মক্ক্যায় প্রবেশ ও তাওয়াফ করা প্রসঙ্গে
মক্ক্যায় প্রবেশ ও তাওয়াফ করা প্রসঙ্গে >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১১, অধ্যায়ঃ ৩
- অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
২৫৬১. নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] যখনই মাক্কায় আসতেন যী তুওয়া নামক স্থানে সকাল না হওয়া পর্যন্ত রাত যাপন করিতেন। এরপর তিনি গোসল করিতেন এবং [নফল] সালাত আদায় করিতেন। তারপর দিনের বেলায় মাক্কায় প্রবেশ করিতেন যখন তিনি মক্কা হইতে প্রত্যাবর্তন করিতেন আর তখন যী তুওয়ার পথেই ফিরতেন এবং সেখানে রাত কাটাতেন যতক্ষণ না সকাল হতো এবং তিনি আরো বলেন, নবী সাঃআঃ এরূপই করিতেন।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৭৬৯, মুসলিম ১২৫৯, আবু দাউদ ১৮৬৫, আহমাদ ৪৬৫৬, দারিমী ১৯৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯১৯৯, ইরওয়া ১৫০। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ যখন মাক্কায় আসতেন, উঁচু দিক হইতে প্রবেশ করিতেন এবং নিচু দিক দিয়ে বের হইতেন।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৫৭৭, মুসলিম ১২৫৮, আবু দাউদ ১৮৬৯, তিরমিজি ৮৫৩, আহমাদ ২৪১২১, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ৯৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২০৩। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৩. উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ হজ্জ করিলেন, [আমার খালা] আয়িশাহ্ [রাদি.] আমাকে বলেছেন যে, তিনি [সাঃআঃ] মাক্কায় প্রবেশ করে প্রথমে উযূ করিলেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিলেন। তবে তা উমরায় পরিণত করিলেন না [অর্থাৎ- ইহরাম খুললেন না]। তারপর আবু বাকর [রাদি.] হজ্জ করিয়াছেন, তিনিও প্রথমে যে কাজ করিয়াছেন তা হলো বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তিনি এ তাওয়াফকে উমরায় পরিণত করেননি। অতঃপর উমার, তারপর উসমান [রাদি.] এই একইভাবে হজ্জ সম্পাদন করিয়াছেন।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৪২, মুসলিম ১২৩৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩০০, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮০৮। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৪. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ হজ্জ বা উমরা করিতে এসে প্রথমে যখন তাওয়াফ করিতেন তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করিতেন, আর চার পাক স্বাভাবিকভাবে চলতেন। তারপর [মাকামে ইবরাহীমের কাছে] দু রাক্আত [তাওয়াফের] সালাত আদায় করিতেন এবং সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ করিতেন।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬১৬, মুসলিম ১২৬১।তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৫. {আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন পাক রমল [দ্রুতবেগে] তাওয়াফ করিয়াছেন এবং চার পাক স্বাভাবিকভাবে করিয়াছেন। এভাবে তিনি [সাঃআঃ] যখন সাফা মারওয়ার মাঝেও সাঈ করিতেন তখন বাত্বনিল মাসীলে মাঝখানে [নিচু জায়গায়] দ্রুতবেগে চলতেন।
[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১২৬১, ১২৬২, আহমাদ ৫৭৩৭, দারিমী ১৮৮৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২৮০। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ মাক্কায় এলেন, হাজারে আসওয়াদের নিকট গেলেন এবং একে স্পর্শ করিলেন। তারপর এর ডানদিকে ঘুরে তিন চক্কর রমল [কাবাকে বামে রেখে] করিলেন আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করিলেন।
[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১২১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩২২, ইরওয়া ১১০৭। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৭. যুবায়র ইবনি আরাবী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] কে হাজারে আসওয়াদে চুমু দেয়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলো। আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] জবাবে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে তা স্পর্শ করিতে ও চুমু দিতে দেখেছি
। [বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬১১, নাসায়ী ২৯৪৬, তিরমিজি ৮৬১, আহমাদ ৬৩৯৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২২২। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৮. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী সাঃআঃ-কে বায়তু্ল্লাহর ইয়ামানী দিকের দুই কোণ ছাড়া অন্য কোন কোণকে স্পর্শ করিতে দেখিনি।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬০৯, মুসলিম ১১৮৭, আবু দাউদ ১৮৭৪, নাসায়ী ২৯৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২০৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮২৭।তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৯. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বিদায় হজে উটের উপর থেকে তাওয়াফ করিয়াছেন, মাথা বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করিয়াছেন
। [বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬০৭, মুসলিম ১২৭৩, আবু দাউদ ১৮৭৭, নাসায়ী ৭১৩, ইবনি মাজাহ ২৯৪৮, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৭৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩৭২। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭০. {ইবনি আব্বাস [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ উটের উপর সওয়ার অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিয়াছেন। হাজারে আসওয়াদের কাছে পৌঁছেই নিজের হাতের কোন জিনিস [লাঠি] দিয়ে ইশারা করিতেন এবং [আল্লা-হু আকবার] তাকবীর দিয়েছেন।
[বোখারী]{১},{১} সহীহ : বোখারী ১৬৩২, দারিমী ১৮৮৭, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৭২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩৭৩। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭১. আবুত্ব তুফায়ল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার সময় তাহাঁর হাতের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করিতে এবং বাঁকা লাঠিকে চুমু দিতে দেখেছি। [মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১২৭৫, আবু দাউদ ১৮৭৯, ইবনি মাজাহ ২৯৪৯, ইরওয়া ১১১৪। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী সাঃআঃ-এর সাথে [হজের উদ্দেশে] রওনা হলাম। তখন আমরা হজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর [উমরার] তালবিয়াহ্ পড়তাম না। আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌঁছলে আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলো। এমন সময় নবী সাঃআঃ আমার কাছে আসলেন। আমি হজ্জ করিতে পারবো না বিধায় কাঁদছিলাম। [কাঁদতে দেখে] তিনি [সাঃআঃ] বললেন, মনে হয় তোমার ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এটা এমন বিষয় যা আল্লাহ তাআলা আদাম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করিয়াছেন। তাই হাজীগণ যা করে তুমিও তা করিতে থাকো, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ থেকে বিরত থাকো।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৩০৫, মুসলিম ১২১১, আহমাদ ২৬৩৪৪। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের [এক বছর] আগে যে হজে নবী সাঃআঃ আবু বাকর [রাদি.]-কে হজ্জের আমির বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে হজে আবু বাকর কুরবানীর দিনে আরো কিছু লোকসহ আমাকে লোকদের মাঝে ঘোষণা দিতে আদেশ করে পাঠালেন- সাবধান! এ বছরের পর আর কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হজ্জ করিতে পারবে না এবং কেউ কক্ষনো উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিতে পারবে না।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬২২, মুসলিম ১৩৪৭, আবু দাউদ ১৯৪৬, নাসায়ী ২৯৫৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩০৮, ইরওয়া ১১০১, সহীহ আল জামি ৭৬৩২। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৭৪. মুহাজির আল মাক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার জাবির -কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহকে দেখে [দুআ পাঠের সময়] নিজের দুই হাত উঠাবে। জবাবে জাবির [রাদি.] বললেন, আমরা নবী সাঃআঃ-এর সাথে হজ্জ করেছি, কিন্তু কক্ষনো আমরা এরূপ করিনি।
[তিরমিজি ও আবু দাউদ]{১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ১৮৭০, নাসায়ী ২৮৯৫। কারণ এর সনদে মুহাজির ইবনি মাক্কী একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৭৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ মাদীনাহ্ হইতে [হজ্জ/হজ ও উমরা পালনের জন্য] মাক্কায় প্রবেশ করে হাজারে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হলেন, একে চুমু খেলেন। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিলেন, এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে এলেন এবং এর উপর উঠলেন যাতে বায়তুল্লাহ দেখিতে পান। তারপর দু হাত উঠালেন এবং উদারমনে আল্লাহর যিকির ও দুআ করিতে লাগলেন।
[আবু দাউদ]{১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৮৭২। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা সলাতেরই মতো, তবে এতে তোমরা কথা বলিতে পারো। তাই তাওয়াফের সময় ভালো কথা ব্যতীত আর কিছু বলবে না।
[তিরমিজি, নাসায়ী ও দারিমী]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৯৬০, সহীহ আত তারগীব ১১৪১, ইরওয়া ১২১, সহীহ আল জামি ৩৯৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩০৩। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৭. {ইবনি আব্বাস [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ হাজারে আসাওয়াদ যখন জান্নাত হইতে নাযিল হয়, তখন তা দুধের চেয়েও বেশি সাদা ছিল। অতঃপর আদাম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দেয়। {আহমাদ ও তিরমিজি; ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।]{১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ৮৭৭, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৭৩৩, সহীহাহ্ ২৬১৮, সহীহ আল জামি ৬৭৫৬, সহীহ আত তারগীব ১১৪৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২৫৭৮. {ইবনি আব্বাস [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ হাজারে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর কসম! ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ এটিকে উঠাবেন, তখন এর দুটি চোখ থাকিবে যা দিয়ে সে দেখিতে পাবে। তার একটি জিহবা থাকিবে ও এই জিহবা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যে তাকে ঈমানের সাথে চুমু দিয়েছে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে ।
[তিরমিজি, ইনু মাজাহ ও দারিমী]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৯৬১, ইবনি মাজাহ ১৯৪৪, সহীহ আল জামি ৭০৯৮, সহীহ আত তারগীব ১১৪৪, দারিমী ১৮৮১, সহীহ আল জামি ২৭৩৫, সুনানুল কুবরা ৯২৩২। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনিয়াছি, হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম জান্নাতের ইয়াকূতসমূহের মধ্যে দুটি ইয়াকূত। আল্লাহ এদের নূর [আলো] দূর করে দিয়েছেন। যদিও এ দুটির নূর [আলো] আল্লাহ তাআলা দূর করে না দিতেন। তবে এরা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যে যা আছে তাকে আলোকময় করে দিতো
, [তিরমিজি]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৮৭৮, আহমাদ ৭০০০, সহীহ আল জামি ১৬৩৩, সহীহ আত তারগীব ১১৪৭।তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮০, উবায়দ ইবনি উমায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] দু রুকনের [হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর] কাছে যেভাবে ভীড় করিতেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাহাবীদের আর কাউকে এমনভাবে [প্রতিযোগিতামূলকভাবে] ভীড় করিতে দেখিনি। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, আমি যদি এরূপ করি [তাতে দোষের কোন বিষয় নয়], কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনিয়াছি, নিশ্চয়ই এদের স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারাহ্। আমি তাঁকে [সাঃআঃ-কে] আরো বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চারদিকে সাতবার তাওয়াফ করিবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করিবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবার সমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে [ইবনি উমার [রাদি.]-কে] বলিতে শুনিয়াছি, কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তাআলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি সাওয়াব নির্ধারণ করেন।
[তিরমিজি]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৯৫৯, সহীহ আত তারগীব ১১৩৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৬৯৭। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮১. আব্দুল্লাহ ইবনুস্ সায়িব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে দু রুকনের [হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী] মধ্যবর্তী স্থানে এ দুআ পড়তে শুনিয়াছি-
رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রব্বানা- আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা- আযা-বান্না-র [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন হইতে রক্ষা কর।]।
[আবু দাউদ]{১}, {১} হাসান : আবু দাউদ ১৮৯২, আহমাদ ১৫৩৯৯। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২৫৮২. সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু তুজরাহ্-এর মেয়ে আমাকে বলেছেন, আমি কুরায়শ গোত্রের কিছু মহিলার সাথে আবু হুসায়ন পরিবারের একটি ঘরে প্রবেশ করলাম যাতে আমরা সাফা মারওয়ার সাঈর সময় রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে দেখিতে পাই। তখন আমি তাঁকে সাঈ করিতে দেখলাম, জোরে জোরে পা ফেলার কারণে তাহাঁর চাঁদর এদিকে-সেদিকে দুলছিল। আর তখন আমি তাঁকে এ কথাও বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা সাঈ করো। কেননা সাঈ করা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিপিবদ্ধ [নির্ধারণ] করিয়াছেন
। [বাগাবীর শারহুস্ সুন্নাহ এবং আহমাদ কিছু ভিন্নতার সাথে]{১}, {১} জইফ : আহমাদ ২৭৩৬৭, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭৩, শারহুস্ সুন্নাহ ১৯২১। তবে শব্দের কিছু ভিন্নতাসহ হাদিসটি ত্ববারানী ও বায়হাক্বীতে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৮৩. কুদামাহ্ ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি আম্মার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে উটের পিঠে চড়ে সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ করিতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেও মারতে বা হাঁকাতে দেখিনি এবং এমনকি আশেপাশে সরো সরো বলিতেও শুনিনি।
[শারহুস্ সুন্নাহ্]{১}, {১} সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩৮৫, শারহুস্ সুন্নাহ ১৯২২, তিরমিজি ৯০৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
২৫৮৪. ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ একটি সবুজ চাদর ইযত্বিবা হিসেবে গায়ে দিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিয়াছেন।
[তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ ও দারিমী]{১}, {১} হাসান : আবু দাউদ ১৮৮৩, তিরমিজি ৮৫৯, ইবনি মাজাহ ২৯৫৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২৫৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২৫৮৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর সাহাবীগণ জিরানাহ্ হইতে উমরা করিয়াছেন। তিনি [সাঃআঃ] বায়তুল্লাহর তাওয়াফে তিনবার জোরে জোরে চলেছেন এবং তাঁদের চাদরসমূহ ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন।
[আবু দাউদ]{১},{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৮৮৪, আহমাদ ৩৫১২, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২৪৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২৫৭, ইরওয়া ১০৯৪। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৮৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা এ দুটি কোণ তথা রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ কষ্টে ও আরামে কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করিতে ছাড়িনি যখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে এ দু কোণ [রুকন] স্পর্শ করিতে দেখেছি।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬০৬, মুসলিম ১২৬৮, নাসায়ী ২৯৫২, মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক্ব ৮৯০২, আহমাদ ৪৮৮৭, দারিমী ১৮৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২৩৩। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮৭. বোখারী ও মুসলিম হইতে বর্ণীতঃ
নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেনঃ আমি ইবনি উমার [রাদি.]-কে হাজারে আসওয়াদ নিজ হাতে স্পর্শ করে হাত চুমু খেতে দেখেছি। আর তাঁকে এটা বলিতে শুনিয়াছি, যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে এটা করিতে দেখেছি, তখন থেকে এটা কক্ষনো পরিত্যাগ করিনি।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬০৯, মুসলিম ১২০৮, আহমাদ ৫৮৭৫, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮২৪, ইরওয়া ১১১৩।তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮৮. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে অভিযোগ করলাম যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তাহলে তুমি সওয়ার হয়ে মানুষের পেছনে পেছনে তাওয়াফ করো। তিনি {উম্মু সালামাহ [রাদি.]] বলেন, আমি তাওয়াফ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বায়তুল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন এবং সলাতে সূরা ওয়াত্ তূর ওয়া কিতা-বিম্ মাসতূর পড়ছিলেন।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৪৬৪, মুসলিম ১২৭৬, আবু দাউদ ১৮৮২, নাসায়ী ২৯২৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৭১, আহমাদ ২৬৪৮৫, নাসায়ী ২৯২৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৭১, আহমাদ ২৬৪৮৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২৪৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮৩৩, সহীহ আল জামি ৩৯৩২।তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮৯. আবিস ইবনি রবীআহ্ হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার [রাদি.]-কে হাজারে আসওয়াদ চুমু দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি- আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, যা কারো উপকার বা ক্ষতি করিতে পারো না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম তবে আমি কক্ষনো তোমাকে চুমু দিতাম না।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬১০, মুসলিম ১২৭০। তাওয়াফ করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ রুকনে ইয়ামানীর সাথে সত্তরজন মালাক [ফেরেশতা] নিয়োজিত রয়েছেন। যখন কোন ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষমা ও কুশল প্রার্থনা করছি। হে রব! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আযাব হইতে রক্ষা করো। তখন সেসব মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] বলে ওঠেন, আমীন [আল্লাহ কবূল কর]।
[ইবনি মাজাহ]{১}, {১} জইফ : ইবনি মাজাহ ২৯৫৭, জইফ আল জামি ৫৬৮৩, জইফ আত তারগীব ৭২১। কারণ এর সনদে হুমায়দ ইবনি আবী সাবিয়্যাহ্ একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৯১. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে এবং
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ
সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার, ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ [অর্থাৎ- আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহরই, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কারো উপায় বা শক্তি নেই।] দুআটি পড়া ব্যতীত আর কোন কথা না বলে তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, তার [আমালনামায়] দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তার দশটি মর্যাদাও বৃদ্ধি করা হয়। আর যে ব্যক্তি তাওয়াফ করা অবস্থায় কথাবার্তা বলবে সে আল্লাহ তাআলার রহমাতে তার পা দিয়ে ঢেউ উঠিয়েছে যেমন কোন ব্যক্তি নিজের পা দিয়ে পানিতে ঢেউ উঠিয়ে থাকে।
[ইবনি মাজাহ]{১},{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ২৯৫৭, জইফ আত তারগীব ৭২১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply