তাওয়াফ করা , মক্কায় প্রবেশ, হাজরে আসওয়াদ, সাফা ও মারওয়া
তাওয়াফ করা , মক্কায় প্রবেশ, হাজরে আসওয়াদ, সাফা ও মারওয়া >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১১, অনুচ্ছেদঃ ৪৬-৫৭=১২টি
অনুচ্ছেদ-৪৬ঃ মাক্কাহ্য় প্রবেশ করা
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলে দুহাত তোলা
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
অনুচ্ছেদ–৪৯ঃ রুকুনগুলোকে চুম্বন করা
অনুচ্ছেদ–৫০ঃ ফার্য তাওয়াফের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ তাওয়াফের সময় কাঁধের উপর চাদর রাখা
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ রমল করার পদ্ধতি
অনুচ্ছেদ-৫৩ঃ তাওয়াফকালে দুআ পাঠ করা
অনুচ্ছেদ–৫৪ঃ আসর সলাতের পর তাওয়াফ করা
অনুচ্ছেদ-৫৫ঃ কিরান হাজ্জকারীর তাওয়াফের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ–৫৬ঃ মুলতাযাম [কাবার দরজা হইতে হাতীম পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানকে জড়িয়ে ধরা]
অনুচ্ছেদ–৫৭ঃ সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ [সাঈ] করা
অনুচ্ছেদ-৪৬ঃ মাক্কাহ্য় প্রবেশ করা
১৮৬৫. নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি উমার [রাদি.] মক্কায় এসে যি-তুয়া নামক স্থানে ভোর পর্যন্ত রাত যাপন করিতেন এবং গোসল করে পরে দিনের বেলা মক্কায় প্রবেশ করিতেন। আর তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী [সাঃআঃ] এরূপই করেছেন। {১৮৬৫}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৬৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] সানিয়্যাতুর উলইয়া দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করিতেন এবং সানিয়্যাতুস সুফলা দিয়ে মাক্কাহ হইতে বের হইতেন। {১৮৬৬}
সহিহ। আবদুল্লাহ ইবনি জাফর আল-বারমাকীর বর্ণনায় আছে ঃ এ দুটী স্থান মক্কার দুটি উচুঁ টিলা। তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৬৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যুল-হুলাইফার বৃক্ষের পথ দিয়ে মাক্কাহ হইতে বের হইতেন এবং যুল-হুলাইফার মুআররাসের [মাসজিদের] পথে প্রবেশ করিতেন। {১৮৬৭}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৬৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কাহ বিজয়ের বছর কাদা নামক স্হান দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন এবং উমরাহ করার সময় কুদা নামক স্হানের পথে প্রবেশ করেছেন। আর উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ দুটি স্হান দিয়েই মক্কায় প্রবেশ করিতেন এবং অধিকাংশ সময় কুদা নামক স্থান দিয়েই প্রবেশ করিতেন, যা তার বাড়ির অধিক নিকটবর্তী ছিল। {১৮৬৮}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৬৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যখন মক্কায় প্রবেশ করার সময় এর উচ্চভূমি দিয়ে প্রবেশ করিতেন এবং নিম্নভূমি দিয়ে বের হইতেন। {১৮৬৯}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলে দুহাত তোলা
১৮৭০. আল–মুহাজির আল মাক্কী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে এমন ব্যাক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলো, যে বায়তুল্লাহ দেখলে দুই হাত উত্তোলন করে। তিনি বলেন, ইয়াহুদী ছাড়া অন্য কাউকে আমি এরূপ করিতে দেখিনি। আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে হাজ্জ করেছি, কিন্তু তিনি এরূপ করেননি। {১৮৭০}
দুর্বল ঃ মিশকাত [২৫৭৪ ], যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [১৫০/৮৬৩], যয়ীফ সুনান নাসায়ী [১৮৫/২৮৯৫]। {১৮৭০} তিরমিজি, নাসাঈ, দারিমী। সনদের মুহাজির সম্পর্কে হাফিয বলেন ঃ মাকবুল। আবু হাতিম বলেন, তিনি মাশহুর নন। ঈমাম খাত্তাবী বলেন,তাহাকে সাওরী ,ইবনিল মুবারক ও আহমাদ যয়ীফ বলিয়াছেন।কারন তাহাদের নিকট তিনি মাজহুল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৭১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিন নাবী [সাঃআঃ] মক্কায় প্রবেশ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিলেন এবং মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকআত সলাত আদায় করিলেন। {১৮৭১}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৭২.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মাদীনাহ থেকে] আগমন করে মক্কায় প্রবেশ করিলেন, এরপর হাজরে আসওয়াদের নিকটবর্তী হয়ে তাতে চুমু খেলেন এবং বায়তুল্লাহ তওয়াফ করিলেন। অতঃপর সাফা পাহাড়ের চুড়ায় উঠলেন এবং সেখান থেকে বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলেই তিনি দুই হাত উত্তলোন করে যতক্ষন ইচ্ছে মহান আল্লাহর যিকির করিলেন এবং দুআ করিলেন। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, এ সময় সিঁড়ির পাথর তার নীচে ছিলো। হাশিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সেখানে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাহাঁর ইচ্ছেমত দুআ করেন। {১৮৭২}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
১৮৭৩. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকটবর্তী হয়ে তাতে চুমা দিয়ে বলিলেন, আমি জানি, তুমি একটি পাথর মাত্র। তোমার মধ্যে উপকার বা ক্ষতি করার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তোমায় চুমা দিতে না দেখতাম তাহলে আমি কখন তোমাকে চুমা দিতাম না। {১৮৭৩}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৪৯ঃ রুকুনগুলোকে চুম্বন করা
১৮৭৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দুটি রুকনে ইয়ামানী ছাড়া বায়তুল্লাহর অন্য কিছুকে স্পর্শ করিতে দেখিনি। {১৮৭৪}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৭৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আয়িশাহ [রাদি.]-এর উক্তির উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, হাতীমের কিছু অংশ বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। তাই ইবনি উমার [রাদি.] বলিয়াছেন, আল্লাহর শপথ! আমার বিশ্বাস, এ কথা আয়িশাহ [রাদি.] রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] কাছ থেকে শুনেছেন। সুতরাং আমার মনে হয়, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাজরে আসওয়াদের নিকটস্হ দুটি [শামী] রুকনে চুমা খাওয়া বর্জন করেছিলেন এজন্য যে, তা ঘরের মুল ভিটির অংশ ছিলো না। আর লোকেরাও এ কারণেই হাতীমের পিছন দিয়ে তাওয়াফ করেন। {১৮৭৫}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৭৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যেক তাওয়াফে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের চুমা খাওয়া পরিত্যাগ করেননি। তিনি [নাফি] বলেন, তাই ইবনি উমার [রাদি.] এরূপ করিতেন। {১৮৭৬}
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–৫০ঃ ফার্য তাওয়াফের বর্ণনা
১৮৭৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি উটে সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন এবং লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন। {১৮৭৭}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৭৮. সাফিয়্যাহ বিনতু শাইবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিরাপদ হওয়ার পর তাহাঁর উটে সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং তাহাঁর হাতের লাঠির সাহা্য্যে [ইশারায়] হাজরে আসওয়াদে চুমা দিলেন। সাফিয়্যাহ বলেন, আমি এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখেছিলাম। {১৮৭৮}
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৮৭৯. আবুত তুফাইল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে তার সওয়ারীতে চড়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিতে দেখেছি। তিনি তাহাঁর লাঠির সাহায্যে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর তাতে চুমু দিয়েছেন। মুহাম্মদ ইবনি রাফির বর্ণনায় রয়েছে ঃ অতঃপর তিনি সাফা ও মারওয়ায় যান এবং স্বীয় বাহনে আরোহীত অবস্হায়ই সাতবার তাওয়াফ [সাঈ] করেন। {১৮৭৯}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৮০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বিদায় হাজ্জে নাবী [সাঃআঃ] নিজের বাহনে চড়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং সাফা-মারওয়া সাঈ করেন, যাতে লোকেরা তাঁকে দেখে, তাহাঁর কাজের প্রতি দৃষ্টি দেয় এবং প্রয়োজনীয় বিষয়ে জিজ্ঞেস করে নেয়। কারন লোকেরা চতুর্দিক থেকে তাঁকে ঘিরে রেখেছিলো। {১৮৮০}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৮১. ইবনি আববাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসুস্হ অবস্হায় মক্কায় আসেন। এ সময় তিনি তাহাঁর সাওয়ারীতে চড়ে তাওয়াফ করেন। তিনি রুকনের নিকট আসলে লাঠির সাহায্যে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করিতেন। তাওয়াফ শেষ করার পর তিনি উটকে বসিয়ে দেন এবং দুই রাকাআত সলাত আদায় করেন। {১৮৮১}
{১৮৮১} আহমাদ। আহমাদ শাকির বলেন ঃ এর সনদ সহিহ। কিন্তু সনদের ইয়াযীদ সম্পর্কে ঈমাম বা্য়হাক্বী বলেন ঃ “তার দলিল গ্রহনযোগ্য নয়। ইবনি তার স্মরনশক্তি মন্দ। হাদিসে { আরবি} কথাটি মুনকার। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৮২. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আমার অসুস্হতার কথা জানালে তিনি বলিলেন, তুমি সওয়ারীতে চড়ে লোকদের পেছনে থেকে তাওয়াফ করিবে। তিনি বলেন, আমি এরূপেই তাওয়াফ করি। আর যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বায়তুল্লাহর এক পাশে সলাত আদায় করছিলেন এবং তিনি “ওয়াত-তূরি ওয়া কিতাবিম মাসতূর” সুরাটি পাঠ করছিলেন। {১৮৮২}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ তাওয়াফের সময় কাঁধের উপর চাদর রাখা
১৮৮৩. ইয়ালা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] সবুজ রঙের একখানা চাদর বগলের নীচ থেকে কাঁধের উপর রাখা অবস্হায় [বায়তুল্লাহ] তাওয়াফ করেছেন। {১৮৮৩}
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৮৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগন আল-জিইররানা নামক স্হান হইতে উমরাহ্র ইহরাম বাঁধেন এবং তাঁরা বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সময় রমল করেন [দ্রুতপদে হাঁটেন]। এ সময় তাঁরা নিজেদের চাদর বগলের নিচে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখে দেন। {১৮৮৪}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ রমল করার পদ্ধতি
১৮৮৫. আবুত তুফাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিলাম, আপনার সম্প্রদায়ের ধারনা, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সময় দ্রুতপদে হেটেঁছেন এবং এরুপ করা সুন্নাত। তিনি বলিলেন, তারা সত্য বলেছে এবং মিথ্যাও বলেছে। আমি বলিলাম, তারা কি সত্যি বলেছে এবং কি মিথ্যা বলেছে? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রমল করেছেন, এ কথা সত্য কিন্তু একে সুন্নাত বলা মিথ্যা। হুদায়বিয়ার সময় কুরাইশগণ মুসলিমদেরকে তিরস্কারস্বরূপ বলেছিলো যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাথীদের এভাবেই থাকতে দাও। এমনকি তারা উট ও বকরীর মত মৃত্যুবরন করে নিঃশেষ হইবে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] এর সাথে সন্ধি চুক্তি করলো, মুসলিমরা আগামি বছর এসে মক্কায় তিন দিন অবস্হান করিবে। সুতরাং পরবর্তী বছর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলেন। মুশরিকরা কুয়াইকিয়ান পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হলো [ মুসলিমদের অবস্হান লক্ষ্য করিতে]। এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন যে, তাওয়াফের মধ্যে তিনবার রমল করো। সুতরাং তারা তাই করিলেন। এরূপ করা মুলতঃ সুন্নাত নয়। আমি আবার বলিলাম, আপনার সম্প্রদায়ের ধারনা, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার উটে চড়েই সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ [সাঈ] করেছেন। আর এরূপ নাকি সুন্নাত। তিনি বলিলেন, তারা সত্যও বলেছে এবং মিথ্যাও বলেছে। আমি বলিলাম, তারা কি সত্যি বলেছে এবং কি মিথ্যা বলেছে? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার উটে সওয়ারী হয়ে সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ [সাঈ] করেছেন, তাহাদের এ কথা সত্য। কিন্তু এটাকে সুন্নাত বলা মিথ্যা। প্রকৃত ব্যাপার হলো, তখন লোকদের অবস্হা এরুপ ছিলো যে, তাহাদেরকে রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] কাছ থেকে সরানো যেতনা এবং তিনিও তাহাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারতেন না। সুতরাং তিনি উটে আরোহী অবস্হায় তাওয়াফ [সাঈ] করেছেন। যাতে প্রতিটি লোক তাহাঁর কথা শুনতে পায়, তাঁকে দেখিতে পায় এবং তাহাদের হাত তাহাঁর শরীরে না লাগে। {১৮৮৫}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন অবস্হায় মক্কায় এলেন যে, ইয়াসরিবের ভাইরাস জ্বর তাহাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছিলো। মুশরিকরা বললো, তোমাদের কাছে এমন একদল লোক আসছে যাদেরকে ভাইরাস জ্বর দুর্বল করেছে। কাজেই এখন তারা [মুসলিমরা] বিপদগ্রস্হ। মহান আল্লাহ তাহাঁর নাবী [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের কথাগুলা জানিয়ে দিলেন। তাই তিনি মুসলিমদেরকে তাওয়াফের সময় তিন চক্করে রমল করিতে এবং উভয় রুকন [ইয়ামানী ও হাতীম ]-এর মাঝে স্বাভাবিক গতিতে চলার নির্দেশ দিলেন। মুশরিকরা যখন দেখলো যে, মুসলিমগণ রমল করছেন তখন তারা বলাবলি করলো, এরাই তো তারা যাদের সম্বন্ধে তোমরা মন্তব্য করেছিলে যে, ইয়াসরিবের ভাইরাস জ্বর তাহাদেরকে দুর্বল করে ফেলেছে! অথচ এরাতো আমাদের চাইতেও শক্তিশালী। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, তিনি তাহাদেরকে [মুসলিমদের] সমস্ত চক্করে রমল করিতে নির্দেশ দেননি। {১৮৮৬}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৮৭. যায়িদ ইবনি আসলাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রমল করা এবং কাঁধ খোলা রাখা এখন তেমন গুরুত্ববহ নয়। কেননা মহান আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী ও শক্তিশালী করেছেন এবং কুফর ও কাফির দুটোই নির্মূল করেছেন। তথাপি আমরা রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] সময়ে যে কাজ করেছি তা কখনো বর্জন করবো না। {১৮৮৭}
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১৮৮৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মূলতঃ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ এবং জামরায় কংকর নিক্ষেপ ইত্যাদি প্রবর্তিত হয়েছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। {১৮৮৮}
দুর্বল ঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [২০৫৬], মিশকাত [২৬২৪], যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [১৫৪/৯১০]। {১৮৮৮} তিরমিজি, ইবনি খুযাইমাহ, হাকিম। ঈমাম তিরমিজি বলেন ঃ এই হাদিসটি হাসান সহিহ। ঈমাম হাকিম ও যাহাবী বলেন ঃ সনদ সহিহ। কিন্তু সনদের উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ সম্পর্কে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন ঃ তিনি শক্তিশালী নন। উবাইদুল্লাহ হাদিসের সানাদে ইযতিবার করেছেন। কখনো এটিকে মারফু আবার কখনো মাওকুফভাবে বরণনা করেছেন। ঈমাম আজরী বলেন ঃ তার হাদিসসমূহ মুনকার। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৮৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] স্বীয় বগলের নীচ দিয়ে চাদর নিয়ে কাঁধের উপর ছেড়ে দিয়েছেন, হাজরে আসওয়াদে চুমু খেয়েছেন, তাকবীর বলিয়াছেন অতঃপর তিন চক্করে রমল করেছেন। তাঁরা যখন রুকনে ইয়ামানীর কাছে পৌঁছতেন এবং কুরাইশদের চোখের আড়াল হইতেন, তখন স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতেন। আর যখন তাহাদের সম্মুখে এসে যেতেন তখন আবার রমল করিতেন। তাঁদেরকে দেখে কুরাইশরা বলতো, ওরা যেন হরিণ। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, ফলে রমল করা সুন্নাতে পরিণত হয়। {১৮৮৯}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগন আল-জিঈররানা নামক স্থান হইতে ইহরাম বেঁধে উমরাহ করেছেন এবং বায়তুল্লাহ্র তিন চক্করে রমল এবং চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটেছেন। {১৮৯০}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৯১. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি উমার [রাদি.] হাজরে আসওয়াদ হইতে আরম্ভ করে পুনরায় হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করিতেন এবং তিনি উল্লেখ করেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ করেছেন। {১৮৯১}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৩ঃ তাওয়াফকালে দুআ পাঠ করা
১৮৯২. আবদুল্লাহ ইবনিস সায়িব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দুই রুকনের মাঝখানে বলিতে শুনিয়াছি ঃ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দিন, আখিরাতের কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আযাব হইতে রক্ষা করুন” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ঃ ২০১]। {১৮৯২}
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৮৯৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কায় আসার পর হাজ্জ ও উমরাহ্র জন্য সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করেছিলেন, তার প্রথম তিন চক্করে রমল করেছেন এবং বাকী চার চক্করে ধীরগতিতে চলেছেন, তারপর দুই রাকআত সলাত আদায় করেছেন। {১৮৯৩}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৫৪ঃ আসর সলাতের পর তাওয়াফ করা
১৮৯৪. জুবাইর ইবনি মুত্বইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা কাউকে রাত বা দিনের যে কোন সময়ে এই ঘরের তাওয়াফ করিতে ও সলাত আদায় করিতে বাধা দিবে না। আল-ফাদলের বর্ণনায় রয়েছে ঃ হে আবদে মানাফের বংশধর! তোমরা কাউকে বাধা দিবে না। {১৮৯৪}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৫ঃ কিরান হাজ্জকারীর তাওয়াফের বর্ণনা
১৮৯৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারই তাওয়াফ করেছেন। এটাই ছিল তাহাঁর প্রথমবারের তাওয়াফ। {১৮৯৫}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৯৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[বিদায় হাজ্জের সময়] রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] সাথে সাহাবীগণ জামরায় কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তাওয়াফ করেননি। {১৮৯৬}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮৯৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে বলিয়াছেনঃ বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে তোমার তাওয়াফ, তোমার হাজ্জ ও উমরাহ্র জন্য যথেষ্ট। ঈমাম শাফিঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ সুফিয়ান কখনো আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে আয়িশাহ [রাদি.] সূত্রে, আবার কখনো আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] আয়িশাহ [রাদি.]-কে এরূপ বলিয়াছেন। {১৮৯৭}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৫৬ঃ মুলতাযাম [কাবার দরজা হইতে হাতীম পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানকে জড়িয়ে ধরা]
১৮৯৮. আবদুর রহমান ইবনি সাফওয়ান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মাক্কাহ বিজয় করিলেন তখন আমি [মনে মনে] বলিলাম, আমি আমার পোশাক পরবো, আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি কাজ করেন তাও দেখবো। আমার ঘরও ছিলো পথের পাশেই। সুতরাং আমি চলে গেলাম এবং আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখলাম, তিনি এবং তাহাঁর সাহাবীগণ কাবা ঘরের ভেতর থেকে বাইরে এসে, তার দরজা থেকে হাতীম পর্যন্ত চুমু খেয়েছেন এবং তাঁরা তাঁদের গাল ও চোয়াল রেখেছেন কাবা ঘরে উপর। এসময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের মাঝখানে ছিলেন। {১৮৯৮}
{১৮৯৮} আহমাদ। সনদের ইয়াযীদ বিন আবু যিয়াদের স্মরনশক্তি খারাপ। ঈমাম বায়হাক্বী ও আল্লামা মুনযিরী বলেন ঃ তার দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৯৯. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.]-এর সাথে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করি। আমরা যখন কাবার পিছনে যাই তখন আমি বলি, আপনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছেন না কেন? তিনি বলিলেন, আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর তিনি সম্মুখে গিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমু খেলেন, রুকনে ইয়ামানী এবং দরজার মাঝখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করিলেন, তার বুক, চেহারা, উভয় বাহু এবং হাতের তালু স্থাপন করে তা বিছিয়ে রাখলেন। এই বলে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দেখালেন। অতঃপর বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এরূপ করিতে দেখেছি। {১৮৯৯}
{১৮৯৯} ইবনি মাজাহ। সানাদে মুসান্না ইবনি সাব্বাহ যয়ীফ। হাফিয বলেন ঃ তিনি যয়ীফ, শেষ বয়সে হাদিসে সংমিশ্রন করিতেন। ঈমাম বায়হাক্বী বলেন ঃ তার দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। শায়খ আলবানী বলেন ঃ তবে রুকনে ইয়ামনী ও দরজার মাঝখানে লেগে থাকা অংশটুকু প্রমাণিত আছে।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৯০০. মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনিস সায়িব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর [দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার পর] হাত ধরে নিয়ে যেতেন এবং বায়তুল্লাহর দরজা সংলগ্ন রুকনের সাথে মিলিত তৃতীয় অংশে দাঁড় করিয়ে দিতেন। অতঃপর ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি জানো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ স্থানে সলাত আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর ইবনি আব্বাস [রাদি.] সেখানে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিলেন। {১৯০০}
দুর্বল ঃ যয়ীফ সুনান নাসায়ী [১৮৮/২৯১৮]।{১৯০০} নাসায়ী। সানাদে মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ বিন সায়িব অজ্ঞাত। ঈমাম যাহাবী ও মুনযিরী তাহাকে মাজহুল বলিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–৫৭ঃ সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ [সাঈ] করা
১৯০১. হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশাহ [রাদি.]-কে আমার ছেলে বেলায় জিজ্ঞেস করলাম, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনমূহের অন্তর্ভুক্ত।” আমি মনে করি, কেউ এই দুই পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ [সাঈ] না করলে তার কোন গুনাহ হইবে না। আয়িশাহ [রাদি.] বলিলেন, কখনো নয়, তুমি এ আয়াতের যেরূপ ব্যাখ্যা করলে তা ঠিক হলে আয়াতটি হতো এরূপ ঃ “তার কোন গুনাহ নেই যদি সে এই দুই পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ না করে।” মূলতঃ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আনসারদের সম্পর্কে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তারা মানাত মূর্তির উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধতো। আর এ মানাত মূর্তি কুদাইদ পাহাড় বরাবরে অবস্থিত ছিল। সুতরাং তারা সাফা-মাওরয়ার মাঝে তাওয়াফ [সাঈ] করাকে আপত্তিকর ভাবতো। ইসলাম গ্রহণের পর তারা এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলো। তখন মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন ঃ “নিশ্চই সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ঃ ১৫৮]। {১৯০১}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯০২. আবদুল্লাহ ইবন আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উমরাহ করিতে এসে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাকআত সলাত আদায় করেছেন। কাফিরদের সম্ভাব্য আক্রমন থেকে তাঁকে রক্ষার্তে এ সময় তাহাঁর সাথে তাহাঁর রক্ষীবাহিনী সাহাবীরা ছিলেন। কেউ আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলো, এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবার ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন কিনা? তিনি বলিলেন, না। {১৯০২}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯০৩. ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা হইতে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ হাদিস শুনিয়াছি। এতে আরো রয়েছে ঃ অতঃপর তিনি সাফা ও মারওয়ায় এসে এর মাঝে সাতবার সাঈ করেন, অতঃপর মাথা মুণ্ডন করেন। {১৯০৩}
সহিহ। তবে মুণ্ডন কথাটি বাদে। তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯০৪. কাসীর ইবনি জুমহান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যাক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝখানে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলো, হে আবু আবদুর রহমান! আমি দেখিতে পাচ্ছি আপনি সাফা-মারওয়ার মাঝে স্বাভাবিক গতিতে চলছেন, অথচ অন্য লোকেরা দৌড়াচ্ছে। তিনি বলিলেন, যদি আমি হাঁটি তবে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এখানে হাঁটতে দেখেছি। আর যদি আমি দৌড়াই [সাঈ করি], তবে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এখানে দৌড়াতেও দেখেছি। আর এখন তো আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। {১৯০৪}
তাওয়াফ করা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply