ঝড়, মোরগ, মিথ্যা ও জ্বরকে গালি দেওয়া মকরুহ
ঝড়, মোরগ, মিথ্যা ও জ্বরকে গালি দেওয়া মকরুহ >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
ঝড়, মোরগ, মিথ্যা ও জ্বরকে গালি দেওয়া মকরুহ
পরিচ্ছেদ – ৩২২ঃ জ্বরকে গালি দেওয়া মকরূহ
পরিচ্ছেদ – ৩২৩ঃ ঝড়কে গালি দেওয়া নিষেধ ও ঝড়ের সময় দুআ
পরিচ্ছেদ – ৩২৪ঃ মোরগকে গালি দেওয়া নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩২৫ঃ অমুক নক্ষত্রের ফলে বৃষ্টি হল বলা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩২৬ঃ কোন মুসলিমকে ‘কাফের’ বলে ডাকা হারাম
পরিচ্ছেদ – ৩২৭ঃ অশ্লীল ও অসভ্য ভাষা প্রয়োগ করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩২৮ঃ কষ্ট কল্পনার সাথে গালভরে কথা বলা, মিথ্যা বাক্পটুতা প্রকাশ করা এবং সাধারণ মানুষকে সম্বোধনকালে উদ্ভট ও বিরল বাক্য সম্বলিত ভাষা প্রয়োগ অবাঞ্ছনীয়
পরিচ্ছেদ – ৩২৯ঃ আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩২২: জ্বরকে গালি দেওয়া মকরুহ
১৭৩৫. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (একবার) উম্মে সায়েব কিম্বা উম্মে মুসাইয়িবের নিকট প্রবেশ ক’রে বললেন,‘‘হে উম্মে সায়েব কিম্বা উম্মে মুসাইয়িব! তোমার কী হয়েছে যে, থরথর করে কাঁপছ?’’ সে বলল, ‘জ্বর হয়েছে; আল্লাহ তাতে বরকত না দেন।’ (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ‘‘জ্বরকে গালি দিও না। জ্বর তো আদম সন্তানের পাপ মোচন করে; যেমন হাপর (ও ভাটি) লোহার ময়লা দূর ক’রে ফেলে।’’
(মুসলিম ২৫৭৫, তিরমিজী ২২৫০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৩: ঝড়কে গালি দেওয়া নিষেধ ও ঝড়ের সময় দুআ
১৭৩৬. আবুল মুনযির উবাই ইবনে কা’ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা ঝড়কে গালি দিও না। যখন তোমরা অপছন্দনীয় কিছু লক্ষ্য করিবে, তখন এই দুআ পড়বে।
اَللهم إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ . وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ
‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাযিহির রীহি অখাইরি মা ফীহা অখাইরি মা উমিরাত বিহ। অনাঊযু বিকা মিন শার্রি হাযিহির রীহি অশার্রি মা ফীহা অশার্রি মা উমিরাত বিহ।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এই ঝড়ের কল্যাণ, ওর মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং যার আদিষ্ট হয়েছে তার কল্যাণ। এবং তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এই বায়ুর অনিষ্ট হইতে ওর মধ্যে নিহিত অনিষ্ট এবং যার আদিষ্ট হয়েছে তার অনিষ্ট হইতে।
(তিরমিজী ২২৫২, আহমাদ ২০৬৩৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৭৩৭. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘বায়ু আল্লাহর আশিস, যা রহমত আনে এবং আযাবও আনে। কাজেই তোমরা যখন তা বইতে দেখবে, তখন তাকে গালি দিও না। বরং আল্লাহর নিকট তার ইষ্ট প্রার্থনা কর এবং তার অনিষ্ট হইতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।’’
(আবু দাঊদ ৫০৯৭, ইবনু মাজাহ ৩৭২৭) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৭৩৮. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ঝড়-তুফান চলা কালে আল্লাহর রসূল এই দুআ করতেন,
اَللهم إِنِّي أَسْألُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা অখাইরা মা ফীহা অখাইরা মা উরসিলাত বিহ, অআঊযু বিকা মিন শার্রিহা অশার্রি মা ফীহা অশার্রি মা উরসিলাত বিহ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি এর কল্যাণ, এর মধ্যে যা আছে তার কল্যাণ এবং যার সাথে এ প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। আর এর অনিষ্ট, এর মধ্যে যা আছে তার অনিষ্ট এবং যার সাথে এ প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট হইতে পানাহ চাচ্ছি।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮২৯, মুসলিম ৮৯৯, তিরমিজী ৩২৫৭, আবু দাঊদ ৫০৯৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৯১, আহমাদ ২৩৮৪৮, ২৫৫০৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৪: মোরগকে গালি দেওয়া নিষেধ
১৭৩৯. যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কারণ, সে নামাযের জন্য জাগিয়ে থাকে।’’
(আবু দাঊদ ৫১০১, আহমাদ ২১১৭১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৫: অমুক নক্ষত্রের ফলে বৃষ্টি হল বলা নিষেধ
১৭৪০. যায়েদ ইবনে খালেদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা হুদাইবিয়াতে রাতে বৃষ্টি হলে আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ানোর পর নবী সাঃআঃ সকলের দিকে মুখ ক’রে বসে বললেন, ‘‘তোমরা জান কি, তোমাদের প্রতিপালক কি বলেন?’’ সকলে বলল, ‘আল্লাহ ও তদীয় রসূল ভাল জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে কিছু বান্দা মুমিন হয়ে ও কিছু কাফের হয়ে প্রভাত করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি বলেছে যে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায় আমাদের উপর বৃষ্টি হল’, সে তো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী (মু’মিন)ও নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী [কাফের]। আর যে ব্যক্তি বলেছে যে, ‘অমুক অমুক নক্ষত্রের ফলে আমাদের উপর বৃষ্টি হল’, সে তো আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী [কাফের] এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী (মু’মিন)।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৪৬, ১০৩৮, ৪১৪৭,৭৫০৩, মুসলিম ৭১, নাসাঈ ১৫২৫, আবু দাঊদ ৩৯০৬, আহমাদ ১৬৬১৩, মুওয়াত্তা মালিক ৪৫১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৬: কোন মুসলিমকে ‘কাফের’ বলে ডাকা হারাম
১৭৪১. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন কেউ তার মুসলিম ভাইকে ‘কাফের’ বলে, তখন তাদের উভয়ের মধ্যে একজনের উপর তা বর্তায়, যা বলেছে তা যদি সঠিক হয়, তাহলে তো ভাল। নচেৎ (যে বলেছে) তার উপর ঐ কথা ফিরে যায় (অর্থাৎ সে ‘কাফের’ হয়)।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১০৪, মুসলিম ৬০, তিরমিজী ২৬৩৭, আবু দাঊদ ৪৬৮৭, আহমাদ ৪৬৭৩, ৪৭৩১, ৫০১৫, ৫০৫৭, ৫২৩৭, ৫৭৯০, ৫৮৭৮, ৫৮৯৭, ৬২৪৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৭৪২. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে কাউকে ‘ওরে কাফের’ বলে ডাকে অথবা ‘ওরে আল্লাহর দুশমন’ বলে অথচ বাস্তবিক ক্ষেত্রে যদি সে তা না হয়, তাহলে তার (বক্তার) উপর তা বর্তায়।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০৫৫, মুসলিম ৬১, আহমাদ ২০৯৫৪, ২১০৬১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৭: অশ্লীল ও অসভ্য ভাষা প্রয়োগ করা নিষেধ
১৭৪৩. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মু’মিন খোঁটা দানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীল-ভাষী হয় না।’’
(তিরমিজী ১৯৭৭, আহমাদ ৩৮২৯, ৩৯৩৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৭৪৪. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে বস্তুর মধ্যে অশ্লীলতা থাকবে, তা তাকে দূষিত ক’রে ফেলবে, আর যে জিনিসের মধ্যে লজ্জা-শরম থাকবে, তা তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত ক’রে তুলবে।’’
(তিরমিজী ১৯৭৪, ইবনু মাজাহ ৪১৮৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৮: কষ্ট কল্পনার সাথে গালভরে কথা বলা, মিথ্যা বাকপটুতা প্রকাশ করা এবং সাধারণ মানুষকে সম্বোধন-কালে উদ্ভট ও বিরল বাক্য সম্বলিত ভাষা প্রয়োগ অবাঞ্ছনীয়
১৭৪৫. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘বাগাড়ম্বর-কারীরা ধ্বংস হয়ে গেল (বা ধ্বংস হোক)।’’ এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন।
(মুসলিম ২৬৭০, আবু দাঊদ ৩৬০৮, আহমাদ ৩৬৪৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৭৪৬. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আ’স রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ এমন বাকপটু মানুষকে ঘৃণা করেন, যে জিহ্বা দ্বারা ভক্ষণ করে (এমন ঢঙে জিভ ঘুরিয়ে কথা বলে,) যেমন গাভী নিজ জিহ্বা দ্বারা সাপটে তৃণ ভক্ষণ করে।’’
[আবু দাঊদ, তিরিমিযী হাসান] (তিরমিজী ২৮৫৩, আবু দাঊদ ৫০০৫, আহমাদ ৬৫০৭, ৬৭১৯)
হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৭৪৭. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং অবস্থানে আমার থেকে দূরতম হবে তারা; যারা অনর্থক অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে ও বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; যারা আলস্যভরে বা কায়দা করে টেনে-টেনে কথা বলে। আর অনুরূপ অহংকারীরাও।’’
(তিরমিজী ২০১৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩২৯: আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
১৭৪৮. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে অবশ্যই কেউ যেন ‘আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে’ না বলে। তবে বলতে পারে যে, ‘আমার অন্তর কলুষিত হয়ে গেছে।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১৭৯, মুসলিম ২২৫০, আবু দাঊদ ৪৯৭৯, আহমাদ ২৩৭২৩, ২৩৮৫৪, ২৫২২০, ২৫৪০৮, ২৭৬৬০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply