জ্বিহাদ অধ্যায় এর হাদিস – মুয়াততা ইমাম মালিক
জ্বিহাদ অধ্যায় এর হাদিস – মুয়াততা ইমাম মালিক, এই অধ্যায়ে হাদীস =৫৪ টি ( ৯৫৪-১০০৭ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ২১ঃ জিহাদ সম্পর্কিত
পরিচ্ছেদ ১ – জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান
পরিচ্ছেদ ২ – শত্রুর দেশে কুরআনুল কারীম নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ ৩ -যুদ্ধে নারী ও শিশু হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা
পরিচ্ছেদ ৪ -নিরাপত্তা চুক্তি
পরিচ্ছেদ ৫ -যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দান করিল তার কি হুকুম
পরিচ্ছেদ ৬ -যুদ্ধে প্রাপ্ত নফল
পরিচ্ছেদ ৭ -যে ধরনের সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ আদায় করা ওয়াজিব নয়
পরিচ্ছেদ ৮ -এক-পঞ্চমাংশ আলাদা করার পূর্বে গনীমত হইতে যে সমস্ত জিনিস আহার করা যায়
পরিচ্ছেদ ৯ -গনীমতের মাল হইতে বণ্টনের পূর্বে যা ফিরিয়ে দেওয়া হয়
পরিচ্ছেদ ১০ -নফল হিসেবে কোন সৈনিককে অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করা
পরিচ্ছেদ ১১ -খুমুস হইতে নফল প্রদান করা
পরিচ্ছেদ ১২ -জিহাদে ঘোড়ার অংশ
পরিচ্ছেদ ১৩ -গনীমতের সম্পদ হইতে চুরি করা
পরিচ্ছেদ ১৪ -আল্লাহর পথের শহীদগণ
পরিচ্ছেদ ১৫ -শাহাদতের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ১৬ -শহীদ ব্যক্তির গোসল
পরিচ্ছেদ ১৭ -আল্লাহর রাহে মুজাহিদের জন্য যা, তা অন্য কোন কিছুর নামে বণ্টন করা হারাম
পরিচ্ছেদ ১৮ -জিহাদে উৎসাহ প্রদান
পরিচ্ছেদ ১৯ -ঘোড়া, ঘোড়দৌড় এবং জিহাদে ব্যয় করার ফযীলত
পরিচ্ছেদ ২০ -যিম্মীদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার ভূসম্পত্তি কি করা হইবে
পরিচ্ছেদ ২১ – প্রয়োজনে এক করিবে একাধিক লাশ দাফন করা এবং আবু বক্র [রাদি.] কর্তৃক রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ওয়াদাসমূহ পূরণ করা
পরিচ্ছেদ ১ – জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান
অর্থ: তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেবার জন্য যাহ তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা করে। [আল কুরআন ১৬ : ৪৪]
৯৫১ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহর পথে জ্বিহাদরত ব্যক্তি যতদিন বাড়ি ফিরে না আসে ততদিন তার উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তি, যে ক্লান্তিহীনভাবে অনবতর রোযা রাখে এবং নামাজ পড়ে।
[বুখারি ২৭৮৭, মুসলিম ১৮৭৫]জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৫২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জ্বিহাদ করে আর শুধুমাত্র জ্বিহাদ এবং আল্লাহর কথার উপর অপরিসীম আস্থাই তাকে বাড়ি হইতে বের করে নিয়ে আসে, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির জিম্মাদার হয়ে যান। হয় তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সওয়াব ও গনীমতের সম্পদসহ তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন।
[বুখারি ২৭৮৭, মুসলিম ১৮৭৬]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৫৩ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : ঘোড়া তিন ধরনের। একজনের জন্য এটা সওয়াবের, আর একজনের জন্য এটা ঢালস্বরূপ এবং একজনের জন্য এটা গুনাহর কারণ হয়ে থাকে। এটা সওয়াবের কারণ হয় ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি এটাকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের নিয়তে লালন-পালন করে। কোন চারণক্ষেত্রে বা বাগানে এটাকে দীর্ঘ রজ্জুর সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। যতদূর পর্যন্ত এই ঘোড়াটি ঘাস খাবে তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হইবে। কোন নদীর কাছে গিয়ে যদি এটা পানি পান করে, তবে মালিক ইচ্ছা করে পানি পান না করানো সত্ত্বেও এর সওয়াব লেখা হইবে। আর এটা ঢালস্বরূপ হল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি এটাকে উপার্জনের এবং পরমুখাপেক্ষী না হওয়ার উদ্দেশ্যে লালন-পালন করে এবং এর যাকাত আদায় করে। আর পাপের কারণ হল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে অহংকার ও রিয়াকারী এবং মুসলমানদের সহিত শত্রুতা করার উদ্দেশ্যে এটাকে লালন-পালন করে। গাধা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন : এই সম্পর্কে আমার উপর নিম্নের এই স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়াতটি ব্যতীত অন্য কোন হুকুম অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হল এই
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ .
অর্থ : সামান্য পরিমাণ নেক আমল করলে তাতেও সে দেখিতে পাবে আর সামান্য পরিমাণ মন্দ আমল করলে তাও সে দেখিতে পাবে। [আল-কুরআন ৯৯ : ৭-৮]
[বুখারি ২৩৭১, মুসলিম ৯৮৭]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৫৪ আতা ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির কথা তোমাদেরকে বলব কি? যে ব্যক্তি স্বীয় ঘোড়ার লাগাম হাতে নিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদে লিপ্ত থাকে, সেই ব্যক্তি হল সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। অতঃপর সর্বোচ্চ মর্যাদা হল ঐ ব্যক্তির যে ব্যক্তি বকরীর এক পাল নিয়ে এক কোণে পড়ে থাকে, নামাজ পড়ে, যাকাত দেয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদতে লিপ্ত হয়ে থাকে আর কাউকেও তাঁর শরীক করেনি।
[সহীহ, তিরমীযী ১৬৫২, নাসাঈ ২৫৬৯, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১২৯৮, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৫৫ উবাদা ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
সচ্ছল ও অসচ্ছল সকল অবস্থায় এবং সুখে ও দুঃখে কথা শোনার, আনুগত্য প্রদর্শন করার, উপযুক্ত মুসলিম প্রশাসকদের সাথে বিবাদ না করার, সকল স্থানে সত্য বলার এবং আল্লাহর কাজে নিন্দুকের নিন্দা গ্রাহ্য না করার উপরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর হাতে আমরা বায়আত করিয়াছি।
[বুখারি ৭১৯৯, মুসলিম ১৭০৯] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৫৬ যাইদ ইবনি আসলাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবু উবায়দা ইবনিল জার্রাহ [রাদি.] রোমক বাহিনীর শক্তিমত্তা ও নিজেদের আশংকাজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করে উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর কাছে চিঠি লিখলে উমার [রাদি.] উত্তরে লিখেছিলেন, হামদ ও সালাতের পর। জেনে রাখুন, মুমিনের উপর যখনই কোন বিপদ আসুক না কেন আল্লাহ তা দূরীভূত করে দেন। মনে রাখবেন, একবারের কষ্ট কখনো দুইবারের সুখ ও আরামের উপর প্রাধান্য লাভ করিতে পারে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
ওহে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং প্রতিরক্ষায় দৃঢ় হয়ে থাক, আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ২ – শত্রুর দেশে কুরআনুল কারীম নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ
৯৫৭ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেছেন, শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে যেতে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন। [বুখারি ২৯৯০, মুসলিম ১৮৬৯]
মালিক [রাদি.] বলেন : এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হল, শত্রুরা যেন কুরআন শরীফের অবমাননা করার সুযোগ না পায়।
জ্বিহাদ অধ্যায় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৩ -যুদ্ধে নারী ও শিশু হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা
৯৫৮ আবদুর রহমান ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
ইবনি আবুল হুকাইককে যারা হত্যা করিতে গিয়েছিলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাদেরকে নারী ও শিশু হত্যা করিতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। ইবনি কাব বলেন: ঐ কার্যে নিয়োজিতদের একজন বলেছেন : ইবনি আবুল হুকাইকের স্ত্রী চিৎকার করে আমাদের তৎপরতা ফাঁস করে দিয়েছিল। আমি তাকে হত্যা করার জন্য তলোয়ার উঠিয়েছিলাম। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিষেধাজ্ঞা মনে পড়তেই আবার নামিয়ে ফেলেছিলাম। আর তা না হলে তাকেও সেখানে শেষ করে আসতাম! {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} ইবনি আবুল হুকাইক খায়ববের এক ইহুদী। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তাকে হত্যা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ পাঁচ সদস্যের একটি কমান্ডো দল প্রেরণ করেছিলেন। এর বিস্তারিত বর্ণনা বুখারি শরীফে রয়েছে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৫৯ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কোন এক যুদ্ধে একজন স্ত্রীলোককে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখিতে পেয়ে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেন এবং যুদ্ধে নারী ও শিশুহত্যা নিষিদ্ধ করেন।
[বুখারি ৩০১৫, মুসলিম ১৭৪৪]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৬০ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বক্র সিদ্দীক [রাদি.] সিরিয়ায় এক সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। উক্ত বাহিনীর এক-চতুর্থাংশের অধিনায়ক ছিলেন ইয়াযিদ ইবনি আবু সুফিয়ান [রাদি.]। বিদায়ের সময় তিনি তাঁর সঙ্গে কিছুদূর পায়ে হেটে যান। তখন ইয়াযিদ [রাদি.] বলিলেন : আমীরুল মুমিনীন! হয় আপনি সওয়ারীতে আরোহণ করে চলুন, না হয় আমি নেমে পড়ি এবং আমিও হেঁটে চলি। আবু বক্র সিদ্দীক [রাদি.] বলিলেন : তুমিও হেঁটে চলতে পার না আর আমিও সওয়ার হইতে পারব না। আমার এই হাঁটাকে আমি আল্লাহর পথে কদম ফেলা বলে বিশ্বাস করি। অতঃপর তিনি আরো বলিলেন : সেখানে কিছু এমন ধরনের লোক তুমি দেখবে যারা নিজেদেরকে আল্লাহর ধ্যানে নিবেদিত বলে মনে করে [অর্থাৎ খৃস্টান পাদ্রী]। তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দিও। কিন্তু এমন লোক দেখবে যারা মধ্যভাগে মাথা মুন্ডন করে [তৎকালে অগ্নি উপাসকদের এই রীতি ছিল।] তাদেরকে সেখানেই তালোয়ার দিয়ে উড়িয়ে দিবে। দশটি বিষয়ে তোমাকে আমি বিশেষ উপদেশ দিচ্ছি। উহার প্রতি লক্ষ্য রেখ। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করিবে না। ফলন্ত বৃক্ষ কেটো না, আবাদ ভূমিকে ধ্বংস করো না, খাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিন্ন বকরী বা উট হত্যা করো না, মৌমাছির মৌচাক পোড়ায়ে দিও না অথবা পানিতে ডুবিয়ে দিও না, গনীমত বা যুদ্ধলদ্ধ মাল হইতে কিছু চুরি করো না, হতোদ্যম বা ভীরু হইও না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৬১ মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাদি.] তাঁর জনৈক শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন : আমি জানতে পেরেছি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যখন কোন দিকে সৈন্যদল প্রেরণ করিতেন তখন তাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলিতেন : তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহরই পথে জ্বিহাদ করে যাও। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, কুফরী করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তোমরা এই জ্বিহাদ করিতেছ। খেয়ানত করো না, ওয়াদা ভঙ্গ করো না, কারো নাক-কান কেটে বিকৃত করো না, শিশু ও নারীদেরকে হত্যা করো না। অন্য সেনাদল ও বাহিনীকেও এই কথাগুলো শুনিয়ে দিও। আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি বর্ষণ করুন, তোমাদেরকে নিরাপদে রাখুন।
[সহীহ, ঈমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করিয়াছেন, ১৮৩১]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৪ -নিরাপত্তা চুক্তি
৯৬২ মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
কুফার জনৈক ব্যক্তি হইতে বর্ণনা করেন উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] জনৈক সেনাধ্যক্ষকে লিখেছিলেন : জানতে পারলাম, আনারব কাফেরদের মধ্যে কেউ যুদ্ধ বন্ধ করে পাহাড়ে আশ্রয় নিলে তোমাদের কেউ তাকে ডেকে বলে, “তোমাদের কোন ভয় নেই”, পরে হাতের মুঠোয় পেয়ে আবার তাকে হত্যা করে ফেলে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, সত্যই যদি কাউকেও আমি কোনদিন এমন [ওয়াদা ভঙ্গ] করিতে দেখিতে পাই, তবে তার গর্দান উড়িয়ে দেব। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন: এই হাদীসটি সম্পর্কে আলিমগণ একমত নন এবং এর উপর আমল নাই। {১}
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইশারা ইঙ্গিতে যদি কেউ কাউকে আমান বা নিরাপত্তা প্রদান করে, তবে কি তা গ্রহণযোগ্য হইবে? তিনি বলিলেন; হ্যাঁ, আমি মনে করি সৈন্যদেরকে যেন বলে দেওয়া হয় যে, ইশারা করে যাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে তাকে যেন হত্যা না করে। কারণ আমার মতে ইশারাও ভাষার মতোই্। আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন: যে জাতি চুক্তি ভঙ্গ করে, সেই জাতির উপর আল্লাহ তায়ালা শত্রু চাপিয়ে দেন।
{১} কাজটি হারাম বটে, কিন্তু কাফেরের বদলায় মুসলমানকে হত্যা করা অন্য একটি সহীহ হাদীসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৫ -যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দান করিল তার কি হুকুম
৯৬৩ নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] জিহাদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু দিতেন, তবে বলিতেন: ওয়াদি কুরায় যখন পৌঁছাবে তখন এটা তোমার। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} ওয়াদি-এ কুরা খায়বরের নিকটবর্তী একটি স্থান। সেখানেই তৎকালীন সেনা শিবির ছিল। সেখানে গেলে বুঝা যেত যে, সত্যই জ্বিহাদ তার উদ্দেশ্য।জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৬৪ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাদি.] বলিতেন, কাউকেও যদি জিহাদের উদ্দেশ্যে কোন কিছু দেয়া হয় আর ঐ ব্যক্তি জিহাদের স্থানে পৌঁছে যায়, তবে উহা তার হয়ে যাবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেউ যদি জ্বিহাদ করার মানত করে আর তার পিতামাতা বা তাদের কোন একজন যদি তাকে জিহাদে যেতে নিষেধ করে তবে সে কি করিবে? তিনি বলেন, আমার মতে মাতাপিতার অবাধ্যতা করা উচিত নয় এবং আপাতত জ্বিহাদ আরেক বৎসর পর্যন্ত মওকুফ করে রাখবে, জিহাদের উপকরণসমূহও হেফাজত করে রাখবে।
নষ্ট হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিলে সে এগুলো বিক্রি করে মূল্য সংরক্ষণ করে রাখবে, যাতে সে আগামী বৎসর এটা দ্বারা পুনরায় অস্ত্র ক্রয় করিতে পারে। তবে সে যদি সম্পদশালী হয় এবং ইচ্ছা মত অস্ত্র ক্রয় করার শক্তি যদি তার থাকে তা হলে ঐ অস্ত্র যা ইচ্ছা তাই করিতে পারে।
জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৬ -যুদ্ধে প্রাপ্ত নফল
৯৬৫ নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন, নজদ এলাকার দিকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি সেনাদল প্রেরণ করেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-ও এতে শরীক ছিলেন। গনীমত হিসেবে অনেক উট ধরা পড়ে। প্রত্যেকেই বারটি বা এগারটি করে উট প্রাপ্ত হন এবং প্রত্যেককেই আরো একটি করে নফল [হিস্যাতিরিক্ত] দেয়া হয়।
{১} [বুখারি ৩১৩৪, মুসলিম ১৭৪৯]{১} গনীমতের সাকুল্য সম্পদ পাঁচ ভাগে বণ্টন করা হয়। এক ভাগ সরকারী তহবিলে সংরক্ষিত হয়। আর চার ভাগ মুজাহিদগণের মধ্যে বণ্টন করা হয়।এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৬৬ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, জিহাদের মালে গনীমত বণ্টন করার সময় একটি উট দশটি বকরীর সমান বলে গণ্য করা হত। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাদি.] বলেন: জিহাদে যদি কেউ মজুর হিসেবে শরীক হয় আর অন্য মুজাহিদের সাথে সেও যদি যুদ্ধে উপস্থিত থাকে ও যুদ্ধ করে, আর সে আযাদ ব্যক্তি হয়, তবে গনীমত হইতে তাকেও হিস্যা প্রদান করা হইবে। আর যদি সে যুদ্ধে শরীক না হয় তবে সে হিস্যা পাবে না। মালিক [রাদি.] বলেন: আমি মনে করি, স্বাধীন ব্যক্তি যারা যুদ্ধে শরীক হয় তারা ব্যতীত অন্য কারো জন্য গনীমতের অংশ বরাদ্দ হইবে না।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৭ -যে ধরনের সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ আদায় করা ওয়াজিব নয়
জ্বিহাদ অধ্যায় –
পরিচ্ছেদ ৮ -এক-পঞ্চমাংশ আলাদা করার পূর্বে গনীমত হইতে যে সমস্ত জিনিস আহার করা যায়
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : মুসলমানগণ শত্রুর দেশে খাদ্যদ্রব্য পেলে বণ্টনের পূর্বে তা আহার করিতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : উট, গরু, বকরীকে আমি খাদ্যসামগ্রীর অন্তর্গত মনে করি, দুশমনের দেশে প্রবেশ করলে মুসলিমগণ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের মতো এই সবও খেতে পারে। এমন বস্তু যা আহার না করে বণ্টনের জন্য একত্র করলে সেনাদের কষ্ট হয় তা প্রয়োজনানুসারে ন্যায়নীতির সহিত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঞ্চয় করে রাখা জায়েয নয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেউ যদি কাফেরদের দেশে আহারযোগ্য কিছু পেয়ে তা খেয়ে ফেলে এবং অবশিষ্ট খাদ্য বাড়ি নিয়ে আসে বা পথে বিক্রয় করে পয়সা নিয়ে নেয় তবে কি হইবে? তিনি বলেন : জিহাদে লিপ্ত থাকা অবস্থায় যদি বিক্রয় করে, তবে তা গনীমতের মালের সাথে সংযুক্ত হইবে। বাড়ি চলে এলে তা খাওয়া বা তার মূল্য স্বীয় কাজে ব্যবহার করা জায়েয আছে যদি সামান্য এবং মামুলি ধরনের [যেমন গোশত, রুটি ইত্যাদি] জিনিস হয়।
পরিচ্ছেদ ৯ -গনীমতের মাল হইতে বণ্টনের পূর্বে যা ফিরিয়ে দেওয়া হয়
৯৬৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর একজন গোলাম ঘোড়াসহ পালিয়ে কাফেরদের হাতে পড়ে গিয়েছিল। পরে তা গনীমতের মাল হিসেবে পুনরায় মুসলমানদের হস্তগত হয়। তখন বণ্টনের পূর্বেই আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-কে এগুলো ফিরিয়া দেয়া হয়েছিল। [বুখারি ৩০৬৮]
ইয়াহইয়া মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, কাফেরদের হাতে মুসলমানদের কোন কিছু পাওয়া গেলে বণ্টনের পূর্বে তা পূর্ব মালিকের নিকট প্রত্যার্পণ করা হইবে। বণ্টন হয়ে গেলে আর উহা প্রত্যার্পণ করা হইবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোনো মুসলমানের উম্মু ওয়ালাদ {১} যদি কাফেররা নিয়ে যায়, পরে গনীমত হিসেবে যদি পুনরায় উহা মুসলমানদের হস্তগত হয়, তবে কি করা হইবে? তিনি বলিলেন: বণ্টনের পূর্বে উহাকে কোনরূপে বিনিময় ব্যতিরেকে পূর্ব মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হইবে। আমার মতে বণ্টনের পর মালিক ইচ্ছা করলে মূল্য দিয়ে উহাকে নিয়ে যেতে পারবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : কোনো মুসলমানের উম্মে ওয়ালাদ দাসীকেও যদি কাফেরগণ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, পরে সে গনীমতের মাল হিসেবে হস্তগত হয়, আর বণ্টন হয়ে যাওয়ার পরে যদি মালিক তাকে চিনতে পারে, তবুও তাকে দাসী বানান যাবে না। আমি মনে করি, তখন সরকারের কর্তব্য হইবে তার ফিদ্আ আদায় করে তার মালিকের নিকট প্রত্যার্পণ করা। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : সরকার যদি এরূপ না করে তবে পূর্ব মালিক তার ফিদ্আ আদায় করে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। বণ্টনের পর যার ভাগে সে পড়েছিল তার জন্য তাকে দাসী বানান বা তার সাথে যৌন মিলন জায়েয নয়। উম্মে ওয়ালাদ আযাদ দাসীর মতো। উম্মে ওয়ালাদ যদি কাউকেও আঘাত করে যখমী করে ফেলে তবে মালিকের উপর ফিদয়া আদায় করে তাকে মুক্ত করে দেয়া মালিকের উপর জরুরী। তাকে মুক্ত না করে ঐ অবস্থায় রেখে দেয়া এবং তাকে পুনরায় দাসী বানান ও তার সাথে যৌন সম্ভোগ কোনক্রমেই জায়েয হইবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেউ কোন মুসলমানকে মুক্ত করে আনার উদ্দেশ্যে বা ব্যবসা করিতে কাফেরদের অঞ্চলে গেল আর সেখানে আযাদ ও ক্রীতদাস উভয় ধরনের মানুষ ক্রয় করে নিয়ে এল বা কাফেরগণ তাকে হেবা হিসেবে দান করিল। এখন এ ব্যক্তির বিষয়ে কি হুকুম হইবে? তিনি বলিলেন : আযাদ ব্যক্তিকে ক্রয় করে নিয়ে এলে তাকে ক্রীতদাস বানান যাবে না। আর তার মূল্য তখন ঋণ হিসেবে ধরা হইবে। হেবা হিসেবে নিয়ে এসে থাকলে ঐ ব্যক্তি আযাদ হিসেবেই বহাল থাকিবে আর আনয়নকারী ব্যক্তি কিছুই পাবে না। তবে হিবার বিনিময়ে সে সেখানে কোন কিছু আদায় করে থাকলে তৎপরিমাণ টাকা দিয়ে তাকে ক্রয় করে আনল। আর ঐ ব্যক্তি যদি কোন দাস ক্রয় করে আনে, তবে পূর্ব মালিকের ইখতিয়ার থাকিবে। ইচ্ছা করলে মূল্য আদায় করে তাকে সে নিয়ে যেতে পারবে আর ইচ্ছা করলে তাকে ঐ ব্যক্তির কাছে ছেড়ে দিতে পারবে।
হিবা হিসেবে পেয়ে থাকলে পূর্ব মালিক তাকে এমনিই নিয়ে যেতে পারবে। হিবার বিনিময়ে কিছু ব্যয় করে থাকলে তৎপরিমাণ টাকা আদায় করে তবে পূর্ব মালিক তাকে নিতে পারবে।
{১} যে দাসীর গর্ভে মালিকের ঔরসজাত সন্তানের জন্ম হয়েছে সে দাসীকে উম্মে ওয়ালাদ বলা হয়।জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১০ -নফল হিসেবে কোন সৈনিককে অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করা
৯৬৮ আবু কাতাদা ইবনি রিব্য়ী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
হুনায়ন যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা বের হলাম। প্রচণ্ড চাপে মুসলমানগণ হেঁটে আসেন। কোন এক কাফের সৈন্যকে তখন জনৈক মুসলিম সৈন্যের উপর জয়ী হয়ে যাচ্ছে দেখে পিছন হইতে আমি ঐ কাফের সৈন্যটির ঘাড়ে তলওয়ারের এক কোপ বসালাম। সে তখন দৌঁড়ে আমাকে ধরে এমন চাপ দিল যে, আমার মৃত্যুর স্বাদ অনুভূত হইতে লাগল। শেষে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। পরে উমার [রাদি.] ইবনি খাত্তাবের সাথে আমার সাক্ষাত হল। আমি বললাম; মানুষের একি হল! তিনি বলিলেন : আল্লাহর হুকুম। শেষে মুসলিম সৈন্যগণ আবার ময়দানে ফিরে এলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সে সময় ঘোষণা করলেন : সাক্ষী পেশ করিতে পারলে যে তাকে হত্যা করিয়াছেন তার আসবাবপত্র সে-ই পাবে।
আবু কাতাদা বলেন : এই ঘোষণা শুনে আমি দাঁড়ালাম এবং বললাম : আমার জন্য কে সাক্ষ্য দেবে? এ কথা বলে আমি বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পুনরায় ঐ কথা ঘোষণা করলেন।
আমি আবার দাঁড়ালাম এবং বললাম : আমার জন্য কে সাক্ষ্য দেবে? এ কথা বলে আমি বসে পড়লাম। তৃতীয়বার রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথা ঘোষণা করলেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তখন বলিলেন : আবু কাতাদা, তোমার কি হল? সমস্ত ঘটনা তখন আমি তাহাকে বিবৃত করলাম। তখন এক ব্যক্তি উঠে বলিলেন : হে আল্লাহর রসূল, ইনি সত্যিই বলেছেন। ঐ নিহত কাফেরটির আসবাবপত্র আমার কাছে আছে। আপনি তাকে রাজী করিয়ে ঐ আসবাবপত্র আমাকে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আবু বক্র [রাদি.] তখন বলিলেন : আল্লাহ্র কসম, কখনো নয়।
আপনি এমন কাজ করার ইচ্ছা করিবেন না। আল্লাহর ব্যাঘ্রসমূহ হইতে কোন এক ব্যাঘ্র আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষে লড়াই করিবে আর তুমি আসবাবপত্র নিয়ে যাবে, তা হইতে পারে না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন বলিলেন; আবু বক্র যথার্থই বলেছেন। আবু কাতাদাকে ঐ আসবাবপত্র দিয়ে দাও। শেষে ঐ ব্যক্তি উহা আমাকে দিয়ে দিলেন। উহা হইতে একটি বর্ম বিক্রয় করে বনু সালিমা মহল্লায় একটা বাগান ক্রয় করে ফেললাম। ইসলাম গ্রহণ করার পর এ সম্পত্তিটুকু আমি লাভ করিতে পেরেছিলাম।
[বুখারি ৩১৪২, মুসলিম ১৭৫১] জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৬৯ কাশিম ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর কাছে আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে এক ব্যক্তিকে শুনিয়াছিলাম। ইবনি আব্বাস [রাদি.] তখন উত্তরে বলেছিলেন : ঘোড়া এবং অস্ত্রশস্ত্র আনফালের মধ্যে শামিল । ঐ ব্যক্তি ঐ প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে ইবনি আব্বাস [রাদি.] পুনরায় ঐ উত্তর প্রদান করেন। তখন ঐ ব্যক্তি বলল : কুরআনুল কারীমে যে আনফালের আলোচনা করা হয়েছে, সে আনফাল সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি। কাশিম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : ঐ ব্যক্তি বার বার একই কথা বলিতে লাগল। শেষে ইবনি আব্বাস [রাদি.] বিরক্ত হয়ে বলিলেন; এই ব্যক্তি সবীগের মতো যাকে উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বেত্রদণ্ড দিয়েছিলেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মুসলিমদের কোন শত্রুকে হত্যা করিতে পারলে মুসলিম রাষ্ট্রনায়কের অনুমতি ব্যতিরেকে তার আসবাবপত্র নিহতকারী পেতে পারে কি? তিনি বলিলেন : না। ঈমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান মুনাসিব মনে করলে এ ধরনের হুকুম জারি করিতে পারেন।
হুনায়ন যুদ্ধ ব্যতীত অন্য কোন যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমরা জ্ঞাত হইনি।
{১} ইরাকের বাসিন্দা এক ব্যক্তি উমার [রাদি.]-এর আমলে মদীনায় এসে আল-কুরআনের আয়াতসমূহ নিয়ে নানা ধরনের উদ্ভট আলোচনার অবতারণা করে দেয়। উমার [রাদি.] তখন তাকে বেত্রদণ্ড দেন এবং তার কাছে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১১ -খুমুস হইতে নফল প্রদান করা
৯৭০ সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
মালে গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ হইতে [সাহাবা যুগের] লোকগণ নফল দিতেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই বর্ণনাটি আমার কাছে উত্তম।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল গনীমতের প্রথম ভাগ হইতেই কি নফল দিতে হইবে? তিনি বলিলেন, এটা রাষ্ট্রপ্রধানের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। আমাদের নিকট এর নির্দিষ্ট রীতি নেই। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যেক জিহাদেই নফল দিয়েছেন বলে কোন রেওয়ায়ত আমাদের নিকট পৌঁছেনি বরং কতক সময় তা দিয়েছেন, তন্মধ্যে হুনায়ন একটি। এটা ইমামের ইচ্ছাধীন।
{১} যুদ্ধলব্ধ মাল হইতে হিস্যার অতিরিক্ত কিছু সাহসিকতার স্বকৃতি বা উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রদান করাকে ফিকহর পরিভাষায় নফল বলা হয়। তবে তা দিতে হলে সেনাপতিকে পূর্বে ঘোষণা করিতে হইবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১২ -জিহাদে ঘোড়ার অংশ
৯৭১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, গনীমতের মধ্যে ঘোড়ার দুই অংশ এবং অশ্বারোহীর এক অংশ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে ইবনি মুসাইয্যের এর মন্তব্যটুকু ঈমাম বুখারি বর্ণনা করিয়াছেন ২৮৬৩, মুসলিম ১৭৬২]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি উক্ত ধরনের অভিমতই শুনে এসেছি।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল একজন যদি কয়েকটি ঘোড়া জিহাদে নিয়ে আসে তবে সে প্রত্যেকটিরই কি আলাদা অংশ পাবে? তিনি বলিলেন, না, আমি এরূপ শুনিনি, যে ঘোড়াটির উপর আহরণ করে যুদ্ধ করেছে সেটির হিস্যাই কেবল সে পাবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার মতে তুর্কী ঘোড়া এবং সংকর জাতীয় ঘোড়াও সাধারণ ঘোড়ার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হইবে। কেননা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে : “ঘোড়া, গাধা ও খচ্চর তোমাদের আরোহণের জন্য আমি সৃষ্টি করেছি।” {১} আল্লাহ্ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, “কাফেরদের মুকাবিলায় যথাশক্তি যুদ্ধাস্ত্র এবং ঘোড়া তৈরি রাখ যাতে এদের দ্বারা আল্লাহর শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত রাখতে পার। “সুতরাং সরকার যখন গ্রহণ করে নেন তখন আমার মতে তুর্কী ও সংকর জাতীয় ঘোড়াও সাধারণ ঘোড়ার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে কেউ জিজ্ঞেস করেছিল : তুর্কী ঘোড়ারও কি যাকাত দিতে হইবে? উত্তরে তিনি বলেছেন, ঘোড়ারও আবার যাকাত ওয়াজিব হয় নাকি?
{১} তুর্কী এবং সংকর জাতীয় ঘোড়ায়ও মানুষ আরোহণ করে থাকে। এটা নিঃসন্দেহে গাধা বা খচ্চরের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং ঘোড়ার অন্তর্ভুক্ত হইবে।জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১৩ -গনীমতের সম্পদ হইতে চুরি করা
৯৭২ আমর ইবনি শুয়াইব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হুনায়নের জ্বিহাদ হইতে যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যাবর্তন করে জিয়িরানা নামক স্থানের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কাছে এসে লোকের গনীমতের হিস্যা চাইতে লাগল, এমনকি লোকের চাপে তাঁরা উট বৃক্ষের নিকট চলে গেল এবং তাঁর চাদর কাঁটায় আটকে পিঠ হইতে পড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার চাদর আমাকে দাও। তোমরা কি মনে কর, যে জিনিস আল্লাহ্ তোমাদেরকে দিয়েছেন তা তোমাদেরকে আমি বেঁচে দেব না? যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তিহামা প্রান্তরের বাবলা গাছের মতো এত অধিক সংখ্যক পশুও যদি আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে দান করেন তাও তোমাদের মাঝে আমি বণ্টন করে দেব। তোমরা আমাকে কৃপণ, ভীরু ও মিথ্যাবাদী হিসেবে দেখিতে পাবে না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উট হইতে অবতরণ করে লোকের সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর বলিলেন, কেউ যদি একটি সুতা বা সুঁচ নিয়ে যায় তবে তাও দিয়ে দাও। গনীমত হইতে কিছু চুরি করা লজ্জা ও জাহান্নামের কারণ হয় এবং কিয়ামতের দিনও ইহা লজ্জা এবং মহাদোষের কারণ হইবে। অতঃপর তিনি মাটি হইতে বকরী বা উটের একটা পশম হাতে নিয়ে বলিলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম, আল্লাহ্ তাআল্লা তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তাতে এতটুকু হিস্যাও আমার নেই। হ্যাঁ, গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আমি পাই। উহা তোমাদের নিকটই প্রত্যাবর্তিত হয়।
[সহীহ, ঈমাম নাসাঈ মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ৪১৩৮, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেন {ইরওয়া} ১২৪০, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৭৩ যাইদ ইবনি খালিদ জুহানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হুনায়নের জিহাদে এক ব্যক্তি মারা যায়। অন্যরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে এসে এ সংবাদ জানালে তিনি বলিলেন, তোমরা তোমাদের এই সঙ্গীর জানাযা পড়ে নাও। এ কথা শুনে সকলের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। {কারণ মৃত ব্যক্তির কোন দোষের কারণেই হয়ত রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ পড়াতে অস্বীকার করিতেছেন।} যাইদ [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন বলেছিলেন : এ ব্যক্তি গনীমত হইতে চুরি করে কিছু নিয়ে গিয়েছিল। যাঈদ [রাদি.] বলেন, আমরা ঐ ব্যক্তির আসবাবপত্র খুলে তাতে ইহুদীদের পুতি হইতে সামান্য কয়েকটি পুতি পেলাম, দুই দিরহাম পরিমাণ যার মূল্য হইবে।
[যয়ীফ, আবু দাঊদ ২৭১০, নাসাঈ ১৯৫৮, ইবনি মাজাহ ২৮৪৮, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন {যয়ীফ আল-আনজামে} ৩৪৮১]এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৭৪ আবদুল্লাহ্ ইবনি মুগীরা ইবনি আবু বুরদা কেনানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের সকল কবীলার লোকদের কাছে এসে তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন। কিন্তু একটি কবীলার জন্য দোয়া করেননি। এই কবীলার একটি লোকের বিছানার নিচে আকীক পাথরের তৈরি একটি চুরি করা হার পাওয়া গিয়েছিল। এই কবীলার নিকট এসে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুর্দাদের বেলায় যেমন তাকবীর পড়া হয় তদ্রূপ তাকবীর পাঠ করেছিলেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} গনীমতের মাল চুরি করা জঘন্য অপরাধ এবং যারা এ কাজ করে তারা মৃত ব্যক্তির সমতুল্য। হয়ত ইহা বুঝাবার জন্য রসূলুল্লাহ্ [সা] তাকবীর পড়েছিলেন।এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৭৫ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খায়বরের বৎসর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা রওয়ানা হয়েছিলাম। এ যুদ্ধে আমরা সোনা-রূপা হস্তগত করিতে পারিনি, তবে অনেক আসবাবপত্র ও কাপড় আমাদের হস্তগত হয়েছিল।
রিফাআ ইবনি যাইদ [রাদি.] মিদআম নামের একজন দাস রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে হাদিয়া দিয়েছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়াদি-এ কুরার দিকে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছার পর মিদআম রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উটের হাওদা নামাচ্ছিল এমন সময় কোথা হইতে একটি তীর এসে তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয় এবং সে মারা যায়। লোকেরা তখন বলাবলি করিতে লাগল : মিদআমের জন্য জান্নাত মুবারক হোক। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, কখনো নয়। যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, খায়বরের যুদ্ধে গনীমতের মাল বণ্টনের পূর্বে যে চাদর সে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল তা এখন তার গায়ে আগুন হয়ে জ্বলছে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি একটা কি দুটা ফিতা এনে হাযির করিল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন বলিলেন, এই একটি বা দুটি ফিতাও আগুনের ছিল।
[বুখারি ৪২৩৪, মুসলিম ১১৫]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৭৬ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
যে জাতির মধ্যে গনীমতের মাল চুরি করার প্রবণতা প্রকাশ পায় আল্লাহ্ তাদের মনে দুশমনের ভয় ঢুকিয়ে দেন। যে জাতির মধ্যে যিনা বেশি হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যুর আধিক্য ঘটে। যে জাতি মাপে কম দেয় আল্লাহ্ তাদের রিযিক কমিয়ে দেন। যে জাতি ন্যায়বিচার করে না, তাদের মধ্যে রক্তপাত বেশি হইবে। আর যে জাতি চুক্তির খেলাফ করে, আল্লাহ্ তাদের উপর দুশমনকে চাপিয়ে দেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১৪ -আল্লাহর পথের শহীদগণ
৯৭৭ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, আমি চাই একবার আল্লাহর পথে শহীদ হই, আবার জীবিত হই; আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই; আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই। আবু হুরায়রা [রাদি.] তিনবার এ কথা উল্লেখ করে বলিতেন, আমি সাক্ষী, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই ধরনের কথা বলেছিলেন।
[বুখারি ৭২২৭, মুসলিম ১৮৭৬]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৭৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা দুই ব্যক্তিকে দেখে হাসবেন। তাঁরা ছিলেন একজন অন্যজনের হত্যাকারী। তাঁরা দুজনে জান্নাতে প্রবেশ করিবেন। একজন তো আল্লাহর পথে জ্বিহাদ করিতে করিতে শহীদ হন। পরে তাঁর হত্যাকারী ইসলাম গ্রহণ করে তিনিও আল্লাহর পথে জ্বিহাদ করে শাহাদাত বরণ করেন।
[বুখারি ২৮২৬, মুসলিম ১৮৯০]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৭৯ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে আহত বা যখমী হইবে, আর কে আল্লাহর রাহে আহত হয়েছে তাকে তিনিই ভাল জানেন, সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার শরীর হইতে রক্ত প্রবাহিত হইতে থাকিবে। এর রং রক্তের রঙের মতোই হইবে, কিন্তু ইহা হইতে মেশক আম্বরের মতো সুগদ্ধ ছড়াতে থাকিবে।
[বুখারি ২৮০৩, মুসলিম ১৮৭৬]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৮০ যাইদ ইবনি আসলাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলিতেন, হে আল্লাহ্! এমন ব্যক্তির হাতে আমাকে হত্যা করায়ো না যে ব্যক্তি তোমাকে একটি সিজদাও করেছে। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} কাফেরের হাতে যেন শাহাদত হয়। আল্লাহ্ তাআলা উমার [রাদি.]-এর এই দুআ কবুল করেছিলেন। শেষে আবু লুলু নামক এক অগ্নি উপাসকের হাতে তাঁর শাহাদত হয়েছিল।এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৮১ আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু কাতাদা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে আরয করিল : হে আল্লাহর রসূল! সওয়াবের আশায় পলায়ন না করে দুশমনদের মুকাবেলায় ধৈর্যের সঙ্গে লড়তে লড়তে আল্লাহর রাহে যদি শহীদ হইতে পারি তবে আল্লাহ্ আমার গুনাহ মাফ করে দিবেন কি? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ডেকে আনতে বলিলেন। সে এলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি আমার নিকট কি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে? ঐ ব্যক্তি তার কথা পুনারায় ব্যক্ত করিলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ, ঋণ ব্যতীত অন্য ধরনের গুনাহসমূহ আল্লাহ্ তাআলা মাফ করে দিবেন। জিবরাঈল [আ] এসে এ কথাই আমাকে জানিয়ে গেছেন।
[সহীহ, মুসলিম ১৮৮৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৮২ উমর ইবনি উবায়দুল্লাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, আমি নিজে ইহাদের সাক্ষী। আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] তখন আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি এদের ভাই নই? আমরাও তাঁদের মতো ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং তাঁদের মতো আল্লাহর পথে জিহাদে রত রয়েছি। আপনি কি আমাদের পক্ষে সাক্ষী হইবেন না? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ, কিন্তু জানা নেই আমার মৃত্যুর পর তোমরা কি করিতে শুরু করিবে। এ কথা শুনে আবু বকর [রাদি.] কাঁদতে লাগলেন, তিনি বলিলেন, আপনার মৃত্যুর পরও আমরা জীবিত থাকব? [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৮৩ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন মদীনায় একটি কবর খোঁড়া হচ্ছিল। এক ব্যক্তি কবরটি দেখে বলল, মুসলমানদের জন্য কত খারাপ এই জায়গা। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি গর্হিত কথা বলেছ। ঐ ব্যক্তি বলল, আমার এই কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল যে, আল্লাহর রাহে শহীদ হওয়া এই মৃত্যু হইতে অনেক ভাল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহর রাহে শহীদ হওয়ার চাইতে উত্তম অন্য কিছু নাই সত্য, কিন্তু মদীনা ব্যতীত এমন কোন স্থান নাই, যে স্থানে আমার কবর হইতে আমি ভালবাসি। এই কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ১৫ -শাহাদতের বর্ণনা
৯৮৪ যাইদ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলিতেন, হে আল্লাহ্! তোমার রাহে শাহাদত আর তোমার রাসূলের এই নগরে [মদীনা শরীফে] আমার মৃত্যু তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করি।
{১} [সহীহ, বুখারি ১৮৯০, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদের ==== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।]{১} আল্লাহ্ তাঁর এই দুআ ক্ববূল করেছিলেন। শহীদও হয়েছিলেন আর মদীনা শরীফেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। যিলহজ্জ, ২৩ হিজরী সনে তিনি শহীদ হন।এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৮৫ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলেন, মুমিনের সম্মান হল তার তাকওয়া ও পরহেযগারী অর্জনে, আর দ্বীন হল তাঁর শরাফত ও ভদ্রতা। ভদ্রতা ও চক্ষুলজ্জা হল তার চরিত্র। বাহাদুরী ও ভীরুতা উভয়ই হল জন্মগত গুণ। যেখানে ইচ্ছা করেন আল্লাহ্ এগুলোর একটি সেখানে রাখেন। ভীরু ও কাপুরুষ ব্যক্তি মাতাপিতাকে বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যায় আর বাহাদুর ব্যক্তি এমন ব্যক্তির সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় যার সম্পর্কে সে জানে যে, এই ব্যক্তি তাকে আর বাড়ি ফিরে যেতে দিবে না [অর্থাৎ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে যুদ্ধে লিপ্ত হয়]। মৃত্যুর বিভিন্ন রূপের মধ্যে নিহত হওয়া একটি। শহীদ হল সেই ব্যক্তি, যে সন্তুষ্টচিত্তে নিজের প্রাণ আল্লাহর রাস্তায় সপে দেয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১৬ -শহীদ ব্যক্তির গোসল
৯৮৬ আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-কে গোসল করান হয়েছিল, কাফন পরান হয়েছিল এবং তাঁর জানাযাও পড়া হয়েছিল অথচ আল্লাহর মেহেরবানীতে আল্লাহর পথে তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন [আল্লাহ্ তাঁর উপর রহমত নাযিল করুন]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৮৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আহলে ইল্ম হইতে তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, তাঁরা বলিতেন। আল্লাহর রাহের শহীদগণকে গোসল করান বা তাঁদের করো জানাযা পড়া ঠিক নয়। বরং যে কাপড়ে শহীদ হয়েছেন সেই কাপড়েই তাঁদেরকে দাফন করা উচিত।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এটা যুদ্ধের ময়দানে নিহত শহীদগণের হুকুম। আর যুদ্ধের ময়দান হইতে জীবিত আনার পর বাড়ি এসে আল্লাহর ইচ্ছায় কিছুক্ষণ বা কিছু কাল পর যাদের মৃত্যু হয় তাঁদেরকে গোসল দেওয়া হইবে এবং তাঁদের জানাযাও পড়া হইবে। উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর বেলায়ও এরূপ করা হয়েছিল।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১৭ -আল্লাহর রাহে মুজাহিদের জন্য যা, তা অন্য কোন কিছুর নামে বণ্টন করা হারাম
৯৮৮ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
মুজাহিদগণের আরোহণের জন্য উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] প্রতি বৎসর চল্লিশ হাজার উট প্রদান করিতেন। তিনি সিরিয়াগামী সৈন্যদলের প্রতিজনকে একটি করে এবং ইরাকগামীদের প্রতি দুজনকে একটি করে উট দিতেন। একদিন জনৈক ইরাকী এসে তাহাকে বলল, আমাকে এবং সুহাইমকে একটি উট দিন। উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলিতেছি, সুহাইম বলিতে কি তুমি তোমারি পানির মশকটিকেই বুঝাচ্ছ? সে বলল, হ্যাঁ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জ্বিহাদ অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১৮ -জিহাদে উৎসাহ প্রদান
৯৮৯ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোবায় তশরীফ নিয়ে যেতেন তখন উম্মে হারাম বিনত মিলহান [রাদি.]-এর বাড়িতে যেতেন। উম্মে হারাম [রাদি.] তাহাকে সেখানে আহার করাতেন। উম্মে হারাম [রাদি.] ছিলেন উবাদা ইবনি সামেত [রাদি.]-এর স্ত্রী। একদিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁর বাড়িতে গেলেন। উম্মে হারাম তাহাকে আহার করিয়ে মাথার চুল বাছতে বসে গেলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন, হঠাৎ হাসতে হাসতে তিনি জাগ্রত হলেন। উম্মে হারাম [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! হাসছেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক আমাকে দেখানো হল বাদশাহগণ যেমন সিংহাসনে আসীন হন তদ্রূপ তারা জ্বিহাদ করার জন্য সমুদ্রের বুকে আরোহণ করিতেছে। উম্মে হারাম [রাদি.] তখন আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দুআ করে দিন আমাকেও যেন আল্লাহ্ তাআলা এদের মধ্যে শামিল করে নেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুআ করলেন এবং আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পুনরায় তিনি হেসে জাগ্রত হয়ে উঠলেন। উম্মে হারাম [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! হাসছেন কেন? তিনি বলিলেন, আমাকে দেখানো হল আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক বাদশাহদের সিংহাসনারোহী হওয়ার মতো জিহাদের উদ্দেশ্যে সমুদ্রের বুকে বিচরণ করিতেছে। উম্মে হারাম [রাদি.] আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দুআ করে দিন, আল্লাহ্ যেন আমাকে এদের অন্তুর্ভুক্ত করে দেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন; তুমি তো প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছ। পরে এই উম্মে হারাম [রাদি.] মুআবিয়া ইবনি আবু সুফিয়ান [রাদি.]-এর সাথে জিহাদে সমুদ্রযাত্রায় শরীক হয়েছিলেন। ফিরবার পথে জাহাজ হইতে অবতরণ করার পর সওয়ারী হইতে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
[বুখারি ২৭৮৯, ২৮০০, মুসলিম ১৯১২] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৯০ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর না হত তবে আল্লাহর রাহে গমনকারী প্রত্যেকটি সৈন্যদলের সঙ্গে যেতে আমি বিরত হতাম না। আমার নিকট এত অধিক বাহন নাই যে, প্রত্যেককেই-এক একটা দিতে পারি আর তাদের নিজেদের নিকট এমন কোন বাহন নাই যাতে আরোহণ করে তারা জিহাদে যেতে পারে। আমি নিজে যদি চলে যাই তবে তাদের এখানে থাকতে কষ্ট হয়। আমার তো ইচছা হয় আল্লাহর পথে লড়তে যেয়ে আমি শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই।
[বুখারি ২৯৭২, মুসলিম ১৮৭৬]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস৯৯১
ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সাদ ইবনি রবী আনসারী [রাদি.]-এর খবর আমাকে কে এনে দিতে পারবে? এক ব্যক্তি উঠে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি পারব। এই ব্যক্তি সাদকে পড়ে থাকা লাশগুলোর মধ্যে খুঁজতে লাগলেন। এবং সেই স্থানে গিয়ে তাহাকে আহত হয়ে পড়ে থাকতে দেখিতে পেলেন। সাদ বলিলেন : কি ব্যাপার? লোকটি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তালাশ করে আপনার খবর নিয়ে যেতে আমাকে পাঠিয়েছেন। সাদ বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে আমার সালাম দিবে। আমার এই শরীরে বারটি আঘাত লেগেছে। প্রত্যেকটি আঘাতই মরাত্মক। তোমার সম্প্রদায়কে বলবে, তোমাদের একজন জীবিত থাকতেও যদি আল্লাহ্ না করুন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শহীদ হয়ে যান, তবে আল্লাহর দরবারে তোমাদের কোন ওযর ও জবাবদিহি কবূল হইবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৯২ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীদেরকে জিহাদের উৎসাহ দিতে যেয়ে জান্নাতের অবস্থা বর্ণনা করেন। এমন সময় জনৈক আনসারী সাহাবী {১} যিনি কয়েকটি খেজুর হাতে নিয়ে তখন খাচ্ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন : এই খেজুরগুলো খেয়েছি শেষ করা পর্যন্ত যদি আমি অপেক্ষা করি তবে সত্যি আমি দুনিয়া লোভী বলে প্রমাণিত হব। শেষ পর্যন্ত বাকি খেজুরগুলো দূরে ছুঁড়ে ফেললেন এবং তালোয়ার হাতে নিয়ে লড়াইয়ের ভিড়ে ঢুকে পড়লেন এবং লড়াই করিতে করিতে শহীদ হয়ে গেলেন। [ঈমাম বুখারি জাবের [রাদি.] মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ৪০৪৬, মুসলিম ১৮৯৯, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
{১} উক্ত সাহাবীর নাম ছিল উমাইদ [রাদি.]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৯৩ মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
জ্বিহাদ দুই প্রকার। এক হল যাতে একজন সর্বোত্তম সম্পদ ব্যয় করে। সাথীদের সাথে প্রেম-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সেনাধ্যক্ষের নির্দেশ পালন করে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি হইতে সে বেঁচে থাকে। এই ধরনের জ্বিহাদ সম্পূর্ণভাবে সওয়াবের। আরেক ধরনের জ্বিহাদ হল যাতে একজন উত্তম সম্পদ ব্যয় করে না, সঙ্গীদের সাথে প্রীতির সম্পর্ক রাখে না, সেনাধ্যক্ষের নির্দেশের অবাধ্যতা করে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হইতে বিরত থাকে না। এই ধরনের জিহাদে সওয়াব লাভ হওয়া তো দূরের কথা, গুনাহ না নিয়ে ফিরে আসতে পারাটাই অনেক মুশকিল।
[হাসান মারফু, আবু দাঊদ ২৫১৫, নাসাঈ ৩১৮৮, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন {সহীহ আল-জামে ৪১৭৪}]এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ ১৯ -ঘোড়া, ঘোড়দৌড় এবং জিহাদে ব্যয় করার ফযীলত
৯৯৪ আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ঘোড়ার কপালে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বরকত এবং মঙ্গল লিখে দেওয়া হয়েছে।
[বুখারি ২৮৪৯, মুসলিম ১৮৭১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস৯৯৫
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ইযমার {১} কৃত ঘোড়ার জন্য হাফইয়া হইতে সানিয়া তুলবিদা পর্যন্ত [পাঁচ মাইল] সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আর সাধারণ ঘোড়ার জন্য সানিয়াতুল বিদা হইতে মসজিদে বনী যুরাইক পর্যন্ত [এক মাইল] সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় শরীক ছিলেন।
[বুখারি ৪২১, মুসলিম ১৮৭০]{১} বিশেষ এক প্রক্রিয়ায় ঘোড়াকে ছিমছাম ও দ্রুতগামী করাকে আরবীতে ইযমার বলা হয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৯৬ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
ঘোড়দৌড়ে কোন কিছুর শর্ত করায় দোষ নেই তবে শর্ত হল, এদের মধ্যে তৃতীয় এক ব্যক্তি হইতে হইবে। সে যদি সকলের আগে যেতে পারে শর্তকৃত বস্তু সেই নিয়ে যাবে। আর পেছনে পড়ে গেলে সে কিছুই পাবে না। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} একজনের তরফ হইতে বাজি ধরা বা বাজি ছাড়া ঘোড়দৌড় জায়েয। উভয় তরফ হইতে বাজি ধরা যেমন দুই জনের যে ব্যক্তি হেরে যাবে তাকে বাজির টাকা আদায় করিতে হইবে আর যে প্রথম হইবে সে ঐ টাকা পাবে- এই ধরনের শর্তযুক্ত বাজি জায়েয নয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৯৭ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে স্বীয় চাদর দ্বারা ঘোড়ার মুখ মুছতে দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন : ঘোড়ার দেখাশুনা না করায় কাল রাতে আমাকে আল্লাহর তরফ হইতে সতর্ক করা হয়েছিল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৯৯৮ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
জিহাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন খায়বার পৌঁছান তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর রীতি ছিল, জিহাদের উদ্দেশ্যে কোথাও রাত্রে গিয়ে পৌঁছালে সকাল পর্যন্ত যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করিতেন [কোন আক্রমণ করিতেন না]। ভোরে খায়বরবাসিগণ কোদাল, ঝুঁড়ি ইত্যাদি নিয়ে [কাজের উদ্দেশ্যে] স্বাভাবিকভাবেই বের হল। তখন হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]কে স্বসৈন্যে দেখিতে পেয়ে চিৎকার করে বলিতে লাগল : আরে, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ এবং তাঁর সহিত পূর্ণ এক বহিনী! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং তিনি তখন এই আয়াত পাঠ করলেন إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ অর্থাৎ যখন আমি কোন জাতির মুকাবিলায় অবতরণ করি তখন ভয় প্রদর্শিত জাতির ভোর বড় দুঃখজনক হয়।
[বুখারি ২৯৪৫, মুসলিম ১৩৬৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৯৯ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
যে ব্যক্তি এক জোড়া বস্তু আল্লাহর পথে ব্যয় করিবে, তবে কিয়ামতের দিন বেহেশতের দরজায় তাকে ডেকে বলা হইবে। হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। অতঃপর নামাযীকে নামাযের দরজা দিয়ে এবং মুজাহিদকে জিহাদের দরজা দিয়ে, সদকাদাতাকে সদকার দরজা দিয়ে এবং রোযাদারকে রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে ডাকা হইবে। আবু বক্র সিদ্দীক [রাদি.] তখন বলিলেন, যে কোন এক দরজা দিয়ে ডাকলেই আর অন্য দরজা দিয়ে প্রবেশের প্রয়োজন পড়বে না। তবে এমনকি কেউ হইবে যাকে সকল দরজা দিয়েই যাকে ডাকা হইবে? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ, আমার আশা আপনি তাঁদের মধ্যে হইবেন।
[বুখারি ১৮৯৭, মুসলিম ১০২৭] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ২০ -যিম্মীদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার ভূসম্পত্তি কি করা হইবে
মালিক [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : মুসলিম প্রশাসক কর্তৃক যদি কোন এলাকার কাফেরদের উপর জিযিয়া আরোপ করা হয়, আর তখন তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি ইসলাম গ্রহণ করে নেয় তখন তার ভূসম্পত্তি তারই থাকিবে, না মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত হয়ে যাবে? মালিক [রাদি.] বলিলেন, এটা দুই ধরনের হইতে পারে, প্রথমত কুফরী অবস্থায় কোনরূপ যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত না হয়ে স্বেচ্ছায় সন্ধিশর্তে আবদ্ধ হয়ে জিযিয়া দিতে রাজী হয়ে থাকে, তবে ইসলাম গ্রহণের পর তার ভূমি ও সম্পদ তার মালিকানায় রয়ে যাবে। আর যুদ্ধ-বিগ্রহের পর পরাজিত হয়ে জিযিয়া কবূল করলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবার পরও ঐ সম্পত্তি মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত থাকিবে। কারণ তাদের সম্পদ মুসলমানগণ ফাই-স্বরূপ প্রাপ্ত হয়েছে। আর যাদের সাথে সন্ধি স্থাপিত হয়েছে, সন্ধির শর্তানুযায়ী তাদের সম্পদ মুসলমানগণ পাবে।
পরিচ্ছেদ ২১ – প্রয়োজনে এক করিবে একাধিক লাশ দাফন করা এবং আবু বক্র [রাদি.] কর্তৃক রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ওয়াদাসমূহ পূরণ করা
১০০০ আবদুর রহমান ইবনি আবু সাসাআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমর ইবনি জামুহ [রাদি.] এবং আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর [রাদি.] দুজনেই ছিলেন আনসার ও বনী সালমা গোত্রের। তাঁরা উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁদের দুজনকে একটি কবরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। পানি নামার ঢালের মুখে তাঁদের কবর পড়ে গিয়েছিল। তাই পানির স্রোত ক্রমে তাঁদের কবর বিনষ্ট করে ফেলেছিল। তাঁদের লাশ স্থানান্তরিত করার উদ্দেশ্যে পরে তাঁদের কবর খোঁড়ান হলে দেখা গেল তাঁদের লাশ সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। মনে হচ্ছিল কালকেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজন আহত হওয়ার সময় ক্ষত স্থানে হাত চেপে ধরেছিলেন। দাফন করার সময় তাঁর হাতটা সরিয়ে দিলে হাতটি আবার সেই স্থানেই এসে লেগে যায়। উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ছিচল্লিশ বৎসর পর তাঁদের লাশ স্থানান্তরিত করার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, প্রয়োজনবশত এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করলে কোন দোষ নেই। তবে এদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে কিবলার দিকে শোয়াবে।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০০১ রবীআ ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বক্র সিদ্দীক [রাদি.]-এর নিকট বাহরাইন হইতে প্রচুর ধন-সম্পদ এসে পৌঁছালে তিনি ঘোষণা করিয়ে দিয়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জীবিতকালে কাউকেও কিছু দেওয়ার ওয়াদা করে থাকলে অথবা কেউ তাঁর নিকট কিছু পাওনা থাকলে সে আমার নিকট হইতে যেন তা নিয়ে যায়। এই সময় জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] এগিয়ে এলেন। আবু বক্র [রাদি.] তাহাকে তখন তিন অঞ্জলি [দিরহাম] দিলেন।
বুখারি ২২৯৬, ঈমাম বুখারি হাদীসটি সাহাবী জাবের [রাদি.] বরাত দিয়ে বর্ণনা করিয়াছেন মুসলিম ২৩১৪, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটিতে ==== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।]জ্বিহাদ অধ্যায় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
Leave a Reply