তায়াম্মুমের মাসআলা ও মাসায়েল – আল হেদায়া কিতাব
তায়াম্মুমের মাসআলা ও মাসায়েল – আল হেদায়া কিতাব >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ তায়াম্মুম
মুসাফির অবস্থায় কিংবা বাইরে থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি পানি না পায় আর তার ও শহরের মাঝে এক মাইল বা ততোধিক দূরত্ব হয়, তাহলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করিবে।
কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ আর যদি তোমরা পানি না্ পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করিবে।
তাছাড়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-মাটি হলো মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যতক্ষণ পানি না পাওয়া যায়, এমন কি দশ বছরও যদি হয়।
দূরত্বের পরিমাণের ক্ষেত্রে মাইলই হলো গ্রহণযোগ্য। কেননা [এতটুকু দূরত্ব থেকে] শহরে প্রবেশ করতে তার কষ্ট হবে। আর প্রকৃতপক্ষে পানিতো অনুপস্থিত। দূরত্বই হলো বিবেচ্য, নামায ফউত হওয়ার আশংকা বিবেচ্য নয়। কেননা ত্রুটি এর পক্ষ থেকেই এসে থাকে। যদি পানি পেয়ে যায় কিন্তু সে অসুস্থ থাকে এবং আশংকা করছে যে, পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বেড়ে যাবে, তবে তায়াম্মুম করিবে। ( তায়াম্মুমের মাসআলা )
ঐ আয়াতের ভিত্তিতে যা ইতোপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি। তাছাড়া অসুস্থতা বৃদ্ধিজনিত ক্ষতি পানির মূল্যবৃদ্ধিজনিত ক্ষতির চেয়ে বেশী। অথচ এতে তায়াম্মুমের অনুমতি রয়েছে।
সুতরাং তাতে অনুমতি হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত।
আর যোগ বৃদ্ধির আশংকা নড়াচড়ার কারণে হোক কিংবা পানির ব্যবহারের কারণে হোক এতে কোন পার্থক্য নেই। ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] তায়াম্মুম জাইয হওয়া অংগহানী বা প্রাণহানীর আশংকার উপর নির্ভর করিয়াছেন। কিন্তু আয়াতের প্রকাশ্য অর্থ দ্বারা তা অগ্রাহ্য।
জুনুবী ব্যক্তি যদি আশংকা করে যে, সে গোসল করলে ঠান্ডায় মারা যাবে কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়বে, তাহলে সে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতে পারবে। ( তায়াম্মুমের মাসআলা )
এ হুকুম ঐ অবস্থায় যখন সে শহরের বাইরে। এর কারণ [ইতোপূর্বে] আমরা বর্ণনা করেছি। আর যদি শহরেই থাকে তাহলে আবূ হানীফ [রঃআঃ] এর মতে একই হুকুম। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর ভিন্নমত রয়েছে। তারা বলেন, শহরে এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হওয়া বিরল। সুতরাং তা বিবেচ্য নয়।
ইমাম সাহেবের যুক্তি এই যে, অক্ষমতা বাস্তবে বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং তা বিবেচনা করা জরুরী।
তায়াম্মুম হল [মাটিতে] দুবার উভয় হাত লাগান। একবারের দ্বারা মুখ মাসহ করিবে এবং দ্বিতীয় বারের দ্বারা কনুই পর্যন্ত উভয় হাত মাসহ করিবে। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- তায়াম্মুম হলো [মাটিতে] দুবার হাত লাগান, একবার হাত লাগান হলো মুখমন্ডলের জন্য। আরেক বার হাত লাগান হলো উভয় হাতের জন্য।
আর উভয় হাত এমন ভাবে ঝাড়া দিবে, যেন মাটি ঝরে যায়। যাতে তার আকৃতি বিকৃত না হয়ে যায়।
যাহিরী রিওযায়াত মতে মাসহ পূর্ণাঙ্গ হওয়া জরুরী। কেননা তায়াম্মুম ওজুর স্থলবর্তী। এ জন্যই ফকীহগণ বলিয়াছেন যে, আংগুলগুলো খেলাল করিবে এবং আংটি খুলে নিবে, যাতে মাসহ পূর্ণাঙ্গ হয়।
তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে হাদাছ ও জানাবাত দুটোই সমান। তদ্রুপ হায়য ও নিফাছের তায়াম্মুম। কেননা বর্ণিত আছে যে, এক সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর খিদমতে এসে আরয করলো, আমরা মরুভূমিতে বাস করি, ফলে এক দুমাস আমরা পানি পাই না। অথচ আমাদের তোমরা তোমাদের মাটির সাহায্য নিবে [অর্থাত তায়াম্মুম করিবে]।
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে মৃত্তিকা জাতীয় যে কোন বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম জাইয। যেমন-মাটি, বালু, পাথর, সুরকি চুনা, সাধারণ চুনা, সুরমা, ও হরিতাল। ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] বলেন, মাটি ও বালু ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা তায়াম্মুম জাইয হবে না।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, উত্পাদনকারী মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা তায়াম্মুম জাইয হবে না। আবূ ইউসূফ থেকেও এরূপ বর্ণনা রয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলিয়াছেন- তোমরা পবিত্র [অর্থাত্ উত্পাদনকারী] মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করিবে। অর্থাত্ উত্পাদনকারী মাটি দ্বারা এ কথা ইবন আব্বাস রাঃআঃ বলিয়াছেন।
তবে ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] আমাদের বর্ণিত পূর্বোল্লিখিত হাদিসের কারণে মাটির সাথে বালু বর্ধিত করিয়াছেন। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, ভূ-পৃষ্ঠের নাম, [শব্দের অর্থ উচু] ভূ-পৃষ্ঠের উচুত্বের কারণেই তার এ নামকরণ করা হয়েছে। আর শব্দটি পবিত্র অর্থও বহন করে। সুতরাং সে অর্থেই তাকে প্রয়োগ করা হবে। কেননা, তাহারাতের ক্ষেত্রে এ অর্থই অধিক উপযোগী। অথবা ইজমার দ্বারা এ অর্থ গৃহীত।
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে মৃত্তিকার উপর ধূলা থাকা শর্ত নয়। কেননা, আমাদের উল্লেখিত আয়াতটি নিঃশর্ত।
তদ্রুপ ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে মাটি ব্যবহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ধুলা দ্বারা তায়াম্মুম জাইয। কেননা তা মিহি মাটি।
তায়াম্মুমে নিয়্যত ফরয।
ইমাম যুফার [রঃআঃ]বলেন, ফরয নয়। কেননা, তায়াম্মুম ওজুর স্থলবর্তী। সুতরাং গুণের দিক থেকে তার বিপরীত হতে পারে না।
আমাদের দলীল এই যে, [আভিধানিক ভাবে] তায়াম্মুম শব্দ দ্বারা ইচ্ছা বুঝায়। সুতরাং ইচ্ছা [নিয়্যত] করা ছাড়া তা সঠিক হবে না। ( তায়াম্মুমের মাসআলা )
কিংবা মাটিকে বিশেষ অবস্থায় পবিত্রকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পানি স্বকীয়ভাবেই পবিত্রকারী। তবে যদি তাহারাতের কিংবা সালাতের বৈধ হওয়ার নিয়্যত করে তাহলে তা যথেষ্ট। হাদাছের বা জানাবাতের তায়াম্মুমের [আলাদা] নিয়্যত করা শর্ত নয়। এটিই বিশুদ্ধ মাযহাব।
কোন খৃষ্টান [বিধর্মী] যদি ইসলামের গ্রহণের নিয়্যতে তায়াম্মুম করে, তারপর ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে সে তায়াম্মুকারী গণ্য হবে না। আর আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] বলেন, সে তায়াম্মুকারী গণ্য হবে। কেননা সে একটি উদ্দিষ্ট ইবাদতের নিয়্যত করিয়াছে। পক্ষান্তরে মসজিদে প্রবেশের এবং কুরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য তায়াম্মুম করার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা এটা উদ্দিষ্ট ইবাদত নয়।
ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, তাহারাত ছাড়া বিশুদ্ধ হয় না এমন উদ্দিষ্ট ইবাদতের নিয়্যত করার অবস্থা ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে মাটিকে পবিত্রকারী সাব্যস্ত করা হয়নি। আর ইসলাম হলো এমন উদ্দিষ্ট ইবাদত যা তাহারাত ছাড়া বিশুদ্ধ হয়।তিলাওয়াতের সিজদার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা এমন উদ্দিষ্ট ইবাদত, যা তাহারাত ছাড়া বিশুদ্ধ হয় না।
আর যদি সে ইসলাম গ্রহণের নিয়্যত না করেই ওজু করে তারপর ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে সে ওজুকারী গণ্য হবে। নিয়্যত শর্ত হওয়ার ভিত্তিতে ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] ভিন্নমত পোষণ করেন। কোন মুসলমান যদি তায়াম্মুম করে তারপর আল্লাহ না করুন মুরতাদ হয়ে যায় তার পর পুনঃইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তার পূর্ব তায়াম্মুম অক্ষুণ্ন থাকবে।
ইমাম যুফার [রঃআঃ] বলেন, তার তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। কেননা কুফর তায়াম্মুমের বিপরীতধর্মী। সুতরাং এতে প্রথম অবস্থা ও শেষ অবস্থা উভয়ই সমান হবে। যেমন বিবাহের ক্ষেত্রে হারাম হওয়ার ব্যাপার।
আমাদের দলীল এই যে, [তায়াম্মুম তো আর স্ব-সত্তায় বিদ্যমান থাকে না যাকে কুফর এসে দূর করে দিবে, বরং] তায়াম্মুমের পর ব্যক্তির মাঝে পবিত্র হওয়ার গুণই বিদ্যমান থাকে।সুতরাং তার উপর কুফর আরোপিত হলে তা পবিত্রতার বিপরীতধর্মী নয়। যেমন, ওজুর উপর যদি কুফর আরোপিত হয়।
উল্লেখ্য যে, কাফিরের নিয়্যত গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণে প্রাথমিক অবস্থায় তার তায়াম্মুম দুরস্ত হয় না।
ওজু ভংগকারী সকল বিষয় তায়াম্মুমও ভংগ করে। কেননা, তায়াম্মুম ওজুর স্থলবর্তী। সুতরাং তা ওজুর হুকুম গ্রহণ করিবে।
আর পানির দেখা পাওয়াও তায়াম্মুম ভংগ করে; যদি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। কেননা পানি পাওয়া দ্বারা ব্যবহার সক্ষমতাই হচ্ছে উদ্দেশ্য। যে প্রাপ্যকে মাটির পবিত্রীকরণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
হিংস্র প্রাণী, শত্রু বা পিপাসার আশংকায় শংকিত ব্যক্তি কার্যতঃ অক্ষম। আর আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে ঘুমন্ত ব্যক্তি বস্তুত সক্ষম। তার মতে তায়াম্মুমকারী ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় পানির নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তার তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। [পানি দেখতে পাওয়া] অর্থ হলো ঐ পরিমাণ [পানি] যা ওজুর জন্য যথেষ্ট হয়। কেননা প্রথম অবস্থায়ই এর চেয়ে কম পরিমাণ ধর্তব্য নয়। সুতরাং শেষ অবস্থায়ও তা ধর্তব্য হবে না।
পবিত্র মাটি ছাড়া তায়াম্মুম করিবে না। কেননা আয়াতের শব্দ দ্বারা পবিত্র বুঝানো হয়েছে। তা ছাড়া মাটি হলো পবিত্রীকরণের উপাদান। সুতরাং পানির মতো তার পবিত্র হওয়া জরুরী।
পানি যে পাচ্ছে না, অথচ পাওয়ার আশা করছে, তার জন্য আখেরি ওয়াকত পর্যন্ত নামাজ বিলম্বিত করা মুসতাহাব। তারপর পানি পেয়ে গেলে ওজু করিবে; অন্যথায় তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করে নিবে।
যাতে দুটি পবিত্রতার পূর্ণতমটি দ্বারা নামাজ সম্পাদন হয়। সুতরাং বিষয়টি জামাআত পাওয়ার আশায় অপেক্ষমান ব্যক্তির মতো হলো। ( তায়াম্মুমের মাসআলা )
মূল ছয় গ্রন্থের বহির্ভূত বর্ণনা মতে ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে বিলম্ব করা ওয়াজিব। কেননা প্রবল ধারণা বাস্তবতুল্য।
যাহেরুর রিওয়ায়াতের দলীল এই যে, অপারগতা প্রকৃতই বর্তমান। সুতরাং অনুরূপ নিশ্চয়তা ছাড়া অপারগতার বিধান রহিত হবে না।
তায়াম্মুমকারী তার তায়াম্মুম দ্বারা যত ইচ্ছা ফরয, নফল নামাজ আদায় করতে পারবে।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর মতে প্রতিটি ফরয সালাতের জন্য আলাদা করতে হবে। কেননা, তা জরুরী অবস্থার তাহারাত।
আমাদের দলীল এই যে, পানির অনুপস্থিতিতে মাটি পবিত্রকারী। সুতরাং যতক্ষণ তার শর্ত বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ তা কার্যকর থাকবে।
শহর এলাকায় যদি জানাযা উপস্থিত হয় এবং [জানাযার] ওয়ালী সে ছাড়া অন্য কেউ হয়, আর ওজু করতে গেলে জানাযা ফউত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তাহলে সুস্থ ব্যক্তি তায়াম্মুম করতে পারবে। কেননা জানাযার কাযা নেই। সুতরাং অক্ষমতা সাব্যস্ত হয়।
অনুরূপ ভাবে যে ব্যক্তি ঈদের জামাআতে হাযির হল এবং ওজু করতে গেলে ঈদের নামাজ ফউত হয়ে যাওয়ার আশংকা করে, তবে তায়াম্মুম করতে পারে। কেননা ঈদের জামাআত দোহরানো হয় না।
ইমাম কুদূরী [রঃআঃ] এর বক্তব্য আর ওয়ালী সে ছাড়া অন্য কেউ কথাটির উদ্দেশ্য হল, ওয়ালীর জন্য তায়াম্মুম করা জাইয নয়। এটি ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] থেকে ইমাম হাসান ইবন যিয়াদের বর্ণনা। এবং এটাই শুদ্ধ। কেননা, ওয়ালীর অধিকার আছে নামাজ দোহরনোর। সুতরাং তার পক্ষে ফউত প্রযোজ্য নয়।
ইমাম কিংবা মুকতাদী যদি ঈদের সালাতের [মধ্যে] হাদাছগ্রস্ত হয়। তাহলে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে সে তায়াম্মুম করিবে এবং বিনা করিবে। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, সে তায়াম্মুম করতে পারবে না। কেননা ব্যক্তি ইমামের ফারেগ হওয়ার পর অবশিষ্ট নামাজ আদায় করতে পারে। সুতরাং তার ফউত হওয়ার আশংকা নেই।
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে আশংকা বিদ্যমান আছে। কেননা সেদিন হলো ভিড়ের দিন। ফলে এমন কোন পরিস্থিতি উদ্ভূত হতে পারে, যা তার নামাজ ফাসিদ করার কারণ হয়ে দাড়াবে।
এ মত পার্থক্য ঐ ক্ষেত্রে , যখন ওজু দ্বারা নামাজ শুরু করে থাকে। আর তায়াম্মুম দ্বারা শুরু করে থাকলে সকলের মতেই তায়াম্মুম বিনা করিবে। কেননা যদি আমরা তার উপর ওজু ওয়াজিব করি, তাহলে সালাতের মধ্যে সে পানি পেয়ে গেছে বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় তো নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে।
জুমুআর সালাতের ব্যাপারে যদি আশংকা করে যে, ওজু করলে তা ফউত হয়ে যাবে, তাহলেও তায়াম্মুম করিবে না। বরং [ওজু করার পর] যদি জুমুআর নামাজ পায় তাহলে জুমুআ আদায় করিবে। অন্যথায় চার রাকাআত যুহর আদায় করিবে। কেননা তা স্থলবর্তী রেখে ফউত হয়। আর তা হল যুহরের নামাজ। আর ঈদের নামাজ এর বিপরীত।
তদ্রুপ যদি ওজু করার ব্যাপারে সালাতের সময় ফউত হওয়ার আশংকা করে তাহলে তায়াম্মুম করতে পারবে না; বরং ওজু করিবে এবং যে নামাজ ফউত হয়েছে তা কাযা করিবে। কেননা এ নামাজ স্থলবর্তী রেখে ফউত হচ্ছে। আর তা হলো কাযা।
মুসাফির যদি তার বাহনে রক্ষিত পানির কথা ভুলে যায় এবং তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করে নেয়। এর পরে পানির কথা স্মরণ হয়, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে উক্ত নামাজ দোহরাবে না। আর আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] বলেন, উক্ত নামাজ দোহরাবে।
এ মত-পার্থক্য হলো ঐ অবস্থায়, যখন পানি সে নিজে কিংবা তার নির্দেশে অন্য কেউ রেখে থাকে। ওয়াকতের ভিতরে এবং ওয়াকতের পরে স্মরণ হওয়ার একই হুকুম।
ইমাম আবূ ইউসূফের দলীল এই যে, সে পানিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সুতরাং সে হলো ঐ ব্যক্তির মত, যে তার বাহনে রাখা কাপড়ের কথা ভুলে যায়। তাছাড়া মুসাফিরের বাহনে সাধারণতঃ পানির মওজুদ রাখা হয়; সুতরাং পানির খোঁজ করা ফরয।
ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, জানা না থাকলে সক্ষমতা প্রয়োজন হয় না। আর পানির প্রাপ্তির দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য। আর বাহনে [সাধারণত] খাওয়ার পানি রাখা হয়, ব্যবহারের জন্য নয়।
আর বস্ত্রের মাসআলাটিরও অনুরূপ মতপার্থক্য রয়েছে। আর যদি এ মাসআলায় ঐকমত্যও থাকে, তাহলে উভয় মাসআলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সতরের ফরয ফউত হচ্ছে স্থলবর্তীহীন ভাবে। আর পানি দ্বারা তাহারাত এর বিষয়টি ফউত হচ্ছে একটি স্থলবর্তী রেখে, আর তা হলো তায়াম্মুম।
তায়াম্মুমকারীর অন্তরে যদি প্রবল ধারণা হয় যে, কাছেই পানি আছে, তবে তার জন্য পানির খোঁজ নেওয়া জরুরী নয়। কেননা বিশাল প্রান্তরে পানি না থাকারই সম্ভাবনা বেশী। আর পানির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ বিদ্যমান নেই। সুতরাং সে ব্যক্তি পানিপ্রাপ্ত নয়।
আর যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, সেখানে পানি আছে, তাহলে খোঁজ না নিয়ে তায়াম্মুম করা তার জন্য জাইয হবে না। কেননা [প্রবল ধারণা-জনিত] প্রমাণের প্রেক্ষিতে সে পানিপ্রাপ্ত বল সাব্যস্ত হবে। তবে পানির অনুসন্ধানের ব্যাপার এক তীরের দূরত্ব পর্যন্ত [কেউ কেউ বলেন, অর্থাত্ তিনশ গজ] খোজ করিবে। এক মাইল দূরত্ব পর্যন্ত যেতে হবে না, যাতে সে তার কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে।
যদি তার সফর সংগীর কাছে পানি থাকে, তাহলে তায়াম্মুমের আগে তার কাছে পানি চাইবে। কেননা, সাধারণত পানি দিতে অসম্মতি থাকে না। যদি সে তাকে পানি না দেয় তাহলে অপারগতা সাব্যস্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে তায়াম্মুম করে নিবে।
যদি চাওয়ার আগেই তায়াম্মুম করে নেয়, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে তায়াম্মুম তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা অন্যের মালিকানা থেকে চাওয়া জরুরী নয়।
ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, তায়াম্মুম তার জন্য যথেষ্ট হবে না। কেননা পানি সাধারণতঃ এমনিই দেওয়া হয়ে থাকে।
যদি ন্যায্য মূল্য ছাড়া দিতে অস্বীকার করে আর তার কাছে পানির মূল্য থেকে থাকে তাহলে তার জন্য তায়াম্মুম যথেষ্ট হবে না। সক্ষমতা সাব্যস্ত হওয়ার কারণে। তবে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্য বহন করা তার জন্য জরুরী নয়। কেননা ক্ষতিগ্রস্ততা হুকুম রহিতকারী। আল্লাহই অধিক জানেন। ( তায়াম্মুমের মাসআলা )
Leave a Reply