তালাক দেওয়ার বিধান

তালাক দেওয়ার বিধান

তালাক দেওয়ার বিধান >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৮, তালাক, অধ্যায়ঃ (১-২২)=২৩টি

৬৮/১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “হে নাবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে তালাক দাও তাদের ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ইদ্দাতের হিসাব সঠিকভাবে গণনা করিবে।” (সুরা আত-ত্বলাক ৬৫/১)
৬৮/২. অধ্যায়ঃ হায়েয অবস্থায় ত্বলাক্ব দিলে তা ত্বলাক্ব বলে গন্য হইবে।
৬৮/৩. অধ্যায়ঃ ত্বলাক্ব দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে ত্বলাক্ব দেবে?
৬৮/৪. অধ্যায়ঃ যারা তিন ত্বলাক্বকে জায়েয মনে করেন। যেমন মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৮/৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীদেরকে (পার্থিব সুখ কিংবা পরকালীন সুখ বেছে নেয়ার) ইখ্‌তিয়ার দিল।
৬৮/৬. অধ্যায়ঃ যে (তার স্ত্রীকে) বলিল- আমি তোমাকে পৃথক করলাম, বা আমি তোমাকে বিদায় দিলাম, বা তুমি মুক্ত বা বন্ধনহীন অথবা এমন কোন বাক্য উচ্চারণ করিল যা দ্বারা ত্বলাক্ব উদ্দেশ্য হয়। তবে তা তার নিয়্যাতের উপর নির্ভর করিবে।
৬৮/৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলিল- “তুমি আমার জন্য হারাম।”
৬৮/৮. অধ্যায়ঃ (মহান আল্লাহর বাণী): হে নাবী ! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করিয়াছেন তা তুমি কেন হারাম করছ? (সুরা আত-তাহরীম ৬৬/১)
৬৮/৯. অধ্যায়ঃ বিয়ের আগে ত্বলাক্ব নেই।
৬৮/১০. অধ্যায়ঃ শেষ কারণে যদি কেউ স্বীয় স্ত্রীকে বোন বলে পরিচয় দেয়, তাতে কিছু হইবে না।
৬৮/১১. অধ্যায়ঃ বাধ্য হয়ে, মাতাল ও পাগল অবস্থায় ত্বলাক্ব দেয়া আর এ দুয়ের বিধান সম্বন্ধে। ভূলবশতঃ ত্বলাক্ব দেয়া এবং শির্‌ক ইত্যাদি সম্বন্ধে। (এসব নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল)।
৬৮/১২. অধ্যায়ঃ খুলার [২৭] বর্ণনা এবং ত্বলাক্ব হওয়ার নিয়ম।
৬৮/১৩. অধ্যায়ঃ স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব হলে (অথবা প্রয়োজনের তাগিদে) ক্ষতির আশঙ্কায় খুলার প্রতি ইশারা করিতে পারে কি?
৬৮/১৪. অধ্যায়ঃ দাসীকে বিক্রয় করা ত্বলাক্ব হিসাবে গণ্য হয় না।
৬৮/১৫. অধ্যায়ঃ দাসী স্ত্রী আযাদ হয়ে গেলে গোলাম স্বামীর সঙ্গে থাকা বা না থাকার ইখ্‌তিয়ার।
৬৮/১৬. অধ্যায়ঃ বারীরার স্বামীর ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ)- এর সুপারিশ।
৬৮/১৭. অধ্যায়ঃ
৬৮/১৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৮/১৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক নারী মুসলমান হলে তার বিবাহ ও ইদ্দাত।
৬৮/২০. অধ্যায়ঃ যিম্মি বা হারবীর কোন মুশরিক বা খৃষ্টান স্ত্রী যদি ইসলাম গ্রহণ করে।
৬৮/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট না যাওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ আছে। যদি তারা উক্ত সময়ের মধ্যে ফিরে আসে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং তারা যদি তালাক দেয়ার সংকল্প করে, তবে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।” (সুরা আল -বাক্বারা ২/২২৬-২২৭)
৬৮/২২. অধ্যায়ঃ নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তির পরিবার ও তার সম্পদের বিধান।

৬৮/১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “হে নাবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে তালাক দাও তাদের ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ইদ্দাতের হিসাব সঠিকভাবে গণনা করিবে।” (সুরা আত-তালাক ৬৫/১)

[২৪] হালাল জিনিসের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে ত্বলাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। যদিও এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবুও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারলে ইসলামে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ত্বলাকের মাধ্যমে। এখানে ত্বলাক সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম উধৃত করা হলো।

১। কোন স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতার লক্ষন দেখা দিলে স্ত্রীকে সদুপদেশ দিতে হইবে। প্রয়োজনে তার শয্যা ত্যাগ করিতে হইবে, শিক্ষামূলক প্রহার করিতে হইবে। (এ মর্মে সুরা আন-নিসাঃ ৩৪ আয়াত দেখুন)

২। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয় তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করিতে হইবে। “তারা দুজন সংশোধনের ইচ্ছে করলে আল্লাহ তাদের উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে দেবেন।” (সুরা আন-নিসাঃ ৩৫)

৩। যদি তালাক দেয়া একান্তই অপরিহার্য হয়, তাহলে নারী যে সময়ে ঋতুমুক্তা ও পরিচ্ছন্না হইবে, সে সময় যৌন মিলনের পূর্বেই স্বামী তাকে এক তালাক দিবে আর স্ত্রী তালাকের ইদ্দত তথা তিন ঋতু বা ঋতুমুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে- বাকারাঃ ২৮। এ ইদ্দতের মধ্যে যাতে পুনর্মিলন ও সন্ধির সুযোগ থেকে যায় সে জন্য স্বামী স্ত্রীকে তার গৃহ থেকে বহিষ্কৃত করিবে না, আর স্ত্রীও গৃহ থেকে বের হয়ে যাবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি খোলাখুলি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। (সুরা আত-ত্বলাক-১)

৪। স্বামী যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চায় [এক তালাক অথবা দুতালাকের পরে] তাহলে তাকে ইদ্দতের মধ্যে স্বাচ্ছন্দে ফিরিয়ে নিতে পারবে। এ শারঈ রীতির আরেকটি বড় সুবিধা এই যে, এক তালাক অথবা দুতালাকের পরে ইদ্দতের সীমা শেষ হয়ে গেলেও স্বামী তার তালাকদত্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করিতে পারবে নতুনভাবে মাহর নির্ধারণ ও সাক্ষীর মাধ্যমে। অন্য পুরষের সাথে স্ত্রীটির বিবাহিতা হওয়ার কোন প্রয়োজন হইবে না। এ অবস্থায় পূর্ব স্বামী তাকে বিবাহ করিতে না চাইলে স্ত্রী যে কোন স্বামীর সঙ্গে বিবাহিতা হইতে পারবে।

৫। আবদুল্লাহ বিন উমার বর্ণিত আবু দাঊদের হাদীস হইতে জানা যায়, কেউ ঋতু অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে সে তালাককে রাসুল (সাঃআঃ) তালাক হিসেবে গণ্য করেননি। কাজেই কেউ তালাক দিতে চাইলে স্ত্রীর পবিত্রাবস্থায় তালাক দিতে হইবে।

৬। কেউ স্ত্রীকে এক তালাক দিয়ে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে একটি তালাক বলবৎ থাকবে। স্ত্রীর ঋতুমুক্ত অবস্থায় স্বামী দ্বিতীয় তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে। এক তালাক বা দু তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিলে তাদের মধ্যে বিয়ে পড়ানোর প্রয়োজন হয় না।

৭। এক তালাক অথবা দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে স্বামী ইচ্ছে করলে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করিতে পারবে। এতে যেন স্ত্রীর অভিভাবকেরা বাধা সৃষ্টি না করে- (সুরা আল-বাকারাহঃ ২৩২)

৮। স্বামী তার স্ত্রীকে পরপর ৩টি তুহুরে বা ঋতুমুক্ত অবস্থায় তিন তালাক না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তিন তুহুরে তিন তালাক দিলেও বিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ঐ স্বামী স্ত্রী আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারবে না। তারা পুনরায় কেবল তখনই বিয়ে করিতে পারবে যদি স্ত্রীটি স্বাভাবিকভাবে অন্য স্বামী গ্রহণ করে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয় অতঃপর ঐ স্বামী মারা যায় বা স্ত্রীটিকে তালাক দেয়- বাকারাঃ ২৩০। উল্লেখ্য তিন তালাক হয়ে গেলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ের জন্য অন্য পুরুষের সাথে মহিলাকে বিয়ে করে তার সাথে মিলন ঘটতে হইবে এবং সে [দ্বিতীয় স্বামী] যদি কোন সময় স্বেচ্ছায় তাকে তালাক দেয় তাহলে প্রথম স্বামী পুনরায় বিয়ে করিতে পারবে।

একত্রিত তিন তালাক প্রসঙ্গঃ

ইমাম মুসলিম তাহাঁর সহীহ গ্রন্থে আব্দুর রাযযাকের প্রমুখাৎ, তিনি তাউসের পুত্রের বাচনিক এবং তিনি স্বীয় পিতার নিকট হইতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদি.) এর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করিয়াছেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর পবিত্র যুগে আর আবু বাকরের (রাদি.) সময়ে আর উমার (রাদি.) এর খিলাফাতের দুবৎসর কাল পর্যন্ত একত্রিতভাবে তিন তালাক এক তালাক বলে গণ্য হত। অতঃপর উমার (রাদি.) বলিলেন, যে বিষয়ে জনগণকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল, তারা সেটাকে তরান্বিত করেছে। এমন অবস্থায় যদি আমরা তাদের উপর তিন তালাকের বিধান জারী করে দেই, তাহলে উত্তম হয়। অতঃপর তিনি সেই ব্যবস্থাই প্রবর্তিত করিলেন।

একত্রে তিন তালাক দেয়া হলে এক তালাক বলে গণ্য হইবে। এর প্রমাণঃ (আবু রুকানার স্বিতীয় স্ত্রী আল্লাহর রাসুল (সাঃ)- এর নিকট তার শারীরিক অক্ষমতার কথা প্রকাশ করলে) নাবী (সাঃ) আবদ ইয়াযীদকে (আবু রুকানাকে) বলিলেন, তুমি তাকে ত্বালাক দাও। তখন সে ত্বলাক দিল। অতঃপর তাকে বলিলেন, তুমি তোমার (পূর্ব স্ত্রী) উম্মু রাকানা ও রুকানার ভাইদেরকে ফিরিয়ে নাও। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমিতো তাকে তিন ত্বলাক দিয়ে ফেলেছি। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তা জানি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন, “হে নাবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে ত্বলাক দিবে তখন তাদেরকে ইদ্দাতের উপর ত্বলাক দিবে”। (আত-ত্বলাক ৬৫:১) (সহীহ আবু দাউদ হাদীস নং ২১৯৬)

উপরোক্ত হাদীসে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত হাদীসে তিন ত্বলাক দেয়া বলিতে বিখ্যাত ভাষ্য গ্রন্থ আউনুল মাবুদ ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠায় (আরবী) ব্যাখ্যায় (আরবী) উল্লেখ করিয়াছেন। যার অর্থ আবু রুকানা তার স্ত্রীকে এক সাথেই তিন ত্বলাক প্রদান করেছিলো।

এখন প্রশ্ন, উমার (রাদি.) এ নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করিলেন কেন? প্রকাশ থাকে যে, ইসলামী বিধানগুলো মোটামুটি দুভাবে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর আইনগুলো স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে এবং ইজতিহাদের পরিবর্তনে কোন অবস্থানেই কোনক্রমে এক চুল পরিমাণও বর্ধিত, হ্রাসপ্রাপ্ত ও পরিবর্তিত হইতে পারে না। যেমন ওয়াজিব আহকাম, হারাম বস্তুসমূহের নিষিদ্ধতা, যাকাত ইত্যাদিন পরিমাণ ও নির্ধারিত দণ্ডবিধি। স্থান, কাল পাত্রভেদে অথবা ইজতিহাদের দরুণে উল্লিখিত আইনগুলো পরিবর্তন সাধন করা অথবা তাদের উদ্দেশ্যের বিপরীত ইজতিহাদ করা সম্পূর্ণ অবৈধ।

দ্বিতীয় শ্রেণীর আইনগুলো জনকল্যাণের খাতিরে এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে এবং অবস্থাগত হেতুবাদে সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হইতে পারে। যথা শাস্তির পরিমাণ ও রকমারিত্ব। জন্যকল্যণের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও একই ব্যাপারে বিভিন্নরূপ নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন, যেমনঃ

ক) মদ্যপায়ীকে চতুর্থবার ধরা পড়ার পর হত্যা করার দণ্ড- আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ।

খ) যাকাত পরিশোধ না করার জন্য তার অর্ধেক মাল জরিমানাস্বরূপ আদায় করা- আহমাদ, নাসায়ী, আবু দাউদ।

গ) অত্যাচারীর কবল হইতে ক্রীতদাসকে মুক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করা- আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু মাজা।

ঘ) যে সকল বস্তুর চুরিতে হস্তকর্তনের দণ্ড প্রযোজ্য নয়, সেগুলোর চুরিরর জন্য মূল্যের দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করা- নাসায়ী ও আবু দাউদ।

ঙ) হারানো জিনিস গোপন করার জন্য দ্বিগুণ মূল্য আদায় করা- নাসায়ী, আবু দাউদ।

চ) হিলাল বিন উমাইয়াকে স্ত্রী সহবাস বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া- বুখারী, মুসলিম।

ছ) কারাদণ্ড, কশাঘাত বা দুররা মারা ইত্যাদি শাস্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রদান করেননি। অবশ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি সাময়িকভাবে আটক করার আদেশ দিয়েছিলেন- আবু দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী।

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর ইন্তিকালের পর খুলাফায়ে রাশেদীনও বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ও দণ্ড প্রদান করিতেন। উমার ফারূক (রাদি.) মাথা মুড়ানোর ও দুররা মারার শাস্তি দিয়েছেন। পানশালা আর যে সব দোকানে মদের ক্রয় বিক্রয় হত, সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর পবিত্র যুগে মদের ব্যবহার ক্বচিৎ হত। উমার (রাদি.) এর যুগে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি ঘটায় তিনি এ অপরাধের শাস্তি ৮০ দুররা আঘাত নির্দিষ্ট করে দেন আর মদ্যপায়ীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। উমার (রাদি.) কশাঘাত করিতেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করান, যারা মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাতম ও কান্নাকাটি করার পেশা অবলম্বন করত, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে তাদেরকে পিটানোর আদেশ দিতেন। এর রকমই তালাক সম্বন্ধেও যখন লোকেরা বাড়াবাড়ি করিতে লাগল আর যে বিষয়ে তাদেরকে অবসর ও প্রতীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তারা সে বিষয়ে বিলম্ব না করে শারীআতের উদ্দেশ্যের বিপরীত সাময়িক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে ক্ষিপ্রগতিতে তালাক দেয়ার কাজে বাহাদুর হয়ে উঠল, তখন দ্বিতীয় খালীফা উমার (রাদি.)র ধারণা হল যে, শাস্তির ব্যবস্থা না করলে জনসাধারণ এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করিবে না, তখন তিনি শাস্তি ও দণ্ডস্বরূপ এক সঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাকের জন্য তিন তালাকের হুকুম প্রদান করিলেন। যেমন তিনি মদ্যপায়ীর ৮০ দুররা আর দেশ বিতাড়িত করার আদেশ ইতোপূর্বে প্রদান করেছিলেন, ঠিক সেরূপ তাহাঁর এ আদশেও প্রযোজ্য হল। তাহাঁর দুররা মারা আর মাথা মুড়াবার আদেশ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং প্রথম খালীফা আবু বাকর (রাদি.) এর সাথে সুসমঞ্জস না হলেও যুগের অবস্থা আর জাতির স্বার্থের জন্য আমীরুল মুমিনীনরূপে তাহাঁর এরূপ করার অধিকার ছিল, সুতরাং তিনি তাই করিলেন। অতএবং তাহাঁর এ শাসন ব্যবস্থার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের নির্দেশ প্রত্যঅখ্যান করার অভিযোগ তাহাঁর বিরুদ্ধে টিকতে পারে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্ট যে, খালীফা ও শাসনকর্তাদের উপরোক্ত ধরনের যে ব্যবস্থা আল্লাহর গ্রস্থ ও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সুন্নাতে বর্ণিত ও উক্ত দুবস্তু হইতে গৃহীত, কেবল সেগুলোই আসল ও স্থায়ী এবং ব্যাপক আইনের মর্যাদা লাভ করার অধিকারী। সুতরাং উমার ফারূকের শাসনমূলক অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলোকে স্থায়ী আইনের মর্যাদা দান করা আদৌ আবশ্যক নয়। পক্ষান্তরে যদি বুঝা যায় যে,তাহাঁর শাসনমূলক ব্যবস্থা জাতির পক্ষে সঙ্কট ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দণ্ডবিধির যে ধারার সাহায্যে তিনি সমষ্টিগত তিন তালাকের বিদআত রুদ্ধ করিতে চেয়েছিলেন, তাহাঁর সেই শাসনবিধিই উক্ত বিদআতের ছড়াছড়ি ও বহুবিস্তৃতির কারণে পরিণত হয়ে চলেছে- যেরূপ ইদানীং তিন তালাকের ব্যাপারে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, হাজারে ও লাখেও কেউ কুরআন ও সুন্নাহর বিধানমত স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে কিনা সন্দেহ- এরূপ অবস্থায় উমার (রাদি.) এর শাসনমূলক অস্থায়ী নির্দেশ অবশ্যই পরিত্যাক্ত হইবে এবং প্রাথমিক যুগীয় ব্যবস্থায় পুনঃ প্রবর্তন করিতে হইবে। আমাদের যুগের বিদ্বানগণের কর্তব্য প্রত্যেক যুগের উম্মাতের বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং জাতীয় সঙ্কট দূর করিতে সচেষ্ট হওয়া। একটি প্রশাসনিক নির্দেশকে আঁকড়ে রেখে মুসলমানদেরকে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হইতে দেয়া উলামায়ে ইসলামের উচিত নয়।

সর্বশেষ কথা এই যে, হাফিয আবু বাকর ইসমাঈলী সমষ্টিগতভাবে প্রদত্ত তিন তালাকের শারঈ তিন তালাকরূপে গণ্য করার জন্য উমার (রাদি.) এর পরিতাপ ও অনুশোচনা সনদসহ রেওয়ায়াত করিয়াছেন। তিনি মুসনাদে উমারে লিখেছেন- হাফিয আবু ইয়ালা আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করিয়াছেন, তিনি বলেন সালিহ বিনে মালেক আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করিয়াছেন, তিনি বলে, খালেদ বিনে ইয়াযীদ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি স্বীয় পিতা ইয়াযীদ বিন মালিকের নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব বলিলেন- তিনটি বিষয়ের জন্য আমি যেরূপ অনুতপ্ত, এরূপ অন্য কোন কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত নই, প্রথমতঃ আমি তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করা কেন নিষিদ্ধ করলাম না। দ্বিতীয়তঃ কেন আমি মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদেরকে বিবাহিত করলাম না, তৃতীয়তঃ অগ্নিপতঙ্গ কেন হত্যা করলাম না। ইগাসার নতুন সংস্করণে আছে, কেন আমি ব্যাবসাদার ক্রন্দনকারীদের হত্যা করলাম না।

