ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা ও ঋণের পরিশোধের জন্য তাগাদা করা

ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা ও ঋণের পরিশোধের জন্য তাগাদা করা

ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা ও ঋণের পরিশোধের জন্য তাগাদা করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৪৪, ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা, অধ্যায়ঃ (১-১০)=১০টি

৪৪/১. অধ্যায়ঃ ঋণগ্রস্তকে স্থানান্তরিত করা এবং মুসলিম ও ইয়াহূদীর মধ্যকার ঝগড়ার আপোষ।
৪৪/২. অধ্যায়ঃ কেউ কেউ মুর্খ ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তির আদান-প্রদান প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। যদিও ইমাম (কাযী) তার আদান প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।
৪৪/৪. অধ্যায়ঃ বিবাদমানদের পরস্পরের আলাপ-আলোচনা সম্পর্কে।
৪৪/৫. অধ্যায়ঃ পাপে ও বিবাদে লিপ্ত লোকদের অবস্থা অবগত হওয়ার পর তাদেরকে ঘর হইতে বহিষ্কার করা।
৪৪/৬. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির ওসীয়তের দাবী।
৪৪/৭. অধ্যায়ঃ কারো দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তাকে বন্দী করা।
৪৪/৮. অধ্যায়ঃ হারম শরীফে (কাউকে) বেঁধে রাখা এবং বন্দী করা।
৪৪/৯. অধ্যায়ঃ পাওনা আদায়ের জন্য (ঋণদাতা ঋণী ব্যক্তির) পিছনে লেগে থাকা।
৪৪/১০. অধ্যায়ঃ ঋণের পরিশোধের জন্য তাগাদা করা।

৪৪/১. অধ্যায়ঃ ঋণগ্রস্তকে স্থানান্তরিত করা এবং মুসলিম ও ইয়াহূদীর মধ্যকার ঝগড়ার আপোষ।

২৪১০. আবদুল্লাহ [ইবনু মাসউদ (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে একটি আয়াত পড়তে শুনলাম। অথচ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে (আয়াতটি) অন্যরূপে পড়তে শুনিয়াছি। আমি তার হাত ধরে তাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে নিয়ে এলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা উভয়েই ঠিক পড়েছ। শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, তোমরা বাদানুবাদ করো না। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা বাদানুবাদ করে ধ্বংস হয়েছে।

২৪১১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দু ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলিম লোকটি বলিল, তাহাঁর কসম, যিনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত প্রদান করিয়াছেন। আর ইয়াহূদী লোকটি বলিল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা (আঃ)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত দান করিয়াছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহূদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহূদী ব্যক্তিটি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটেছিল, তা তাঁকে অবহিত করিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা আমাকে মূসা (আঃ)-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুঁশ আসবে, তখন (দেখিতে পাব) মূসা (আঃ) আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুঁশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তাআলা যাঁদেরকে বেহুঁশ হওয়া হইতে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন।

২৪১২. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় এক ইয়াহূদী এসে বলিল, হে আবুল কাসিম! আপনার এক সাহাবী আমার মুখে আঘাত করেছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কে? সে বলিল, একজন আনসারী। তিনি বলিলেন, তাকে ডাক। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি ওকে মেরেছ? সে বলিল, আমি তাকে বাজারে শপথ করে বলিতে শুনেছিঃ শপথ তাহাঁর, যিনি মূসা (আঃ)-কে সকল মানুষের উপর ফযীলত দিয়েছেন। আমি বললাম, হে খবীস! বল, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর উপরও কি? এতে আমার রাগ এসে গিয়েছিল, তাই আমি তার মুখের উপর আঘাত করি। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা নাবীদের একজনকে অপরজনের উপর ফযীলত দিও না। কারণ, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর জমিন ফাটবে এবং যারাই উঠবে, আমিই হব তাদের মধ্যে প্রথম। তখন দেখিতে পাব মূসা (আঃ) আরশের একটি পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না, তিনিও বেহুঁশ লোকদের মধ্যে ছিলেন, না তাহাঁর পূর্বেকার (তুর পাহাড়ের) বেহুঁশীই তাহাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে।

২৪১৩. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী একটি দাসীর মাথা দুটি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দিয়েছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমাকে এরূপ করেছে? অমুক ব্যক্তি, অমুক ব্যক্তি? যখন জনৈক ইয়াহূদীর নাম বলা হল- তখন সে দাসী মাথার দ্বারা হ্যাঁ সূচক ইশারা করিল। ইয়াহূদীকে ধরে আনা হল। সে অপরাধ স্বীকার করলে নাবী (সাঃআঃ) তার সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। তখন তার মাথা দুটি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দেয়া হল।

৪৪/২. অধ্যায়ঃ কেউ কেউ মুর্খ ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তির আদান-প্রদান প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। যদিও ইমাম (কাযী) তার আদান প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, সদকা দানকারীকে নিষেধ করার পূর্বে সে যে সদকা করছিল, নাবী তাকে তা ফেরত দিয়েছেন। এরপর (অনুরূপ অবস্থায়) তাকে সদকা করা হইতে নিষেধ করিয়াছেন। ইমাম মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কারো উপর যদি ঋণ থাকে এবং তার কাছে একটি গোলাম ছাড়া আর কিছুই না থাকে, আর সে যদি গোলামটি মুক্ত করে তবে তার এ মুক্ত করা বৈধ নয়।

৪৪/৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কোন নির্বোধ বা এ ধরনের কোন লোকের সম্পত্তি বিক্রি করে এবং বিক্রি মূল্য তাকে দিয়ে দেয় ও তাকে তার অবস্থার উন্নতি ও অর্থকে যথাযথ ব্যবহার করিতে নির্দেশ দেয়। এরপর যদি সে তার অর্থ নষ্ট করে দেয় তাহলে সে তাকে অর্থ ব্যবহার করা হইতে বিরত রাখবে।

কেননা, নাবী (সাঃআঃ) সম্পদ বিনষ্ট করিতে নিষেধ করিয়াছেন। যে লোককে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া হত, তাকে তিনি (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন তুমি ক্রয় -বিক্রয় করিবে তখন বলে দিবে, ধোঁকা দিবে না। আর নাবী (সাঃআঃ) তার মাল গ্রহণ করেননি।

২৪১৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে এক ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়া হত। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি যখন বেচা-কেনা কর তখন বলে দেবে যে, ধোঁকা দিবে না। অতঃপর সে অনুরূপ কথাই বলত।

২৪১৫. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি তার গোলাম আযাদ করে দিয়েছিল। তার কাছে এ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। নাবী (সাঃআঃ) তার গোলাম আযাদ করে দেয়া প্রত্যাখ্যান করে দিলেন। পরে সে গোলামটি তার নিকট হইতে ইবনু নাহহাম কিনে নিলেন।

৪৪/৪. অধ্যায়ঃ বিবাদমানদের পরস্পরের আলাপ-আলোচনা সম্পর্কে।

২৪১৬. আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তা হলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাযির হইবে যে, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। আশআস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! এটা আমার সম্পর্কেই ছিল, আমার ও এক ইয়াহূদী ব্যক্তির সাথে যৌথ মালিকানায় এক খন্ড জমি ছিল। সে আমার মালিকানার অংশ অস্বীকার করে বসল। আমি তাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? আমি বললাম, না। তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] ইয়াহূদিকে বলিলেন, তুমি কসম কর। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো কসম করিবে এবং আমার সম্পত্তি নিয়ে নেবে। তখন আল্লাহ তাআলা (এ আয়াত) নাযিল করেন:

‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে …. আয়াতের শেষ পর্যন্ত”-

(আল্‌ ইমরান ৭৭)।

২৪১৭. Read previous Hadith. আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তা হলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাযির হইবে যে, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। আশআস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! এটা আমার সম্পর্কেই ছিল, আমার ও এক ইয়াহূদী ব্যক্তির সাথে যৌথ মালিকানায় এক খন্ড জমি ছিল। সে আমার মালিকানার অংশ অস্বীকার করে বসল। আমি তাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? আমি বললাম, না। তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] ইয়াহূদিকে বলিলেন, তুমি কসম কর। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো কসম করিবে এবং আমার সম্পত্তি নিয়ে নেবে। তখন আল্লাহ তাআলা (এ আয়াত) নাযিল করেন:

‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে …. আয়াতের শেষ পর্যন্ত”-

(আল্‌ ইমরান ৭৭)।

২৪১৮. কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মসজিদের মধ্যে ইবনু আবু হাদরাদের কাছে তার প্রাপ্য কাজের তাগাদা করেন। তাদের আওয়াজ বুলন্দ হয়ে গিয়েছিল, এমনকি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘর হইতে তা শুনতে পেলেন। তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] হুজরার পর্দা তুলে বাইরে এলেন এবং হে কাব! বলে ডাকলেন। কাব (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি হাযির। তিনি ইশারায় তাকে কর্জের অর্ধেক মাফ করে দিতে বলিলেন। কাব (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি মাফ করে দিলাম, তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] ইবনু আবু হাদরাদকে বলিলেন, উঠ, কর্জ পরিশোধ করে দাও।

২৪১৯. উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযামকে সুরা ফুরকান আমি যেভাবে পড়ি তা হইতে ভিন্ন পড়তে শুনলাম। আর যেভাবে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে এ সুরা পড়িয়েছেন। আমি তাড়াতাড়ি তাকে বাধা দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তূ তার সালাত শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এরপর তার গলায় চাদর পেঁচিয়ে তাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে নিয়ে এলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে যা পড়তে শিখিয়েছেন, আমি তাকে তা হইতে ভিন্ন পড়তে শুনিয়াছি। নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন তাকে ছেড়ে দিতে। তারপর তাকে পড়তে বলিলেন, সে পড়ল। তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, এরূপ নাযিল হয়েছে। এরপর আমাকে পড়তে বলিলেন, আমিও তখন পড়লাম। আর তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। কুরআন সাত হরফে নাযিল হয়েছে। তাই যেরূপ সহজ হয় তোমরা সেরূপেই তা পড়।

৪৪/৫. অধ্যায়ঃ পাপে ও বিবাদে লিপ্ত লোকদের অবস্থা অবগত হওয়ার পর তাদেরকে ঘর হইতে বহিষ্কার করা।

আবু বক্‌র (রাদি.)-এর বোন যখন বিলাপ করছিলেন তখন উমর (রাদি.) তাকে (ঘর হইতে) বের করে দিয়েছিলেন।

২৪২০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, সালাত আদায় করার আদেশ করব। সালাতে দাঁড়ানোর পর যে সম্প্রদায় সালাতে উপস্থিত হয় না, আমি তাদের বাড়ী গিয়ে তা জ্বালিয়ে দেই।

৪৪/৬. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির ওসীয়তের দাবী।

২৪২১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আব্দ ইবনু যামআ ও সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) যামআর দাসীর পুত্র সংক্রান্ত বিবাদ নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে পেশ করিলেন। সাদ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ভাই আমাকে ওসীয়ত করে গেছেন যে, আমি (মক্কায়) পৌঁছলে যেন যামআর দাসীর পুত্রের প্রতি লক্ষ্য রাখি, দেখিতে পেলে যেন তাকে হস্তগত করে নেই। কেননা, সে তার পুত্র। আবদ ইবনু যামআ (রাদি.) বলিলেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। আমার পিতার ঔরসে তার জন্ম। নাবী (সাঃআঃ) উতবার সাথে তার চেহারা-সুরতের স্পষ্ট মিল দেখিতে পেলেন, তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, হে আব্দ ইবনু যামআ! তুমিই তার হক্বদার। সন্তান যার ঔরসে জন্ম গ্রহণ করে তারই হয়। হে সাওদা! তুমি তার হইতে পর্দা কর।

৪৪/৭. অধ্যায়ঃ কারো দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তাকে বন্দী করা।

কুরআন, সুন্নাহ ও ফরযসমূহ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ইবনু আব্বাস (রাদি.) ইকরিমাকে পায়ে বেড়ী দিয়ে আটকিয়ে রাখতেন।

২৪২২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নাজদের দিকে এক অশ্বারোহী সেনাদল পাঠালেন। তারা ইয়ামানবাসীদের সরদার বনূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসাল নামক একজন লোককে গ্রেফতার করে এনে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করিলেন, সুমামা, তোমার কী খবর? সে বলিল, হে মুহাম্মাদ ! আমার কাছে ভাল খবর আছে। সে (বর্ণনাকারী) সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সুমামাকে ছেড়ে দাও।

৪৪/৮. অধ্যায়ঃ হারম শরীফে (কাউকে) বেঁধে রাখা এবং বন্দী করা।

নাফি ইবনু আবদুল হারিস (রাদি.) কয়েদখানা বানাবার উদ্দেশ্যে মক্কায় সাফওয়ান ইবনু উমাইয়ার কাছ হইতে এই শর্তে একটি ঘর ক্রয় করেছিলেন যে, যদি উমর (রাদি.) রাজী হন তবে ক্রয় পূর্ণ হইবে। আর যদি তিনি রাজী না হন তা হলে সাফওয়ান চারশত দিনার পাবে। ইবনু যুবায়ের (রাদি.) মক্কায় বন্দী করিয়াছেন।

২৪২৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নাজদে একদল অশ্বারোহী সেনাদল পাঠালেন। তারা বনূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসাল নামক ব্যক্তিকে নিয়ে এল এবং তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল।

৪৪/৯. অধ্যায়ঃ পাওনা আদায়ের জন্য (ঋণদাতা ঋণী ব্যক্তির) পিছনে লেগে থাকা।

২৪২৪. কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আবু হাদরাদ আসলামী (রাদি.)-এর কাছে তাহাঁর কিছু পাওনা ছিল। তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন এবং পিছনে লেগে থাকলেন। তাঁরা উভয়ে কথা বলিতে লাগলেন, এমনকি এক পর্যায়ে তাঁদের উভয়ের আওয়াজ উঁচু হল। নাবী (সাঃআঃ) সেখানে গেলেন এবং বলিলেন, হে কাব! উভয় হাত দিয়ে তিনি ইশারা করিলেন; যেন অর্ধেক (গ্রহণ করার কথা) বুঝিয়েছিলেন। তাই তিনি (কাব) তার ঋণের অর্ধেক গ্রহণ করিলেন এবং অর্ধেক ছেড়ে দিলেন।

৪৪/১০. অধ্যায়ঃ ঋণের পরিশোধের জন্য তাগাদা করা।

২৪২৫. খাব্বাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহেলী যুগে আমি ছিলাম একজন কর্মকার। আস ইবনু ওয়ায়েলের কাছে আমার কিছু দিরহাম পাওনা ছিল। আমি তাহাঁর কাছে তাগাদা করিতে গেলাম। সে আমাকে বলিল, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মাদকে অস্বীকার করছ ততক্ষণ আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব না। আমি বললাম, তা হইতে পারে না। আল্লাহর কসম! যে পর্যন্ত না আল্লাহ তোমার মৃত্যু ঘটায় এবং তোমার পুনরুত্থান না হয় সে পর্যন্ত আমি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে অস্বীকার করব না। সে বলিল, ঠিক আছে, যতক্ষণ না আমার মৃত্যু হয় এবং পুনরুত্থান না হয় আমাকে অব্যাহতি দাও। তখন আমাকে মাল ও সন্তান দেয়া হইবে এরপর তোমার পাওনা পরিশোধ করে দেব। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হয় :

‏أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ بِآيَاتِنَا وَقَالَ لأُوتَيَنَّ مَالاً وَوَلَدًا‏

“তুমি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হইবে”

-(মারইয়াম: ৭৭)।

Comments

Leave a Reply