জুমার সালাত
জুমার সালাত >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৪২
- অধ্যায়ঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৪২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ
১৩৫৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমরা দুনিয়ার শেষের দিকে এসেছি। তবে ক্বিয়ামাতের দিন মর্যাদার দিক থেকে আমরা সবার আগে থাকব। তাছাড়া ইয়াহুদী নাসারাদেরকে আমাদেরকে আমাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে। আর আমাদের কিতাব দেয়া হয়েছে পরে। অতঃপর এ জুমার দিন তাদের উপর ফার্য করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এ নিয়ে মতভেদ করলে আল্লাহ তাআলা ঐ দিনটির ব্যপারে আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করিলেন। এ লোকেরা আমাদের অনুসরণকারী। ইয়াহূদীরা আগামীকালকে অর্থাৎ শনিবারকে গ্রহণ করেছে। আর নাসারারা গ্রহণ করেছে পরশুকে অর্থাৎ রবিবারকে। [বোখারী, মুসলিম]
কিন্তু মুসলিমের এক রিওয়ায়াতে সেই আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমরাই [পরবর্তীরাই] প্রথম হব। অর্থাৎ যারা জান্নাতে গমন করিবে তাদের মধ্যে আমরা প্রথম হব। অতঃপর [আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.]-এর] পার্থক্য এই যে, বাক্য হইতে শেষ পর্যন্ত পূর্ববৎ বর্ণনা করেন।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৮৭৬, ৩৪৪৬, মুসলিম ৮৫৫, আহমাদ ৭৭০৭, দারিমী ১৫৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৪৫, সহীহ আল জামি ৬৭৫২। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] ও হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে আবু হুরায়রাহ্ ও হুযায়ফাহ্ [রাদি.] থেকে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা দুজনই বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাদিসের শেষ দিকে বলেছেনঃ দুনিয়ায় আগমনের দিক দিয়ে আমরা সকলের পেছনে। কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আমরা সকলের আগে থাকব। সকলের আগে আমাদের হিসাব নেয়ার ও জান্নাতে প্রবেশ করার হুকুম দেয়া হবে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৮৫৬, ইবনি মাজাহ ১০৮৩। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এ দিনে আদাম [আঃ]-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে [দুনিয়ায় পাঠিয়ে] দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামাতও এ জুমার দিনেই ক্বায়িম হবে। [ {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৮৫৪, আত তিরমিজি ৪৮৮, আহমাদ ৯৪০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০৪, সহীহ আত তারগীব ৬৯৫, সহীহ আল জামি ৩৩৩৩। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন: জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রহিয়াছে, সে মুহূর্তটি যদি কোন মুমিন বান্দা পায় আর আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তাআলা তাকে তা দান করেন। মুসলিম; অন্য এক বর্ণনায় ঈমাম মুসলিম এ শব্দগুলোও নকল করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন: সে সময়টা খুবই ক্ষণিক হয়। বোখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: নিঃসন্দেহে জুমার দিনে এমন একটি ক্ষণ আসে যে ক্ষণে যদি কোন মুমিন বান্দা সলাতের জন্য দাঁড়াতে পারে এবং আল্লাহর নিকট কল্যাণের জন্য দুআ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সে কল্যাণ দান করেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫২৯৪, মুসলিম ৮৫২, আত তিরমিজি ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৩, মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক্ব ৫৫৭২, আহমাদ ৭১৫১, ৯৮৯২, ইবনি খুযায়মাহ্ ১৭৩৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৮, শুআবুল ঈমান ২৭১১, সহীহ আত তারগীব ৭০০, সহীহ আল জামে ২১২০। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫৮. আবু বুরদাহ্ ইবনি আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জুমার দিনের দুআ কবুলের সময় সম্পর্কে বলিতে শুনেছেন: সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের উপর বসার পর সলাত পড়বার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। \ {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৮৫৩, আবু দাউদ ১০৪৯, ইবনি খুযায়মাহ্ ১৭৩৯, দাওয়াতুল কাবীর ৫২৩, সুনানুল বায়হাক্বী ৫৯৯৯, শুআবুল ঈমান ২৭২৯, রিয়াযুস সালিহীন ১১৬৪, তবে শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] হাদসিটিকে শায বলে এটি আবু মূসা [রা]-এর পর্যন্ত মাওকূফ হওয়াকে সহীহ বলেছেন। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৪২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৩৫৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি তূর [বর্তমান ফিলিস্তীনের সিনাই] পর্বতের দিকে গেলাম। সেখানে কাব আহবার-এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। আমি তার কাছে বসে গেলাম। তিনি আমাকে তাওরাতের কিছু কথা বলিতে লাগলেন। আমি তার সামনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কিছু হাদিস বর্ণনা করলাম। আমি যেসব হাদিস বর্ণনা করলাম তার একটি হলো, আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। জুমার দিনে আদামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাঁকে জান্নাত থেকে জমিনে বের করা হয়েছে। এ দিনেই তাহাঁর তাওবাহ কবুল করা হয়। এ দিনেই তাহাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই ক্বিয়ামাত হবে। আর জিন্ ইনসান ছাড়া এমন কোন চতুস্পদ জন্তু নেই যারা এ জুমার দিনে সূর্য উদয় হইতে অস্ত পর্যন্ত কিয়ামাত হবার মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা না করে। জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে সময় যদি কোন মুসলিম সলাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট কিছু চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন। কাব আহবার এ কথা শুনে বললেন, এ রকম দিন বা সময় বছরে একবার আসে। আমি বললাম, বরং প্রতিটি জুমার দিনে আসে।
তখন কাব তাওরাত পাঠ করিতে লাগলেন, এরপর বললেন, “রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সত্য বলেছেন।” আবু হুরায়রাহ [রাদি.] বলেন, এরপর আমি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর কাব-এর কাছে আমি যে হাদিসের উল্লেখ করেছি তা তাকেও বললাম। এরপর আমি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] কে এ কথাও বললাম যে, কাব বলছেন, এ দিন বছরে একবারই আসে। আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বললেন, “কাব ভুল কথা বলেছে।” তারপর আমি বললাম, কিন্তু কাব এরপর তাওরাত পড়ে বলেছে যে, এ সময়টা প্রত্যেক জুমার দিনই আসে। ইবনি সালাম [রাদি.] বললেন, কাব এ কথা ঠিক বলেছে। এরপর বলিতে লাগলেন, আমি জানি সে কোন সময়? আবু হুরায়রাহ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, পুনরায় আমাকে বলুন। গোপন করিবেন না। তখন আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বললেন, সেটা জুমার দিনের শেষ প্রহর কি করে হয়, যেখানে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে মুমিন বান্দা এ ক্ষণটি পাবে ও সে এ সময়ে সলাত আদায় করে থাকে…..? [আর আপনি বলছেন সে সময়টি জুমার দিনের শেষ প্রহর। সে সময় তো সলাত আদায় করা হয় না। সেটা মাকরূহ সময়]। আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বলেন, [এটা তো সত্য কথা কিন্তু] এটা কি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কথা নয় যে, যে ব্যক্তি সলাতের অপেক্ষায় নিজের স্থানে বসে থাকে সে সলাত অবস্থায়ই আছে, আবার সলাত পড়া পর্যন্ত। আবু হুরায়রাহ বলেন, আমি এ কথা শুনে বললাম, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথা বলেছেন। আবদুল্লাহ বলেন, তাহলে সলাত অর্থ হলো, সলাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর দিনের শেষাংশে সলাতের জন্য বসে থাকা নিষেধ নয়। সে সময় যদি কেউ দুআ করে, তা কবুল হবে। [মালিক, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী ঈমাম আহমদও এ বর্ণনাটি {আরবি] পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন]{১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১০৪৬, আত তিরমিজি ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৪, আহমাদ ১০৩০৩, ইবনি হিব্বান ২৭৭২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০২, শুআবুল ঈমান ২৭১৪। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৬০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমার দিন দুআ কবুল হবার সময়টির আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন আস্রের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় খোঁজে। {১}
{১} হাসান লিগায়রিহী : আত তিরমিজি ৪৮৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৮৩, সহীহ আত তারগীব ৭০১, সহীহ আল জামি ১২৩৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি
১৩৬১. আওস ইবনি আওস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: জুমার দিন হলো তোমাদের সর্বোত্তম দিন। এ দিনে আদামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাহাঁর রূহ কবয করা হয়েছে। এ দিনে প্রথম শিঙ্গা ফুৎকার হবে। এ দিন দ্বিতীয় শিঙ্গা ফুৎকার দেয়া হবে। কাজেই এ দিন তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করিবে। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হবে। সহাবীগণ আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে? অথচ আপনার হাড়গুলো পচে গলে যাবে? বর্ণনাকারী বলেন, এ. [আরাম্তা] শব্দ দ্বারা সহাবীগণ {আরবি] [বালীতা] অর্থ বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আপনার পবিত্র দেহ পঁচে গলে মাটিতে মিশে যাবে। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আল্লাহ তাআলা নবী-রসূলদের শরীর মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন [অর্থাৎ মাটি তাদের দেহ নষ্ট করিতে পারবে না]। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১০৪৭, নাসায়ী ১৩৭৪, ইবনি মাজাহ ১০৮৫, ১৬৩৬, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৮৬৯৭, আহমাদ ১৬১৬২, দারিমী ১৬১৩, ইবনি খুযায়মাহ্ ১৭৩৩, ইবনি হিব্বান ৯১০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০২৯, দাওয়াতুল কাবীর ৫২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৩, ইরওয়া ৪, সহীহ আত তারগীব ৬৯৬, ১৬৭৪, সহীহ আল জামি ২২১২। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৬২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন: [কুরআনে বর্ণিত] “ইয়াওমুল মাওউদ” হলো ক্বিয়ামাতের দিন। ইয়াওমুল মাশ্হূদ হলো আরাফাতের দিন। আর শাহিদ হলো জুমার দিন। যেসব দিনে সূর্য উদয় ও অস্ত যায় তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো “জুমার দিন”। এ দিনে এমন একটি সময় আছে সে সময়টুকু যদি কোন মুমিন বান্দা পেয়ে যায়, আর ওই সময়ে সে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সে কল্যাণ প্রদান করিবেন। যে জিনিস থেকে সে আশ্রয় চাইবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবেন। {আহমাদ, তিরমিজি; তিনি [তিরমিজি] বলেন, এ হাদিসটি গরীব। কারণ মূসা ইবনি উবায়দার সূত্র ছাড়া এ হাদিস জানা যায় না। আর মূসা মুহাদ্দিসীনের কাছে দুর্বল রাবী। {১}
{১} হাসান : আত তিরমিজি ৩৩৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৬৪, সহীহ আল জামি ৮২০১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৩৬৩. লুবাবাহ্ ইবনি আবদুল মুনযির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, “জুমার দিন” সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহ্র কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রহিয়াছে। [১] আল্লাহ তাআলা এ দিনে আদামকে সৃষ্টি করিয়াছেন। [২] এ দিনে তিনি আদামকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। [৩] এ দিনেই আদাম মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। [৪] এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। [৫] এ দিনেই ক্বিয়ামাত হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক [ফেরেশ্তা], আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমার দিনকে ভয় করে। {১}
{১} হাসান : আত তিরমিজি ১০৮৪, ইবনি শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি ২২৭৯। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
অধ্যায়ঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৩৬৪. ঈমাম আহমাদ সাদ ইবনি উবাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আনসারদের এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বললেন, আমাকে জুমার দিন সম্পর্কে বলুন। এতে কি আছে? তিনি [সাঃআঃ] বলেন, এতে পাঁচটি বৈশিষ্ট রহিয়াছে। [বাকী হাদিস বর্ণনা পূর্ববৎ] {১}
{১} জইফ : আহমাদ ২২৪৫৭, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৩৭২৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৩৬৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করা হলো: “জুমার দিন” জুমুআহ নাম কি কারণে রাখা হলো? তিনি বললেন, যেহেতু এ দিনে [১] তোমাদের পিতা আদামের মাটি একত্র করে খামির করা হয়েছে। [২] এ দিনে প্রথম শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। [৩] এ দিনে দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে। [৪] এ দিনেই কঠিন পাকড়াও হবে। তাছাড়া [৫] এ দিনের শেষ তিন প্রহরে এমন একটি সময় আছে যে কেউ আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করলে তা কবুল করা হয়। {১}
{১} জইফ : আহমাদ ৮১০২, জইফ আত তারগীব ৪৩০। কারণ এর সানাদে ফারাজ ইবনি ফুযালাহ্ দুর্বল রাবী এবং আলী ইবনি আবী ত্বলহাহ্ আবু হুরাইরাহ [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করেননি। ফলে হাদিসটি মুনক্বতিও বটে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৩৬৬. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমরা জুমার দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ [ফেরেশ্তাগণ] হাজির হয়ে থাকেন। যে ব্যক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হইতে থাকে, যে পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি [সাঃআঃ] বললেন: আল্লাহ তাআলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা ক্ববরে জীবিত এবং তাদেরকে রিয্ক্ব দেয়া হয়। [{১}
{১} হাসান লিগায়রিহী : ইবনি মাজাহ ১৬৩৭, সহীহ আত তারগীব ১৬৭২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি
১৩৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমার দিন অথবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ববরের শাস্তি থেকে রক্ষা করিবেন।১
{১} হাসান লিগায়রিহী : আত তিরমিজি ১০৭৪, আহমাদ ৬৫৮২, সহীহ আত তারগীব ৩৫৬২। তবে আহমাদের সানাদটি দুর্বল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি
১৩৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন, আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন-বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার সকল নিআমাত পূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছি- [সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৩]। এমতাবস্থায় তাহাঁর কাছে এক ইয়াহূদী বসা ছিল। সে ইবনি আব্বাসকে বলিল, যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হত তাহলে আমরা এ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে খুশীর উদযাপন করতাম। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বললেন, এ আয়াতটি দুঈদের দিন, বিদায় হাজ্জ [হজ/হজ্জ] ও আরাফার জুমার দিন নাযিল হয়েছে। {১}
{১} সহীহুল ইসনাদ : আত তিরমিজি ৩০৪৪। জুমার সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৩৬৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ রজব মাস আসলে এ দুআ পড়তেন, হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসের [ইবাদাতে] আমাদেরকে বারাকাত দান করো। আর আমাদেরকে রমাযান মাস পর্যন্ত পৌঁছাও। বর্ণনাকারী আনাস [রাদি.] আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিতেন, জুমার রাত আলোকিত রাত। জুমার দিন আলোকিত দিন। ]{১}
{১} জইফ : দাওয়াতুল কাবীর ৫২৯, শুআবুল ঈমান ৩৫৩৪। কারণ এর সানাদের বর্ণনাকারী যিয়াদ আন্ নুমায়রী সম্পর্কে ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, সে মুনকারুল হাদিস।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply