তালাক এর বিবরণ। তালাক দেয়া অপছন্দনীয়
তালাক এর বিবরণ। তালাক দেয়া অপছন্দনীয় >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৭ঃ তালাক এর বিবরণ
পরিচ্ছেদ ০১. তালাক দেয়া অপছন্দনীয়
পরিচ্ছেদ ০২. হায়েয অবস্থায় তালাকের বিধান
পরিচ্ছেদ ০৩. নবী সাঃআঃ এবং তাহাঁর দুই সাহাবীর যুগে তিন তালাকের বিধান
পরিচ্ছেদ ০৪. এক শব্দ দ্বারা তিন তালাক দেওয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৫. তিন তালাক দ্বারা যা সংঘটিত হয়
পরিচ্ছেদ ০৬. রসিকতা করে তালাক দেওয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৭. অন্তরে তালাকের চিন্তা করলেই তালাক্ব কার্যকর হয় না
পরিচ্ছেদ ০৮. যাদের তালাক কার্যকর হয় না
পরিচ্ছেদ ০৯. স্ত্রীকে নিজের উপর হারাম করে নেয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ১০. তালাকের আনুষাঙ্গিক শব্দাবলী
পরিচ্ছেদ ১১. বিবাহের পরেই শুধুমাত্র তালাক দেয়া যায়
পরিচ্ছেদ ১২. শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য নয় এমন ব্যাক্তির তালাকের হুকুম
পরিচ্ছেদ ০১. তালাক দেয়া অপছন্দনীয়
১০৬৯ – ইবনু উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তালাক্ব হচ্ছে হালাল বস্তুর মধ্যে আল্লাহ্র নিকটে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য বস্তু। আবূ দাউদ, ইবনু মাযাহ, হাকিম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। আৰূ হাতিম হাদিসটির মুরসাল হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন।” {১১৬৯}
{১১৬৯} ইবন মাজাহ ২০১৮, আর দাউদ ২১৭৮। ইবনু উসাইমীন বুলুগুল মারামের শরাহ ৫/৪ গ্রন্থে বলেন, এর সনদ নিয়ে আলিমগণের মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান যে, এটি মুরসাল নাকি মুত্তাসিল, আর এর অর্থগত দিক দিয়েও এটি মুনকার। শাইখ আলবানী জঈফ আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়াউল গালীল ২০৪০, সিলসিলা সহীহাহ ৫/১৮ গ্রন্থত্রয়ে একে দুর্বল বলেছেন, ইমাম শওকানী নাইলুল আওত্বার ৭/২ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে ইয়াহইয়া বিন সুলাইম যাকে নিয়ে বির্তক রহিয়াছে। আর মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হাদীসের সনদে উবাইদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ আল ওয়াসাফী নামক দুর্বল বর্ণনাকারী রহিয়াছে। অপরপক্ষে ইমাম সুয়ূত্বী আল জামেউস সগীর ৫৩ গ্রন্থে, বিন বায মাজমুআ ফাতাওয়া ২৫/২৫৩ গ্রন্থে একে সহিহ বলেছেন। বিন বায বুলুগুল মারামের হাশিয়া ৬১২ গ্রন্থে বলেন …. শাইখ আলবানী তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২২৭, গায়াতুল মারাম ২৬১ গ্রন্থদ্বয়ে একে সহিহ বলেছেন, ইমাম ইবনুল কাইয়িম যাদুল মাআদ ৫/২২০ গ্রন্থে এর সনদকে মুসলিম শর্তে সহিহ বলেছেন। তবে শাইখ আলবানী জঈফ নাসায়ী ৩৪০১ জঈফ বলেছেন, ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর ফাতহুল বারী ৯/২৭৫ গ্রন্থে বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত কিন্তু মাহমুদ বিন লাবীদ নয়। মাহমুদ বিন লাবীদ এর শ্রবণ নবী [সাঃআঃ] থেকে প্রমাণিত হয় না। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ০২. হায়েয অবস্থায় তালাকের বিধান
১০৭০ – আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূল [সাঃআঃ]-এর যুগে স্বীয় স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় ত্বলাক্ব দেন। `উমার ইবন খাত্তাব [রাঃআঃ] এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন। তখন রসূলুল্লাহ বললেনঃ তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুবতী হয় এবং আবার পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে, তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছে করে তবে সহবাসের পূর্বে তাকে ত্বলাক্ব দেবে। আর এটাই তুলাকের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ্ তা`আলা স্ত্রীদের ত্বলাক্ব দেয়ার বিধান দিয়েছেন।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে `আপনি তাকে [ইবনু `উমারকে] হুকুম দিন তার স্ত্রীকে সে ফেরত নিক তারপর পবিত্র অবস্থায় বা গর্ভাবস্থায় ত্বলাক্ব দিক।
বুখারির অন্য বর্ণনায় আছে, এতে তার একটি ত্বলাক্ব হিসাব ধরা হয়েছিল।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে- ইবনু উমর [রাঃআঃ] কোন জিজ্ঞেসকারীকে বলিলেন, যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে এক বা দু-ত্বলাক্ব দাও তাহলে এক্ষেত্রে নবী [সাঃআঃ] আমাকে আদেশ করেছিলেন- যেন আমি তাকে ফেরত নিই তারপর তার অন্য একটি হায়িয হওয়া পর্যন্ত তাকে আমি ঐ অবস্থায় রেখে দিই। অতঃপর পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিই। তারপর তাকে স্পর্শ করার পূর্বে ত্বলাক্ব দিই।
আর তুমি তাকে তিন ত্বলাক্ব দিয়েছ আর তুমি তোমার প্রভুর যে নির্দেশ তোমার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে ছিল তাহাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছ।
অন্য বর্ণনায় আছে- `আবদুল্লাহ বিন `উমার [রাঃআঃ] বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] আমাকে স্ত্রী ফেরত দিয়েছিলেন আর হায়িয অবস্থার ঐ ত্বলাক্বটিকে কোন ব্যাপার বলে মনে করেননি এবং তিনি বলেছিলেন যখন সে পবিত্র হইবে তখন ত্বলাক্ব দিবে অথবা [ত্বলাক্ব না দিয়ে] রেখে দিবে। {১১৭০}
{১১৭০} বুখারি ৪৯০৮, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৮, ৫৩৩২, ৫৩৩৩, মুসলিম ১০১৫, ১৪৭১, তিরমিয়ী ১১৭৫, ১১৭৬, নাসায়ী ৩৩৮৯, ৩৩৯০, ৩৩৯১, আবূ দাউদ ২১৭৯, ২১৮১, ২১৮২, ইবনু মাযাহ ২০১৯, ২০২২, আহমাদ ৩০৬, ৪৪৮৬, ৪৭৭৪, মালেক ১২২০, দারেমী ২২৬২, ২২৬৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৩. নবী সাঃআঃ এবং তাহাঁর দুই সাহাবীর যুগে তিন তালাকের বিধান
১০৭১ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে এবং আবূ বাক্র সিদ্দীকের শাসনামলে ও `উমার ফারুক [রাঃআঃ]-এর প্রথম দুবছরের খেলাফতকাল পর্যন্ত একসঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাককে একটিমাত্র তালাক গণ্য করা হতো। তারপর `উমার [রাঃআঃ] বলিলেন- লোক তো তালাক সম্পাদনের সুযোগ গ্রহণ করে তাড়াহুড়ো করছে, এমতাবস্থায় যদি আমি ওটা [তিন ত্বলাক্বকে] তাহাদের উপর চালু করেই দিই! ফলে তিনি তিন ত্বলাক্বকে তাহাদের উপর চালু করেই দিলেন। {১১৭১}
{১১৭১} মুসলিম ১৪৭২, নাসায়ী ৩৪০৬, নাসায়ী ২১৯৯, ২২০০।! ফলে তিনি তিন ত্বলাক্বকে তাহাদের উপর চালু করেই দিলেন। {১১৭১}/ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৪. এক শব্দ দ্বারা তিন তালাক দেওয়ার বিধান
১০৭২ – মাহমুদ ইবনু লাবীদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কোন লোক সম্বন্ধে সংবাদ দেয়া হলো যে, লোকটি তার স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছে। [এরূপ শুনে] নবী [সাঃআঃ] রাগাম্বিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, অতঃপর বলিলেন, তোমাদের মধ্যে আমি বিদ্যমান থাকা অবস্থাতেই কুরআন নিয়ে কি খেলা করা হচ্ছে? এমনকি এক ব্যক্তি [সাহাবী] দাড়িয়ে গিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব না? -হাদিসটির রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। {১১৭২}
{১১৭২} শাইখ আলবানী তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবী ৩২২৭, গায়াতুল মারাম ২৬১ গ্রন্থদ্বয়ে একে সহিহ বলেছেন, ইমাম ইবনুল কাইয়িম যাদুল মাআদ ৫/২২০ গ্রন্থে এর সনদকে মুসলিম শর্তে সহিহ বলেছেন। তবে শাইখ আলবানী জঈফ নাসায়ী ৩৪০১ জঈফ বলেছেন, ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর ফাতহুল বারী ৯/২৭৫ গ্রন্থে বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত কিন্তু মাহমুদ বিন লাবীদ নবী [সাঃআঃ] থেকে শুনেছেন এটি সাব্যস্ত হয় না।vহাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৫. তিন তালাক দ্বারা যা সংঘটিত হয়
১০৭৩ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, সহাবী আবূ রুকানাহ তার স্ত্রী উম্মু রুকানাহকে তালাক দিয়েছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, তোমার স্ত্রীকে তুমি `রাজায়াত` কর অর্থাৎ ফেরত নাও, উক্ত সহাবী বলিলেন আমি তো তাকে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তা তো আমি জানিই, তুমি তাকে ফিরিয়ে নাও। {১১৭৩}
মুসনাদে আহমাদের শব্দে আছে, সাহাবী আবূ রুকানাহ তাহাঁর স্ত্রীকে একই বৈঠকে তিন তালাক দিয়েছিলেন। তারপর তিনি তার স্ত্রী বিচ্ছেদ হেতু পেরেশান হয়ে পড়লেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন- এটা তো একটি মাত্র তালাক্ব গণ্য হয়েছে। হাদিস দুটির রাবী ইবনু ইসহাক- এ হাদীসে ক্রটি রহিয়াছে।
{১১৭৩} আবূ দাউদ ২১৯৬, ২১৯৭, ২১৯৮। শাইখ বিন বায তাহাঁর বুলুগুল মারামের হাশিয়া ৬১৫ গ্রছে বলেন, ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, এর দুটি সনদে ইবনু ইসহাক রহিয়াছে, যার সম্পর্কে বিতর্ক রহিয়াছে, আমি [বিন বায] বলছি, ইবনু ইসহাক স্পষ্টভাবে হাদ্দাসানা বলেছেন, একারণে – তাদলীস [দোষ গোপন] দূর হয়ে গেল। আর এ হাদিস দিয়ে দলীলও দেয়া যাবে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১০৭৪ – আবূ দাউদ হইতে বর্ণিতঃ
অবশ্য আবূ রুকানাহ তার স্ত্রী সুহায়মাহকে `আল-বাত্তাহ তালাক` দিয়েছিলেন। আর তিনি বলেছিলেন- আল্লাহর শপথ আমি তো এতে একটি মাত্র তালাকেরই ইচ্ছা করেছিলাম। ফলে নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীকে তার নিকট ফেরত দিয়েছিলেন। {১১৭৪}
{১১৭৪} আর দাউদ ২২০৬.১২০৮, তিরমিয়ী ১১৭৭, ইবনু মাযাহ ২০৫১, দারেমী ২২৭২। মুহাদ্দিস আমীমাবাদী তাহাঁর আওনুল মা`বূদ ৬/১৪৩ গ্রন্থে বলেন, ইবনু হযম তাহাঁর আল মাহাল্লী ১০/১৯০ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে আবদুল্লাহ বিন আলী ও উজাইর বিন আবদ নামক দুজন অপরিচিত বৰ্ণনাকারী রহিয়াছে। ইমাম শওকানী নাইলুল আওত্বার ৭/১১ গ্রন্থে একে দুর্বল মুযতারাব হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। ইবনুল কাইয়িম তাহাঁর তাহষীবুস সুনান ৬/২৬৬ গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। শাইখ আলবানী তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২১৯ গ্রন্থে বলেন, এর মধ্যে কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। যইফ আবূ দাউদে ২২০৬ একে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৬. রসিকতা করে তালাক দেওয়ার বিধান
১০৭৫ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে বাস্তবিকই বলা হলেও যথার্থ বিবেচিত হইবে অথবা উপহাসচ্ছলে বলা হলেও যথার্থ গণ্য হবেঃ বিবাহ, তালাক ও প্রত্যাহার। নাসায়ী ব্যতীত চারজনে; হাকিম সহিহ বলেছেন। {১১৭৫}
{১১৭৫} আবূ দাউদ ২১৯৪, মুসলিম ১১৮৪, ইবনু মাযাহ ২০৩৯৷ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১০৭৬ . ইবনু আদীর হইতে বর্ণিতঃ
একটি দুর্বল বর্ণনায় আছে- [ঐ তিনটি হচ্ছে] তালাক, দাসমুক্তি ও বিবাহ। {১১৭৬}
{১১৭৬} ইবনু আদী তাহাঁর আল কামিল ফিয যু`আফা [৭/১০৯] গ্রন্থে হাদিসটির মতনকে মুনকার বলেছেন। ইবনুল কীসরানী তাহাঁর দাখীরাতুল হফফায [২/১১৮১] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে গালিব আল জাযরী রহিয়াছে সে বিশ্বস্ত নয়। শায়খ আলবানী তার ইরওয়াউল গালীল [৬/২২৫] গ্রন্থে গালিব বিন আবদুল্লাহ আল জাযরীকে অত্যন্ত দুর্বল সাব্যস্ত করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
১০৭৭ – উবাদাহ ইবনু সামিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
মারফু` সূত্রে হারিস ইবনু আবি উসামাহ হইতে বর্ণিত হয়েছে; তিনটি ব্যাপারে খেল-তামাশা চলে না। তালাক, বিবাহ ও দাসমুক্তিতে। এ সম্বন্ধে যে কথা বলবে তার উপর তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এর সানাদ দুর্বল। {১১৭৭}
{১১৭৭} ইবনু হাজার আসকালানী তার আত-তালখীসুল হাবীর [৪/১২৪৯] গ্রন্থে হাদিসটিকে মুনকাতি বলেছেন। শায়খ আলবানী তাহাঁর ইরওয়াউল গালীল [৬/২২৬] গ্রন্থে এর সনদকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম সন`আনী তার সুবুলুস সালাম [৩/২৭৫] গ্রন্থে বলেন, এর মধ্যে ইবনু লহিয়্যা ও এর মধ্যে ইনকিতা রহিয়াছে। ইমাম শওকানী তার নাইলুল আওত্বার [৭/২১] গ্রন্থেও এর সনদে ইনকিতা। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৭. অন্তরে তালাকের চিন্তা করলেই তালাক্ব কার্যকর হয় না
১০৭৮ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে। {১১৭৮}
{১১৭৮} বুখারি ৫২৬৯, মুসলিম ১২৭, তিরমিয়ী ১১৮৩, নাসায়ী ৩৪৩৩, ৩৪৩৪, ৩৪৩৫, আবূ দাউদ ২২০৯, ইবনু মাযাহ ২০৪০, আহমাদ ৮৮৬৪,৯২১৪,৯৭৮৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৮. যাদের তালাক কার্যকর হয় না
১০৭৯ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ আমার উম্মাতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। -আবূ হাতিম বলেনঃ এর সানাদ ঠিক নয়। {১১৭৯}
{১১৭৯} ইবনু মাযাহ ২০৪৫। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৯. স্ত্রীকে নিজের উপর হারাম করে নেয়ার বিধান
১০৮০ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হারাম বলে ঘোষণা দেয় সে ক্ষেত্রে কিছু [অর্থাৎ ত্বলাক্ব] হয় না। তিনি আরও বলেনঃ “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মধ্যে রহিয়াছে উত্তম আদর্শ।”
মুসলিমে আছে, যখন কোন লোক তার স্ত্রীকে হারাম বলে ব্যক্ত করে তখন তা শপথ বা কসম বলে গণ্য হয়-তার জন্য তাকে কসমের কাফফারা দিতে হইবে।” {১১৮০}
{১১৮০} বুখারি ৫২৬৬,৪৯১১, মুসলিম ১৪৭৩, নাসায়ী ৩৪২০, ইবনু মাযাহ ২০৩৭, আহমাদ ১৯৭৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১০. তালাকের আনুষাঙ্গিক শব্দাবলী
১০৮১ – `আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
জাওনের কন্যাকে যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট [একটি ঘরে] পাঠানো হল আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলিল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও। {১১৮১}
{১১৮১} বুখারি ৫২৫৪, নাসায়ী ৩৪১৭, ইবনু মাযাহ ২০৫০ । তালাক্ব শব্দের পরিবর্তে অন্য শব্দ বলেও তালাক্ব দেয়া যায়। এমনকি নিয়ত করলেও তালাক্ব পতিত হয়ে যায়। এ ধরনের তালাক্বকে “ত্বালাকে কিনায়াহ` বলে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১১. বিবাহের পরেই শুধুমাত্র তালাক দেয়া যায়
১০৮২ – জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]বলেছেন, বিবাহ সম্পাদন হওয়ার পর ব্যতীত তালাক নেই, আর দাস-দাসীর উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ব্যতীত দাসত্ব মুক্তি নেই। -হাকিম সহিহ বলেছেন, এর সানাদটির মধ্যে কিছু দুর্বলতা রহিয়াছে। {১১৮২}
{১১৮২} হাকিম ২/২০৪। শাইখ সুমাইর আয যুহাইরী বলেন, আমি মুসনাদে আবূ ইয়ালার মুদ্রণে এটি পাইনি। আল্লাহই ভাল জানেন। আর হাদিসটি শাহেদ থাকার কারণে সহিহ। যা সামনে আসছে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৮৩ – ইবনু মাযাহ মিসওয়ার বিন মাখরামাহ হইতে বর্ণিতঃ
অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন, তার সানাদটি হাসান, কিন্তু এটাও ক্রটিযুক্ত। {১১৮৩}
{১১৮৩} ইবনু মাযাহ ২০৪৮। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১০৮৪ – `আমর বিন শু`আইব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে বিষয়ে মালিকানা নেই, সে বিষয়ে আদম সন্তানের কোন মানৎ মানা চলবে না এবং মালিকানা প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কোন দাসত্ব মুক্তি নেই, বিবাহ সম্পাদনের মাধ্যমে স্ত্রীর অধিকার অর্জন ব্যতীত তালাক্ব নেই। -তিরমিয়ী হাদিসটিকে সহীহ্ বলেছেন, বুখারি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত, এ ব্যাপারে হাদীসের মধ্যে এটি সর্বাধিক সহীহ্। {১১৮৪}
{১১৮৪} তিরমিজি ১১৮১, আবূ দাউদ ২১৯০, ইবনু মাযাহ ২০৪৭। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২. শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য নয় এমন ব্যাক্তির তালাকের হুকুম
১০৮৫ – `আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন- তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছেঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়। -হাকিম সহীহ্ বলেছেন, ইবনু হিব্বানও বর্ণনা করিয়াছেন। {১১৮৫}
{১১৮৫} আর দাউদ ৪৩৯৮, নাসায়ী ৩৪৩২, ইবনু মাযাহ ২০৪১, আহমাদ ২৪১৭৩,২৪১৮২, দারেমী ২২৯৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply