তাকদীর । দুআ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।

তাকদীর । দুআ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।

তাকদীর । দুআ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না, এই অধ্যায়ে মোট ২৫ টি হাদীস (২১৩৩-২১৫৭) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-৩০ঃ তাকদীর, অনুচ্ছেদঃ (১-১৯)=১৯টি

১. অনুচ্ছেদঃ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করা নিষেধ
২. অনুচ্ছেদঃ আদম [আঃ] ও মূসা [আঃ]-এর পারস্পরিক বিতর্ক
৩. অনুচ্ছেদঃ সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য
৪. অনুচ্ছেদঃ আমল শেষ অবস্থার উপর নির্ভরশীল
৫. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক শিশু প্রকৃতিগত স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে
৬. অনুচ্ছেদঃ দুআ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।
৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তাআলার দুই আঙ্গুলের মধ্যে সমস্ত অন্তর অবস্থিত
৮. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের জন্য একটি করে গ্রন্থ আল্লাহ তাআলা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
৯. অনুচ্ছেদঃ রোগ সংক্রমণ, প্যাঁচার ডাক বা সফর মাস প্রসঙ্গে অশুভ ধারণা ঠিক নয়
১০. অনুচ্ছেদঃ তাক্বদীর ও তার ভাল-মন্দের উপর ঈমান
১১. অনুচ্ছেদঃ যে স্থানে যার মৃত্যু অবধারিত, তার সে স্থানেই মৃত্যু হইবে।
১২. অনুচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁক বা ঔষধ কোন কিছুই আল্লাহ নির্ধারিত অনুচ্ছেদঃ রদ করিতে পারে না
১৩. অনুচ্ছেদঃ তাকদীরে অবিশ্বাসী কাদারিয়াদের প্রসঙ্গে
১৪. অনুচ্ছেদঃ বার্ধক্য ও মৃত্যুর বিপদ অনতিক্রম্যনীয়
১৫. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা
১৬. অনুচ্ছেদঃ ভাগ্য অবিশ্বাসীদের পরিনতি
১৭. অনুচ্ছেদঃ ভাগ্য অবিশ্বাসীদের উপর আল্লাহ ও নাবীগনের অভিসম্পাত
১৮. অনুচ্ছেদঃ [আসমান-যামীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে ]
১৯. অনুচ্ছেদঃ [তাক্বদীর প্রসঙ্গে]

১. অনুচ্ছেদঃ  বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করা নিষেধ

২১৩৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন একসময় আমাদের সামনে এসে দেখলেন যে, আমরা অনুচ্ছেদঃ  বিষয়ক তর্কে-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি। তিনি ভীষণ রাগান্বিত হলেন, এতে তাহাঁর মুখমন্ডল এমন লালবর্ণ ধারণ করিল যেন তাহাঁর দুই গালে ডালিম নিংড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি এজন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছ, না আমি তোমাদের প্রতি এটা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি? এ বিষয়ে তোমাদের পূর্ববর্তী জনগণেরা যখনই বাক-বিতন্ডা করেছে তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তোমাদেরকে বলছিঃ তোমরা এ বিষয়ে কখনো যেন বিতর্কে লিপ্ত না হও।

হাসান, মিশকাত [৯৮,৯৯]। আবু ঈসা বলেন, উমার, আইশা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ বিষয়ে সালিহ আল-মুররীর বর্ণনা ব্যতীত আর কিছু জানি না। তার আরো কিছু গারীব পর্যায়ভুক্ত একক বর্ণনা আছে। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ আদম [আঃ] ও মূসা [আঃ]-এর পারস্পরিক বিতর্ক

২১৩৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [রূহ্ জগতে] আদম [আঃ] ও মূসা [আঃ] পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হন। মূসা [আঃ] আদম [আঃ]-কে বলেনঃ আপনি তো সেই আদম, যাঁকে আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে বানিয়েছেন এবং আপনার মধ্যে তাহাঁর রূহ্ সঞ্চার করিয়াছেন। আর আপনিই মানবজাতির বিপথগামী ও তাহাদেরকে জান্নাত হইতে বহিষ্কারের কারণ হলেন? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তারপর আদম [আঃ] বললেনঃ আপনিই তো মূসা, আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে মনোনীত করিয়াছেন। আপনি এরূপ একটি কাজের জন্য আমাকে অভিযুক্ত করছেন, যা করার সিদ্ধান্তকে আল্লাহ তাআলা আসমান-যামীন সৃষ্টির পূর্বেই আমার জন্য লিখে রেখেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তারপর সেই বিতর্কে আদম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর বিজয়ী হন।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৮০], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, উমার ও জুনদাব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং সুলাইমান আত-তাইমী-আমাশের সূত্রে গারীব। আর আমাশের কিছু শিষ্য-আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একইরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর কিছু বর্ণনাকারী আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য

২১৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.] প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমলের ক্ষেত্রে আপনার অভিমত কি? আমরা যেসব কাজ করি তা কি নতুনভাবে ঘটল না আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে? তিনি বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! তা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। আর সকলের করণীয় বিষয় সহজ করে রাখা হয়েছে। যারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত তারা অবশ্যই সাওয়াবের কাজ সম্পাদন করে আর যারা দুর্ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত তারা দুর্ভাগ্যজনক কাজই সম্পাদন করে থাকে।

সহীহ, যিলালুল জান্নাহ [১৬১, ১৬৭]। আবু ঈসা বলেন, আলী, হুযাইফা ইবনি উসাইদ, আনাস ও ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১৩৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে অবস্থান করছিলাম। তিনি তখন কাঠি দিয়ে মাটির মধ্যে দাগ কাটছিলেন। হঠাৎ আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে তিনি বললেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে চিহ্নিত করে বা লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়নি। তারা প্রশ্ন করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! তাহলে আমরা কি [সেই লেখার উপর] নির্ভর করে থাকবো না? তিনি বললেনঃ না, বরং কাজ সম্পাদন করিতে থাক। কেননা, যাকে যে কাজের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সেই কাজকে সহজ করে দেয়া হয়।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৭৮], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ আমল শেষ অবস্থার উপর নির্ভরশীল

২১৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলেছেন, আর তিনি তো সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃতঃ তোমাদের সকলেই তার মায়ের গর্ভে সৃষ্টির চল্লিশদিন পর্যন্ত [জমাট বাঁধা] শুক্ররূপে সমন্বিত হইতে থাকে, তারপর রক্তপিন্ডরূপে চল্লিশদিন বিদ্যমান থাকে, তারপর অনুরূপ দিনে গোশতপিন্ডের রূপ ধারণ করে। তারপর আল্লাহ তাআলা তার নিকট একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন এবং তার মধ্যে রূহ্ সঞ্চার করেন। আর চারটি বিষয়ে তাকে আদেশ করা হয়। সুতরাং তার রিযিক, মৃত্যু, তার কার্যক্রম এবং সে সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান-এই বিষয়গুলো সেই ফেরেশতা লিখে দেন। সেই সত্তার শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই! তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি জান্নাতীদের আমল করিতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এমতাবস্থায় তার সেই ভাগ্যের লেখা তার সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন জাহান্নামীদের আমলের উপর তার পরিসমাপ্তি ঘটে, ফলে সে জাহান্নামেই চলে যায়। আর তোমাদের কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের কর্ম সম্পাদন করিতে থাকে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে। এমতাবস্থায় তার সামনে ভাগ্যের সেই লেখা এসে হাযির হয় এবং জান্নাতীদের আমলের উপর তার পরিসমাপ্তি ঘটে, ফলে সে জান্নাতে চলে যায়।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৭৬], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার-ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি যাইদ ইবনি ওয়াহ্ব হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলেছেন . . . . . পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। বর্ণনাকারী বলেন, আহ্‌মাদ ইবনিল হাসানকে আমি বলিতে শুনিয়াছি, আমি আহ্মাদ ইবনি হাম্বলকে বলিতে শুনেছিঃ আমি আমার চোখে ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তানের মতো ব্যক্তিত্ব আর দেখিনি। এই সনদসূত্রে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। আমাশের সূত্রে শুবা ও সাওরীও একইরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি আলা ওয়াকী হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি যাইদ হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক শিশু প্রকৃতিগত স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে

২১৩৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার বিধানের অনুগত হিসাবেই প্রত্যেকটি সন্তান জন্ম নেয়। তারপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী, খৃষ্টান অথবা মুশ্‌রিক হিসাবে গড়ে তোলে। বলা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! যেসব সন্তান এর আগেই [শিশু থাকাবস্থায়] মৃত্যুবরণ করে? তিনি বললেনঃ তারা [জীবিত থাকলে] কি ধরনের আমল করত সে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা অধিক অবগত।

সহীহ, ইরওয়া [১২২০], বুখারী, মুসলিম। উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে আবু কুরাইব ও হুসাইন ইবনি হুরাইস হইতে, তাঁরা ওয়াকী হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে। আর এই হাদীসে “ইঊলাদু আলাল-মিল্লাতি”-এর স্থালে “ইঊলাদু আলাল ফিতরাতি” [প্রকৃতিগত স্বভাবের উপর জন্ম নেয়] বাক্য এসেছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসটি শুবা ও অন্যান্যরা আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতেও “ইঊলাদু আলাল ফিতরাতি” উল্লেখ আছে। আসওয়াদ ইবনি সারী হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ দুআ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।

২১৩৯. সালমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুআ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করিতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না।

হাসান, সহীহাহ [১৫৪]। আবু ঈসা বলেন, আবু উসাইদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান এবং সালমান [রাদি.]-এর বর্ণনা হিসাবে গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র ইয়াহ্ইয়া ইবনিয যুরাইসের সূত্রে জেনেছি। আবু মাওদূদ দুই ব্যক্তি। এ দুজনের মধ্যে একজনের নাম ফিযযাহ, আল-বাসরী যিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। অন্যজন হলেন আবদুল আযীয ইবনি আবী সুলাইমান আল-মাদানী। আর তারা ছিলেন সমসাময়িক। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তাআলার দুই আঙ্গুলের মধ্যে সমস্ত অন্তর অবস্থিত

২১৪০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই দুআ অধিক পাঠ করিতেনঃ

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ

ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাবিত কালনি আলা দিনিকা

হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত [দৃঢ়] রাখো। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা ঈমান এনেছি আপনার উপর এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার উপর। আপনি আমাদের ব্যাপারে কি কোনরকম আশংকা করেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কেননা, আল্লাহ্ তাআলার আঙ্গুলসমূহের মধ্যকার দুটি আঙ্গুলের মাঝে সমস্ত অন্তরই অবস্থিত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিবর্তন করেন।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩৮৩৪]। আবু ঈসা বলেন, নাওয়াস ইবনি সাম্আন, উম্মু সালামা, আব্দুল্লাহ্ ইবনি আমর ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। আমাশ-আবু সুফিয়ান হইতে, তিনি আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী একইরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কেউ কেউ আমাশ-আবু সুফিয়ান হইতে, তিনি জাবির [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে আবু সুফিয়ানের বর্ণিত হাদীসটি অনেক বেশি সহিহ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের জন্য একটি করে গ্রন্থ আল্লাহ তাআলা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

২১৪১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি গ্রন্থ তাহাঁর দুই হাতে নিয়ে আমাদের নিকট এসে বললেনঃ তোমরা এই দুটি গ্রন্থের ব্যাপারে কি জান? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! তবে যদি আপনি আমাদেরকে জানিয়ে দিন। তিনি তাহাঁর ডানহাতের গ্রন্থের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এটা রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হইতে একটি কিতাব। এতে জান্নাতী সকল ব্যক্তির নাম, তাহাদের বাপ-দাদার নাম ও তাহাদের গোত্রের নাম লিখা আছে। আর শেষে এর যোগফল রয়েছে এবং এতে কম-বেশি করা হইবে না। তারপর তিনি তার বামহাতের গ্রন্থের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এটাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হইতে একটি গ্রন্থ। এতে জাহান্নামী সকল ব্যক্তির নাম, তাহাদের বাপ-দাদার নাম ও গোত্রের নাম লিখা আছে। এর শেষেও যোগফল রয়েছে। এতে কখনো কমানো-বাড়ানো হইবে না। তাহাঁর সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! বিষয়টি এরূপভাবেই চূড়ান্ত হয়ে থাকলে তবে আর আমলের কি প্রয়োজন? তিনি বললেনঃ তোমরা সঠিক পথে থেকে সঠিকভাবে কাজ করিতে থাক এবং আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য হাসিলে চেষ্টা কর। কেননা, জান্নাতী লোকের শেষ মুহূর্তের আমল জান্নাতীদের আমলই হইবে, সে পূর্বে যে আমলই করুক না কেন। আবার জাহান্নামীর শেষ মুহূর্তের কাজ জাহান্নামীদের আমলই হইবে, সে পূর্বে যে আমলই করুক না কেন। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর দুইহাতে ইশারা করেন এবং কিতাব দুটি ফেলে দিয়ে বলেনঃ তোমাদের প্রভু তাহাঁর বান্দাহদের আমল চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। একদল জান্নাতে প্রবেশ করিবে আর অন্যদল জাহান্নামে প্রবেশ করিবে।

হাসান, মিশকাত [৯৬], সহীহাহ্ [৮৪৮], আয্‌যিলা-ল [৩৪৮]। কুতাইবা-বাক্‌র ইবনি মুযার হইতে, তিনি আবু কাবীল [রঃ] হইতে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের মতো হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ গারীব। আর আবু কাবীলের নাম হুয়াই ইবনি হানী। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২১৪২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যদি তাহাঁর কোন বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বললেনঃ তিনি সেই বান্দাহকে মারা যাবার আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন।

সহীহ, আর-রাওযুন নাযীর [২/৮৭], মিশকাত [৫২৮৮], আয্‌যিলা-ল [৩৯৭-৩৯৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ রোগ সংক্রমণ, প্যাঁচার ডাক বা সফর মাস প্রসঙ্গে অশুভ ধারণা ঠিক নয়

২১৪৩. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ কোন কিছুই অন্য কিছুকে সংক্রমণ করিতে পারে না। কোন এক মফস্বলের লোক বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! যে উটের লিঙ্গে চর্মরোগ আছে সে তো সব উটকেই চর্মরোগাক্রান্ত করে ফেলে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে প্রথম উটটিকে কে চর্মরোগাক্রান্ত করেছিল? ছোঁয়াচে রোগ বলিতে কিছু নেই এবং সফর মাসকেও অশুভ বলে ভাবার মতো কিছু নেই। আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তার জীবনকাল, রিযিক ও বিপদাপদ সবকিছু লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন।

সহীহ, সহীহাহ্ [১১৫২]। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আমি মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি সাফওয়ান আস-সাকাফী আল-বাসরীকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনিল মাদীনীকে বলিতে শুনেছিঃ আমি রুকনে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শপথ করে বলিতে পারি যে, আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্‌দী হইতে অধিক বড় আলিম আমি আর দ্বিতীয়জন দেখিনি। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ তাক্বদীর ও তার ভাল-মন্দের উপর ঈমান

২১৪৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দাহই মুমিন হইতে পারবে না যে পর্যন্ত না সে তাক্বদীর ও তার ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে। এমনকি তার নিশ্চিত বিশ্বাস থাকতে হইবে যে, যা কিছু ঘটেছে তা কিছুতেই অঘটিত থাকত না এবং যা কিছু ঘটে নাই তা কখনোও তাকে স্পর্শ করিবে না।

সহিহ, সহীহাহ্ [২৪৩৯]। আবু ঈসা বলেন, উবাদা, জাবির ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনি মাইমূনের সূত্রেই জেনেছি। আর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবনি মাইমূন মুনকার [প্রত্যাখ্যাত]। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১৪৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোকই ঈমানদার হইতে পারবে না যে পর্যন্ত না সে চারটি বিষয়ের উপর ঈমান আনবেঃ [১] সে এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল, তিনি আমাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করিয়াছেন; [২] মৃত্যুর উপর ঈমান আনবে; [৩] মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে ঈমান আনবে এবং [৪] তাক্বদীরের উপর ঈমান আনবে।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৮১]। মাহমূদ ইবনি গাইলান-নাযার ইবনি শুমাইল হইতে, তিনি শুবা [রঃ] হইতে উপরের হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এই সূত্রে রিবঈ জনৈক লোকের সূত্রে আলী [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, নাযারের বর্ণিত হাদীসের চাইতে আবু দাঊদ কর্তৃক শুবা [রাহঃ]-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি অনেক বেশি সহিহ। মানসূর-রিবঈ হইতে, তিনি আলী [রাদি.]-এর সূত্রে আরো একাধিক বর্ণানাকারী অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। জারূদ আমাদেরকে বলেছেন, আমি ওয়াকীকে বলিতে শুনেছিঃ আমি অবগত হয়েছি যে, রিবঈ ইবনি হিরাশ [খিরাশ] তার ইসলামী জীবনে কখনোও একটি মিথ্যা কথাও বলেননি। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ যে স্থানে যার মৃত্যু অবধারিত, তার সে স্থানেই মৃত্যু হইবে।

২১৪৬. মাতার ইবনি উকামিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যখন যে জায়গায় কারো মৃত্যু হওয়ার ফায়সালা করেন, তখন ঐ জায়াগায় গমনের উদ্দেশ্যে তার কোন প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।

সহীহ, মিশকাত [১১০], সহীহাহ্[১২২১] আবু ঈসা বলেন, আবু আয্যা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে মাতার ইবনি উকামিস [রাদি.]-এর এই হাদীসটি ছাড়া আর কোন হাদীস আছে বলে আমাদের জানা নেই। উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস মাহ্‌মূদ ইবনি গাইলান মুআম্মাল ও আবু দাঊদ আল-হুফারী-সুফিয়ান [রঃ]-এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১৪৭. আবু আয্‌যা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা কোন জায়গায় কোন বান্দাহর মৃত্যু হওয়া অবধারিত করেন তখন তার জন্য সেই জায়াগায় যাওয়ার প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।

সহীহ , দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহিহ। আবু আয্‌যা [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহচর্য পেয়েছেন। তার নাম ইয়াসার ইবনি আব্‌দ। আবুল মালিহ-এর নাম আমির ইবনি উসামা ইবনি উমাইর আল-হুযালী। তিনি যাইদ ইবনি উসামা নামেও পরিচিত। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁক বা ঔষধ কোন কিছুই আল্লাহ নির্ধারিত অনুচ্ছেদঃ  রদ করিতে পারে না

২১৪৮. আবু খিযামা [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বলেন, আমরা এই যে ঝাড়ফুঁক করাই বা ঔষধ ব্যবহারে চিকিৎসা গ্রহণ করি বা অন্য কোন উপায়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেই এগুলো কি আল্লাহ্ তাআলা নির্ধারিত ভাগ্যের কিছু বাতিল করিতে পারে বলে আপনি মনে করেন? তিনি বললেনঃতোমাদের এসব চেষ্টা-তদবীরও আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত ভাগ্যের অন্তর্গত।

যঈফ, [১৯৮৩] নং হাদীস পূর্বে আলোচিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি যুহ্‌রী ব্যতীত আরো কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমরা জানি না। অবশ্য একাধিক রাবী এ হাদীসটি সুফিয়ান [রঃ]-এর সূত্রে যুহরী হইতে তিনি আবু খিযামা হইতে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এ বর্ণনাটি অনেক বেশী সহীহ। আর অনেকেই যুহ্‌রী [রঃ] হইতে তিনি আবু খিযামা হইতে তার পিতার সূত্রে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ তাকদীরে অবিশ্বাসী কাদারিয়াদের প্রসঙ্গে

২১৪৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের দুই ধরনের লোক, যাদের জন্য ইসলামের কোন অংশ নেইঃ মুরজিআ ও কাদারিয়া।

যঈফ, মিশকাত [১০৫] আয্‌যিলাল [৩৩৪, ৩৩৫], আবু ঈসা বলেন, এই অনুচ্ছেদে উমার, ইবনি উমার ও রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটি হাসান গারীব। মুহাম্মাদ ইবনি রাফি-মুহাম্মাদ ইবনি বিশর হইতে তিনি সাল্লাম ইবনি আবু আমরাহ হইতে তিনি ইকরিমা হইতে তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি রাফি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি বিশর-আলী ইবনি নিযার হইতে তিনি নিযার হইতে তিনি ইকরিমা হইতে তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উপরে বর্ণিত হাদীসের মত বর্ণনা করিয়াছেন। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ বার্ধক্য ও মৃত্যুর বিপদ অনতিক্রম্যনীয়

২১৫০. আব্দুল্লাহ [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতা শিখ্‌খীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম-সন্তানের রূপক আকৃতির সাথে তার পাশেই থাকে নিরানব্বই ধরনের মৃত্যু সংঘটিত হওয়ার মতো বিপদ। সে এ সকল বিপদ অতিক্রম করে যেতে পারলে উপনীত হয় বার্ধক্যে, অবশেষে মারা যায় [বার্ধক্য ও মৃত্যুর বিপদ হইতে আর মুক্তি পায় না]।

হাসান, মিশকাত [১৫৬৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এই সূত্র ব্যতীত হাদীসটি প্রসঙ্গে আমাদের জানা নেই। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা

২১৫১. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম-সন্তানের জন্য আল্লাহ যা ফায়সালা করে রেখেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকাই হল তার সৌভাগ্য। আর আল্লাহ তাআলার নিকট কল্যান প্রার্থনা করা ছেড়ে দেয়াই হচ্ছে তার দুর্ভাগ্য এবং আল্লাহ তাআলার ফায়সালার উপর নাখোশ হওয়াও তার দুর্ভাগ্য।

যঈফ, যঈফা [১৯০৬], তালীকুর রাগীব [১/২৪৪], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র মুহাম্মাদ ইবনি আবু হুমাইদের সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। তাকে হাম্মাদ ইবনি আবু হুমাইদও বলা হয়। তিনি হলেন আবু ইবরাহীম আল-মাদানী। হাদীসবেত্তাদের মতে তিনি তেমন মজবুত রাবী নন। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ ভাগ্য অবিশ্বাসীদের পরিনতি

২১৫২. নাফি [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট একটি লোক এসে বলিল, অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, আমি জানতে পারলাম, সে নাকি বিদআতী। সে যদি প্রকৃতপক্ষেই তা-ই হয় তাহলে আমার পক্ষ হইতে তাকে সালাম বলবে না। কেননা, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের কাদারিয়া তাক্বদীর অস্বীকারকারী আকীদা পোষনকারীদের মধ্যে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি ঘটবে।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [৪০৬১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। আবু সাখরের নাম হুমাইদ ইবনি যিয়াদ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২১৫৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে ভাগ্য অবিশ্বাসীদের উপর ভূমিধস ও চেহারা বিকৃতির বিপদ সংঘটিত হইবে।

হাসান, সহীহাহ [৪/৩৯৪]। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ ভাগ্য অবিশ্বাসীদের উপর আল্লাহ ও নাবীগনের অভিসম্পাত

২১৫৪. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ছয় শ্রেণীর লোককে আমি অভিসম্পাত করছি। আল্লাহ তাআলা এবং সকল নাবী [আঃ] এদেরকে অভিসম্পাত করিয়াছেন। তারা হলঃ আল্লাহ তাআলার কিতাবের বিকৃতিসাধনকারী, আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত অনুচ্ছেদঃ  অস্বীকারকারী, আল্লাহ যাকে অপদস্ত করিয়াছেন তাকে সম্মানিত করার এবং যাকে ইজ্জত দিয়েছেন তাকে অপমান করার জন্য ক্ষমতা দখলকারী, আল্লাহ তাআলার হেরেমে [হেরেম শরীফে] রক্তপাতকারী, আমার বংশধরের রক্তপাত আল্লাহ তাআলা যা হারাম করিয়াছেন তার রক্তপাতকারী এবং আমার প্রদর্শিত পথ [সুন্নাত] ত্যাগকারী।

যঈফ, যিলালুল জুন্নাহ্‌ [৪৪], আবু ঈসা বলেন, আবদুর রহমান ইবনি আবুল মাওয়ালী উপরোক্ত হাদীস উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি মাওহিব হইতে তিনি আমরাহ্‌ হইতে তিনি আইশা [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। সুফিয়ান সাওরী, হাফ্‌স ইবনি গিয়াস প্রমুখ-উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি মাওহিব হইতে তিনি আলী ইবনিল হুসাইন হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীস মুরসালরুপে বর্ণনা করিয়াছেন এবং এই সূত্রটিই বেশী সহীহ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২১৫৫. আব্দুল ওয়াহিদ ইবনি সুলাইম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আমি মক্কায় যাওয়ার পর আতা ইবনি আবী বাবাহ্‌র সাথে দেখা করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবু মুহাম্মদ! বাসরায় বসবাসকারীরা তো ভাগ্য সম্পর্কে এ ধরনের অস্বীকারমূলক কথাবার্তা বলছে। তিনি বলিলেন, হে বৎস! তুমি কি কুরআন তিলাওয়াত কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহলে সূরা যুখরুফ তিলাওয়াত কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন এ আয়াত পথ করলাম “হা-মীম। সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমরা তা অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআনরূপে, যাতে তোমরা তা উপলদ্ধি করিতে পার। তা সংরক্ষিত রয়েছে আমার নিকট একটি মূল কিতাবে, এতো অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন মহান বিজ্ঞানময়” [সু-রাদি. যুখরুফ – ১-৪]। তিনি প্রশ্ন করেন, তুমি জান, মূল কিতাব কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলিলেন, তা একটি মহাগ্রন্থ যা আল্লাহ তাআলা আসমান-যমীন সৃষ্টির আগেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তাতে এ কথা লিখা আছে যে, ফিরআউন জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। আর তাতে এ কথাও লিখা আছে যে, আবু লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সে নিজেও ধ্বংস হয়েছে। আতা [রঃ] বলেন, তারপর আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অন্যতম সাহাবী উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.]-এর ছেলে ওয়ালীদের সাথে দেখা করে তাকে প্রশ্ন করি, আপনার পিতা তার মৃত্যুকালে আপনাকে কি কি উপদেশ দিয়ে গেছেন? তিনি বলিলেন, তিনি আমাকে সামনে ডেকে বলিলেন, হে বৎস! আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর আর জেনে রাখ, যে পর্যন্ত তুমি আল্লাহ তাআলার উপর বিশ্বাস না আনবে এবং ভাগ্য ও তার ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস না আনবে তুমি সে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার ভয় অর্জন করিতে সক্ষম হইবে না। এ বিশ্বাস ব্যতীত তোমার মৃত্যু হলে তুমি জাহান্নামী হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে আদেশ করেনঃ লিখ। কলম বলিল, কি লিখব? তিনি বললেনঃ তাক্বদীর লিখ, যা হয়েছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত যা হইবে সবকিছুই।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [১৩৩], তাখরীজুত্‌ ত্বাহাবীয়াহ [২৩২], মিশকাত [৯৪], আয্‌যিলাল [১০২, ১০৫]। আবু ঈসা বলেন, উপরোক্ত সনদসূত্রে এ হাদীসটি গারীব। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ [আসমান-যামীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে ]

২১৫৬. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহ ও যামীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই মাখলূকাতের ভাগ্য নির্ধারণ করিয়াছেন।

সহীহ, মুসলিম [৮/৫১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ [তাক্বদীর প্রসঙ্গে]

২১৫৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরাইশ মুশরিকগণ কোন একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসে। তারা ভাগ্যের ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করছিল। তখন এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়ঃ

‏يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ * إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ

“যেদিন তাহাদেরকে উপুর করে জাহান্নামে টেনে নিয়ে যাওয়া হইবে, [আর বলা হইবে] জাহান্নামের যন্ত্রণার স্বাদ গ্রহণ কর। আমরা প্রতিটি বস্তু নির্ধারিত পরিমাণে [ভাগ্য] সৃষ্টি করেছি” [সুরাদি. কামার – ৪৮-৪৯ ]।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৮৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তাকদীর – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Tags:

Comments

One response to “তাকদীর । দুআ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।”

Leave a Reply