তকদির

তকদির

তকদির

পর্বঃ ৪৭, তাকদীর, অধ্যায়ঃ (১-৮)=৮টি

অধ্যায়
১. অধ্যায়ঃ মায়ের উদরে মানুষের সৃষ্টি রহস্য, তার ভাগ্যের রিয্‌ক, মুত্যুস্থান, আমাল, হতভাগ্য ও সৌভাগ্য লিপিবদ্ধকরণ৬৬১৬-৬৬৩৪
২. অধ্যায়ঃ আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ]-এর বাক-বিতণ্ডা৬৬৩৫-৬৬৪২
৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান হৃদয়সমূহ পরিবর্তন করেন৬৬৪৩-৬৬৪৩
৪. অধ্যায়ঃ সকল বিষয় নির্ধারিত৬৬৪৪-৬৬৪৫
৫. অধ্যায়ঃ আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচার ও অন্যান্য বিষয়ের অংশ পরিমিত৬৬৪৬-৬৬৪৭
৬. অধ্যায়ঃ প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ এবং কাফির ও মুসলিমদের মৃত শিশুর বিধান৬৬৪৮-৬৬৬২
৭. অধ্যায়ঃ মৃত্যুক্ষণ, জীবিকা ইত্যাদি পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্যলিপি থেকে কম-বেশি হয় না৬৬৬৩-৬৬৬৬
৮. অধ্যায়ঃ শক্তি প্রয়োগ, অক্ষমতা পরিত্যাগ, আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা এবং আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্যলিপি ও [আল্লাহর প্রতি] সমর্পণ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে৬৬৬৭-৬৬৬৭

১. অধ্যায়ঃ মায়ের উদরে মানুষের সৃষ্টি রহস্য , তার ভাগ্যের রিয্‌ক, মুত্যুস্থান, আমাল, হতভাগ্য ও সৌভাগ্য লিপিবদ্ধকরণ

৬৬১৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদিকুল মাসদূক [ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠরূপে প্রত্যায়িত] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের শুক্রকীট তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন একত্রিত করা হয়। তারপর হুবহু চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত টুকরায় পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ্‌ তা আলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশ্তাকে প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ্ ফুঁকে দেয়। আর তাঁকে চারটি কালিমা [বিষয়] লিপিবদ্ধ করার আদেশ করা হয়। রিয্ক, মৃত্যুক্ষণ, কর্ম, বদ্কার ও নেক্কার। সে সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝ হইতে কেউ জান্নাতীদের আমালের [আমলের]ন্যায় আমাল [আমল] করিতে থাকে। অবশেষে তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। অতঃপর ভাগ্যের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করিতে থাকে। ফলে জাহান্নামের মাঝে ও তার মাঝে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। তারপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমাল করে। অবশেষে জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩৪]

৬৬১৭. জারীর ইবনি আবদুল হামীদ, ঈসা ইবনি ইউনুস, ওয়াকী ও শুবাহ্ ইবনিল হাজ্জাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সকলে আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

তিনি [আমাশ] ওয়াকী বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের কারো সৃষ্টি [শুক্রকীট] তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ রাত্রি একত্রি রাখা হয়। আর তিনি শুবার সানাদে মুআয বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, চল্লিশ রাত কিংবা চল্লিশ দিন। কিন্তু জারীর ও ঈসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে কেবলমাত্র ………… [চল্লিশ দিবসের] কথা উল্লেখ রয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩৫]

৬৬১৮. হুযাইফাহ্ ইবুন আসীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে মারফূ সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জরায়ুতে চল্লিশ অথবা পঁয়তাল্লিশ দিন রেণু জমা থাকার পর সেখানে ফেরেশ্ তা গমন করে। অতঃপর সে বলিতে থাকে, হে আমার প্রভু! সে কি হতভাগ্য না সৌভাগ্যবান? তখন উভয়টাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর সে বলিতে থাকে, হে আমার রব! সে কি পুরুষ না মহিলা? তখন আদেশ অনুসারে উভয়টা লিপিবদ্ধ করা হয়। তার আমাল, আচরণ, মৃত্যুক্ষণ ও জীবনোপকরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর ফলকটিকে পেঁচিয়ে দেয়া হয়। তাতে কোন অতিরিক্ত করা হইবে না এবং ঘাটতিও হইবে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩৬]