কোন দেশে যদি বিদআতী পন্থায় তালাক দেয়ার প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ কের যেরূপ উমার এর যুগে ঘটেছিল তাহলে শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক যদি মনে করেন যে, এক সাথে তিন তালাকতে তিন তালাক হিসেবেই গণ্য করা হইবে, তাহলে তিনি এরূপ ঘোষণা শাস্তিমূলকভাবে দিতে পারেন। কিন্তু বর্তমান যুগে সে যুগের ন্যায় অবস্থা সৃষ্টি হয়নি এবং নেই।

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করিয়াছেন- দেখো, মাত্র দুবার তালাক দিলেই স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে পুরুষ তাকে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারে। অতঃপর হয় উক্ত নারীর সাথে উত্তমরূপে সংসার নির্বাহ অথবা উত্তম রূপে বিচ্ছেদ। আর যে মাহর তোমরা নারীদের দিয়েছ তার কিছুই গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়… (সুরা আল-বাকারাহঃ ২২৯)

(আরবী) অর্থাৎ (আরবী) আমরা তার হিফাযত করেছি (আরবী) তার হিসাব রেখেছি।

সুন্নাত তালাক হল, পবিত্রাবস্থায় সহবাস ব্যতীত স্ত্রীকে ত্বলাক দেয়া এবং দুজন সাক্ষী রাখা।

৫২৫১

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, তিনি রাসুল এর যুগে তাহাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। উমার ইবন খাত্তাব (রাদি.) এ ব্যপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে জিজ্ঞেস করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ বললেনঃ তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুবতী হয় এবং আবার পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে, তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছে করে তবে সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দেবে। আর এটাই ত্বলাক্বের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের তালাক দেয়ার বিধান দিয়েছেন।( আঃপ্রঃ- ৪৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬২[১])

[২৫] ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৮ম খন্ডটি ১৯৯২ সালের ছাপা অনুযায়ী ৪৮৭০ নং হাদীসে শেষ হয়েছে। কিন্তু ৯ম খন্ডের শুরুতে ১৯৯৫ সালের প্রথম প্রকাশ অনুযায়ী ৪৭৬২ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে। বিধায় আমরাও সে নম্বর অনুযায়ী পুনরায় নম্বর প্রদান করেছি।

৬৮/২. অধ্যায়ঃ হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে তা তালাক বলে গন্য হইবে।

৫২৫২

ইবন উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিলেন। উমার (রাদি.) বিষয়টি নাবী এর কাছে ব্যক্ত করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে আনে। রাবী (ইবন সীরীন) বলেন, আমি বললাম, ত্বলাক্বটি কি গণ্য করা হইবে? তিনি (ইবনে উমার) বলিলেন, তাহলে কী?

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস ইবন যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে, তিনি ইবন উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তাকে হুকুম দাও সে যেন তাহাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে। আমি (ইউনুস) বললামঃ ত্বলাক্বটি কি পরিগণিত হইবে? তিনি (ইবন উমার) বললেনঃ তুমি কি মনে কর যদি সে অক্ষম হয় এবং আহম্মকী করে?(আঃপ্রঃ- ৪৮৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৩)

৫২৫৩

আবু মামার (আর) হইতে বর্ণিতঃ

আবু মামার বলেনঃ আবদুল ওয়ারিস আইউব থেকে, তিনি সাঈদ ইবন যুবায়র থেকে, তিনি ইবন উমার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ এটিকে আমার উপর এক তালাক গণ্য করা হয়েছিল।[৪৯০৮; মুসলিম ১৮/১, হাদীস ১৪৭১, আহমাদ ৫৪৯০] আঃপ্রঃ- ৪৮৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৩)

৬৮/৩. অধ্যায়ঃ তালাক দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে তালাক দেবে?

৫২৫৪

আওযাঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) এর কোন সহধর্মিণী তাহাঁর থেকে মুক্তি প্রার্থণা করেছিল? উত্তরে তিনি বললেনঃ উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশাহ (রাদি.) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, জাওনের কন্যাকে যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট (একটি ঘরে) পাঠানো হল আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলিল, আমি আপনার কাছ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও।

আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ হাদীসটি হাজ্জাজ ইবন আবু মানী ও তাহাঁর পিতামহ থেকে, তিনি যুহরী থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে এবং তিনি আয়েশা (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৮৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৪)

৫২৫৫

আবু উসায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দুটি বাগান পর্যন্ত পৌছালাম এবং এ দুটির মাঝে বসলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (ভিতরে) প্রবেশ করিলেন। তখন নুমান ইবন শারাহীলের কন্যা উমাইয়ার খেজুর বাগানস্থিত ঘরে জাওনিয়াকে আনা হয়। আর তাহাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নাবী যখন তার কাছে গিয়ে বলিলেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারিয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেনঃ এরপর তিনি তাহাঁর হাত প্রসারিত করিলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সাঃআঃ) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবু উসায়দ! তাকে দুখানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।(আঃপ্রঃ- ৪৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৫)

৫২৫৬

সাহল ইবন সাদ ও আবু উসায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(ভিন্ন সনদে) সাহল ইবন সাদ ও আবু উসায়দ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) উমাইয়া বিনতু শারাহলীকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাহাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করিল। তাই নাবী (সাঃআঃ) আবু উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌছে দেবার নির্দেশ দিলেন।( আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৬)

৫২৫৭

সাহল ইবন সাদ ও আবু উসায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(ভিন্ন সনদে) সাহল ইবন সাদ ও আবু উসায়দ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) উমাইয়া বিনতু শারাহলীকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাহাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করিল। তাই নাবী (সাঃআঃ) আবু উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌছে দেবার নির্দেশ দিলেন।( আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৬)

৫২৫৮

আবু গাল্লাব ইউনুস ইবন যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবন উমারকে বললামঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। তিনি বলিলেন, তুমি ইবন উমারকে চেন। ইবন উমার (রাদি.) তাহাঁর স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিয়েছিল। তখন উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে এসে বিষয়টি তাঁকে জানালেন। রাসুলুল্লাহ তাকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আদেশ দিলেন। পরে তার স্ত্রী পবিত্র হলে, সে যদি চায় তবে তাকে তালাক দেবে। আমি বললামঃ এতে কি তালাক গণনা করা হয়েছিল? তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর যদি সে অক্ষম হয় এবং বোকামি করে।(আঃপ্রঃ- ৪৮৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৭)

৬৮/৪. অধ্যায়ঃ যারা তিন তালাককে জায়েয মনে করেন। যেমন মহান আল্লাহর বাণীঃ

“এই ত্বলাক দুবার, এরপর হয় সে বিধিমত রেখে দিবে অথবা সদয়ভাবে মুক্তি দিবে।” (সুরা আল-বাক্বারা ২/২২৯)

ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় তালাক দেয় তার তিন ত্বলাক্বপ্রাপ্তা স্ত্রী ওয়ারিস হইবে বলে আমি মনে করি না। শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ওয়ারিস হইবে। ইবনু শুবরুমা জিজ্ঞেস করলেনঃ ইদ্দাত শেষ হওয়ার পর সে মহিলা অন্যত্র বিবাহ করিতে পারবে কি? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। ইবনু শুবরুমা আবার প্রশ্ন করলেনঃ যদি দ্বিতীয় স্বামীও মৃত্যু বরণ করে তবে? (অর্থাৎ আপনার মতানুযায়ী উক্ত স্ত্রীর উভয় স্বামীর ওয়ারিস হওয়া যরুরী হয়। এরপর শাবী তাহাঁর ঐ কথা ফিরিয়ে নেন।

৫২৫৯

সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, উওয়াইমির আজলানী (রাদি.) আসেম ইবনু আদী আনসারী (রাদি.) এর নিকট এসে বললেনঃ হে আসিম! যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অপর কোন পুরুষের সাথে (ব্যভিচার-রত) দেখিতে পায় এবং সে তাকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে তোমরা কি তাকে (হত্যাকারীকে) হত্যা করিবে? (আর হত্যা না করলে) তবে সে কী করিবে? হে আসিম! আমার পক্ষ হইতে এ সম্পর্কে তুমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস কর। আসিম (রাদি.) এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ ধরনের প্রশ্নাবলী নিন্দনীয় এবং দূষণীয় মনে করিলেন। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর উক্তি শ্রবণে আসিম (রাদি.) ভড়কে গেলেন। এরপর আসিম (রাদি.) তার নিজ বাসায় ফিরে আসলে উওয়াইমির (রাদি.) এসে বললেনঃ হে আসিম! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাকে কী জবাব দিলেন? আসিম (রাদি.) বলিলেন, তুমি কল্যাণজনক কিছু নিয়ে আমার নিকট আসনি। তোমার জিজ্ঞাসিত বিষয়কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) না পছন্দ করিয়াছেন। উওয়াইমির (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর কসম! (উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত) এ বিষয়কে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করিতেই থাকব। উওয়াইমির (রাদি.) এসে লোকদের মাঝে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে পেলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে পরপুরুষকে (ব্যভিচার-রত) দেখিতে পায়, আর তাকে হত্যা করে ফেলে, তবে আপনারা কি তাকে হত্যা করবেন? আর যদি সে (স্বামী) হত্যা না করে, তবে সে কী করিবে? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি গিয়ে তাঁকে (তোমার পত্নীকে) নিয়ে আস। সাহল (রাদি.) বলেন, এরপর তারা দুজনে লিআন করলো। আমি সে সময় (অন্যান্য) লোকের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর এর কাছে ছিলাম। উভয়ের লিআন করা হয়ে গেলে উওয়াইমির (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! এখন যদি আমি তাকে (স্ত্রী হিসেবে) রাখি তবে এটা তার উপর মিথ্যারোপ করা হইবে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে আদেশ দেয়ার পূর্বেই তিনি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলেন।

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এটাই লিআনকারীদ্বয়ের ব্যাপারে সুন্নাত হয়ে দাঁড়াল।(আঃপ্রঃ- ৪৮৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৮)

৫২৬০

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রিফাআ কুরাযীর স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রিফাআ আমাকে পূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদের তালাক (তিন ত্বলাক্ব) দিয়েছে। পরে আমি আবদুর রহমান ইবন যুবায়র কুরাযীকে বিয়ে করি। কিন্তু তার কাছে আছে কাপড়ের পুঁটলির মত একটি জিনিস। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ সম্ভবতঃ তুমি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে ইচ্ছে করছ। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়, যতক্ষন না সে (অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী) তোমার স্বাদ গ্রহণ করে এবং তুমি তারস্বাদ গ্রহণ কর।(আঃপ্রঃ- ৪৮৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৯)

[২৬] যথা নিয়মে তিন তালাক দত্তা স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে এমন শর্তে বিবাহ দেয়া যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের পর পুরুষটি তাকে তালাক দিয়ে দেবে যাতে প্রথম পুরুষটি তার তিন তালাক দত্তা স্ত্রীকে আবার বিয়ে কতে পারে। এরকম শর্তাধীন বিয়ের ব্যবস্থাকে হালালা বলা হয় যা অত্যন্ত ঘৃণিত হারাম কাজ। রাসুল (সাঃআঃ) হিলাকারী পুরুষ ও যার জন্য হিলা করা হয় উভয়কে ভাড়াটিয়া ষাঁড় নামে আখ্যায়িত করে উভয়ের প্রতি অভিশাপ বর্ষন করিয়াছেন। (দ্রষ্টব্য ইবনু মাজাহর হাদীস)

আমাদের সমাজের কিছু কিছু আলেম আছেন যারা তিন তালাক হয়ে যাবে এ ফতোওয়া দিয়ে বলে থাকেন যে, একমাত্র উপায় তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে হালালা করিতে হইবে। আর তার পদ্ধতি হচ্ছে তাকে আর একজন পুরুষের সাথে বিবাহ দিয়ে একরাত্রি যাপন করিয়ে তাকে দিয়ে তালাক দেয়াতে হইবে। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। আমার মনে হয় সেই সব তথাকথিত আলেমগণ নিজেরাই ভাড়াটিয়া ষাঁড় সাজার খাহেশে এরূপ ফতোওয়া দিয়ে থাকেন। অথচ রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ ব্যক্তিকে ভাড়াটিয়া ষাঁড় বলে তার উপর অভিশাপের বদ দুআ করিয়াছেন।

(আরবী)

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন হালালকারীকে আর যার জন্য হালাল করা হচ্ছে তাকে।

হাদীসটি উল্লেখ করিয়াছেন ইমাম তিরমিযী ৪/২২১, ২২২ (তোহফাতুল আহওয়াজী সহ), ইবনু মাজাহ (১/৬২৩) ও নাসাঈ।

(আরবী)

উকবাহ ইবনু আমির বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদেরকে কি সংবাদ দিবনা ভাড়া করা ষাঁড় (পাঁঠা) সম্পর্কে? তারা (উপস্থিত সহাবীগণ) বললেনঃ জি হ্যাঁ হে আল্লাহর রাসুল। (রাসুল) বললেনঃ সে হচ্ছে হালালকারী। আল্লাহর অভিশাপ হালালকারীর উপর আর যার জন্য হালাল করা হয় তার উপর।

হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন ইবনু মাজাহ (১/৬২৩) বইরুত ছাপা।

অতএব তথাকথিত আলিমদের খপ্পরে না পড়ে আপনারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি এরূপ সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে থাকেন তাহলে একত্রে দেয়া তিন তালাককে সুন্নাতের উপর আমল করার স্বার্থে এক তালাক গণ্যকরে পুনরায় সংসারে ফিরে সংসার করা আরম্ভ করুন। ইনশাআল্লাহ নাবীর সূন্নাতের উপর আমল করার কারণে আপনারা সাওয়াবের ভাগীদার হইবেন।

৫২৬১

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে সে (স্ত্রী) অন্যত্র বিয়ে করিল। পরে দ্বিতীয় স্বামীও তাকে তালাক দিল। নাবী (সাঃআঃ)- কে জিজ্ঞেস করা হল মহিলাটি কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হইবে? তিনি বললেনঃ না, যতক্ষন না সে (দ্বিতীয় স্বামী) তার স্বাদ গ্রহণ করিবে, যেমন স্বাদ গ্রহণ করেছিল প্রথম স্বামী।(আঃপ্রঃ- ৪৮৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭০)

৬৮/৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীদেরকে (পার্থিব সুখ কিংবা পরকালীন সুখ বেছে নেয়ার) ইখ্‌তিয়ার দিল।

মহান আল্লাহর বাণীঃ হে নাবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের বলে দাও-তোমরা যদি পার্থিক জীবন আর তার শোভাসৌন্দর্য কামনা কর, তাহলে এসো, তোমাদেরকে ভোগসামগ্রী দিয়ে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই। (সুরা আহযাব ৩৩/২৮) *

[*] এ আয়াতের পর আঃপ্রঃর ৪৭৭৬ নং হাদীস আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪৭৭১ নং হাদীসটি মূল বুখারীর এ স্থানে নেই। এটি ৪৭৮৬ নং হাদীসে গত হয়েছে।

৫২৬২

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে (দুনিয়ার সুখ শান্তি বা পরকালীন সুখ শান্তি বেছে নেয়ার) ইখতিয়ার দিলে আমরা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকেই গ্রহণ করলাম। আর এতে আমাদের প্রতি কিছুই (অর্থাৎ ত্বলাক্ব) সাব্যস্ত হয়নি। [৫২৬৩; মুসলিম ১৮/৪, হাদীস ১৪৭৭] আঃপ্রঃ- ৪৮৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭২)

৫২৬৩

মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)- কে ইখ্‌তিয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম (এতে তালাক হইবে কিনা)। তিনি উত্তর দিলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে ইখ্‌তিয়ার দিয়েছিলেন। তাহলে সেটা কি তালাক ছিল? মাসরূক বলেনঃ তবে সে (স্ত্রী) আমাকে গ্রহণ করার পর আমি তাকে একবার ইখ্‌তিয়ার দিই বা একশবার দিই তাতে কিছু যায় আসে না।[৫২৬২; মুসলিম ১৮/৪, হাদীস ১৪৭৭, আহমাদ ২৫৭৬১] আঃপ্রঃ- ৪৮৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৩)

৬৮/৬. অধ্যায়ঃ যে (তার স্ত্রীকে) বলিল- আমি তোমাকে পৃথক করলাম, বা আমি তোমাকে বিদায় দিলাম, বা তুমি মুক্ত বা বন্ধনহীন অথবা এমন কোন বাক্য উচ্চারণ করিল যা দ্বারা তালাক উদ্দেশ্য হয়। তবে তা তার নিয়্যাতের উপর নির্ভর করিবে।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “তাদেরকে সৌজন্যের সঙ্গে বিদায় দাও”- (সুরা আহযাব ৩৩/৪৯)। তিনি আরও বলেন-“আমি তোমাদেরকে সৌজন্যের সঙ্গে বিদায় দিচ্ছি”- (সুরা আহযাব ৩৩/২৮)। আরও বলেন- “হয়ত উত্তম পন্থায় রেখে দিবে নতুবা উত্তমরূপে ছেড়ে দিবে”- (সুরা আল-বাক্বারা ২/২২৯)। আরও বলেন, “অথবা তাদেরকে সৌজন্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দাও”- (সুরা আত্ – তালাক ৬৫/২)।

আর আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) জানতেন আমার মা-বাপ আমাকে তাহাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদের আদেশ দিবেন না।

৬৮/৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলিল- “তুমি আমার জন্য হারাম।”

হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তবে তা তার নিয়্যাত অনুযায়ী হইবে। আলিমগণ বলেন, যদি কেউ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, তবে সে স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। তাঁরা এটাকে হারাম নামে আখ্যায়িত করিয়াছেন, যা তালাক বা বিচ্ছেদ দ্বারা সম্পন্ন হয়। তবে এ হারাম করাটা তেমন নয়, যেমন কেউ খাদ্যকে হারাম ঘোষণা করিল; কেননা হালাল খাদ্যকে হারাম বলা যায়না। কিন্তু ত্বলাক্বপ্রাপ্তাকে হারাম বলা যায়। আবার তিন ত্বলাক্বপ্রাপ্তা সম্বন্ধে বলেছেন, সে (স্ত্রী) অন্য স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হইবে না।

৫২৬৪

লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবনু উমার (রাদি.)- কে তিন তালাক প্রদানকারী সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিতেনঃ যদি তুমি একবার বা দুবার দিতে! কেননা নাবী (সাঃআঃ) আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে সে হারাম হয়ে যাবে, যতক্ষণ না সে (স্ত্রী) তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে করে।(আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

৫২৬৫

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিলে সে (স্ত্রী) অন্য স্বামীকে বিবাহ করে। পরে সেও তাকে তালাক দেয়। তার লিঙ্গ ছিল কাপড়ের কিনারা সদৃশ। সুতরাং মহিলা তার থেকে নিজের মনকামনা পূর্ণ করিতে পারল না। দ্বিতীয় স্বামী অবিলম্বে তালাক দিলে সে (মহিলা) নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার প্রথম স্বামী আমাকে তালাক দিলে আমি অন্য স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হই। এরপর সে আমার সঙ্গে সঙ্গত হয়। কিন্তু তার সঙ্গে কাপড়ের কিনারা সদৃশ বৈ কিছুই নেই। তাই সে একবারের অধিক আমার নিকটস্থ হল না এবং আপন মনস্কামনা সিদ্ধ করিতে সক্ষম হল না। এরূপ অবস্থায় আমি আমার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হব কি? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হইবে না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তোমার কিছু স্বাদ উপভোগ করে, আর তুমিও তার কিছু স্বাদ আস্বাদন কর।( আঃপ্রঃ- ৪৮৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৪)

৬৮/৮. অধ্যায়ঃ (মহান আল্লাহর বাণী): হে নাবী ! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করিয়াছেন তা তুমি কেন হারাম করছ? (সুরা আত-তাহরীম ৬৬/১)

৫২৬৬

সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইবনু আব্বাস (রাদি.)- কে বলিতে শুনেছেন যে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হারাম বলে ঘোষণা দেয় সে ক্ষেত্রে কিছু (অর্থাৎ ত্বলাক্ব) হয় না। তিনি আরও বলেনঃ “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সুরা আল-আহযাবঃ ২১)(আঃপ্রঃ- ৪৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৫)

৫২৬৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) যাইনাব বিনত জাহাশের নিকট কিছু (বেশী সময় অবস্থান) করিতেন এবং সেখানে তিনি মধু পান করিতেন। আমি ও হাফসাহ পরামর্শ করে ঠিক করলাম যে, আমাদের মধ্যে যার নিকটই নাবী (সাঃআঃ) প্রবেশ করবেন, সেই যেন বলি-আমি আপনার নিকট হইতে মাগাফীর-এর গন্ধ পাচ্ছি। আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন। এরপর তিনি তাদের একজনের নিকট প্রবেশ করলে তিনি তাঁকে সেরূপ বলিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো যাইনাব বিনত জাহাশের নিকট মধু পান করেছি। আমি পুনরায় এ কাজ করব না। এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয় (মহান আল্লাহর বাণী): “হে নাবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করিয়াছেন তা তুমি কেন হারাম করছ?……. তোমারা দুজন যদি অনুশোচনাভরে আল্লাহর দিকে ফিরে আস (তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম)” (সুরা আত-তাহরীম ৬৬ : ১-৪) পর্যন্ত। এখানে আয়েশা ও হাফসাহ -কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। আর আল্লাহর বাণী “যখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন”- বরং আমি মধু পান করেছি-এ কথার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়। [৪৯১২; মুসলিম ৩/হাদীস ১৪৭৪, আহমাদ ২৫৯১০] আঃপ্রঃ- ৪৮৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৬)

৫২৬৮

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মধু ও হালুয়া (মিষ্টি) পছন্দ করিতেন। আসর সালাত শেষে তিনি তাহাঁর স্ত্রীদের নিকট যেতেন। এরপর তাঁদের একজনের ঘনিষ্ঠ হইতেন। একদা তিনি হাফসাহ বিনত উমারের নিকট গেলেন এবং অন্যান্য দিনের চেয়ে অধিক সময় কাটালেন। এতে আমি ঈর্ষা বোধ করলাম। পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, তাহাঁর (হাফসাহর) গোত্রের এক মহিলা তাঁকে এক পাত্র মধু উপঢৌকন দিয়েছিল। তা থেকেই তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে কিছু পান করিয়েছেন। আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! আমরা এজন্য একটা মতলব আঁটব। এরপর আমি সাওদাহ বিনত যামআহকে বললাম, তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] তো এখনই তোমার কাছে আসছেন, তিনি তোমার নিকটবর্তী হলেই তুমি বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি নিশ্চয়ই তোমাকে বলবেন “না”। তখন তুমি তাঁকে বলবে, তবে আমি কিসের গন্ধ পাচ্ছি? তিনি বলবেনঃ হাফসাহ আমাকে কিছু মধু পান করিয়েছে। তুমি তখন বলবে, এর মৌমাছি মনে হয় উরফুত নামক বৃক্ষ থেকে মধু সংগ্রহ করেছে। আমিও তাই বলব। সফীয়্যাহ! তুমিও তাই বলবে। আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ সাওদা (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! তিনি দরজার নিকট আসতেই আমি তোমার ভয়ে তোমার আদিষ্ট কাজ পালনে প্রস্তুত হলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন তাহাঁর নিকটবর্তী হলেন, তখন সাওদা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি বললেনঃ না। সাওদা বলিলেন, তবে আপনার নিকট হইতে এ কিসের গন্ধ পাচ্ছি? তিনি বলিলেন হাফসাহ আমাকে কিছু মধু পান করিয়েছে। সাওদা বলিলেন, এ মধু মক্ষিকা উরফুত নামক গাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। এরপর তিনি ঘুরে যখন আমার নিকট এলেন, তখন আমিও ঐরকম বললাম। তিনি সাফী্য্যাহর নিকট গেলে তিনিও তেমনই কথা বলিলেন। পরদিন যখন তিনি হাফসাহর কাছে গেলেনঃ তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে মধু পান করাব কি? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমার এর কোন দরকার নেই। আয়েশা (রাদি.) বর্ণনা করেন, সাওদা বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা তাঁকে বিরত রেখেছি। আমি বললামঃ চুপ কর। [৪৯১২; মুসলিম ১৮/৩, হাদীস ১৪৭৪, আহমাদ ২৪৩৭০] আঃপ্রঃ- ৪৮৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৭)

৬৮/৯. অধ্যায়ঃ বিয়ের আগে তালাক নেই।

মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন মুমিন নারীকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তাদেরকে তালাক দাও, তখন তাদের জন্য তোমাদেরকে কোন ইদ্দত পালন করিতে হইবে না যা তোমরা (অন্যক্ষেত্রের তালাকে) গণনা করে থাক। কাজেই কিছু সামগ্রী তাদেরকে দাও আর তাদেরকে বিদায় দাও উত্তম বিদায়ে। (সুরা আহযাব ৩৩/৪৯)

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ (এ আয়াতে) আল্লাহ তাআলা বিয়ের পর ত্বলাক্বের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। এ ব্যাপারে আলী (রাদি.) সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), আবু বক্‌র ইবনু আবদুর রহমান, উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহ, আবান ইবনু উসমান, আলী ইবনু হুসাইন, শুরায়হ, সাঈদ বিনু যুবায়র, কাসিম, সালিম, তাউস, হাসান, ইকরিমা, আত্বা, আমির ইবনু সাদ, জাবির ইবনু যায়দ, নাফি ইবনু যুবায়র, মুহাম্মাদ ইবনু কাব, সুলাইমান ইবনু ইয়াসার, মুজাহিদ, কাসিম ইবনু আবদুর রহমান, আমর ইবনু হারিম ও শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখ থেকেও বর্ণিত আছে যে, বিয়ের পূর্বে তালাক বর্তায় না।

৬৮/১০. অধ্যায়ঃ শেষ কারণে যদি কেউ স্বীয় স্ত্রীকে বোন বলে পরিচয় দেয়, তাতে কিছু হইবে না।

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ ইবরাহীম (আঃ) (একদা) স্বীয় সহধর্মিনী সারাহকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, এটি আমার বোন। আর তা ছিল দীনী সম্পর্কের সূত্রে।

৬৮/১১. অধ্যায়ঃ বাধ্য হয়ে, মাতাল ও পাগল অবস্থায় তালাক দেয়া আর এ দুয়ের বিধান সম্বন্ধে। ভূলবশতঃ তালাক দেয়া এবং শির্‌ক ইত্যাদি সম্বন্ধে। (এসব নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল)।

কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রতিটি কাজ নিয়্যাত অনুযায়ী গণ্য হয়। প্রত্যেক তা-ই পায়, যার সে নিয়্যাত করে। শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) পাঠ করেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” (সুরা আল-বাকারাহ ২ : ২৮৬) ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন ব্যক্তি স্বীকার করলে যা জায়িয হয় না।

স্বীয় ব্যভিচারের কথা স্বীকারকারী এক ব্যক্তিকে নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেনঃ তুমি কি পাগল হয়েছ? আলী (রাদি.) বলেন, হামযাহ (রাদি.) আমার দুটি উটনীর পার্শ্বদেশ ফেড়ে ফেললে, নাবী (সাঃআঃ) হামযাকে তিরস্কার করিতে থাকেন। হঠাৎ দেখা গেল নেশার ঘোরে হামযাহর চক্ষু দুটি লাল হয়ে গেছে। এরপর হামযাহ বলিলেন, তোমরা তো আমার বাবার গোলাম ব্যতীত নও। তখন নাবী (সাঃআঃ) বুঝতে পারলেন, তিনি নিশাগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন আমরাও তাহাঁর সঙ্গে বেরিয়ে এলাম। উসমান (রাদি.) বলেন, পাগল ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির তালাক জায়িয নয়। উক্‌বাহ ইবনু আমির (রাদি.) বলেন, ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন (সন্দেহের বাতিকগ্রস্ত) ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয় না। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, মাতাল ও বাধ্যকৃতের তালাক অবৈধ। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ শর্ত যুক্ত করে তালাক দিলে শর্ত পূরণের পরই তালাক হইবে। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জিজ্ঞেস করিলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার শর্তে স্বীয় স্ত্রীকে জনৈক ব্যক্তি তিন তালাক দিল-(এর হুকুম কী?)। ইবনু উমার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বললেনঃ যদি সে মহিলা ঘর থেকে বের হয়, তাহলে সে তিন ত্বলাক্বপ্রাপ্তা হইবে। আর যদি বের না হয়, তাহলে কিছুই হইবেনা। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যে ব্যক্তি বললঃ যদি আমি এরূপ না করি, তবে আমার স্ত্রীর প্রতি তিন তালাক প্রযোজ্য হইবে। তার সম্বন্ধে যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হইবে, শপথকালে তার ইচ্ছা কী ছিল? যদি সে ইচ্ছে করে মেয়াদ নির্ধারণ করে থাকে এবং শপথকালে তার এ ধরণের নিয়্যাত থাকে, তাহলে এ বিষয়কে তার দ্বীন ও আমানতের উপর ন্যস্ত করা হইবে। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি সে বলে, “তোমাকে আমার কোন প্রয়োজন নেই”; তবে তার নিয়্যাত অনুসারে কাজ হইবে। আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব ভাষায় তালাক দিতে পারে। ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ যদি কেউ বলে তুমি গর্ভবতী হলে, তোমার প্রতি তিন ত্বলাক্ব। তাহলে সে প্রতি তুহরে স্ত্রীর সঙ্গে একবার সহবাস করিবে। যখনই গর্ভ প্রকাশিত হইবে, তখনি সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কেউ বলে, “তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও”, তবে তার নিয়্যাত অনুসারে ফায়সালা হইবে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ প্রয়োজনের তাগিদে তালাক দেয়া হয়। আর দাসমুক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য থাকলেই করা যায়। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কেউ বলেঃ তুমি আমার স্ত্রী নও, তবে তালাক হওয়া না হওয়া নিয়্যাতের উপর নির্ভর করিবে। যদি সে ত্বলাক্বের নিয়্যাত করে থাকে, তবে তাই হইবে। আলী (রাদি.) [উমার (রাদি.)- কে সম্বোধন করে] বলেনঃ আপনি কি জানেন না যে, তিন প্রকারের লোক থেকে কসম তুলে নেয়া হয়েছে। এক, পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায়; দুই, শিশু যতক্ষণ না সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়; তিন, ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষন না সে জেগে উঠে। আলী (রাদি.) (আরও) বলেনঃ পাগল ব্যতীত সকলের তালাক কার্যকর হয়।

৫২৬৯

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুই (ত্বলাক্ব) হইবে না।(আঃপ্রঃ- ৪৮৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮)

৫২৭০

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট এলো; তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। সে বললঃ সে ব্যভিচার করেছে। নাবী (সাঃআঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। নাবী (সাঃআঃ) যেদিক মুখ ফিরিয়ে ছিলেন, সেদিকে এসে সে লোকটি নিজের সম্পর্কে বারবার (ব্যভিচারের) সাক্ষ্য দিল। তিনি লোকটিকে ডেকে বলিলেন, তুমি কি পাগল হয়েছ? তুমি কি বিবাহিত? সে বলিল হাঁ, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ঈদগাহে নিয়ে রজম করার আদেশ দিলেন। পাথরের আঘাত যখন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলল, তখন সে পালিয়ে গেল। অবশেষে তাকে হাররা নামক স্থানে ধরা হলো এবং হত্যা করা হলো। [৫২৭২, ৬৮১৪, ৬৮১৬, ৬৮২০, ৬৮২৬, ৭১৬৮; মুসলিম ২৯/৫, হাদীস ১৬৯১, আহমাদ ১৪৪৬৯] আঃপ্রঃ- ৪৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৯)

৫২৭১

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট এল, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। লোকটি তাঁকে ডেকে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! হতভাগা ব্যভিচার করেছে। সে এ কথা দিয়ে নিজেকে বোঝাতে চাইল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি যেদিকে ফিরলেন সে সেদিকে গিয়ে আবার বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! হতভাগা ব্যভিচার করেছে। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর সেও সে দিকে গেল যে দিকে তিনি মুখ ফিরালেন এবং আবার সে কথা বলিল। তিনি চতুর্থবার মুখ ফিরিয়ে নিলে সেও সেদিকে গেল। যখন সে নিজের ব্যাপারে চারবার সাক্ষী দিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি পাগল হয়েছ? সে বলিল, না। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাকে নিয়ে যাও এবং রজম কর। লোকটি ছিল বিবাহিত। [৬৮১৫, ৬৮২৫, ৭১৬৭; মুসলিম ২৯/৫, হাদীস ১৬৯১, আহমাদ ১৪৪৬৯] আঃপ্রঃ- ৪৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮০)

৫২৭২

যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাদি.) থেকে যিনি শুনেছেন, তিনি আমাকে বলেছেন, রজমকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমরা মাদীনাহর মুসল্লায় (অর্থাৎ ঈদগাহে) তাকে রজম করলাম। পাথর যখন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলল, সে তখন পালিয়ে গেল। হাররায় আমরা তাকে পাকড়াও করলাম এবং রজম করলাম। অবশেষে সে মৃত্যু বরণ করলো। [৫২৭০; মুসলিম ২৯/৫, হাদীস ১৬৬১, আহমাদ ১৪৪৬৯] আঃপ্রঃ- ৪৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮০)

৬৮/১২. অধ্যায়ঃ খুলার [২৭] বর্ণনা এবং তালাক হওয়ার নিয়ম।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের পক্ষে তাদেরকে দেয়া মালের কিছুই ফিরিয়ে নেয়া জায়িয হইবে না, কিন্তু যদি তারা উভয়ে আশঙ্কা করে যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না (তাহলে অন্য ব্যবস্থা)। অতঃপর যদি তোমরা (উভয় পক্ষের শালিসগণ) আশঙ্কা কর যে উভয়পক্ষ আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে না, তাহলে উভয়ের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করিতে চায়। এগুলো আল্লাহর আইন, কাজেই তোমরা এগুলোকে লঙ্ঘন করো না, আর যারা আল্লাহর আইনসমূহ লঙ্ঘন করিবে, তারাই যালিম।” (সুরা আল-বাক্বারা ২/২২৯)

উমার (রাদি.) কাযীর অনুমতি ব্যতীত খুলাকে বৈধ বলেছেন। উসমান (রাদি.) মাথার বেনী ব্যতীত অন্য সকল কিছুর পরিবর্তে খুলা করার অনুমতি দিয়েছেন। তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি তারা উভয়ে আল্লাহর সীমা ঠিক না রাখতে পারার আশঙ্কা করে অর্থাৎ সংসার জীবনে তাদের প্রত্যেকের উপর যে দায়িত্ব আল্লাহ অর্পণ করিয়াছেন সে ব্যাপারে । তিনি বোকাদের মাঝে এ কথা বলেননি যে, খুলা ততক্ষণ বৈধ হইবে না, যতক্ষণ না মহিলা বলবে আমি জুনাবী হয়ে তোমার জন্য গোসল করব না অর্থাৎ যতক্ষণ না মহিলা তাকে সহবাস থেকে বাধা দান করিবে।

[২৭] খুলা শব্দের অর্থ খুলে ফেলা , মুক্ত করা।

যেমন আল্লাহ বলেন, ———————- অর্থাৎ “হে মূসা! তুমি তোমার জুতাজোড়া খুলে নাও, কেননা তুমি এখন তুওয়া নামক পবিত্র উপত্যকায় উপস্থিত।

খুলা তালাকঃ স্ত্রী যদি বিশেষ কোন কারণে স্বামীর সাথে বসবাস করিতে নারায হয় তাহলে স্বামী তার নিকট থেকে অথবা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিনিময় গ্রহণ করে স্ত্রীকে পৃথক করে দেয়াকে খুলা তালাক বলা হয়।

খুলার ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকতে হইবে। যদি স্বামী সম্মতি প্রদান না করে তাহলে স্ত্রী বিচারকের শরণাপন্ন হয়ে তার মাধ্যমে খুলা করিবে।

স্বামী স্ত্রীকে বিদায়ের অনুমতি দেয়ার পর যদি স্ত্রী পুনরায় উক্ত স্বামীর সংসার করিতে চায়, তাহলে এ খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী উক্ত স্ত্রীকে গ্রহণ করিতে চাইলে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করিতে হইবে।

আর যদি অন্যত্র বিবাহ করিতে চায়, তাহলে এক হায়েয অতিক্রম করার পর অন্যত্র বিবাহ করিতে পারবে। [এ মর্মে ইমাম নাসাঈ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, দেখুন “সহীহ নাসাঈ” (৩৪৯৭) এছাড়া দেখুন “ফিকহুস সুন্নাহ” খুলা অধ্যায়]।

তার জন্য আল্লাহ বিধান প্রদান করেছেনঃ——————————–

“অতঃপর যদি তোমরা (উভয় পক্ষের শালিসগণ) আশঙ্কা কর যে উভয়পক্ষ আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে না, তাহলে উভয়ের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করিতে চায়।” (সুরা আল-বাকারাহঃ ২২৯)

আর যদি স্বামী বিনা মালে পরিত্যাগ করে তাহলে আরও ভাল।

৫২৭৩

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছিনা। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা (অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও।( আঃপ্রঃ- ৪৮৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮১)

খুলা শব্দের অর্থ খুলে ফেলা, মুক্ত করা।

যেমন আল্লাহ বলেন,

{فَاخْلَعْنَعْلَيْكَإِنَّكَبِالْوَادِالْمُقَدَّسِطُوىً}

অর্থাৎ হে মূসা! তুমি তোমার জুতাজোড়া খুলে নাও, কেননা তুমি এখন তুওয়া নামক পবিত্র উপত্যকায় উপস্থিত।

খুলা তালাকঃ স্ত্রী যদি বিশেষ কোন কারণে স্বামীর সাথে বসবাস করিতে নারায হয় তাহলে স্বামী তার নিকট থেকে অথবা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিনিময় গ্রহণ করে স্ত্রীকে পৃথক করে দেয়াকে খুলা তালাক বলা হয়।

খুলার ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকতে হইবে। যদি স্বামী সম্মতি প্রদান না করে তাহলে স্ত্রী বিচারকের শরণাপন্ন হয়ে তার মাধ্যমে খুলা করিবে।

স্বামী স্ত্রীকে বিদায়ের অনুমতি দেয়ার পর যদি স্ত্রী পুনরায় উক্ত স্বামীর সংসার করিতে চায়, তাহলে এ খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী উক্ত স্ত্রীকে গ্রহণ করিতে চাইলে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করিতে হইবে।

আর যদি অন্যত্র বিবাহ করিতে চায়, তাহলে এক হায়েয অতিক্রম করার পর অন্যত্র বিবাহ করিতে পারবে। [এ মর্মে ইমাম নাসাঈ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, দেখুন সহীহ নাসাঈ ৩৪৯৭) এছাড়া দেখুন ফিক্হুস সুন্নাহ খুলা অধ্যায়]।

তার জন্য আল্লাহ বিধান প্রদান করেছেনঃ

{فَإِنْخِفْتُمْأَلَّايُقِيمَاحُدُودَاللَّهِفَلاجُنَاحَعَلَيْهِمَافِيمَاافْتَدَتْبِهِ}

অতঃপর যদি তোমরা উভয় পক্ষের শালিসগণ) আশঙ্কা কর যে উভয়পক্ষ আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে না, তাহলে উভয়ের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করিতে চায়। সুরা আল-বাকারাহঃ ২২৯)

আর যদি স্বামী বিনা মালে পরিত্যাগ করে তাহলে আরও ভাল।

৫২৭৪

 আবদুল্লাহ ইবনু উবায়র (র) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উবায়র বোন হইতেও উক্ত হাদীসটি বর্ণিত। তাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? মহিলা বললঃ হাঁ। পরে সে বাগানটি ফেরত দিল, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে তালাক দেয়ার জন্য তার স্বামীকে নির্দেশ দিলেন।

ইবরাহীম ইবনু তাহমান খালিদ থেকে, তিনি ইক্‌রামাহ থেকে তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে তাঁকে তালাক দাও” কথাটি ও বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৮৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮২)

৫২৭৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় ইবনু আবু তামীমা ইক্‌রামাহ সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ সাবিত ইবনু কায়স (রাদি.)- এর স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! সাবিতের দীনদারী ও চরিত্রের ব্যাপারে আমি কোন দোষারোপ করছি না, তবে আমি তার সঙ্গে সংসার জীবন নির্বাহ করিতে পারছিনা। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি তার বাগানটি কি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হাঁ।(আঃপ্রঃ- ৪৮৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮২)

৫২৭৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস (রাদি.)- এর স্ত্রী নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি সাবিতের দ্বীন ও চরিত্রের ব্যাপারে কোন দোষ দিচ্ছি না। তবে আমি কুফরীর আশঙ্কা করছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত আছ? সে বললঃ হাঁ। অতঃপর সে বাগানটি তাকে (স্বামীকে) ফিরিয়ে দিল। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার স্বামীকে নির্দেশ দিলেন, সে মহিলাকে পৃথক করে দিল।আঃপ্রঃ- ৪৮৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৩)

৫২৭৭

ইকরামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যে, জামীলা (সাবিতের স্ত্রী) এরপর উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেন।(আঃপ্রঃ- ৪৮৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৪)

৬৮/১৩. অধ্যায়ঃ স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব হলে (অথবা প্রয়োজনের তাগিদে) ক্ষতির আশঙ্কায় খুলার প্রতি ইশারা করিতে পারে কি?

মহান আল্লাহর বাণীঃ “যদি তোমরা তাদের মধ্যে অনৈক্যের আশংকা কর, তবে স্বামীর আত্মীয়-স্বজন হইতে একজন এবং স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন হইতে একজন সালিস নিযুক্ত কর। যদি উভয়ে মীমাংসা করিয়ে দেয়ার ইচ্ছে করে, তবে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন, সকল কিছুর খবর রাখেন।” (সুরা আন-নিসা ৪/৩৫)

৫২৭৮

মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি যে, বনু মুগীরাহর লোকেরা তাদের মেয়েকে “আলী যেন বিয়ে করেন এ অনুমতি চেয়েছিল, আমি এর অনুমতি দিতে পারি না। (আঃপ্রঃ- ৪৮৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৫)

৬৮/১৪. অধ্যায়ঃ দাসীকে বিক্রয় করা তালাক হিসাবে গণ্য হয় না।

৫২৭৯

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

. নাবী সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরার মাধ্যমে তিনটি বিধান জানা গেছে। এক. তাকে আযাদ করা হলো, এরপর তাকে তার স্বামীর সঙ্গে থাকা বা থাকার ইখ্‌তিয়ার দেয়া হলো। দুই. রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, আযাদকারী আযাদকৃত গোলামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হইবে। তিন. রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘরে প্রবেশ করিলেন, দেখিতে পেলেন হাঁড়িতে গোশ্‌ত ফুটছে। তাহাঁর কাছে রুটি ও ঘরের অন্য তরকারী নিয়ে আসা হলো। তখন তিনি বললেনঃ গোশ্‌তের পাত্র দেখছি না যে যাতে গোশ্‌ত ছিল? লোকেরা জবাব দিল, হাঁ, কিন্তু সে গোশ্‌ত বারীরাহকে সদাকাহ হিসাবে দেয়া হয়েছে। আর আপনি তো সদাকাহ খান না? তিনি বললেনঃ তার জন্য সদাকাহ, আর আমাদের জন্য এটা উপঢৌকন। (আঃপ্রঃ- ৪৮৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৬)

৬৮/১৫. অধ্যায়ঃ দাসী স্ত্রী আযাদ হয়ে গেলে গোলাম স্বামীর সঙ্গে থাকা বা না থাকার ইখ্‌তিয়ার।

৫২৮০

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি তাকে অর্থাৎ বারীরার স্বামীকে ক্রীতদাস অবস্থায় দেখেছি।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৭)

৫২৮১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, অমুক গোত্রের গোলাম এই মুগীস অর্থাৎ বারীরার স্বামী; আমি যেন তাকে এখনও মাদীনাহর অলিতে গলিতে কেঁদে কেঁদে বারীরার পিছে পিছে ঘুরতে দেখছি।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৮)

৫২৮২

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ বারীরার স্বামী কালো গোলাম ছিল। তাকে মুগিস নামে ডাকা হত। সে অমুক গোত্রের গোলাম ছিল। আমি যেন এখনো দেখছি সে মাদীনাহর অলিতে গলিতে বারীরার পিছে পিছে ঘুরছে।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮৯)

৬৮/১৬. অধ্যায়ঃ বারীরার স্বামীর ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ)- এর সুপারিশ।

৫২৮৩

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, বারীরার স্বামী ক্রীতদাস ছিল। মুগীস নামে তাকে ডাকা হত। আমি যেন এখনও তাকে দেখছি সে বারীরার পিছে কেঁদে কেঁদে ঘুরছে, আর তার দাড়ি বেয়ে অশ্রু ঝরছে। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আব্বাস! বারীরার প্রতি মুগীসের ভালবাসা এবং মুগীসের প্রতি বারীরার অনাসক্তি দেখে তুমি কি আশ্চর্যান্বিত হওনা? এরপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ (বারীরা) তুমি যদি তার কাছে আবার ফিরে যেতে! সে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাকে হুকুম দিচ্ছেন? তিনি বললেনঃ আমি কেবল সুপারিশ করছি। সে বললঃ তাকে দিয়ে আমার কোন প্রয়োজন নেই।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯০)

৬৮/১৭. অধ্যায়ঃ

৫২৮৪

আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যে, আয়েশা (রাদি.) বারীরাকে কিনতে চাইলেন। কিন্তু তার মালিকগণ ওলীর (অভিভাবকত্বের অধিকার) শর্ত ব্যতীত বিক্রয় করিতে অসম্মতি জানাল। তিনি বিষয়টি নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে জানালেন। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে কিনে নাও এবং মুক্ত করে দাও। কেননা, ওলীর অধিকারী হল সে, যে আযাদ করে। নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট কিছু গোশ্‌ত আনা হল এবং বলা হল এ গোশ্‌ত বারীরাহকে সদাকাহ করা হয়েছে। তিনি বললেনঃ সেটা তার জন্য সদাকাহ আর আমাদের জন্য হাদিয়া।

আদাম বর্ণনা করেন, শুবাহ আমাদের কাছে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে আরও বলা হয়েছে, স্বামীর সঙ্গে থাকা বা না থাকার ব্যাপারে তাকে এখ্‌তিয়ার দেয়া হয়েছিল।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯২)

৬৮/১৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

“মুশরিকা নারীরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিবাহ করো না। মূলতঃ মুমিন ক্রীতদাসী মুশরিকা নারী হইতে উত্তম ওদেরকে তোমাদের যতই ভাল লাগুক না কেন।” (সুরা আল-বাক্বারা ২/২২১)

৫২৮৫

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যে, ইবনু উমারকে কোন খৃষ্টান বা ইয়াহূদী নারীর বিবাহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর মুশরিক নারীদের বিবাহ হারাম করে দিয়েছেন। আর এর চেয়ে ভয়ানক শির্‌ক কী হইতে পারে যে মহিলা বলে, আমার প্রভু ঈসা (আঃ)। অথচ তিনিও আল্লাহর বান্দাগণের মধ্যে একজন বান্দাহ।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৩)

৬৮/১৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক নারী মুসলমান হলে তার বিবাহ ও ইদ্দাত।

৫২৮৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) মুমিনদের ব্যাপারে মুশরিকরা দুদলে বিভক্ত ছিল। একদল ছিল হারবী মুশরিক, তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেন এবং তারাও তাহাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। অন্যদল ছিল চুক্তিবদ্ধ মুশরিক। তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করিতেন না এবং তারাও তাহাঁর সাথে যুদ্ধ করত না। হারবীদের কোন মহিলা যদি হিজরাত করে (মুসলমানদের) কাছে চলে আসত, তাহলে সে ঋতুবতী হয়ে পুনরায় পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হতো না। পবিত্র হওয়ার পর তার সাথে বিবাহ বৈধ হত। তবে যদি বিয়ের পূর্বেই তার স্বামী হিজরাত করত, তাহলে মহিলাকে তাহাঁর কাছেই ফিরিয়ে দিতে হত। আর যদি তাদের কোন দাস বা দাসী হিজরাত করত, তাহলে তারা আযাদ হয়ে যেত এবং মুহাজিরদের সমান অধিকার লাভ করত। এরপর বর্ণনাকারী (আত্বা) চুক্তিবদ্ধ মুশরিকদের সম্পর্কে মুজাহিদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। যদি চুক্তিবদ্ধ মুশরিকদের কোন দাস বা দাসী হিজরাত করে আসত, তাহলে তাদেরকে পুনরায় পাঠিয়ে দেয়া হতো না। তবে তাদের মূল্য ফিরিয়ে দেয়া হতো।

৫২৮৭

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু উমাইয়্যার কন্যা করীবাহা উমার ইবনু খাত্তাবের সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ ছিল। তিনি তাকে তালাক দিলে মুআবিয়াহ ইবনু আবু সুফ্ইয়ান তাকে বিয়ে করেন। আর আবু সুফ্‌ইয়ানের কন্যা উম্মুল হাকাম ইয়ায ইবনু গানম ফিহরীর সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ ছিল। তিনি তাকে তালাক দিলে আবদুল্লাহ ইবনু উসমান সাকাফী (রাদি.) তাকে বিয়ে করেন।(আঃপ্রঃ- ৪৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৪)

৬৮/২০. অধ্যায়ঃ যিম্মি বা হারবীর কোন মুশরিক বা খৃষ্টান স্ত্রী যদি ইসলাম গ্রহণ করে।

আবদুল ওয়ারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ……….. ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, যদি কোন খৃষ্টান নারী তার স্বামীর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে, তবে উক্ত মহিলা তার জন্য হারাম হয়ে যায়। দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবরাহীম সায়েগ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন, আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করা হল, চুক্তিবদ্ধ কোন হারবীর স্ত্রী যদি ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইদ্দাতের মধ্যেই তার স্বামীও ইসলাম গ্রহণ করে, তবে কি মহিলা তার স্ত্রী থাকবে? তিনি উত্তর দিলেন; না। তবে সে মহিলা যদি নতুন ভাবে বিয়ে ও মোহরে সম্মত হয়। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মহিলার ইদ্দাতের মধ্যে স্বামী মুসলমান হলে সে তাকে বিয়ে করে নিবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “না তারা কাফিরদের জন্য হালাল, আর না কাফিরেরা তাদের জন্য হালাল”- (সুরা মুমতাহিনাহ ৬০/১০)।

অগ্নি উপাসক স্বামী-স্ত্রী মুসলমান হলে ক্বাতাদাহ ও হাসান তাদের সম্বন্ধে বলেন, তাদের পূর্ব বিবাহ বলবৎ থাকবে। আর যদি তাদের কেউ আগে ইসলাম গ্রহণ করে, আর অন্যজন অস্বীকৃতি জানায়, তবে মহিলা তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। স্বামীর জন্য তাকে গ্রহণ করার কোন পথ খোলা থাকবে না। ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করলামঃ মুশরিকদের কোন মহিলা যদি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমানদের নিকট চলে আসে, তাহলে তার স্বামী কি তাত্থেকে বিনিময় গ্রহণ করিতে পারবে? আল্লাহ তাআলা তো বলেছেনঃ “তারা যা ব্যয় করেছে তোমরা তাদেরকে তা দিয়ে দাও।” তিনি উত্তর দিলেনঃ না। এ আদেশ কেবল নাবী (সাঃআঃ) ও জিম্মিদের মধ্যে ছিল। (মুশরিকদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়)। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ এ সব কিছু সে সন্ধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিলা যা নাবী (সাঃআঃ) ও কুরাইশদের মধ্যে হয়েছিল।

৫২৮৮

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ)- এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) বলেন, ঈমানদার নারী যখন হিজরাত করে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে আসত, তখন তিনি আল্লাহর এ নির্দেশঃ- “হে মুমিনগণ! ঈমানদার নারীরা যখন তোমাদের কাছে হিজরাত করে আসে তখন তাদেরকে পরখ করে দেখ” অনুসারে তাদেরকে পরখ করিতেন। (তারা সত্যিই ঈমান এনেছে কি না) ……. (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।” (সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০ : ১০) আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ ঈমানদার নারীদের মধ্যে যারা (আয়াতে উল্লেখিত) শর্তাবলী মেনে নিত, তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হত। তাই যখনই তারা এ সম্পর্কে মুখে স্বীকারোক্তি করত তখনই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে বলিতেন যাও, আমি তোমাদের বাইআত গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! কথার দ্বারা বাইআত গ্রহণ ব্যতীত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর হাত কখনো কোন নারীর হাত স্পর্শ করেনি। আল্লাহর কসম! তিনি কেবল সেসব বিষয়েই বাইআত গ্রহণ করিতেন, যে সব বিষয়ে বাইআত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাইআত গ্রহণ শেষে তিনি বলিতেনঃ আমি কথা দ্বারা তোমাদের বাইআত গ্রহণ করলাম।[২৭১৩; মুসলিম ৩৩/২১, হাদীস ১৮৬৬, আহমাদ ২৬৩৮৬] আঃপ্রঃ- ৪৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৫)

৬৮/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট না যাওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ আছে। যদি তারা উক্ত সময়ের মধ্যে ফিরে আসে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং তারা যদি তালাক দেয়ার সংকল্প করে, তবে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।” (সুরা আল -বাক্বারা ২/২২৬-২২৭)

(আরবি) অর্থ “তারা যদি প্রত্যাবর্তন করে”।

৫২৮৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একবার তাহাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারে ঈলা (কাছে না যাওয়ার শপথ ) করিলেন। সে সময় তাহাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তিনি তাহাঁর কক্ষের মাচায় উনত্রিশ দিন অবস্থান করেন। অতঃপর সেখান থেকে নেমে আসেন। লোকেরা বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ উনত্রিশ দিনেও মাস হয়।(আঃপ্রঃ- ৪৯০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৬)

৫২৯০

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যে, ইবনু উমার (রাদি.) যে ঈলার কথা আল্লাহ উল্লেখ করিয়াছেন সে সম্পর্কে বলিতেন, সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার পরে প্রত্যেকেরই উচিত হয় স্ত্রীকে সততার সাথে গ্রহণ করিবে, না হয় তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিবে, যেমনভাবে আল্লাহ তাআলা আদেশ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৭)

৫২৯১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইসমাঈল আমাকে আরও বলেছেন, মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি এর সূত্রে ইবনু উমার (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, চার মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তালাক দেয়া পর্যন্ত তাকে আটকে রাখা হইবে। আর তালাক না দেয়া পর্যন্ত তালাক প্রযোজ্য হইবেনা। উসমান, আলী, আবুদ দারদা, আয়েশা (রাদি.) এবং আরও বারজন সহাবী থেকেও অনুরূপ উল্লেখ করা হয়।(আঃপ্রঃ- ৪৯০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৭)

৬৮/২২. অধ্যায়ঃ নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তির পরিবার ও তার সম্পদের বিধান।

ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যুদ্ধের ব্যূহ থেকে কোন ব্যক্তি নিরুদ্দেশ হলে তার স্ত্রী এক বছর অপেক্ষা করিবে।

ইবনু মাসউদ (রাদি.) একটি দাসী ক্রয় করে এক বছর পর্যন্ত তার মালিককে খুঁজলেন (মূল্য পরিশোধ করার জন্য)। তিনি তাকে পেলেন না, সে নিখোঁজ হয়ে যায়। তিনি এক দিরহাম, দুদিরহাম করে দান করিতেন এবং বলিতেনঃ হে আল্লাহ! এটা অমুকের পক্ষ থেকে দিচ্ছি। যদি মালিক এসে যায়, তবে এর সওয়াব আমি পাব, আর তার টাকা পরিশোধ করার দায়িত্ব হইবে আমার। তিনি বলেনঃ হারানো বস্তু প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও তোমরা এমন কাজ করিবে। ইবনু আব্বাস (রাদি.)- ও এরূপ মত ব্যক্ত করিয়াছেন। যুহরী সেই বন্দী ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, যার অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে তার স্ত্রী বিয়ে করিতে পারবে না এবং তার সম্পদও বন্টন করা যাবে না। তবে তার সংবাদ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে, তাহাঁর সম্পর্কে নিখোঁজ ব্যক্তির বিধান বলবৎ হইবে।

৫২৯২

মুনবাইস-এর আযাদকৃত গোলাম ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ)- কে হারানো বকরীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ ওটাকে ধরে নাও। কেননা, ওটা হয় তোমার জন্য, না হয় তোমার (অন্য) ভাইয়ের জন্য অথবা নেকড়ের জন্য। তাঁকে হারানো উটের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রেগে গেলেন এবং তাহাঁর উভয় গন্ডদেশ লাল হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ ওটা নিয়ে তোমার চিন্তা কেন? তার সঙ্গে (চলার জন্য) পায়ের তলায় ক্ষুর ও (পানাহারের জন্য) পেটে মশক আছে। সে পানি পান করিতে থাকবে এবং বৃক্ষ-লতা খেতে থাকবে, আর এর মধ্যে মালিক তার সন্ধান লাভ করিবে। তাঁকে লুকাতা (হারানো প্রাপ্তি) সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ প্রাপ্ত বস্তুর থলে ও মাথার বন্ধনটা চিনে নাও এবং এক বছর পর্যন্ত এর ঘোষণা দিতে থাক। যদি এর শনাক্তকারী (মালিক) আসে, তবে ভালো কথা, নচেৎ এটাকে তোমার মালের সাথে মিলিয়ে নাও। সুফ্‌ইয়ান বলেনঃ আমি রাবীআ ইবনু আবু আবদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে উল্লিখিত কথাগুলো ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আমি বললামঃ হারানো প্রাণীর ব্যাপারে মুনবাইস এর আযাদকৃত গোলাম ইয়াযীদের হাদীসটি কি যায়দ ইবনু খালিদ হইতে বর্ণিত? তিনি বলিলেন, হাঁ। ইয়াহইয়া বলেন, রাবীআ বলিতেনঃ হাদীসটি মুনবাইস-এর আযাদকৃত গোলাম ইয়াযীদ-এর মাধ্যমে যায়দ ইবনু খালিদ হইতে বর্ণনাকৃত। সুফ্‌ইয়ান বললেনঃ আমি রাবীআর সঙ্গে দেখা করে এ সম্পর্কে আলোচনা করলাম।(আঃপ্রঃ- ৪৯০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৮)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply