জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম । মুয়াত্তা মালিক
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম । মুয়াত্তা মালিক, এই অধ্যায়ে হাদীস =২১ টি ( ২২০-২৪০ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৫ জুম’আ
- পরিচ্ছেদঃ ১ – জুমআ দিবসের গোসল
- পরিচ্ছেদঃ ২ – জুমআ দিবসে ইমামের খুতবা পাঠ করার সময় চুপ থাকার বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে
- পরিচ্ছেদঃ ৩ – যে ব্যক্তি জুমআর দিনে এক রাকআত পায় তার কি করা কর্তব্য
- পরিচ্ছেদঃ ৪ – জুমআর দিনে যার নকসীর হয় তার সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
- পরিচ্ছেদঃ ৫ – জুমআর দিন সাঈ বা চেষ্টা করা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
- পরিচ্ছেদঃ ৬ – জুমআর দিন প্রবাসে ঈমাম কোন গ্রামে পদার্পণ করলে
- পরিচ্ছেদঃ ৭ – জুমআ দিবসের [দুআ কবুলিয়াতের] মুহূর্তটির বর্ণনা
- পরিচ্ছেদঃ ৮ – জুমআর দিনের পোশাক-পরিচ্ছেদঃ, ঘাড়ের উপর দিয়ে যাতায়াত করা, ইমামের দিকে মুখ করে বসা সম্পর্কীয় আহকাম
- পরিচ্ছেদঃ ৯ – জুমআর নামাযে কিরাআত, হাঁটু উঠিয়ে পাছার উপর বসা এবং কোন প্রকার ওযর ব্যতীত জুমআ আদায় না করা সম্পকীয় আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ১ – জুমআ দিবসের গোসল
২১৯ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন জানাবতের [ফরয] গোসলের মত গোসল করেছে, অতঃপর সূর্য ঢলার পর প্রথম মুহূর্তে [মসজিদের দিকে] চলেছে, সে যেন একটি উট আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে খয়রাত করেছে; আর যে দ্বিতীয় মুহূর্তে একটু পরে চলেছে, সে যেন একটি গাভী খয়রাত করেছে; আর যে তৃতীয় মুহূর্তে আরও পরে চলেছে, সে যেন শিংযুক্ত মেষ খয়রাত করেছে; আর যে চতুর্থ মুহুর্তে অর্থাৎ আরও পরে চলেছে, সে যেন একটি মুরগী খয়রাত করেছে; আর যে পঞ্চম মুহূর্তে চলিয়াছে, সে যেন ডিম খয়রাত করিয়াছে। যখন ঈমাম বের হন তখন ফেরেশতাগণ হাজির হন, যিকর [খুতবা] শোনার জন্য।
[বুখারি ৮৮১, মুসলিম ৮৫০] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা [রাদি.] বলিতেন, জুমআর দিনের গোসল জানাবত [ফরয] গোসলের মত, প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২২১ সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাহাবীগণের একজন [সাহাবী] জুমআর দিন মসজিদে প্রবেশ করলেন, উমার [রা:] খুতবা প্রদান করছিলেন। তিনি {উমার [রাদি.]} বলিলেন, এটা কোন সময়? উত্তরে তিনি [প্রবেশকারী সাহাবী] বলিলেন, হে আমিরুল মুমিনীন, আমি বাজার হইতে ফিরেছি, [ফেরার পূর্বেই] আযান শুনলাম। অতঃপর কেবল ওযূ করেছি। [এটা শুনে] উমার [রাদি.] বলিলেন, আপনি শুধু ওযূ করেন? অথচ অবগত আছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ গোসলের হুকুম করিতেন!
[বুখারি ৮৭৮, মুসলিম ৮৪৫] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২২ আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, জুমআর দিনের গোসল প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব।
[বুখারি ৮৭৯, মুসলিম ৮৪৬] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২৩ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের কেউ জুমআর নামাযে আসতে ইচ্ছা করলে সে অবশ্য গোসল করিবে। [বুখারি ৮৭৭, মুসলিম ৮৪৪]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, জুমআর দিন যে ব্যক্তি দিনের প্রারম্ভে গোসল করেছে, সে ঐ গোসলে জুমআর গোসলের নিয়ত করেছে, তাঁর জন্য সেই গোসল জুমআর জন্য যথেষ্ট হইবে না যদি না সে জুমআয় যাওয়ার জন্য পুনরায় গোসল করে; কারণ ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের কেউ জুমআয় আসার ইচ্ছা করলে সে অবশ্যই গোসল করিবে।
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ২ – জুমআ দিবসে ইমামের খুতবা পাঠ করার সময় চুপ থাকার বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে
২২৪ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন জুমআর দিন ঈমাম যখন খুতবা প্রদান করেন, তুমি তোমার সাথীকে [পার্শ্ববর্তী লোক] যদি বল, চুপ থাকুন! তবে তুমি অলাভজনক কথা বললে।
[বুখারি ৯৩৪, মুসলিম ৮৫১] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২৫ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি [সালাবা] তাঁর নিকট বর্ণনা করেন যে, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর খিলাফতকালে জুমআর দিন তাঁরা উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] আগমন করা পর্যন্ত নামায আদায় করিতেন। উমার [রাদি.] আগমন করিতেন এবং মিম্বরে বসতেন এবং মুয়াযযিনগণ আযান দিতেন। সালাবা [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমরা তখনও পরস্পর কথাবার্তা বলতাম, মুয়াযযিনগণ যখন আযান শেষ করিতেন এবং উমার [রাদি.] খুতবা পাঠ করার জন্য দাঁড়াতেন, তখন আমরা চুপ হয়ে যেতাম। অতঃপর পরে কেউ কোন কথা বলত না। ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, [এতে বোঝা গেল] ইমামের আগমন নামাযকে নিষিদ্ধ করে দেয় এবং তাঁর কালাম [খুতবা] কথাবার্তাকে নিষিদ্ধ করে দেয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২২৬ মালিক ইবনি আবি আমীর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] তাঁর খুতবায় বলিতেন এবং তিনি যখনই খুতবা দিতেন, তখন প্রায় এটা বলিতেন, জুমআর দিন ঈমাম খুতবার উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়ান, তখন তোমরা মনোযোগী হয়ে শুনবে এবং নীরব থাকিবে। কেননা খুতবা শুনতে না পেয়েও যিনি নীরব রয়েছেন তাঁর জন্য সওয়াব হইবে শুনতে পেয়ে নীরবতা অবলম্বনকারীর সমান। অতঃপর যখন নামাযের ইকামত বলা হয়, কাতার বরাবর করে নাও এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। কেননা কাতার বরাবর করা নামাযের পূর্ণতার অংশবিশেষ। তারপর যতক্ষণ কাতার সোজা করার জন্য নিযুক্ত লোকজন এসে সফ সোজা হয়েছে বলে সংবাদ না দিতেন, ততক্ষণ তিনি [নামাযের] তাকবীর বলিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২২৭ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] দুই ব্যক্তিকে আলাপরত দেখলেন, তখন জুমআর দিন এবং ঈমাম খুতবা প্রদান করিতেছিলেন। এটা দেখে তিনি দুজনের দিকে কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, এই মর্মে তোমরা চুপ হয়ে যাও। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২২৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]- হইতে বর্ণিতঃ
একবার] জুমআর দিন এক ব্যক্তি হাঁচি দিয়েছে, তখন ঈমাম খুতবা পড়ছিলেন, তাঁর পাশ্ববর্তী এক ব্যক্তি হাঁচির উত্তরে ইয়ারহামুকুল্লাহ বলল, তখন সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর তাকে নিষেধ করলেন এবং ভবিষ্যতে এইরূপ না করার জন্য বলে দিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, জুমআর দিন [তাকবীর বলার পূর্বে] যখন ঈমাম মিম্বর হইতে অবতরণ করেন, তখন কথা বলা সম্পর্কে তিনি ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করলেন, [উত্তরে] ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, এতে কোন দোষ নেই। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩ – যে ব্যক্তি জুমআর দিনে এক রাকআত পায় তার কি করা কর্তব্য
২২৯মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, যে ব্যক্তি জুমআর নামায এক রাকআত পেল, সে উক্ত রাকআতের সাথে আর এক রাকআত মিলিয়ে নিবে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এইরূপ করাই সুন্নত। [হাদীসটি ঈমাম মালিক
[রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে ======= অংশ ঈমাম বুখারি বর্ণনা করিয়াছেন ৫৮০, মুসলিম ৬০৭]
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন আমি আমাদের শহরের [অর্থাৎ মদীনা মুনাওয়ারাহ্] উলামাদের অভিমতও অনুরূপ পেয়েছি; তা এই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পেয়েছে, সে [পূর্ণ] নামায পেয়েছে।
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন অত্যাধিক ভিড়ের সম্মুখীন হয় এবং রুকূ করে, অতঃপর ঈমাম [সিজদা হইতে] দাঁড়ানোর পর অথবা নামায সমাপ্ত করার পর সিজদা করিতে সক্ষম হয়, তার হুকুম হল সে যদি সিজদা করিতে সক্ষম হয় তবে সিজদা করার পর মুসল্লিগণ দাঁড়িয়ে গেলে তখন সে সিজদা করিবে, আর যদি ঈমাম কর্তৃক নামায শেষ করার পূর্বে সে সিজদা করিতে না পারে, তবে আমার মতে যোহরের চার রাকআত আরম্ভ করাই তার পক্ষে শ্রেয়।
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৪ – জুমআর দিনে যার নকসীর হয় তার সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
২৩০ ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
জুমআর দিন ইমামের খুতবা প্রদানের সময় যার নকসীর {১} হয়েছে, তারপর সে [মসজিদ হইতে] বের হয়ে গিয়েছে এবং সে ফিরে এসেছে এমন সময় যখন ঈমাম নামায সমাপ্ত করেন, তবে সে চার রাকআত আদায় করিবে।
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন ইমামের সাথে এক রাকআত আদায় করে, তারপর তার নকসীর হয়, [সে কারণে] সে বের হয়ে যায়, অতঃপর ঈমাম কর্তৃক দু রাকআত সমাপ্ত করার পর সে ফিরে আসে তবে সে ব্যক্তি আর এক রাকআত আদায় করে নেবে, যদি কোন কথা না বলে থাকে।
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যার নকসীর হয়েছে অথবা মসজিদ হইতে বের হওয়ার জন্য কোন কারণ উপস্থিত হয়েছে, তবে তাকে বের হওয়ার জন্য ইমামের অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে না।
{১} গরমের প্রকোপ বা অন্য কোন কারণে নাক দিয়ে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাকে নকসীর বলা হয়। জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৫ – জুমআর দিন সাঈ বা চেষ্টা করা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
২৩১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে আল্লাহ তাআলার এই বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন,
يَايَهُّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اِذَا نُو دِىَ لِلصَّلوٰةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ قَاسْعَوْ اِلَى ذِكْرِ الله .
হে মুমিনগণ। জুমআর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। [৬২/৯]
জবাবে ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] উক্ত আয়াতকে এইরূপ পড়তেন,
إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَامْضُوا إِلَى ذِكْرِ اللهِ.
যখন জুমআর নামাযের আযান দেওয়া হয় তখন খুতবা ও নামাযের জন্য গমন কর। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন তবে সনদে উল্লেখিত রাবী ইবনি শিহাব ইবনি ওমরের সাথে সাক্ষাত হয়নি]
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, কিতাবুল্লাহইতে উল্লিখিত সাঈ-এর অর্থ হল আমল ও কাজ [দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি উল্লেখ করিয়াছেন যেমন] আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন {১} , وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ আরও ইরশাদ করা হয়েছে {২} , وَأَمَّا مَنْ جَاءَكَ يَسْعَى وَهُوَ يَخْشَى আরও ইরশাদ করেন,
ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعَى – {৩} ইরশাদ করা হয়েছে {৪} , إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে যে সাঈ -এর কথা উল্লেখ করেন তা দ্বারা পায়ে দৌড়ান, দ্রুত গমন অথবা হাঁটা উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হচ্ছে কাজ ও বাস্তবায়ন।
{১} যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত্রে ও জীব-জন্তুর বংশ নিপাতের চেষ্টা করে। [সূরা: আর-বাকারা ২০৫]
{২} অন্যপক্ষে যে তোমার কাছে ছুটে আসে, আর সে সশংকচিত্ত। [সূরা: আবাসা, ৮, ৯]
{৩} অতঃপর সে পশ্চাত ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। [সূরা: নাযিআত, ২২]
{৪} অবশ্যই তোমাদের কর্ম-প্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকৃতির। [সূরা: লাইল, ৪]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৬ – জুমআর দিন প্রবাসে ঈমাম কোন গ্রামে পদার্পণ করলে
২৩২ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
ঈমাম যদি সফরে এমন কোন লোকালয়ে অবতরণ করেন, যে লোকালয়ের নিবাসীদের উপর জুমআ ওয়াজিব হয়, তারপর তিনি সেখানে খুতবা প্রদান করেন এবং লোকালয়ের লোকজনকে নিয়ে জুমআ আদায় করেন, তবে সে জনপদের এবং তাদের বাহিরের লোকজন সে ইমামের সাথে জুমআ আদায় করিবে।
ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যদি মুসাফির ঈমাম এইরূপ জনপদে জুমআ কায়েম করেন, যে জনপদে জুমআ ওয়াজিব নয়, তবে সে ঈমাম, উক্ত জনপদের বাসিন্দাগণ এবং তাদের বাহিরের লোকজন যাদের সাথে তিনি জুমআ আদায় করিয়াছেন, করো জুমআ আদায় হইবে না। সে লোকালয়ের লোকজন এবং অন্যান্যের [মুসল্লিদের] মধ্যে যারা মুসাফির নন তাঁরা তাঁদের নামায পুরা আদায় করিবেন।
ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, মুসাফিরের উপর জুমুআ ওয়াজিব নয়।
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৭ – জুমআ দিবসের [দুআ কবুলিয়াতের] মুহূর্তটির বর্ণনা
২৩৩ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ জুমআ দিবসের উল্লেখ করলেন, [সে প্রসঙ্গে] তিনি বলেছেন, এই দিবসে এমন এক মুহূর্ত রয়েছে কোন মুসলিম বান্দা নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায়, সে মুহূর্তটির সদ্ব্যবহার করলে তখন যদি সে আল্লাহ তাআলা হইতে কোন বস্তুর সওয়াল করে, তবে আল্লাহ তাকে সে বস্তু প্রদান করিবেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন সে সময়টির স্বল্পতা বুঝাবার জন্য।
[বুখারি ৯৩৫, মুসলিম ৮৫২] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩৪ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি [সিনাই] পর্বতের দিকে গমন করলাম, সেখানে কাব আহবার [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সাথে দেখা করলাম এবং তার সাথে বসলাম। তারপর তিনি তাওরাত হইতে আমার কাছে বর্ণনা করলেন, আমি তাহাকে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর হাদীস বর্ণনা করলাম। আমি তাঁর কাছে যা বর্ণনা করলাম তাতে এটাও ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, দিবসগুলোর [মধ্যে যাতে সূর্যের উদয় হয়] জুমআর দিনই সর্বোত্তম। সেদিনই আদম [আ]-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেদিনই তাহাকে [বেহেশত হইতে] বের করা হয়েছে, সে দিবসেই তাঁর প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে, সে দিবসেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং সে [জুমআর] দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হইবে। এমন কোন প্রাণী নাই, যে প্রাণী জুমআর দিন ভোরবেলা হইতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে চিৎকার না করে। সে দিবসে একটি মুহূর্ত রয়েছে কোন মুসলিম বান্দা সে মুহূর্তটিতে নামায পড়া অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন বস্তুর প্রার্থনা করলে অবশ্যই তিনি তাকে উহা প্রদান করিবেন। কাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, এটা প্রতি বৎসরে একদিন। তখন আমি বললাম বরং প্রতি জুমআয়। অতঃপর কাব [রাহিমাহুল্লাহ] তাওরাত পাঠ করলেন এবং বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ঠিক বলেছেন। আবু হুরায়রা [রাদি.] বলিলেন, আমি অতঃপর বসরায় ইবনি আবি বাসরা গিফারীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বলেছেন, কোথা হইতে আগমন করলে? [উত্তরে] আমি বললাম তূর হইতে। তারপর তিনি বলিলেন, সেখানে যাওয়ার পূর্বে যদি আমি তোমাকে পেতাম, তবে তোমার যাওয়াই হত না। আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি তিনটি মসজিদ ব্যতীত [অন্য কোন স্থানের জন্য] সওয়ারীর আয়োজন করা যায় না [১] মসজিদুল হারাম, কাবাগৃহ, [২] আমার এই মসজিদ ও [৩] মসজিদ ইলিয়া বা বায়তুল মুকাদ্দাস। বর্ণনাকারী সংশয় প্রকাশ করেন [অর্থাৎ তৃতীয়টি] তিনি ইলিয়ার মসজিদ অথবা বায়তুল মুকাদ্দাস বলেছেন [ইলিয়া শহরেই বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত]। আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেছেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সাথে মিলিত হলাম এবং কাব আহবার [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সাথে আমার বৈঠকের কথা বর্ণনা করলাম, আর জুমআর দিন সম্পর্কে যে হাদীস তাঁর কাছে বর্ণনা করেছি তাও বললাম। [কথা প্রসঙ্গে] আমি বললাম, কাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এটা [কবুলিয়াতের মুহূর্ত] বৎসরে একদিন। [এটা শুনে] আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বলিলেন, কাব [রাহিমাহুল্লাহ] ঠিক বলেন নি। অতঃপর আমি বললাম কাব [রাহিমাহুল্লাহ] তাওরাত পাঠ করে বলিলেন, “হ্যাঁ, উহা প্রতি জুমআর দিন।” আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বলিলেন, কাব [এইবার] সত্য বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] জিজ্ঞেস করলেন সে মুহূর্তটি কোন মুহূর্ত তুমি জান কি? আবু হুরায়রা [রাদি.] বলিলেন, আমি তাহাকে বললাম আপনি আমাকে সে মুহূর্তটির কথা বলে দিন। এই বিষয়ে আপনি কৃপণতা করিবেন না। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বলিলেন, এটা জুমআর দিনের শেষ সময়। আবু হুরায়রা [রাদি.] বলিলেন, আমি বললাম, উহা জুমআ দিবসের শেষ মুহূর্তে কিভাবে হইতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, “নামাযের হালতে কোন মুসলিম বান্দা উক্ত মুহূর্তের সাক্ষাৎ লাভ করলে…।” অথচ দিবসের শেষ মুহূর্তে নামায পড়া যায় না। তারপর আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ কি বলেন নি, যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসে নামাযের অপেক্ষা করিবে সে যেমন নামাযেই রয়েছে, যতক্ষণ সে নামায সমাপ্ত না করে? আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তবে এটা তাই।
[সহীহ, আবু দাঊদ ১০৪৬, তিরমিজি ৪৯১, নাসাঈ ১৪৩০, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাত ১৩৫৯] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৮ – জুমআর দিনের পোশাক-পরিচ্ছেদঃ, ঘাড়ের উপর দিয়ে যাতায়াত করা, ইমামের দিকে মুখ করে বসা সম্পর্কীয় আহকাম
২৩৫ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের কেউ তার নিত্যব্যবহার্য কাপড় ব্যতীত জুমআর জন্য দুটি কাপড় তৈরীর করে রাখলে এতে কোন দোষ নাই। [সহীহ, আবু দাঊদ ১০৭৮, ইবনি মাজাহ ১০৯৫, হাদীসটি আল্লামা আল বানী সহীহ বলেছেন, “সহীহ আল জামে” ৫৬৩৫, তার ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; ইহরাম অবস্থায় না থাকলে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তেল ও খুশবু না লাগিয়ে জুমআয় যেতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৩৬ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক রাবী হইতে বর্ণনা করেন তিনি [আবু হুরায়রা] বলিতেন, তোমাদের কারো যাহরুল হাররা {১} তে নামায আদায় করা এটা হইতে ভাল যে, সে বসে থাকিবে অর্থাৎ সময় থাকতে নামাযের জন্য মসজিদে যাবে না। অতঃপর ঈমাম যখন জুমআর দিন খুতবা দিতে দাঁড়াবেন তখন [তাড়াহুড়া করে যাওয়ার সময়] সে মানুষের ঘাড়ে পা রেখে যাবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, ঈমাম যে সময় খুতবা পাঠ করিতে ইচ্ছা করেন সে সময় লোকজনের ইমামের দিকে মুখ করে বসাটাই আমাদের নিকট সুন্নত, তাদের মধ্যে যারা কিবলার দিকে মুখ করে আছে অথবা যারা কিবলার দিকে মুখ করে বসেনি, সকলেই ইমামের দিকে মুখ করিবে। {২}
{১} কাল পাথরবিশিষ্ট মদীনার বাহিরে একটি নির্দিষ্ট স্থান।{২} যাঁরা ইমামের সামনে অবস্থান করিতেছেন, তাঁদের মুখ তো ইমামের দিকে আছেই। অবশ্য যাঁরা ইমামের ডানে বা বামে আছেন তাঁরা ইমামের দিকে মুখ করে ঘুরে বসবেন। ভিড়ের কারণে পরে কাতার ঠিক করিতে অসুবিধা হয় বিধায় বর্তমানে এই তরীকার উপর আমল করা হয় না; ফলে সকল মুসল্লিই কিবলামুখী বসে খুতবা শুনেন।জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৯ – জুমআর নামাযে কিরাআত, হাঁটু উঠিয়ে পাছার উপর বসা এবং কোন প্রকার ওযর ব্যতীত জুমআ আদায় না করা সম্পকীয় আহকাম
২৩৭ যাহহাক ইবনি কায়স [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
নুমান ইবনি বশীর [রাদি.]-এর নিকট প্রশ্ন করিয়াছেন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন জুমআর দিন সূরা জুমআর পর কোন সূরা তিলাওয়াত করিতেন? তিনি বলিলেন, هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ পাঠ করিতেন।
[সহীহ, মুসলিম ৮৭৭] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সাফওয়ান [রাহিমাহুল্লাহ] ইহা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ হইতে বর্ণনা করেন কিনা তা আমার জানা নাই। সাফওয়ান [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, কোন প্রকার ওযর অথবা রোগ ছাড়া যে ব্যক্তি তিন দফা জুমআ আদায় করেনি, আল্লাহ তার হৃদয়ে মোহর ছাপ মেরে দিবেন।
[সহীহ, আবু দাঊদ ১০৫২, তিরমিজি ৫০০, নাসাঈ ১৩৬৯, ইবনি মাজাহ ১১২৫, আহমাদ ১৪৫৯৯, আবু জায়াদ যমরী থেকে আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল জামে ৬১৪৩] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৩৯ জাফর ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ জুমআর দিন দুই খুতবা প্রদান করেন এবং দুই খুতবার মাঝখানে বসেছেন।
[বুখারি, ৯২০, ৯২৮] ঈমাম মুসলিম ইবনি ওমর [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন ৮৬১, তবে ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
Leave a Reply