ্দাতের সুষ্ঠু হিসাবের লক্ষ্যে মহান মহিয়ান আল্লাহর নির্দেশিত তালাকের সময় প্রসঙ্গ

৩৩৮৯. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে তালাক দিলেন, তখন তাহাঁর স্ত্রী ছিল [মাসিক] ঋতুমতী। তখন উমার [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর নিকট এর সমাধান চাইলেন। তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ-কে বলে দাও, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয় [রাজআত করে] এবং হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পযন্ত তাকে দূরে রাখে [সহবাস না করে]। এরপর সে আবার ঋতুমতী হইয়া হইয়া যখন পবিত্র হইবে, তখন সে যদি ইচ্ছা করে তবে তার সাথে সহবাস করার পূর্বেই তাকে তালাক দেবে, আর যদি সে ইচ্ছা করে তাহলে তাকে রেখে দেবে। এটাই তার সে ইদ্দত, যে অনুযায়ী স্ত্রীদের তালাক ব্যাপারে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা আদেশ করিয়াছেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯০. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর যুগে তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। তখন উমার ইবনিল খাওাব [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর নিকট এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ তাকে বল, যেন তাকে ফিরিয়ে নেয় এবং পাক হওয়া পযন্ত তাকে [ সহবাস না করে ] দূরে রাখে। হায়েযের পর পাক হলে পরে যদি ইচ্ছা করে তাকে রাখবে, আর যদি ইচ্ছা করে তালাক দেবে — স্পর্শ [সহবাস] করার পূর্বে। এটাই সে ইদ্দত, যে অনুযায়ী মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের তালাক ব্যাপারে আদেশ করিয়াছেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] হায়াতে থাকাকালে আমি আমার স্ত্রীকে তাহাঁর হায়য অবস্থায় তালাক দিলাম। উমার [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর নিকট এই ঘটনা আলোচনা করলে রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] রাগান্বিত হইয়া বললেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে। এরপর এক হায়েয হওয়া পযন্ত তাকে তার অবস্থায় রাখবে [সহবাস করিবে না] এবং যতক্ষন না সে পবিত্র হইবে। এরপর সে যদি তাকে তালাক দিতে চায়, তাহলে তার পাক অবস্থায় তাকে তালাক দেবে—- সহবাস করার পূর্বে। এই তালাক হলো ইদ্দত অনুযায়ী, যেমন মহান মহিয়ান আল্লাহ নাযিল করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি তাকে ফিরিয়ে রাখলাম [রুজু করলাম]; আর আমি তাকে যে তালাক দিয়েছিলাম, তাকে এক তালাক হিসাবে গণ্য করলাম।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯২. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমাকে আবু যূবায়র অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি আবদুর রহমান ইবনি আয়মন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে ইবনি উমরের নিকট প্রশ্ন করিতে শুনেছেন, আর তখন আবু যুবায়র [রাঃআঃ] শুনছিলেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে আপনি তা কিরূপ মনে করেন? তিনি তাকে বললেনঃ নাবী [সাঃ] –এর যুগে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে উমার [রাঃআঃ] [এ ব্যাপারে] রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] এর নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে। এ কথা বলে তিনি তা [আমার দেওয়া তালাক] আমাকে রদ করিলেন। তিনি বললেনঃ যখন সে পাক হইবে, তখন ইচ্ছা হলে তাকে তালাক দেবে; আর না হয় তাকে রেখে দেবে। ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ এরপর নাবী[সাঃ] বললেনঃ [কুরআনের নির্দেশ]

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ} [الطلاق: 1]

অর্থঃ “হে নাবী ! যখন তোমরা নারীদের তালাক দিবে তখন তাহাদের ইদ্দত পালনের পূর্ববর্তী অবস্থা বিবেচনা করে তালাক দিবে।”

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ তাআলার বানীঃ [আর বি] সম্পর্কে বর্ণিত যে, ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেছেন [আয়াতে]

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ} [الطلاق: 1]

অর্থাৎ ইদ্দতের পূর্বের সময় হিসাব করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২.পরিচ্ছেদঃ সুন্নাত পদ্ধতির তালাক

৩৩৯৪. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ সুন্নত তালাক হলো, যে পাক [মাসিক না থাকা] অবস্থায় সহবাস করা হয়নি, তাতে এক তালাক দিবে। এরপর যখন হায়েয হওয়ার পর পাক হয়, তখন তাকে আর এক তালাক দিবে। এরপর যখন সে আবার হায়েয থেকে পাক হয়, তখন আরো এক তালাক দিবে। এরপর সে [এক] হায়েয ইদ্দত পালন করিবে। আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমি ইবরাহীমকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি এরূপ বলিলেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯৫. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ সুন্নত তালাক হলো স্ত্রীকে যে পবিত্রতা [মাসিক না থাকা] অবস্থায় সহবাস করা হয় নি, সে সময় তাকে [স্ত্রীকে] এক তালাক দেয়া।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩.পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর হায়েয অবস্থায় এক তালাক দিলে এর হুকুম কি?

৩৩৯৬. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় এক তালাক দেন। তখন উমার [রাঃআঃ] গিয়ে নাবী [সাঃ] – কে এ সংবাদ দিলে তিনি তাকে বলিলেন, আব্দুল্লাহকে বল, সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে এবং যখন সে [হায়েয থেকে পবিত্র হইয়া] গোসল করিবে, তখন অন্য হায়েয পযন্ত সহবাস করিবে না, যখন অন্য হায়েয হইতে গোসল করিবে, তখন তাকে তালাক দেওয়ার আগে স্পর্শ [সহবাস] করিবে না। যদি তাকে রাখতে চায়, তবে রেখে দেবে। এটাই সেই ইদ্দত – মহান মহিয়ান আল্লাহ পাক যাহার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার আদেশ করিয়াছেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯৭. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলেন। এই খবর নাবী[সাঃ] – এর নিকট পৌছলে তিনি বলিলেন, তাকে বল, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়, এরপর তাকে তালাক দেয় পাক অবস্থায় অথবা গর্ভাবস্থায় [হওয়া স্পষ্টরূপে নিদেশিত হওয়ার পরে]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯৮. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] তাকে তার নিকট ফিরিয়ে দেন। পরে তিনি তাকে পাক-পবিত্র অবস্থায় [যথা নিয়মে] তালাক দেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩৯৯. ইঊনুস ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমার[রাঃআঃ]- কে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, যে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। তখন তিনি বলেনঃ তুমি কি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-কে চিন? সে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়, তখন উমার [রাঃআঃ] নাবী[সাঃ] এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে আদেশ করলেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে এবং এরপর তার ইদ্দতের [সুষ্ঠু ব্যবস্থার] অপেক্ষা করিবে। তখন তাকে আমি বললামঃ এই তালাকের জন্য কি ইদ্দত পালন করিবে? তিনি বললেনঃ তবে আর কী? সে যদি অক্ষমতা এবং মূর্খতার পরিচয় দেয়, তাহলে তুমি বল তো [কি সে তালাক গণ্য হইবে না] ?

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪০০. ইঊনুস ইবনি জুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]- কে বললামঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-কে চিন, সে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়, তখন উমার [রাঃআঃ] তার এ বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর নিকট আসলে, তিনি তাকে এ নির্দেশ দেন যে, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়; এরপর তার ইদ্দতের [যথার্থ সময়ের] অপেক্ষা করে। আমি তাকে বললামঃ যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়, তখন এই তালাকের জন্যও কি তাকে ইদ্দত পালন করিতে হইবে? তিনি বললেনঃ তবে আর কী? যদি সে অক্ষমতা এবং মূর্খতার পরিচয় দেয়, তাহলে তুমিই বল [সে কি তালাক গণ্য হইবে না] ?

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪.পরিচ্ছেদঃ একত্রে তিন তালাক এবং সে বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি

৩৪০১. ইবনি মাখরামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুলাহ [সাঃ]- কে এক ব্যক্তি সম্বন্ধে অবহিত করা হলো, সে তার স্ত্রীকে একত্রে তিন তালাক দিয়েছে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হইয়া দাঁড়িয়ে বললেনঃ সে কি আল্লাহর কিতাব নিয়ে খেলা করছে? অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্। আমি কি তাকে হত্যা করবো না?

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৩৪০২. মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

সাহ্-ল ইবনি সাদ সাঈদী তাঁকে অবহিত করিয়াছেন যে, উওয়াইমির আজলানী আসিম ইবনি আদী [রা.] – এর নিকট আগমন করে বললেনঃ হে আসিম। তুমি কি মনে কর, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে কোন ব্যক্তিকে দেখিতে পায়, তাহলে সে কি তাকে হত্যা করিবে? তা হলে তো লোকেরাও তাকে হত্যা করিবে অথবা কি করিবে? হে আসিম। তুমি আমার পক্ষ হইয়া রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] – কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর। তখন আসিম রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বেশি প্রশ্ন করা অপছন্দ করিলেন এবং তাতে দোষারোপ করিলেন। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] থেকে যা শুনলেন, তা আসিম [রাঃআঃ] অতিশয় গুরুতর মনে করিলেন। আসিম [রাঃআঃ] ঘরে ফিরে আসলে উওয়াইমির [রাঃআঃ] – কে বললেনঃ তুমি তো আমার নিকট কিছু নিয়ে আসোনি, আমি যা জিজ্ঞাসা করেছি, তাতে রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] অসন্তুষ্ট হইয়াছেন। উওয়াইমির [রাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহর শপথ। আমি রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে জিজ্ঞাসা না করে ক্ষান্ত হবো না। এরপর উওয়াইমির [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর নিকট আগমন করে জনসমক্ষে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]। আপনি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলেন, যে তার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন ব্যক্তি দেখিতে পায়। সে কি হত্যা করিবে, ফলে আপনারাও তাকে হত্যা করবেন অথবা সে কি করিবে? তখন রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] বললেনঃ তোমার এবং তোমার সংগিনীর ব্যাপারে ফয়সালা নাযিল হইয়াছে। অতএব তুমি গিয়ে তাকে নিয়ো এসো। সাহল [রাঃআঃ] বলেনঃ এরপর উভয় এসে লিআন‍১ করিলেন। তখন আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর নিকট ছিলাম। যখন উওয়াইমির [রাঃআঃ] লিআন শেষ করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্। যদি তাকে রাখি, তাহলে [লোকেরা বলবে] আমি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] – এর আদেশ করার পূর্বেই তিনি তাকে তিন তালাক দিলেন।

{১} লিআন শব্দের অর্থ – একে অপরের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ ও ক্রোধের বদ দুআ করা। শরীআতের পরিভাষায় স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে চরিত্রহীনতা ও যিনার অভিযোগ উত্থাপন করার ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর উভয়কে বিশেষ পদ্ধতিতে শপথ দেয়াকে লিআন বলা হয়।তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪০৩. শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

ফাতিমা বিনতে কায়স [রাঃআঃ] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে আমি রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া বললামঃ আমি আলে-খালিদের কন্যা। আর আমার স্বামী অমুক, আমার নিকট তালাকের খবর পাঠিয়েছে। আমি তার অভিভাবকের নিকট খোরপোষ এবং বাসস্থান চাইলে তারা তা আমাকে দিতে অস্বীকার করেছে। ইয়া রাসুলুল্লাহ্। তারা বললেনঃ সে তার নিকট তিন তালাকের খবর পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] বললেনঃ খোরপোষ এবং বাসস্থান স্ত্রীর জন্য ঐ সময় দেওয়া হইবে যখন তাকে ফিরিয়ে আনার [রুজ্জ কারার] অধিকার স্বামীর থাকে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪০৪. ফাতিমা বিনত কায়স [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

[তিনি বলেন]- তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীর কোন খোরপোষ ও বাসস্থান নেই।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪০৫. আবু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমার কাছে ফাতিমা বিন্‌ত কায়স [রাঃআঃ] বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবু আমর ইবনি হাফ্‌স মাখযুমী তাকে তিন তালাক দিলে খালিদ ইবনি ওয়ালীদ বনী মাখযুমের একটি ছোট দল নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর নিকট গিয়ে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্। আবু আমর ইবনি হাফ্‌স [রাঃআঃ] ফাতিমাকে তিন তালাক দিয়েছে, এখন কি সে খোরপোষ পাবে? তখন তিনি বললেনঃ তার জন্য কোন খোরপোষ এবং বাসস্থান নেই।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫.পরিচ্ছেদঃ স্বামী-স্ত্রীর সংগত হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন সময়ে তিন তালাক দিলে

৩৪০৬. ইবনি তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবু সাহবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন ঃ হে ইবনি আব্বাস! আপনি কি জানেন না, রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর যুগে এবং আবু বকর ও উমার [রাঃআঃ]-এর প্রথম যুগে তিন তালাককে এক তালাক ধরা হতো ? তিনি বলিলেন ঃ হ্যাঁ।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬.পরিচ্ছেদঃ সংগত হওয়ার পূর্বে তালাক দ্বারা পূর্ববর্তী স্বামীর জন্য বৈধ হওয়া প্রসঙ্গ

৩৪০৭. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ [একদা] রসূলুল্লাহ [সাঃ]-কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে তার স্ত্রীকে তালাক দিলে সে অন্য স্বামী গ্রহন করলো। সে স্বামী তার সাথে নির্জন বাস করলো। এরপর সহবাসের পূর্বে সে তাকে তালাক দিল, সে কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হইবে? রসূলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ না ; যতক্ষণ না দ্বিতীয় [স্বামী] তার মধুর স্বাদ গ্রহন করিবে, আর সেও তার মধুর স্বাদ গ্রহন করিবে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪০৮. আয়শা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ রিফাআ কুরাযীর স্ত্রী রসূলুল্লাহ [সাঃ]- এর খিদমতে এসে বলিলেন ঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃ] ! আমি আবদুর রহমান ইবনি যাবীর [রাঃআঃ]-কে বিবাহ করেছি। আল্লাহর কসম তাহাঁর নিকট আমার এই আঁচলের মত ব্যতীত আর কিছু [পৌরুষ] নেই। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেন ঃ মনে হয় তুমি আবার রিফাআর [রাঃআঃ]- এর নিকট ফিরে যেতে চাও। তা হইতে পারে না, যতক্ষণ না তুমি তাহাঁর মধুর স্বাদ গ্রহন কর, আর সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহন করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭.পরিচ্ছেদঃ চূড়ান্ত তালাক

