জামায়াতে নামাজের ফজিলত

 >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ২৩

  • অধ্যায়ঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ২৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ

১০৫২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একা একা সলাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে সলাত আদায় করলে সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশি হয়। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৪৫, মুসলিম ৬৫০। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ ঐ পবিত্র সত্বার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন নিবদ্ধ। আমি মনে করেছি কোন [খাদিমকে] লাকড়ি জোগার করার আদেশ করব। লাকড়ি জোগার করা হলে আমি [ইশার] সলাতের আযান দিতে আদেশ করব। আযান হয়ে গেলে সলাতের ঈমামতি করার জন্যে কাউকে আদেশ করব। তারপর আমি ঐসব লোকের খোঁজে বের হবো [যারা কোন কারণ ছাড়া জামাআতে সলাত পড়ার জন্য আসেনি]। অপর সূত্রে আছেঃ রসূল [সাঃআঃ] ইরশাদ করিলেন, আমি ঐসব লোকের কাছে যাবো যারা সলাতে হাযির হয় না এবং আমি তাদেরকে ঘরবাড়ীসহ জ্বালিয়ে দেব। সে সত্বার কসম যার হাতে আমার জীবন আবদ্ধ! যারা সলাতের জামাআতে অংশ গ্রহণ করে না তাদের কোন ব্যক্তি যদি জানে যে, মাসজিদে মাংস সহ হাড় অথবা [গাভী ও বকরীর] দুটি ভাল খুর পাওয়া যাবে, তাহলে সে অবশ্যই ইশার সলাতে উপস্থিত হয়ে যেত। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৪৪, ২৪২০। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৪. উক্ত রাবী {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে একজন অন্ধলোক এসে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এমন কোন চালক নেই যে আমাকে মাসজিদে নিয়ে যাবে। তিনি রসূলের নিকট আবেদন করিলেন, তাকে যেন ঘরে সলাত আদায়ের অবকাশ দেয়। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে অবকাশ দিলেন। সে ফিরে চলে যাওয়া মাত্রই তিনি [সাঃআঃ] আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি সলাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তবে অবশ্যই আযানের সাড়া দিবে [অর্থাৎ নিজেকে জামাআতে শরীক করিবে]। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৫৩। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি এক শৈত্য প্রবাহে শীতের রাতে সলাতের আযান দিলেন। আযান দেয়ার পর তিনি বললেন, সাবধান! তোমরা নিজ নিজ আবাসে সলাত আদায় কর। এরপর বললেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঠাণ্ডা শীত-বৃষ্টি মুখর রাতে মুয়ায্‌যিনকে আদেশ দিতেন সে আযান দেয়ার পর যেন বলে দেয়, সাবধান! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সলাত আদায় কর।] {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৬৬, মুসলিম ৬৯৭। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৬. উক্ত রাবী {আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমাদের কারো রাতের খাবার সামনে রাখা হলে এমতাবস্থায় সলাতের তাকবীর বলা হলে, তখন রাত্রের খাবার খাওয়া শুরু করিবে। খাবার খেতে তাড়াহুড়া করিবে না খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ইবুন উমার [রাদি.]-এর সামনে খাবার রাখা হত এমতাবস্থায় সলাত শুরু হলে তিনি খাবার খেয়ে শেষ করার আগে সলাতের জন্য যেতেন না, এমনকি তিনি ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পেলেও। ] {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৭৪, মুসলিম ৫৫৯; শব্দাবলী বোখারীর। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ইরশাদ করিতে শুনেছিঃ খাবার সামনে রেখে কোন সলাত নেই এবং দু অনিষ্ট কাজ [পায়খানা-পেশাব] চেপে রেখেও কোন সলাত নেই।{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৬০। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ সালতের ইক্বামাত দেয়া হলে তখন ফার্‌য সলাত ব্যতীত অন্য কোন সলাত নেই। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৭১০। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৫৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো স্ত্রী যদি মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৮৭৩, মুসলিম ৪৪২। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৬০. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্‌উদ [রাদি.]-এর বিবি যায়নাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন নারী মাসজিদে গেলে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। ] {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৪৩। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যে সব মহিলা সুগন্ধি লাগায় তারা যেন ইশার সলাতে আমাদের সঙ্গে আংশগ্রহণ না করে। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৪৪। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১০৬২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মাসজিদে আসতে নিষেধ করো না। তবে সলাত আদায়ের জন্য তাদের জন্যে ঘরই উত্তম। {১}

{১} সহীহ লিগায়রিহী : আবু দাউদ ৫৬৭, সহীহ আত তারগীব ৩৪৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১০৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন, মহিলাদের তাদের ঘরের মাঝে সলাত আদায় করা তাদের বাইরের ঘরে সলাত আদায় করার চেয়ে ভাল। আবার কোন কামরায় তাদের সলাত আদায় করা তাদের ঘরে সলাত আদায় করার চেয়ে ভাল। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৫৭০, সহীহ আত তারগীব ৩৪৫। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৬৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার মাহবুব আবুল ক্বাসিম [রাসূলুল্লাহ] [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ ঐ মহিলার সলাত কবূল হবে না যে সুগন্ধি মেখে মাসজিদে যায়, যতক্ষণ সে গোসল না করে নাপাকী থেকে গোসল করার ন্যায়। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ৯৯৩৮, আবু দাউদ ৪১৭৪, সহীহ আল জামি ৭৩৮৫। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৬৫. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। {১}

{১} হাসান : আত তিরমিজি ২৭৮৬, আবু দাউদ ৪১৭৩, সহীহ আত তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনি খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনি হিব্বান ৪৪২৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১০৬৬. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] সালাম ফিরানোর পর বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সহাবীগণ বললেন, না। তিনি [সাঃআঃ] পুণরায় বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সহাবীগণ বললেন, না। তারপর তিনি [সাঃআঃ] বললেন, সব সলাতের মাঝে এ দুটি সলাত [ফাজ্‌র ও ইশা] মুনাফিক্বদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তোমরা যদি জানতে এ দুটি সলাতের মাঝে কত পুণ্য, তাহলে তোমরা হাঁটুর উপর ভর করে হলেও সলাতে আসতে। সলাতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্‌র [ফেরেশ্‌তাদের] কাতারের মতো [মর্যাদাপূর্ণ]। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফাযীলাত জানতে তবে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাড়াতাড়ি পৌছার চেষ্টা করিতে। আর একা একা সলাত আদায় করার চেয়ে অন্য একজন লোকের সঙ্গে মিলে সলাত আদায় করা অনেক সাওয়াব। আর দুজনের সাথে মিলে সলাত আদায় করলে একজনের সাথে সলাত আদায় করার চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যত বেশী মানুষের সঙ্গে মিলে সলাত আদায় করা হয়, তা আল্লাহর নিকট তত বেশী প্রিয়। {১}

{১} হাসান লিগায়রিহী : আবু দাউদ ৫৫৫, নাসায়ী ৮৪৩, সহীহ আত তারগীব ৪১১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

১০৬৭. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যে গ্রামে বা জঙ্গলে তিনজন মানুষ বসবাস করিবে, সে স্থানে জামাআতে সলাত আদায় করা না হলে তাদের ওপর শয়তান জয়ী হয়। অতএব তুমি জামাআতকে নিজের জন্যে অপরিহার্য করে নাও। কারণ দলচ্যুত ছাগলকে নেকড়ে বাঘ ধরে খেয়ে ফেলে। {১}

{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ৫৪৭, আহমাদ ২৭৫১৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ

১০৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক মুয়ায্যিনের আযান শ্রবণ করিল এবং আযান শেষে সলাতের জামাআতে হাযির হইতে তার কোন বাধা সৃষ্টিকারী ওযর না থাকে। লোকেরা প্রশ্ন করিল, ওযর কি? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, ভয় বা রোগ [জামাআত ছেড়ে দেয়ায়] তার সলাত কবূল হবে না যা সে আদায় করেছে। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৫৫১, জইফ আল জামি ৫৬৩৪, দারাকুত্বনী ১৫৫৭। কারণ এর সানাদে আবু জানাব ইয়াহ্ইয়া বিন আবু হাইয়্যাহ্ আল কালবী একজন দুর্বল মুদ্দাল্লিস রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১০৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ সলাতের ইক্বামাত হয়ে গেলে তখন তোমাদের কারো পায়খানার বেগ ধরলে সে যেন আগে পায়খানা করে নেয়।

{১} সহীহ : আত তিরমিজি ১৪২, আবু দাউদ ৮৮, দারিমী ১৪৬৭, ইবনি খুযায়মাহ্ ১৬৫২, সহীহ আল জামি ৩৭৩। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৭০. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করলেনঃ তিনটি জিনিস এমন আছে যা করা কারো জন্য বৈধ নয়। প্রথম, কোন লোক যদি কোন জামাআতে ঈমামতি করে, দুআয় জামাআতকে অংশগ্রহণ না করে শুধু নিজের জন্য দুআ করে। যদি সে এমন করে তাহলে সে জামাআতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিল। দ্বিতীয়, কোন ব্যক্তি যেন কারো ভেতর বাড়িতে অনুমতি ছাড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে। যদি কেউ এমন করে তবে সে ব্যক্তি ঐ ঘরওলাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিল। তৃতীয়, কারো পায়খানায় যাওয়ার দরকার হলে সে তা থেকে হালকা না হয়ে সলাত আদায় করিবে না। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৯০, জইফ আত তারগীব ১৬৩৩, জইফ আল জামি ২৫৬৫। কারণ এর সানাদে ইযতিরাব এবং জাহালা রয়েছে। ইবনি তায়মিয়্যাহ্ এবং ইবনুল ক্বইয়্যূম [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটিকে অকাট্টভাবে জইফ বলেছেন। এমনকি ইবনি খুযায়মাহ্ প্রথম অংশকে মাওযূ বলেছেন। তবে বাকী অংশটুকুর শাহিদ রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১০৭১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ আহার বা অন্য কোন কারণে সলাতে দেরি করিবে না। [শারহুস্ সুন্নাহ্] {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৩৭৫৮, জইফ আল জামি ৬১৮২। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদ বিন মায়মূন আয্ যাফারানী একজন বিতর্কিত রাবী। ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] তাকে মুনকারুল হাদিস বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অধ্যায়ঃ ২৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

১০৭২. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দেখেছি জামাআতে সলাত আদায় করা থেকে শুধু মুনাফিক্বরাই বিরত থাকত যাদের মুনাফিক্বী অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল অথবা রুগ্ন লোক। তবে যে রুগ্ন লোক দুব্যক্তির ওপর ভর করে চলতে পারতো সেও জামাআতে আসত। এরপর আবদুল্লাহ ইবনি মাস্উদ [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে হিদায়াতের পথসমূহ শিখিয়ে দিয়েছেন। তাহাঁর শিখানো হিদায়াতের পথসমূহ থেকে একটি এই যে, যে মাসজিদে আযান দেয়া হয় সেটাতে জামাআতের সাথে সলাত আদায় করা।

অপর একটি বর্ণনায় আছে, নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সাথে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত হইতে চায়, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সলাত উপযুক্ত সময়ে আদায় করার প্রতি যত্নবান হয়ে যেখানে সলাতের জন্যে আযান দেয়া হয় সেখানে সলাত আদায় করে। কারণ আল্লাহ তাআলা তোমাদের রসূলের জন্যে সুনানুল হুদা [হিদায়াতের পথ] নির্দিষ্ট করিয়াছেন। জামাআতের সাথে এ পাঁচ বেলা সলাত আদায় করাও এ সুনানুল হুদার মধ্যে একটি অন্যতম। তোমরা যদি তোমাদের ঘরে সলাত আদায় কর, যেভাবে এ পিছে পড়ে থাকা লোকগুলো [মুনাফিক্ব] তাদের বাড়িতে সলাত আদায় করে, তবে তোমরা অবশ্যই তোমাদের নবীর সুন্নাতকে ছেড়ে দিলে। যদি তোমরা তোমাদের নবীর হিদায়াতসমূহ ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। তোমাদের মধ্যে যারা ভাল করে পাক-পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর এসব মাসজিদের কোন মাসজিদে সলাত আদায় করিতে যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি কদমে একটি করে নেকী দান করিবেন, তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করিবেন এবং তার একটি পাপ মাফ করে দেন। আমি আমাদেরকে দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক্বরা ছাড়া অন্য কেউ সলাতের জামাআত থেকে পিছে থাকতো না বরং তাদেরকে দুজনের কাঁধে হাত দিয়ে এনে সলাতের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৫৪। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৭৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মহানবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ যদি ঘরে নারী ও শিশুরা না থাকত তবে আমি ইশার সলাতের জামাআত আদায় করতাম এবং আমার যুবকদেরকে [জামাআত ত্যাগকারী] মানুষদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিতাম। [আহ্মাদ] {১}

{১} জইফ : আহমাদ ৮৭৯৬, জইফ আত তারগীব ২২৫। কারণ এর সানাদে আবু মামার একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১০৭৪. উক্ত রাবী {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে আদেশ করেছেনঃ তোমরা যখন মাসজিদে থাকিবে আর সে মুহূর্তে আযান দিলে তোমরা সলাত আদায় না করে মাসজিদ ত্যাগ করিবে না। [আহমাদ] {১}

{১} জইফ : আহমাদ ১০৯৩৩, জইফ আত তারগীব ১৭৫। কারণ এর সানাদে বর্ণনাকারী শরীক একজন খারাপ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১০৭৫. আবু শাসা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক আযান শেষে মাসজিদ থেকে চলে গেল, আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বললেন, এ লোক আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ]-এর নাফরমানী করিল। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৫৫। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৭৬. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক মাসজিদে থাকা অবস্থায় আযান দেয়ার পর বিনা ওযরে বের হলে ও আবার ফিরে আসার ইচ্ছা না থাকলে সে লোক মুনাফিক্ব। [ইবনি মাজাহ] {১}

{১} সহীহ লিগায়রিহ : ইবনি মাজাহ ৭৩৪, সহীহ আত তারগীব ২১৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১০৭৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক আযানের শব্দ শুনল অথচ এর জবাব দিলো না তাহলে তাহাঁর সলাত হলো না। তবে কোন ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। [দারাকুত্বনী] {১}

{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৭৯৩, সহীহ আত তারগীব ৪২১, দারাকুত্বনী ১৫৫৫। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৭৮. আবদুল্লাহ ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! মাদীনায় ক্ষতিসাধনকারী অনেক জানোয়ার ও হিংস্র জন্তু আছে। আর আমি একজন জন্মান্ধ লোক। এ সময় আপনি কি আমাকে [জামাআতে যাওয়া থেকে] অবকাশ দিতে পারেন? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তুমি কি “হাইয়্যা আলাস সলা-হ্‌, হাইয়্যা আলাল ফালা-হ” শব্দ শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ [আমি শুনতে পাই]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিলেন, তাহলে তোমাকে জামাআতে আসতে হবে। তাকে তিনি [সাঃআঃ] জামাআত ত্যাগের অনুমতি দিলেন না। [আবু দাউদ, নাসায়ী] {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৫৫৩, নাসায়ী ৮৫১। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৭৯. উম্মুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবুদ্‌ দারদা [রাদি.] আমার নিকট রাগান্বিত অবস্থায় আসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, কোন্‌ জিনিস তোমাকে এত রাগান্বিত করিল? জবাবে আবুদ্‌ দারদা [রাদি.] বললেন, আল্লাহর কসম! আমি মাঝে জামাআতে সলাত আদায় করা ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখিতে পাই না মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর উম্মাতের। [বোখারী] {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৫০, আহমাদ ২১১৯৩। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৮০. আবু বাকর ইবনি সুলায়মান ইবনি আবু হাসমাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] ফাজ্‌রের সলতে [আমার পিতা] সুলায়মানকে হাযির পাননি। সকালে উমার হাটে গেলেন। সুলায়মানের বাড়ীটি মাসজিদ ও হাটের মাঝামাঝি স্থানে। তিনি সুলায়মান-এর মা শিফা-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করিলেন, কি ঘটনা আজ সুলায়মানকে ফাজ্‌রের জামাআতে দেখলাম না! সুলায়মানের মা উত্তর দিলেন, আজ সারা রাতই সুলায়মান সলাতে অতিবাহিত করেছে। তাই ঘুম তার ওপর বিজয়লাভ করেছে। উমার [রাদি.] বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি সারা রাত সলাতে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে আমার নিকট ফাজ্‌রের সলাতের জামাআতে অংশগ্রহণ করাটা বেশী প্রিয়। [মালিক] {১}

{১} সহীহ : মালিক ২৯৬, সহীহ আত তারগীব ৪২৩। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৮১. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ দুব্যক্তি ও এর বেশী হলে সলাতের জামাআত হইতে পারে। [ইবনি মাজাহ] {১}

{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ৯৭২, দারাকুত্বনী ১০৮৮, জইফ আল জামি ১৩৭। কারণ এর সানাদে রুবাই দুর্বল রাবী এবং তার পিতা বাদ্‌র মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১০৮২. বিলাল ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ মহিলারা মাসজিদে যাওয়ার জন্যে তোমাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলে, তোমরা মাসজিদে গমন থেকে বাধা দিয়ে তাদের অংশ থেকে বঞ্চিত করো না। বিলাল [রাহিমাহুল্লাহ] বললেন, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমি তাদেরকে নিষেধ করব। আবদুল্লাহ [রাদি.] বিলালকে বললেন, আমি বলছি, “রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন”, আর তুমি বলছ, তুমি অবশ্যই তাদের বাধা দিবে। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৪২। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৮৩. সালিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তার পিতা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, এরপর আবদুল্লাহ [রাদি.] বিলাল-এর সামনাসামনি হয়ে অনেক গালাগাল করিলেন। আমি কখনো তার মুখে এরূপ গালাগালি শুনিনি। তিনি বলেন, আমি তোমাকে অবহিত করছি, এ কথা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন। আর, তুমি বলছ, আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমরা তাদেরকে ফিরাব। [মুসলিম] {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৪২। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১০৮৪. মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ কেউ যেন তার স্ত্রীকে মাসজিদে আসতে বাধা না দেয়। [এ কথা শুনে] আবদুল্লাহর এক ছেলে [বিলাল] বললেন, আমরা তো অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব। [এ সময়] আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তাকে বললেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাদিস বর্ণনা করছি। আর তুমি বলছ এ কথা? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবদুল্লাহ ইবনি উমার মৃত পর্যন্ত আর তার সাথে কথা বলেননি। [আহমাদ] {১}

{১} সানাদ সহীহ : আহমাদ ৪৯১৩৩, আস্ সামার আল মুসতাত্বব ২/৭৩০। জামায়াতে নামাজের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply