তালাকের নিয়ম । রাগান্বিত ও হাসি ঠাট্টাছলে তালাক দিলে

তালাকের নিয়ম । রাগান্বিত ও হাসি ঠাট্টাছলে তালাক দিলে

তালাকের নিয়ম । রাগান্বিত ও হাসি ঠাট্টাছলে তালাক দিলে এই অধ্যায়ে মোট হাদীস ১৩৮ টি (২১৭৫ – ২৩১২) >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১৩, অনুচ্ছেদঃ ১-২২=২২টি

অনুচ্ছেদ-১ – যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে
অনুচ্ছেদ-২ – কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা
অনুচ্ছেদ-৩ঃ তালাক ঘৃণিত
অনুচ্ছেদ-৪ঃ নির্ধারিত নিয়মে তালাক প্রদান
অনুচ্ছেদ-৫ঃ যে ব্যক্তি স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনলো অথচ এর সাক্ষী রাখলো না
অনুচ্ছেদ-৬ঃ ক্রীতদাসের সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদান
অনুচ্ছেদ-৭ঃ বিয়ের আগে তালাক প্রদান
অনুচ্ছেদ-৮ঃ রাগান্বিত অবস্থায় তালাক দেয়া
অনুচ্ছেদ-৯ঃ হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে তালাক প্রদান
অনুচ্ছেদ-১০ঃ তিন তালাকের পর স্ত্রীকে পুনঃগ্রহণ প্রসঙ্গ
অনুচ্ছেদ-১১ঃ যে শব্দ দ্বারা তালাক হইতে পারে তা এবং নিয়্যাত
অনুচ্ছেদ-১২ঃ তালাক প্রয়োগের ব্যাপারে স্ত্রীকে এখতিয়ার প্রদান
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ [স্ত্রীকে এরূপ বলা] তোমার ব্যাপার তোমার হাতে
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ ছিন্নকারী তালাক
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ অন্তরে তালাকের কথা জাগা
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীকে বলে, হে আমার বোন
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ যিহার
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ খোলার বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ স্বাধীন কিংবা গোলামের দাসী স্ত্রী আযাদ হলে
অনুচ্ছেদ-২০ঃ যিনি বলিয়াছেন, সে [মুগীস] আযাদ ছিলো
অনুচ্ছেদ-২১ঃ স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদ ঘটানোর সময়সীমা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২২ঃ বিবাহিত দাস-দাসী একই সাথে আযাদ হলে স্ত্রীর এখতিয়ার থাকিবে কিনা?

অনুচ্ছেদ-১ – যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে

২১৭৫.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২ – কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা

২১৭৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ কোন নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩ঃ তালাক ঘৃণিত

২১৭৭. মুহারিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ আল্লাহর নিকট হালাল বিষয়ের মধ্যে তালাকের চেয়ে অধিক ঘৃণিত কিছু নেই। {২১৭৭}

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল হচ্ছে তালাক। {২১৭৮}

দুর্বলঃ যয়ীফ সুনান ইবনি মাজাহ [৪৪১/২০১৮], ইরওয়া [২০৪০], মিশকাত [৩২৮০]। {২১৭৮} ইবনি মাজাহ, হাকিম। হাদিসের সনদ মুযতারিব। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪ঃ নির্ধারিত নিয়মে তালাক প্রদান

২১৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যুগে তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিলেন। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ তাহাকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলো এবং তুহর পর্যন্ত রেখে দিতে বলো। এরপর আবার হায়িয ও তার থেকে আবার পাক হওয়ার পর ইচ্ছা করলে সে তাহাকে রেখে দিবে অন্যথায় সহবাসের আগেই তালাক দিবে। মহান আল্লাহ এভাবে ইদ্দাত পালনের সুযোগ রেখে স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৮০. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমার [রাদি.] তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় এক তালাক দেন। অতঃপর ঈমাম মালিক বর্ণিত হাদিসের অর্থানুযায়ী বর্ণিত।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৮১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিলেন। উমার [রাদি.] এ বিষয়ে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে অবহিত করলে তিনি বলিলেনঃ তাহাকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলো, পরে হায়িয থেকে পবিত্র হলে অথবা সে গর্ভবতী হলে তাহাকে তালাক দিবে।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৮২. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দেয়ায় উমার [রাদি.] বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে অবহিত করালেন। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রাগান্বিত হয়ে বলিলেনঃ তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলো। সে যেন তাহাকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দেয়। অতঃপর আবার ঋতুবতী হয়ে পুনরায় পবিত্র হওয়ার পর ইচ্ছে হলে সঙ্গমের আগেই তাহাকে তালাক দিতে পারবে। মহান আল্লাহ এভাবে ইদ্দাত পালনের সুযোগ রেখে স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৮৩. ইউনুস ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি আপনার স্ত্রীকে কত তালাক দিয়েছিলেন? তিনি বলিলেন, এক তালাক।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৮৪. ইউনুস ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিয়েছে, তার হুকুম কি? তিনি বলিলেন, তুমি কি ইবনি উমার [রাদি.]-কে চিনো? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিয়েছিলো। ফলে উমার [রাদি.] নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিলেন। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ তাহাকে বলো, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে। তারপর ইদ্দতাকালের পূর্বেই যেন তাহাকে তালাক দেয়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস ক্রলাম, ঐ তালাকটি কি গ্ণ্য হইবে? তিনি বলিলেন, কেন নয়? তোমার ধারণা, যদি সে এরূপ করিতে অপারগ হয় তবে সে আহাম্মকের মত কাজ করলো।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৮৫. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মুক্তদাস আবদুর রহমান ইবনি আইমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আর আবুয যুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তা শুনলেন, কেউ তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিলে তার হুকুম কি? তিনি বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। ফলে উমার [রাদি.] এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবদুল্লাহ ইবনি উমার তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, তিনি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলিয়াছেন এবং এটাকে দোষণীয় বলেননি। তিনি বলিয়াছেনঃ যখন সে ঋতু থেকে পবিত্র হইবে তখন ইচ্ছে হলে তালাক দিবে অথবা রাখবে। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, অতঃপর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ “হে নাবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিবে, তখন তাহাদের ইদ্দাত আসার পূর্বে তালাক দিবে।”

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদিসটি ইউনুস ইবনি জুবাইর, আনাস ইবনি সীরীন, সাঈদ ইবনি জুবাইর, যয়িদ ইবনি আসলাম, আবুয যুবাইর এবং মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু ওয়ায়িলের সূত্রে ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেছেন। তাহাদের সকলের হাদিসের অর্থ হলোঃ নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আদেশ দিয়েছেন, সে তার স্ত্রীকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দিবে। মুহাম্মাদ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সালিম সূত্রে ইবনি উমার [রাদি.] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর সালিম হইতে তিনি নাফি হইতে ইবনি উমার [রাদি.] সূত্রে ঈমাম যুহরীর বর্ণনা হলো, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবদুল্লাহকে নির্দেশ দিলেন, তুমি তাহাকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দাও, এরপর পুনরায় ঋতুবতী হয়ে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দাও, অতঃপর ইচ্ছে হলে তালাক দিবে অথবা রেখে দিবে। আর আত্বা আল-খোরসানী হইতে হাসান বাসরীর মাধ্যমে ইবনি উমার [রাদি.] সূত্রে নাফি ও যুহরীর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উল্লেখিত সব হাদিস আবুয যুবাইরের বর্ণনার বিপরীত। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫ঃ যে ব্যক্তি স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনলো অথচ এর সাক্ষী রাখলো না

২১৮৬. মুতাররিফ ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, এ ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এক তালাক দেয়ার পর পুনরায় তার সাথে সহবাস করেছে, অথচ তার তালাক প্রদান ও পরে ফিরিয়ে আনার সময় কাউকে সাক্ষী রাখেনি। তিনি বলিলেন, তুমি সুন্নাতের পরিপন্থী তালাক দিয়েছো এবং সুন্নাত বিরোধী নিয়মে তাহাকে ফিরিয়ে এনেছো। ভবিষ্যতে তালাক প্রদান ও ফিরিয়ে আনার সময় সাক্ষী রাখবে। পুনরায় এরূপ করিবে না।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬ঃ ক্রীতদাসের সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদান

২১৮৭. বনী নাওফালের মুক্তদাস আবু হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট জনৈক ক্রীতদাস সম্পর্কে ফাতাওয়াহ চাইলেন, তার একজন দাসী স্ত্রী ছিলো যাকে সে দুই তালাক দেয়। পরে তারা উভয়ে দাসত্বমুক্ত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঐ মহিলাকে পুনরায় বিয়ের পয়গাম দেয়া তার জন্য ঠিক হইবে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ পারবে। কেননা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এরূপ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। {২১৮৭}

দুর্বলঃ যয়ীফ সুনান ইবনি মাজাহ [৪৫৩], যয়ীফ সুনান নাসায়ী [২২৫/৩৪২৮] {২১৮৭} নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ। সনদের উমার বিন মুআত্তাব সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ যয়ীফ। ঈমাম যাহাবী ও অন্যরা বলেনঃ তাহাকে চেনা যায়নি। ঈমাম আহমাদ ও আবু হাতিম বলেনঃ আমি তাহাকে চিনি না। ইবনিল মাদীনী বলেনঃ মুনকারুল হাদিস। ঈমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮৮. আলী ইবনিল মুবারক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের সনদ ও অর্থে হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিয়াছেন, তোমার জন্য আর একটি তালাক অবশিষ্ট আছে এবং রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এরূপই ফায়সালা দিয়েছেন। {২১৮৮}

{২১৮৮} এর সনদ যয়ীফ। এর পূর্বেরটি দেখুন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ দাসীর তালাক দুটি এবং তার ইদ্দাতকাল হচ্ছে দুই হায়িয। আবু আসিম বলেন, মুযাহির আমাকে ক্বাসিমের মাধ্যমে আয়িশাহ [রাদি.] হইতে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলিয়াছেনঃ দাসীর ইদ্দাত হচ্ছে দুই হায়িয। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদিসটি অজ্ঞাত [মাজহুল]। {২১৮৯}

{২১৮৯} তিরমিজি, ইবনি মাজাহ, দারিমী, হাকিম। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ আয়িশার হাদিসটি গরীব। হাকিম বলেনঃ সহিহ। যাহাবী তাহাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু সানাদে মুযাহির যয়ীফ। হাফিয ইবনি হাজার তাহাকে আত তাক্বরীব গ্রন্থে যয়ীফ বলিয়াছেন। ঈমাম আবু দাউদ বলেনঃ হাদিসটি মাজহুল। ইরওয়াউল গালীল হা/২০৬৬, তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭ঃ বিয়ের আগে তালাক প্রদান

২১৯০. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ যে মহিলার উপর অধিকার নেই তাহাকে তালাক দেয়া যায় না, যে গোলামের উপর মালিকানা নেই তাহাকে আযাদ করা যায় না। তোমার মালিকানাধীন বস্তুই কেবল বিক্রয়যোগ্য। ইবনিস সাববাহ আরো বলেন, যে বস্তুর উপর তোমার মালিকানা নেই তার মান্নাত পূরণ করিতে হইবে না।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২১৯১. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ অর্থে বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের জন্য শপথ করে তার শপথ হয়নি এবং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শপথ করে তার শপথও হয়নি [এরূপ শপথ পূরণ করিতে হইবে না]।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২১৯২. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। এতে আরো রয়েছেঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে মান্নত করা হয় কেবল তাই পূরণ করিতে হয়।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৮ঃ রাগান্বিত অবস্থায় তালাক দেয়া

২১৯৩. ইলিয়ার অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনি উবাইদ ইবনি আবু সালিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আদী ইবনি আদী আল-কিনদীর সাথে সিরিয়া থেকে রওয়ানা হয়ে মক্কায় গেলাম। তিনি আমাকে সাফিয়্যাহ বিনতু শাইবার কাছে পাঠালেন। কেননা সাফিয়্যাহ আয়িশাহ [রাদি.] থেকে হাদিস সংরক্ষন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ রাগের অবস্থায় কোন তালাক হয় না এবং দাসত্বমুক্ত করা যায় না।

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমার মতে আল-গিলাক্ব অর্থ রাগ। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৯ঃ হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে তালাক প্রদান

২১৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ তিনটি কাজ এমন যা বাস্তবে বা ঠাট্টাচ্ছলে করলেও তা বাস্তবিকই ধর্তব্য। তা হলোঃ বিবাহ, তালাক ও স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১০ঃ তিন তালাকের পর স্ত্রীকে পুনঃগ্রহণ প্রসঙ্গ

২১৯৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহর বাণীঃ “তালাকপ্রাপ্তা নারী যেন তিন কুরুপর্যন্ত নিজেদেরকে বিরত রাখে এবং আল্লাহ তাহাদের গর্ভে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা বৈধ নয়…” এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গ হলো, [ইসলামের প্রথম যুগে] কেউ স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাহাকে পুররায় ফিরিয়ে আনার অধিকারী হতো, এমনকি তাহাকে তিন তালাক দিতো। অতঃপর এ বিধান রহিত করে আল্লাহ বলিয়াছেনঃ “তালাক দুই বার…”।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

২১৯৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রুকানার পিতা আবদু ইয়াযীদ ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠী উম্মু রুকানাকে তালাক দেন এবং মুযাইনাহ গোত্রের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। একদা ঐ মহিলা নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে এসে বললো, তার স্বামী সহবাসে অক্ষম। যেমন আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। সুতরাং আপনি আমার ও তার মাঝে বিচ্ছেদ করিয়ে দিন। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এতে অসন্তুষ্ট হন এবং রুকানা ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠীকে ডেকে আনেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত লোকজনকে বলেনঃ তোমরা কি লক্ষ্য করেছো যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের অঙ্গের সাথে মিল রয়েছে? তারা বললো, হ্যাঁ। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবদু ইয়াযীদকে বলেনঃ তুমি তাহাকে তালাক দাও। সুতরাং তিনি তাহাকে তালাক দিলেন। তিনি বলেনঃ তুমি রুকানার মা ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠীকে পুনরায় গ্রহণ করো। তিনি বলেন, আমি তো তাহাকে তিন তালাক দিয়েছি, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি বলেনঃ আমি তা জানি, তুমি তাহাকে গ্রহণ করো। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ “হে নাবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিবে তখন তাহাদের ইদ্দাতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিবে” [সূরাহ আত্-তালাকঃ ১]

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, নাফি ইবনি উজাইর ও আবদুল্লাহ ইবনি আলী ইবনি ইয়াযীদ ইবনি রুকানা হইতে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দিলে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে পুনরায় ঐ স্ত্রীকে গ্রহণ করিতে আদেশ দেন। এটা অধিকতর সঠিক। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২১৯৭ মুজাহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাসের [রাদি.] কাছে অবস্থান করছিলাম এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো যে, সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ কথা শুনে চুপ রইলেন। তখন আমার মনে হলো, সম্ভবত তিনি মহিলাটিকে পুনরায় গ্রহণের নির্দেশ দিবেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ আহমকের মতো কাজ করে এবং এসে বলে, হে ইবনি আব্বাস! হে ইবনি আব্বাস! অথচ আল্লাহ বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য একটা সমাধানের পথ দেখিয়ে দিবেন” [সূরাহ আত-তালাকঃ ২]। আর তুমি তো [তালাকের বিষয়ে] আল্লাহকে ভয় করোনি। সুতরাং আমি তোমার জন্য কোন পথ দেখছি না। তুমি তোমার প্রতিপালকের নাফরমানী করেছো এবং স্ত্রীকেও হারিয়েছো। মহান আল্লাহ তো বলিয়াছেনঃ “হে নাবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিবে তখন তাহাদের ইদ্দাতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিবে।”

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদিসটি হুমাইদ, আরাজ ও অন্যরা মুজাহিদ হইতে ইবনি আব্বাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও শুবাহ, আইয়ূব, ইবনি জুরাইজ আমাশ প্রমূখ বর্ণনাকারীগণ সকলেই ইবনি আব্বাস সূত্রে হাদিস বর্ণনা করে বলিয়াছেন যে, ইবনি আব্বাস [রাদি.] একে তিন তালাক হিসেবে গণ্য করেছেন। তাই তিনি বলিয়াছেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে হারালে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাম্মাদ ইবনি যায়িদ আইয়ুব হইতে ইকরিমার মাধ্যমে ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূত্রে বর্ণানা করেছেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে একত্রে তিন তালাক দেয়, তা এক তালাক গণ্য হইবে”। ইসমাঈল ইবনি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আইউব হইতে ইকরিমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে বর্ণানা করেন, উক্ত কথাটি ইবনি আব্বাসের নয়, বরং ইকরিমার কথা। তিনি ইবনি আব্বাসের [রাদি.] উল্লেখ করেননি এবং একে ইকরিমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অভিমত গণ্য করেছেন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৯৮. মুহাম্মদ ইবনি ইয়্যাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একদা ইবনি আব্বাস, আবু হুরায়রা এবং আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.]-কে এক যুবতী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বলিলেন, “ঐ স্ত্রী তার জন্য হালাল হইবে না যতক্ষন না তাহাকে অন্য স্বামীর সাথে বিয়ে না দেওয়া হয়।” ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদের মাধ্যমে মুআবিয়াহ ইবনি আবু আইয়াশ হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি ঐ ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যখন মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াস ইবনিল বুকাইর এসে ইবনি যুবাইর ও আসিম ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেছেন। তারা বলিয়াছেন, তুমি ইবনি আব্বাস ও আবু হুরায়রার নিকট যাও। আমি তাহাদের উভয়কে আয়িশাহ [রাদি.]-এর নিকট রেখে এসেছি। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো হাদিস বর্ণনা করেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি আব্বাসের [রাদি.] বক্তব্য হলো, স্ত্রীর সাথে সহবাস হোক বা না হোক, তিন তালাকে সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অন্য স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে তার জন্য বৈধ হইবে না। এ হাদিস সারফ সম্পর্কিত হাদিসের মতই। উক্ত হাদিসে বর্ণনাকারী বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] তার মত পরিহার করেছেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৯৯. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আবুস সাহবা নামে জনৈক ব্যক্তি, যিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে প্রায়ই প্রশ্ন করিতেন। একদা তিনি তাহাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কি জানেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবু বকর ও উমার [রাদি.]-এর খিলাফাতের প্রথমদিকে কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই তিন তালাক দিতো তাহলে তা এক তালাক গণ্য হতো? ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যুগে, আবু বকর [রাদি.] এর পুরো খিলাফাতকালে এবং উমার [রাদি.]-র খিলাফতের প্রথম দিকে কোন ব্যক্তি সহবাসের আগে স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তারা তা এক তালাক গণ্য করিতেন। পরবর্তীতে যখন উমার [রাদি.] দেখলেন যে, লোকেরা অধিকহারে একত্রে তিন তালাক দিচ্ছে, তখন তিনি বলিলেন, তাহাদের উপর তিন তালাক প্রয়োগ করো। {২১৯৯}

{২১৯৯} বায়হাক্বী। সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি রয়েছে। এছাড়া সনদের আবু সাহ্বাকে কেউ সিক্বাহ বলিয়াছেন এবং কেউ বলিয়াছেন যয়ীফ। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২০০. আবুস সাহ্বা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা আবুস সাহ্বা [রাদি.] ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিলেন, আপনি কি জানেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর যুগে এবং আবু বকর [রাদি.] এর যুগে একত্রে তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হতো এবং উমার [রাদি.] এর যুগে তিন তালাক গণ্য করা হতো? ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১১ঃ যে শব্দ দ্বারা তালাক হইতে পারে তা এবং নিয়্যাত

২২০১. আলক্বামাহ ইবনি ওয়াককাস আল-লাইসী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ সকল কাজ নিয়্যাত অনুযায়ী হয়। কোন ব্যক্তি যা নিয়্যাত করে সেটা তাই হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরাত করলো, তার হিজরাত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের জন্যই হলো এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে অথবা কোন নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরাত করলো, তার হিজরাত সেই উদ্দেশ্যেই হইবে যা সে নিয়্যাত করেছে।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২০২. আবদুর রহমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

কাব ইবনি মালিক [রাদি.] যখন অন্ধ হয়ে যান, তখন তাহাঁর সন্তানদের মধ্য হইতে আবদুল্লাহ ইবনি কাব ছিলেন তার পথ প্রদর্শক। তিনি বর্ণনা করেন, আমি কাব ইবনি মালিক [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি। এরপর তাবুক অভিযানের পূর্ব ঘটনা বর্ণনা করেন। কাব বলেন, যখন পঞ্চাশ দিন থেকে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ্‌র [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দূত আমার কাছে এসে বললো, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আপনাকে আপনার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকতে বলিয়াছেন। তিনি বলেন, তবে কি আমি তাহাকে তালাক দিবো, না কি রাখবো? সে বললো, না, বরং বিচ্ছিন্ন রাখুন এবং সহবাস মেলামেশা করবেন না। আমি আমার স্ত্রীকে বলিলাম, তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও এবং তাহাদের সাথে অবস্থান করো যতক্ষন না মহান আল্লাহ আমার এ বিষয়ে কোন ফায়সালা দেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২ঃ তালাক প্রয়োগের ব্যাপারে স্ত্রীকে এখতিয়ার প্রদান

২২০৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদেরকে এখতিয়ার দিয়েছিলেন। আমরা তাঁকেই এখতিয়ার করে গ্রহণ করলাম। তবে একে তালাক বা অন্য কিছু গণ্য করা হয়নি।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩ঃ [স্ত্রীকে এরূপ বলা] তোমার ব্যাপার তোমার হাতে

২২০৪.হাম্মাদ ইবনি যায়িদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আইয়ুব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি এমন কাউকে জানেন যিনি হাসান বাসরীর মতো বলেন, তোমার ব্যাপার তোমার হাতে? তিনি বলিলেন, না। তবে ক্বাতাদাহ…আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সূত্রে অনুরূপ বলিয়াছেন। {২২০৪}

দুর্বলঃ যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [২০৫/১১৯৪], যয়ীফ সুনান নাসায়ী [২২২/৩৪১০] {২২০৪} তিরমিজি, নাসায়ী। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ এই হাদিসটি গরীব। ঈমাম নাসায়ী বলেনঃ এই হাদিসটি মুনকার। আল্লামা মুনযিরী ও ইবনিল কাইয়্যিম একে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২০৫. ক্বাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি হাসান বাসরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলিয়াছেন, “তোমার ব্যাপার তোমার হাতে” বললে তিন তালাক বর্তাবে।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

অনুচ্ছেদ-১৪ঃ ছিন্নকারী তালাক

২২০৬. নাফি ইবনি উজাইর ইবনি আবদে ইয়াযীদ ইবনি রুকানা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

রুকানা ইবনি আবদে ইয়াযীদ তার স্ত্রী সুহাইমাকে আলবাত্তাতা শব্দের দ্বারা তালাক দিলেন। অতঃপর তিনি বিষয়টি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জানালেন এবং বলিলেন, আমি এর দ্বারা এক তালাকের ইচ্ছা করেছি। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! তুমি কি এক তালাকের ইচ্ছা করেছিলে? রুকানা বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি কেবল এক তালাকেরই নিয়াত করেছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার স্ত্রীকে তার কাছে ফেরত দিলেন। পরে তিনি তাহাকে উমার [রাদি.]-এর যুগে দ্বিতীয় এবং উসমান [রাদি.]-এর যুগে তৃতীয় তালাক দিয়েছেন। {২২০৬}

দুর্বলঃ মিশকাত [৩২৮৩], যয়ীফ সুনান ইবনি মাজাহ [৪৪৪/২০৫১], ইরওয়া [২০৬৩], যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [২০৪/১১৯৩]। {২২০৬} দারাকুতনী, তায়ালিসি। ঈমাম বুখারী এটিকে মুযতারিব দোষে দোষী করেছেন। ইবনি আবদুল বার বলেনঃ একে হাদিসবিশারাদগণ যয়ীফ বলিয়াছেন। ইবনিল কাইয়্যিম বলেনঃ সানাদে নাফি ইবনি উজাইর মাজহুল। তার অবস্থা জানা যায়নি। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২০৭.নাফি ইবনি উজাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

রুকানা ইবনি আবদু ইয়াযীদের মাধ্যমে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সূত্রে উক্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। {২২০৭}

{২২০৭} এর পূর্বেরটি দেখুন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২০৮. আবদুল্লাহ ইবনি আলী ইবনি ইয়াযীদ রুকানা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা ও তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

তার দাদা নিজ স্ত্রীকে আলবাত্তা শব্দের দ্বারা তালাক দিয়েছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিকট আসলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কী ইচ্ছা করেছিলে? তিনি বলিলেন, এক তালাকের। তিনি বলিলেনঃ আল্লাহ শপথ? তিনিও বলিলেন, আল্লাহর শপথ। অতঃপর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ তুমি যা নিয়্যাত করেছো তাই। {২২০৮}

দুর্বলঃ ইরওয়া [২০৬৩]। {২২০৮} তিরমিজি, ইবনি মাজাহ, ইবনি হিব্বান, দারাকুতনী, বায়হাক্বী, তায়ালিসি। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ আমি এ হাদিস সম্পর্কে ঈমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলিয়াছেনঃ এতে ইযতিরাব হয়েছে। হাদিসটি দুর্বল। এর কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। প্রথম ত্রুটিঃ সনদের যুবাইর ইবনি সাঈদ। তার সম্পর্কে হাফিয ইবনি হাজার আসকালানী বলেনঃ আজালী বলিয়াছেন, তিনি ত্বালাক সম্পর্কে মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ এই হাদিসটি”। হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ তিনি হাদিস বর্ণনায় শিথিল [লাইয়্যিন]। দ্বিতীয় ত্রুটি ঃ সানাদে আবদুল্লাহ বিন ইয়াযীদকে উকাইলী যুআফা গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেনঃ তার হাদিসের অনুসরন [মুতাবাআত] করা হয় না। তিনি সনদ মুযতারিব করেন। তৃতীয় ত্রুটি ঃ সনদের আলী ইবনি ইয়াযীদ এর জাহালাত।তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৫ঃ অন্তরে তালাকের কথা জাগা

২২০৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মাতের মনে যা উদয় হয় তা যতক্ষণ না সে মুখে বলে অথবা কার্যে পরিণত করে ততক্ষণ তা উপেক্ষা করেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৬ঃ কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীকে বলে, হে আমার বোন

২২১০. আবু তামীমাহ আল-হুজাইমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বললো, হে আমার বোন? রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ সে কি তোমার বোন? তিনি তার এরূপ সম্বোধনকে অপছন্দ করিলেন এবং এরূপ করিতে নিষেধ করিলেন। {২২০৮}

{২২১০} বায়হাক্বী। এর সনদ মুযতারিব। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২১১. আবু তামীমাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তি হইতে বর্ণনা করেন, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি এক ব্যক্তিকে তার স্ত্রীকে হে আমার আদুরে বোন বলিতে শুনে তাহাকে এরূপ সম্বোধন করিতে নিষেধ করেছেন। {২২১১}

{২২১১} বায়হাক্বী। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২১২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণনা করেন, ইবরাহীম [আঃ] কখনো মিথ্যা বলেননি, তিনবার মিথ্যা বলেছিলেন [যা মূলত মিথ্যা নয়]। তন্মধ্যে দুটি আল্লাহর সত্ত্বা সম্পর্কে। যেমন তাহাঁর কথাঃ “নিশ্চয় আমি অসুস্থ” [সূরাহ আস-সাফফাতঃ ৮৯] এবং তাহাঁর কথা, “বরং এদের এই বড় [মূর্তিটাই], এ কাজ করেছে” [সূরাহ আল-আম্বিয়াঃ ৬৩]। [আর তৃতীয়টি হচ্ছে ব্যক্তিগত] তা হলোঃ ইবরাহীম [আঃ] স্ত্রী সারাহকে নিয়ে এক অত্যাচারী শাসকের এলাকা সফর করছিলেন। তিনি এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে এক দূত ঐ অত্যাচারী শাসকের কাছে এসে বললো, এ স্থানে এক ব্যক্তি সাথে এক সুন্দরী নিয়ে আগমন করেছে। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ যখন ঐ [শাসক] ইবরাহীম [আঃ]-এর কাছে জানতে চেয়ে লোক পাঠালো যে, তার সাথের মহিলাটি কে? তিনি বলিলেন, আমার বোন। যখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন তখন তাঁকে বলিলেন, ঐ ব্যক্তি আমার কাছে তোমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি তাহাকে বলেছি, তুমি আমার বোন। বিষয় তাই, কেননা এ স্থানে আমি আর তুমি ছাড়া কোন মুসলিম নেই। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী [মুসলিমগণ পরস্পর ভাইবোন বিধায়] তুমি আমার দ্বীনি বোন। সুতরাং তার কাছে আমার কথাকে মিথ্যা বলো না। এরপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৭ঃ যিহার

২২১৩,সালামাহ ইবনি সাখর আল-বায়দী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নারীদের প্রতি এতো অধিক আসক্ত প্রবণ ব্যক্তি অন্য কেউ এরূপ আসক্ত নয়। যখন রমাযান মাস সমাগত হলো তখন আমার ভয় হলো যে, হয়তো আমি ভোর বেলায়ও স্ত্রীসঙ্গমে লিপ্ত থাকবো। তাই রমাযান মাস অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত আমি তার সাথে যিহার করি। এক রাতে সে আমার খেদমত করছিলো। এমন সময় তার শরীরের এমন কিছু আমার সামনে খুলে গেলো যে, আমি স্থির থাকতে পারলাম না। আমি সহবাসে লিপ্ত হয়ে পড়লাম। ভোর হলে আমি আমার বংশের লোকদের কাছে গিয়ে তাহাদেরকে আমার ঘটনা জানিয়ে বলিলাম, তোমরা আমার সাথে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে চলো। তারা বললো, না আল্লাহর শপথ! আমরা যাবো না। কাজেই আমি একাই নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে গিয়ে ঘটনাটি জানালাম। তিনি বলিলেনঃ এরূপ কাণ্ড কি তুমি করেছো হে সালামাহ? আমি বলিলাম, হ্যাঁ, আমিই এরূপ করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! এইভাবে দুইবার বলি। আর আপনি মহান আল্লাহর বিধান আমার উপর কার্যকর করুন, আমি ধৈর্যশীল হবো। তিনি বলিলেনঃ তুমি একটি দাস মু্ক্ত করো। আমি বলি, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাহাঁর শপথ! আমার কোন দাস নেই, আমার নিজেকে ছাড়া। এ কথা বলে আমি আমার গর্দানের উপর হাত রাখি। তিনি বলিলেনঃ তাহলে একাধারে দুমাস সওম পালন করো। সে বললো, সওম পালনের কারণেই তো এ সমস্যায় পড়েছি। তিনি বলিলেনঃ এক ওয়াসক খেজুর যাটজন মিসকীনকে খাওয়াও। সে বললো, সেই সত্ত্বার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! গত রাত আমি এবং আমার পরিবার উপোস কাটিয়েছি। কারণ আমাদের কাছে খাবার নেই। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ তুমি বনু যুরাইকের যাকাত আদায়কারীর নিকট গিয়ে বলো, সে যেন তোমাকে তাহাদের সদাক্বাহ দেয়। তা থেকে এক ওয়াসক খেজুর ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াবে। আর যা বাকী থাকিবে তা তুমি ও তোমার পরিবার খাবে। অতঃপর আমি আমার কওমের লোকদের নিকট ফিরে এসে বলি, আমি তোমাদের কাছে পেয়েছি সংকীর্ণতা ও মন্দ ব্যবহার, আর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে পেয়েছি উদারতা ও উত্তম ব্যবহার। তিনি আমাকে তোমাদের সদাক্বাহ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। ইবনিল আলা অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, বায়াদাহ বনু যুরাইকের একটি শাখা।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২২১৪. খুওয়াইলাহ বিনতু মালিক ইবনি সালাবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার সাথে আমার স্বামী আওস ইবনিস সামিত [রাদি.] যিহার করিলেন। আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে অভিযোগ করলাম। তিনি আমার স্বামীর পক্ষ হইতে আমার সাথে বিতর্ক করিলেন এবং বলিলেনঃ আল্লাহকে ভয় করো, সে তো তোমার চাচার ছেলে। মহিলাটি বলেন, আমি সেখান থেকে চলে না আসতেই কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “নিশ্চয় আল্লাহ ঐ মহিলার কথা শুনতে পেয়েছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করছে” [সূরাহ আল-মুজাদালাঃ ১] এখান থেকে কাফফারাহ পর্যন্ত অবতীর্ণ হলো। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ সে একটি দাস মুক্ত করিবে। মহিলাটি বলেন, তার সে সামর্থ নেই। তিনি বলিলেনঃ সে একাধারে দুমাস সওম পালন করিবে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসুল! সে খুবই বৃদ্ধ, সাওম পালন করিতে অক্ষম। তিনি বলিলেনঃ তবে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাবে। মহিলাটি বলিলেন, সদাক্বাহ করার মত পয়সা তার নেই। মহিলাটি বলেন, এ সময় সেখানে এক ঝুড়ি খুরমা আসলো। তখন আমি [মহিলা] বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ পরিমাণ আর এক ঝুড়ি খুরমা দিয়ে আমি তাহাকে সহযোগীতা করবো। তিনি বলিলেনঃ তুমি ভালই বলেছো। তুমি এর দ্বারা তার পক্ষ হইতে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াও এবং তোমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে যাও। ইয়াহইয়া ইবনি আদাম বলেন, ষাট সাতে এক আরাক্ব হয়। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মহিলাটি তার স্বামীর নির্দেশ ছাড়াই তার পক্ষ হইতে কাফফারাহ আদায় করেছে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আওস [রাদি.] ছিলেন উবাদাহ ইবনিল সামিত [রাদি.] এর ভাই। {২২১৪}

হাসান, তার এ কথাটি বাদেঃ “ষাট সাতে এক আরাক্ব।” ইরওয়া [২০৮৭] তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২২১৫. ইবনি ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে আরো আছে, আরাক্ব হলে তিরিশ সা-এর সমান। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বরেন, হাদিসটি ইয়াহইয়া ইবনি আদামের বর্ণিত হাদিসের চেয়ে অধিকতর বিশুদ্ধ।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২২১৬. আবু সালামাহ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আরাক্ব এমন থলে, যাতে পনের সা পরিমাণ ধারণ হয়।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২১৭. সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত হাদিস এভাবে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে কিছু খেজুর আসে। তিনি সবগুলো খেজুর ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে দেন, যার পরিমাণ ছিলো প্রায় পনের সা। তিনি বলিলেনঃ এগুলো দান করে দাও। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ও আমার পরিবারের লোকদের চাইতে অধিক নিঃস্ব কেউ নেই। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ তুমি ও তোমার পরিবারের লোকেরা তা খাও।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২২১৮. ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মুহাম্মাদ ইবনি ওয়াযীর আল-মিসরী হইতে উবাদাহ ইবনিস সামিতের ভাই আওস [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

ষাটজন মিসকীনকে খাওয়ানোর জন্য রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঐ ব্যক্তিকে পনের সা যব দিলেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, বর্ণনাকারী আতার সাথে আওসের সাক্ষাৎ ঘটেনি। কারণ আওস [রাদি.] বদরী সাহাবী, যিনি অনেক আগেই মারা গেছেন। সুতরাং হাদিসটি মুরসাল।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২১৯. হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

খাওলাহ ছিলেন আওস ইবনিস সামিতের স্ত্রী। আর আওস [রাদি.] সঙ্গমে অধিক সক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এক সময় তার এ আসক্তি বৃদ্ধি পেলে তিনি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করেন। এই প্রসঙ্গে মহান শক্তিশালী আল্লাহ যিহারের কাফফারাহ সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ করিলেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২০. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২১. ইকরিমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করে তার কাফফারাহ আদায়ের আগেই সহবাসে লিপ্ত হয়। সে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো। তিনি তাহাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসে তোমাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে? সে বললো, চাঁদের আলোয় আমি তার দুই উরুর সৌন্দর্য দেখে। তিনি বলিলেনঃ তোমার যিহারের কাফফারাহ আতার না করা পর্যন্ত তার থেকে দূরে থাকো।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২২. ইকরিমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করলো। সে চাঁদের আলোয় স্ত্রীর উরুর উজ্জ্বলতা দেখিতে পেয়ে তার সাথে সঙ্গম করে। অতঃপর সে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এলে তিনি তাহাকে কাফ্‌ফারাহ দেয়ার নির্দেশ দেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অবশ্য তিনি উরু কথাটি উল্লেখ করেননি।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২৪. ইকরিমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সূত্রে সুফিয়ান বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২৫. আল-হাকাম ইবনি আবান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী এই সানাদে ইবনি আব্বাসের [রাদি.] নাম উল্লেখ করেননি। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি মূসা মামার হইতে… ইকরিমার মাধ্যমে ইবনি আব্বাস [রাদি.] থেকে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সূ্ত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৮ঃ খোলার বর্ণনা

২২২৬. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ যদি কোন মহিলা অহেতুক তার স্বামীর নিকট তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২৭. হাবীবাহ বিনতু সাহল আল-আনসারিয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি সাবিত ইবনি ক্বায়িস ইবনি শাম্মাসের [রাদি.] স্ত্রী ছিলেন। একদা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ফাজ্‌রের সলাতে যাওয়ার পথে সাহলের কন্যা হাবীবাহকে ভোরের অন্ধকারে তাহাঁর ঘরের দরজায় দেখিতে পেয়ে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? তিনি বলিলেন, আমি সাহলের কন্যা হাবীবাহ্। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি হয়েছে? তিনি বলেন, সাবিত ইবনি ক্বায়িসের সাথেও আমার দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হইবে না। যখন সাবিত ইবনি ক্বায়িস আসলেন তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে বলিলেনঃ এই তো সাহলের কন্যা হাবীবাহ। অতঃপর মহিলাটি তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ছিলো তা পেশ করিলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আমাকে যা কিছু দিয়েছেন সবই আমার কাছে আছে। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাবিত ইবনি ক্বায়িসকে বলিলেনঃ তুমি যা কিছু তাহাকে দিয়েছো তা গ্রহণ করো। সুতরাং তিনি স্ত্রী থেকে সব গ্রহণ করিলেন এবং হাবীবাহ তার পরিজনের কাছে চলে গেলেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

হাবীবাহ বিনতু সাহল ছিলেন [রাদি.] সাবিত ইবনি ক্বায়িস ইবনি শাম্মাসের স্ত্রী। তিনি হাবীবাহকে প্রহার করলে তার শরীরের কোন অঙ্গ ভেঙ্গে যায়। তাই তিনি সুবহে সাদেকের পর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে তাহাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করিলেন। অতঃপর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাবিতকে ডেকে এনে বলিলেনঃ তুমি তাহাকে যা কিছু দিয়েছো তার কিছু অংশ গ্রহণ করে তাহাকে তালাক দাও। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তা ফেরত নেয়া কি ঠিক হইবে? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ! সে বললো, আমি তাহাকে মোহরানা বাবদ দুটি বাগান দিয়েছি এবং সেগুলো তার দখলে আছে। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ তুমি বাগান দুটি নিয়ে নাও এবং তাহাকে ত্যাগ করো। ফলে তিনি তাই করিলেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২২৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

সাবিত ইবনি ক্বায়িসের [রাদি.] স্ত্রী তার কাছ থেকে খোলা তালাক নিলেন। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার ইদ্দাতকাল নির্ধারণ করিলেন এক হায়িয। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এই হাদিস ইকরিমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সূত্রে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৩০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খোলা তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দাতকাল হচ্ছে এক হায়িয।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ

অনুচ্ছেদ-১৯ঃ স্বাধীন কিংবা গোলামের দাসী স্ত্রী আযাদ হলে

২২৩১.ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মুগীস ছিলেন একজন গোলাম। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য তার [বারীরার] কাছে একটু সুপারিশ করুন। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ হে বারীরাহ! আল্লাহকে ভয় করো। কেননা সে তোমার স্বামী এবং তোমার সন্তানদের পিতা। সে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি আমার প্রতি আপনার নির্দেশ? তিনি বলিলেনঃ না, বরং আমি একজন সুপারিশকারী। এদিকে মুগীসের চোখের পানিতে তার চোয়াল পর্যন্ত ভিজে গড়িয়ে পড়ছে। এ দৃশ্য দেখে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আব্বাস [রাদি.]-কে বলিলেনঃ হে আব্বাস! বারীরাহ্‌র প্রতি মুগীসের প্রেম, আর মুগীসের প্রতি তার ক্রোধ কতই না আশ্চর্যকর।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বারীরাহ্‌র স্বামী এক কালো বর্ণের ক্রীতদাস ছিলেন। যার নাম মুগীস। বারীরাহ মুক্ত হবার পর এ স্বামী গ্রহণ করা অথবা বর্জনের ব্যাপারে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে এখতিয়ার দিয়ে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৩৩. আয়িশাহ [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

বারীরাহর ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার স্বামী একজন গোলাম ছিলো। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে স্বামীর ব্যাপারে এখতিয়ার প্রদান করায় সে নিজেকে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়। স্বামী আযাদ হলে তাতে এখতিয়ার থাকতো না।

সহিহঃ তবে এ কথাটি বাদেঃ “স্বামী আযাদ হলে তাতে এখতিয়ার থাকতো না”। এটুকু মুদরাজ। যা উরওয়ার উক্তি। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৩৪. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বারীরাহ্‌কে এখতিয়ার দিয়েছিলেন। তার স্বামী ছিলো ক্রীতদাস।

তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২০ঃ যিনি বলিয়াছেন, সে [মুগীস] আযাদ ছিলো

২২৩৫. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যখন বারীরাহকে আযাদ করে দেয়া হয় তখন তার স্বামী ছিলো আযাদ এবং তাহাকে এখতিয়ার দেয়া হলে সে বলে, তার সাথে বসবাসের কোন আকর্ষণ আমার নেই, যদি আমাকে এতো এতো কিছু দেয়া হয়।

সহিহঃ বুখারী। আর স্বামী আযাদ হওয়ার কথাটি মুদরাজ। যা আসওয়াদে উক্তি থেকে এসেছে।} তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২১ঃ স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদ ঘটানোর সময়সীমা সম্পর্কে

২২৩৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বারীরাহ্‌কে যখন আযাদ করা হয় তখন সে আবু আহমাদ পরিবারের ক্রীতদাস মুগীসের স্ত্রী ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে এখতিয়ার দিয়েছিলেন এবং তাহাকে এটাও বলেছিলেনঃ তোমার স্বামী তোমার সাথে সহবাস করলে তোমার এখতিয়ার বহাল থাকিবে না। {২২৩৬}

যঈফঃ ইরওয়া [১৯০৮], যঈল আল-জামিউস সাগীর [১২৯৫]। {২২৩৬} বায়হাক্বী। সানাদে ইবনি ইসহাক্ব একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্‌ আন্‌ শব্দে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা মুনযিরী এবং হাফিয ইবনি হাজার আসকালানীও এটিকে একই দোষে দোষী করেছেন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২২ঃ বিবাহিত দাস-দাসী একই সাথে আযাদ হলে স্ত্রীর এখতিয়ার থাকিবে কিনা?

২২৩৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি এমন দুজন দাস-দাসীকে আযাদ করার ইচ্ছা করিলেন, যে দাসীর স্বামী আছে। ক্বাসিম বলেন, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি নারীর পূর্বে পুরুষটিকে আযাদ করার নির্দেশ দেন। {২২৩৭}

{২২৩৭} নাসায়ী, ইবনি মাজাহ। সনদের উবাইদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন আবদুল্লাহ বিন মাওহাব সম্পর্কে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। আল্লামা মুনযিরীও অনুরূপ বলিয়াছেন। তালাকের নিয়ম – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply