তালাক দেওয়ার হাদিস । ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দেওয়া
তালাক দেওয়ার হাদিস । ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দেওয়া , এই অধ্যায়ে মোট ৩০ টি হাদীস (১১৭৫-১২০৪) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-১১ঃ তালাক ও লিআন, অনুচ্ছেদঃ (১-২৩)=২৩টি
১. অনুচ্ছেদঃ তালাকের সুন্নাত পদ্ধতি
২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে বায়িন তালাক দিয়েছে
৩. অনুচ্ছেদঃ তোমার ব্যাপার তোমার হাতে
৪. অনুচ্ছেদঃ স্বাধীনতা প্রদান প্রসঙ্গে
৫. অনুচ্ছেদঃ তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দাত চলাকালে বাসস্থান ও ভরণ-পোষণ পাবে না
৬. অনুচ্ছেদঃ বিয়ের আগেই তালাক দেয়া প্রকৃতপক্ষে কোন তালাক নয়
৭. অনুচ্ছেদঃ দাসীর ক্ষেত্রে দুই তালাক
৮. অনুচ্ছেদঃ ন্ত্রীকে মনে মনে তালাক দেয়ার ধারণা করলে
৯.অনুচ্ছেদঃ প্রকৃতপক্ষে অথবা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দেওয়া
১০. অনুচ্ছেদঃ খোলার বর্ণনা
১১. অনুচ্ছেদঃ খোলা দাবিকারিণী নারী প্রসঙ্গে
১২. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের সাথে উদার ব্যবহার
১৩. অনুচ্ছেদঃ ন্ত্রীকে পিতার নির্দেশে তালাক দেওয়া প্রসঙ্গে
১৪. অনুচ্ছেদঃ কোন নারী যেন তার বোনের তালাক প্রার্থনা না করে
১৫. অনুচ্ছেদঃ বুদ্ধি ও স্মৃতি নষ্ট হওয়া লোকের তালাক
১৬. অনুচ্ছেদঃ তালাকের সংখ্যা
১৭. অনুচ্ছেদঃ গর্ভবতী বিধবার ইদ্দাত সন্তান জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত
১৮. অনুচ্ছেদঃ যে নারীর স্বামী মারা গেছে তার ইদ্দত
১৯. অনুচ্ছেদঃ কাফ্ফারা আদায়ের পূর্বে যিহারকারী সহবাস করলে
২০. অনুচ্ছেদঃ যিহারের কাফফারা
২১. অনুচ্ছেদঃ ঈলা প্রসঙ্গে
২২. অনুচ্ছেদঃ লিআনের বর্ণনা
২৩. অনুচ্ছেদঃ স্বামী মৃত্যুর পর স্ত্রী কোথায় ইদ্দাত পালন করিবে?
১. অনুচ্ছেদঃ তালাকের সুন্নাত পদ্ধতি
১১৭৫. ইউনুস ইবনি জুবাইর [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইবনি উমার [রাদি.]-কে আমি প্রশ্ন করলাম, এক লোক তার স্ত্রীকে হায়িয থাকাবস্থায় তালাক দিয়েছে। তিনি বলিলেন, তুমি কি আবদুল্লাহ ইবনি উমারকে চেন? সে তার স্ত্রীকে হায়িয থাকাবস্থায় তালাক দিয়েছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে উমার [রাদি.] [এর বিধান প্রসঙ্গে] প্রশ্ন করেন। তিনি তাকে নিজ স্ত্রীকে ফেরত নিতে হুকুম দিলেন। বর্ণনাকারী উমার [রাদি.] বলেন, আমি [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কে] প্রশ্ন করলাম, এ তালাকও কি গণনা করা হইবে? তিনি বললেনঃ কেন হইবে না! তুমি কি মনে কর, যদি কোন লোক অপারগ হয় বা আহম্মকি করে [তাতে কি তালাক কার্যকর হইবে না]।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০২২], বুখারী, মুসলিম। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭৬. সালিম [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তার স্ত্রীকে হায়িয থাকা অবস্থায় তালাক দিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকট উমর [রাদি.] এর বিধান জানতে চাইলেন। তিনি বললেনঃ তাকে তার স্ত্রীকে ফিরত নেওয়ার হুকুম দাও। অতঃপর সে যেন তাকে তুহরে [পবিত্র অবস্থা চলাকালে] অথবা গর্ভাবস্থায় তালাক দেয়।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০২৩], মুসলিম। ইবনি উমারের সূত্রে ইউনুস ইবনি জুবাইর [রঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। ইবনি উমার হইতে সালিম [রঃ] বর্ণিত হাদীসটিও হাসান সহিহ। এ হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তালাকের সুন্নাত [আইনানুগ] পদ্ধতি প্রসঙ্গে তাহাদের মত হলঃ যে তুহরে সঙ্গম করা হয়নি সেই তুহরে তালাক দেওয়া। তাহাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, তুহর অবস্থায় তিন তালাক দিলে তাও সুন্নাত নিয়মে হয়ে যাবে। এই মত ঈমাম শাফি ও আহমাদের। আর একদল আলিম বলেছেন, সুন্নাত পদ্ধতি মুতাবেক তালাক হইবে এক তালাক দেওয়া হলে কিন্তু একসাথে তিন তালাক দেওয়া হলে তা হইবে না। এই মত সুফিয়ান সাওরী ও ইসহাকের। গর্ভবতী স্ত্রীলোক প্রসঙ্গে তাহাদের মত হল, যে কোন সময়ই তাকে তালাক দেয়া যায়। এই মত শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকের। অন্য এক দল আলিম বলেছেন, প্রতি মাসে এক তালাক করে দিবে [তিন তালাক একসাথে দিবে না]। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে বায়িন তালাক দিয়েছে
১১৭৭. আব্দুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ ইবনি রুকানা[রাদি.] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সুত্রে হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [রুকানা] বলেনঃ আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার স্ত্রীকে কাটাছিঁড়া [বাত্তা শব্দে] তালাক দিয়েছি। তিনি প্রশ্ন করেনঃ এটা দ্বারা তোমার কি উদ্দেশ্য ছিল? আমি বললাম, এক তালাক। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলার শপথ! আমি বললাম, আল্লাহ তাআলার শপথ [সত্য বলছি]। তিনি বললেনঃ তোমার যা উদ্দেশ্য ছিল তাই হয়েছে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২০৫১], আবু ঈসা বলেনঃ আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র উল্লেখিত সুত্রেই জেনেছি। আমি এই হাদীস সম্পর্কে মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলিলেন এর সনদে অস্থিরতা আছে। ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণিত আছে যে, রুকানা তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিলেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবী ও অপারাপর আলিমদের মধ্যে সোজাসুজি ও নিশ্চিত [বাত্তা] তালাক নিয়ে মতপার্থক্য আছে। উমার [রাদি.] বাত্তা তালাককে এক তালাক গন্য করিয়াছেন কিন্তু আলী [রাদি.] এটাকে তিন তালাক গন্য করিয়াছেন। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, এটা তালাক প্রদানকারীর নিয়াতের উপর নির্ভর করিবে। সে এক তালাক এর নিয়াত করলে এক তালাক বলবৎ হইবে, তিন তালাক এর নিয়াত করলে তিন তালাক বলবৎ হইবে এবং দুই তালাকের নিয়াত করলে এক তালাক বলবৎ হইবে। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমদের এই মত। ঈমাম মালিক বলেছেন, সে স্ত্রীর সাথে [বিয়ের পর] সহবাস করে থাকলে বাত্তা তালাক এর মাধ্যমে তিন তালাকই বলবৎ হইবে। ঈমাম শাফি বলেছেন, সে এক তালাক এর নিয়াত করলে এক তালাক, দুই তালাক এর নিয়াত করেলে দুই তালাক এবং তিন তালাক এর নিয়াত করলে তিন লাকই বলবৎ হইবে। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ তোমার ব্যাপার তোমার হাতে
১১৭৮. হাম্মাদ ইবনি যাইদ [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি আইউবকে প্রশ্ন করলাম, হাসান [বাসরী] ব্যতীত আরও কোন ব্যক্তি “আমরুকে বিয়াদিকে” [তোমার ব্যাপার তোমার হাতে] কথাটিকে তিন তালাক বিবেচিত করিয়াছেন বলে আপনার জানা আছে কি? তিনি বলেন, হাসান ব্যতীত আর কেউ এমনটি বলেছেন বলে আমার জানা নেই। তারপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলা মাফ করুন! কাতাদা আমাকে সামুরা গোত্রের মুক্ত ক্রীতদাস কাসীরের সুত্রে বলেছেন, তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি বলেছেন, নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ “[এরুপ বলায়] তিন [তালাক] বিবেচিত হইবে”। আইউব বলেন, আমি কাসীরের সাথে দেখা করে তাকে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি তা চিহ্নিত করিতে পারেননি। আমি কাতাদার নিকট এসে ব্যাপারটা তাকে জানালে তিনি বলেন, সে [কাসীর] ভুলে গেছে।
যঈফ, যঈফ আবু দাউদ [৩৭৯] বিবৃতিটি হাসানের এটাই সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধু সুলাইমান ইবনি হারব হইতে হাম্মাদ ইবনি যাইদের সুত্রেই জেনেছি। আমি ঈমাম বুখারীকে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সুলাইমান ইবনি হারব হাম্মাদ ইবনি যাইদের সুত্রে এ হাসীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এটা আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে মাওকূফ হাদীস হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে এবং আবু হুরাইরা্র এ হাদীস মারফূ হিসেবে জানা যায়নি। আলী ইবনি নাসর হাদীসের হাফিয ছিলেন।
[স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে] “তোমার ব্যাপার তোমার হাতে” তবে এর ফায়সালা কি হইবে এ বিষয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমদের মধ্যে মতের অমিল আছে। সাহবীদের মাঝে উমার ও আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর মতে এতে এক তালাক বলবৎ হইবে। একাধিক তাবীঈ ও তাহাদের পরবর্তীদেরও এই মত। অপর দিকে উসমান ইবনি আফফান ও যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.]- এর মতে স্ত্রী যা নির্ধারণ করিবে তাই বলবৎ হইবে [এক,দুই অথবা তিন তালাক যেটা গ্রহন করিবে তাই হইবে]। আবুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, স্বামী স্ত্রীর হাতে তার ব্যাপারটি ছেড়ে দেয়ার পর সে [স্ত্রী] নিজেকে তিন তালাক দিল। স্বামী এটা ফিরিয়ে দিয়ে বলিল, আমি তাকে শুধু এক তালাকেরই অধিকার দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে স্বামীকে শপথ করিতে হইবে। সে শপথ করলে তার বিবৃ্তিই মেনে নেয়া হইবে। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমগন উমার ও আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর মত গ্রহন করিয়াছেন। ঈমাম মালিক বলেছেন, স্ত্রী যা নির্ধারণ করিবে তাই হইবে। ঈমাম ইসহাক [রাহঃ] ইবনি উমার [রাদি.]-এর মত গ্রহন করিয়াছেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪. অনুচ্ছেদঃ স্বাধীনতা প্রদান প্রসঙ্গে
১১৭৯. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদেরকে [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ] [তার স্ত্রী হিসাবে থাকা বা না থাকার] স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরা তাকে গ্রহণ করলাম। এতে কি তালাক হল?
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৫২] একইরকম হাদীস আইশা [রাদি.] হইতে মাস্রুকের বরাতে আবুয্ যুহা হইতে বর্ণিত আছে। আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। স্ত্রীকে যদি তার স্বামী তার সাথে থাকা বা না থাকার স্বাধীনতা দেয় তবে এর ফলাফল কি হইবে সে বিষয়ে আলিমদের মধ্যে মত পার্থক্য আছে। উমার ও ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, স্ত্রী নিজের প্রতি [স্বামী হইতে পৃথক হওয়ার] ইখতিয়ার প্রয়োগ করলে তবে তাতে এক বাইন তালাক হইবে। তাহাদের আরো একটি মত উল্লেখ আছে যে, তাতে এক রিজঈ তালাক হইবে। আর যদি স্বামীর সাথে থাকাকেই স্ত্রী ইখতিয়ার করে তবে কোন তালাক হইবে না। আলী [রাদি.] বলেছেন, সে নিজেকে বেছে নিলে এক বাইন তালাক হইবে এবং স্বামীকে বেছে নিলে এক রিজঈ তালাক হইবে। যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] বলেন, তিন তালাক হইবে যদি সে নিজেকে ইখতিয়ার করে এবং এক তালাক হইবে যদি সে স্বামীকে ইখতিয়ার করে। উমার ও আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর মতকেই রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বেশিরভাগ ফিকহ্বিদ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ গ্রহণ করিয়াছেন। এই মত গ্রহণ করিয়াছেন সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমগণও। কিন্তু আলী [রাদি.]-এর মতকে ঈমাম আহমাদ ইবনি হাম্বাল [রঃ] গ্রহণ করিয়াছেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫. অনুচ্ছেদঃ তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দাত চলাকালে বাসস্থান ও ভরণ-পোষণ পাবে না
১১৮০. শাৰী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কাইসের মেয়ে ফাতিমা [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জীবদ্দশায় আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দেয়। [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ] [আমাকে] বলেনঃ তুমি বাসস্থান এবং ভরণ-পোষণ কোনটাই পাবে না। মুগীরা [রঃ] বলেন, আমি ইবরাহীম নাখঈর নিকট একথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, উমার [রাদি.] বলেছেন, আমরা আল্লাহ তাআলার কিতাব ও আমাদের রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সুন্নাতকে একজন মহিলার কথায় ছেড়ে দিতে পারি না। সে স্মরণ রেখেছে না ভুলে গেছে তা আমাদের সঠিক জানা নেই। তিন তালাকপ্রাপ্তার জন্য উমার [রাদি.] বাসস্থান ও খরচ-পাতির ব্যবস্থা করিয়াছেন।
শাবী [রঃ] হইতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি কাইসের মেয়ে ফাতিমা [রাদি.]-এর নিকট এলাম এবং তার সম্পর্কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে ফায়সালা দিয়েছেন তাকে সে সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন যে, তাকে তার স্বামী শেষ তালাক দিলে তিনি বাসস্থান ও খরচ-পাতির জন্য তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য বাসস্থান ও খরচ-পাতির ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত দেননি। দাঊদের বর্ণিত হাদীসে আছে, তিনি [ফাতিমা] বলেন, উম্মু মাকতূমের ছেলের ঘরে আমাকে ইদ্দাত পালনের জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দেন।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৩৫, ২০৩৬] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। হাসান বাসরী, আতা ইবনি আবু রাবাহ ও শাবীর মতে তালাকপ্রাপ্তাকে স্বামীর জন্য আবার তার বিয়ের বন্ধনে ফিরিয়ে আনার সুযোগ না থাকলে সে [স্ত্রী] ইদ্দাতকালের জন্য বাসস্থান ও খরচ-পাতি পাবে না। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাকও একথা বলেন। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী, যেমন উমার ও আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেছেন, ইদ্দাত কালের জন্য তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বাসস্থান ও খরচ-পাতি পাৰে। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী ফাকীহ্গণ। ঈমাম মালিক, লাইস ইবনি সাদ ও শাফিঈ আরো বলেছেন, সে বাসস্থান পেলেও খরচ-পাতি পাবে না। শাফিঈ আরো বলেন, আমরা তার বাসস্থান পাওয়ার কথাটি আল্লাহ্ তাআলার কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ীই বলেছি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ “তোমরা [ইদ্দাতকালে] তাহাদের বাসস্থান হইতে তাহাদেরকে বের করে দিও না এবং তারাও যেন বের না হয়। তবে তারা সুস্পষ্ট কোন অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়লে তবে ভিন্ন কথা” [সূরাদি. তালাক-১]।
আলিমগণ বলেন, এখানে পুরুষের পরিবার-পরিজনের সাথে অসভ্য আচরণ করাকেই অশ্লীলতা বলে বুঝানো হয়েছে। তারা ফাতিমাকে বাসস্থান ও খরচ-পাতির ব্যবস্থা না করার কারণ হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি তার স্বামীর সাথে অসদাচরণ করেছিলেন। ঈমাম শাফি বলেন, এ ধরণের তালাকপ্রাপ্তা মহিলার খরচ-পাতির ব্যবস্থা করাটা স্বামীর উপর বাধ্যতামূলক নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে ফাতিমা বিনতি কাইস সম্পর্কিত রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর হাদীস। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬. অনুচ্ছেদঃ বিয়ের আগেই তালাক দেয়া প্রকৃতপক্ষে কোন তালাক নয়
১১৮১. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [দাদা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম সস্তান যে সকল জিনিসের মালিক নন সে সকল জিনিসের মানত জায়িয নয়, সে যার মালিক নয় তাকে সে মুক্তি দিতে পারে না এবং তার সাথে যার বিয়ে হয়নি তাকে সে তালাকও দিতে পারে না।
হাসান সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৪৭] আলী, মুআয ইবনি জাবাল, জাবির, ইবনি আব্বাস ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ অনুচ্ছেদের মধ্যে যে কয়টি হাদীস বর্ণিত আছে সেগুলোর মধ্যে এ হাদীসটিই সবচেয়ে উত্তম। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী মত দিয়েছেন। এই মত দিয়েছেন আলী ইবনি আবু তালিব, ইবনি আব্বাস, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] সাঈদ ইবনিল মুসায়্যিব, হাসান বাসরী, সাঈদ ইবনি জুবাইর, আলী ইবনি হুসাইন, শুরাইহ, জাবির ইবনি যাইদ প্রমুখ একাধিক ফিকহ্বিদ সাহাবী ও তাবিঈও। ঈমাম শাফি একইরকম কথা বলেছেন।
ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, কোন এলাকার কোন নির্দিষ্ট মহিলাকে বিয়ে করার কথা উল্লেখ করে তালাক দিলে সে তালাক কার্যকর হইবে [কেউ যদি বলে, আমি অমুক বংশ বা অমুক এলাকার অমুক মেয়ে বিবাহ করলে সে তালাক, এ ক্ষেত্রে বিয়ে বিধিবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তালাক হয়ে যাবে]। শাবী, ইবরাহীম নাখঈ ও অপরাপর আলিম বলেন, তালাক অবতীর্ণ হইবে যদি সময় নির্দিষ্ট করে বলা হয়। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও মালিক ইবনি আনাসও। তারা বলেন, সঠিকভাবে কোন মহিলার নাম, অথবা সঠিক সময় নির্ণয় করে, অথবা কোন শহরের নাম স্পষ্টভাবে বলা হলে, যেমন আমি অমুক শহরের অমুক মেয়ে বিয়ে করলে [সে তালাক], এসব অবস্থায় তালাক কার্যকর হইবে।
এ প্রসঙ্গে ইবনিল মুবারাক [রাদি.] কঠোর নীতি অবলম্বন করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, কোন লোক যদি এরূপ করে তবে আমি বলি না যে, তার জন্য ঐ মহিলাটি হারাম হইবে। আহমাদ [রঃ] বলেন, সে যদি বিয়ে করে তবে আমি তাকে তার স্ত্রীকে ত্যাগ করার হুকুম দেই না। ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর হাদীস অনুযায়ী ইসহাক [রঃ] নির্দিষ্ট নারীর ক্ষেত্রে তালাক সংঘটিত হওয়ার পক্ষপাতী হওয়া সত্ত্বেও এইরূপ বিয়েকে জায়িয মনে করেন। তিনি বলেন, যদি ঐ মহিলাকে শপথ করার পরও সে লোক বিয়ে করে তবে আমি একথা বলি না যে, তার জন্য ঐ মহিলাটি হারাম হইবে। আর ইসহাক [রঃ]-এর মত অনির্দিষ্ট নারীর ক্ষেত্রে আরও উন্মুক্ত। এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে ইবনিল মুবারাককে প্রশ্ন করা হল যে, সে শপথ করে বলেছে যে, সে বিয়ে করিবে না, করলে তালাক হয়ে যাবে। পরে দেখা গেল যে, সে বিয়ে করিতে চাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিয়ের সুযোগ আছে বলে যেসব ফিকহ্বিদ মত দিয়েছেন, তাহাদের মতের অবলম্বনে এই লোক কি বিয়ে করিতে পারবে? এর উত্তরে ইবনিল মুবারাক বলিলেন, যদি এসব ফিকহ্বিদের মতের প্রতি সে লোক এই সমস্যায় জড়িত হওয়ার পূর্বে আস্থাবান হয়ে থাকে তাহলে সে লোকের তাহাদের মত গ্রহণের সুযোগ আছে। কিন্তু পূর্ব হইতেই যে লোক তাহাদের এ মত পছন্দ করেনি এবং সে যখন পরবর্তীতে এ সমস্যায় জড়িয়ে পড়লো তখন তাহাদের মত গ্রহণ করিতে চায়, তাহাদের মত গ্রহণের সুযোগ তার আছে বলে আমি মনে করি না। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৭. অনুচ্ছেদঃ দাসীর ক্ষেত্রে দুই তালাক
১১৮২. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ দাসীর বেলায় দুই তালাক এবং তার ইদ্দাত দুই হাইযকাল।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২০৮০], এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। মুযাহির ইবনি আসলামের সূত্রেই শুধু এ হাদীসটি মারফূ বলে জানা যায়। এ হাদীসটি ব্যতীত মুযাহিরের বর্ণিত আর কোন হাদীস আছে কি-না তা আমরা অবগত নই। নাবী [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপারাপর আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী অভিমত দিয়েছেন। সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকেরও এই অভিমত। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ ন্ত্রীকে মনে মনে তালাক দেয়ার ধারণা করলে
১১৮৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে পর্যন্ত আমার উন্মাত কোন মনের কথা প্রকাশ না করে অথবা সে অনুযায়ী কাজ না করে, সে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তা উপেক্ষা করেন [ক্ষমা করেন]।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৪০],বুখারী, মুসলিম । এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ মত দিয়েছেন। কোন লোক তার মনে মনে তালাকের কথা ভাবলে তা মুখে উচ্চারণ না করা পর্যন্ত এর কোন আইনগত কার্যকারিতা নেই। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ প্রকৃতপক্ষে অথবা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দেওয়া
১১৮৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে বললেও এবং ঠাট্টাচ্ছলে বললেও যথার্থ বলে বিবেচিত হবেঃ বিয়ে, তালাক ও রাজআত [তালাক প্রত্যাহার]।
সহিহ, ইবনি মাজাহ- [২০৩৯] । এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম মত দিয়েছেন। আবদুর রামানের পিতা হাবীব এবং দাদা আরদাক আল-মাদানী। আমার মতে ইবনি মাহাক অর্থ্যাৎ মাহাকের ছেলের নাম ইউসুফ। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০. অনুচ্ছেদঃ খোলার বর্ণনা
১১৮৫. মুআওবিয ইবনি আফরার মেয়ে রুবাই [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
১১৮৫/১. রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর যুগে তিনি খোলা [তালাক] করান। তাকে এক হায়িযকাল সময় ইদ্দাতের জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দেন অথবা নির্দেশ দেওয়া হয়। সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৫৮]
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, রুবাই বিনতু মুআওবিয [রাদি.]-এর হাদীসে তাকে এক হায়িযকাল সময় ইদ্দাত পালনের নির্দেশই সহিহ।
—————————-
১১৮৫/২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সাবিত ইবনি কাইস [রাদি.]-এর স্ত্রী তার স্বামীর নিকট হইতে খোলা [তালাক] নেয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে এক হায়িযকাল সময় ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দেন।
সহীহ্, দেখুন পূর্বের হাদীস । আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটি হাসান গারীব। আলিমদের মধ্যে খোলা তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দাত পালনের মেয়াদ প্রসঙ্গে মত পার্থক্য আছে। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য আলিমগণ বলেছেন, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার মত খোলা গ্রহণকারিণী মহিলাকেও ইদ্দাত পালন করিতে হইবে তিন হায়িযকাল সময়। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, কূফাবাসী আলিমগণ, আহমাদ ও ইসহাকের মতও তাই। অপর একদল সাহাবী ও বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, এক হায়িযকালই হচ্ছে খোলা গ্রহণকারিণীর ইদ্দাতের সময়। ইসহাক [রঃ] বলেন, কোন লোক এই মত গ্রহণ করলে সেটাই হইবে শক্তিশালী মাযহাব। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১. অনুচ্ছেদঃ খোলা দাবিকারিণী নারী প্রসঙ্গে
১১৮৬. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাৰী [সাঃআঃ] বলেনঃ খোলা তালাক দাবিকারিণী নারীরা মুনাফিক।
সহীহ্, সহীহা- [৬৩৩], মিশকাত তাহকীক ছানী- [৩২৯০] এ হাদীসটিকে উল্লেখিত সনদসূত্রে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। এর সনদ খুব একটা মজবুত নয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “যে সকল নারী স্বামীর নিকট হইতে কোন বিবেচনাযোগ্য কারণ ছাড়াই খোলা তালাক গ্রহণ করে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৮৭. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ স্বামীর নিকট হইতে যেসব নারী কোন বিবেচনাযোগ্য কারণ ছাড়াই তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম।
সহিহ, ইবনি মাজাহ- [২০৫৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এটি অন্য একটি সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু মারফূভাবে নয়। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের সাথে উদার ব্যবহার
১১৮৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহিলারা পাঁজরের বাকা হাড়ের মত। তুমি যদি সেটাকে সোজা করিতে যাও তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি ফেলে রাখ [সোজা করার চেষ্টা না কর] তবে তার বাকা অবস্থায়ই তুমি ফায়দা উঠাতে পারবে।
সহীহ্, তালীকুর রাগীব- [৩/৭২-৭৩], মুসলিম, বুখারী অনুরূপ। আবু যার, সামুরা ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন এবং এর সনদসূত্র উত্তম। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ ন্ত্রীকে পিতার নির্দেশে তালাক দেওয়া প্রসঙ্গে
১১৮৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার বিবাহিত এক স্ত্রী ছিল যাকে আমি ভালোবাসতাম, কিন্তু তাকে আমার পিতা পছন্দ করিতেন না। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন তাকে তালাক প্রদানের জন্য। কিন্তু আমি তা অস্বীকার করি। বিষয়টি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে আমি উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ হে উমারের- পুত্র আবদুল্লাহ! তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও। হাসান, ইবনি মাজাহ- [২০৮৮]
এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আমরা এই হাদীসটির সাথে শুধুমাত্র ইবনি আবু যিব-এর সূত্রেই পরিচিত হইতে পেরেছি। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ কোন নারী যেন তার বোনের তালাক প্রার্থনা না করে
১১৯০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাৰী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন নারী যেন বোনের পাত্র খালি করে নিজের পাত্র পূরণের জন্য তার তালাক প্রার্থনা না করে।
সহীহ্, সহীহ্ আবু দাউদ- [১৮৯১] উম্মু সালামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুৱাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ বুদ্ধি ও স্মৃতি নষ্ট হওয়া লোকের তালাক
১১৯১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তালাক মাত্রই বলবৎ হয়, কিন্তু বুদ্ধি ও স্মৃতি নষ্ট হওয়া ব্যক্তির তালাক বলবৎ হয় না।
খুবই দুর্বল। সহীহ কথা হল হাদীসটি মাওকূফ, ইরওয়া[২০৪২] । আবু ঈসা বলেন, আমরা এ হাদীসটি শুধু মাত্র আতা ইবনি আজলানের সূত্রেই মারফূ হিসাবে জেনেছি। কিন্তু তিনি হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল এবং হাদীস বর্ণনায় ভুলের শিকার হইতেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী মত দিয়েছেন। তাহাদের মতে নির্বোধ ব্যাক্তির তালাক কার্যকর হয়না। কিন্তু যে উন্মাদ কখনও জ্ঞান ফিরে পায় আবার জ্ঞানহারা হয়ে পড়ে সে যদি হুঁশ থাকাকালে তালাক দেয় তবে তা বলবৎ হইবে। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
১৬. অনুচ্ছেদঃ তালাকের সংখ্যা
১১৯২. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা [জাহিলী যুগে] যেমন ইচ্ছা নিজ স্ত্রীকে তালাক দিত। এমনকি সে শতবার বা ততোধিক তালাক দেবার পরও তাকে ইদ্দাতের মধ্যে ফেরত নিলে সে পুরা দস্তর তার বিবি বিবেচিত হত। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছল যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলিল, আল্লাহ্ তাআলার শপথ! আমি তোমাকে এমন তালাকও দিব না যে, তুমি আমার নিকট হইতে আলাদা হয়ে যাবে এবং তোমাকে কখনো [স্থান] সহায়তাও দিব না। তার স্ত্রী বলিল, এ কেমন কথা? সে বলিল, আমি তোমাকে তালাক দিব এবং ইদ্দাত শেষ হওয়ার আগে ফিরিয়ে নিব। তোমার সাথে বারবার এমনই করিতে থাকব। স্ত্রীলোকটি আইশা [রাদি.]-এর নিকটে এসে তাকে এ ঘটনা জানালো। আইশা [রাদি.] নীরব রইলেন। এর মাঝে নাবী [সাঃআঃ] হাযির হলেন। তিনি তাঁকে ব্যাপারটি অবগত করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] চুপ থাকলেন। এসময় কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “তালাক দুইবার। তারপর হয় তাকে যথারীতি ফিরিয়ে নিবে, অন্যথায় সঠিক পন্থায় মুক্ত করে দিবে”-[সূরাদি. বাকারা- ২২৯]। আইশা [রাদি.] বলেন, এরপর থেকে যে লোক আগে তালাক দিয়েছে আর যে লোক দেয়নি উভয়ই ভবিষ্যতের জন্য নতুনভাবে তালাকের অধিকার লাভ করলো।
যঈফ, ইরওয়া [৭/১৬২] হিশাম ইবনি উরওয়া [রাহঃ] হইতে তার পিতার সূত্রে উপরে উল্লেখিত হাদীসের মতই হাদীস বর্ণিত আছে। কিন্তু এই সূত্রে উরওয়া [রাহঃ] আইশা [রাদি.]-এর উল্লেখ করেননি। এই বর্ণনাটি ইয়ালা ইবনি শাবীবের বর্ণিত হাদীসের তুলনায় অনেক বেশী সহীহ । তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ গর্ভবতী বিধবার ইদ্দাত সন্তান জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত
১১৯৩. আবুস সানাবিল ইবনি বাকাক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সুবাইআ [রাদি.] সন্তান প্রসব করেন তার স্বামী মারা যাবার তেইশ বা পঁচিশ দিন পর। তিনি নিফাস হইতে পবিত্র হয়ে পুনরায় বিয়ে করিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কেউ কেউ সেটাকে খারাপ বলে মনে করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ সে ইচ্ছা করলে এটা করিতে পারে, কেননা, তার ইদ্দাত পূর্ণ হয়ে গেছে।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০২৭] এ হাদীসটি আরো একটি সনদসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। উম্মু সালামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবুস সানাবিল [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখিত সনদ সূত্রে মাশহূর ও গারীব। আবুস সানা বিলের নিকট হইতে আল-আসওয়াদ হাদীস শুনেছেন কি-না তা আমাদের জানা নেই। ঈমাম বুখারী [রঃ] বলেছেন, আবুস সানাবিল [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর মৃত্যুর পরও বেঁচে ছিলেন কি-না তা আমাদের জানা নেই।
এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম মত দিয়েছেন যে, যদি কোন গর্ভবতী মহিলার স্বামী মৃত্যুবরণ করে তবে তার সপ্তান জন্মের সাথে সাথে তার বিয়ে করা হালাল [জায়িয], যদিও তার ইদ্দাত [চার মাস দশদিন] পূর্ণ না হয়। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক। অপর একদল সাহাবী ও অন্যদের মতে “দুই মেয়াদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘতর মেয়াদ” হইবে তার ইদ্দাতকাল। কিন্তু প্রথমোক্ত মতই অনেক বেশি সহিহ। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৯৪. সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
গর্ভবতী বিধবা স্ত্রীলোকের ইদ্দাত প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস ও আবু সালামা ইবনি আবদুর রাহমান [রাদি.] আলোচনা করিলেন, যে স্বামীর মৃত্যুর পরপর সে সন্তান প্ৰসৰ করে [তার ইদ্দাত কখন পূর্ণ হইবে]। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, দুই মেয়াদের মধ্যে দীর্ঘতর মেয়াদই হইবে তার ইদ্দাতকাল। আবু সালামা [রাদি.] বলিলেন, সস্তান জন্মের সাথে সাথে তার বিয়ে করা বৈধ হইবে। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলিলেন, আমি আমার ভাইয়ের ছেলে আবু সালামার সাথে একমত। তারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী উম্মু সালামা [রাদি.]-এর নিকট বিষয়টি সমাধানের জন্য [লোক] পাঠান। তিনি বলিলেন, সুবাইয়া আসলামিয়া তার স্বামী মারা যাবার অল্পদিন পরই সন্তান প্রসব করে। সে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফাতওয়া জানতে চাইলে তিনি তাকে বিয়ের অনুমতি দেন।
সহীহ্, ইরওয়া- [২১১৩], সহীহ্ আবু দাউদ- [১১৯৬], আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ যে নারীর স্বামী মারা গেছে তার ইদ্দত
১১৯৫. তিনি [যাইনাৰ] হইতে বর্ণীতঃ
[এক] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা [রাদি.]-এর পিতা আবু সুফিয়ান [রাদি.]-এর মৃত্যুর পর আমি তার নিকট গেলাম। তিনি কস্তুরি মিশ্ৰিত হলুদ বর্ণের খালূক নামক সুগন্ধি নিয়ে ডাকলেন। তিনি একটি বালিকার গায়ে তা মাখালেন, তারপর তা নিজের উভয় গালে লাগালেন। তারপর তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমার সুগন্ধি মাখার তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না। আমি তা শুধুমাত্র এজন্যই মাখলাম যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা ও আখিরাত দিবসের উপর যে মহিলা ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোন মৃতের জন্য তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ করা জায়িয নয়। শুধুমাত্র স্বামীর জন্য শোক পালন হইবে চার মাস দশ দিন।
সহীহ্, ইরওয়া- [২১১৪], সহীহ্ আবু দাঊদ- [১৯৯০, ১৯৯১], বুখারী, মুসলিম। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৯৬. [দুই] যাইনাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
জাহ্শের মেয়ে যাইনাব [রাদি.]-এর ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমি তার নিকট গেলাম। তিনিও সুগন্ধি নিয়ে ডাকলেন এবং তা ব্যবহার করিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমার সুগন্ধি মাখার তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না। তবে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের উপর যে মহিলা ঈমান রাখে তার পক্ষে কোন মৃতের জন্য তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ করা জায়িয নয়। শুধু স্বামীর জন্য শোক পালন হচ্ছে চার মাস দশ দিন।
সহীহ্, প্রাগুক্ত তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৯৭. [তিন], যাইনাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
আমি আমার মা উন্মু সালামা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট এক মহিলা এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল। আমার মেয়ের স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে। ইদানীং তার দুই চোখে অসুখ দেখা দিয়েছে। আমরা তার চোখে সুরমা লাগাতে পারব কি? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ না। মহিলাটি দুই কি তিনবার এই প্রশ্ন করিল এবং প্রতি বারেই তিনি [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ] বললেনঃ না। তারপর তিনি বললেনঃ এটা তো মাত্র চার মাস দশ দিনের ব্যাপার। জাহিলী যুগে তোমাদের কোন মহিলাকে এক বছর পর্যন্ত শোক পালন শেষে বিষ্ঠা নিক্ষেপ করে ইদ্দাতকে সমাপ্ত করিতে হত।
সহীহ্, প্রাগুক্ত। মালিক ইবনি সিনানের কন্যা এবং আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.]-এর বোন ফুরাইআ ও উমার [রাদি.]-এর কন্যা হাফসা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, যাইনাব [রঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লায়াছ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও অন্যান্য আলিম মত দিয়েছেন। তাহাদের মতে যে মহিলার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে সে মহিলা ইদ্দাতের সময় সুগন্ধি ও সাজসজ্জা বর্জন করিবে। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ কাফ্ফারা আদায়ের পূর্বে যিহারকারী সহবাস করলে
১১৯৮. সালামা ইবনি সাখর আল-বায়াযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যিহার করার পর কাফফারা আদায়ের পূর্বে স্ত্রীর সাথে সঙ্গমকারী ব্যক্তি প্রসঙ্গে নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমতাবস্থায় তার একটি মাত্র কাফ্ফারাই হইবে। সহীহ্, প্রাগুক্ত
আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস অনুযায়ী বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ আলিম মত দিয়েছেন। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক [একই কাফ্ফারা হইবে]। অপর কিছু আলিম বলেন, যিহার করার কাফ্ফারা আদায়ের পূর্বে সহবাস করলে দুটি কাফ্ফারা আদায় করিতে হইবে। এই মত দিয়েছেন আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্দীও। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৯৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক যিহারের পর তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে। তারপর সে লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রীর সাথে আমি যিহার করেছি এবং কাফফারা আদায়ের পূর্বে সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমায় রাহাম করুন! তোমাকে কোন্ জিনিস এ কাজে লিপ্ত হইতে উদ্বুদ্ধ করিল? সে বলিল, আমি চাঁদের আলোতে তার পায়ের অলংকার দেখিতে পেয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাকে যা হুকুম করিয়াছেন তা পালনের পূর্বে আর তার ধারে-কাছেও যেও না।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৬৫] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ যিহারের কাফফারা
১২০০. আবু সালামা ও মুহাম্মদ ইবনি আবদুর রাহমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বায়াযা গোত্রের সালমান ইবনি সাখর আনসারী তার স্ত্রীকে রামাযান মাসের জন্য তার মায়ের পিঠের সাথে তুলনা করিল [যিহার করিল]। এই মাসের অর্ধেক গত হওয়ার পর এক রাতে সে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করিল। তারপর সে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে জানালো। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ একটি গোলাম আযাদ কর। সে বলিল, এটা করার সামর্থ্য আমার নেই। তিনি বললেনঃ একাধারে দুই মাস রোযা রাখ। সে বলিল, আমার সামর্থ্য নেই এটা করার। তিনি বললেনঃ যাটজন মিসকীনকে খাওয়াও। সে বলিল, এটা করারও আমার সামর্থ্য নেই। তখন ফারওয়া ইবনি আমর [রাদি.]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাকে এই খেজুরের ঝুড়িটা দাও যাতে ষাটজন মিসকীনকে সে খাওয়াতে পারে। আরাক এমন বড় ঝুড়িকে বলা হয় যাহাতে ১৫ অথবা ১৬ সাখেজুর ধরে। সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৬২]
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীস অনুযায়ী যিহারের কাফ্ফারা নির্ধারণের ব্যাপারে আলিমগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সালামানকে সালামা আল-বায়ামীও বলা হয়। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১. অনুচ্ছেদঃ ঈলা প্রসঙ্গে
১২০১. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর বিবিদের সাথে ঈলা করে একটি হালাল বিষয়কে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন তারপর এই হারামকে হালাল করিলেন এবং পরে শপথ [ভঙ্গের]-এর কারণে কাফফারা দিলেন।
যঈফ, ইরওয়া [৪৭৫২] এ অনুচ্ছেদে আনাস ও আবু মূসা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ উল্লেখিত হাদীসটি আলী ইবনি মুসহির এবং অন্যান্যরা দাঊদ-এর সূত্রে ঈমাম শাবী [রাহঃ] হইতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে মাসরূক ও আইশা [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। এই [মুরসাল] বর্ণনাটি মাসলামা ইবনি আলকামার বর্ণনার চেয়ে অনেক বেশী সহীহ । কোন লোক চার মাস বা তার বেশী সময় নিজ বিবির নিকটে না যাওয়ার [সহবাস না করার] কসম করলে তাকে ঈলা বলে।
চার মাস চলে গেলে এবং এর মধ্যে স্ত্রীর নিকটে না গেলে তার পরিণতি কি হইবে তা নিয়ে আলিমদের মাঝে মতের অমিল আছে। নাবী [সাঃআঃ]-এর একদল সাহাবী ও বিশেষজ্ঞ আলিমদের মতে চার মাস চলে যাবার পর সে ক্ষান্ত হইবে এবং নির্ধারণ করিবে যে, হয় তাকে ফেরত নিবে অথবা তালাক দিবে। মালিক ইবনি আনাস, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকের এই অভিমত । নাবী [সাঃআঃ]-এর অপর একদল সাহাবী ও বিশেষজ্ঞ আলিমদের মতেঃ চার মাস চলে গেলে স্বাভাবিকভাবে এক বাইন তালাক হয়ে যাবে। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী ফাকীহগণের এই মত। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২২. অনুচ্ছেদঃ লিআনের বর্ণনা
১২০২. সাঈদ ইবনি জুবাইর [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুসআব ইবনি যুবাইরের শাসনামলে এক জোড়া লিআনকারী [দম্পতি] প্রসঙ্গে আমাকে প্রশ্ন করা হলঃ তাহাদেরকে আলাদা করে দেয়া হইবে কি-না। আমি এই প্রসঙ্গে কি বলব তা সঠিক অনুমান করিতে পারলাম না। আমি আমার ঘর হইতে বেরিয়ে সোজা আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর ঘরের দরজার সামনে এলাম এবং তার সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। আমাকে বলা হল, তিনি দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তিনি ভিতর হইতে আমার কথা শুনে বলিলেন, ইবনি জুবাইর? ভিতরে প্রবেশ কর। নিশ্চয়ই কোন জরুরী বিষয় নিয়ে তুমি এসেছ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ভিতরে গেলাম। তিনি তার বাহনের হাওদার নিচের মোটা কাপড় বিছিয়ে তার উপর শুয়ে ছিলেন। আমি বললাম, হে আবদুর রাহমানের পিতা! লিআনকারী দম্পতিকে কি একে অপর হইতে আলাদা করিতে হইবে? তিনি বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! হ্যাঁ, এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম অমুকের ছেলে অমুক প্রশ্ন করেন। তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে তাকে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাদের মাঝে কোন লোক তার স্ত্রীকে খারাপ কাজে [যিনায়] জড়িত দেখে তখন সে কি করিবে, এ প্রসঙ্গে আপনি কি মত পোষণ করেন? যদি সে মুখ খুলে তবে একটা ভয়ানক কথা বলিল, আর সে চুপ থাকলে তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চুপ রইল।
বর্ণনাকারী [ইবনি উমার] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একথা শুনে নীরব রইলেন এবং কোন উত্তর দিলেন না। তিনি [ফিরে যাওয়ার পর] আবার রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন, আপনাকে যে বিষয়ে ইতিপূর্বে প্রশ্ন করেছিলাম তাতে আমি নিজেই জড়িয়ে পড়েছি। এমন সময় আল্লাহ তাআলা সূরা নূরের আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “নিজেদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যে সকল লোক যিনার অভিযোগ তোলে অথচ নিজেরা ব্যতীত তাহাদের আর কোন সাক্ষী থাকে না তবে তাহাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হইবে যে, সে চারবার আল্লাহ তাআলার নামে শপথ করে বলবে….. যদি সে সত্যবাদী হয়” [৬-১০]।
তিনি লোকটিকে ডেকে এনে তাকে এ আয়াতগুলো পাঠ করে শুনান, তাকে উপদেশ দিয়ে ভালোভাবে বুঝান। তিনি তাকে বললেনঃ দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের শাস্তি হইতে অনেক হালকা। তিনি বলিলেন, না, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন। তাকে আমি মিথ্যা অপবাদ দেইনি। তারপর তিনি স্ত্রীলোকটির প্রতি মনোনিবেশ করিলেন এবং তাকেও উপদেশ দিয়ে উত্তমভাবে বুঝালেনঃ দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের শাস্তি হইতে খুবই হালকা। স্ত্রীলোকটি বলিল, না, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন! সে সত্য কথা বলেনি।
বর্ণনাকারী [ইবনি উমার] বলেন, তারপর প্রথমে পুরুষকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শপথ করালেন। তিনি আল্লাহ্ তাআলার নাম সহকারে চারবার শপথ করে সাক্ষ্য দিলেন যে, তিনি [অভিযোগের ব্যাপারে] সত্যবাদী। তিনি পঞ্চম বারে বলিলেন যে, তিনি [আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে] মিথ্যাবাদী হলে তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। তারপর তিনি স্ত্রীলোকটিকে লিআন করান। সে চারবার আল্লাহ্ তাআলার নাম উচ্চারণ সহকারে শপথ করে সাক্ষ্য দিল যে, তার বিরুদ্ধে উঠানো অভিযোগে সে [স্বামী] মিথ্যাবাদী। সে পঞ্চম বারে বলিল, সে [স্বামী] সত্যবাদী হলে তবে তার নিজের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। তারপর তাহাদের বিয়ে বন্ধন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিন্ন করে দিলেন। সহীহ্, সহীহ্ আবু দাউদ- [১৯৫৫], মুসলিম
সাহল ইবনি সাদ, ইবনি আব্বাস, হুযাইফা ও ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করেন। ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২০৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লিআন করিল। তাহাদের বিয়ে বন্ধনকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিন্ন করে দেন এবং সন্তানটিকে তার মায়ের সাথে সম্পৃক্ত করেন।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৬৯], নাসাঈ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করেন। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩. অনুচ্ছেদঃ স্বামী মৃত্যুর পর স্ত্রী কোথায় ইদ্দাত পালন করিবে?
১২০৪. যাইনাব বিনতু কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাকে মালিক ইবনি সিনান [রাদি.]-এর মেয়ে এবং আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.]-এর বোন ফুরাইআ [রাদি.] জানিয়েছেন। তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে আসেন একটা প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে যে, ইদ্দাতের জন্য তার নিজের বংশ খুদরা গোত্রে যেতে পারেন কি-না। তার স্বামী তার কয়েকটি পলাতক গোলামের খোঁজে গিয়েছিলেন। তিনি যখন পত্যাবর্তন করিতেছিলেন তখন তাহাদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে এবং তারা সেখানে তাকে মেরে ফেলে। ফুরাইআ [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আমার বাবার বাড়ী যাওয়ার উদ্দেশ্যে আবেদন করলাম। কেননা, আমার জন্য আমার স্বামী তার নিজস্ব কোন ঘর রেখে যাননি, এমনকি ভরণ-পোষণের খরচপাতিও নয়। ফুরাইআ [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হ্যাঁ বলিলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি ফিরে চললাম। আমি শুধু [তার] হুজরা অথবা মাসজিদের নিকটে পৌঁছলাম, তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে আবার ডাকলেন বা আমাকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। আমাকে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি বলেছিলে? ফুরাইআ [রাদি.] বলেন, আমার স্বামী সম্পর্কে পূর্বে আমি যে ঘটনা বলেছিলাম তার নিকট তা আবার বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ঘরেই থাক ইদ্দাত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। ফুরাইআ [রাদি.] বলেন, আমি এখানে ইদ্দাত পালন করলাম চার মাস দশদিন। তিনি বলেন, তারপর উসমান [রাদি.] খালীফা হওয়ার পর তিনি আমার কাছে লোক পাঠিয়ে এ বিষয়টি জানতে চাইলেন। আমি এ প্রসঙ্গে তাকে জানালাম। তিনি এর অনুসরণ করিয়াছেন এবং সে অনুযায়ী ফায়সালা দিয়েছেন।
সহীহ্, ইবনি মাজাহ- [২০৩১]। এ হাদীসটি কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে অন্য একটি সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ মত দিয়েছেন। তাহাদের মতে, ইদ্দাতের সময় পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ইদ্দাত পালনকারী স্বামীর ঘর হইতে যাবে না। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অপর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগণ বলেন, কোন মহিলা তার ইচ্ছামত যে কোন জায়গায় ইদ্দাত পালন করিতে পারে। স্বামীর ঘরে ইদ্দাত পালন না করলেও কোন সমস্য নেই। আবু ঈসা বলেন, কিন্তু প্রথমোক্ত মতই অনেক বেশি সহিহ। তালাক দেওয়ার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply