তালাকের নিয়্যাত না করে স্ত্রীকে হারাম সাব্যস্ত করলে তার উপর কাফ্ফারাহ্ ওয়াজিব হইবে
তালাকের নিয়্যাত না করে স্ত্রীকে হারাম সাব্যস্ত করলে তার উপর কাফ্ফারাহ্ ওয়াজিব হইবে >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৩. অধ্যায়ঃ তালাকের নিয়্যাত না করে স্ত্রীকে হারাম সাব্যস্ত করলে তার উপর কাফ্ফারাহ্ ওয়াজিব হইবে
৩৫৬৮. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি আব্বাস [রাদি.] থেকে [লিখিতরূপে] বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি [সাঈদ] বলেছেন যে, ইবনি আব্বাস [রাদি.] স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম করা সম্বন্ধে বলিতেন যে, তা কসম [ইয়ামীন] সাব্যস্ত হইবে, তার কাফ্ফারাহ্ আদায় করিবে।
ইবনি আব্বাস [রাদি.] [এ প্রসঙ্গে] আরো বলেছেন, [পবিত্র কুরআনের] [আরবী] [আয়াত উদ্ধৃত করে]
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
“তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। “ [সূরাহ্ আল আহ্যাব ৩৩:২১]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩৯]
৩৫৬৯. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম [ঘোষণা] করলে তা কসম সাব্যস্ত হইবে, তার কাফ্ফারাহ্ আদায় করিবে। তিনি আরো বলেছেন, তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪০]
৩৫৭০. উবায়দ ইবনি উমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আয়িশা [রাদি.]-কে এ মর্মে হাদীসের খবর প্রদান করিতে শুনেছেন যে, নবী [সাঃআঃ] [আসর পরবর্তী সময় হুজরা সমূহে আবর্তন কালে] যায়নাব বিনত জাহশ [রাদি.] -এর গৃহে অবস্হান করে সেখানে মধূ পান করেন। আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, আমি ও হাফ্সাহ্ মিলে এরূপ যুক্তি-পরামর্শ করলাম যে, আমাদের দুজনের মাঝে যার কাছেই নবী [সাঃআঃ] [প্রথমে] আগমন করবেন সে বলবে- “আমি আপনার মুখে মাগাফীর-এর দুর্গন্ধ পাচ্ছি।{৬০} আপনি মাগাফীর খেয়েছেন।” পরে তিনি এদের কোন একজনের কাছে গেলে সে তাঁকে অনুরূপ বলিল। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন,… বরং আমি তো যায়নাব বিনত জাহ্শ-এর ঘরে মধু পান করেছি এবং পুনরায় কখনো পান করব না। তখন নাযিল হল- [অর্থ] “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা বৈধ করিয়াছেন, আপনি তা হারাম করছেন কেন? আপনি আপনার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনা করছেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের শপথ হইতে মুক্তি লাভের ব্যবস্হা করিয়াছেন। আল্লাহ তোমাদের সহায়; তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। স্মরণ কর-নবী তাহাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন নবী এ বিষয় কিছু ব্যক্ত করিলেন; কিছু অব্যক্ত রাখলেন। যখন নবী [সাঃআঃ] তা তার সে স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলিল, কে আপনাকে তা অবহিত করিল? নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমাকে অবহিত করিয়াছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত। যদি তোমরা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেহেতু তোমাদের হৃদয় ঝুঁকে পড়েছে- আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন”- [সূরাহ্ আত্ তাহ্রীমঃ ৬৬ : ১-৪]। এতে “যদি তোমরা উভয়ে তাওবাহ্ কর [অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর] দ্বারা আয়িশাহ্ ও হাফ্সাহ্ [রাদি.] উদ্দেশ্য। এবং “যখন নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীদের একজনকে তিনি গোপনে কিছু বলেছিলেন”- দ্বারা বরং আমি মধুপান করেছি এবং আর কখনো পান করবো না উদ্দেশ্য”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪১]
{৬০} মাগাফীর হল এক প্রকার গাছ যা খুবই দুর্গন্ধযুক্ত।
৩৫৭১. হিশামের পিতা [উরওয়াহ্] সূত্রে আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিষ্ট দ্রব্য [হালুয়া] ও মধু পছন্দ করিতেন। তাহাঁর নিয়ম ছিল- আসরের নামাজ আদায়ের পরে স্ত্রীদের ঘরে ঘরে এক চক্কর গিয়ে আসতেন এবং তাদের সান্নিধ্য-সন্নিকটে গমন করিতেন। এভাবে তিনি হাফ্সাহ্ [রাদি.]-এর কাছে গেলেন এবং তাহাঁর কাছে স্বাভাবিক-ভাবে আবদ্ধ থাকার সময়ের চেয়ে অধিক সময় আবদ্ধ রইলেন। আমি [আয়িশাহ্] এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হল- তাকে [হাফসাকে] তাহাঁর গোত্রের কোন মহিলা এক পাত্র মধু হাদিয়া দিয়েছিল। তাই সে তা থেকে কিছু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পান করিয়েছিল। [আয়িশাহ্ বলেন] আমি বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাহাঁর জন্য কৌশলের ফাঁদ পাতব। আমি বিষয়টি সাওদাহ্-এর সঙ্গে আলোচনা করলাম এবং তাঁকে বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমার কাছে আগমন করলে তিনি তো তোমার সন্নিকটে আসবেন, তখন তুমি তাঁকে বলবে, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন। তখন তিনি তো তোমাকে বলবেন- না। তখন তুমি তাঁকে বলবে, [তবে] এ দুর্গন্ধ কিসের?- আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে- এটা ছিল তাহাঁর কাছে অতি অসহনীয় বিষয়। তখন তিনি তোমাকে বলবেন- হাফসাহ্ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। তুমি তখন তাঁকে বলবে, ঐ মধুর মৌমাছি- উরফুত [গাছের কষ] চুষেছে।” আর আমিও তাঁকে এভাবেই বলব। আর তুমিও হে সাফিয়্যাহ্! তাই বলবে। পরে যখন নবী [সাঃআঃ] সাওদাহ্ [রাদি.]-এর কাছে গেলেন- আয়িশা [রাদি.] বলেন, সাওদাহ্ [রাদি.]-এর বর্ণনা- “কসম সে সত্তার যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই! তুমি আমাকে যা কিছু বলেছিলে তা তাহাঁর কাছে প্রকাশ করেই দিচ্ছিলাম প্রায়- তিনি [সাঃআঃ] তখন দরজায়- তোমার ভয়ে [তা আর করা হল না]। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর নিকটবর্তী হলে সে বলিল, “হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি বলিলেন, না। সে [সাওদাহ্] বলিল, “তবে এ ঘ্রাণ কিসের? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হাফ্সাহ্ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। সাওদাহ্ বলিল, [তবে-তাই] তার মৌমাছি উরফুত বা মাগাফিরের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেছে।” পরে নবী [সাঃআঃ] আমার নিকট আগমন করলে আমিও তাঁকে অনুরুপ বললাম। অতঃপর সাফিয়্যাহ্ [রাদি.]-এর কাছে গেলে সেও অনুরুপ বলিল। পরে [আবার] নবী [সাঃআঃ] হাফ্সাহ্-এর নিকট গেলে সে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি আপনাকে তা পান করিতে দিব না? নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, “তার প্রতি আমার কোন চাহিদা নেই।”
আয়িশা [রাদি.] বলেন, সাওদাহ্ [রাদি.] বলিতে লাগল, আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে [একটি প্রিয় পানীয় হইতে] বঞ্চিত করে দিয়েছি। আয়িশা [রাদি.] বলেন, চুপ থাক।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪২]
৩৫৭২. আবু উসামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমাকে অবিকল এ হাদীস শুনিয়েছেন। সূওয়ায়দ ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আলী ইবনি মিস্হার ও হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে ঐ সানাদে অনুরুপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৩]
Leave a Reply