৩৪০৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রিফাআ [রাঃআঃ] কুরাযীর স্ত্রী নাবী-এর নিকট আসলেন, তখন আবু বকর [রাঃআঃ] তাহাঁর নিকট ছিলেন। সে বলিলেন ঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃ]! আমি রিফাআ কুরাযীর বিবাহাধীনে ছিলাম, সে আমাকে আল্‌বাত্তা [অর্থাৎ তিন] তালাক দেয়। এরপর আমি আবদূর রহমান ইবনি যাবীর [রাঃআঃ]-কে বিবাহ করি।আল্লাহর কসম ! ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃ]! এই কাপড়ের প্রান্ত ভাগের ন্যায় ব্যতীত তার নিকট কিছু [পুরুষত্ব] নেই। এই বলে সে তার চাদরের এক প্রান্ত তুলে ধরে। তখন খালিদ ইবনি সাঈদ [রাঃআঃ] ছিল দরজায়। নাবী [সাঃ] তাকে অনুমতি দেন নি। তিনি [বাইরে থেকে] বলিলেন ঃ হে আবু বকর ! আপনি কি শুনছেন না, এই মহিলা রসূলুল্লাহ [সাঃ]- এর সামনে জোরে জোরে কী [বাজে কথা] বলছে? তিনি বলিলেন ঃ তুমি কি আবার রিফাআর নিকট প্রত্যাবর্তন করিতে চাও? তা হইতে পারে না, যতক্ষণ না তুমি তার মধু পান কর আর সে তোমার মধু পান করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮.পরিচ্ছেদঃ তোমার ব্যাপার তোমার হাতে প্রসঙ্গ১

৩৪১০. হাম্মাদ ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ আমি আইউব [রাঃআঃ]-কে বললাম, আপনি কি হাসান ব্যতীত কাউকেও [আরবি] [অর্থাৎ “তোমার ব্যাপার তোমার হাতে”] বলা দ্বারা তিন তালাক হইবে বলে বলিতে শুনেছেন ? তিনি বলিলেন ঃ না। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ ক্ষমা করুন। তবে [মনে পড়ছে] কাতাদা [আবু সালমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]] আবু হূরায়রা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, [এরূপ বললে]- তিন তালাক হইয়া যাবে। এরপর আমি কাসীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম; তিনি তা [হাদীসটি] চিনতে পারলেন না [অস্বীকার করিলেন]। এরপর আমি কাতাদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নিকট ফিরে আসলাম এবং তাঁকে এ সংবাদ দিলাম। তিনি বলিলেন ঃ সে ভুলে গেছে। আবু আবদুর রহমান বলেন ঃ এটা মুন্‌কার হাদীস।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ জইফ হাদীস

 ৯.পরিচ্ছেদঃ  তিন তালাকপ্রাপ্তাকে হালাল করে বিবাহ প্রসংগে

৩৪১১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ রিফাআ [রাঃআঃ]-এর স্ত্রী রসূলুল্লাহ [সাঃ]- এর খিদমতে এসে বললো, আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয় এবং আমাকে চূড়ান্ত [তিন] তালাক দেয়। এরপর আমি আবদুর রহমান ইবনি যাবীর [রাঃআঃ]-কে বিবাহ করি। কিন্তু তাহাঁর নিকট কাপড়ের আঁচলের মত ব্যতীত কিছু [শক্তি] নেই। রসূলুল্লাহ [সাঃ] হেসে বলিলেন ঃ মনে হয় তুমি রিফাআ [রাঃআঃ]-এর নিকট ফিরে যেতে চাও। না, [তা হয় না ;] যতক্ষণ না সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহন করে আর তুমি তাহাঁর মধুর স্বাদ গ্রহন কর।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪১২. আয়শা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি তাহাঁর স্ত্রী কে তিন তালাক দিল। এরপর সে অন্য স্বামী গ্রহন করলো, কিন্তু সে তাঁকে স্পর্শ করার [সহবাস করার] পূর্বেই তালাক দিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হল ঃ সে কি প্রথম শামির জন্য হালাল হইবে? তিনি বলিলেন, না। [হালাল হইবে না,] সে [দ্বিতীয় স্বামী] যতক্ষণ না তাহাঁর মধুর স্বাদ গ্রহন করে যেমন প্রথম স্বামী গ্রহন করেছিল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪১৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

গুমায়সা অথবা রুমায়সা [নাম্নী এক মহিলা] তার স্বামী সম্বন্ধে অভিযোগ নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃ]- এর নিকট আসলো যে, সে তার নিকট পৌঁছতে [সহবাস করিতে] পারে না। অল্পক্ষণ পরেই তার স্বামী আসলো এবং বলিলেন ঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃ]! সে মিথ্যুক এবং সে তার নিকট যেয়ে থাকে [সহবাস করার ক্ষমতা রাখে]। কিন্তু সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেন ঃ তা হইতে পারে না, যতক্ষণ না তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহন কর।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪১৪. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃ] থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, সে তার স্ত্রীকে তালাক দিল। এরপর তাকে অন্য এক ব্যক্তি বিবাহ করলো এবং সে তার সাথে সহবাস করার পূর্বে তাকে তালাক দিল। সে কি তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারবে ? তিনি বলিলেন ঃ না, যতক্ষণ না সে [স্ত্রী নতুন স্বামী] মধুর স্বাদ গ্রহন করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩৪১৫. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে তার স্ত্রী কে তিন তালাক দিল। পরে অন্য এক ব্যক্তি তাকে বিবাহ করলো। সে দরজা বন্ধ করে পর্দা ঝুলিয়ে দিল। এরপর তার সাথে সহবাস করার পূর্বে তাকে তালাক দিল। তিনি [নাবী] বলিলেন ঃ সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হইবে না। যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে। ঈমাম আবু আবদুর রহমান নাসাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন ঃ হাদীসটি [সনদের মানদণ্ডে] অধিক সঠিক।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১০.পরিচ্ছেদঃ তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীকে হালাল করা এবং এ বিষয়ে কঠোর সতর্কবানী

৩৪১৬. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] অভিসম্পাত করিয়াছেন সে সব নারীদের, যারা উল্কি আঁকায় এবং উল্কি গ্রহন করে। আর যে নারী নিজের চুলের সাথে অন্যের চুল মিলায় এবং যে নারীর চুলের সাথে মিলানো হয়। আর যে সুদ খায় এবং সুদ প্রদান করে, আর যে [তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে] হালাল করে এবং যাহার জন্য হালাল করা হয়।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১.পরিচ্ছেদঃ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে সামনা-সামনি তালাক দেওয়া

৩৪১৭. আয়শা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

কিলাব গোত্রের মহিলাটি যখন রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন ঃ আমি আল্লাহর নিকট আপনার থেকে আশ্রয় চাই। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেন ঃ তুমি এক মহান সত্তার আশ্রয় গ্রহন করেছ। তুমি তোমার পরিজনের সাথে মিলিত হও।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪১৮. আবু জাহম ইবনি আবু বকর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ আমি ফাতিমা বিন্‌ত কায়সকে বলিতে শুনিয়াছি, আমার স্বামী আমার নিকট তালাক প্রেরন করলে আমি আমার কাপর পরে নাবী [সাঃ]-এর নিকট আসলাম। তিনি বলিলেন ঃ তোমাকে কয় তালাক দিয়েছে ? আমি বললাম ঃ তিন তালাক। তিনি বলিলেন ঃ তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তুমি তোমার চাচাত ভাই ইবনি উম্মু মাকতূমের ঘরে ইদ্দত পালন কর। কেননা, সে অন্ধ। তুমি তার সামনে তোমার কাপড় খুলতে পারবে। আর যখন তোমার ইদ্দত পূর্ণ হইবে, তখন আমাকে সংবাদ দেবে। এ হাদীস এখানে সংক্ষেপে বর্ণিত হইয়াছে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪১৯. ফাতিমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হইয়াছে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১২.পরিচ্ছেদঃ হে নাবী। আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করিয়াছেন আপনি তা হারাম করছেন কেন? [৬৬ঃ১] – উক্ত আয়াতের তাফসীর

৩৪২০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ তাহাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলিলেন ঃ আমি আমার স্ত্রীকে আমার উপর হারাম করেছি। তিনি বলিলেন ঃ তুমি মিথ্যা বলছো। সে তোমার উপর হারাম নয়। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন ঃ

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ [التحريم: 1]

তোমার উপর দাসমুক্ত করার ন্যায় কঠিন কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হইয়াছে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

১৩.পরিচ্ছেদঃ এই আয়াতের ভিন্ন ব্যাখ্যা

৩৪২১. আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উবায়দ ইবনি উমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনেছেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃ]- এর স্ত্রী আয়েশা [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] যয়নাব [রাঃআঃ]- এর নিকট অবস্থান করিতেন এবং তাহাঁর নিকট মধু পান করিতেন। আমি এবং হাফসা [রাঃআঃ] পরামর্শ করলাম, আমাদের মধ্যে যাহার নিকটই রসূলুল্লাহ্ আগমন করেন, সে যেন বলে ঃ আমি আপনার থেকে মাগাফির গন্ধ পাচ্ছি। এরপর তিনি তাহাদের একজনের নিকট আগমন করলে, তিনি তাকে তা বলিলেন ঃ তখন তিনি বলিলেন ঃ বরং আমি তো যয়নাবের নিকট মধু পান করেছি। তিনি আরও বলিলেন ঃ আমি আর পুনরায় তা পান করব না। তখন এই আয়াত নাযিল হয় ঃ

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ [التحريم: 1]

আর আয়েশা এবং হাফ্‌সা [রাঃআঃ] সম্বন্ধে নাযিল হয় ঃ [যদি তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর]….. আর নাবী –এর উক্তি ঃ বরং আমি মধু পান করেছি এর জন্য [অর্থ ঃ যখন নাবী তাহাঁর কোন স্ত্রীর কাছে গোপনে বলিলেন……] আয়াত নাযিল হয়। এর সমস্তই আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে রয়েছে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪.পরিচ্ছেদঃ অর্থাৎ কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে ঃ তুমি তোমার পরিবারের লোকদের সাথে মিলিত হও

৩৪২২. আবদুর রহমান ইবনি আবদুল্লাহ্‌ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি কাব ইবনি মালিক [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি যখন তাবূক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর সাথে অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত রইলেন। তাতে তিনি বলেন ঃ রাসূলুলাহ-এর দূত এসে আমাকে বলিলেনঃ রাসুলুল্লাহ আপনাকে আদেশ করিয়াছেন যে, আপনি যেন আপনার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকেন। তখন আমি বললাম ঃ আমি তাকে তালাক দেব, না কি করবো? তিনি বলিলেনঃ না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম ঃ তুমি তোমার পরিবারের নিকট যাও, তাহাদের নিকট থাক, যতক্ষণ না এই ব্যাপারে কোন ফয়সালা মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা করে দেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪২৩. আব্দুল্লাহ্‌ ইবনি কাব ইবনি মালিক হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ আমি আমার পিতা কাব ইবনি মালিক [রা.] কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ তিনি ওই তিন ব্যক্তির একজন, যাদের তওবা [তাবূকের অনুপস্থিতির অপরাধের জন্য] কবূল করা হইয়াছে। তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] আমার নিকট এবং আমার অন্য দুই সাথীর নিকট সংবাদ পাঠান যে, রসূলুল্লাহ [সাঃ] তোমাদের আদেশ করিয়াছেন যে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক। তখন আমি ওই দূত কে জিজ্ঞাসা করলাম ঃ আমি কি আমার স্ত্রীকে তালাক দেব, না কি করবো ? তিনি বলিলেন ঃ না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না।তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম ঃ তুমি তোমার পরিবারের লোকদের নিকট যাও এবং তাহাদের সাথে থাক। তখন সে তাহাদের নিকট চলে যায়।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪২৪. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুর রহমান ইবনি আব্দুল্লাহ্‌ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রাঃআঃ] আমাকে অবহিত করিয়াছেন, আব্দুল্লাহ্‌ ইবনি কাব বলেছেনঃ আমি কাব [রাঃআঃ]-কে তাহাঁর ঘটনা বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি, যখন তিনি তাবূক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর সাথে যোগদান করা থেকে বিরত থাকেন। এতে তিনি বলেন ঃ রাসূলুলাহ-এর দূত এসে আমাকে বলিলেন ঃ রাসুলুল্লাহ আপনাকে আদেশ করিয়াছেন যে, আপনি যেন আপনার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকেন। তখন আমি বললাম ঃ আমি তাকে তালাক দেব, না কি করবো ? তিনি বলিলেন ঃ না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম ঃ তুমি তোমার পরিবারের নিকট যাও, তাহাদের নিকট থাক, যতক্ষণ না মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে কোন ফয়সালা করে দেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪২৫. উবায়দুল্লাহ্‌ ইবনি কাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতা কাব [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] আমার নিকট এবং আমার দুই সাথীর নিকট এই বলে দূত পাঠালেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃ] আপনাদেরকে আপনাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতে আদেশ করিয়াছেন। তখন আমি দূত কে বললাম ঃ আমি কি আমার স্ত্রীকে তালাক দেব, না কি করবো ? তিনি বলিলেন ঃ না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম ঃ তুমি তোমার পরিবারের নিকট গিয়ে তাহাদের সাথে থাক। যতদিন মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে কোন ফয়সালা করে দেন। তখন সে তাহাদের নিকট চলে গেল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪২৬. আবদুর রহমান ইবনি কাব ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃ] – এর দূত আমার নিকট এসে আমাকে বলিলেন, আপনি আপনার স্ত্রী হইতে দূরে থাকুন। তখন আমি বললামঃ আমি কি তাকে তালাক দেব? তিনি বললেনঃ না, কিন্তু তার সাথে সহবাস করবেন না। এতে তিনি “তুমি তোমার পরিবারের সাথে গিয়ে থাকো” উল্লেখ করেন নি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫.পরিচ্ছেদঃ ক্রীতদাসের তালাক

৩৪২৭. উমার ইবনি মুআত্তিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ে ছিলাম ক্রীতদাস। আমি তাকে দুই তালাক দিলাম। এরপর আমরা উভয়ে মুক্ত হলাম। আমি ইবনি আব্বাস[রাঃআঃ]- কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তুমি তাকে ফিরিয়ে নাও, তবে সে তোমার নিকট এক তালাকের উপর থাকিবে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] এরূপ ফয়সালা করিয়াছেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৩৪২৮. মুয়াত্তিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]- কে এক ক্রীতদাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে, সে তার স্ত্রীকে দুই তালাক দিয়েছে। এরপর তাহাদের উভয়কে মুক্ত করা হইয়াছে। সে কি তাকে আবার বিবাহ করিতে পারবে। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। বলা হলো, কার পক্ষ থেকে [এ সিদ্ধান্ত]? তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] এরূপ ফয়সালা দিয়েছেন। আবদুর রায্‌যাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি মুবারক মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- কে বলেনঃ এই আবু হাসান কে? সে তো নিজের উপর বড় পাথর তুলে নিল। [অর্থাৎ এ বর্ণনা যদি সঠিক না হয়, তাহলে অসংখ্য অবৈধ বিবাহের পাপের বোঝা তার উপর বর্তাবে।]

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ জইফ হাদীস

১৬.পরিচ্ছেদঃ নাবালেগের তালাক কখন কার্যকর করা হইবে?

৩৪২৯. কাসীর ইবনি সাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

কুরায়যাহার ছেলেরা আমাকে অবহিত করেছে যে, বনী কুরায়যাহার যুদ্ধে তাহাদেরকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর নিকট পেশ করা হলে তাহাদের মধ্যে যাহার স্বপ্নদোষ হইয়াছে [যে বালেগ হইয়াছে] অথবা যাহার নাভীর নিচের পশম গজিয়েছে, তাহাদেরকে হত্যা করা হলো এবং যাহার স্বপ্নদোষ হয়নি [যে বালেগ হয়নি] অথবা যাহার নাভীর নিচের পশম গজায়নি, তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩৪৩০. আতিয়্যা কুরাযী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বনী কুরায়যাহার ব্যাপারে সাদ [রাঃআঃ]- এর বিচার করার দিন আমি ছিলাম একজন বালক। তখন তারা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করলো। তখন তারা আমার নাভীর নিচের পশম গজানো দেখলো না, তাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখা হলো। এই যে, আমি সেই [বালক] এখন তোমাদের মধ্যে রয়েছি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৩১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

উহুদের যুদ্ধের দিন তাঁকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর সামনে পেশ করা হলে, তখন তিনি ছিলেন চৌদ্দ বছর বয়সের তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন না। আর পরিখার [খন্দকের] যুদ্ধের সময় তাঁকে পেশ করা হলো, তখন তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭.পরিচ্ছেদঃ যে স্বামীর তালাক কার্যকর হইবে না

৩৪৩২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ তিন প্রকার ব্যক্তি থেকে কলম [আইন] উঠিয়ে নেয়া হইয়াছে। ১. নিদ্রিত ব্যক্তি, যাবত না সে জাগ্রত হয়। ২. নাবালেগ, যতক্ষন না সে বালেগ হয় এবং ৩. উন্মাদ, যাবত না সে জ্ঞান ফিরে পায় অথবা সে রোগমুক্ত হয়।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮.পরিচ্ছেদঃ মনে মনে তালাক দেয়া

৩৪৩৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মতের মন যে কথা বলে, আল্লাহ তাআলা তা সবই ক্ষমা করে দেবেন, যতক্ষন না সে মুখে বলে অথবা কাজে পরিণত করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৩৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মতের মনে যা উদয় হয় বা খটকা লাগে এবং তাহাদের মন যে কথা বলে আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে দেবেন, যতক্ষন না সে তা করে অথবা তা বলে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৩৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেনঃ মন যা বলে আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে দেবেন আমার উম্মতের যতক্ষণ না সে তা বলে অথবা করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯.পরিচ্ছেদঃ বোধগম্য ইঙ্গিতে তালাক

৩৪৩৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর একজন পারশিক প্রতিবেশি ছিল, যে উত্তমরূপে সুরুয়া পাকাতে পারত। সে একদিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর খিদমতে আগমন করলো, তখন আয়েশা [রাঃআঃ] তাহাঁর কাছে ছিলেন। সে তার হাত দ্বারা তাহাঁর [সাঃ] দিকে ইঙ্গিত করলো যে, আসুন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] আয়েশা [রাঃআঃ]- এর দিকে ইঙ্গিত করিলেন, অর্থাৎ সে ও [আমার সাথে যাবে]। তখন অন্যজন তাহাঁর দিকে হাতে দুই কি তিনবার ইঙ্গিত করলো যে, না।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

২০.পরিচ্ছেদঃ কথা বলে, তার সম্ভাব্য কোন অর্থ উদ্দেশ্য করা

৩৪৩৭. আলকামা ইবনি ওয়াক্কাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ]- কে বলিতে শুনেছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন, মানুষের সকল কাজের ফলাফল তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়্যত করে। অতএব, যাহার হিজরত আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলের দিকে হয়, তার হিজরত আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলের দিকেই হইবে। আর যাহার হিজরতের উদ্দেশ্য দুনিয়া উপার্জন করা হয়, অথবা কোনো নারীকে বিবাহ করা হয়, তাহলে তার হিজরত হইবে যাহার জন্য সে হিজরত করেছে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১.পরিচ্ছেদঃ কোন কথা বলে, এর বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য না করা

৩৪৩৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেনঃ দেখ, আল্লাহ তাআলা কিরূপে আমার থেকে কুরায়শের গালি ও অভিসম্পাত দূর করিয়াছেন। তারা তো গালি দিতেছে মুযাম্‌মাম [নিন্দিত]- কে এবং অভিসম্পাত দিতেছে মুযাম্‌মামকে, অথচ আমি হলাম মুহাম্মাদ [সাঃ] [প্রশংসিত]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২.পরিচ্ছেদঃ তালাক গ্রহণের জন্য প্রদত্ত ইখতিয়ারে মত প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়

৩৪৩৯. আবু সালামা ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর স্ত্রী আয়েশা [রাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে তাহাঁর স্ত্রীদেরকে ইখতিয়ার দেয়ার জন্য আদেশ করা হলো, তখন তিনি আমার থেকে আরম্ভ করিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমার নিকট একটি কথা বলবো, তুমি এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে, তোমার মাতাপিতার সাথে পরামর্শ না করে উত্তর দেবে না। আয়েশা [রাঃআঃ] বলেনঃ তিনি জানিতেন, আমার পিতামাতা কখনও আমাকে তাহাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হইতে আদেশ করবেন না। তিনি বলেন, এরপর রাসুল [সাঃ] এই আয়াত পাঠ করেনঃ “হে নাবী। আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলে দিন, যদি তোমরা পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ কামনা কর, . . .”। তখন আমি বললামঃ এ ব্যাপারে আমি আমার মাতাপিতার কি গ্রহণ করবো? আমি আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং পরকালকে গ্রহণ করব। আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- এর অন্যান্য স্ত্রীগণ আমি যা করেছি তারাও তা-ই করিলেন। আর রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] যখন তাঁদেরকে বলিলেন [ইখতিয়ার দিলেন]ঃ আর তারা তাঁকেই গ্রহণ করিলেন, তখন তাঁকে গ্রহণ করার দরুন তা তালাক হয়নি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যখন

إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ [الأحزاب: 29]

নাযিল হয়, তখন নাবী [সাঃ] আমার নিকট উপস্থিত হইয়া আমাকেই প্রথম বলেনঃ “হে আয়েশা। আমি তোমার নিকট একটি কথা বলবো, তুমি তাতে তাড়াহুড়ো না করে বরং তোমার পিতামাতার সাথে পরামর্শ করে উত্তর দেবে। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] জানিতেন, আমার পিতামাতা কখনও আমাকে তাহাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আদেশ করবেন না। তিনি এরপরও আমার নিকট এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا [الأحزاب: 28]

তখন আমি বললামঃ এ ব্যাপারে কি আমি আমার পিতামাতাকে জিজ্ঞাস করব? আমি আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলকেই গ্রহণ করেছি। আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ এই রেওয়াত ভুল, বরং প্রথম বর্ণনাই সঠিক। আল্লাহ সম্যক অবগত।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩.পরিচ্ছেদঃ যে ইখতিয়ারপ্রাপ্তা স্বামীকে গ্রহণ করে

৩৪৪১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] আমাদেরকে ইখতিয়ার [বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার] প্রদান করলে আমরা তাঁকেই গ্রহণ করলাম। তাতে কি তালাক হইয়াছিল?

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] তাহাঁর স্ত্রীদেরকে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তা তালাক [বিবেচিত] হয়নি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃ] তাহাঁর স্ত্রীগণকে ইখতিয়ার দিলে তা তালাক [বিবেচিত] হয়নি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] তাহাঁর স্ত্রীগণকে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তাতে কি তালাক হইয়াছিল?

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] আমাদের ইখতিয়ার প্রদান করলে আমরা তাঁকেই গ্রহণ করলাম, তাকে আমাদের উপর কিছুই [তালাক] গণনা করেন নি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪৬. কাসিম ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আয়েশা [রাঃআঃ]-এর একজন দাস ও একজন দাসী ছিল।তিনি বলেন,আমি তাহাদেরকে আযাদ করার ইচ্ছা করলে রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট তা প্রকাশ করলাম। তিনি বললেনঃ দাসীর পূর্বে দাসকে আযাদ কর।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৩৪৪৭. নাবী [সঃ] এর স্ত্রী আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ বারীরা [রাঃআঃ]-এর মধ্যে তিনটি সুন্নত [শরীআতী বিধান] ছিল। একটি এই যে, তাকে আযাদ করা হলে তার স্বামী সম্বন্ধে [বিবাহ বহাল রাখার ব্যাপারে] তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়, ২. রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ যে আযাদ করিবে ওয়ালা [মীরাছ] সেই পাবে। ৩. একদিন রাসুলুল্লাহ [সাঃ][তাহাঁর ঘরে]প্রবেশ করে দেখলেন, ডেগে গোশত রান্না হচ্ছিল তখন তাহাঁর সামনে রুটি এবং ঘরের তরকারী উপস্থিত করা হলে, তিনি বলেনঃ আমি কি ডেগে গোশত দেখিনি? তখন তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঐ গোশত বারীরা [রাঃআঃ]-কে সাদকা দেওয়া হইয়াছে,আর আপনি তো সাদকা খান না। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ তা তাহাঁর জন্য তো সাদকা, কিন্তু তা আমাদের জন্য হাদিয়া।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ বারীরা [রাঃআঃ]-এর মধ্যে তিনটি বিষয় [মাসয়ালার সিদ্ধান্ত] ছিল, ১. তাহাঁর মালিকগণ তাকে বিক্রি করার ইচ্ছা করলে এবং ওয়ালা [মীরাছ]-এর শর্ত আরোপ করলে আমি তা নাবী [সাঃ] এর নিকট উল্লেখ করি। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কেননা, ওয়ালা [মীরাছ] যে আযাদ করিবে সে-ই পাবে। ২. তাকে আযাদ করা হলে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাকে [তাহাঁর স্বামী সম্বন্ধে] ইখতিয়ার দিলে সে নিজেকেই গ্রহণ করলো [স্বামীকে ত্যাগ করিল]। ৩. তাকে সাদকা দেওয়া হত, আর সে তা থেকে আমাদের হাদিয়া দিত। আমি এ বিষয়টি নাবী [সাঃ]-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তোমরা তা থেকে খেতে পার; কেননা তাতো তাহাঁর জন্য সাদকা, আর আমাদের জন্য হাদিয়া।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৪৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি বারীরা [রাঃআঃ]-কে ক্রয় করিতে চাইলে তাহাঁর মনিবরা তাহাঁর ওয়ালা[মীরাছ] দাবী করলো। আমি নাবী [সাঃ] এর নিকট এটি উল্লেখ করলে, তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আযাদ করে দাও। কেননা ওয়ালা [মীরাছ] যে অর্থ প্রদান করে [মুক্ত করে], সে-ই পাবে। তখন আমি তাকে আযাদ করে দিলাম। এর পর রাসুলুল্লাহ [সাঃ]তাকে ডেকে তাহাঁর স্বামী সম্বন্ধে তাকে ইখতিয়ার দিলেন, সে বারীরা [রাঃআঃ] বললেনঃ যদি সে [স্বামী] এত এতও দান করে, তা হলেও আমি তাহাঁর নিকট থাকব না। সে নিজেকে গ্রহণ করলো, তখন তাহাঁর স্বামী ছিল স্বাধীন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৪৫০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বারীরা [রাঃআঃ]-কে ক্রয় করিতে মনস্থ করলে তাহাঁর মনিবরা ওয়ালার [মীরাছের] শর্ত আরোপ করে। আমি নাবী [সাঃ]-এর নিকট তা উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কেননা, যে আযাদ করিবে, ওয়ালা [মীরাছ] সে-ই পাবে। [তাহাঁর নিকট] কিছু গোশত আনা হলে বলা হলঃ ইহা ঐ গোশত, যা বারীরা[রাঃআঃ]-কে সাদকারূপে দেওয়া হইয়াছে। তিনি বললেনঃ তা তাহাঁর জন্য সাদকা। কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়া। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাকে ইখতিয়ার দেন। এ সময় তাহাঁর স্বামী আযাদ ছিল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

২৪.পরিচ্ছেদঃ যে দাসী আযাদ হইয়াছে এবং তার স্বামী দাস, তার ইখতিয়ার সম্পর্কে

৩৪৫১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ বারীরা [রাঃআঃ] নিজের ব্যাপারে তার মালিকের সংগে দাসত্ব হইতে মুক্তির [কিতাবাত] চুক্তি করে যে, সে নয় বছরে তার মালিকের নয় উকিয়া, প্রতি বছর এক উকিয়া করে আদায় করিবে। এরপর সে আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট সাহায্যপ্রার্থী হইয়া আগমন করলে তিনি বলেনঃ না, তবে যদি তারা চায় তাহলে আমি তাহাদেরকে একত্রে সব পাওনা আদায় করে দেব। আর ওয়ালা[মীরাছ]আমার হইবে। বারীরা [রাঃআঃ] এরপর তার মালিকের নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে তাহাদের সাথে আলোচনা করলে তারা তা মানলো না। তারা বলিল, ওয়ালা[মীরাছ] আমাদের থাকিবে। তখন বারীরা [রাঃআঃ] আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট এসে তাহাঁর মালিক যা বলেছে, তা তাঁকে বলিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] আগমন করেন। আয়েশা [রাঃআঃ] বললেনঃ তা হয় না, ওয়ালা [মীরাছ] আমারই থাকিবে। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ কি ব্যাপার? তিনি [আয়েশা [রাঃআঃ]] বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! বারীরা [রাঃআঃ] তাহাঁর দাসত্ব মুক্তির অর্থ আদায়ের ব্যাপারে আমার নিকট সাহায্য চাইলে, আমি বললামঃ না,[তা হইবেনা,]যদি তারা ইচ্ছা করে, তবে আমি একসঙ্গে তাহাদের পাওনা আদায় করে দেব, কিন্তু ওয়ালা [মীরাছ] আমার থাকিবে। সে তার মালিকের নিকট এ কথা বললে তারা তা মানতে অস্বীকার করে এবং বলেঃ ওয়ালা [মীরাছ] আমাদের থাকিবে। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ তুমি তাঁকে ক্রয় করে নাও তাহাদের ওয়ালার শর্ত [করিতে] দাও। কেননা ওয়ালা[মীরাছ] যে মুক্ত করিবে তারই থাকিবে। পড়ে তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা বর্ণনার পর বললেনঃ মানুষের কী হলো, তারা এমন এমন শর্ত করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। তারা বলেঃ অমুককে মুক্ত কর তাহাঁর ওয়ালা [মীরাছ] আমি পাব। মহান মহিয়ান আল্লাহর কিতাব অধিক পালনীয়। মহান মহিয়ান আল্লাহ তায়ালা যে শর্ত ঠিক করিয়াছেন, তা খুবই সুদৃঢ়। আর যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল। যদিও তা একশত শর্তও হয়। এর পর রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বারীরা [রাঃআঃ]-কে তাহাঁর স্বামীর ব্যাপারে ইখতিয়ার প্রদান করেন, সে [স্বামী] ছিল দাস। তখন সে নিজেকে গ্রহণ করে ও [স্বামীকে ছেড়ে দেয়]। উরওয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ যদি তাহাঁর স্বামী স্বাধীন হতো তাহলে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাঁকে ইখতিয়ার দিতেন না।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৫২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ বারীরা [রাঃআঃ]-এর স্বামী ছিল দাস।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৫৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি কয়েকজন আনসারী হইতে বারীরা [রাঃআঃ]-কে ক্রয় করেন। তারা ওয়ালার [মীরাছের]শর্ত আরোপ করে। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলেনঃ যে আযাদ করে, সে-ই ওয়ালার [মীরাছের] হকদার। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাঁকে ইখতিয়ার প্রদান করেন। তাহাঁর স্বামী ছিল দাস। একদা বারীরা [রাঃআঃ] আয়েশা [রাঃআঃ]-কে গোশত হাদিয়া দিলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ তোমরা আমার জন্য এ গোশত থেকে কিছু রেখে দিলে [ভাল হতো]। আয়েশ [রাঃআঃ]বলেনঃ এ তো বারীরা [রাঃআঃ] কে সাদাকা স্বরূপ দান করা হইয়াছে। তখন তিনি বললেনঃ তা তাহাঁর জন্য তো সাদাকা কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়া।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩৪৫৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-কে বারীরা [রাঃআঃ]-এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। আমি বলিঃ আমার ইচ্ছা আমি বারীরা [রাঃআঃ]-কে ক্রয় করি, আর তাহাঁর মালিকের জন্য ওয়ালার [মীরাছের] শর্ত রাখি। তিনি বলেনঃ তুমি তাঁকে ক্রয় কর। কেননা, যে মুক্ত করে ওয়ালা [মীরাছ] তারই। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বারীরা [রাঃআঃ]-কে তাহাঁর স্বামীর ব্যাপারে, ইখতিয়ার দিয়েছিলেন। তাহাঁর স্বামী ছিল দাস। এরপর রাবী বলেনঃ আমি জানিনা, [তিনি দাস না স্বাধীন]। [একদা] রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট গোশত আনা হলে তাহাঁর পরিবারের লোক বললেনঃ এটা বারীরা [রাঃআঃ]-কে প্রদত্ত সাদাকা। তিনি বললেনঃ তা তাহাঁর জন্য সাদাকা ছিল, এখন তা আমাদের জন্য হাদিয়া।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫.পরিচ্ছেদঃ ঈলা১

৩৪৫৫. আবু যুহা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবু ইয়াকুব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমরা তাহাঁর নিকট মাসের বিষয়ে আলোচনা করলে আমাদের কেউ বললেনঃ মাস ত্রিশ দিনের হইয়া থাকে, আবার কেউ বলিল, উনত্রিশ দিনের। এর মধ্যে আবু যুহা বললেনঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। একদিন আমরা সকালে উঠে দেখলাম, রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর স্ত্রীগণ ক্রন্দন করছেন এবং তাহাদের প্রত্যেকের নিকট তাহাদের পরিবারের লোক উপস্থিত রয়েছে। এরপর আমি মসজিদে গিয়ে দেখলাম, মসজিদ লোকে ভর্তি। তিনি বলেনঃ এরপর উমার [রাঃআঃ] আসলেন, এবং উপরে উঠে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] এর নিকট গেলেন, তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাহাঁর দ্বিতল কক্ষে ছিলেন। উমার [রাঃআঃ] তাঁকে সালাম করিলেন, কিন্তু কেউ তাহাঁর সালামের জবাব দিলেন না। তিনি আবার সালাম করিলেন, এবারও কেউ সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি আবার সালাম করিলেন, কিন্তু কেউ সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি ফিরে এসে বিলাল [রাঃআঃ]-কে ডাক দিয়ে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] এর নিকট উপস্থিত হইয়া বললেনঃ আপনি কি আপনার স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ না। বরং আমি তাহাদের সাথে এক মাসের জন্য ঈলা করেছি। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] সেখানে উনত্রিশ দিন ছিলেন। এরপর তিনি সেখান থেকে অবতরণ করে তাহাঁর স্ত্রীদের নিকট গমন করেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৫৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] একমাস স্ত্রীদের নিকট না যাওয়ার কসম ঈলা করিলেন। এ সময় তিনি উনত্রিশ দিন দ্বিতল প্রকোষ্ঠে অবস্থান করিলেন। তারপর তিনি অবতরণ করলে বলা হলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনি কি একমাসের ঈলা করেন নি? তিনি বললেনঃ [এ] মাস উনত্রিশ দিনের।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬.পরিচ্ছেদঃ যিহার১

৩৪৫৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ [সাঃ] এর নিকট আসলো, যে তার স্ত্রীর সাথে যিহার করেছিল। আর কাফফারা আদায় করার পূর্বেই সে তার সাথে সহবাস করে। সে এসে বলেঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার স্ত্রীর সাথে যিহার করেছি এবং কাফফারা আদায়ের পূর্বে তার সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ কী তোমাকে এরূপ করিতে উদ্বুদ্ধ করিল? আল্লাহ তোমাকে রহম করুন। সে বললঃ আমি চাঁদের আলোতে তার পায়ের মল দেখলাম। তিনি বললেনঃ এখন তুমি মহান মহিয়ান আল্লাহর আদেশ পালন না করা পর্যন্ত তার নিকট গমন করো না [সহবাস করিবে না]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৪৫৮. ইকরামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করে কাফফারা আদায় করার পূর্বেই তার সাথে তার সাথ সহবাস করলো। এরপর সে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] এর নিকট তা বর্ণনা করলো। তিনি বললেনঃ কী তোমাকে এরূপ করিতে উদ্বুদ্ধ করলো? সে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। আমি তার পায়ের মল দেখলাম, অথবা [সে বললঃ] আমি চাঁদের আলোতে তার পায়ের গোছা দেখলাম। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ তোমাকে যা আদেশ করিয়াছেন তা[কাফফারা] না করা পর্যন্ত তুমি তার থেকে দূরে থাকিবে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৪৫৯. ইকরামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাবী [সাঃ]-এর খিদমতে এসে বললেনঃ ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ ! সে তো [আমি] তার স্ত্রীর সাথে যিহার করেছে এবং কাফফারা দেওয়ার পূর্বেই তার সাথে সহবাস করেছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আর এ কাজ করার জন্য কী তোমাকে উদ্বুদ্ধ করলো? সে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ!চাঁ দের আলোতে তার সুন্দর পায়ের গোছা আমি দেখিতে পাই। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাঁকে বললেনঃ তোমার উপর যা আদায় করা জরুরী তা আদায় না করা পর্যন্ত দূরে থাক। ঈমাম নাসাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ ইসহাক তার বর্ণিত হাদীসে, তুমি তার থেকে দূরে থাক বর্ণনা করিয়াছেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৪৬০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যাহার শ্রবণ সকল আওয়াজকে পরিব্যাপ্ত। খাওলা [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া তার স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করলো। সে তার কথা আমার নিকট গোপন রাখলো। তখন মহান মহিয়ান আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেনঃ আল্লাহ তায়ালা ঐ মহিলার কথা শ্রবণ করিয়াছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক করছে এবং আল্লাহর নিকট অভিযোগ করছে। আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দুজনের বাদানুবাদ শুনছিলেন। [নিশ্চয় আল্লাহ শ্রবণকারী ও দর্শনকারী। এরপর আল্লাহ তায়ালা যিহার এবং এর কাফফারার আদেশ নাযিল করিলেন।]

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭.পরিচ্ছেদঃ খুলা১

৩৪৬১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে মহিলারা স্বীয় স্বামীর সাথে মনোমালিন্য করে এবং কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত খুলা করে, তারা মুনাফিক।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৬২. হাবীবা বিনতে সাহল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সাবিত ইবনি কায়স ইবনি শাম্মাস [রাঃআঃ]-এর স্ত্রী ছিলেন। [হাবীবা [রাঃআঃ] বলেনঃ ] একদিন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] খুব ভোরে নামায পড়তে গেলেন। তিনি হাবীবা বিনতে সাহল [রাঃআঃ] কে অন্ধকারের মধ্যে তার দরজায় দেখিতে পেলেন। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ এটি কে? তিনি [হাবীবা রাঃআঃ] বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি হাবীবা বিনতে সাহল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি ব্যাপার, তুমি কেন এসেছ? তিনি বললেনঃ আমার মধ্যে এবং সাবিত ইবনি কায়স [রাঃআঃ] তার স্বামীর মধ্যে মিল অসম্ভব হইয়া পড়েছে। যখন সাবিত ইবনি কায়স [রাঃআঃ] আগমন করলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাঁকে বলিলেন, এই যে হাবীবা বিনতে সাহল! আল্লাহ যা ইচ্ছা করিয়াছেন, তা-ই সে বলছে। হাবীবা [রাঃআঃ] বলে উঠলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে যা কিছু আমাকে দিয়েছে তা আমার নিকট রয়েছে। তিনি সাবিত ইবনি কায়স [রাঃআঃ] কে বললেনঃ তুমি [যা দিয়েছ তা]তার থেকে নিয়ে নাও। তিনি সাবিত [রাঃআঃ] [রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর আদেশ মত তাঁকে] যা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে নিলেন। আর তিনি হাবীবা বিনতে সাহল [রাঃআঃ] তার পরিজনদের মধ্যে অবস্থান করিলেন, [অর্থাৎ সাবিতের ঘর থেকে চলে গেলেন]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৬৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

সাবিত ইবনি কায়স [রাঃআঃ]-এর স্ত্রী নাবী [সাঃ]এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সাবিত ইবনি কায়সের স্বভাব-চরিত্র ও ধার্মিকতার ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি ইসলামে অকৃতজ্ঞতাকে অপছন্দ করি। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তাঁকে তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললেনঃ হ্যাঁ, [দেব]। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] [সাবিত ইবনি কায়স রাঃআঃ কে] বললেনঃ তুমি তোমার বাগান নিয়ে নাও এবং তাঁকে এক তালাক দিয়ে দাও।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৬৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাবী [সাঃ]এর নিকট এসে বললেনঃ আমার স্ত্রী এমন যে, কোন স্পর্শকারীর হাতকে সে বাধা দেয় না। তিনি বললেনঃ যদি তুমি ইচ্ছা কর, তবে তাকে দূরে সরিয়ে [তালাক দিয়ে] দাও। ঐ লোকটি বললেনঃ কিন্তু আমার ভয় হয়, আমার মন তার সাথে লেগে থাকিবে [এবং সবর করিতে না পেরে আমি গুনাহে লিপ্ত হইয়া যাব]। তিনি বলিলেন [যদি এরূপ করিতে না পার], তবে উপভোগ কর।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৬৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার স্ত্রী এমন যে, কোন স্পর্শকারীর হাতকে সে বাধা দেয় না। তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বললেনঃ তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি বললেনঃ আমি তার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করিতে [তাকে ছেড়ে থাকতে] পারব না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তাকে রেখেই দাও।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply