তাওবা । পাপ থেকে তাওবাহ করলে তাওবাহ কবূল হয়

তাওবা । পাপ থেকে তাওবাহ করলে তাওবাহ কবূল হয়

তাওবা । পাপ থেকে তাওবাহ করলে তাওবাহ কবূল হয় , এই পর্বের হাদীস =১৯ টি (১৭৪৬-১৭৬৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৪৯ঃ তাওবা

৪৯/১. তাওবা প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তদ্বারা আনন্দিত হওয়া।
৪৯/৪. আল্লাহ তাআলার দয়ার প্রশস্ততা এবং তা তাহাঁর রাগকে ছাড়িয়ে গেছে।
৪৯/৫. পাপ থেকে তাওবাকরলে তাওবাহ কবূল হয় যদিও পাপ ও তাওবা বার বার হয়।
৪৯/৬. আল্লাহ তাআলার গরিমা ও অশ্লীলতা হারাম।
৪৯/৭. আল্লাহ তাআলার বাণী- নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মুছে দেয়।
৪৯/৮. হত্যাকারীর তাওবা কবূল হওয়া, যদিও তার হত্যা অনেক হয়।
৪৯/৯. কাব বিন মালিক ও তার সাথীদ্বয়ের তাওবা হাদীস।
৪৯/১০. ইফক বা অপবাদ ও অপবাদ দানকারীদের তাওবা কবূল হওয়ার হাদীস।

৪৯/১. তাওবা প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তদ্বারা আনন্দিত হওয়া।

১৭৪৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা ঘোষণা করেন, আমি সেরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে লোক-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাহাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার দিকে এক বাহু অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দু বাহু অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।

[বোখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৭৪০৫; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১, হাঃ ১৬৭৫] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] দুটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। একটি নাবী [সাঃআঃ] থেকে আর অন্যটি তাহাঁর নিজ থেকে। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে বসা আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবু শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে। তারপর [নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন] নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মনে কর কোন এক ব্যক্তি [সফরের অবস্থায় বিশ্রামের জন্য] কোন এক স্থানে অবতরণ করলো, সেখানে প্রাণেরও ভয় ছিল। তার সঙ্গে তার সফরের বাহন ছিল। যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো এবং জেগে দেখলো তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। রাবী বলেনঃ আল্লাহ যা চাইলেন তা হলো। তখন সে বললো যে, আমি যে জায়গায় ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর জেগে দেখলো যে, তার বাহনটি তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।

[বোখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৩০৮; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ১ হাঃ ২৭৪৪] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/৪. আল্লাহ তাআলার দয়ার প্রশস্ততা এবং তা তাহাঁর রাগকে ছাড়িয়ে গেছে।

১৭৪৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা কারণে সেই লোকটির চেয়েও অধিক খুশী হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তাহাঁর উট হারিয়ে পরে তা পেয়ে যায়।

[বোখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৩০৯; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ১, হাঃ ২৭৪৭] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৪৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ যখন সৃষ্টির কাজ শেষ করিলেন, তখন তিনি তাহাঁর কিতাব লাওহে মাহফুজে লিখেন, যা আরশের উপর তাহাঁর নিকট আছে। নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩১৯৪; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৭৫১] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগে ভাগ করিয়াছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ অবতীর্ণ করিয়াছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই সৃষ্ট জগত একে অন্যের উপর দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এ ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৬০০০; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪, হাঃ ৬৪৬৯] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫১. উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল। তার স্তন দুধে পূর্ণ ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিত এবং দুধ পান করাত। নাবী [সাঃআঃ] আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে করো এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ ফেলার ক্ষমতা রাখলে সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাহাঁর বান্দার উপর তদপেক্ষা অধিক দয়ালু।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৫৯৯৯; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪, হাঃ ২৭৫৪] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক ব্যক্তি [জীবনেও] কোন ভাল আমাল করেনি। মৃত্যুর সময় সে বলিল, মারা যাবার পর তোমরা তাকে পুড়িয়ে ফেল। আর অর্ধেক স্থলে আর অর্ধেক সাগরে ছড়িয়ে দাও। সে আরো বলিল, আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহ্ যদি তাকে পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই তাকে এমন শাস্তি দেবেন, যা জগতসমূহের আর কাউকে দেবেন না। তারপর আল্লাহ্ সাগরকে হুকুম দিলে সাগর এর মধ্যকার অংশকে একত্রিত করিল। স্থলকে হুকুম দিলে সেও তার মধ্যকার অংশ একত্রিত করিল। তারপর আল্লাহ্ বললেনঃ তুমি কেন এরূপ করলে? সে উত্তর করিল, তোমার ভয়ে। আর তুমি অধিক জ্ঞাত। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

[বোখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ৭৫০৬; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৭৫৬] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫৩. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তোমাদের আগের এক লোক, আল্লাহ্ তাআলা তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল তখন সে তার ছেলেদেরকে জড় করে জিজ্ঞেস করিল আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলিল আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বলিল, আমি জীবনে কখনও কোন নেক আমল করিতে পারিনি। আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিও এবং প্রচণ্ড ঝড়ের দিন ঐ ছাই বাতাসে উড়িয়ে দিও। সে মারা গেল। ছেলেরা ওসিয়াত অনুযায়ী কাজ করিল। আল্লাহ্ তাআলা তার ছাই জড় করে জিজ্ঞেস করিলেন, এমন ওসিয়াত করিতে কে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করিল? সে বলিল, হে আল্লাহ্! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহ্‌র রহমত তাকে ঢেকে নিল।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৭৮; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৭৫৭] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/৫. পাপ থেকে তাওবাকরলে তাওবাহ কবূল হয় যদিও পাপ ও তাওবা বার বার হয়।

১৭৫৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি, এক বান্দা গুনাহ্ করিল। বর্ণনাকারী [আরবী] না বলে কখনো [আরবী] বলেছেন। তারপর সে বলিল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গুনাহ্ করে ফেলেছি। বর্ণনাকারী [আরবী] এর স্থলে কখনো [আরবী] বলেছেন। তাই আমার গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও। তার প্রতিপালক বললেনঃ আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন প্রতিপালক যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহ্‌র ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করিল এবং সে আবার গুনাহইতে লিপ্ত হলো। বর্ণনাকারীর সন্দেহ [আর-বী] কিংবা [আরবী] বলা হয়েছে। বান্দা আবার বলিল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ্ করে বসেছি। এখানে [আরবী] কিংবা [আরবী] বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ্ তুমি ক্ষমা করে দাও। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা বললেনঃ আমার বান্দা কি জেনছে যে, তার রয়েছে একজন প্রতিপালক যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। এরপর সে বান্দা আল্লাহ্‌র ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন সে অবস্থায় অবস্থান করিল। আবারও সে গুনাহইতে লিপ্ত হয়ে গেল। এখানে [আরবী] কিংবা [আরবী] বলা হয়েছে। সে বলিল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আরো একটি গুনাহ্ করে ফেলেছি। এখানে [আরবী] কিংবা [আরবী] বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ্ বললেনঃ আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছেন, যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরূপ তিনবার বলিলেন। ** অতঃপর সে যা ইচ্ছা তা করুক।

[বোখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৭৫০৭; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৫ হাঃ ২৭৫৮] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/৬. আল্লাহ তাআলার গরিমা ও অশ্লীলতা হারাম।

১৭৫৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, নিষিদ্ধ কার্যে মুমিনদেরকে বাধা দানকারী আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কেউ নেই, এজন্যই প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করিয়াছেন, আল্লাহ্‌র প্রশংসা প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাহাঁর কাছে অন্য কিছু নেই, সেজন্যেই আল্লাহ আপন প্রশংসা নিজেই করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৪৬৩৪; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৭৬০] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন যে, আল্লাহ্ তাআলার আত্মমর্যাদাবোধ আছে এবং আল্লাহ্‌র আত্মমর্যাদাবোধ এই যে, যেন কোন মুমিন বান্দা হারাম কাজে লিপ্ত না হয়।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৮ হাদীস নং ৫২২৩; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৭৬২] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫৭. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু সালামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে শুনেছেন যে, তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে অনুরূপ হাদীস বলিতে শুনেছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৮ হাদীস নং ৫২২২; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৬ হাঃ ২৭৬২] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/৭. আল্লাহ তাআলার বাণী- নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মুছে দেয়।

১৭৫৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুম্বন করে বসে। পরে সে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে বিষয়টি তাহাঁর গোচরীভূত করে। তখন আল্লাহ্ তাআলা আয়াত নাযিল করেনঃ

أَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَي النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحِسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ

“দিনের দুপ্রান্তে-সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে সলাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই ভালো কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়” [সূরাহ হূদ ১১/১১৪]। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! এ কি শুধু আমার বেলায়? আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতের জন্যই।

[বোখারী পর্ব ৯ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫২৬; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৭, হাঃ ২৭৬৩] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। কিন্তু তিনি তাকে অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন না। আনাস [রাদি.] বলেন তখন সলাতের সময় এসে গেল। সে ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সলাত আদায় করিল। যখন নাবী [সাঃআঃ] সলাত আদায় করিলেন, তখন সে ব্যক্তি তাহাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর আল্লাহ্‌র বিধান প্রয়োগ করুন। তিনি বললেনঃ তুমি কি আমার সাথে সলাত আদায় করনি? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার গুনাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অথবা বললেনঃ তোমার শাস্তি [ক্ষমা করে দিয়েছেন]।

[বোখারী পর্ব ৮৬ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬৮২৩; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৭, হাঃ ২৭৬৪] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/৮. হত্যাকারীর তাওবা কবূল হওয়া, যদিও তার হত্যা অনেক হয়।

১৭৬০. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, বানী ইসরাঈলের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি ছিল যে, নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর সে বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞেস করিল, আমার তাওবা কবুল হওয়ার আশা আছে কি? পাদরী বলিল, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করিল। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলিল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতামণ্ডলী তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ্ সামনের ভূমিকে আদেশ করিলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে [যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল] আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশতাহাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন- তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সামনের দিকে এক বিঘত বেশি এগিয়ে আছে। কাজেই তাকে ক্ষমা করা হল।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৭০; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৮ হাঃ ২৭৬৬] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৬১. সাফওয়ান ইবনি মুহরিয আল-মাযিনী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমি ইবনি উমার [রাদি.]-এর সাথে তাহাঁর হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলিল, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর মুমিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কী বলিতে শুনেছেন? তখন তিনি বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহ তাআলা মুমিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার উপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে ঢেকে নিবেন। তারপর বলবেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জান? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক! এভাবে তিনি তার কাছ হইতে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নিবেন। আর সে মনে করিবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন করে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিব”। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেয়া হইবে। কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাহাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।

[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২৪৪১; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৮ হাঃ ২৮৬৮] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/৯. কাব বিন মালিক ও তার সাথীদ্বয়ের তাওবা হাদীস।

১৭৬২. আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তার মধ্যে তাবূক যুদ্ধ ব্যতীত আমি আর কোন যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকিনি। তবে আমি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করিনি। কিন্তু উক্ত যুদ্ধ থেকে যাঁরা পেছনে পড়ে গেছেন, তাহাদের কাউকে ভর্ৎসনা করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কেবল কুরাইশ দলের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁদের এবং তাঁদের শত্রু বাহিনীর মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আকাবার রাতে যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার গ্রহণ করেন, আমি তখন তাহাঁর সঙ্গে ছিলাম। ফলে বদর প্রান্তরে উপস্থিত হওয়াকে আমি প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বলে বিবেচনা করিনি। যদিও আকাবার ঘটনা অপেক্ষা লোকদের মধ্যে বদরের ঘটনা বেশী মাশহুর ছিল।

আর আমার অবস্থার বিবরণ এই, তাবূক যুদ্ধ থেকে আমি যখন পেছনে থাকি তখন আমি এত অধিক সুস্থ, শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম যে আল্লাহ্‌র কসম! আমার কাছে কখনো ইতোপূর্বে কোন যুদ্ধে একই সঙ্গে দুটো যানবাহন জোগাড় করা সম্ভব হয়নি, যা আমি এ যুদ্ধের সময় জোগাড় করেছিলাম। আর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে অভিযান পরিচালনার সংকল্প গ্রহণ করিতেন, বাহ্যত তার বিপরীত দেখাতেন। এ যুদ্ধ ছিল ভীষণ উত্তাপের সময়, অতি দূরের যাত্রা, বিশাল মরুভূমি এবং বহু শত্রুসেনার মোকাবালা করার। কাজেই রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ অভিযানের অবস্থা মুসলিমদের কাছে প্রকাশ করে দেন যাতে তারা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সামান জোগাড় করিতে পারে।

কাব [রাদি.] বলেন, যার ফলে যে কোন লোক যুদ্ধাভিযান থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছে করলে তা সহজেই করিতে পারত এবং ওয়াহী মারফত এ খবর না জানানো পর্যন্ত তা সংগোপন থাকিবে বলে সে ধারণা করত। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এমন সময় যখন ফল-মূল পাকার ও গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার সময় ছিল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্বয়ং এবং তাহাঁর সঙ্গী মুসলিম বাহিনী অভিযানে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলেন। আমিও প্রতি সকালে তাঁদের সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করিতে থাকি। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারিনি। মনে মনে ধারণা করিতে থাকি, আমি তো যখন ইচ্ছে পারব। এই দোটানায় আমার সময় কেটে যেতে লাগল। এদিকে অন্য লোকেরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাথী মুসলিমগণ রওয়ানা করিলেন অথচ আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। আমি মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এক দুদিনের মধ্যে আমি প্রস্তুত হয়ে পরে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে মিলব। এভাবে আমি প্রতিদিন বাড়ি হইতে প্রস্তুতি নেয়ার উদ্দেশে বের হই, কিন্তু কিছু না করেই ফিরে আসি। আবার বের হই, আবার কিছু না করে ঘরে ফিরে আসি। ইত্যবসরে বাহিনী অগ্রসর হয়ে অনেক দূর চলে গেল। আর আমি রওয়ানা করে তাহাদের সঙ্গে রাস্তায় মিলিত হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করিতে লাগলাম। আফসোস যদি আমি তাই করতাম! কিন্তু তা আমার ভাগ্যে জোটেনি। এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রওয়ানা হওয়ার পর আমি লোকদের মধ্যে বের হয়ে তাহাদের মাঝে বিচরণ করতাম। এ কথা আমার মনকে পীড়া দিত যে, আমি তখন [মাদীনাহ্] মুনাফিক এবং দুর্বল ও অক্ষম লোক ব্যতীত অন্য কাউকে দেখিতে পেতাম না। এদিকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাবূক পৌঁছার আগে পর্যন্ত আমার ব্যাপারে আলোচনা করেননি। অনন্তর তাবূকে এ কথা তিনি লোকদের মাঝে বসে জিজ্ঞেস করে বসলেন, কাব কী করিল? বানী সালামাহ গোত্রের এক লোক বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! তার ধন-সম্পদ ও অহঙ্কার তাকে আসতে দেয়নি। এ কথা শুনে মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] বলিলেন, তুমি যা বললে তা ঠিক নয়। হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আল্লাহ্‌র কসম, আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি বলে জানি। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নীরব রইলেন।

কাব ইবনি মালিক [রাদি.] বলেন, আমি যখন জানতে পারলাম যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনাহ মুনাওয়ারায় ফিরে আসছেন, তখন আমি চিন্তিত হয়ে গেলাম এবং মিথ্যা ওজুহাত খুঁজতে থাকলাম। মনে স্থির করলাম, আগামীকাল এমন কথা বলব যাতে করে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্রোধকে ঠাণ্ডা করিতে পারি। আর এ সম্পর্কে আমার পরিবারস্থ জ্ঞানীগুণীদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করিতে থাকি। এরপর যখন প্রচারিত হল যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনায় এসে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর থেকে মিথ্যা দূর হয়ে গেল। আর মনে দৃঢ় প্রত্যয় হল যে, এমন কোন উপায়ে আমি তাঁকে কখনো ক্রোধমুক্ত করিতে সক্ষম হব না, যাতে মিথ্যার লেশ থাকে। অতএব আমি মনে মনে স্থির করলাম যে, আমি সত্য কথাই বলব। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সকাল বেলায় মাদীনায় প্রবেশ করিলেন। তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মাসজিদে গিয়ে দুরাকআত সলাত আদায় করিতেন, তারপর লোকদের সামনে বসতেন। যখন নাবী [সাঃআঃ] এরূপ করিলেন, তখন যারা পশ্চাদপদ ছিলেন তাঁরা তাহাঁর কাছে এসে শপথ করে করে অপারগতা ও আপত্তি পেশ করিতে লাগল। এরা সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাহ্যত তাহাদের ওযর-আপত্তি গ্রহণ করিলেন, তাহাদের বাইআত করিলেন এবং তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। কিন্তু তাহাদের অন্তরের অবস্থা আল্লাহ্‌র হাওয়ালা করে দিলেন। {কাব [রাদি.] বলেন} আমিও এরপর নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে হাজির হলাম। আমি যখন তাঁকে সালাম দিলাম তখন তিনি রাগান্বিত চেহারায় মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর বলিলেন, এসো। আমি সে মতে এগিয়ে গিয়ে একেবারে তাহাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, কী কারণে তুমি অংশগ্রহণ করলে না? তুমি কি যানবাহন ক্রয় করনি? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! এ কথা সুনিশ্চিত যে, আমি যদি আপনি ব্যতীত দুনিয়ার অন্য কোন ব্যক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি তার অসন্তুষ্টিকে ওযর-আপত্তি পেশের মাধ্যমে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করতাম। আর আমি তর্কে পটু। কিন্তু আল্লাহ্‌র কসম আমি পরিজ্ঞাত যে, আজ যদি আমি আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলে আমার প্রতি আপনাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিতে পারেন। আর যদি আপনার কাছে সত্য প্রকাশ করি যাতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবুও আমি এতে আল্লাহ্‌র ক্ষমা পাওয়ার অবশ্যই আশা করি। না, আল্লাহ কসম, আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহ্‌র কসম! সেই যুদ্ধে আপনার সঙ্গে না যাওয়ার সময় আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সে সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন চলে যাও, যতদিনে না তোমার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ফায়সালা করে দেন। তাই আমি উঠে চলে গেলাম। তখন বানী সালিমার কতিপয় লোক আমার অনুসরণ করিল। তারা আমাকে বলিল, আল্লাহ্‌র কসম! তুমি ইতোপূর্বে একটি ওযর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে পেশ করে দিতে পারতে না? আর তোমার এ অপরাধের কারণে তোমার জন্য রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহ্‌র কসম! তারা আমাকে বারবার কঠিনভাবে ভর্ৎসনা করিতে থাকে। ফলে আমি পূর্ব স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে গিয়ে মিথ্যা বলার বিষয়ে মনে মনে চিন্তা করিতে থাকি। এরপর আমি তাহাদের বললাম, আমার মতো এ কাজ আর কেউ করেছে কি? তারা জওয়াব দিল, হ্যাঁ, আরও দুজন তোমার মতো বলেছে এবং তাহাদের ব্যাপারেও তোমার মতো একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি তাহাদের জিজ্ঞেস করলাম, তারা কে কে? তারা বলিল, একজন মুরারা ইবনি রবী আমরী এবং অপরজন হলেন, হিলাল ইবনি উমাইয়াহ ওয়াকিফী। এরপর তারা আমাকে জানালো যে, তারা উভয়ে উত্তম মানুষ এবং তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন। সেজন্য দুজনেই আদর্শস্থানীয়। যখন তারা তাহাদের নাম উল্লেখ করিল, তখন আমি পূর্ব মতের উপর অটল রইলাম।

আর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মধ্যকার যে তিনজন তাবূকে অংশগ্রহণ হইতে বিরত ছিল তাহাদের সঙ্গে কথা বলিতে মুসলিমদের নিষেধ করে দিলেন। তদনুসারে মুসলিমরা আমাদের এড়িয়ে চলল। আমাদের প্রতি তাহাদের আচরণ বদলে ফেলল। এমনকি এ দেশ যেন আমাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় আমরা পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত করলাম।

আমার অপর দুজন সাথী তো সংকট ও শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হলেন। তারা নিজেদের ঘরে বসে বসে কাঁদতে থাকেন। আর আমি যেহেতু অধিকতর যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম তাই বাইরে বের হতাম, মুসলিমদের জামাআতে সলাত আদায় করতাম, বাজারে চলাফেরা করতাম কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে হাযির হয়ে তাঁকে সালাম দিতাম। যখন তিনি সলাত শেষে মজলিসে বসতেন তখন আমি মনে মনে বলতাম ও লক্ষ্য করতাম, তিনি আমার সালামের জবাবে তার ঠোঁটদ্বয় নেড়েছেন কি না। তারপর আমি তাহাঁর কাছাকাছি জায়গায় সলাত আদায় করতাম এবং গোপন দৃষ্টিতে তাহাঁর দিকে দেখতাম যে, আমি যখন সলাতে মগ্ন হতাম তখন তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন, আর যখন আমি তাহাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি মানুষদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে। একদা আমি আমার চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.]-এর বাগানের প্রাচীর টপকে ঢুকে পড়ে তাঁকে সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহ্‌র কসম তিনি আমার সালামের জওয়াব দিলেন না। আমি তখন বললাম, হে আবু ক্বাতাদাহ! আপনাকে আমি আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনি কি জানেন যে, আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল  [সাঃআঃ]-কে ভালবাসি? তখন তিনি নীরবতা পালন করিলেন। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি এবারও কোন জবাব দিলেন না। আমি আবারো তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল  [সাঃআঃ]-ই ভাল জানেন। তখন আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। আমি আবার প্রাচীর টপকে ফিরে এলাম।

কাব [রাদি.] বলেন, একদা আমি মাদীনাহর বাজারে হাটছিলাম। তখন সিরিয়ার এক বণিক যে মাদীনাহর বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশে এসেছিল, সে বলছে, আমাকে কাব ইবনি মালিকের সঙ্গে কেউ পরিচয় করে দিতে পারে কি? তখন লোকেরা তাকে আমার প্রতি ইশারা করে দেখিয়ে দিল। তখন সে এসে গাস্সানি বাদশার একটি পত্র আমার কাছে হস্তান্তর করিল। তাতে লেখা ছিল, পর সমাচার এই, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সাথী আপনার প্রতি জুলম করেছে। আর আল্লাহ আপনাকে মর্যাদাহীন ও নিরাশ্রয় সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের দেশে চলে আসুন, আমরা আপনার সাহায্য-সহানুভূতি করব। আমি যখন এ পত্র পড়লাম তখন আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। তখন আমি চুলা খুঁজে তার মধ্যে পত্রটি নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলাম। এ সময় পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পক্ষ থেকে এক সংবাদবাহক আমার কাছে এসে বলিল, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি আপনার স্ত্রী হইতে পৃথক থাকিবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি উত্তর দিলেন, তালাক দিতে হইবে না বরং তার থেকে পৃথক থাকুন এবং তার নিকটবর্তী হইবেন না। আমার অপর দুজন সঙ্গীর প্রতি একই আদেশ পৌঁছালেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিত্রালয়ে চলে যাও। আমার সম্পর্কে আল্লাহ্‌র ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তুমি সেখানে থাক।

কাব [রাদি.] বলেন, আমার সঙ্গী হিলাল ইবনি উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! হিলাল ইবনি উমাইয়া অতি বৃদ্ধ, এমন বৃদ্ধ যে, তাহাঁর কোন খাদিম নেই। আমি তাহাঁর খেদমত করি, এটা কি আপনি অপছন্দ করেন? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, না, তবে সে তোমার বিছানায় আসতে পারবে না। সে বলিল, আল্লাহ্‌র কসম! এ সম্পর্কে তার কোন অনুভূতিই নেই। আল্লাহ্‌র কসম! তিনি এ নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে সর্বদা কান্নাকাটি করছেন। {কাব [রাদি.] বলেন} আমার পরিবারের কেউ আমাকে পরামর্শ দিল যে, আপনিও যদি আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে অনুমতি চেয়ে নিতেন যেমনভাবে হিলাল ইবনি উমাইয়ার স্ত্রীকে অনুমতি দেয়া হয়েছে তার খিদমত করার জন্য। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট অনুমতি চাইব না। আমি যদি তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অনুমতি চাই তবে তিনি কী বলেন, তা আমার জানা নেই। আমি তো নিজেই আমার খিদমতে সক্ষম। এরপর আরও দশরাত কাটালাম। এভাবে নাবী [সাঃআঃ] যখন থেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলিতে নিষেধ করেন তখন থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল। এরপর আমি পঞ্চাশতম রাত শেষে ফাজরের সলাত আদায় করলাম এবং আমাদের এক ঘরের ছাদে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যে অবস্থার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা [কুরআনে] বর্ণনা করিয়াছেন। আমার জান-প্রাণ দুর্বিষহ এবং গোটা জগৎটা যেন আমার জন্য প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এমন সময় শুনতে পেলাম এক চীৎকারকারীর চীৎকার। সে সালা পর্বতের উপর চড়ে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করছে, হে কাব ইবনি মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কাব [রাদি.] বলেন, এ শব্দ আমার কানে পৌঁছামাত্র আমি সাজদায় পড়ে গেলাম। আর আমি বুঝলাম যে, আমার সুদিন ও খুশীর খবর এসেছে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজরের সলাত আদায়ের পর আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে আমাদের তওবা কবূল হওয়ার সুসংবাদ প্রকাশ করেন। তখন লোকেরা আমার এবং আমার সঙ্গীদ্বয়ের কাছে সুসংবাদ দিতে থাকে এবং তড়িঘড়ি একজন অশ্বারোহী আমার কাছে আসে এবং আসলাম গোত্রের অপর এক ব্যক্তি দ্রুত আগমন করে পর্বতের উপর আরোহণ করতঃ চীৎকার দিতে থাকে। তার চীৎকারের শব্দ ঘোড়া অপেক্ষাও দ্রুত পৌঁছল। যার শব্দ আমি শুনিয়াছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ প্রদান করিতে আসল, আমার তখন নিজের পরনের দুটো কাপড় ব্যতীত আমার কাছে আর কোন কাপড় ছিল না। আমি দুটো কাপড় ধার করে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে আসতে লাগল। তারা তওবা কবূলের মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমাকে মুবারকবাদ যে, আল্লাহ তাআলা তোমার তওবা কবূল করিয়াছেন।

কাব [রাদি.] বলেন, অবশেষে আমি মাসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখানে বসা ছিলেন এবং তাহাঁর চতুষ্পার্শ্বে জনতার সমাবেশ ছিল। ত্বলহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.] দ্রুত উঠে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করিলেন ও মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম! তিনি ব্যতীত আর কোন মুহাজির আমার জন্য দাঁড়াননি। আমি ত্বলহার ব্যবহার ভুলতে পারব না।

কাব [রাদি.] বলেন, এরপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সালাম জানালাম, তখন তাহাঁর চেহারা আনন্দের আতিশয্যে ঝকমক করছিল। তিনি আমাকে বলিলেন, তোমার মা তোমাকে জন্মদানের দিন হইতে যতদিন তোমার উপর অতিবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট ও উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। কাব বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] ! এটা কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে? তিনি বলিলেন, আমার পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন খুশী হইতেন তখন তাহাঁর চেহারা এত উজ্জ্বল ও ঝলমলে হত যেন পূর্ণিমার চাঁদের ফালি। এতে আমরা তাহাঁর সন্তুষ্টি বুঝতে পারতাম। আমি যখন তাহাঁর সম্মুখে বসলাম তখন আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমার তওবা কবূলের শুকরিয়া স্বরূপ আমার ধন-সম্পদ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল  [সাঃআঃ]-এর পথে দান করিতে চাই। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার কিছু মাল তোমার কাছে রেখে দাও। তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, খাইবারে অবস্থিত আমার অংশটি আমার জন্য রাখলাম।

আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] ! আল্লাহ তাআলা সত্য বলার কারণে আমাকে রক্ষা করিয়াছেন, তাই আমার তওবা কবূলের নিদর্শন ঠিক রাখতে আমার বাকী জীবনে সত্যই বলব। আল্লাহ্‌র কসম! যখন থেকে আমি এ সত্য বলার কথা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে জানিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার জানা মতে কোন মুসলিমকে সত্য কথার বিনিময়ে এরূপ নিয়ামত আল্লাহ দান করেননি যে নিয়ামত আমাকে দান করিয়াছেন। {কাব [রাদি.] বলেন} যেদিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সম্মুকে সত্য কথা বলেছি সেদিন হইতে আজ পর্যন্ত অন্তরে মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। আমি আশা পোষণ করি যে, বাকী জীবনও আল্লাহ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করবেন।

এরপর আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এ উপর এ আয়াত অবতীর্ণ করেন arbi “আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নাবী [সাঃআঃ]-এর প্রতি এবং মুহাজিরদের প্রতি ……. এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” [সূরাহ আততাওবাহ ৯/১১৭-১১৭]।

{কাব [রাদি.] বলেন} আল্লাহর শপথ! ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনো আমার উপর এত উৎকৃষ্ট নিয়ামত আল্লাহ প্রদান করেননি যা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর, তা হল রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আমার সত্য বলা ও তাহাঁর সঙ্গে মিথ্যা না বলা, যদি মিথ্যা বলতাম তবে মিথ্যাচারীদের মতো আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। সেই মিথ্যাচারীদের সম্পর্কে যখন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে তখন জঘন্য অন্তরের সেই লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তোমরা তাহাদের নিকট ফিরে আসলে তারা আল্লাহ্‌র শপথ করিবে ……. আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হইবেন না।” [সূরাহ আততাওবাহ ৯/৯৫-৯৬]। কাব [রাদি.] বলেন, আমাদের তিনজনের তওবা কবূল করিতে বিলম্ব করা হয়েছে যাদের তওবা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবূল করিয়াছেন যখন তাঁরা তার কাছে শপথ করেছে, তিনি তাহাদের বাইআত গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিয়াছেন। আমাদের বিষয়টি আল্লাহ্‌র ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্থগিত রেখেছেন।

এর প্রেক্ষাপটে আল্লাহ বলেন “সেই তিনজনের প্রতিও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।” [সূরাহ আত্তওবাহ ৯/১১৮]। কুরআনের এ আয়াতে তাহাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি যারা তাবূক যুদ্ধ থেকে পিছনে ছিল ও মিথ্যা কসম করে ওযর-আপত্তি জানিয়েছিল এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও তা গ্রহণ করেছিলেন। বরং এ আয়াতে তাহাদের প্রতি ইশারা করা হয়েছে আমরা যারা পেছনে ছিলাম এবং যাদের প্রতি সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮০ হাদীস নং ৪৪১৮; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৯, হাঃ ২৭৬৯] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯/১০. ইফক বা অপবাদ ও অপবাদ দানকারীদের তাওবা কবূল হওয়ার হাদীস।

১৭৬৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন অপবাদ রটনাকারীগণ তাহাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল।

আয়েশা [রাদি.] বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সফরে যেতে ইচ্ছে করিতেন তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীগণের [নির্বাচনের জন্য] কোরা ব্যবহার করিতেন। এতে যার নাম উঠত তাকেই তিনি সঙ্গে নিয়ে সফরে যেতেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, এমনি এক যুদ্ধে তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন, এতে আমার নাম উঠে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সফরে গেলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিলের পর ঘটেছিল। তখন আমাকে হাওদাজসহ সাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হত। এমনিভাবে আমরা চলতে থাকলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন এ যুদ্ধ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন, তখন তিনি [গৃহাভিমুখে] প্রত্যাবর্তন করিলেন। ফেরার পথে আমরা মাদীনাহর নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য আদেশ করিলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দেয়া হলে আমি উঠলাম এবং [প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য] পায়ে হেঁটে সেনাছাউনী পেরিয়ে [সামনে] গেলাম। অতঃপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, [ইয়ামানের অন্তর্গত] যিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরি করা আমার গলার হারটি ছিঁড়ে কোথায় পড়ে গেছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি খোঁজ করিতে লাগলাম। হার খুঁজতে খুঁজতে আমার আসতে দেরী হয়ে যায়। আয়েশা [রাদি.] বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আমি আরোহণ করতাম। তারা ভেবেছিলেন, আমি ওর মধ্যেই আছি, কারণ খাদ্যাভাবে মহিলারা তখন খুবই হালকা হয়ে গিয়েছিল এবং তাহাদের দেহ মাংসল ছিল না। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তা হালকা বিষয়টিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজ জায়গায় ফিরে এসে দেখি তাঁদের [সৈন্যদের] কোন আহ্বানকারী এবং কোন জওয়াব দাতা সেখানে নেই। তখন আমি আগে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবলাম, তাঁরা আমাকে দেখিতে না পেয়ে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে ধরলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনি মুআত্তাল [রাদি.] {যাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র সংগ্রহের জন্য পশ্চাতে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন} সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিলেন। তিনি সকালে আমার অবস্থানস্থলের কাছে এসে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে চিনে ফেললেন। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি আমাকে দেখেছিলেন। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়লে আমি তা শুনে জেগে উঠলাম এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহ্‌র কসম! আমি কোন কথা বলিনি এবং তাহাঁর থেকে ইন্না লিল্লাহ…….. পাঠ ব্যতীত অন্য কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং সওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে উঠে পড়লাম। পরে তিনি আমাকেসহ সওয়ারীকে টেনে আগে আগে চললেন, অতঃপর ঠিক দুপুরে প্রচণ্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সঙ্গে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করেছিলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা [আমার উপর অপবাদ দিয়ে] ধ্বংস হয়ে গেল। তাহাদের মধ্যে এ অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল সে হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সুলূল।

বর্ণনাকারী উরওয়াহ [রাদি.] বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার [আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সুলূল] সামনে অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত, খুব ভাল করে শুনত আর শোনা কথার ভিত্তিতেই ব্যাপারটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত। উরওয়াহ [রাদি.] আরো বর্ণনা করিয়াছেন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হা্সসান ইবনি সাবিত, মিসতাহ ইবনি উসাসা এবং হামনা বিনত জাহাশ [রাদি.] ব্যতীত আর কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা কয়েকজন লোকের একটি দল ছিল, এটুকু ব্যতীত তাহাদের ব্যাপারে আমার আর কিছু জানা নেই। যেমন [আল-কুরআনে] মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে আবদুল্লাহ ইবনি উবাই বিন সুলূল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী উরওয়াহ [রাদি.] বলেন, আয়েশা [রাদি.] এ ব্যাপারে হাসসান ইবনি সাবিত [রাদি.]-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করিতেন না। তিনি বলিতেন, হাসসান ইবনি সাবিত [রাদি.] তো সেই লোক যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন,

আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত।

আয়েশা [রাদি.] বলেন, অতঃপর আমরা মাদীনায় আসলাম। মাদীনায় এসে এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকারীদের কথা নিয়ে লোকেদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হইতে থাকল। কিন্তু এগুলোর কিছুই আমি জানি না। তবে আমি সন্দেহ করছিলাম এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর আগে আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে যে রকম স্নেহ-ভালবাসা পেতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল “তুমি কেমন আছ” জিজ্ঞেস করে চলে যেতেন। তাহাঁর এ আচরণই আমার মনে ভীষণ সন্দেহ জাগিয়ে তোলে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার আগে পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। উম্মে মিসতাহ [রাদি.] [মিসতাহর মা] একদা আমার সঙ্গে পায়খানার দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এটা ছিল আমাদের ঘরের পাশে পায়খানা তৈরি করার আগের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবের লোকদের অবস্থার মতো ছিল। তাহাদের মতো আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি [অভ্যাস না থাকায়] বাড়ির পার্শ্বে পায়খানা তৈরি করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। আয়েশা [রাদি.] বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ “যিনি ছিলেন আবু রূহম ইবনি মুত্তালিব ইবনি আবদে মানাফির কন্যা, যার মা সাখার ইবনি আমির-এর কন্যা ও আবু বকর সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনি উসাসা ইবনি আব্বাদ ইবনি মুত্তালিব যার পুত্র” একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ থেকে নিস্ক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বলিলেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে যোগদানকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বলিলেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্বন্ধে কী কথা বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সে আমার সম্পর্কে কী বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকারীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে জানালেন। আয়েশা [রাদি.] বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরনো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কেমন আছ? আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন? আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে অনুমতি দিলেন। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কী আলোচনা করছে? তিনি বলিলেন, বেটী, এ ব্যাপারটিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহ্‌র কসম! সতীন আছে এমন স্বামীর সোহাগ লাভে ধন্যা সুন্দরী রমণীকে তাহাঁর সতীনরা বদনাম করিবে না, এমন খুব কমই হয়। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, সুবহানাল্লাহ। লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। আয়েশা [রাদি.] বর্ণনা করেন, সারারাত আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে সকাল হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার চোখের পানিও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার স্ত্রীর [আমার] বিচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে আলী ইবনি আবু ত্বলিব এবং উসামাহ ইবনি যায়দ [রাদি.]-কে ডেকে পাঠালেন।

তিনি {আয়েশা [রাদি.]} বলেন, উসামাহ [রাদি.] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাহাদের প্রতি {নাবী [সাঃআঃ]-এর} ভালবাসার কারণে বলিলেন, তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাহাদের সম্পর্কে আমি ভাল ব্যতীত আর কিছুই জানি না। আর আলী [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তিনি ব্যতীত আরো বহু মহিলা আছে। অবশ্য আপনি এ ব্যাপারে দাসী {বারীরাহ [রাদি.]}-কে জিজ্ঞেস করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। আয়েশা [রাদি.] বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বারীরাহ [রাদি.]-কে ডেকে বলিলেন, হে বারীরাহ! তুমি তাহাঁর মধ্যে কোন সন্দেহপূর্ণ আচরণ দেখেছ কি? বারীরাহ [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, সে আল্লাহ্‌র শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন, আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাঁকে দোষী বলা যায়। তবে তাহাঁর সম্পর্কে কেবল এটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা কিশোরী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বাক্রী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে।

তিনি {আয়েশা [রাদি.]} বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সঙ্গে সঙ্গে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে আবদুল্লাহ ইবনি উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলিলেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্ত করিবে? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ব্যতীত আর কিছুই জানি না। আর তাঁরা এক ব্যক্তির [সাফওয়ান ইবনি মুআত্তাল] নাম উল্লেখ করছে যার ব্যাপারেও আমি ভাল ব্যতীত কিছু জানি না। সে তো আমার সঙ্গেই আমার ঘরে যায়। আয়েশা [রাদি.] বলেন, বানী আবদুল আশহাল গোত্রের সাদ [ইবনি মুআয] [রাদি.] উঠে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তাহলে তার শিরশ্চেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই করব। আয়েশা [রাদি.] বলেন, এ সময় হাসসান ইবনি সাবিত [রাদি.]-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের নেতা সাদ ইবনি উবাদা [রাদি.] দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করিলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেনঃ এ ঘটনার আগে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক ছিলেন। গোত্রীয় অহঙ্কারে উত্তেজিত হয়ে তিনি সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-কে বলিলেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহ্‌র কসম! তুমি তাকে হত্যা করিতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। সে তোমার গোত্রের লোক হলে তুমি তার নিহত হওয়া কখনো পছন্দ করিতে না। তখন সাদ ইবন মুআয [রাদি.]-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনি হুযাইর [রাদি.] সাদ ইবনি উবাদাহ [রাদি.]-কে বলিলেন, বরং তুমিই মিথ্যা বলছ। আল্লাহ্‌র কসম! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ নিয়ে কথাবার্তা বলছ।

তিনি {আয়েশা [রাদি.]} বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে যায়। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের শান্ত করিলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। চোখের ধারা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও হয়নি। তিনি বলেন, আমি কান্না করছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। এমনি করে একদিন দুরাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিলাম। এর মধ্যে আমার একটুও ঘুম হয়নি। বরং অনবরত আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন কান্নার কারণে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সঙ্গে কাঁদতে আরম্ভ করিল। তিনি বলেন, আমরা কান্না করছিলাম এই মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে এসে সালাম করিলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার পার্শ্বে এসে এভাবে তিনি আর বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার ব্যাপারে তাহাঁর নিকট কোন ওয়াহী আসেনি। আয়েশা [রাদি.] বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বলিলেন, আয়েশা তোমার ব্যাপারে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে পবিত্র হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা তওবা কবূল করেন।

তিনি {আয়েশা [রাদি.]} বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কথা শেষ করলে আমার অশ্রুধারা বন্ধ হয়ে যায়। এক ফোঁটা অশ্রুও আমি আর বের করিতে পারলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলছেন আমার হয়ে তার জবাব দিন। আমার আব্বা বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কী জবাব দিব তা জানি না। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলছেন, আপনি তার উত্তর দিন। আম্মা বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কী উত্তর দিব তা জানি না। তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশী পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে আমি নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করিয়াছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে দৃঢ়মূল হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যে সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র, তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহ্‌র কসম! আমি ও আপনারা যে বিপাকে পড়েছি এর জন্য ইউসুফ [আ.]-এর পিতার কথা ব্যতীত আমি কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেনঃ “কাজেই পূর্ণ ধৈর্য্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ এ ব্যাপারে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল।” অতঃপর আমি মুখ ঘুরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তাআলা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন তবে আল্লাহ্‌র কসম, আমি কক্ষনো ভাবিনি যে, আমার সম্পর্কে আল্লাহ ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন যা পাঠ করা হইবে। আমার সম্পর্কে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতটা উত্তম মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অনেক অধম বলে ভাবতাম। তবে আমি আশা করতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে স্বপ্নযোগে দেখানো হইবে যার ফলে আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করবেন। আল্লাহ্‌র কসম! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখনো তাহাঁর বসার জায়গা ছেড়ে যাননি এবং ঘরের লোকজনও কেউ ঘর হইতে বেরিয়ে যাননি। এমন সময় তাহাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ শুরু হল। ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তাহাঁর যে বিশেষ ধরনের কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা হল। এমনকি ভীষণ শীতের দিনেও তাহাঁর শরীর হইতে মোতির দানার মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িতে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভারে, যা তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এ অবস্থা কেটে গেলে তিনি হাসিমুখে পহেলা যে কথা উচ্চারণ করিলেন সেটা হল, হে আয়েশা! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দিয়েছেন।

তিনি {আয়েশা [রাদি.]} বলেন, এ কথা শুনে আমার মা আমাকে বলিলেন, তুমি উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতি সম্মান কর। আমি বললাম, আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাহাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো প্রশংসা করব না। আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ [আমার পবিত্রতার ব্যাপারে] যে দশটি আয়াত অবতীর্ণ করিয়াছেন, তা হল,

১১. “যারা এ অপবাদ রটনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাহাদের প্রত্যেকের জন্য আছে প্রতিফল যতটুকু পাপ সে করেছে। আর এ ব্যাপারে যে নেতৃত্ব দিয়েছে তার জন্য আছে মহাশাস্তি।

১২. তোমরা যখন এটা শূনতে পেলে তখন কেন মুমিন কেন মুমিন স্ত্রীরা তাহাদের নিজেদের লোক সম্পর্কে ভাল ধারণা করিল না আর বলিল না, এটা তো খোলাখুলি অপবাদ।

১৩. তারা চারজন সাক্ষী হাযির করিল না কেন? যেহেতু তারা সাক্ষী হাযির করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহ্‌র নিকট তারাই মিথ্যাবাদী।

১৪. দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের উপর যদি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো, তবে তোমরা যাতে তড়িঘড়ি লিপ্ত হয়ে পড়েছিলে তার জন্য মহা শাস্তি তোমাদেরকে পাকড়াও করত।

১৫. যখন এটা তোমরা মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে আর তমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলছিলে যে বিষয়ে তমাদের কোন জ্ঞান ছিল না, আর তোমরা এতাকে নগণ্য ব্যাপার মনে করেছিলে, কিন্ত আল্লাহ্‌র নিকট তা ছিল গুরুতর ব্যাপার।

১৬. তোমরা যখন এটা শুনলে তখন তোমরা কেন বললে না যে, এ ব্যাপারে আমাদের কথা বলা ঠিক নয়। আল্লাহ্‌ পবিত্র ও মহান, এটা তো এক গুরুতর অপবাদ!

১৭. আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন তোমরা আর কখনো এর [অর্থাৎ এ আচরণের] পুনরাবৃত্তি করনা যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।

১৮. আল্লাহ তোমাদের জন্য স্পষ্টভাবে আয়াত বর্ণনা করছেন, কারণ তিনি হলেন সর্ববিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী, বড়ই হিকমতওয়ালা।

১৯. যারা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তৃতি ঘটুক তাহাদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে। আল্লাহ্‌ জানেন তোমরা জান না।

২০. তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে [তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে], আল্লাহ দয়ার্দ্র ও বড়ই দয়াবান। [সূরাহ আন-নূর ২৪/১১-২০]।

আমার পবিত্রতার ব্যাপারে আল্লাহ এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করিলেন।

আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] মিসতাহ ইবনি উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করিতেন। কিন্তু আয়েশা [রাদি.] সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] কসম করে বলিলেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন “তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহ্‌র পথে যারা গৃহত্যাগ করেছে তাহাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাহাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাহাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল; পরম দয়ালু” [সূরাহ আন-নূর ২৪/২২]।

আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] বলে উঠলেন, হ্যাঁ, আল্লাহ্‌র কসম! অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ [রাদি.]-এর জন্য যে অর্থ খরচ করিতেন তা পুনঃ দিতে শুরু করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাঁকে এ অর্থ দেয়া আর কখনো বন্ধ করব না।

আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, আমার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যায়নাব বিনত জাহাশ [রাদি.]-কেও জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি যাইনাব [রাদি.]-কে বলেছিলেন, তুমি আয়েশা [রাদি.] সম্পর্কে কী জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমি আমার চোখ ও কানকে হিফাযত করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাহাঁর ব্যাপারে ভাল ব্যতীত আর কিছুই জানি না।

আয়েশা [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাহাঁর তাকওয়ার কারণে তাঁকে রক্ষা করিয়াছেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, অথচ তাহাঁর বোন হামনা [রাদি.] তাহাঁর পক্ষ নিয়ে অপবাদ রটনাকারীদের মতো অপবাদ ছড়াচ্ছিলেন। ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেলেন।

বর্ণনাকারী ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হলো এইঃ উরওয়াহ [রাদি.] বলেন, আয়েশা [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহ্‌র কসম! যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলিতেন, আল্লাহ মহান। ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি কোন রমণীর বস্ত্র অনাবৃত করে কোনদিন দেখিনি। আয়েশা [রাদি.] বলেন, পরে তিনি আল্লাহ্‌র পথে শহীদ হন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৪১৪১; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ১০ হাঃ ২৭৭০] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৬৪. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আমার সম্পর্কে আলোচনা চলছিল যা রটনা হয়েছে এবং আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তখন আমার ব্যাপারে ভাষণ দিতে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দাঁড়ালেন। তিনি প্রথমে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করিলেন। তারপর আল্লাহ্‌র প্রতি যথাযোগ্য হামদ ও সানা পাঠ করিলেন। এরপরে বলিলেন, হে মুসলিমগণ! যে সকল লোক আমার স্ত্রী সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছে, তাহাদের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহ্‌র কসম! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে মন্দ কিছুই জানি না। তাঁরা এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে, আল্লাহ্‌র কসম, তার ব্যাপারেও আমি কখনও খারাপ কিছু জানি না এবং সে কখনও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরে প্রবেশ করে না এবং আমি যখন কোন সফরে গিয়েছি সেও আমার সঙ্গে সফরে গিয়েছে।

তারপর যখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমার ঘরে আসলেন। তখন তিনি আমার খাদিমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। সে বলিল, আল্লাহ্‌র কসম, আমি এ ব্যতীত তাহাঁর কোন দোষ জানি না যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং বাক্রী এসে তাহাঁর খামির অথবা বলিলেন, গোলা আটা খেয়ে যেত। তখন কয়েকজন সহাবী তাকে ধমক দিয়ে বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তাহাঁর নিকট ঘটনা খুলে বলিলেন। তখন সে বলিল, সুবহান আল্লাহ্, আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাহাঁর ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কিছু জানি না, যা একজন স্বর্ণকার তার এক টুকরা লাল খাঁটি স্বর্ণ সম্পর্কে জানে। এ ঘটনা সে ব্যক্তির কাছেও পৌঁছল যার সম্পর্কে এ অভিযোগ উঠেছে। তখন তিনি বলিলেন, সুবহান আল্লাহ্! আল্লাহ্‌র কসম, আমি কখনও কোন মহিলার পর্দা খুলিনি।

আয়েশা [রাদি.] বলেন, পরবর্তী সময়ে এ [অভিযুক্ত] লোকটি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ রূপে নিহত হন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৪৭৫৭; মুসলিম ৪৪ অধ্যায় ১০ হাঃ ২৪৮৮] তাওবা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “তাওবা । পাপ থেকে তাওবাহ করলে তাওবাহ কবূল হয়”

Leave a Reply