জিহাদ ওয়াজিব এবং শহীদদের প্রকারভেদ
জিহাদ ওয়াজিব এবং শহীদদের প্রকারভেদ >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
জিহাদ ওয়াজিব এবং শহীদদের প্রকারভেদ
পরিচ্ছেদ – ২৩৪: জিহাদ ওয়াজিব এবং তাতে সকাল-সন্ধ্যার মাহাত্ম্য
পরিচ্ছেদ – ২৩৫: (শহীদদের প্রকারভেদ)
পরিচ্ছেদ – ২৩৪: জিহাদ ওয়াজিব এবং তাতে সকাল-সন্ধ্যার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَقَاتِلُوا المُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ مَعَ المُتَّقِينَ ﴾ [ التوبة: ৩৬ ]
অর্থাৎ আর অংশী-বাদীদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ মুত্তাকীগণের সাথে রয়েছেন। [সূরা তাওবাহ ৩৬ আয়াত]
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢١٦ ﴾ [البقرة: ٢١٦]
অর্থাৎ তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল। যদিও এটা তোমাদের কাছে অপছন্দ; কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না সম্ভবত: তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর সম্ভবত: তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। [সূরা বাকারাহ ২১৬ আয়াত]
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ ﴾ [التوبة: ٤١]
“দুর্বল হও অথবা সবল সর্বাবস্থাতেই তোমরা বের হও এবং আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদ কর।” [সূরা তাওবাহ ৪১ আয়াত]
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿۞إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١١١ ﴾ [التوبة: ١١١]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাহাদের প্রাণ ও তাহাদের ধন-সম্পদসমূহকে জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন; তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এ [যুদ্ধে]র দরুন [জান্নাত প্রদানের] সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জিলে এবং কুরআনে; আর নিজের অঙ্গীকার পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর অন্য কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করিতে থাক তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যা তোমরা সম্পাদন করেছ। আর এটা হচ্ছে মহা সাফল্য।” [সূরা তাওবাহ ১১১]
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ ﴾ [النساء : ٩٥]
অর্থাৎ ঈমানদারদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাহাদেরকে যারা ঘরে বসে থাকে তাহাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর যারা ঘরে বসে থাকে তাহাদের উপর যারা জিহাদ করে তাহাদেরকে আল্লাহ মহা পুরস্কার দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন। এ তাহাঁর [আল্লাহর] তরফ হইতে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া। বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা নিসা ৯৫-৯৬ আয়াত]
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١ يَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡ وَيُدۡخِلۡكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٢ وَأُخۡرَىٰ تُحِبُّونَهَاۖ نَصۡرٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَتۡحٞ قَرِيبٞۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٣ ﴾ [الصف: ١٠، ١٣]
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হইতে রক্ষা করিবে? [তা এই যে,] তোমরা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করিবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করিবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তোমাদের পাপ-রাশিকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত এবং [প্রবেশ করাবেন] স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। আর তিনি তোমাদেরকে দান করবেন বাঞ্ছিত আরও একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। আর বিশ্ববাসীদেরকে সুসংবাদ দাও। [সূরা সাফ্ ১০-১৩ আয়াত]
এ মর্মে প্রসিদ্ধ বহু আয়াত রয়েছে। আর জিহাদের ফযীলত সংক্রান্ত হাদিসও রয়েছে অগণিত। তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপ:-
১২৯৩. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা হল, ‘সর্বোত্তম কাজ কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারপর কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল, ‘অতঃপর কি?’ তিনি বললেন, “মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৬, ১৫১৯, মুসলিম ৫৩, তিরমিজী ১৬৫৮, নাসাঈ ২৬২৪, ৩০৩০, আহমাদ ১২৮১ এর সবগুলো, দারেমী ২৩৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১২৯৪. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহর নিকট কোন্ কাজটি সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে নামায আদায় করা।” আমি নিবেদন করলাম, ‘তারপর কোন্টি?’ তিনি বললেন, “মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি আবার নিবেদন করলাম, ‘তারপর কোন্টি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৮, মুসলিম ৮৫, তিরমিজী ১৩৭, ১৮৯৮, নাসাঈ ৬১০, ৬১১, আহমাদ ৩৮৮০, ৩৯৬৩, ৩৯৮৮, ৪১৭৫, ৪২১১, ৪২৩১, ৪২৭৩, ৪৩০১, দারেমী ১২২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১২৯৫. আবু যার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! সর্বোত্তম আমল কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫১৮, মুসলিম ৮৪, নাসাঈ ৩১২৯, ইবনু মাজাহ ২৫২৩, আহমাদ ২৩৮৪৫, ২০৯৩৮, ২০৯৮৯, দারেমী ২৭৩৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
১২৯৬. রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর পথে এক সকাল বা এক সন্ধ্যা অতিক্রান্ত করা, পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৯২, ২৭৯৬, ৬৫৬৮, মুসলিম ১৮৮০, তিরমিজী ১৬৫৯, ইবনু মাজাহ ২৭৫৭, ২৮২৪, আহমাদ ১১৯৪১, ১২০২৮, ১২০৮৩, ১২১৪৬, ১২১৯১, ১২৭৪৯, ১৩৩৬৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১২৯৭. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একটি লোক রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে এই নিবেদন করল যে, ‘সব চাইতে উত্তম ব্যক্তি কে?’ তিনি বললেন, “সেই মুমিন ব্যক্তি, যে নিজ জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে।” সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, “সেই মু’মিন, যে পার্বত্য ঘাঁটির মধ্যে কোন ঘাটিতে আল্লাহর ইবাদতে প্রবৃত্ত থাকে ও জনগণকে নিজের মন্দ থেকে মুক্ত রাখে।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৮৬, ৬৪৯৪, মুসলিম ১৮৮৮, তিরমিজী ১৬৬০, নাসাঈ ৩১০৫, আবু দাঊদ ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৮, আহমাদ ১০৭৪১, ১০৯২৯, ১১১৪১, ১১৪২৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১২৯৮. সাহ্ল ইবনে সা’দ সায়েদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, পৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের স্থান, দুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৯৪, ২৮৯২, ৩২৫০, ৬৪১৫, মুসলিম ১৮৮১, তিরমিজী ১৬৪৮, নাসাঈ ৩১১৮, ইবনু মাজাহ ২৭৫৬, ৪৩৩০, আহমাদ ১৫১৩২, ২২২৯২, ২২৩৩৭, ২২৩৫০, ২২৩৬১, ২২৩৬৫, দারেমী ২৩৯৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১২৯৯. সালমান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “একদিন ও একরাত সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, একমাস ধরে (নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাহলে তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, যা সে পূর্বে করত এবং তার বিশেষ রুযী চালু করে দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিৎনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা হইতে মুক্ত রাখা হবে।”
(মুসলিম ১৯১৩, তিরমিজী ১৬৬৫, নাসাঈ ৩১৬৭, ৩১৬৮, আহমাদ ২৩২১১৫, ২৩২২৩)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০০. ফাযালা ইবনে উবাইদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “প্রতিটি মৃত্যুগামী ব্যক্তির পরলোকগমনের পর তার কর্মধারা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা রত ব্যক্তির নয়। কেননা, তার আমল কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করা হবে এবং সে কবরের পরীক্ষা থেকে নিষ্কৃতি পাবে।”
(আবু দাঊদ ২৫০০, তিরমিজী ১৩২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০১. উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহর পথে একদিন সীমান্তে পাহারা দেওয়া, অন্যত্র হাজার দিন পাহারা দেওয়া অপেক্ষা উত্তম।”
(তিরমিজী ১৬৬৭, নাসাঈ ৩১৬৯, ৩১৭০, আহমাদ ৪৪৪, ৪৭২, ৪৭৯, ৫৫৯, দারেমী ২৪২৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ সে ব্যক্তির (রক্ষণাবেক্ষণের) দায়ভার গ্রহণ করেন, যে ব্যক্তি তাঁর রাস্তায় বের হয়। (আল্লাহ বলেন,) ‘আমার পথে জিহাদ করার স্পৃহা, আমার প্রতি বিশ্বাস, আমার পয়গম্বরদেরকে সত্যজ্ঞানই তাকে (স্বগৃহ থেকে) বের করে। আমি তার এই দায়িত্ব নিই যে, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, না হয় তাকে নেকী বা গনীমতের সম্পদ দিয়ে তার সেই বাড়ির দিকে ফিরিয়ে দেব, যে বাড়ি থেকে সে বের হয়েছিল।’ সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! আল্লাহর পথে দেহে যে কোন যখম পৌঁছে, কিয়ামতের দিনে তা ঠিক এই অবস্থায় আগমন করিবে যে, যেন আজই যখম হয়েছে। (টাটকা যখম ও রক্ত ঝরবে।) তার রং তো রক্তের রং হবে, কিন্তু তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে! যদি মুসলিমদের জন্য কষ্টের আশংকা না করতাম, তাহলে আমি কখনো এমন মুজাহিদ বাহিনীর পিছনে বসে থাকতাম না, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। কিন্তু আমার এ সঙ্গতি নেই যে, আমি তাদের সকলকে বাহন দিই এবং তাদেরও (সকলের জিহাদে বের হওয়ার) সঙ্গতি নেই। আর (আমি চলে গেলে) আমার পিছনে থেকে যাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হবে। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে! আমার আন্তরিক ইচ্ছা যে, আমি আল্লাহর পথে লড়াই করি এবং শহীদ হই। অতঃপর আবার (জীবিত হয়ে) লড়াই করি, পুনরায় শাহাদত বরণ করি। অতঃপর (পুনর্জীবিত হয়ে) যুদ্ধ করি এবং পুনরায় শহীদ হয়ে যাই।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩১২৩, মুসলিম ১৮৭৬, ৩৬২৩৭, ২৭, ৮৭, ২৭৯৭, ২৮০৩, ২৯৭২, ৩১২৩, ৫৫৩৩, ৭২২৬, ৭২২৭, ৭৪৫৭, ৭৪৬৩, তিরমিজী ১৬৫৬, নাসাঈ ৩০৯৮, ৩১২২, ৩১২৪, ৩১৪৭, ৩১৫১, ৩১৫২, ৫০২৯, ৫০৩০, ইবনু মাজাহ ২৭৫৩, ২৭৯৫, আহমাদ ৭১১৭, ৭২৬০, ৭২৯৮, ৮৭৫৭, ৮৮৪৩, ৮৯৪০, ৯১৯২, ৯৭৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ৯৭৪, ৯৯৯-১০০১, ১০২২, দারেমী ২৩৯১, ২৪০৬). হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০৩. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কোন ক্ষত আল্লাহর রাহে পৌঁছে, কিয়ামতের দিনে ক্ষতিগ্রস্ত মুজাহিদ এমন অবস্থায় আগমন করিবে যে, তার ক্ষত হইতে রক্ত ঝরবে। রক্তের রং তো (বাহ্যতঃ) রক্তের মত হবে, কিন্তু তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৫৩৩, ২৩৭, ২৮০৩, মুসলিম ১৮৭৬, তিরমিজী ১৬৫৬, নাসাঈ ৩১৪৭, আহমাদ ৭১১৭, ৭২৬০, ৭২৯৮, ৮৭৫৭, ৮৮৪৩, ৮৯৪০, ৯১৯২, ৯৭৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১০০১, দারেমী ২৪০৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০৪. মু‘আয রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কোন মুসলিম যদি আল্লাহর রাহে এতটুকু সময় যুদ্ধ করে যতটুকু দু’বার উটনী দোহাবার মাঝে হয়, তাহলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর যে মুজাহিদকে আল্লাহর পথে কোনো ক্ষত বা আঁচড় পৌঁছে, আঁচড় কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তা হইতে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী রক্তধারা প্রবাহিত হবে। (দৃশ্যতঃ) তার রং হবে জাফরান, আর তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত।”
(আবু দাঊদ ২৫৪১, তিরমিজী ১৬৫৪, ১৬৫৭, নাসাঈ ৩১৪১, ইবনু মাজাহ ২৭৯২, আহমাদ ২১৫০৯, দারেমী ২৩৯৪ ) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী একটি দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সে পথে ছিল একটি ছোট মিষ্টি পানির ঝর্ণা। সুতরাং তা তাঁকে মুগ্ধ করে তুলল। তিনি বললেন, ‘আমি যদি লোকদের থেকে পৃথক হয়ে এই পাহাড়ি পথে বসবাস করতাম, (তাহলে ভাল হত)! তবে এ কাজ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি ব্যতীত কখনই করব না।’ সুতরাং তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, “এরূপ করো না। কারণ, আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের কোন ব্যক্তির (জিহাদ উপলক্ষে) অবস্থান করা, নিজ ঘরে সত্তর বছর ব্যাপী নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করান? অতএব আল্লাহর রাহে লড়াই কর। (জেনে রেখো,) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে দু’বার উটনী দোহানোর মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ জিহাদ করিবে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে।”
(তিরমিজী ১৬৫০, আহমাদ ১০৪০৭ ) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩০৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করার সমতুল্য আমল কি? তিনি বললেন, “তোমরা তা পারবে না।” তারা তাঁকে দু’-তিনবার ঐ একই কথা জিজ্ঞাসা করতে থাকল, আর তিনি প্রত্যেকবারে বললেন, “তোমরা তার ক্ষমতা রাখ না।” তারপর বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদকারীর দৃষ্টান্ত ঠিক সেই রোজাদার ও আল্লাহর আয়াত পাঠ করে নামায আদায়কারীর মত, যে রোযা রাখতে ও নামায পড়তে আদৌ ক্লান্তিবোধ করে না। (এরূপ ততক্ষণ পর্যন্ত গণ্য হয়) যতক্ষণ না মুজাহিদ জিহাদ থেকে ফিরে আসে।”
) (সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৮৫, মুসলিম ১৮৭৮, তিরমিজী ১৬১৯, নাসাঈ ৩১২৮, আহমাদ ৮৩৩৫, ৯১৯২, ৯৬০৪, ৯৬৭৪, ২৭২০৮ )
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০৭. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধারক ব্যক্তির জীবন, সমস্ত লোকের জীবন চাইতে উত্তম, যে ব্যক্তি যুদ্ধধ্বনি শোনামাত্র ঘোড়ার পিঠে চড়ে উড়ে চলে অথবা কোন শত্রুর ভয় দেখা মাত্র তার পিঠে চড়ে (দ্রুত বেগে) উড়ে যায় এবং শাহাদত অথবা মৃত্যু তার (স্ব স্ব) সম্ভাব্য স্থানে সন্ধান করতে থাকে। কিংবা সেই ব্যক্তির (জীবন সর্বোত্তম) যে তার ছাগলের পাল নিয়ে পর্বতশিখরে বা কোন উপত্যকার মাঝে অবস্থান করে। যথারীতি নামায আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আমরণ স্বীয় প্রভুর উপাসনায় প্রবৃত্ত থাকে। লোকদের মধ্যে এ ব্যক্তি উত্তম অবস্থায় রয়েছে।”
(মুসলিম ১৮৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৭, আহমাদ ৮৮৯৭, ৯৪৩০, ১০৪০০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০৮. ক্ত বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে একশ’টি স্তর আছে, যা আল্লাহর রাহে জিহাদকারীদের জন্য মহান আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন। দুই স্তরের মাঝখানের ব্যবধান আসমান-যমীনের মধ্যবর্তীর দূরত্বসম।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৯০, ৭৪২৩, আহমাদ ৭৮৬৩, ৮২১৪, ৮২৬৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩০৯. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) বলে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পয়গম্বররূপে মেনে নিলো, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল।” আবু সাঈদ (বর্ণনাকারী) অনুরূপ উক্তি শুনে নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! কথাগুলি আবার বলুন।’ তিনি তাই করলেন। তারপর তিনি বললেন, “আরো একটি পুণ্যের সুসংবাদ, যার বিনিময়ে বান্দার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মধ্যে একশ’টি স্তর উঁচু করে দেবেন, প্রতি দুই স্তরের মাঝখানের দূরত্ব হবে, আকাশ-পৃথিবীর মধ্যখানের দূরত্ব সম।” আবু সাঈদ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সেটি কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ।”
(মুসলিম ১৮৮৪, নাসাঈ ৩১৩১, আবু দাঊদ ১৫২৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১০. আবু বাক্র ইবনে আবু মুসা আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতা রাঃআঃ-কে এ কথা বলতে শুনেছি—যখন তিনি শত্রুর সামনে বিদ্যমান ছিলেন—আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিঃসন্দেহে জান্নাতের দ্বারসমূহ তরবারির ছায়াতলে রয়েছে।” এ কথা শুনে রুক্ষ বেশধারী জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে উঠল, ‘হে আবু মুসা! আপনি কি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং বলল, তোমাদেরকে বিদায়ী সালাম জানাচ্ছি।’ অতঃপর সে তার তরবারির খাপটি ভেঙ্গে দিয়ে (নগ্ন) তরবারিটি নিয়ে শত্রুর দিকে অগ্রসর হল এবং শত্রুকে আঘাত করে অবশেষে সে শহীদ হয়ে গেল।
(মুসলিম ১৯০২, তিরমিজী ১৬৫৯, আহমাদ ১৯০৪৪, ১৯১৮১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১১. আবু আব্স আব্দুর রহমান ইবনে জাব্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে বান্দার পদযুগল আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হবে, তাকে জাহান্নাম স্পর্শ করিবে না।”
(বুখারী) (সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮১১, ৯০৭, তিরমিজী ১৬৩২, নাসাঈ ৩১১৬, আহমাদ ১৫৫০৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সেই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; যতক্ষণ না দুধ স্তনে ফিরে না গেছে। (অর্থাৎ, দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।) আর একই বান্দার উপর আল্লাহর পথের ধূলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্র জমা হবে না।”
(তিরমিজী ১৬৩৩, ২৩১১, নাসাঈ ৩১০৭-৩১১৫, ইবনু মাজাহ ২৭৭৫, আহমাদ ১০১৮২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩১৩. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করিবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে।”
(তিরমিজী ১৬৩৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩১৪. যায়দ ইবনে খালেদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যোদ্ধা প্রস্তুত করে দিল, সে আসলে স্বয়ং যুদ্ধ করল। আর যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধার পরিবারের দেখা-শুনা করার জন্য তার প্রতিনিধিত্ব করল, সে আসলে স্বয়ং যুদ্ধ করল।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৪৩, মুসলিম ১৮৯৫, তিরমিজী ১৬২৮, ১৬২৯, ১৬৩১, ৩১৮০, ৩১৮১, আবু দাঊদ ২৫০৯, ইবনু মাজাহ ২৭৫৯, আহমাদ ১৬৫৮২, ১৬৫৯১, ১৬৫৯৬, ১৬৬০৮, ৩১১৬৮, ৩১১৭৩, দারেমী ২৪১৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১৫.আবু উমামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সর্বোত্তম সাদকাহ আল্লাহর রাহে তাঁবুর ছায়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া, (যার দ্বারা মুজাহিদ উপকৃত হয়) । আর আল্লাহর রাস্তায় কোন খাদেম দান করা (যার দ্বারা মুজাহিদ সেবা গ্রহণ করে। কিংবা আল্লাহর পথে (গর্ভধারণের উপযুক্ত হৃষ্টপুষ্ট) উটনী দান করা, (যার দুধ দ্বারা মুজাহিদ উপকৃত হয়) ।”
(তিরমিজী ১৬২৭, আহমাদ ২৭৭৭২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩১৬. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
আসলাম গোত্রের এক যুবক এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি জিহাদ করতে চাচ্ছি; কিন্তু তার জন্য আমার কোন সাজ-সরঞ্জাম নেই।’ তিনি বললেন, “তুমি অমুকের নিকট যাও। কারণ, সে (যুদ্ধের জন্য) সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিল; কিন্তু (ভাগ্যক্রমে) সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।” সুতরাং সে তার কাছে এসে বলল, ‘রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে সালাম পেশ করিয়াছেন এবং বলেছেন যে, তুমি আমাকে ঐসব সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে দাও, যা তুমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলে।’ সে (স্বীয় স্ত্রীকে) বলল, ‘হে অমুক! ওকে ঐ সমস্ত সরঞ্জাম দিয়ে দাও, যেগুলি আমি যুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করেছিলাম। আর ওর মধ্য হইতে কোন কিছু রেখে নিও না (বরং সমস্ত দিয়ে দাও)। আল্লাহর শপথ! তুমি তার মধ্য হইতে কোন জিনিস আটকে রাখলে, তোমার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না।’
(মুসলিম ১৮৯৪, আবু দাঊদ ২৫১০, আহমাদ ১২৭৪৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১৭. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
(একবার) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ লাহইয়ান গোত্রাভিমুখে (যখন তারা অমুসলিম ছিল) একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং বললেন, “যেন প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন লোক (ঐ বাহিনীতে) যোগদান করে, আর সওয়াব দু’জনের মধ্যে সমান হবে। (যদি পিছনে থাকা ব্যক্তি মুজাহিদের পরিবারের যথাযথ ভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।)”
(মুসলিম ১৮৯৬, আবু দাঊদ ২৫১০, আহমাদ ১০৭২৬, ১০৯০৮, ১১০৬৯, ১১১৩৩, ১১৪৫৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১৮. বারা’ ইবনে আযেব হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট লোহার শিরস্ত্রাণ পরা মুখ ঢাকা অবস্থায় এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আগে জিহাদ করব, না ইসলাম গ্রহণ করব?’ তিনি বললেন, “আগে ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর জিহাদ কর।” সুতরাং সে ইসলাম গ্রহণ করে জিহাদে প্রবৃত্ত হল এবং শহীদ হয়ে গেল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “লোকটি কাজ তো অল্প করল; কিন্তু পারিশ্রমিক প্রচুর পেল।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮০৮, মুসলিম ১৯০০, আহমাদ ১৮০৯৩, ১৮৯১৯ ) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩১৯. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কোন ব্যক্তি এমন নেই যে, জান্নাতে যাওয়ার পর এই লোভে জগতে ফিরে আসা পছন্দ করিবে যে, ধরা পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবারই সে মালিক হয়ে যাবে। কিন্তু শহীদ (তা করিবে। কেননা,) সে প্রাপ্ত মর্যাদা ও সম্মান প্রত্যক্ষ করে ইহজগতে ফিরে এসে দশবার শহীদ হইতে কামনা করিবে।”
অন্য বর্ণনানুযায়ী “সে প্রাপ্ত শাহাদাতের ফযীলত দেখে এ বাসনা করিবে।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮১৭, ২৭৯৫, মুসলিম ১৮৭৭, তিরমিজী ১৬৬১, নাসাঈ ৩১৬০, আহমাদ ১১৫৯২, ১১৮৬৪, ১১৯৩৩, ১২১৪৭, ১২৩৬০, ১২৭৫০, ৩১৯৯, ১৩২১৬, ১৩৫১৪, দারেমী ২৪০৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২০. আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনে আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন।”
(মুসলিম ১৮৭৬, আহমাদ ৭০১১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২১. আবু কাতাদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনমন্ডলীর মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ দানকালে বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা ও আল্লাহর পথে ঈমান রাখা সর্বোত্তম কর্ম।” জনৈক ব্যক্তি উঠে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি আল্লাহর রাহে লড়াই করে শাহাদত বরণ করি, তাহলে কি আল্লাহ আমার সমুদয় পাপরাশিকে মিটিয়ে দেবেন?’ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হ্যাঁ, যদি তুমি আল্লাহর পথে নেকীর কামনায় ধৈর্য-সহ্যের সাথে অগ্রসর হয়ে এবং পশ্চাদপসরণ না করে শহীদ হয়ে যাও, (তাহলে আল্লাহ তোমার সমস্ত পাপরাশি মাফ করে দেবেন।)” তারপর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি কি যেন বললে?” সে বলল, ‘আপনি বলুন, যদি আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমার গুনাহ-খাতাসমূহ তার ফলে মিটে যাবে কি?’ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হ্যাঁ, ধৈর্য-সহ্যের সাথে, অগ্রসর হয়ে এবং পশ্চাদপসরণ না করে (যদি তুমি শহীদ হয়ে যাও তাহলে)। কিন্তু ঋণ ছাড়া। যেহেতু জিবরীল (আঃ) এখনই আমাকে এ কথা বললেন।”
(মুসলিম ১৮৮৫, তিরমিজী ১৭১২, নাসাঈ ৩১৫৬-৩১৫৮, আহমাদ ২২০৩৬, ২২০৯৭, ২২১২০, দারেমী ২৪১২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২২. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একটি লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি আমি শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমার স্থান কোথায় হবে?’ তিনি বললেন, “জান্নাতে।” সে (এ কথা শুনে) তার হাতের খেজুরগুলি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হল এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেল।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪০৪৬, মুসলিম ১৮৯৯, নাসাঈ ৩১৫৪, আহমাদ ১৩৯০২, মুওয়াত্তা মালিক ১০১৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৩. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় সহচরবৃন্দের সাথে (বদরাভিমুখে) রওনা দিলেন। পরিশেষে মুশরিকদের পূর্বেই তাঁরা বদর স্থানে পৌঁছে গেলেন। তারপর মুশরিকগণ সেখানে এসে পৌঁছল। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা অবশ্যই কেউ কোন বিষয়ে আগে বেড়ে কিছু করিবে না; যতক্ষণ আমি নির্দেশ না দেব অথবা আমি স্বয়ং তা করব।” সুতরাং যখন মুশরিকরা নিকটবর্তী হল, তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা সেই জান্নাতের দিকে ওঠো, যার প্রস্থ হল আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সমান।” বর্ণনাকারী বলেন, উমাইর ইবনে হুমাম আনসারী রাঃআঃ নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতের প্রস্থ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সমান?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” উমাইর বললেন, ‘বাঃ বাঃ!’ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “বাঃ বাঃ’ শব্দ উচ্চারণ করার জন্য তোমাকে কোন জিনিস উদ্বুদ্ধ করল?” উমাইর বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর রসূল! তার (জান্নাতের) অধিবাসী হওয়ার কামনা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তিনি বললেন, “তুমি তার অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত।” অতঃপর তিনি কতিপয় খেজুর স্বীয় তূণ থেকে বের করে খেতে শুরু করলেন। তারপর বললেন, ‘যদি আমি এগুলি খেতে থাকি, তবে দীর্ঘক্ষণ জীবিত থাকতে হবে (এত দেরী সহ্য হবে না)।’ বিধায় তিনি তাঁর কাছে যত খেজুর ছিল, সব ফেলে দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন।
(মুসলিম ১৯০১, আবু দাঊদ ২৬১৮, আহমাদ ১১৯৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৪. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে কিছু শিক্ষিত মানুষ পাঠিয়ে দিন, যাঁরা আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা দেবেন।’ সুতরাং তিনি সত্তরজন আনসারীকে পাঠিয়ে দিলেন–যাঁদেরকে ‘কুররা’ (কুরআনের হাফেয) বলা হত। ‘হারাম’ নামক আমার মামাও তাঁদের অন্যতম। তাঁরা রাতে কুরআন পড়তেন, আপোসে কুরআন অধ্যয়ন করতেন এবং শিক্ষা অর্জন করতেন। আর দিনে তাঁরা পানি এনে মসজিদে রাখতেন। কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করতেন এবং তা দিয়ে আহলে সুফ্ফা (মসজিদে নববীতে অবস্থানরত তৎকালীন ইসলামী ছাত্রবৃন্দ) ও গরীবদের জন্য খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে প্রেরণ করলেন। পথিমধ্যে তারা তাঁদেরকে আটকে তাঁদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর পূর্বেই হত্যা করে দিল। শাহাদত প্রাক্কালে তাঁরা এই দু‘আ করলেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নবীকে এই সংবাদ পৌঁছে দাও যে, আমরা তোমার সাক্ষাৎ লাভ করেছি, অতঃপর তোমার প্রতি আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তুমিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছ।” আনাস রাঃআঃএর মামা ‘হারাম’-এর পশ্চাৎ দিক থেকে একটি লোক এসে বল্লমের খোঁচা মেরে (শরীর ফুঁড়ে) পার করে দিল। হারাম বলে উঠলেন, ‘কা‘বার প্রভুর কসম! আমি সফল হলাম!’ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উপস্থিত সাহাবীদের সম্বোধন করে) বললেন, “নিঃসন্দেহে তোমাদের ভাইদেরকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে এবং তারা এ বলে দু‘আ করেছে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নবীকে এই সংবাদ পৌঁছে দাও যে, আমরা তোমার সাক্ষাৎ লাভ করেছি, অতঃপর তোমার প্রতি আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তুমিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১০০১-১০০৩, ১৩০০, ২৮১৪, ২৮০১, ৩০৬৪, ৩১৭০, ৪০৮৮, ৪০৮৯, ৪০৯০, ৪০৯১, ৪০৯২, ৪০৯৩, ৪০৯৪, ৪০৯৫, ৪০৯৬, ৬৩৯৪, মুসলিম ৬৭৭, নাসাঈ ১০৭০, ১০৭১, ১০৭৭, আবু দাঊদ ১৪৪৪, ইবনু মাজাহ ১১৮৩, ১১৮৪, আহমাদ ১১৪৭, ১১৭৪২, ১২২৪৪, ১২২৯৪, ১২৪৩৮, ১২৫০০, ১৩০৫০, ১৩৬৬০, দারেমী ১৫৯৬, ১৫৯৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৫. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আমার চাচা আনাস ইবনে নায্র বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। (যার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন।) অতঃপর তিনি একবার বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! প্রথম যে যুদ্ধ আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করলেন, তাতে আমি অনুপস্থিত থাকলাম। যদি (এরপর) আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন, তাহলে আমি কি করব–আল্লাহ তা অবশ্যই দেখাবেন (অথবা দেখবেন)। অতঃপর যখন উহুদের দিন এলো, তখন মুসলিমরা (শুরুতে) ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরাজিত হলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! এরা অর্থাৎ, সঙ্গীরা যা করল, তার জন্য আমি তোমার নিকট ওযর পেশ করছি। আর ওরা অর্থাৎ, মুশরিকরা যা করল, তা থেকে আমি তোমার কাছে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি।’ অতঃপর তিনি আগে বাড়লেন এবং সামনে সা‘দ ইবনে মুআযকে পেলেন। তিনি বললেন, ‘হে সা‘দ ইবনে মুআয! জান্নাত! কা‘বার প্রভুর কসম! আমি উহুদ অপেক্ষা নিকটতর জায়গা হইতে তার সুগন্ধ পাচ্ছি।’ (এই বলে তিনি শত্রুদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।) সা’দ বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে যা করল আমি তা পারলাম না।’ আনাস রাঃআঃ বলেন, ‘আমরা তাঁর দেহে আশীর চেয়ে বেশি তরবারি, বর্শা বা তীরের আঘাত চিহ্ন পেলাম। আর আমরা তাকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুশরিকরা তাঁর নাক-কান কেটে নিয়েছে। ফলে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কেবল তাঁর বোন তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের পাব দেখে চিনেছিল।’ আনাস রাঃআঃ বলেন যে, ‘আমরা ধারণা করতাম যে, (সূরা আহযাবের ২৩নং এই আয়াত তাঁর ও তাঁর মত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। “মুমিনদের মধ্যে কিছু আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে, ওদের কেউ কেউ নিজ কর্তব্য পূর্ণরূপে সমাধা করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। ওরা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।”
(বুখারী ও মুসলিম, মুজাহাদা পরিচ্ছেদ ১৫/১১১ নং হাদীস দ্রঃ) (সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭০৩, ২৮০৬, ৪০৪৮, ৪৪৯৯, ৪৫০০, ৪৬১১, ৪৭৮৩, ৬৮৯৪, মুসলিম ১৯০৩, নাসাঈ ৪৭৫৫-৪৭৫৭, আদু ৪৫৯৫, ইবনু মাজাহ ২৬৪৯, আহমাদ ১১৮৯৩, ১২২৯৩, ১২৬০৩, ১২৬৭২, ১৩২৪৬, ১৩৬১৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৬. সামুরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “রাতে দু’জন লোক আমার কাছে এসে আমাকে গাছের উপর চড়ালো এবং আমাকে একটি সুন্দর ও উত্তম ঘরে প্রবেশ করাল, ওর চাইতে সুন্দর (ঘর) আমি কখনো দেখিনি। তারা (দু’জনে) বলল, ‘— এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।” (বুখারী, এটি একটি সুদীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ; যাতে আছে বহুমুখী ইলম। ইন শা আল্লাহ ‘মিথ্যা বলা হারাম’ পরিচ্ছেদে বিস্তারিত আসবে।)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৪৫, ১১৪৩, ১৩৮৬, ২০৮৫, ৩২৩৬, ৩৩৫৪, ৪৬৭৪, ৬০৯৬, ৭০৪৭, মুসলিম ২২৭৫, তিরমিজী ২২৯৪, আহমাদ ১৯৫৯০, ১৯৫৯৫, ১৯৬৫২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৭. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
উম্মে রুবাইয়ে’ বিনতে বারা’ যিনি হারেসাহ ইবনে সূরাকার মা, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে হারেসাহ সম্পর্কে কিছু বলবেন না? সে বদরের দিনে খুন হয়েছিল। যদি সে জান্নাতি হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করব, অন্যথা তার জন্য মন ভরে অত্যধিক কান্না করব।’ তিনি বললেন, “হে হারেসার মা! জান্নাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের জান্নাত আছে। আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ ফিরদাউস (জান্নাতে) পৌঁছে গেছে।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮০৯, ৩৯৮৩, ৬৫৫০, ৬৫৬৭, তিরমিজী ৩১৭৪, আহমাদ ১১৮৪৩, ১২৭৮৮, ১২৮৩৮, ১৩৩৩০, ১৩৩৭৬, ১৩৪৫৯, ১৩৫৯৯, ১৩৬০৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৮. জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতাকে (উহুদ যুদ্ধের দিন) তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছেদন হেতু বিকৃত অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি পিতার চেহারা খুলতে গেলাম; কিন্তু আমাকে আমার আপনজনরা নিষেধ করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ওকে ফিরিশ্তাবর্গ নিজেদের ডানাসমূহ দিয়ে সর্বদা ছায়া করছিলো।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৪৪, ১২৯৩, ২৮১৬, মুসলিম ২৪৭১, নাসাঈ ১৮৪২, ১৮৪৫, আহমাদ ১৩৭৭৫, ১৩৮৮৩, ১৪৮৩৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩২৯. সাহ্ল ইবনে হুনাইফ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সত্য নিয়তে আল্লাহর কাছে শাহাদত প্রার্থনা করিবে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিবেন; যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।”
(মুসলিম ১৯০৯, তিরমিজী ১৬৫৩, নাসাঈ ৩১৬২, আবু দাঊদ ১৫২০, ইবনু মাজাহ ২৭৯৭, দারেমী ২৪০৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩০. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সত্য সত্যই শাহাদত চায়, তাকে তা দেওয়া হয়; যদিও (প্রত্যক্ষভাবে) শাহাদত নসীব না হয়।”
(মুসলিম ১৯০৮)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “শহীদ হত্যার আঘাত ঠিক সেইরূপ অনুভব করে, যেরূপ তোমাদের কেউ চিমটি কাটার বা পিপীলিকার কামড়ের আঘাত অনুভব করে।” (তিরমিজী, হাসান সহীহ)
(তিরমিজী ১৬৬৮, নাসাঈ ৩১৬১, ইবনু মাজাহ ২৮০২, আহমাদ ৭৮৯৩, দারেমী ২৪০৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩২. আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
শত্রুর সাথে মোকাবেলার কোন এক দিনে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা করলেন (অর্থাৎ, যুদ্ধ করতে বিলম্ব করলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে গেল, তখন তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, “হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ (যুদ্ধ) কামনা করো না এবং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও। কিন্তু যখন শত্রুর সাথে সামনা-সামনি হয়ে যাবে, তখন তোমরা দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ কর। আর জেনে নাও যে, জান্নাত তরবারির ছায়ার নীচে রয়েছে।” অতঃপর তিনি দু‘আ করলেন, “হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ সঞ্চালনকারী এবং শত্রুসকলকে পরাজিতকারী! তুমি তাদেরকে পরাজিত কর এবং তাদের মুকাবিলায় আমাদেরকে সাহায্য কর।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮১৯, ২৮৩৩, ২৯৩৩, ৩০২৪, ৩০২৬, ৪১১৫, ৬৩৯২, ৭২৩৭, ৭৪৮৯, মুসলিম ১৭৪১, ১৭৪২, তিরমিজী ১৬৭৮, আবু দাঊদ ২৬৩১, ইবনু মাজাহ ২৭৯৬, আহমাদ ১৮৬২৮, ১৮৬৫০, ১৮৬৬০, ১৮৯১৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩৩. সাহ্ল ইবনে সা’দ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দুই সময়ের দু‘আ রদ হয় না, কিংবা কম রদ হয়। (এক) আযানের সময়ের দু‘আ। (দুই) যুদ্ধের সময়, যখন তা তুমুল আকার ধারণ করে।”
(আবু দাঊদ ২৫৪০, দারেমী ১২০০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩৩৪. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যুদ্ধ করতেন, তখন এই দু‘আ পড়তেন,
اَللهم أَنْتَ عَضُدِي وَنَصِيرِي، بِكَ أَحُولُ، وَبِكَ أَصُولُ، وَبِكَ أُقَاتِلُ
“আল্লা-হুম্মা আন্তা আদ্বুদি অনাস্বীরী, বিকা আহূলু, অবিকা আসূলু, অবিকা উক্বা-তিল।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমিই আমার বাহুবল এবং তুমিই আমার মদদগার। তোমার মদদেই আমি (শত্রুঘ্ন) কৌশল গ্রহণ করি, তোমারই সাহায্যে দুশমনের উপর আক্রমণ করি এবং তোমারই সাহায্যে যুদ্ধ চালাই।
(আবু দাঊদ ২৬৩২, তিরমিজী ৩৫৮৪) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩৩৫. আবু মুসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন (শত্রুদলের) ভয় করতেন, তখন এই দু‘আ বলতেন,
اَللهم إنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهمْ
“আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ্‘আলুকা ফী নুহূরিহিম, অনাঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে ওদের মুখোমুখি করছি এবং ওদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। (আবু দাঊদ সহীহ সানাদ)
(আবু দাঊদ ১৫৩৭, আহমাদ ১৯২২০, নাসাঈ ৩৫৬৩, ৩৫৮২, ইবনু মাজাহ ২৭৮৮, আহমাদ ৭৫০৯, ৮৬৪৯, ৮৭৫৪, মুওয়াত্তা মালিক ৯৭৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩৬. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বাঁধা থাকবে।”
(বুখারী) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৬৪৪, ২৮৪৯, মুসলিম ১৮৭১, নাসাঈ ৩৫৭৩, ইবনু মাজাহ ২৭৮৭, আহমাদ ৪৬০২, ৪৮০১, ৫০৮৩, ৫১৭৮, ৫৭৩৪, ৫৭৪৯, ৫৮৮২, মুওয়াত্তা মালিক ১০১৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩৭. উরওয়াহ বারেকী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ঘোড়ার ললাটে কিয়ামত অবধি কল্যাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে; অর্থাৎ, নেকী ও গনীমত।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৫২, ২৮৫০, ৩১১৯, ৩৬৪৩, মুসলিম ১৮৭৩, তিরমিজী ১২৫৮, ১৬৯৪, নাসাঈ ৩৫৭৫, ৩৫৭৬, আবু দাঊদ ৩৩৮৪, ইবনু মাজাহ ২৩০৫, ২৪০২, ২৭৮৬, আহমাদ ১৮৮৬৫, ১৮৮৬৯, দারেমী ২৪২৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩৮ . আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে ও তাঁর প্রতিশ্রুতিকে সত্য ভেবে আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়া বেঁধে রাখে (পালন করে), সে ঘোড়ার (আহার পূর্বক) তৃপ্ত হওয়া, পান যোগে সিক্ত হওয়া, তার পেশাব ও পায়খানা কিয়ামতের দিনে তার (নেকীর) পাল্লায় (ওজন) হবে।”
(বুখারী) (সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩৭১, ২৮৫৩, ২৮৬০, ৩৬৪৬, ৪৯৬৩, ৭৩৫৬, মুসলিম ৯৮৭, তিরমিজী ১৬৩৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৩৯. আবু মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একটি লোক রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে লাগামযুক্ত উটনী নিয়ে হাজির হল এবং বলল, ‘এটি আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য দান করা হল) ।’ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “কিয়ামতের দিনে তোমার জন্য এর বিনিময়ে সাতশ’টি উটনী হবে; যার প্রত্যেকটি লাগাম-যুক্ত হবে।”
(বুখারী) (মুসলিম ১৮৯২, নাসাঈ ৩১৮৭, আহমাদ ১৬৬৪৫, ২১৮৫২, দারেমী ২৪০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৪০. উক্ববাহ ইবনে আমের জুহানী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারের উপর খুৎবা দেওয়ার সময় এ কথা বলতে শুনেছি যে, (মহান আল্লাহ বলেছেন,)
وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ
অর্থাৎ, তোমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য শক্তি সঞ্চয় কর। (সূরা আনফাল ৬০) এর ব্যাখ্যায় বললেন, “জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি। জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি। জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি।”
(মুসলিম ১৯১৭, তিরমিজী ৩০৮৩, আবু দাঊদ ২৫১৪, ইবনু মাজাহ ২৮১৩, আহমাদ ১৬৯৭৯, দারেমী ২৪০৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৪১. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “অচিরেই তোমাদের জন্য অনেক ভূখণ্ড জয়লাভ হবে এবং (শত্রুদের বিরুদ্ধে) আল্লাহই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন। কাজেই তোমাদের কেউ যেন, তার তীর নিয়ে (অবসর সময়ে) খেলতে (অভ্যাস করতে) অক্ষমতা প্রদর্শন না করে।”
(মুসলিম ১৯১৮, আহমাদ ১৬৯৮০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৪২. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে তীরন্দাজির বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হল, তারপর সে তা পরিত্যাগ করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয় অথবা সে অবাধ্যতা করল।”
(মুসলিম ১৯১৯, নাসাঈ ৩৫৭৮, আবু দাঊদ ২৫১৩, ইবনু মাজাহ ২৮১৪, আহমাদ ১৬৮৪৯, ১৬৮৭০, ১৬৮৮৪, দারেমী ২৪০৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৪৩. আবু হাম্মাদ ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে একটি তীরের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তীর প্রস্তুত কারক, যে তা প্রস্ততে সাওয়াব কামনা করে, তীরটি নিক্ষেপকারী এবং তীরন্দাজের হাতে যে তীর ধরিয়ে দেয়। তোমরা তীরন্দাজী কর ও ঘোড়ায় আরোহণ করা শিখো। তোমরা যদি তীরন্দাজী শিক্ষা গ্রহণ কর তাহলে আমার নিকট তা ঘোড়ায় আরোহণ শিখার চাইতে অধিক প্রিয়। যে লোক তিরন্দাজী শিখার পর তার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে তা ছেড়ে দেয় আল্লাহর একটি নি‘মাত সে পরিত্যাগ করে অথবা তিনি (এভাবে) বলেন, সে অকৃতজ্ঞতা দেখায়। (আবু দাঊদ প্রভৃতি)
(হাদীসটি দুর্বল। আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে। যেমনটি আমি “তাখরীজু ফিকহিস সীরাহ্” গ্রন্থে (পৃ-২২৫) আলোচনা করেছি। এর সনদের বর্ণনাকারী খালেদ ইবনু যায়েদ মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী। তবে নিম্নের ভাষায় বর্ণিত হাদীসটি সহীহ্ঃ “যে ব্যক্তি তীর চালানো শিখল অতঃপর তা ছেড়ে দিল সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।” এটিকে ইমাম মুসলিম প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন।
(বিস্তারিত দেখুন “য‘ঈফ আবী দাঊদ- আলউম্ম” (৪৩৩)।) হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
১৩৪৪.সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তীর নিক্ষেপে রত একদল লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, “হে ইসমাঈলের সন্তানেরা। তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। কারণ, তোমাদের (আদি) পিতা (ইসমাঈল) তীরন্দাজ ছিলেন।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৯৯, ৩৩৭০, ৩৫০৭, আহমাদ ১৬০৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৪৫. আম্র ইবনে আবাসাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি তীর নিক্ষেপ করে, তার জন্য একটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী হয়।”
(আবু দাঊদ ৩৯৬৫, তিরমিজী ১৬৩৮, নাসাঈ ৩১৪৩, আহমাদ ১৮৯৩৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩৪৬. আবু য়্যাহয়্যা খুরাইম ইবনে ফাতেক রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কিছু খরচ করে, তার জন্য সাতশ’ গুণ নেকী লেখা হয়।”
(তিরমিজী ১৬২৫, নাসাঈ ৩১৮৬) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩৪৭. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন (রোযার) বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হইতে সত্তর বছর (দূরত্ব সম) দূরে রাখবেন।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৪০, মুসলিম ১১৫২, তিরমিজী ১৬২৩, নাসাঈ ২২৫১-২২৫৩, ইবনু মাজাহ ১৭১৭, আহমাদ ১০৮২৬, ১১০১৪, ১১১৬৬, ১১৩৮১, দারেমী ২৩৯৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৪৮. আবু উমামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্বসম একটি গর্ত খনন করে দেবেন।”
(তিরমিজী ১৬২৪) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩৪৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।”
(মুসলিম ১৯১০, নাসাঈ ৩০৯৭, আবু দাঊদ ২৫০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫০. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। তিনি বললেন, “মদীনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোন উপত্যকা অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদিনায় থাকতে বাধ্য করেছে।” আর একটি বর্ণনায় আছে যে, “কোন ওজর তাদেরকে মদীনায় থাকতে বাধ্য করেছে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তারা নেকীতে তোমাদের অংশীদার।” (বুখারী আনাস হইতে, মুসলিম জাবের হইতে এবং শব্দাবলী তাঁরই।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৩৯, মুসলিম ১৯১১, ইবনু মাজাহ ২৭৬৫, আহমাদ ১৪২৬৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫১. আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘এক লোক গনীমতের মালের জন্য, এক লোক নাম নেওয়ার জন্য আর এক লোক নিজ মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য জিহাদে অংশ গ্রহণ করল।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘বীরত্ব দেখাবার জন্য এবং বংশীয় ও গোত্রীয় পক্ষপাতিত্বের জন্য।’ আর এক বর্ণনানুযায়ী, ‘ক্রুদ্ধ হয়ে জিহাদে অংশ গ্রহণ করল। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল?’ তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লার বাণীকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল, সেই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৩, ২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮, মুসলিম ১৯০৪, তিরমিজী ১৬৪৬, নাসাঈ ৩১৩৬, আবু দাঊদ ২৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৭৮৩, আহমাদ ১৮৯৯৯, ১৯০৪৯, ১৯০৯৯, ১৯১৩৪, ১৯২৪০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫২. আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনে আ’স রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে যোদ্ধাদল বা সেনাবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল এবং গনীমতের সম্পদ অর্জন করল তথা নিরাপদে বাড়ি ফিরে এল, সে দল বা বাহিনী স্বীয় প্রতিদানের (নেকীর) তিন ভাগের দু’ভাগ (পার্থিব জীবনেই) সত্বর লাভ করে নিলো (এবং একভাগ পরকালে পাবে)। আর যে সেনাদল লড়াই করল এবং গনীমতের মালও পেল না এবং শহীদ বা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল, সে সেনাদল (পরকালে) পূর্ণ প্রতিদান অর্জন করিবে।”
(মুসলিম ১৯০৬, নাসাঈ ৩১২৫, আবু দাঊদ ২৪৯৭, ইবনু মাজাহ ২৭৮৫, আহমাদ ৬৫৪১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৩. আবু উমামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একটি লোক নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে (সংসার ত্যাগ করে বিদেশ) ভ্রমণ করার অনুমতি দিন।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমার উম্মতের ভ্রমণ কার্য আল্লাহর পথে জিহাদ করার মধ্যে নিহিত।”
(আবু দাঊদ ২৪৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৪. আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনে আ’স রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নেকীও জিহাদে লিপ্ত থাকার মতই।”
(আবু দাঊদ ২৪৮৭, আহমাদ ৬৫৮৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৫. সায়েব ইবনে ইয়াযিদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক অভিযান হইতে ফিরে এলেন, তখন তাঁকে (আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল) মানুষ স্বাগত জ্ঞাপন করেছিল। আমিও ছোট শিশুদের সাথে (মদীনার উপকণ্ঠে অবস্থিত) ‘সানিয়াতুল অদা’ নামক স্থানে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলাম।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩০৮৩, ৪৪২৭, ৪৪২৮, তিরমিজী ১৭১৮, আবু দাঊদ ২৭৭৯, আহমাদ ১৫২৯৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৬. আবু উমামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করল না, অথবা কোন মুজাহিদকে (যুদ্ধ-সরঞ্জাম দিয়ে যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুত করল না কিংবা মুজাহিদদের গৃহবাসীদের ভালভাবে তত্ত্বাবধান করার জন্য তার প্রতিনিধিত্ব করল না, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের পূর্বেই কোন বিপদ বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত করিবেন।”
(আবু দাঊদ ২৫০৩, ইবনু মাজাহ ২৭৬২, দারেমী ২৪১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৭. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমরা জান-মাল ও বাক্য দ্বারা সংগ্রাম চালাও।”
(আবু দাঊদ ২৫০৪, নাসাঈ ৩০৯৬, ৩১৯২, আহমাদ ১১৮৩৭, ১২১৪৫, ১৩২২৬, দারেমী ২৪৩১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৮. আবু আম্র মতান্তরে আবু হাকীম নু’মান ইবনে মুক্বার্রিন হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুদ্ধে হাজির ছিলাম। (তাঁর রণকৌশল এই ছিল যে,) যদি তিনি দিনের শুরুতে যুদ্ধ না করতেন, তাহলে সূর্য ঢলে যাওয়া ও বাতাস প্রবাহিত হওয়া এবং সাহায্য নেমে না আসা পর্যন্ত যুদ্ধ স্থগিত রাখতেন।’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩১৬০, তিরমিজী ১৬১২, ১৬১৩, আবু দাঊদ ২৬৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৫৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার আকাঙ্ক্ষা করো না; বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা কর। আর যদি তাদের সম্মুখীন হয়ে যাও, তাহলে ধৈর্য ধারণ কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৬৫, ২৯৬৬,২৮১৯, ২৮৩৩, ২৯৩৩, ৩০২৪, ৩০২৬, ৪১১৫, ৬৩৯২, ৭২৩৭, ম ৭৪৮৯, মুসলিম ১৭৪১, ১৭৪২ তিরমিজী ১৬৭৮, আবু দাঊদ ২৬৩১, ইবনু মাজাহ ২৭৯৬, আহমাদ ১৮৬২৮, ১৮৬৫০, ১৮৬৬০, ১৮৯১৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৬০. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যুদ্ধ হচ্ছে প্রতারণামূলক এক ধরনের চক্রান্ত।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩০৩০, মুসলিম ১৭৩৯, তিরমিজী ১৬৭৫, আবু দাঊদ ২৬৩৬, আহমাদ ১৩৭৬৫, ১৩৮৯৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৩৫: (শহীদদের প্রকারভেদ)
১৩৬১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “(পারলৌকিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার দিক দিয়ে) শহীদ পাঁচ ধরনের; (১) প্লেগরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (২) পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (৩) পানিতে ডুবে মৃত, (৪) মাটি চাপা পড়ে মৃত এবং (৫) আল্লাহর পথে থাকা অবস্থায় মৃত।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১৫, ৬৫৩, ৭২১, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩, মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিজী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসাঈ ৪৫০, ৭৭১, আবু দাঊদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ৭৯৬২, ৮১০৬, ৮২৯৩, ৯২০২, ৯৭৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৫১, ২৯৫). হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৬২. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা তোমাদের মাঝে কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর?” সকলেই বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে যে নিহত হয়, সেই শহীদ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ খুবই অল্প।” লোকেরা বলল, ‘তাহলে তাঁরা কে কে হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, “যে আল্লাহর পথে নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগ রোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের রোগে প্রাণ হারায়, সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫৪, ২৪৭২, মুসলিম ১৯১৪, ১৯১৫, তিরমিজী ১০৬২, ১৯৫৮, আবু দাঊদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ২৮০৪, ৩৬৮২, আহমাদ ৭৭৮২, ৭৯৭৯, ৮১০৬, ৮৩১৫, ৯১১৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৬৩. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আম্র ইবনে আ’স রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৮০, মুসলিম ১৪১, তিরমিজী ১৪১৯, ১৪২০, নাসাঈ ৪০৮৪-৪০৮৯, আবু দাঊদ ৪৭৭১, আহমাদ ৬৪৮৬, ৬৭৭৭, ৬৭৮৪, ৬৮৮৩, ৬৯১৭, ৭০১৫, ৭০৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৩৬৪. জীবদ্দশায় জান্নাতি হবার শুভ সংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবা রাঃআঃ-এর অন্যতম সাহাবী আবুল আ’ওয়ার সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আম্র ইবনে নুফাইল হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি তার মাল-ধন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রাণ) রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সেও শহীদ।
(আবু দাঊদ ৪৭৭২, তিরমিজী ১৪১৮, ১৪২১, নাসাঈ ৪০৯০, ৪০৯০, ৪০৯৪, ৪০৯৫,াজা ২৫৮০, আহমাদ ১৬৩১, ১৬৩৬, ১৬৫২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৩৬৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি কেউ আমার মাল (অবৈধভাবে) নিতে আসে তাহলে কি করতে হবে?’ তিনি বললেন, “তুমি তাকে তোমার মাল দেবে না।” পুনরায় সে নিবেদন করল, ‘যদি সে আমার সাথে লড়াই করে?’ তিনি বললেন, “তাহলে (তুমিও) তার সাথে লড়াই কর।” সে বলল, ‘বলুন, সে যদি আমাকে হত্যা করে দেয়?’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি শহীদ হয়ে যাবে।” সে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘বলুন, আমি যদি তাকে মেরে ফেলি (তাহলে কি হবে)?’ তিনি বললেন, “তাহলে সে জাহান্নামী হবে।”
(মুসলিম ১৪০)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply