তকদীরে বিশ্বাস – আল্লাহর বিধান সুনির্ধারণে নির্ধারিত।
তকদীরে বিশ্বাস – আল্লাহর বিধান সুনির্ধারণে নির্ধারিত। >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮২, তাক্দীর, অধ্যায়ঃ (১-১৬)=১৬টি
৮২/১. অধ্যায়ঃ তাকদীর [৫২]
৮২/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর ইলম-মুতাবিক (লেখার পর) কলম শুকিয়ে গেছে।
৮২/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ মানুষ যা করিবে এ সম্পর্কে আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
৮২/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর বিধান সুনির্ধারণে নির্ধারিত। (সুরা আহযাব ৩৩/৩৮)
৮২/৫. অধ্যায়ঃ আমলের (ভাল-মন্দ) নির্ভর করে শেষ অবস্থার ওপর
৮২/৬. অধ্যায়ঃ বান্দার মানতকে তাক্দীরের প্রতি অর্পণ করা।
৮২/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই প্রসঙ্গে
৮২/৮. অধ্যায়ঃ নিষ্পাপ সে-ই আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন।
৮২/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আমি যে সব জনবসতি ধ্বংস করেছি তাদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে তারা আর ফিরে আসবে না- (সুরা আম্বিয়া ২১/৯৫)।. আল্লাহর বাণীঃ ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার সম্প্রদায়ের আর কোন লোক ঈমান আনবে না- (সুরা হূদ ১১/৩৬), আল্লাহর বাণীঃ তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে আর কেবল পাপাচারী কাফির জন্ম দিতে থাকবে- (সুরা নূহ ৭১/২৭)
৮২/১০. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী) আমি তোমাকে (মিরাজের মাধ্যমে) যে দৃশ্য দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত (জাক্কুম) গাছটিও মানুষদের পরীক্ষা করার জন্য (যে কারা তা বিশ্বাস করে নেক্কার হয় আর কারা তা অবিশ্বাস করে পাপী হয়)। (সুরা ইসরা ১৭/৬০)
৮২/১১. অধ্যায়ঃ আদম (আঃ) ও মূসা (আঃ) আল্লাহর সামনে বাদানুবাদ করেন।
৮২/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ যা দান করেন তা রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই।
৮২/১৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আশ্রয় চায় খারাপ পরিণতি ও দুর্ভাগ্য হইতে।
৮২/১৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন। [৫৫] (সুরা আনফাল ৮/২৪)
৮২/১৫. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণীঃ) আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাছাড়া অন্য কিছুই আমাদের ঘটবে না- (সুরা আত্-তওবা ৯/৫১)।
৮২/১৬. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী): আমরা কিছুতেই পথ পেতাম না যদি না আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখাতেন- (সুরা আরাফ ৭/৪৩), আল্লাহ যদি আমাকে সঠিক পথ দেখাতেন, তাহলে আমি অবশ্যই মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভূক্ত হতাম। (সুরা আয্ যুমার ৪৯/৫৭)
৮২/১. অধ্যায়ঃ তাকদীর [৫২]
[৫২] তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করা ঈমানের একটি অন্যতম রুকন। (ফাতহুল বারী)
৬৫৯৪
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (শুক্র হিসেবে) জমা থাকে। তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন রক্তপিন্ড, তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন গোশত পিন্ডাকারে থাকে। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান এবং তাকে রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য- এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেন, কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের আমাল করিতে থাকে। এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত বা এক গজের তফাৎ থাকে। এমন সময় তাক্দীর তার ওপর প্রাধান্য লাভ করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমাল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি জান্নাতীদের আমাল করিতে থাকে। এমন কি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত বা দুহাত তফাৎ থাকে। এমন সময় তাক্দীর তার উপর প্রাধান্য লাভ করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমাল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবু আবদুল্লাহ [বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন যে, আদাম তার বর্ণনায় কেবল ذِرَاعٌ (এক গজ) বলেছেন।[2] [৩২০৮] (আঃপ্রঃ- ৬১৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪২)
তাকদীর[১]
[১] তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করা ঈমানের একটি অন্যতম রুকন। (ফাতহুল বারী)
[2] অতীতে যা ঘটেছে, বর্তমানে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সবই আল্লাহ তাআলার চোখের সামনে রয়েছে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই তিনি সমানভাবে জ্ঞাত। প্রত্যেকটি মানুষ কখন জন্মিবে, কখন মরবে আর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মুহূর্তে কোন আমাল করিবে সবই তাহাঁর জানা। মৃত্যুর পর কেউ জান্নাতে যাবে, না জাহান্নামে যাবে কিংবা প্রথমে জাহান্নামে যাওয়ার পর আবার জান্নাতে যাবে- এ সব কিছুই তাহাঁর জানা। মাতৃগর্ভে ১২০ দিন পর আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে লিখিয়ে দেন কতটা রিযিক সে পাবে, কখন কোথায় মরবে, সে জান্নাতী হইবে, না জাহান্নামী হইবে। তিনি তো সবই জানেন, আর তাই তিনি লিখিয়ে দেন। ভাগ্যে লিখে দেয়ার কারণে কেউ জান্নাতী-জাহান্নামী হয় না, নিজের আমলের কারণেই জান্নাতী জাহান্নামী হয়। বান্দার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আল্লাহর জানা কথাগুলো আগেই লিখে দেয়ার নামই তাকদীর। তাকদীর গড়ার দায়-দায়িত্ব বান্দার, তাকদীর গড়ার স্বাধীনতা আল্লাহ তাহাঁর বান্দাকে দিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্ত করেন না যে পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে- (সুরা রাদ-১১)। অবশ্য আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে ফযীলাত বা প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা দান করেন। কিন্তু দুনিয়াবী প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আখিরাতের সফলতা বা ব্যর্থতার কোন সম্পর্ক নাই। কেউ জান্নাতের পথে যেতে যেতে শেষ মুহূর্তে জাহান্নামে চলে গেলেও তার জন্য সে নিজেই দায়ী। আর আল্লাহ- যিনি তাকদীর লেখান তিনি ভালভাবেই জানেন যে, শেষ মুহূর্তে ঐ ব্যক্তি নিজেই দিক পরিবর্তন করে জাহান্নামে পৌঁছবে, যদিও সে সারাজীবন জান্নাতে যাওয়ার কাজই করেছে। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিবেক বুদ্ধি দান করিয়াছেন এবং তাকে ভাল ও মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, তার বিবেক-বুদ্ধিকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার স্বাধীনতাও দিয়েছেন আর এর দ্বারা তাকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন। এছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষসহ কোন কিছুকেই বেকার সৃষ্টি করেননি। অতএব তিনি যখন কোন কিছুকেই বেকার হিসেবে সৃষ্টি করেননি তখন বিবেকসম্পন্ন এ মানব জাতিকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিয়াছেন সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়ে তাদেরকে তো পরীক্ষা করবেনই। আল্লাহ তাআলা ভাল আর মন্দের সৃষ্টিকর্তা, তিনি এগুলো সৃষ্টি করিয়াছেন মানব ও দানব জাতিদ্বয়কে পরীক্ষা করার জন্যই। কিন্তু এ পরীক্ষায় কে কেমন ফলাফল করিবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর অগ্রিম জ্ঞান দ্বারাই অবগত রয়েছেন। সেটিই হচ্ছে তাকদীর যার কোন ব্যতিক্রম হইবে না। এ তাকদীরের উপর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ঈমান আনা মুমিন হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত।
সারা জীবন ভাল কাজ করে শেষ জীবনে মন্দ কাজ করে জাহান্নামে যাওয়ার পরিণতি এড়ানোর জন্যই আল্লাহ বলেছেন- তোমরা মুসলমান না থাকা আবস্থায় কক্ষনো মরোনা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের উপর কায়েম থাক- (আল-ইমরান-১০২)
হাদীসটি থেকে জানা যায় :
(১) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের সত্যতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ যিনি তুচ্ছ কাদামাটি হইতে রক্ত, গোশত, হাড্ডি, ভ্রুণ তারপর রূহ ফুঁকে সৃষ্টিজীব বানাতে সক্ষম, তিনি মৃত্যুর পর বিক্ষিপ্ত ধূলি কণাতে মিশ্রিত সৃষ্টিজীবকে তাহাঁর সামনে একত্রিত করিতেও সক্ষম।
(২) মানুষের সর্বশেষ আমলই গুরুত্বপূর্ণ।
(৩) বাহ্যিকভাবে অনেক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি মন্দ আমল করিবে এবং অনেক দুর্ভাগা ভাল আমল করিবে। কিন্তু আল্লাহর ইলমে তার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ বা নির্ধারণ করা হয়েছে তার কোনই পবিরর্তন হইবে না। । [উল্লেখ্য আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে বিবেক-বুদ্ধি দান করে ভালো-মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে তা গ্রহণ এবং বর্জন করার স্বাধীনতা প্রদান করিয়াছেন। এ স্বাধীনতা দেয়ার মূল কারণ তাকে পরীক্ষা করা যে, সে কোন পথের যাত্রী হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ তাহাঁর পূর্ব জ্ঞান দ্বারা জানেন যে, সে ভাল পথ অবলম্বন করিবে নাকি মন্দ পথ অবলম্বন করিবে। আর এ অগ্রীম জ্ঞান দ্বারাই তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী]।
(৪) আমলের কিছু রয়েছে অগ্রবর্তী এবং কিছু রয়েছে পরবর্তী। সুতরাং অগ্রবর্তী তাক্বদীর যা আল্লাহর ইলমে রয়েছে। আর পরবর্তী তাক্বদীর যা মায়ের গর্ভস্থ সন্তানের উপর নির্ধারণ করা হয়। যেমন হাদীসে এসেছে, আর এই পরবর্তী তাক্বদীরগুলো অনেক সময় পরিবর্তন হয়। মুসলিম শরীফে আব্দুল্লাহ বিন উমারের মারফু সূত্রে বর্ণিত كتب الله مقادير الخلائق قبل ان يخلق السماوات والأرض بخمسين الف سنة হাদীসটি আল্লাহ তাআলার ইলম অনুসারে লাওহে মাহফূজে যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তার উপর আমল হয়েছে।
(৫) শেষ পরিণতির খারাপী থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনার প্রতি উৎসাহ।
(৬) ভাল ও মন্দের সব কিছুই আল্লাহর নির্ধারিত তাক্বদীর ও সৃষ্টি। باب كيف كانت يمين النبي রাসুল (সাঃ) শপথ করার সময় যে শব্দগুলো দ্বারা অবিরাম বা বেশী বেশী শপথ করিতেন তা চার প্রকার।
(১) والذي نفسي بيده (২) والذي نفسي محمد بيده (৩) والله (৪) ورب الكعبة , আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণবাচক শব্দ ছাড়া অন্য নামে শপথ নিষিদ্ধ। যেমন মা-বাবার শপথ, কুরআনের শপথ ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা তার কোন সৃষ্ট জীবের শপথ করিতে পারেন যেমন তিনি শপথ করে বলেন : والشمس وضحها, والعصر ইত্যাদি। (ফাতহুল বারী)
৬৫৯৫
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহ রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করিয়াছেন। তিনি বলেন, হে প্রতিপালক! এটি বীর্য। হে প্রতিপালক! এটি রক্তপিণ্ড। হে প্রতিপালক! এটি গোশ্তপিণ্ড। আল্লাহ যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করিতে চান, তখন ফেরেশতা বলে, হে প্রতিপালক! এটি নর হইবে, না নারী? এটি দুর্ভাগা হইবে, না ভাগ্যবান? তার রিযক কী পরিমাণ হইবে? তার জীবনকাল কী হইবে? তখন (আল্লাহর নির্দেশমত) তার মায়ের পেটে থাকাকালে ঐ রকমই লিখে দেয়া হয়। (আঃপ্রঃ- ৬১৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৩)
৮২/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর ইলম-মুতাবিক (লেখার পর) কলম শুকিয়ে গেছে।
আল্লাহর বাণীঃ “আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে গোমরাহ করিয়াছেন”- (সুরা জাসিয়াহ ৪৫/২৩) আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেনঃ যার সম্মুখীন তুমি হইবে (তোমার যা ঘটবে) তা লেখার পর কলম শুকিয়ে গেছে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, (আরবী) তাদের উপর নেকবখতি প্রাধান্য বিস্তার করেছে।
৬৫৯৬
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামীদের থেকে জান্নাতীদেরকে চেনা যাবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলিল, তাহলে আমলকারীরা আমল করিবে কেন? তিনি বললেনঃ প্রতিটি লোক ঐ আমলই করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা যা তার জন্য সহজ করা হয়েছে। [৭৫৫১; মুসলিম ৩৮/১, হাদীস ২৬৪৯] (আঃপ্রঃ- ৬১৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৪)
৮২/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ মানুষ যা করিবে এ সম্পর্কে আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
৬৫৯৭
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (একবার) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে মুশরিকদের নাবালিগ সন্তানাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলিলেন, তারা (বাঁচলে) কী আমল করত এ ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।(আঃপ্রঃ- ৬১৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৫)
৬৫৯৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে মুশরিকদের নাবালিগ সন্তানাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ তারা যা করত এ ব্যাপারে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি জানেন।(আঃপ্রঃ- ৬১৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৬)
৬৫৯৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন সন্তান যখন জন্ম লাভ করে, তখন স্বভাবধর্মের (ইসলামের) ওপরই জন্ম লাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহূদী বা নাসারা বানিয়ে দেয়। যেমন কোন চতুষ্পদ জন্তু যখন বাচ্চা প্রদান করে তখন কি কানকাটা দেখিতে পাও যতক্ষণ না তোমরা তার কান কেটে দাও?(আঃপ্রঃ- ৬১৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৭)
৬৬০০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! নাবালিগ অবস্থায় যে মারা যায় তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেনঃ তারা যা করত এ ব্যাপারে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি জানেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৭)
৮২/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর বিধান সুনির্ধারণে নির্ধারিত। (সুরা আহযাব ৩৩/৩৮)
৬৬০১
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন নারী নিজে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে যেন অন্য নারীর তালাক না চায়। কেননা, তার জন্য (তাকদীরে) যা নির্ধারিত আছে তাই সে পাবে। (আঃপ্রঃ- ৬১৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৮)
৬৬০২
উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকটে ছিলাম। তাহাঁর সঙ্গে সাদ ইবনু উবাদাহ, উবাই ইবন কাব ও মুআয ইবনু জাবালও ছিলেন। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কোন এক কন্যার পাঠানো এক লোক খবর নিয়ে এলো যে, তাহাঁর পুত্র সন্তান মরণাপন্ন। তখন তিনি লোকটির মারফত কন্যাকে বলে পাঠালেন যে, আল্লাহর জন্যই- যা তিনি নিয়ে যান। আর আল্লাহর জন্যই- যা তিনি দান করেন। প্রত্যেকের জন্য একটি সময় নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সাওয়াবের আশা করে। (আঃপ্রঃ- ৬১৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৯)
৬৬০৩
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একবার নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় আনসারদের এক লোক এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো বাঁদীদের সঙ্গে সংগত হই অথচ মালকে ভালবাসি। কাজেই আযলর ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা কি এ কাজ কর? তোমাদের জন্য এটা করা আর না করা দুটোই সমান। কেননা, যে কোন জীবন যা পয়দা হওয়াকে আল্লাহ লিখে দিয়েছেন তা পয়দা হইবেই।(আঃপ্রঃ- ৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫০)
৬৬০৪
হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একবার আমাদের প্রতি এমন একটি ভাষণ প্রদান করিলেন যাতে কেয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হইবে এমন কোন কথাই বাদ দেননি। এগুলো মনে রাখা যার সৌভাগ্য হয়েছে সে স্মরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গেছে। আমি ভুলে যাওয়া কোন কিছু যখন দেখিতে পাই তখন তা চিনতে পারি এভাবে যেমন, কোন ব্যক্তি কাউকে হারিয়ে ফেললে আবার যখন তাকে দেখিতে পায় তখন চিনতে পারে। [মুসলিম ৫২/৬, হাদীস ২৮৯১] (আঃপ্রঃ- ৬১৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫১)
৬৬০৫
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাহাঁর সঙ্গে ছিল একটুকরা খড়ি। যা দিয়ে তিনি মাটির উপর দাগ টানছিলেন। তিনি তখন বললেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন লোক নেই যার ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লেখা হয়নি। লোকদের ভিতর থেকে এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি তাহলে (এর উপর) নির্ভর করব না? তিনি বললেনঃ না, তোমরা আমাল কর। কেননা, প্রত্যেকের জন্য আমাল সহজ করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى الْآيَةَ । [১৩৬২] (আঃপ্রঃ- ৬১৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫২)
৮২/৫. অধ্যায়ঃ আমলের (ভাল-মন্দ) নির্ভর করে শেষ অবস্থার ওপর
৬৬০৬
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা খায়বারের যুদ্ধে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সঙ্গীগণের মধ্য হইতে ইসলামের দাবি করছিল এমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে বলিলেন যে, এই লোকটি জাহান্নামী। যখন যুদ্ধ শুরু হল, লোকটি ভীষণভাবে যুদ্ধ করিল। এতে সে অত্যন্ত ক্ষতবিক্ষত হলো। তবু সে অটল রইল। সাহাবীগণের মাঝ থেকে একজন নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যে ব্যক্তি সম্পর্কে জাহান্নামী হইবে বলে বলেছিলেন সে তো ভীষণভাবে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছে এবং তাতে সে বিপুলভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি বললেনঃ জেনে রাখ, সে জাহান্নামী! এতে কতক মুসলিমের মনে সন্দেহের ভাব হল। আর লোকটি ঐ অবস্থায় ছিল। হঠাৎ করে সে ক্ষতের যন্ত্রণা অনুভব করিতে লাগল আর অমনিই সে স্বীয় হাতটি তীর রাখার স্থানে বাড়িয়ে দিল এবং একটি তীর বের করে আপন বক্ষে বিঁধিয়ে দিল। তখন কয়েকজন মুসলিম রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে দৌড়িয়ে গিয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আপনার কথাকে সত্য করে দেখালেন। অমুক ব্যক্তি তো আত্মহত্যা করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে বিলাল! উঠ, এবং ঘোষণা কর যে, মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করিবে না। আর আল্লাহ পাপী বান্দাকে দিয়েও এ দ্বীনের সাহায্য করে থাকেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৩)
৬৬০৭
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে থেকে যে সমস্ত মুসলিম যুদ্ধ করিয়াছেন তাঁদের মাঝে একজন ছিল ভীষণ বেগে আক্রমণকারী। নাবী (সাঃআঃ) তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামীকে দেখিতে পছন্দ করে সে যেন এই লোকটার দিকে তাকায়। লোকদের ভিতর থেকে এক লোক সেই লোকটির অনুসরণ করিল। আর সে তখন ভীষণভাবে মুশরিকদের সঙ্গে মুকাবিলা করছিল। সে যখম হয়ে তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করিল। সে তার তরবারীর ধারালো দিকটি নিজের বুকের উপর চেপে ধরল। এমন কি দুকাঁধের মাঝ দিয়ে তরবারী বক্ষ ভেদ করিল। (তখন) লোকটি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে দৌড়ে এসে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি (সত্যিই) আপনি আল্লাহর রাসুল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কী হল? লোকটি বলিল, আপনি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছিলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী লোক দেখিতে পছন্দ করে সে যেন এ লোকটাকে দেখে নেয়।” অথচ লোকটি অন্যান্য মুসলিমের চেয়ে তীব্র আক্রমণকারী ছিল। তাই আমার ধারণা ছিল এ লোকটির মৃত্যু এমন অবস্থায় হইবে না। যখন সে আঘাত পেল, তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করিল এবং আত্মহত্যা করে দিল। নাবী (সাঃআঃ) একথা শুনে বললেনঃ নিশ্চয় কোন বান্দা জাহান্নামীদের আমল করেন, কিন্তু আসলে সে জান্নাতী। আর কোন বান্দা জান্নাতের অধিবাসীর আমল করেন কিন্তু আসলে সে জাহান্নামী। নিশ্চয়ই আমলের ভাল-মন্দ নির্ভর করে তার শেষ অবস্থার উপর। (আঃপ্রঃ- ৬১৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৪)
৮২/৬. অধ্যায়ঃ বান্দার মানতকে তাক্দীরের প্রতি অর্পণ করা।
৬৬০৮
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মানত করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলেন, মানত কোন জিনিষকে দুরে সরিয়ে দিতে পারে না। এর দ্বারা শুধু কৃপণের কিছু মাল বের হয়ে যায়।[৬৬৯২, ৬৬৯৩; মুসলিম ২৬/২, হাদীস ১৬৩৯, আহমাদ ৫২৭৫] (আঃপ্রঃ- ৬১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৫)
৬৬০৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ মানত আদম সন্তানকে এমন কিছু এনে দিতে পারে না যা তাকদীরে নির্ধারিত নেই অথচ সে যে মানতটি করে তাও আমি তাকদীরে নির্ধারিত করে দিয়েছি যাতে এর মাধ্যমে কৃপণের নিকট হইতে (মাল) বের করে নেই। [৬৬৯৪; মুসলিম ২৬/২, হাদীস ১৬৪০, আহমাদ ৯৩৫১] (আঃপ্রঃ- ৬১৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৬)
৮২/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই প্রসঙ্গে
৬৬১০
আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখনই কোন উঁচুস্থানে আরোহণ করতাম, কোন উঁচুতে থাকতাম এবং কোন উপত্যকা অতিক্রম করতাম তখনই উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলতাম। রাবী বলেন অতঃপর নাবী সাঃআঃ আমাদের নিকটবর্তী হলেন এবং বললেনঃ ওহে লোকেরা! তোমরা নিজেদের উপর রহম কর। তোমরা কোন বধির বা কোন অনুপস্থিত সত্ত্বাকে ডাকছ না বরং তোমরা ডাকছ শ্রবণকারী ও দর্শনকারী সত্ত্বাকে। এরপর তিনি বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তোমাকে আমি কি এমন একটি কথা শিখিয়ে দিব না, যা হল জান্নাতের ভান্ডারসমূহের অন্যতম? তা হল- لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ। ]২৯৯২] (আঃপ্রঃ- ৬১৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৭
৮২/৮. অধ্যায়ঃ নিষ্পাপ সে-ই আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন।
(আরবী) অর্থ প্রতিরোধকারী- (সুরা হূদ ১১/৪৩)। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (আরবী) পথভ্রষ্টতায় মত্ত হওয়া, (আরবী) তাকে পথভ্রষ্ট করেছে- (সুরা আশ্ শামস ৯১/১০)
৬৬১১
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে কোন লোককেই খলীফা বানানো হয় তার জন্য দুটি পরামর্শদাতা থাকে। একটা তাকে সৎকর্মের পরামর্শ দেয় এবং এর প্রতি তাকে উৎসাহিত করে। অন্যটা তাকে মন্দ কাজের পরামর্শ দেয় এবং এর প্রতি তাকে উৎসাহিত করে। নিষ্পাপ হল সেই আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৫০ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৮)
৮২/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আমি যে সব জনবসতি ধ্বংস করেছি তাদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে তারা আর ফিরে আসবে না- (সুরা আম্বিয়া ২১/৯৫)।. আল্লাহর বাণীঃ ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার সম্প্রদায়ের আর কোন লোক ঈমান আনবে না- (সুরা হূদ ১১/৩৬), আল্লাহর বাণীঃ তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে আর কেবল পাপাচারী কাফির জন্ম দিতে থাকবে- (সুরা নূহ ৭১/২৭)
মানসুর ইবনু নুমান…… ইবনু আব্বাস (রাদি.) কর্তৃক বর্ণিত হাবশী ভাষায় (আরবী) অর্থ জরুরী হওয়া।
৬৬১২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে ছোট গুনাহর ব্যাপারে যা বলেছেন তার থেকে যথার্থ উপমা আমি দেখি না। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ আদম সন্তানের উপর যিনার কোন না কোন হিস্সা লিখে দিয়েছেন; তা সে অবশ্যই পাবে। সুতরাং চোখের যিনা হল (যা হারাম সেদিকে) তাকানো এবং জিহবার যিনা হল মুখে বলা। মন কামনা ও আকাঙ্খা করে, লজ্জাস্থান তাকে সত্য করে অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। [৫৪] শাবাবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও… আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে এরকম বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬১৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৯)
[৫৪] আল্লাহ নির্দেশ করিয়াছেন- তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে বিনয়ের সঙ্গে এবং গোপনে আহবান কর, তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না- (আরাফ-৫৫, আরো দ্রষ্টব্য আরাফ-২০৫ নং আয়াত)
যা দেখা হারাম সে দিকে দৃষ্টি পড়লেই দৃষ্টি নীচু করে নিতে হইবে, তাহলেই প্রথম দৃষ্টির গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। মন নানান কিছু কামনা করে আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের দুঃসাধ্য; তাই এজন্য আল্লাহ কাউকে পাকড়াও করবেন না। অতঃপর বাকী থাকল জিহবার যিনা, লজ্জাস্থানের যিনা। এ দুটোকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করিতে সক্ষম, এদুটোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষ যিনার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। আর যদি নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে সে যিনার পাপে জড়িয়ে পড়বে।
৮২/১০. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী) আমি তোমাকে (মিরাজের মাধ্যমে) যে দৃশ্য দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত (জাক্কুম) গাছটিও মানুষদের পরীক্ষা করার জন্য (যে কারা তা বিশ্বাস করে নেক্কার হয় আর কারা তা অবিশ্বাস করে পাপী হয়)। (সুরা ইসরা ১৭/৬০)
৬৬১৩
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي…..} الاية (আয়াত সম্পর্কে) তিনি বলেনঃ তা হচ্ছে চোখের দেখা। যে রাতে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল, সে রাতে তাঁকে যা দেখানো হয়েছিল। তিনি বলেন, কুরআনের বর্ণিত وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ দ্বারা যাক্কূম গাছকে বোঝানো হয়েছে। [৩৮৮৮] (আঃপ্রঃ- ৬১৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬০)
৮২/১১. অধ্যায়ঃ আদম (আঃ) ও মূসা (আঃ) আল্লাহর সামনে বাদানুবাদ করেন।
৬৬১৪
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আদম ও মূসা (আঃ) (পরস্পরে) বাদানুবাদ করেন। মূসা (আঃ) বলেন, হে আদম, আপনি আমাদের পিতা। আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করিয়াছেন এবং জান্নাত থেকে আমাদেরকে বের করিয়াছেন। আদম (আঃ) তাকে বলিলেন, হে মূসা! আল্লাহ আপনাকে তো নিজ কথার মাধ্যমে সম্মানিত করিয়াছেন এবং আপনার জন্য নিজ হাত দ্বারা লিখেছেন। অতএব আপনি কি আমাকে এমন একটি কাজের ব্যাপারে তিরস্কার করছেন যা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর পূর্বেই আল্লাহ নির্ধারিত করে রেখেছেন। তখন আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর উপর বিতর্কে জয়ী হলেন। এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তিনবার বলেছেন। সুফিয়ানও… আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। [৩৪০৯; মুসলিম ৪৬/২, হাদীস ২৬৫২, আহমাদ ৭৩৯১] (আঃপ্রঃ- ৬১৫৩, ই.ফা ৬১৬১)
৮২/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ যা দান করেন তা রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই।
৬৬১৫
মুগীরা ইবনু শুবাহ (রাদি.)-এর আযাদকৃত গোলাম ওয়ার্রাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার মুআবিয়াহ (রাদি.) মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.)-এর নিকট লিখলেন যে, নাবী সাঃআঃ সালাতের পর যা পাঠ করিতেন এ সম্পর্কে তুমি যা শুনেছ আমার কাছে লিখে পাঠাও। তখন মুগীরাহ (রাদি.) আমাকে তা লিখে দেয়ার দায়িত্ব দিলেন। তিনি বলিলেন, আমি নাবী সাঃআঃ-কে সালাতের পরে বলিতে শুনিয়াছি لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهচ الخُ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তাহাঁর কোন শরীক নেই। হে আল্লাহ! তুমি যা দাও তা রোধকারী কেউ নেই। আর তুমি যা রোধ কর তা দানকারী কেউ নেই। তুমি ব্যতীত ধনীর ধন কোন ফল দিতে পারবে না।
ইবনু জুরায়জ আবদা থেকে বর্ণনা করেন যে, ওয়ার্রাদ তাকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। এরপর আমি মুআবিয়াহ (রাদি.)-এর কাছে গিয়েছি। মানুষকে এ কথার নির্দেশ দিতে আমি তাকে শুনিয়াছি। [৮৪৪] (আঃপ্রঃ- ৬১৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬২)
৮২/১৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আশ্রয় চায় খারাপ পরিণতি ও দুর্ভাগ্য হইতে।
এবং (মহান আল্লাহর) বাণীঃ বল, আমি শরণ লইতেছি ঊষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করিয়াছেন তার অনিষ্ট থেকে।
৬৬১৬
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, তোমরা ভয়ানক বিপদ, দুর্ভাগ্যের অতল তল, মন্দ পরিণতি এবং শত্রুর আনন্দ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। (আঃপ্রঃ- ৬১৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৩)
৮২/১৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন। [৫৫] (সুরা আনফাল ৮/২৪)
[৫৫] যারা আল্লাহর পথে চলতে চায় আল্লাহ তাদের মনকে সে দিকে ধাবিত করে দেন। কিন্তু যারা সে পথে চলতে ইচ্ছুক নয়, আল্লাহ তাদের মনকে সে পথের দিকে পরিচালিত করেন না।
৬৬১৭
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অধিকাংশ সময় এ বলে কসম খেতেনঃ কসম অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারীর।(আঃপ্রঃ- ৬১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৪)
৬৬১৮
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইবনু সাইয়্যাদকে বললেনঃ আমি (একটি কথা) তোমার জন্য গোপন রেখেছি। সে বললো, তা হচ্ছে (কল্পনার) ধোঁয়া মাত্র। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ দূর হও, তুমি তো তোমার তাক্দীরকে কক্ষনো অতিক্রম করিতে পারবে না। তখন উমর (রাদি.) বলিলেন, আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেনঃ ছাড় একে, এ যদি সেই হয় তবে তুমি (তাকে হত্যা করিতে) সক্ষম হইবে না। আর যদি সে (দাজ্জাল) না হয় তবে তাকে হত্যা করায় তোমার কোন কল্যাণ নেই।(আঃপ্রঃ- ৬১৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৫)
৮২/১৫. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণীঃ) আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাছাড়া অন্য কিছুই আমাদের ঘটবে না- (সুরা আত্-তওবা ৯/৫১)।
(আরবী) নির্দিষ্ট করিয়াছেন- (সুরা আস্ সাফফাত ৩৭/১৬২)। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন (আরবী) যারা পথভ্রষ্ট হয়, হ্যাঁ যার ব্যাপারে আল্লাহ লিখে দিয়েছেন যে, সে জাহান্নামে যাবে- (সুরা আলা ৮৭/৩)। (আরবী) দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য নির্দিষ্ট করিয়াছেন। জীব-জন্তুকে চারণভূমিতে পৌঁছে দেয়া।
৬৬১৯
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বললেনঃ এটা একটা আযাব। আল্লাহ যার উপর ইচ্ছে তা পাঠান। আল্লাহ এটা মুসলিমের জন্য রহমত করে দিয়েছেন। প্লেগে আক্রান্ত শহরে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধরে বিশ্বাসের সাথে অবস্থান করে, সেখান থেকে বের না হয়, আল্লাহ তার জন্য যা লিখেছেন তা ছাড়া কিছুই তাকে স্পর্শ করিবে না, সে অবস্থায় সে শহীদের সওয়াব পাবে। [৫৬](আঃপ্রঃ- ৬১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৬)
[৫৬] যারা প্লেগে আক্রান্ত স্থানে অবস্থান করছে তারা যেন সেখান থেকে বেরিয়ে অন্যত্র চলে না যায়। কারণ সেখানে যারা থাকবে সবারই মৃত্যু হইবে না, যার মৃত্যু প্লেগে হইবে নির্ধারিত আছে তারই মৃত্যু হইবে। আক্রান্ত এলাকার বাইরে চলে গেলেও প্লেগে মৃত্যু হইতে পারে যদি তা সেভাবেই নির্ধারিত থাকে। তবে বিপদ-ব্যাধি মুক্ত এলাকা ছেড়ে বিপদ-ব্যাধি আক্রান্ত স্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ।
৮২/১৬. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী): আমরা কিছুতেই পথ পেতাম না যদি না আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখাতেন- (সুরা আরাফ ৭/৪৩), আল্লাহ যদি আমাকে সঠিক পথ দেখাতেন, তাহলে আমি অবশ্যই মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভূক্ত হতাম। (সুরা আয্ যুমার ৪৯/৫৭)
৬৬২০
বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি খন্দকের যুদ্ধের দিন নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখেছি, তিনি আমাদের সাথে মাটি বহন করিয়াছেন এবং বলেছেনঃ
আল্লাহর কসম! তিনি যদি আমাদেরকে পথ না দেখাতেন তবে আমরা পথ পেতাম না।
সওমও পালন করতাম না, আর সালাতও আদায় করতাম না। কাজেই আমাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করুন। আর যদি আমরা শত্রুর মুকাবিলা করি তবে আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখুন। আর মুশরিকরা আমাদের উপর বিদ্রোহী হয়েছে। তারাই আমাদেরকে ফিতনায় (যুদ্ধে) ফেলতে চেয়েছে, যা আমরা চাইনি। (আঃপ্রঃ- ৬১৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৭)
Leave a Reply