৬৬১৯. আমির ইবনি ওয়াসিলাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, দুর্ভাগ্য সে লোক, যে তার মায়ের গর্ভ হইতে দুর্ভাগা আর সৌভাগ্যবান লোক সে, যে অন্যের নিকট হইতে উপদেশ লাভ করে। অতঃপর তিনি রসূল [সাঃআঃ]-এর সহাবাদের মধ্য থেকে একজন সহাবা যাকে হুযাইফাহ্ ইবনি আসীদ আল গিফারী বলা হয় তার কাছে আসলেন। তখন তিনি তাহাঁর নিকট আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.]-এর কথা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, আমালহীন কোন লোক কিভাবে দুর্ভাগ্যবান হইতে পারে? অতঃপর তিনি {হুযাইফাহ্ [রাদি.]} তাঁকে বলিলেন, তুমি কি এতে আশ্চর্য হচ্ছ? আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যখন [মাতৃগর্ভে] শুক্রকীটের উপর বিয়াল্লিশ দিন চলে যায় তখন আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশ্তা প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে [শুক্রকে] একটি রূপ দান করে, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সৃষ্টি করে দেয়। তারপর ফেরেশতা বলে, হে আমাদের রব! সেটা কি পুরুষ, না মহিলা হইবে? তখন তোমার প্রভু যা চান সিদ্ধান্ত দেন এবং ফেরেশ্তা আদেশ অনুসারে তা লিখে ফেলেন। তারপর সে বলিতে থাকে, হে আমাদের রব! তার জীবিকা কি হইবে? তখন তোমার রব তাহাঁর মর্জি অনুযায়ী ফায়সালা করেন এবং ফেরেশ্তা তা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর ফেরেশ্তা তাহাঁর হাতে একটি লিপিবদ্ধ কিতাব নিয়ে বের হন। সে এটাকে বৃদ্ধিও করে না এবং ঘাটতিও করে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩৭]

৬৬২০. আবু তুফায়ল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আমর ইবনিল আল হারিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩৮]

৬৬২১. আবু তুফায়ল হইতে বর্ণীতঃ

আমি আবু সারীহাহ্ হুযাইফাহ্ ইবনি আসীদ আল গিফারী [রাদি.] -এর নিকট গেলে তিনি বলেন, আমি আমার এ কান দিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, বীর্য জরায়ুতে চল্লিশ রাত স্থির থাকে। তারপর এজন ফেরেশ্তা তাকে আকৃতি প্রদান করেন। রাবী যুহায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমার ধারণা তিনি বলেছেন, “যাকে তিনি তৈরি করেন” তখন তিনি বলিতে থাকেন, হে আমার প্রভু! সে-কি পুরুষ না মহিলা? তারপর আল্লাহ তাকে পুরুষ কিংবা মহিলা সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি [ফেরেশ্তা] বলিতে থাকেন, হে আমার রব! আপনি তাকে পূর্ণ সৃষ্টি করবেন না অপূর্ণ? তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ অথবা অপূর্ণ সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি বলেন, হে আমার প্রভু! তার জীবনোপকরণ, মৃত্যুক্ষণ, চরিত্র কি হইবে? তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে হতভাগ্যবান কিংবা সৌভাগ্যবান বানিয়ে দেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩৯]

৬৬২২. রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহাবা হুযাইফাহ্ ইবনি আসীদ আল গিফারী [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পর্যন্ত মারফূ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাহাঁর আদেশ অনুসারে কোন কিছু সৃষ্টির আকাঙ্খা করেন তখন জরায়ুতে একজন ফেরেশ্তা প্রেরণ করে দেন চল্লিশের কিছু বেশি দিন পরে। তারপর তিনি তাদের হাদীসের হুবহু হাদীস উল্লেখ করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪০]

৬৬২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে মারফূ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা জরায়ুতে একজন ফেরেশ্তা প্রেরণ করে দেন। তখন ফেরেশ্তা বলিতে থাকেন, হে আমার প্রভু! এখন তা শুক্র। হে আমার রব! এখন তা জমাট রক্ত। হে আমার প্রতিপালক! এখন গোশ্তের খণ্ড। তারপর যখন আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত করেন তখন ফেরেশ্তা বলেন, হে আমার প্রতিপালক! সে-কি পুরুষ না মহিলা, দুর্ভাগ্যবান, না সৌভাগ্যবান হইবে? তার রিজিক কি হইবে? তার আয়ুষ্কাল কি হইবে? তারপর এমনিভাবে মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় সবকিছু লিখে দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪১]

৬৬২৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা বাকী গারকাদে {৪} একটি জানাযা সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট এসে বসলেন এবং আমরাও তাহাঁর পাশাপাশি বসলাম। তাহাঁর সাথে ছিল একটি ছড়ি। তিনি মাথা নিচু করেছিলেন। সে সময় তিনি তাহাঁর ছড়ি দ্বারা জমিনে টোকা দিচ্ছিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, তোমাদের মাঝে এমন কোন লোক নেই, যার পরিণাম আল্লাহ তাআলা জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্ধারণ করেননি এবং সে দুর্ভাগ্যবান হইবে বা সৌভাগ্যবান হইবে, তা লিপিবদ্ধ করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন জনৈক লোক আবেদন করিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমরা কি আমাদের ভাগ্যলিপির উপর অটুট থেকে আমাল ত্যাগ করব না? তখন তিনি বলিলেন, যে লোক সৌভাগ্যবান সে সৌভাগ্যবানদের আমালের দিকে ধাবিত হইবে। যে হতভাগাদের অন্তর্ভূক্ত সে হতভাগার আমালের প্রতি ধাবিত হইবে। তারপর তিনি বলিলেন, তোমরা আমাল করো। প্রত্যেকের পথ সহজ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্যই সৌভাগ্যবান লোকদেরকে সৌভাগ্যের আমাল করা সহজ করে দেয়া হচ্ছে। হতভাগ্যদেরকে হতভাগ্যের আমাল সহজ করে দেয়া হচ্ছে। তাপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন, “সুতরাং যে দান করিল, তাক্ওয়া অর্জন করিল এবং যা উত্তম তা সত্যায়ন করিল, আমি তাদের জন্যে সফলতার পথ সুগম করে দিব এবং যারা বখিলী করিল এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী মনে করিল আর যা উত্তম তা মিথ্যা সাব্যস্ত করিল, আমি তার জন্যে কঠোর বিফল পথ সহজ করে দিব”- [সূরাহ্ আল লায়ল ৯২ : ৫-১০]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৩০]

{৪} বাকী গারকাদ-মাদীনার গোরস্থান যা বর্তমানে জান্নাতুল বাকী নামে প্রসিদ্ধ।

৬৬২৫. মানসূর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [মানসূর] বলেন, তাছাড়া তিনি বলেছেন, “একটি লাকড়ি ধারণ করিলেন এবং ছড়ি” শব্দটি তিনি বলেননি। ইবনি আবু শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবুল আহওয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে তার হাদীসে বলেছেন, তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পড়লেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৩]

৬৬২৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক টুকরা লাকড়ি হাতে নিয়ে বসে ছিলেন। তিনি তা দ্বারা জমিনে টোকা দিচ্ছিলেন। তারপর তিনি নিজের মাথা উঠালেন এবং বলিলেন, তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে তার ঠিকানা জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্ধারিত নেই। তারা সকলে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! তাহলে আমরা কেন কাজ-কর্ম করব? আমরা কি ভরসা করব না? তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, না, বরং তোমরা আমাল করিতে থাকো। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজ করা হয়েছে। তারপর তিনি পাঠ করিলেন, “সুতরাং যারা দান-সদাকাহ্ করিল, তাক্ওয়া অর্জন করিল এবং যা ভাল তা সত্যায়ন করিল, ….. ….. আমি কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দিব, এ পর্যন্ত”- [সূরাহ্ আল লায়ল ৯২ : ৫-১০]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৪]

৬৬২৭. আলী [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আলী [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৫]

৬৬২৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সুরাকাহ্ ইবনি মালিক ইবনি জুশুম [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলেন, অতঃপর বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমাদের সামনে আমাদের দ্বীন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন, যেন আমরা এই মাত্র সৃষ্ট হয়েছি। আজকের আমাল কি ঐ বিষয়ের উপর যার সম্পর্কে কলম লিখে শুকিয়ে গেছে এবং তাক্দীর তার উপর চলছে? নাকি আমরা ভবিষ্যতে তার সামনাসামনি হব? তিনি বলিলেন, না; বরং কলম যা কিছু লিখার লিখে শুকিয়ে গেছে ও সে অনুযায়ী তাকদীর জারী হয়ে গেছে। সুরাকাহ্ বলিলেন, তাহলে কিসের জন্য আমাল করার প্রয়োজন?

যুহায়র বলেন, অতঃপর আবু যুবায়র কিছু কথা বলিলেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। অতঃপর আমি [লোকেদের] প্রশ্ন করলাম, তিনি কি বলিলেন। জবাবে বলিলেন, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা আমাল করিতে থাকো; প্রত্যেকের জন্য সে পথ সহজ করা হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৬]

৬৬২৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক আমালকারীকে তার আমালের পথ সহজ করে দেয়া হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৫, ইসলামিক সেন্টার- নেই]

৬৬৩০. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! জাহান্নামীদের হইতে জান্নাতীদের সুনির্দিষ্ট হয়েছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি [রাবী] বলেন, বলা হলো, তাহলে আমালকারী কিসের জন্য আমাল করিবে? তিনি বলিলেন, প্রত্যেক লোকের জন্যে সে কর্মটি সহজ করে দেয়া হইবে, যার জন্যে তাকে বানানো হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৭]

৬৬৩১. শাইবান ইবনি ফার্রূখ, আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ্, যুহায়র ইবনি হার্ব, ইসহাক্ ইবনি ইব্রাহীম, ইবনি নুমায়র, ইয়াহ্ইয়া ইবনিল ইয়াহ্ইয়া ও ইবনি মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সব সানাদেই ইয়াযীদ আর্ রিশ্ক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্রে হাম্মাদ হইতে বর্ণীতঃ

শাইবান ইবনি ফার্রূখ, আবু বকর ইবনি আবু শাইবাহ্, যুহায়র ইবনি হার্ব, ইসহাক্ ইবনি ইব্রাহীম, ইবনি নুমায়র, ইয়াহ্ইয়া ইবনিল ইয়াহ্ইয়া ও ইবনি মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সব সানাদেই ইয়াযীদ আর্ রিশ্ক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্রে হাম্মাদ-এর হাদীসের অর্থে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর এছাড়া আবদুল ওয়ারিস বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, সে বলেছে, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]!”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৮]

৬৬৩২. আবুল আসওয়াদ আদ্ দিয়ালী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইমরান ইবনি হুসায়ন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাকে বলিলেন, আজকাল মানুষেরা যা আমাল করে এবং তাতে যা কষ্ট করে, সে ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তা-কি এমন বিষয় যা তাদের উপর সিদ্ধান্ত গৃহীত ও অতীতে সাব্যস্ত হয়ে গেছে যা তাদের উপর পূর্ব নির্ধারিত? নাকি ভবিষ্যতে করা হইবে যা তাদের নিকট তাদের নবী [সাঃআঃ] নিয়ে আসছেন এবং যাদের উপর দলীল-প্রমাণ সাব্যস্ত হয়েছে? আমি বললাম বরং বিষয়টি তো তাদের উপর সিদ্ধান্ত গৃহীত ও অতীত সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তিনি [রাবী] বলেন, অতঃপর তিনি বলিলেন, তা কি যুল্ম হইবে না? তিনি বলিলেন, এতে আমি অত্যন্ত ঘাবড়ে গেলাম এবং বললাম, প্রতিটি বিষয় আল্লাহর মাখলুক এবং তাহাঁর আওতাধীন। সুতরাং তিনি যা করেন, সে বিষয়ে জবাবদিহিতা নেই অথবা তাদেরকে কৈফিয়ত দিতে হইবে না। কিন্তু তারা যা করে সে বিষয়ে তাদের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হইবে। অতঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনার অনুভূতি অনুমান করিতে চেয়েছিলাম। মুযাইনাহ্ গোত্রের দু ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! লোকেরা আজকাল যেসব আমাল করে এবং পরিশ্রম করে, সেগুলো কি তাদের উপর সিদ্ধান্ত গৃহীত ও অতীত সাব্যস্ত হয়ে গেছে, আগে নির্দিষ্টতা থেকে? নাকি ভবিষ্যতে যে আমাল করা হইবে, যা নবী [সাঃআঃ] তাদের নিকট নিয়ে আসছেন এবং তাদের উপর দলীল প্রমাণ সাব্যস্ত আছে? জবাবে তিনি বলিলেন, না; বরং বিষয়টি তাদের উপর সিদ্ধান্ত করা হয়েছে এবং অতীতে সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে? আল্লাহর কিতাবে তার সত্যায়ন:

“আর শপথ মানুষের এবং তাহাঁর যিনি তাকে সম্পূর্ণ করিয়াছেন, এরপর তার উপর তিনি পাপ-পুণ্যের জ্ঞান ঢেলে দিয়েছেন”- [সূরাহ্ আশ্ শামস্ ৯১ : ৭-৮]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৪৯]

৬৬৩৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক দীর্ঘকাল জান্নাতীদের ন্যায় আমাল করিবে। এরপর জাহান্নামীদের আমালের সাথে তার আমাল পরিসমাপ্ত হয়। আর এক লোক দীর্ঘকাল ধরে জাহান্নামীদের আমালের ন্যায় আমাল করিবে। তারপর জান্নাতীদের আমালের সাথে তার আমাল পরিসমাপ্ত হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫০]

৬৬৩৪. সাহ্‌ল ইবনি সাদ আস্ সাইদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত আমালের বিবেচনায় জান্নাতীদের আমালের ন্যায় আমাল করিবে; অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। আর কোন ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত আমালের বিবেচনায় জাহান্নামীদের আমালের ন্যায় আমাল করিবে, অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫১]

২. অধ্যায়ঃ আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ]-এর বাক-বিতণ্ডা

৬৬৩৫. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ]-এর মাঝে বাক-বিতণ্ডা হয়। মূসা [আঃ] বলিলেন, হে আদাম! আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদেরকে মাহরুম করিয়াছেন এবং জান্নাত হইতে আমাদেরকে বের করে দিয়েছেন। এরপর আদাম [আঃ] তাঁকে বলিলেন, আপনি তো মূসা [আঃ]। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিতে আপনাকে চয়ন করিয়াছেন এবং আপনাকে লিখিত কিতাব [তাওরাত] দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে ভর্ৎসনা করছেন যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বৎসর আগে আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর বাক-বিতণ্ডায় জয়ী হলেন। আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর বাক-বিতণ্ডায় জয়ী হলেন।

আর ইবনি আবু উমর ও ইবনি আব্দাহ্ বর্ণিত হাদীসে তাদের একজন বলেছেন, লিখে দিয়েছেন; অপরজন বলেছেন, তিনি তাহাঁর হস্তে আপনার জন্য তাওরাত লিখে দিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫২]

৬৬৩৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ] পরস্পরের বাদানুবাদ করেন। এতে আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর জয়ী হলেন। মূসা [আঃ] আদাম-কে বলিলেন, আপনি তো সে আদাম [আঃ] যিনি মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করিয়াছেন এবং জান্নাত হইতে তাদেরকে বের করিয়াছেন। তারপর আদাম [আঃ] বলিলেন, আপনি তো সে লোক [নবী] যাকে আল্লাহ তাআলা সকল বস্তুর জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং তাকে মনোনীত করে রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে মানুষের নিকট প্রেরণ করিয়াছেন? মূসা [আঃ] বলিলেন, হ্যাঁ। আদাম [আঃ] বলিলেন, আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে ভর্ৎসনা করিয়াছেন, যা আমার জন্মের আগেই আল্লাহ আমার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৩]

৬৬৩৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ] তাঁদের রবের নিকট ঝগড়া করিলেন।৫ অতঃপর আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর জয়ী হলেন। মূসা [আঃ] বলিলেন, আপনি তো সে আদাম [আঃ] যাকে আল্লাহ তাআলা নিজ হস্তে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আপনার মধ্যে তিনি তাহাঁর রূহকে ফুঁকে দিয়েছেন, তিনি তাহাঁর ফেরেশ্তাদের দিয়ে আপনাকে সাজদাহ্ করিয়েছেন এবং তাহাঁর জান্নাতে আপনাকে আবাসন করে দিয়েছেন। তারপর আপনি আপনার ভুলের কারণে মানবজাতিকে দুনিয়াতে নামিয়ে দিয়েছেন? এরপর আদাম [আঃ] বলিলেন, আপনি তো সে মূসা [আঃ] যাকে আল্লাহ তাআলা রিসালাত দিয়েছেন তার সাথে কথা বলার জন্য বাছাই করিয়াছেন এবং আপনাকে দান করিয়াছেন তক্তিসমূহ, তাতে সব বিষয়ের বর্ণনা লিখিত রয়েছে এং নির্জনে আলাপচারিতার জন্যে নৈকট্য দান করিয়াছেন। সুতরাং আমার জন্মের কত বৎসর পূর্বে আল্লাহ তাআলা তাওরাত লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তা-কি আপনি দেখেছেন? মূসা [আঃ] বলিলেন, চল্লিশ বৎসর পূর্বে। আদাম [আঃ] বলিলেন, আপনি কি তাতে পাননি- আদাম তাহাঁর রবের আদেশ অমান্য করিয়াছেন এবং পথভ্রষ্ট হয়েছেন। আদাম [আঃ] বলিলেন, এরপর আপনি আমাকে আমার এমন কর্মের জন্য কেন ভর্ৎসনা করছেন যা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বৎসর পূর্বে আল্লাহ তাআলা আমার উপর লিখে রেখেছেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, এরপর আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর জয়ী হলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৪]

৫ আবুল হাসান কাবিসী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আকাশমণ্ডলীতে আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ]-এর রূহ পরস্পর সাক্ষাৎ হয় এবং তাদের মধ্যে বিতর্ক হয়। কাযী আয়ায বলেন, এ সম্ভাবনাও থেকে যায় যে, উভয়েই স্বশরীরে সাক্ষাতে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন।

৬৬৩৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদাম [আঃ] ও মূসা [আঃ] বাদানুবাদ করেন। তখন মূসা [আঃ] তাকে বলিলেন, আপনি তো সে আদাম [আঃ] যাকে তাহাঁর ভুলে জান্নাত হইতে বের করে দিয়েছে। এরপর আদাম [আঃ] তাকে বলিলেন, আপনি তো সে মূসা [আঃ] আল্লাহ তাআলা যাকে তাহাঁর রিসালাত ও কথা বলার জন্যে বাছাই করিয়াছেন। তারপরও তুমি আমাকে তিরস্কার করছ, এমন একটি ব্যাপারে, যা আমার জন্মের আগে আমার উপর ভাগ্যলিপিতে নির্ধারিত হয়েছিল। পরিশেষে আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর জয়ী হলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৫]

৬৬৩৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে তাদের হাদীসের মর্মের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৬]

৬৬৪০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে তাদের হাদীসের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৭]

৬৬৪১. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তাআলা সকল মাখলুকের তাকদীর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সে সময় আল্লাহর আর্শ পানির উপরে ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৮]

৬৬৪২. আবু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু হানী [রাদি.]-এর সানাদে তার হাদীসৈর হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তারা উভয়ে তাদের হাদীসে “তাহাঁর আর্শ পানির উপর ছিল” কথাটি উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৫৯]

৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান হৃদয়সমূহ পরিবর্তন করেন

৬৬৪৩. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, আদাম সন্তানের কল্বসমূহ পরম দয়াময় আল্লাহ তাআলার দুআঙ্গুলের মধ্যে এমনভাবে আছে যেন তা একটি কল্ব। তিনি যেভাবে চান সেভাবেই তা উলটপালট করেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, “কল্বসমূহের পরিচালক হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কল্বসমূহকে তোমার বশ্যতার উপর স্থির রাখুন।” arbi

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬০]

৪. অধ্যায়ঃ সকল বিষয় নির্ধারিত

৬৬৪৪. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহাবাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক সহাবাকে দেখিতে পেয়েছি। তারা বলিতেন যে, সকল বিষয় নির্ধারিত [সৃষ্ট]। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল বিষয় নির্দিষ্ট পরিমাণে সৃষ্ট; এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বা বুদ্ধিমত্তা ও অক্ষমতাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬১]

৬৬৪৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্রের মুশরিক্রা ভাগ্যলিপির ব্যাপারে বিবাদ করিতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আগমন করলো। তারপর এ আয়াত নাযিল হলো-

يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ* إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ

“যেদিন তাদেরকে নিম্নমুখী করে জাহান্নামে টেনে আনা হইবে এবং [বলা হইবে] জাহান্নামের আগুনের ছোয়া আস্বাদন করো। নিশ্চয়ই আমি সকল বিষয়বস্তু পরিমিত পরিমাণে সৃষ্টি করেছি।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬২]

৫. অধ্যায়ঃ আদাম সন্তান এর উপর ব্যভিচার ও অন্যান্য বিষয়ের অংশ পরিমিত

৬৬৪৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] যা বলেছেন লামাম [আকর্ষণীয় বড় গুনাহ] বিষয়ে তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কোন বিষয় আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: আল্লাহ তাআলা আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে ভাগ লিখেছেন, নিঃসন্দেহে তা সে পাবে। দুচোখের ব্যভিচার দেখা, যবানের ব্যভিচার, পরস্পর কথোপকথনের ব্যভিচার, মনের ব্যভিচার কামন-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।

আব্দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাউস-এর বর্ণনায় বলেছেন যে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে শুনেছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৩]

৬৬৪৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হইবে। নিঃসন্দেহে দুচোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দুকানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৪]

৬. অধ্যায়ঃ প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ এবং কাফির ও মুসলিমদের মৃত শিশুর বিধান

৬৬৪৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, প্রতিটি নবজাতক স্বভাবজাত ইসলাম নিয়ে জন্মলাভ করে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়, খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয় এবং আগুনপূজারী বানিয়ে দেয়, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী পূর্ণাঙ্গ চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দেয় তোমরা কি তাতে কোন অঙ্গ কর্তিত বাচ্চা উপলব্ধি করছ? তারপর আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলিলেন, ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পাঠ করিতে পারঃ

‏ فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ

“আল্লাহর ফিত্রাতে যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই”- [সূরাহ্ আর্ রূম ৩৩:৩০]৬

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৫]

৬ কেউ কেউ বলেন, পিতার মেরুদণ্ড থেকে রূহ বের করে তাদের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে তা-ই ফিত্রাত। কেননা তার উপরই বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে তার মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা পিতা-মাতার কারণে হয়েছে। অর্থাৎ পিতা-মাতার স্বভাব, নীতি-নৈতিকতা, কথা, চরিত্র ও আদর্শের কারণে সন্তানের চরিত্রে পরিবর্তন ঘটে থাকে।

কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর ফায়সালার উপর সে জন্মগ্রহণ করেছে। তার ফায়সালা সে জাহান্নামী বা হতভাগা, জান্নাতী বা সৌভাগ্যবান-তার উপরই সে জন্মগ্রহণ করেছে এবং তার উপরই সে থাকিবে। তা রদবদল হইবে না।

৬৬৪৯. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দিতে হয় এবং তিনি [আরবি] [পূর্ণাঙ্গ] শব্দটি উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৬]

৬৬৫০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে। তারপর তিনি বলেছেন, তোমরা পাঠ করঃ

 فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ‏

“আল্লাহর ফিত্রাত যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এ-ই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন”-[সূরাহ্ আর্ রূম ৩০:৩০]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৭]

৬৬৫১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করছেন। তারপর পিতা-মাতা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দিয়েছে, খ্রীষ্টান বানিয়ে দিয়েছে এবং মুশরিক বানিয়ে দিয়েছে। অতঃপর জনৈক লোক বলিল। হে আল্লাহর রসূল! যদি সে এর পূর্বে ইন্তিকাল করে তার ব্যাপারে আপনার মত কি? তিনি বলিলেন, তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ ভাল জানেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৮]

৬৬৫২. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

ইবনি নুমায়র বর্ণিত হাদীসে আছে- “প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর ভূমিষ্ঠ হয়”।

আর আবু মুআবিয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে আবু বকর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় আছে, “এ স্বভাবজাতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে স্পষ্ট করে কথা বলা পর্যন্ত [তার উপর বহাল থাকে]”।

এবং আবু মুআবিয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় রয়েছে, “এমন কোন বাচ্চা নেই যা এ স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে না, যে পর্যন্ত না সে কথা ব্যক্ত করিতে পারে”।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৯]

৬৬৫৩. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আবু হুরায়রা্ [রাদি.] আমাদেরকে বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর তিনি তার কিছু সংখ্যক হাদীস আলোচনা করেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি শিশু স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে তারপর বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়, না খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয়, যেমন উষ্ট্রী চতুষ্পদ জন্ম দিয়ে থাকে। তোমরা কি তাদের মাঝে কানকাটা কোন প্রাণী দেখিতে পাও? এমনকি তোমরাই সেগুলোর কর্ণ ছিদ্র করে দাও। সহাবারা বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! যে শিশু ছোট বেলায়ই মারা যাবে, তার ব্যাপারে আপনারা কী মতামত? তিনি বলিলেন, তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭০]

৬৬৫৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেকটি মানুষের বাচ্চাকে তার মা ফিতরাতের উপর জন্ম দিয়েছেন। পরে তার পিতামাতাই তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দিয়েছে, খ্রীষ্টান বানিয়ে দিয়েছে এবং অগ্নিপূজ়ারী বানিয়ে দিয়েছে। যদি তার পিতা-মাতা মুসলিম হয় তবে বাচ্চাটিও মুসলিম হইবে। প্রত্যেক বাচ্চাকে মা জন্মদানের সময় শাইতান তার দুপাঁজরে খোঁচা দেয়। কেবলমাত্র মারইয়াম ও তার পুত্র ঈসা [আঃ]-কে শাইতান খোঁচা দিতে পারেনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭১]

৬৬৫৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের নিষ্পাপ বাচ্চার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, তাদের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭২]

৬৬৫৬. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ইউনুস ও ইবনি আবু যিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তাদের দুজনের [শুআয়ব ও মাকাল] হাদীসের হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাছাড়া শুআয়ব ও মাকাল-এর বর্ণিত হাদীসে আছে।। তথায় [আরবি] এর স্থানে [আরবি] [মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি] উল্লেখ আছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৩]

৬৬৫৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুশরিকদের ছোট সন্তান যারা শিশু অবস্থায় ইন্তিকাল করে, তাদের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো। জবাবে তিনি বলিলেন তারা কি আমাল করত সে সম্পর্কে আল্লাহই অধিক অবগত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৪]

৬৬৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের বাচ্চাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন, তাদের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহই অধিক পরিজ্ঞাত। কেননা তিনিই তাদের সৃষ্টি করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৫]

৬৬৫৯. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই যে ছেলেটিকে খাযির [আঃ] [আল্লাহর আদেশে] হত্যা করেছিলেন তাকে কাফিরের স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল। যদি সে জীবিত থাকত তাহলে সে তার পিতা-মাতাকে অবাধ্যতা ও কুফরি করিতে বাধ্য করত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৬]

৬৬৬০. মুমিন জননী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একটি নাবালক ছেলে মারা গেল আমি বললাম, তার জন্যে সৌভাগ্য। সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের থেকে এক চড়ুই পাখি [অর্থাৎ-নির্দ্বিধায় চলাচল করিবে]। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তাআলা তৈরি করিয়াছেন জান্নাত এবং তৈরি করিয়াছেন জাহান্নাম। এরপর তিনি এ জান্নাতের জন্য যোগ্য নিবাসী এবং জাহান্নামের জন্য যোগ্য নিবাসী তৈরি করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৭]

৬৬৬১. উম্মুল মুমিন আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি আনসার নাবালক বাচ্চার জানাযায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হলেন। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! এ নাবালকটি তো সৌভাগ্যবান। সে তো জান্নাতে চড়ুই পাখিদের থেকে একটি চড়ুই পাখি। সে পাপকর্ম করেনি এবং পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বলিলেন, এছাড়া আরো কিছু আছে, হে আয়িশাহ্! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের জন্য উপযুক্ত অধিবাসী সৃষ্টি করিয়াছেন তাদেরকে, যাদেরকে সে উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা করেছে, অথচ তখন তারা বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল। আর তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন যাদেরকে জাহান্নামদের জন্য তাদের সে উদ্দেশ্যেই পয়দা করিয়াছেন আর তারা তখন তাদের বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৮]

৬৬৬২. তালহাহ্ ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূ হইতে বর্ণীতঃ

তালহাহ্ ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে তার হাদীসের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৯]

৭. অধ্যায়ঃ মৃত্যুক্ষণ, জীবিকা ইত্যাদি পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্যলিপি থেকে কম-বেশি হয় না

৬৬৬৩. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর জীবনসঙ্গী উম্মু হাবীবাহ্ [রাদি.] বলেন, হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ], আমার পিতা আবু সুফ্ইয়ান ও আমার ভাই মুআবিয়া [রাদি.]-এর সাথে আমাকে সাচ্ছন্দ্য জীবন দান করুন। আবদুল্লাহ বলেন, তখন নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তো আল্লাহর নিকট নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল, দিন-কাল সুনির্ধারিত কয়েকদিন এবং বন্টনকৃত জীবনোপরকণ সম্পর্কে মুনাজাত করলে। এ বিষয়গুলো কখনো যথাসময়ের আগে বাড়বে না বা যথাসময়ের পরে বিলম্ব হইবে না। যদি তুমি আল্লাহর নিকটে জাহান্নামের শাস্তি হইতে মুক্তি লাভের জন্য অথবা কবরের আযাব হইতে মুক্তির জন্য দুআ করিতে তাহলে উত্তম কিংবা শ্রেয় হত। তিনি বলেন, তাহাঁর নিকটে [বানী ইসরাঈলের] বানরে পরিণত হওয়ার কথা আলোচনা করা হলো।

মিসআর বলেন, আমি মনে করি , শূকরে পরিণত হওয়ার কথাও আলোচনা করা হয়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা যাদের আকৃতি বিকৃতি করিয়াছেন তাদের কোন বংশ বা উত্তরাধিকারী রাখেননি। ঐ আকৃতি বিকৃতির পূর্বেও পৃথিবীতে বানর ও শূকর ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৮০]

৬৬৬৪. মিসআর [রাদি.] হইতে বর্ণিত এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাছাড়া ইবনি বিশ্র ও ওয়াকী হইতে তাহাঁর হাদীসে

‏ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ

[জাহান্নামদের আগুন এবং কবরের শাস্তি থেকে] উল্লেখ রয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৮১]

৬৬৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ্ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ], আমার পিতা আবু সুফ্ইয়ান ও আমার ভাই মুআবিয়াহ্ [রাদি.]-এর সাথে আমাকে সাচ্ছন্দ্য জীবন দান করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উম্মু হাবীবাকে বলিলেন, তুমি তো আল্লাহর নিকটে আবেদন করলে নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল, সীমিত সুযোগ এবং বন্টিত জীবনোপকরণ, যার যথাসময় আসার পূর্বে বাড়বে না এবং যথাসময় আসার পরে দেরী হইবে না। যদি তুমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিতে যেন তিনি তোমাকে জাহান্নাম হইতে এবং কবরের শাস্তি হইতে মুক্তি দান করেন তবে তা তোমার জন্য সবচেয়ে উত্তম হত।

বর্ণনাকারী বলেন, এক লোক জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! এ বানর ও শূকরগুলোই তো অভিশপ্ত দল যাদের আকৃতি বিকৃতি করা হয়েছিল তাদের বংশধর? নবী [সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা যে সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন বা যে সম্প্রদায়কে [বিকৃতি ঘটিয়ে]শাস্তি দেন, তাদের বংশধর অবশিষ্ট রাখেন না। আর অভিশপ্ত বিকৃতি আকৃতির পূর্বেও পৃথিবীতে বানর ও শূকর ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৮২]

৬৬৬৬. সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আবু দাউদ, সুলাইমান ইবনি মাবাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি], সুফইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাছাড়া তিনি বলেন آثَارٍ مَوْطُوءَةٍ এর স্থানে آثَارٍ مَبْلُوغَةٍ [সীমিত নিদর্শন] রহিয়াছে। ইবনি মাবাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, কেউ قَبْلَ حِلِّهِ এর অর্থ করিয়াছেন نُزُولِهِ অর্থাৎ- আগমনের পূর্বে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৩১, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৮৩]

৮. অধ্যায়ঃ শক্তি প্রয়োগ, অক্ষমতা পরিত্যাগ, আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা এবং আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্যলিপি ও [আল্লাহর প্রতি] সমর্পণ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে

৬৬৬৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর নিকট উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যান নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কর। তুমি অক্ষম হয়ে যেও না। এমন বলো না যে, যদি আমি এমন এমন করতাম তবে এমন হত না। বরং এ কথা বলো যে, আল্লাহ তাআলা যা নিদিষ্ট করিয়াছেন এবং যা চেয়েছেন তাই করিয়াছেন। কেননা [আরবি][যদি] শব্দটি শাইতানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩২, ইসলামিক সেন্টার-৬৫৮৪]

Comments

One response to “তকদির”

Leave a Reply